Ajker Patrika

প্রস্তুতিতে আ.লীগ, সিদ্ধান্তহীন বিএনপি

রাহুল শর্মা ও রিমন রহমান, রাজশাহী থেকে
আপডেট : ২২ মার্চ ২০২৩, ১৬: ৩৩
Thumbnail image

রাজশাহী সিটি করপোরেশন (রাসিক) নির্বাচন নিয়ে মাঠে তৎপরতা নেই কোনো প্রার্থীর। তবে প্রস্তুতি শুরু করেছে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ। আর বিএনপি ভুগছে সিদ্ধান্তহীনতায়। নির্বাচন কমিশনের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী আগামী ২৩ মে থেকে ২৯ জুনের মধ্যে যেকোনো দিন হবে এই নির্বাচন।

রাজনৈতিক বিশ্লেষকেরা বলছেন, রাসিক নির্বাচনে মেয়র পদে মূলত প্রতিদ্বন্দ্বিতা হয় আওয়ামী লীগ ও বিএনপি প্রার্থীর মধ্যে। অন্য দলগুলোর প্রার্থীরা মূল লড়াইয়ের বাইরেই থাকেন। বিএনপি নির্বাচন নিয়ে সিদ্ধান্ত না নেওয়ায় কারও নাম তেমন জোরালোভাবে শোনা যাচ্ছে না। আগের বারের প্রার্থী মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুলও চুপচাপ। তবে এবার অধিকাংশ কাউন্সিলর পদে দ্বিমুখীর বদলে ত্রিমুখী লড়াইয়ের আভাস মিলছে। এর কারণ, রাজশাহী মহানগর আওয়ামী লীগের ভেতরে ভেতরে দুই ধারায় বিভক্ত হয়ে যাওয়া।

আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী হিসেবে বর্তমান মেয়র খায়রুজ্জামান লিটন ছাড়া আর কারও কথা ভাবছেন না বলে জানিয়েছেন দলের নেতারা। কারণ হিসেবে তাঁরা বলছেন, তিনি ব্যাপক উন্নয়নের মাধ্যমে নগরকে বদলে দিয়েছেন। তবে তাঁর প্রার্থী না হওয়া নিয়েও গুঞ্জন আছে। ২০২১ সালের নভেম্বরে তিনি প্রথম দলের কেন্দ্রীয় সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য হন। গত বছর ডিসেম্বরে আওয়ামী লীগের জাতীয় সম্মেলনেও তিনি সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য হন। প্রথমবার এই পদ পাওয়ার পর লিটন রাজশাহী মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতির পদ ছেড়ে দেন। রাজশাহীর রাজনৈতিক অঙ্গনে গুঞ্জন, তিনি এবার মেয়র পদে নন, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রার্থী হবেন। এই নির্বাচনে আওয়ামী লীগ বিজয়ী হলে তাঁকে মন্ত্রী করা হতে পারে। সে ক্ষেত্রে তিনি ঢাকায় থেকে জাতীয় পর্যায়ে রাজনীতি করবেন। এ রকম কিছু হলে মেয়র পদে দলের বিকল্প প্রার্থী হিসেবে আলোচনায় আসছে জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক আসাদুজ্জামান আসাদ ও মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ডাবলু সরকারের নাম। অবশ্য ডাবলু সরকার মনোনয়ন চাইতে ভেতরে ভেতরে প্রস্তুতিও নিচ্ছিলেন।

তবে সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে একটি আপত্তিকর ভিডিও ছড়িয়ে পড়ার পর ডাবলু সরকারকে নিয়ে রাজনৈতিক অঙ্গনে নিন্দার ঝড় ওঠে। তাঁকে দল থেকে বহিষ্কারের দাবিতে কিছুদিন আন্দোলনও হয়। ফলে দলীয় পদ রক্ষাই এখন তাঁর জন্য বড় চ্যালেঞ্জ। ডাবলুর দাবি, এই ভিডিও সম্পাদনা করা। তবে রাজনীতিসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, আপত্তিকর এই ভিডিওর কারণে ডাবলু পিছিয়ে গেছেন।

বিষয়টি স্বীকার করেছেন ডাবলু সরকারও। তিনি বলেন, ‘নগরপিতা হওয়ার স্বপ্ন আমারও ছিল। কিন্তু মাসখানেক আগে নোংরা রাজনীতির কারণে সেই স্বপ্ন আর নেই। আমার মন ভেঙে গেছে। এখন দল চাইলে প্রার্থী হব। না চাইলে আগ বাড়িয়ে নির্বাচন করব না।’

আলোচনায় আসা অপরজন জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক আসাদুজ্জামান আসাদ বলেছেন, ‘নির্বাচন নিয়ে আমার কথা স্পষ্ট। খায়রুজ্জামান লিটন যোগ্য প্রার্থী। তিনি দলের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য। তিনি যদি প্রার্থী না হন, তাহলে আমি প্রার্থী হতে চাইব। কিন্তু লিটন ভোটে এলে আমি প্রার্থী হব না।’
আগামী সিটি নির্বাচনে প্রার্থী হবেন কি না, এমন প্রশ্নে খায়রুজ্জামান লিটন বলেন, ‘নেত্রী চাইলে আবারও প্রার্থী হব, নগরবাসী চাইলে তাদের সেবা করব।’ তিনি প্রার্থী না হলে আসাদ প্রার্থী হবেন—এমন গুঞ্জনের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আপনার কাছ থেকেই বিষয়টি শুনলাম। নেত্রীর সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত।’

আওয়ামী লীগের নির্বাচনী প্রস্তুতি সম্পর্কে নগর আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা মোহাম্মদ আলী কামাল বলেন, ‘আমরা ইতিমধ্যে প্রস্তুতি শুরু করেছি। আমাদের প্রার্থী খায়রুজ্জামান লিটন। নেত্রী তাঁকেই প্রার্থী করবেন বলে আমাদের ধারণা। আমরা তাঁকে পাস করিয়ে আনব, এটিই আমাদের লক্ষ্য।’
মেয়র পদে আগেরবার বিএনপির প্রার্থী ছিলেন মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুল। আগামী সিটি নির্বাচন নিয়ে তাঁর পরিকল্পনা জানতে গত দুই দিন একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করেও তাঁকে পাওয়া যায়নি। তবে বিএনপি নেতারা বলছেন, সিটি নির্বাচন নিয়ে এখনো দলীয় কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি।  

নগর বিএনপির আহ্বায়ক এরশাদ আলী ঈসা বলেন, ‘আমরা এই সরকারের অধীনে কোনো নির্বাচনেই অংশ নিতে চাই না। এই সিদ্ধান্তই আছে এখন পর্যন্ত। সিটি নির্বাচন নিয়ে দলীয় ফোরামে নতুন কোনো আলোচনাও হয়নি।’ বিএনপি নির্বাচনে অংশ নিলে প্রার্থী কে হবেন, এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, সে রকম কিছু হলে দল সিদ্ধান্ত নেবে। এখন পর্যন্ত এ বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি।

রাজশাহী সিটি করপোরেশন গঠিত হওয়ার পর ১৯৯১ সালের ২১ মে নগরবাসীর সরাসরি ভোটে প্রথম মেয়র নির্বাচিত হন বিএনপি নেতা মিজানুর রহমান মিনু। এরপর ১৯৯৪ থেকে ২০০৭ সাল পর্যন্ত একটানা মেয়র ছিলেন তিনি। ২০০৮ সালের নির্বাচনে বিএনপির প্রার্থী মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুলকে পরাজিত করে মেয়র হন জাতীয় চার নেতার অন্যতম শহীদ এ এইচ এম কামারুজ্জামানের সন্তান এ এইচ এম খায়রুজ্জামান লিটন। ২০১৩ সালের নির্বাচনে বুলবুলের কাছে পরাজিত হন লিটন। পরে ২০১৮ সালে বুলবুলকে হারিয়েই আবার নগরপিতা হন লিটন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত