দেড় বছরে অর্ধকোটি মানুষের প্রাণ কেড়ে নিল করোনা

চীনের হুবেই প্রদেশের রাজধানী উহানে ২০১৯ সালের ডিসেম্বরে প্রথম শনাক্ত হয় করোনাভাইরাস। একপর্যায়ে ‘উৎপত্তিস্থল’ চীনে ভাইরাসটির প্রাদুর্ভাব কমে এলেও বিশ্বের অন্যান্য দেশে এর প্রকোপ বাড়তে শুরু করে। পরিস্থিতি বিবেচনায় গত বছরের ১১ মার্চ করোনাভাইরাসকে মহামারি ঘোষণা করে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও)। এর মধ্যে করোনা প্রতিরোধে একাধিক টিকা আবিষ্কৃত হলেও ঠেকানো যায়নি প্রাণহানি। করোনার তাণ্ডবে কেউ হারিয়েছেন মা-বাবা, কেউ হারিয়েছেন প্রিয় সন্তানকে। মৃত্যুর তালিকা দীর্ঘ হতে হতে গতকাল শনিবার এ সংখ্যা ছাড়িয়ে গেছে ৫০ লাখ।

পরিসংখ্যানভিত্তিক ওয়েবসাইট ওয়ার্ল্ডোমিটারের তথ্য বলছে, গত শুক্রবার সকাল থেকে গতকাল শনিবার সকাল পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় বিশ্বজুড়ে করোনায় মৃত্যু হয়েছে আরও ৮ হাজারের বেশি মানুষের। এ নিয়ে মোট মৃতের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৫০ লাখ ৬ হাজার ৯৩২ জনে। আর এই সময়ের মধ্যে সাড়ে ৪ লাখের বেশি নতুন রোগী শনাক্তের মধ্য দিয়ে এ সংখ্যা পৌঁছেছে ২৪ কোটি ৬৮ লাখ ৭১ হাজার ৩৪৬ জনে।

করোনায় এখন পর্যন্ত সবচেয়ে বেশি রোগী শনাক্ত ও মৃত্যু হয়েছে যুক্তরাষ্ট্রে। দেশটিতে এখন পর্যন্ত মোট আক্রান্ত ৪ কোটি ৬৭ লাখ ৭১ হাজার ৯৭৯ জন ও মোট মৃত্যু দাঁড়িয়েছে ৭ লাখ ৬৫ হাজার ৭২২ জনে। সুস্থ হয়ে উঠেছেন ৩ কোটি ৬৬ লাখ ৪৬ হাজার ৯০০ জন।

তালিকায় দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে ভারত। দেশটিতে এ পর্যন্ত করোনায় সংক্রমিত হয়েছেন ৩ কোটি ৪২ লাখ ৫৯ হাজার ৭১৯ জন। এর মধ্যে মারা গেছেন ৪ লাখ ৫৭ হাজার ৭৭৩ জন।

এদিকে করোনায় অর্ধকোটি মানুষের মৃত্যুর পরিসংখ্যান সামনে আসার দিনে জানা গেছে আরেক হতাশার খবর। করোনার উৎস নিয়ে নানা বিতর্কের মধ্যেই এর মূল উৎপত্তিস্থল শনাক্ত প্রায় অসম্ভব বলে জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের একটি গোয়েন্দা সংস্থা। করোনার উৎস সম্পর্কে কখনোই হয়তো জানা যাবে না বলে দাবি তাদের।

করোনাভাইরাস কোনো প্রাণীর শরীর থেকে মানবদেহে ছড়িয়েছিল, নাকি গবেষণাগার থেকে তা ছড়িয়ে পড়েছে, সে বিষয়ে মার্কিন সংস্থার বিস্তারিত একটি পর্যবেক্ষণ প্রতিবেদনে এই তথ্য উল্লেখ করা হয়েছে বলে জানিয়েছে বার্তা সংস্থা রয়টার্স।

অফিস অব দ্য ইউএস ডিরেক্টর অব ন্যাশনাল ইনটেলিজেন্সের (ওডিএনআই) ওই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, প্রাকৃতিকভাবে করোনাভাইরাসের উৎপত্তি এবং গবেষণাগার থেকে এ ভাইরাস ছড়িয়ে পড়া—উভয় ক্ষেত্রেই বিশ্বাসযোগ্য অনুমান রয়েছে। তবে এই দুটির মধ্যে কোনটির সম্ভাবনা বেশি, সে বিষয়ে বিশেষজ্ঞদের মধ্যে মতানৈক্য রয়েছে। এ ছাড়া ভাইরাসের উৎপত্তি নিয়ে নির্দিষ্ট কোনো মূল্যায়ন করা যায় কি না, সে বিষয়েও একমত নন বিশেষজ্ঞরা।

কোনো জৈব অস্ত্র হিসেবে করোনাভাইরাস সৃষ্টির বিষয়টিকেও বাতিল করে দেওয়া হয়েছে মার্কিন গোয়েন্দাদের প্রতিবেদনে। কারণ হিসেবে বলা হয়েছে, জৈব অস্ত্র হিসেবে ভাইরাস সৃষ্টির অভিযোগের প্রবক্তাদের উহান ইনস্টিটিউট অব ভাইরোলজির গবেষণাগারে সরাসরি প্রবেশাধিকার নেই। আর তাই এই ধরনের তত্ত্ব ছড়ানোর কারণে তাদেরকে ভুল তথ্য ছড়ানোর অভিযোগে অভিযুক্ত করা হয়েছে।