Ajker Patrika

পোকার আক্রমণে বিবর্ণ ধান

আনোয়ার সাদাৎ ইমরান, মধুপুর প্রতিনিধি
আপডেট : ২০ অক্টোবর ২০২১, ১৩: ২১
পোকার আক্রমণে বিবর্ণ ধান

টাঙ্গাইলের মধুপুর উপজেলার বিস্তীর্ণ এলাকায় বাদামি গাছ ফড়িংয়ের আক্রমণে আমন ধানখেত ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। এতে বিবর্ণ হচ্ছে কৃষকের স্বপ্নের সোনালি ধান। উপজেলার পঁচিশা, হাসনই, দক্ষিণ পঁচিশা, লোকদেও, আম্বাড়িয়াসহ মধুপুরের বিভিন্ন গ্রামের খেতে গাছ ফড়িংয়ের উপদ্রব দেখা দিয়েছে। স্থানীয় কৃষকেরা বলছেন, কৃষি বিভাগ থেকে তেমন কোনো সহযোগিতা পাচ্ছেন না তাঁরা। তবে কৃষি বিভাগ বাদামি গাছ পোকার উপদ্রব অস্বীকার করে বলছে, সাধারণত কৃষকেরা কীটনাশক ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে বেশি পরামর্শ নেন এবং প্রায়ই ক্ষতিগ্রস্ত হন।

কৃষি অফিস সূত্র জানা গেছে, চলতি মৌসুমে উপজেলায় ১২ হাজার ৭১৩ হেক্টর জমিতে আমন ধানের আবাদ হয়েছে। এর মধ্যে এক হাজার ১৬ হেক্টর জমিতে হাইব্রিড, ১০ হাজার ৮৭৫ হেক্টর জমিতে উফশী এবং ৮২২ হেক্টর জমিতে স্থানীয় জাতের আমন ধানের আবাদ করেছেন কৃষকেরা। উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৬৭ হাজার ৮৬৬ মেট্রিক টন।

সরেজমিনে উপজেলার বিভিন্ন গ্রামে দেখা গেছে, বাদামি গাছ ফড়িংয়ের আক্রমণে অনেক ধানখেত বিবর্ণ হয়ে গেছে। অনেকের ধানখেত দুই-তিন দিনের মধ্যেই খড়ে পরিণত হয়েছে। এ ছাড়া পাতামরা রোগেও অনেক খেতের ধানপাতা নষ্ট হয়ে গেছে। তাই উপজেলায় আমন ধান উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা অর্জন না হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।

স্থানীয় কৃষকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ধানগাছের জন্য বাদামি গাছ ফড়িং একটি মারাত্মক ক্ষতিকর পোকা। এই পোকা ধানগাছের গোড়ায় বসে রস শুষে খায়। তাই গাছ পুড়ে যাওয়ার রং ধারণ করে মরে যায়। তখন একে বলা হয় হপার বার্ন বা ফড়িং পোকা। এই পোকার আক্রমণে দুই থেকে তিন দিনের মধ্যে পুরো খেত বিবর্ণ হয়ে যায়। খুব দ্রুত ধানখেত ক্ষতিগ্রস্ত হয় বলে স্থানীয় কৃষকেরা এই পোকার নাম দিয়েছেন কারেন্ট পোকা।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে একজন উপসহকারী কর্মকর্তা বলেন, দিনে গরম আর রাতে ঠান্ডা এমন পরিবেশে বাদামি গাছ ফড়িং পোকা সহজেই বংশবৃদ্ধি করে। জন্ম নেওয়ার পর প্রথম পর্যায়ে এই পোকার রং সাদা হয়। পূর্ণবয়স্ক হলে এর রং বাদামি হয়ে যায়। তখন এই পোকার পাখাও ছোট হয়ে যায়।

আবদুল আউয়াল নামের পঁচিশা গ্রামের এক বাসিন্দা বলেন, ‘৬০ শতাংশ জমিতে ব্রি ৪৯ জাতের ধান আবাদ করেছি। কারেন্ট পোকার আক্রমণে আমার খেত বিবর্ণ হয়ে গেছে। ৬০ শতাংশ জমির ৫০ শতাংশই এখন খড়ে পরিণত হয়েছে। মাত্র কয়েক দিনের মধ্যেই আমার সোনালি স্বপ্ন ভেঙে গেছে।’

দক্ষিণ পঁচিশা গ্রামের মো. আক্তার হোসেন বলেন, ‘এলাকার অনেক ধানখেত বিবর্ণ হয়ে গেছে। বিবর্ণ হওয়া খেতগুলোর মধ্যে আমারও জমি রয়েছে। কৃষি বিভাগ থেকে সহায়তা পেলে আমাদের হয়তো এতটা ক্ষতি হতো না।’

আনোয়ার হোসেন নামের আরেকজন বলেন, ‘উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তারা কখনো আমাদের খোঁজখবর নেন না। আমার ধানখেতের অবস্থাও করুণ।’

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে বানরগাছী ব্লকের উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা মজিবর রহমান বাদামি গাছ ফড়িং পোকার আক্রমণের কথা অস্বীকার করে বলেন, ব্লাস্ট রোগে কিছু কিছু খেত ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এ সময় তাঁর কাছে ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকের নাম ও জমির পরিমাণ জানতে চাইলে তিনি সেই তথ্য দিতেও অপারগতা প্রকাশ করেন।

এ ব্যাপারে মধুপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. নুরুল ইসলাম বলেন, ‘কিছু জমিতে পোকার আক্রমণের খবর আমরা পেয়েছি। এর জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। সাধারণত কৃষকেরা কৃষি বিভাগের কাছ থেকে পরামর্শ না নিয়ে কীটনাশক ব্যবসায়ীদের কাছ বেশি যান। তাই তাঁরা ক্ষতিগ্রস্তও হন এবং এবারও তা-ই হয়েছে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত