Ajker Patrika

ভিত্তিই তো নড়বড়ে

সম্পাদকীয়
ভিত্তিই তো নড়বড়ে

প্রাথমিক শিক্ষাকে যদি শিক্ষার ভিত্তি ধরা হয়, তাহলে বলতেই হবে যে আমাদের শিক্ষার ভিত্তি একেবারেই নড়বড়ে। দেশে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সংখ্যা বেড়েছে, বেড়েছে শিক্ষার্থীর সংখ্যাও। কিন্তু শিক্ষার মান বাড়েনি বলে আমাদের আক্ষেপেরও শেষ নেই।

প্রশ্ন হলো, শিক্ষার মান বাড়বে কীভাবে? আজকের পত্রিকায় শনিবার ‘এক শিক্ষকের প্রাথমিক বিদ্যালয়’ শিরোনামে প্রকাশিত খবর পড়লে যে কারও মনে প্রশ্ন আসবে, এটা কীভাবে সম্ভব? হ্যাঁ, মাত্র একজন শিক্ষক ৭২ জন শিক্ষার্থী একটি স্কুলে একাই সব বিষয়ে পাঠদান করছেন, দ্বিতীয় কোনো শিক্ষক নেই।

সবচেয়ে তাজ্জবের বিষয় হলো, ২০২২ সালের ডিসেম্বর থেকেই একজন শিক্ষক দিয়ে স্কুলটি চললেও কারও কানে পানি ঢোকেনি।প্রকাশিত খবর থেকে জানা যাচ্ছে, জামালপুরের মেলান্দহ উপজেলার নয়ানগর ইউনিয়নের চর উত্তর উস্তম আলী মাস্টার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থী মোট ৭২ জন। শিক্ষক আছেন একজন। একমাত্র ওই প্রধান শিক্ষক ছয় শ্রেণির ২০টি ক্লাস নেন। কেবল ক্লাস নয়, সকালে বিদ্যালয় ভবন ও ক্লাসের তালা খোলা থেকে শুরু করে ছুটির পর দরজা বন্ধও করতে হয় তাঁকে।

বলা হয়েছে, এক বছর ধরে চারজন সহকারী শিক্ষকের পদ শূন্য রয়েছে প্রতিষ্ঠানটিতে। কিন্তু চরাঞ্চল হওয়ায় কোনো শিক্ষক আসতে চান না। এতে শিক্ষার্থীদের পাঠদান যেমন ব্যাহত হচ্ছে, তেমনি প্রধান শিক্ষকও হিমশিম খাচ্ছেন।

২০১৭ সালে বিদ্যালয়টি সরকারি করা হয়। শুরু থেকেই প্রধান শিক্ষক শাহ জামাল ও আরেকজন সহকারী শিক্ষক ছিলেন। ২০২২ সালের ডিসেম্বরে সহকারী শিক্ষক বদলি হয়ে চলে যান। এরপর বিদ্যালয়টিতে আর কোনো সহকারী শিক্ষক আসেননি।

শুরুতে শিক্ষার্থী বেশি ছিল। কিন্তু শিক্ষক-সংকটের কারণে অনেকেই অন্য স্কুলে চলে গেছে। এখন ৭২ জন শিক্ষার্থীর মধ্যে প্রাক্-প্রাথমিকে ১০, প্রথম শ্রেণিতে ১০, দ্বিতীয় শ্রেণিতে ১২, তৃতীয় শ্রেণিতে ১২, চতুর্থ শ্রেণিতে ১৩ এবং পঞ্চম শ্রেণিতে ১২ জন শিক্ষার্থী রয়েছে।

সম্প্রতি আজকের পত্রিকার প্রতিনিধি সরেজমিনে দেখেছেন, বিদ্যালয়ের অফিসকক্ষ ও দুটি শ্রেণিকক্ষ তালাবদ্ধ। একটি শ্রেণিকক্ষ খোলা। ওই শ্রেণিকক্ষে ১০ শিক্ষার্থীকে পড়াচ্ছিলেন প্রধান শিক্ষক। ওই ১০ শিক্ষার্থীর মধ্যে চারজন তৃতীয় শ্রেণির, দুজন চতুর্থ শ্রেণির এবং চারজন পঞ্চম শ্রেণির। সবাইকে একসঙ্গেই পাঠদান করতে হচ্ছে প্রধান শিক্ষককে। চারটি ক্লাসের পাঠদান একসঙ্গে এক কক্ষে নেওয়া কি সম্ভব? শিক্ষক কোন ছাত্রকে কী শেখান, কী পড়ান? এটা তো একধরনের প্রহসন।

এই প্রহসনের শিক্ষা একজন শিক্ষার্থীকে প্রকৃতপক্ষে আলোকিত ভবিষ্যৎ গড়ার পথের সন্ধান দিচ্ছে, না তার মূল্যবান সময়ের অপচয় করে আঁধারের পথে ঠেলছে? স্কুলটি চর এলাকায়। স্কুলে আসার রাস্তাঘাট একদমই খারাপ। বর্ষার সময় হেঁটেও চলাচল করা যায় না।

আশ্চর্যের বিষয় হলো, জামালপুর জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তার স্কুলটির এই দুর্দশার কথা জানা নেই। শিক্ষার বারোটা বাজলেও কর্মকর্তাদের বেতন-ভাতার তো সমস্যা নেই। নাকে তেল দিয়ে দায়িত্ব পালনের এই অপসংস্কৃতি আর কত দিন অব্যাহত থাকবে?

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত