Ajker Patrika

সাদা বলে বাংলাদেশকে নতুন করে শুরু করতে হবে

আপডেট : ১৫ নভেম্বর ২০২৩, ১৪: ২২
সাদা বলে বাংলাদেশকে নতুন করে শুরু করতে হবে

বিশ্বকাপে বাংলাদেশ দলের ভরাডুবির ময়নাতদন্ত চলছে এখন। ব্যর্থতার পেছনে দেশের দুর্বল ক্রিকেট-কাঠামো, ভঙ্গুর সংস্কৃতি, চন্ডিকা হাথুরুসিংহের ভূমিকা, বিশ্বকাপের আগে করা সাকিব-তামিমের বিস্ফোরক সব মন্তব্যসহ অনেক বিষয়ই এসেছে। তবে টেকনিক্যাল বিষয়গুলো একটু কমই আসছে। সেটিই গতকাল সবিস্তারে বিশ্লেষণ করলেন শ্রীধরন শ্রীরাম, যিনি এবার দলে কাজ করেছেন কনসালট্যান্ট হিসেবে। তাঁর সাক্ষাৎকার নিয়েছেন রানা আব্বাস

প্রশ্ন: ২০২৩ বিশ্বকাপে ব্যর্থতার ব্যাখ্যা কী?
শ্রীধরন শ্রীরাম: ভারতীয় কন্ডিশনে আপনাকে অনেক রান করতে হবে, বড় স্কোর গড়তে হবে। যারা সেমিফাইনালে উঠেছে, প্রতিটি দল বড় বড় স্কোর গড়েছে। তাদের ব্যাটাররা শুধু সেঞ্চুরি করেই থামেননি, ১২০, ১৪০ কিংবা তারও বেশি রানের ইনিংস খেলেছেন। এখানে বাংলাদেশকে কাজ করতে হবে, কীভাবে আমাদের ব্যাটাররা এই ইনিংস খেলতে পারেন। ৩০-৪০ রানে খুশি হওয়া যাবে না। এটা কীভাবে বড় ইনিংসে রূপান্তর করা যায়, কীভাবে সেঞ্চুরিতে রূপ দেওয়া যায়।

প্রশ্ন: দেশে নিয়মিত ভালো উইকেটে না খেলার ফল এটা?
শ্রীরাম: আমি বাংলাদেশের ঘরোয়া ক্রিকেট সম্পর্কে খুব একটা অবগত নই। খুব একটা অভিজ্ঞতা নেই তাদের ঘরোয়া ক্রিকেটে কাজ করার। কাজ করেছি শুধু বাংলাদেশ দলের সঙ্গে এবং অ্যাসাইনমেন্টগুলোও ছিল সব বাংলাদেশের বাইরে। তবে বলতে চাই, দেশের বাইরে জয়ের অভ্যাসটা তৈরি করতে হবে। দেশের বাইরে যখন জয়ের অভ্যাস তৈরি হবে, তখনই আমাদের মধ্যে বিশ্বাস তৈরি হবে যে আমরা বিশ্বকাপেও ভালো করতে পারব। ভারতকে দেখুন, তারা যখন দেশের বাইরে জেতার অভ্যাস তৈরি করল, তখনই নিয়মিত বিশ্বকাপের শিরোপার দাবিদার হিসেবে নিজেদের প্রতিষ্ঠা করল।  

প্রশ্ন: এবার ব্যাটিং অর্ডারে যে পরীক্ষা-নিরীক্ষা বা পজিশনে অদলবদল হয়েছে, বিশ্বকাপের মঞ্চে এটা কি খুব জরুরি ছিল?
শ্রীরাম: এটা আসলে বিশ্বকাপের আগে আলোচনার বিষয়। আমি জানি না, বিষয়টি নিয়ে বিশ্বকাপের আগে কী ধরনের আলোচনা হয়েছিল। তবে আমার যেটা মনে হয়েছে, এখানে মেহেদী হাসান মিরাজের ব্যাটিং সম্ভাবনাটা সর্বোচ্চ কাজে লাগানোর চেষ্টা করা হয়েছে, যেহেতু সে ৮ নম্বরে খুব ভালো পাওয়ার হিটার নয়। কিন্তু সে যদি ওপরে খেলে, তাহলে একটা ভালো জুটি গড়তে পারবে, তাতে দলের চাপটা কমবে। স্ট্রাইক রোটেট করতে পারবে।  এই কাজ সে ভালো করতে পারে। টিম ম্যানেজমেন্টের ভাবনা ছিল তার সম্ভাবনা সর্বোচ্চ কাজে লাগাতে। এতে আমাদের ব্যাটিংয়ের গভীরতা বাড়াতে সহায়তা করবে। পরের দিকে তাওহীদ হৃদয় ছিল, মাহমুদউল্লাহর মতো অভিজ্ঞ ব্যাটার ছিল। আসলে মিরাজের ব্যাটিং সম্ভাবনা সর্বোচ্চ কাজে লাগাতে এই চিন্তা করা হয়েছিল। কারণ, সে একজন ভালো অলরাউন্ডার।

প্রশ্ন: এই বিশ্বকাপে শর্ট বলে সবচেয়ে বেশি উইকেট দিয়েছেন বাংলাদেশের ব্যাটাররা। এটার ব্যাখ্যা কী?
শ্রীরাম: আমি ফুটেজ দেখেছি, মনে হয়েছে অর্ধেকই শর্ট বল নয়। বিশেষ করে নেদারল্যান্ডসের বিপক্ষে আউটের ধরনগুলো দেখে মনে হলো ঠিক শর্ট বল নয়, ব্যাক অব লেংথের বলে আউট হয়েছে। দক্ষিণ আফ্রিকা, নিউজিল্যান্ড, অস্ট্রেলিয়ার বোলারদের মূল শক্তিই এটা, যারা বুক উচ্চতায় বল করতে পারদর্শী। এ ধরনের বোলারদের বিপক্ষে শুধু টিকে থাকাই নয়, রান করাও জানতে হবে। আমি নিশ্চিত, এই দুর্বলতা নিয়ে টিম ম্যানেজমেন্ট কাজ করবে। এ কারণে বলছি, শীর্ষ দলগুলোর সঙ্গে নিয়মিত অ্যাওয়ে কন্ডিশনে খেলতে হবে এবং জেতার অভ্যাস তৈরি করতে হবে। যখন দক্ষিণ আফ্রিকা, নিউজিল্যান্ড, অস্ট্রেলিয়ার মতো দলগুলোর সঙ্গে দেশের বাইরে বেশি বেশি খেলবে... তবে মনে করি দলের সবাই শর্ট বলে দুর্বল নয়। মুশফিক, শান্তর মতো আরও অনেক ব্যাটার আছে দলে, যারা শর্ট বলের বিপক্ষে ভালো ব্যাটিং করে। 

প্রশ্ন: সাকিব আল হাসানও এই বিশ্বকাপে চার-পাঁচবার শর্ট বলে আউট হয়েছেন।
শ্রীরাম: কখনো কখনো দ্রুত লেংথ পড়তে একটু সমস্যা হয়। এটার মানে এই নয় যে শর্ট বলে দুর্বল। এটা কিছুটা টেকনিক অ্যাডজাস্টমেন্টের ব্যাপার। সাকিব অনেক দিন ধরে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট খেলছে, শর্ট বল তার কাছে বড় সমস্যা হওয়ার কথা নয়।

প্রশ্ন: গত দুই বছরে বাংলাদেশের পেস বোলিং আক্রমণ দুর্দান্ত ছিল। অথচ তারাও এবার হতাশ করল। প্রথম পাওয়ার প্লেতে সবচেয়ে কম উইকেট নিতে পেরেছেন বাংলাদেশের বোলাররাই। এটার ব্যাখ্যা কী?
শ্রীরাম: খুব বেশি দল কিন্তু পাওয়ার প্লেতে প্রচুর উইকেট পায়নি। দক্ষিণ আফ্রিকা সবচেয়ে বেশি পাওয়ার প্লেতে উইকেট পেয়েছে। কিন্তু তারা দেখুন বেশির ভাগ সময় বোলিং করেছে ফ্লাড লাইটের আলোয়। কারণ, তাদের ছুড়ে দেওয়া বড় স্কোর তাড়া করতে হয়েছে বেশির ভাগ দলকে। তারা ৪০০, ৩৫০ রানের স্কোর গড়ে তবেই বোলারদের হাতে বল দিয়েছে। আপনি যখন বোর্ডে এত বড় স্কোর গড়বেন আর ফ্লাড লাইটের আলোয় বল করবেন এবং সুইং পাবেন, তখন পাওয়ার প্লেতে সবচেয়ে বেশি উইকেট পাবেনই। যখন অস্ট্রেলিয়া প্রথমে বোলিং করেছে, মিচেল স্টার্ক একটাও উইকেট পায়নি।

কলম্বোয় গত এশিয়া কাপে হাথুরুসিংহে নিজেই বিশ্বকাপে বাংলাদেশ দলে কাজ করার প্রস্তাব দেন শ্রীরামকেবাংলাদেশের বোলারদের ক্ষেত্রে দেখুন, আমরা বড় স্কোর ডিফেন্ড করার পরিস্থিতি তৈরি করতে পারিনি। ২২০–২৫০ রানের লক্ষ্য দিলে প্রতিপক্ষের ব্যাটাররা জানে, এই রান পেতে খুব একটা বেগ পেতে হবে না। চেন্নাইতে দেখুন, নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে আমরা শুরুতে কী দারুণ বোলিং করলাম। রাচিন রবীন্দ্র, ডেভন কনওয়েকে আউট করলাম ২০ ওভারের মধ্যে। তবু নিউজিল্যান্ডের ওপর তেমন কোনো চাপই তৈরি হলো না। যদি আমরা ৩০০ কিংবা ৩২০ রানের স্কোর গড়তে পারতাম, এটা অন্যরকম একটা ম্যাচ হতো।

পেসারদের দোষারোপ করার আগে দেখুন ভারতের মতো কন্ডিশনে দুপুর ২টায় দ্রুত কিছু উইকেট তুলে নেওয়া মোটেও সহজ নয়। একই সঙ্গে সন্ধ্যা ৬-৭টায় বোলিং করতে নেমে আমাদের পেসারদের সেই সুযোগটা করে দিতে পারিনি বড় স্কোর না হওয়ায়। কোনো দলকে ৩২০-৩৫০ রানের লক্ষ্য দিলে তাদের সেটি তাড়া করতে হলে শুরু থেকেই মেরে খেলতে হবে। আর মেরে খেলতে গেলেই তো ঝুঁকি নিতে হবে। প্রতিপক্ষের ঝুঁকি নেওয়া মানে আপনার বোলারের সুযোগ বেড়ে যাওয়া। ব্যাটাররা যদি বড় স্কোর গড়তে পারে, তখন দলের বোলারদের মানসিকতা অন্যরকম হয়ে যায়। 

প্রশ্ন: চন্ডিকা হাথুরুসিংহে বলছিলেন, স্কিল কোথাও যায়নি। তবে আশপাশের নয়েজ বা হইচইয়ের অনেক প্রভাব পড়েছে দলে। আপনি কি এটার সঙ্গে একমত?
শ্রীরাম: ঠিক জানি না কোন বিষয়ে বলছেন। নয়েজ বলতে?

প্রশ্ন: এই যে দলকে ঘিরে নানা আলোচনা, সমালোচনা, বিতর্ক। দল যখন টানা হারে, তখন এটা আরও বাড়ে। ক্রিকেট তো মেন্টাল গেমও।
শ্রীরাম: ঠিক জানি না। দলের বাইরের নয়েজ সম্পর্কেও খুব ভালো ধারণা নেই, যেটা প্রভাবিত করতে পারে। বিশ্বকাপ অনেক বড় টুর্নামেন্ট। এখানে কিছু ম্যাচ হারবেন, কিছু জিতবেন। এটা কোনো দ্বিপক্ষীয় সিরিজ নয়। একেক প্রতিপক্ষ, একেক ভেন্যু, একেক কন্ডিশন। আপনাকে শুধু সামনে এগিয়ে যেতে হবে। কেউ তো আপনার চাপ চাপিয়ে দেবে না। চাপে চ্যাপ্টা হন নিজে নিজেই। দলে অভিজ্ঞ ও তরুণ—দুই ধরনের খেলোয়াড়ই থাকে। অভিজ্ঞরা এটা খুব ভালোভাবে সামলাতে পারে। কিন্তু তরুণেরা অনেক সময় বড় মঞ্চে ভেঙে পড়তে পারে। তারা এখান থেকেই শেখে। যেমন—তানজিদ তামিমের কথাই বলি, অনেক সম্ভাবনা আছে ছেলেটার।       

প্রশ্ন: জুনিয়র তামিম অনেক হতাশ করেছেন। তিনি যেহেতু অভিজ্ঞ তামিম ইকবালের জায়গায় খেলেছেন, সিনিয়র তামিমের প্রসঙ্গ বারবার এসেছে। আপনিও কি এখানে তামিমের অভিজ্ঞতা মিস করেছেন?
শ্রীরাম: সত্যি বলতে, আমি কখনো তামিম ইকবালের সঙ্গে কাজ করিনি। তবে আমরা জানি সে বাংলাদেশ ক্রিকেটের অন্যতম সেরা ক্রিকেটার। তানজিদ তামিমের জায়গায় সে থাকলে ভালো করতে পারত কি না, এটা আসলে আমরা কেউ জানি না। এই উত্তরটা আমি দিতে পারছি না। যে ছিল না, তাকে নিয়ে কথাও বলতে পারি না। কীভাবে বলব যে বিশ্বকাপে তামিমকে মিস করেছি কি করিন? আপনার হাতে যে খেলোয়াড় থাকবে, তাদের নিয়েই তো খেলতে হবে, ভালো করতে হবে। যে নেই তাকে নিয়ে আমরা চিন্তা করতে পারি না। 

প্রশ্ন: বাংলাদেশ দলে আপনার কাজের ধরনটা কী ছিল এবার? হাথুরুর সঙ্গে কাজ করার অভিজ্ঞতা কেমন ছিল? 
শ্রীরাম: হেড কোচই (হাথুরু) আমাকে চেয়েছিলেন এই দলে। গত এশিয়া কাপে শ্রীলঙ্কায় ধারাভাষ্য দিতে গিয়ে দেখা হতেই প্রস্তাব দিলেন বিশ্বকাপে বাংলাদেশ দলে কাজ করার।  আমি শুধু তাঁকে সহায়তা করতে চেয়েছি ঠিকঠাকভাবে। ভারতীয় কন্ডিশন, মাঠ ইত্যাদি সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য-উপাত্ত, সম্ভাব্য কৌশল সম্পর্কে অবগত করাই ছিল আমার কাজ। আমি সেটা শতভাগ ঠিকঠাক করার চেষ্টা করেছি। তাঁর (হাথুরু) প্রতি আমি অনুগত এবং সৎ থেকেছি। তিনিও আমার ওপর অনেক ভরসা করেছেন। আমার কাজের পরিধি আসলে খুব বড় ছিল না। দলে যেহেতু আলাদা আলাদা ব্যাটিং, ফিল্ডিং, বোলিং কোচ ছিল।  

প্রশ্ন: কোচিং স্টাফ সদস্যদের সঙ্গে হাথুরুর দূরত্বের একটা প্রসঙ্গ এসেছে। এ কারণেই প্রশ্নটা জিজ্ঞেস করা।
শ্রীরাম: নিজের কথা শুধু বলতে পারি, তাঁর সঙ্গে আমার কোনো সমস্যা ছিল না। কাজের জায়গায় একে অন্যকে খুব ভালো পেয়েছি। পারস্পরিক সম্মান ছিল। তাঁর অনেক অভিজ্ঞতা, বাংলাদেশ ক্রিকেটের সঙ্গে অনেক দিন জড়িয়ে আছেন। আমি তাঁকে অনেক শ্রদ্ধা করি। 

প্রশ্ন: আইসিসির ইভেন্টে ব্যর্থতার বৃত্ত থেকে বের হতে আপনার পরামর্শ কী থাকবে?
শ্রীরাম: বাস্তবসম্মত প্রত্যাশা থাকা উচিত। আগেই বলেছি, দেশের বাইরে ভালো দলের বিপক্ষে আপনাকে নিয়মিত শুধু ম্যাচ নয়, সিরিজ জেতার অভ্যাস তৈরি করতে হবে আগে। তখন বড় বিশ্বাস তৈরি হবে মনে। সেই বিশ্বাস তৈরি হলে বিশ্বকাপে ভালো করতে পারবেন। সেমিফাইনালের প্রতিদ্বন্দ্বী হতে পারবেন। অনেকে মনে করছে, ভারত বোধ হয় বাংলাদেশের কাছাকাছি কন্ডিশন। মোটেও তা নয়। গত পাঁচ-ছয় বছরে ভারতের কন্ডিশন অনেক বদলে গেছে। এখন উইকেট অবিশ্বাস্য রকমের ভালো। ফিঙ্গার স্পিনারদের জন্য এখানে তেমন কিছু থাকে না। রিস্ট স্পিনাররা এখানে ভালো করতে পারে। আগে ব্যাটিং করলে ৩৪০–৩৫০ করতে হবে। নতুন বলে উইকেট নেওয়া, মাঝের ওভারগুলোয় উইকেট নেওয়া খুব গুরুত্বপূর্ণ। এখান থেকে বাংলাদেশকে সাদা বলের ক্রিকেট নিয়ে নতুন করে ভাবতে হবে। যখন এই মঞ্চে বড় দলগুলোকে হারানোর বিশ্বাস তৈরি হবে, তখন সেমিফাইনাল খেলার অভিজ্ঞতা হবে। আর সেমিফাইনাল খেলার অভিজ্ঞতা হলে তখন ফাইনালের স্বপ্ন দেখা যাবে। আচ্ছা, এবার দলকে নিয়ে আসলে মানুষের প্রত্যাশাটা কী ছিল, বলুন তো?

প্রশ্ন: সেমিফাইনালে খেলার লক্ষ্যটা কিন্তু প্রধান কোচ, অধিনায়কই আগে বলেছেন। তবে দর্শক প্রতিটি ম্যাচে বাংলাদেশকে এভাবে অসহায় আত্মসমর্পণ করা দেখতে চায়নি। নেদারল্যান্ডসের কাছে হারটা ছিল সবচেয়ে হতাশার। 
শ্রীরাম: শতভাগ ঠিক। নেদারল্যান্ডসের ম্যাচটা আমাদের জেতার কথা। ওদের ৬৩ রানে ৪ উইকেট ফেলে দেওয়ার পর ক্যাচ হাতছাড়া হলো। তবু ওই রানটা আমাদের তাড়া করা উচিত ছিল। আমরা ৭০ রানেই ৬ উইকেট হারিয়ে ফেললাম। কেউ ৭০-৮০ রান করলেই ম্যাচটা হারি না আমরা। এতে আসলে পুরো দলই অনেক হতাশ। এই ব্যর্থতায় কোনো অজুহাত দেওয়া যাবে না।  

প্রশ্ন: ভবিষ্যতেও বাংলাদেশ দলে কাজ করতে চান?
শ্রীরাম: ঠিক জানি না। পাপন ভাই, জালাল ভাই বা বিসিবি এ ব্যাপারে আমার সঙ্গে এ নিয়ে এখনো কথা বলেনি। তবে বাংলাদেশ ক্রিকেটকে আমার অনেক ভালো লাগে। হৃদয়ে বাংলাদেশের জন্য আলাদা একটা জায়গা আছে আমার। দারুণ সব ক্রিকেটার, মানুষ আছে এই দলে। তারা অনেক পরিশ্রম করে, শিখতে আগ্রহী। সাকিবের সঙ্গে সব সময়ই আমার খুব ভালো যোগাযোগ থাকে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় শেষ সাক্ষীর জেরা চলছে

বাসস, ঢাকা  
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ফাইল ছবি
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ফাইল ছবি

গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।

আজ সোমবার বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের ট্রাইব্যুনাল-১-এ মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা (আইও) মো. আলমগীরের জেরা শুরু করেন রাষ্ট্র নিযুক্ত আইনজীবী আমীর হোসেন। আইনজীবী আমীর হোসেন পলাতক আসামি শেখ হাসিনা ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের পক্ষে শুনানি করছেন। এর আগে গত মঙ্গলবার তদন্তকারী কর্মকর্তা মো. আলমগীরের সাক্ষ্য গ্রহণ সম্পন্ন হয়।

এই মামলার শুনানিতে এর আগে গণ-অভ্যুত্থানের অন্যতম প্রতীক শহীদ আবু সাঈদের বাবাসহ স্বজনহারা পরিবারের একাধিক সদস্য সাক্ষ্য দিয়েছেন। এ ছাড়া মামলার গুরুত্বপূর্ণ ‘স্টার উইটনেস’ হিসেবে সাক্ষ্য দেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক এবং জুলাই আন্দোলনের অন্যতম নেতৃত্বদানকারী নাহিদ ইসলাম এবং দৈনিক আমার দেশ পত্রিকার সম্পাদক ড. মাহমুদুর রহমান।

গত বছরের জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার আন্দোলন দমনে আওয়ামী লীগ সরকার, তাদের দলীয় ক্যাডার ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর একটি অংশ গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটিত করে বলে অভিযোগ ওঠে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে শেখ হাসিনা, তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল এবং তৎকালীন আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের বিরুদ্ধে গত ১০ জুলাই অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দেন ট্রাইব্যুনাল-১।

পরবর্তীকালে, এই মামলার অন্যতম আসামি সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন দোষ স্বীকার করে ঘটনার সত্যতা উদ্‌ঘাটনে রাজসাক্ষী (অ্যাপ্রোভার) হওয়ার জন্য ট্রাইব্যুনালে আবেদন করেন। ট্রাইব্যুনাল তাঁর আবেদন মঞ্জুর করলে তিনি রাজসাক্ষী হিসেবে এই মামলায় সাক্ষ্য দেন।

মামলার প্রসিকিউশন পক্ষে শুনানি করছেন চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম, প্রসিকিউটর মিজানুল ইসলাম এবং গাজী এসএইচ তামিম। শুনানিতে তাঁদের সঙ্গে অপর প্রসিকিউটররাও উপস্থিত ছিলেন।

অন্যদিকে, এই মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে রাজসাক্ষী হওয়া সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের পক্ষে আছেন আইনজীবী যায়েদ বিন আমজাদ।

মানবতাবিরোধী অপরাধের এই মামলা ছাড়াও ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে আরও দুটি মামলা বিচারাধীন। এর মধ্যে একটি মামলায় আওয়ামী লীগের সাড়ে ১৫ বছরের শাসনামলে সংঘটিত গুম-খুনের ঘটনায় তাঁকে আসামি করা হয়েছে। অন্য মামলাটি হলো রাজধানীর মতিঝিলের শাপলা চত্বরে হেফাজতে ইসলামের সমাবেশে হত্যাকাণ্ড নিয়ে। এই তিনটি মামলার বিচারকাজই বর্তমানে দুটি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে চলমান।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

ঝাঁকে ঝাঁকে ইলিশ পাওয়ার আশায় সাগরে জেলেরা

  • এবার ভারতের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে নিষেধাজ্ঞা দেয় সরকার।
  • গতকাল দিনভর ছিল উপকূলের জেলে পল্লিগুলোতে ব্যস্ততা।
মাছ শিকারের নিষেধাজ্ঞা শেষ হয়েছে বুধবার রাতে। এর আগে দিনভর সাগরে যাওয়ার প্রস্তুতি নেন জেলেরা। অনেকে দেখে নেন ট্রলার ঠিকঠাক আছে কি না। কেউ আবার জালের ছেঁড়া অংশ সেলাই করেন। ছবিটি কক্সবাজার-টেকনাফ মেরিন ড্রাইভের খুরেরমুখ এলাকার। ছবি: আজকের পত্রিকা
মাছ শিকারের নিষেধাজ্ঞা শেষ হয়েছে বুধবার রাতে। এর আগে দিনভর সাগরে যাওয়ার প্রস্তুতি নেন জেলেরা। অনেকে দেখে নেন ট্রলার ঠিকঠাক আছে কি না। কেউ আবার জালের ছেঁড়া অংশ সেলাই করেন। ছবিটি কক্সবাজার-টেকনাফ মেরিন ড্রাইভের খুরেরমুখ এলাকার। ছবি: আজকের পত্রিকা

‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর সঙ্গে।

মাছের সুষ্ঠু প্রজনন, উৎপাদন, মৎস্যসম্পদ সংরক্ষণ ও টেকসই মৎস্য আহরণের জন্য সমুদ্রে সব ধরনের মাছ শিকার ৫৮ দিনের নিষেধাজ্ঞা গতকাল বুধবার দিবাগত মধ্যরাতে শেষ হয়েছে। তাই গতকাল দিনভর ছিল উপকূলের জেলেপল্লিগুলোতে ব্যস্ততা। অনেকে দেখে নিচ্ছিলেন ট্রলার ঠিকঠাক আছে কি না, কেউ জালের ছেঁড়া অংশ সেলাই করছিলেন, কেউ আবার প্রয়োজনীয় খাদ্যসামগ্রীসহ অন্য সরঞ্জাম গুছিয়ে নিচ্ছিলেন।

বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র এবং ফকিরহাট উপ-মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের ঘাটে গতকাল শত শত ট্রলার নোঙর করে রাখা ছিল। জেলেদের উপস্থিতিতে ঘাট এলাকা সরগরম হয়ে ওঠে। ফকিরহাটের মুদি-মনিহারি দোকানগুলোতে জেলেরা কেনাকাটা করতে ভিড় জমান। ফকিরহাট এলাকার বিসমিল্লাহ ট্রলারের মাঝি রহিম মিয়া বলেন, ‘সাগরে মাছ শিকারে যেতে সকল প্রস্তুতি নিয়েছি। নিষেধাজ্ঞার সময় শেষ হওয়ামাত্রই সাগরে নামব।’

জেলে নুরসাইদ ও ফোরকান মিয়া বলেন, ‘নিষেধাজ্ঞার সময় পরিবার-পরিজন নিয়ে বেশ কষ্টে কেটেছে। ওই সময়ে বেশ টাকা ঋণ করেছি। এখন সাগরে যাব। দেখি আল্লাহ ঋণ পরিশোধ করতে দেন কি না।’

নোয়াখালীর হাতিয়ার সূর্যমুখী, বাংলাবাজার, কাজিরবাজার, পাইতান মার্কেট চেয়ারম্যান ঘাটসহ বেশ কয়েকটি ঘাটে গতকাল জেলেদের ব্যস্ত সময় পার করতে দেখা গেছে। অনেকে নৌকায় জাল তুলছিলেন, আবার অনেকে জ্বালানি তেল মজুতসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্রী ট্রলারে নিয়ে যান। সূর্যমুখী ঘাটের এমভি মায়ের দোয়া ট্রলারের মাঝি জাফর উল্যা বলেন, ‘সাগরে ৮-১০ দিন থাকার প্রস্তুতি নিচ্ছি। সন্ধ্যায় সাগরের উদ্দেশে রওনা দেব।’

সূর্যমুখী ঘাট জেলে সমিতির সভাপতি জবিয়ল হক বলেন, ‘সাগরে নামতে প্রস্তুত নোয়াখালীর হাতিয়ার ২০টি ঘাটের লক্ষাধিক জেলে। এসব ঘাটে প্রায় ১০ হাজার ছোট-বড় ফিশিং ট্রলার রয়েছে। প্রতি ট্রলারে ১০ জন হলেও লক্ষাধিক জেলে এই মাছ ধরার সঙ্গে জড়িত। তাঁদের সবাই গত ৫৮ দিন তীরে বেকার ছিলেন।’

পিরোজপুরের ইন্দুরকানি উপজেলার পাড়েরহাট মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের পার্শ্ববর্তী এলাকার জেলেরা গতকাল দিনভর সাগরে যাওয়ার প্রস্তুতি নেন। এ ছাড়া মঠবাড়িয়া উপজেলার সাপলেজা, খেতাচিড়া, বড়মাছুয়া, ছোটমাছুয়া, ভান্ডারিয়া উপজেলার চরখালী, হেতালিয়া, কাউখালী উপজেলার সোনাকুর এলাকার জেলেরা, সদর উপজেলা এবং নেছারাবাদ উপজেলার বিভিন্ন এলাকার জেলেরা প্রস্তুতি শেষে গত রাতে বঙ্গোপসাগরে রওনা হন।

কয়েক দিন ধরে কক্সবাজার উপকূলের জেলেপল্লিগুলোতে নৌকা, জাল মেরামতসহ বিভিন্ন প্রস্তুতি সেরেছেন জেলেরা। গতকাল মেরিন ড্রাইভের টেকনাফের খুরেরমুখ, সাবরাং ও বাহারছড়া এলাকায় দেখা গেছে, সড়কে দাঁড় করিয়ে রাখা সারি সারি ট্রলারে জাল ও রসদ তোলেন জেলেরা।

একটি ট্রলারের মাঝি আবু তাহের জানান, এবার ভারতের সঙ্গে মিল রেখে নিষেধাজ্ঞা দেওয়ায় কেউ সাগরে মাছ শিকারে নামেনি। এতে উপকূলের কাছাকাছি সাগরে জাল ফেললেই ইলিশসহ অন্য মাছ পাওয়া যাবে বলে আশাবাদী তিনি।

কক্সবাজার শহরের ফিশারি ঘাটের মৎস্য ব্যবসায়ী সমিতির পরিচালক জুলফিকার আলী জানান, কক্সবাজার উপকূলে ছোট-বড় ৭ হাজারের মতো যান্ত্রিক ট্রলার রয়েছে। এসব ট্রলারে প্রায় এক লাখ জেলে ও শ্রমিক নিয়োজিত রয়েছেন। অধিকাংশ ট্রলার নিষেধাজ্ঞা ওঠার সঙ্গে সঙ্গে সাগরে রওনা হবে।

[প্রতিবেদন তৈরিতে তথ্য দিয়ে সহায়তা করেছেন বরগুনা ও আমতলী, পিরোজপুর, কক্সবাজার এবং হাতিয়া প্রতিনিধি]

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

ভারতের নিষেধাজ্ঞা: স্থলবন্দর থেকে ফেরত আসছে রপ্তানি পণ্য

  • ক্রয়াদেশের চালান নিয়ে বাড়ছে দুশ্চিন্তা
  • সরকারের সিদ্ধান্তের অপেক্ষা
  • আজ বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ডেকেছে জরুরি বৈঠক
নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা
আপডেট : ২০ মে ২০২৫, ০২: ৪৪
ফাইল ছবি
ফাইল ছবি

ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।

ভারতের নিষেধাজ্ঞার এক দিন পরই গত রোববার লালমনিরহাটের বুড়িমারী ও যশোরের বেনাপোল স্থলবন্দরসহ বিভিন্ন বন্দরে পণ্যের ট্রাক আটকে দেয় ভারত। সংশ্লিষ্টদের সূত্রে জানা যায়, রোববার ভারতের আমদানি বিধিনিষেধের কারণে বুড়িমারী সীমান্তে প্রাণের ১৭ ট্রাক খাদ্যপণ্য আটকে যায়। এ ছাড়া বেনাপোলে ৩৬টি পোশাক বোঝাই ট্রাকসহ অন্যান্য পণ্যের শতাধিক ট্রাক ঢুকতে পারেনি।

গতকাল সোমবার পর্যন্ত বুড়িমারী থেকে প্রাণের পণ্যবোঝাই ট্রাকগুলোর অর্ধেকের বেশি ফেরত নিয়ে আসে প্রতিষ্ঠানটি। এ ছাড়া বেনাপোলে পোর্টের ভেতরে ২৪টি ট্রাক ছাড়া বাকিগুলো ফেরত চলে যায়।

বেনাপোল বন্দর সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট স্টাফ অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মো. সাজেদুর রহমান গতকাল সোমবার আজকের পত্রিকাকে বলেন, গতকাল পোর্টের ভেতর ও বাইরে শতাধিক ট্রাক দাঁড়িয়ে ছিল। আজ পোর্টের ভেতরের ২৪টি ছাড়া বাকিগুলো ফেরত নিয়ে গেছেন মালিকেরা। এখন পর্যন্ত মনে হচ্ছে, পোর্টের ভেতরের ট্রাকগুলোও ফেরত নিতে হবে।

জানতে চাইলে প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের পরিচালক (বিপণন) কামরুজ্জামান কামাল আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমাদের হাতে ৬ মিলিয়ন ডলারের ক্রয় আদেশ রয়েছে। তার মধ্য থেকে রোববার বুড়িমারী দিয়ে ১৭ ট্রাকবোঝাই পণ্য পাঠিয়েছিলাম। কিন্তু সেগুলো ঢুকতে পারেনি। ট্রাকগুলো ফেরত আনা হচ্ছে। নতুন করে কাগজপত্র তৈরি করে অন্য পথ দিয়ে পণ্য পাঠাতে হবে।’

বেনাপোল স্থলবন্দর সূত্রে জানা যায়, ওই ২৪টি ট্রাক পোর্টের ভেতরে থাকায় এখনো তারা ভারতে প্রবেশের অপেক্ষায় রয়েছে। তাদের আশা, যেহেতু নিষেধাজ্ঞার আগে এই পণ্যগুলোর এলসি করা হয়েছিল, তাই এগুলো প্রবেশে অনুমতি পাবে। তবে এটি নির্ভর করবে বাংলাদেশ সরকারের আলোচনার ওপর।

এমন পরিস্থিতিতে সরকারের সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় রয়েছেন ব্যবসায়ীরা। ইতিমধ্যে অনেক রপ্তানিকারক রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) সঙ্গে আলোচনা করে সরকারের সহযোগিতা চেয়েছে।

স্থলবন্দরের মাধ্যমে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জসমূহ এবং আশু করণীয় নির্ধারণে বাণিজ্যসচিবের সভাপতিত্বে আজ মঙ্গলবার আন্তমন্ত্রণালয়ের সভা ডেকেছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।

বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, স্থলবন্দরের মাধ্যমে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জসমূহ এবং আশু করণীয় নির্ধারণে বাণিজ্যসচিবের সভাপতিত্বে বিকেল ৪টায় আন্তমন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে এই সভা অনুষ্ঠিত হবে।

সভায় নৌপরিবহন ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশন, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড, বাংলাদেশ স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষ, রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো, জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের প্রতিনিধিদের উপস্থিত থাকতে বলা হয়েছে। এ ছাড়া ব্যবসায়ী প্রতিনিধি হিসেবে এফবিসিসিআই, বিজিএমইএ, ভারত-বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির প্রতিনিধিদের উপস্থিতির জন্য আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে।

ভারতের শিল্প ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয় গত শনিবার হঠাৎ এক বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে স্থলবন্দর দিয়ে বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক আমদানি নিষিদ্ধ করে। শুধু ভারতের নবসেবা ও কলকাতা সমুদ্রবন্দর ব্যবহার করে দেশটির আমদানিকারকেরা বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক আমদানি করতে পারবেন বলে ওই বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়। এ ছাড়া বাংলাদেশ থেকে ভারতের আসাম, মেঘালয়, ত্রিপুরা ও মিজোরাম, পশ্চিমবঙ্গের চ্যাংড়াবান্দা ও ফুলবাড়ী শুল্ক স্টেশন দিয়ে ফল, ফলের স্বাদযুক্ত পানীয়, কোমল পানীয়, প্রক্রিয়াজাত খাদ্য, প্লাস্টিক পণ্য, সুতা, সুতার উপজাত, আসবাব রপ্তানিও নিষিদ্ধ করা হয় ওই বিজ্ঞপ্তিতে।

আমদানি ও রপ্তানিসংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা জানান, দেশের ২৪টি বন্দরের মধ্যে ১৬টি বন্দর দিয়ে ভারতের সঙ্গে আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য হয়ে থাকে। তবে যোগাযোগব্যবস্থা সহজ হওয়ায় বেনাপোল ও ভারতের পেট্রাপোল বন্দর দিয়ে সবচেয়ে বেশি আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য হয়। এর পরিমাণ ৮০ শতাংশ। বেনাপোল বন্দর দিয়ে প্রতিদিন ভারতে ২৫০ থেকে ৩০০ ট্রাকে বিভিন্ন ধরনের পণ্য রপ্তানি হয়। এর মধ্যে শতাধিক ট্রাক পণ্য থাকে তৈরি পোশাক।

এর আগে গত ৮ এপ্রিল বাংলাদেশের জন্য ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা বাতিল করে ভারত। ফলে ভারতের বিমানবন্দর ব্যবহার করে তৃতীয় কোনো দেশে তৈরি পোশাক রপ্তানি করতে পারছে না বাংলাদেশ। অন্যদিকে প্রায় এক মাস আগে ভারত থেকে বেনাপোল, ভোমরা, সোনামসজিদ, বাংলাবান্ধা, বুড়িমারী স্থলবন্দর দিয়ে সুতা আমদানির সুযোগ বন্ধ করে দেয় বাংলাদেশের জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)।

সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) বিশেষ ফেলো মোস্তাফিজুর রহমানের মতে, এই পাল্টাপাল্টি পদক্ষেপে তুলনামূলকভাবে বেশি নেতিবাচক প্রভাব পড়বে বাংলাদেশের ওপর। তাই ভারতের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য ঘাটতি কমানোর চেষ্টা অব্যাহত রাখাই সরকারের উচিত বলে মনে করছেন তিনি।

মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, আলোচনার মাধ্যমে বাংলাদেশ এবং ভারতের বিরোধপূর্ণ বিষয়সমূহ মিটিয়ে ফেলতে হবে এবং দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য সম্পর্কের ক্ষেত্রে ভারসাম্য প্রতিষ্ঠা করতে হবে। এটাই হবে উভয় দেশের জন্য কল্যাণকর।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

নিলামে গৌতম বুদ্ধের রত্নসম্ভার

নিলামে গৌতম বুদ্ধের রত্নসম্ভার

আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।

১৮৯৮ সালে ভারতের উত্তর প্রদেশের একটি ধূলিধূসর টিলা খুঁড়ে পাওয়া মূল্যবান এই রত্নগুলো এক শতাব্দীর বেশি সময় ধরে একটি বেসরকারি ব্রিটিশ সংগ্রহাগারে প্রায় দৃষ্টিচক্ষুর আড়ালে ছিল। এখন যেহেতু রত্নগুলোর হাতবদলের সময় এসেছে, তাই নতুন সংগ্রাহকেরা আগ্রহ নিয়ে এগুলো সংগ্রহের জন্য অপেক্ষা করছেন। কিন্তু এখানে একটা অস্বস্তিও তৈরি হয়েছে।

গৌতম বুদ্ধের জন্মস্থান লুম্বিনীর কাছাকাছি, বর্তমানে ভারতের উত্তর প্রদেশে একটি ইটের ঘরের ভেতর থেকে প্রায় ১ হাজার ৮০০টি মুক্তা, রুবি, টোপাজ, নীলা ও নকশা করা সোনার পাত সংগ্রহ করা হয়েছিল। তবে এই রত্নগুলোর সঙ্গে সঙ্গে একটি খোদাই করা পাত্রে হাড়ের টুকরাও পাওয়া যায়, যেগুলোকে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষ বলে শনাক্ত করা হয়। এই আবিষ্কার তখন প্রত্নতত্ত্বের জগতে ব্যাপক আলোড়ন তোলে।

সাদাবি’স এশিয়ার চেয়ারম্যান নিকোলাস চাউ মনে করেন, স্মরণকালের বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর মাঝে এই রত্নসম্ভার অন্যতম। তবে এগুলো নিলামে তোলার কারণে একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন তৈরি হয়েছে। আর তা হচ্ছে—ভারতের ইতিহাসের সঙ্গে গভীরভাবে জড়িয়ে থাকা এবং বৌদ্ধদের কাছে পবিত্র এই সম্পদ বিক্রি করা কি নৈতিকভাবে গ্রহণযোগ্য?

১৮৯৮ সালে ব্রিটিশ এস্টেট ম্যানেজার উইলিয়াম ক্ল্যাক্সটন পেপ্পে লুম্বিনির ঠিক দক্ষিণে পিপ্রাওয়ায় অবস্থিত একটি ঢিবি খনন করেন। সেখান থেকেই প্রায় ২ হাজার বছর আগের ওই নির্দশনগুলো খুঁজে পাওয়া যায়।

ইতিহাসবিদদের মতে, প্রাপ্ত রত্নসম্ভার ও দেহাবশেষ, যা তখনো পর্যন্ত অক্ষত ছিল, সেগুলো গৌতম বুদ্ধের শাক্য বংশের এবং বিশ্বব্যাপী বৌদ্ধদের ঐতিহ্য। হাড়ের নিদর্শনগুলো থাইল্যান্ড, শ্রীলঙ্কা ও মিয়ানমারের মতো দেশগুলোতে বিতরণ করা হয়েছে। এসব দেশে এখনো সেগুলোর পূজা করা হয়।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত