Ajker Patrika

দালাল ও উচ্ছিষ্টভোগী সমাচার

আপডেট : ১৯ ডিসেম্বর ২০২১, ০৯: ৪৭
দালাল ও উচ্ছিষ্টভোগী সমাচার

নানা আয়োজনে, উৎসাহে, উদ্দীপনায় বিজয়ের ৫০ বছর পালন করলাম আমরা। ৫০ বছর একটি জাতির জীবনে খুব বেশি সময় নয়, আবার একেবারে কমও নয়। এই ৫০ বছরে আমরা পেয়েছি অনেক। আবার না পাওয়ার তালিকাও ছোট নয়। কেউ যদি বলেন, ৫০ বছরে কোনোই প্রাপ্তি নেই, বাংলাদেশ এগিয়ে যায়নি, তাহলে আসলে তিনি ডাহা মিথ্যা বলছেন। আবার যদি কেউ বলেন, ৫০ বছরে বাংলাদেশ সব পেয়েছির দেশ হয়ে উঠেছে, তাহলে তিনিও ঠিক বলছেন না। আমরা এগিয়েছি অবশ্যই। তবে আরও এগিয়ে যেতে হবে। যেসব অপ্রাপ্তি ও অপূর্ণতা রয়েছে, সেসব পাওয়ার পথ সুগম করতে হবে।

রাজনীতি একটি দেশের মূল চালিকাশক্তি। দেশের সব মানুষ রাজনীতি করেন না, অধিকাংশ মানুষই রাজনৈতিক দলের বাইরে থাকেন। আবার যাঁরা রাজনীতি করেন, রাজনীতিসচেতন তাঁরা সবাই একটি রাজনৈতিক দলের সদস্য হন না। মানুষ নানা মত ও নানা পথে বিভক্ত। আর এই ভিন্নতার মধ্যেও একসঙ্গে চলার ঐক্যসূত্র যে রাজনীতি, সেই রাজনীতিই মূলত জনকল্যাণমুখী, বেশি মানুষ তেমন রাজনীতির ওপরই ভরসা রাখেন। ইতিহাসের দীর্ঘ পথে না হেঁটে সংক্ষেপে বলার কথা এটাই যে, একটি গৌরবোজ্জ্বল মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশ স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। পাকিস্তান ছিল অগণতান্ত্রিক, সাম্প্রদায়িক ও বৈষম্যমূলক রাষ্ট্র। এসবের বিরুদ্ধে লড়েই যেহেতু বাংলাদেশের অভ্যুদয়, সেহেতু বাংলাদেশ রাষ্ট্রটি গণতান্ত্রিক, অসাম্প্রদায়িক ও বৈষম্যবিরোধী হবে–এটাই ছিল সাধারণ জনপ্রত্যাশা।

বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে শুরুটা সে রকমই হয়েছিল। কিন্তু তাঁকে হত্যার মধ্য দিয়ে ছন্দপতন হলো। তারপর আবার লড়াই, সংগ্রাম। একপর্যায়ে হত্যা কিংবা বন্দুকের নল দেখিয়ে ক্ষমতা দখলের ধারা বদল হলেও রাজনীতির ভেতর ঢুকে গেছে কতগুলো খারাপ প্রবণতা। একসময় বলা হতো ব্যক্তির চেয়ে দল বড়, দলের চেয়ে বড় দেশ। কিন্তু এখন দেশের চেয়ে দল বড়, আবার ক্ষেত্রবিশেষে দলের চেয়েও বড় হয়ে ওঠেন ব্যক্তি। একসময় রাজনৈতিক নেতারা নীতির প্রতি অনমনীয় থেকে কৌশলের ক্ষেত্রে নমনীয়তা দেখাতেন। এখন কৌশল ও নীতির প্রশ্নে নমনীয়তা দেখান অনেকেই।

দুঃশাসকদের পরাজিত করার বড় লক্ষ্য অর্জনের জন্য পূর্ব বাংলায় বৃহত্তর রাজনৈতিক ঐক্য গড়ে উঠেছিল ১৯৫৪ সালের নির্বাচনের সময় হক-ভাসানী-সোহরাওয়ার্দীর নেতৃত্বে। নির্বাচনে জয়ী হওয়া ছাড়া যুক্তফ্রন্টের অন্য অভিজ্ঞতা সুখকর হয়নি। ফলে পরবর্তী সময়ে সে ধরনের নির্বাচনী জোট আর গড়ে ওঠেনি। সত্তরের নির্বাচনে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান আওয়ামী লীগ নিয়ে একাই লড়েছেন এবং অভূতপূর্ব জয় পেয়েছেন।

মুক্তিযুদ্ধের সময় সর্বদলীয় ঐক্য গঠনের দাবিও আওয়ামী লীগ গ্রাহ্য করেনি। স্বাধীনতার পর আওয়ামী লীগ না চাইলেও ন্যাপ ও সিপিবি ঐক্যের নীতি নিয়ে অগ্রসর হয়েছে। স্বাধীন দেশের রাজনীতিতে গুণগত পরিবর্তন আনার জন্য শুধু সরকারের বিরোধিতা নয়, গঠনমূলক সমালোচনা, অর্থাৎ ঐক্য ও সংগ্রামের নীতি নিয়েছিল ন্যাপ-সিপিবি। মানুষ অবশ্য ঐক্যটাই দেখেছে, সংগ্রাম সেভাবে দেখেনি। এতে সাংগঠনিকভাবে তারা ক্ষতিগ্রস্ত, না লাভবান হয়েছিল, তার কোনো বস্তুনিষ্ঠ মূল্যায়ন সম্ভবত করা হয়নি। ন্যাপ-সিপিবিকে আওয়ামী লীগের বি-টিম বা দালাল বলে খোঁটা দেওয়া হলেও, সিপিবি কিন্তু সে সময় সাংগঠনিক শক্তিসামর্থ্য বাড়াতে ও দৃশ্যমান করে তুলতে পেরেছিল।

এরশাদের সামরিক শাসনবিরোধী আন্দোলনের সময় দেশে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে জোট গড়ে তোলার যে ধারা তৈরি হয়, তা পরে আরও সংহত হয়েছে। দেশে রাজনৈতিক দলের সংখ্যা অনেক। তবে মানুষ মূলত দুই ধারায় বিভক্ত। একটা আওয়ামী লীগের ধারা, অন্যটি আওয়ামী লীগবিরোধী তথা বিএনপি-জামায়াত ধারা। রাজনৈতিক জোটও আওয়ামী লীগ এবং বিএনপির নেতৃত্বেই গঠিত। ভোটের রাজনীতিতে ছোট দলগুলোর উল্লেখযোগ্য কোনো অবস্থান নেই। তাই তারা আওয়ামী লীগ কিংবা বিএনপির সঙ্গে থেকে ক্ষমতার হিস্যা নিতে চায়। দেশে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে আছে ১৪-দলীয় জোট এবং বিএনপির নেতৃত্বে ২০-দলীয় জোট। আওয়ামী লীগ টানা তিন মেয়াদে ক্ষমতায় আছে। এটা বাংলাদেশের জন্য একটি ব্যতিক্রমী ঘটনা। আওয়ামী লীগের প্রধান প্রতিপক্ষ বিএনপি এই সময়জুড়েই ক্ষমতার বাইরে আছে। ক্ষমতার পেটে থেকে জন্ম নেওয়া রাজনৈতিক দলটি এত দীর্ঘ সময় ক্ষমতার বাইরে থেকেও টিকে আছে, এটাও এক বড় ঘটনা।

২০০৯ ও ২০১৪ সালে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে সরকার গঠনের সময় আওয়ামী লীগ জোটসঙ্গীদের ‘মূল্যায়ন’ করলেও, অর্থাৎ মন্ত্রিত্বের ভাগ দিলেও ২০১৮ সালে মন্ত্রিসভায় জোটের অংশীদারত্ব নেই। আনুষ্ঠানিকভাবে জোট ভেঙে দেওয়া না হলেও জোটের সঙ্গে আওয়ামী লীগের নৈকট্য কমেছে। জাতীয় পার্টি একসময় মন্ত্রিসভায়ও ছিল আবার সংসদে বিরোধী দলের দায়িত্বও পালন করেছে। এখন জাতীয় পার্টি মন্ত্রিসভায় না থাকলেও সংসদে বিরোধী দলের ভূমিকা পালন করছে। জোটের রাজনীতি নিয়ে জোটসঙ্গীদের মধ্যে ক্ষোভ-অসন্তোষের বিষয়টি আর গোপন থাকছে না।

এরশাদের তৈরি জাতীয় পার্টির মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নু গত ২৭ নভেম্বর জাতীয় সংসদে এক বক্তৃতায় বলেছেন, ‘সরকারের কথা বলতে গিয়ে এমন অবস্থা হয়েছে, জনগণ এখন আমাদের আওয়ামী লীগের দালাল বলে। আমরা এখন দালালি নামটা মুছতে চাই। তারপরও যদি আপনাদের মন না ভরে, তাহলে তো কিছু করার নেই।’

‘দালালি’ নাম মোছার জন্য আগামী নির্বাচনে যদি আওয়ামী লীগের সঙ্গে কোনো ধরনের আসন সমঝোতা না হয়, তাহলে জাতীয় পার্টি কি খুব ভালো ফল করবে? গণ-আন্দোলনের মুখে এরশাদের পতনের পরও রংপুরসহ দেশের কিছু এলাকায় জাতীয় পার্টির যে জনপ্রিয়তা ছিল, এত বছর পর তা আর নেই। এককভাবে নির্বাচন করে জাপা কয়টি আসনে জিততে পারবে, তা নিয়ে ভবিষ্যদ্বাণী করার মতো রাজনৈতিক জ্যোতিষী দেশে আছে বলে মনে হয় না।

১৪-দলের অন্যতম শরিক দল ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেননের মুখেও সম্প্রতি আক্ষেপের কথা শোনা গেছে। ১৫ ডিসেম্বর এক সভায় মেনন বলেছেন, ‘জনগণ আমাদের ক্ষমতার উচ্ছিষ্টভোগী বলে। ১৪-দলকে সেভাবে গড়ে তুলতে পারিনি। আওয়ামী লীগ আমাদের দ্বারে দ্বারে ঘুরে ঐক্যের কথা বলেছে। সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে গণতান্ত্রিক আন্দোলনের স্বার্থে আমরা ঐক্য করেছিলাম। কিন্তু সেই ঐক্যের প্রতিফলন আমরা পাইনি।’

ক্ষমতায় যাওয়ার জন্য জোটের প্রয়োজন থাকলেও ক্ষমতায় যাওয়ার পর জোট নিয়ে আর তেমন আগ্রহ থাকে না। তারপরও রাশেদ খান মেনন মন্ত্রী হয়েছেন। এখনো সাংসদ আছেন। এগুলো তো ঐক্যের সুফল। আওয়ামী লীগ দয়া না করলে কি এসব হতো? রাজনীতিটা এখন আসলে পাওয়ারই জায়গা হয়ে উঠেছে। পাওয়ার সুযোগ ও সম্ভাবনা না থাকলে আর দল কেন, জোট কেন, রাজনীতি কেন? রাজনীতির কারণেই তো কতজন নেতা হয়েছেন, ক্ষমতার স্বাদও পেয়েছেন। মানুষ দালাল কিংবা উচ্ছিষ্টভোগী বললেই ক্ষতি কী? ভোগ করতে তো সমস্যা হয়নি, হচ্ছে না। তবে ক্ষমতা তো কারোর জন্যই চিরস্থায়ী নয়। তাই দালাল হওয়া কিংবা উচ্ছিষ্টভোগী হওয়াও চিরকালের বিষয় হতে পারে না।

আগামী নির্বাচনের এখনো দেরি আছে। কেমন হবে আগামী নির্বাচন, তা এখনই বলা মুশকিল। জোট থাকবে, নাকি একক শক্তিতে মাঠে নামবে আওয়ামী লীগ—তা-ও পরিষ্কার নয়। আওয়ামী লীগ ঐক্য নিয়ে খুব চিন্তিত বলেও মনে হয় না। রাজনীতি এখন পুরোপুরি আওয়ামী লীগের নিয়ন্ত্রণে। কেউ জোট থেকে বেরিয়ে গেলে আওয়ামী লীগ অথই পানিতে ভাসবে, তা নয়। আওয়ামী লীগ মনে করে ভাত ছিটালে কাকের অভাব হয় না। দেশে যেমন রাজনৈতিক ‘কাউয়া’ বা কাকের অভাব নেই, তেমনি আওয়ামী লীগেরও এখন ভাতের অভাব নেই। পুরোনো দালাল ও উচ্ছিষ্টভোগীর বদলে নতুন দালাল ও উচ্ছিষ্টভোগী জুটে যাবে।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বৃহস্পতি এখন তুঙ্গে। আওয়ামী লীগই শুধু এখন হাসিনানির্ভর নয়, দেশও মোটামুটি হাসিনানির্ভর। শেখ হাসিনা দীর্ঘ সময় প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করে অভিজ্ঞতায় সমৃদ্ধ হয়েছেন, হয়েছেন আত্মবিশ্বাসী। উত্তরাধিকারের রাজনীতি নিয়ে যে সমালোচনা, তার বৃত্ত তিনি ভেঙেছেন। ইতিবাচক পথে হেঁটে তিনি মানুষের মধ্যে আস্থা ও বিশ্বাস তৈরিতে সক্ষম হয়েছেন। কিন্তু প্রশ্ন হলো, একা তিনি আর কত টানবেন? রাজনীতির ম্যাকানিজম নাকি তাঁর নিয়ন্ত্রণে। সবাইকে তাক লাগিয়ে দেওয়ার জন্য তিনি তাঁর ঝুলিতে পরবর্তী কী ম্যাকানিজম নিয়ে বসে আছেন, সেটাই দেখার অপেক্ষা।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

মসজিদে আমির হামজাকে রাজনৈতিক আলোচনা করতে নিষেধ করায় লাঞ্ছিত বিএনপি নেতা

মেট্রোরেলের বিয়ারিং প্যাড পড়ে নিহত কালাম ভাইয়ের সংসারও সামলাতেন, পরিবারে হাহাকার

ঘুষ হিসেবে পাকা কলা নেওয়ার কথা স্বীকার, দুদকের গণশুনানিতে তাৎক্ষণিক বদলির আদেশ

তিন ঘণ্টা পর আংশিক চালু মেট্রোরেল

জীবনের শেষ ইচ্ছার কথা ফেসবুকে প্রকাশ, বাস্তবেও ঘটল তাই

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় শেষ সাক্ষীর জেরা চলছে

বাসস, ঢাকা  
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ফাইল ছবি
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ফাইল ছবি

গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।

আজ সোমবার বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের ট্রাইব্যুনাল-১-এ মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা (আইও) মো. আলমগীরের জেরা শুরু করেন রাষ্ট্র নিযুক্ত আইনজীবী আমীর হোসেন। আইনজীবী আমীর হোসেন পলাতক আসামি শেখ হাসিনা ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের পক্ষে শুনানি করছেন। এর আগে গত মঙ্গলবার তদন্তকারী কর্মকর্তা মো. আলমগীরের সাক্ষ্য গ্রহণ সম্পন্ন হয়।

এই মামলার শুনানিতে এর আগে গণ-অভ্যুত্থানের অন্যতম প্রতীক শহীদ আবু সাঈদের বাবাসহ স্বজনহারা পরিবারের একাধিক সদস্য সাক্ষ্য দিয়েছেন। এ ছাড়া মামলার গুরুত্বপূর্ণ ‘স্টার উইটনেস’ হিসেবে সাক্ষ্য দেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক এবং জুলাই আন্দোলনের অন্যতম নেতৃত্বদানকারী নাহিদ ইসলাম এবং দৈনিক আমার দেশ পত্রিকার সম্পাদক ড. মাহমুদুর রহমান।

গত বছরের জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার আন্দোলন দমনে আওয়ামী লীগ সরকার, তাদের দলীয় ক্যাডার ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর একটি অংশ গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটিত করে বলে অভিযোগ ওঠে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে শেখ হাসিনা, তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল এবং তৎকালীন আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের বিরুদ্ধে গত ১০ জুলাই অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দেন ট্রাইব্যুনাল-১।

পরবর্তীকালে, এই মামলার অন্যতম আসামি সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন দোষ স্বীকার করে ঘটনার সত্যতা উদ্‌ঘাটনে রাজসাক্ষী (অ্যাপ্রোভার) হওয়ার জন্য ট্রাইব্যুনালে আবেদন করেন। ট্রাইব্যুনাল তাঁর আবেদন মঞ্জুর করলে তিনি রাজসাক্ষী হিসেবে এই মামলায় সাক্ষ্য দেন।

মামলার প্রসিকিউশন পক্ষে শুনানি করছেন চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম, প্রসিকিউটর মিজানুল ইসলাম এবং গাজী এসএইচ তামিম। শুনানিতে তাঁদের সঙ্গে অপর প্রসিকিউটররাও উপস্থিত ছিলেন।

অন্যদিকে, এই মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে রাজসাক্ষী হওয়া সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের পক্ষে আছেন আইনজীবী যায়েদ বিন আমজাদ।

মানবতাবিরোধী অপরাধের এই মামলা ছাড়াও ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে আরও দুটি মামলা বিচারাধীন। এর মধ্যে একটি মামলায় আওয়ামী লীগের সাড়ে ১৫ বছরের শাসনামলে সংঘটিত গুম-খুনের ঘটনায় তাঁকে আসামি করা হয়েছে। অন্য মামলাটি হলো রাজধানীর মতিঝিলের শাপলা চত্বরে হেফাজতে ইসলামের সমাবেশে হত্যাকাণ্ড নিয়ে। এই তিনটি মামলার বিচারকাজই বর্তমানে দুটি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে চলমান।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

মসজিদে আমির হামজাকে রাজনৈতিক আলোচনা করতে নিষেধ করায় লাঞ্ছিত বিএনপি নেতা

মেট্রোরেলের বিয়ারিং প্যাড পড়ে নিহত কালাম ভাইয়ের সংসারও সামলাতেন, পরিবারে হাহাকার

ঘুষ হিসেবে পাকা কলা নেওয়ার কথা স্বীকার, দুদকের গণশুনানিতে তাৎক্ষণিক বদলির আদেশ

তিন ঘণ্টা পর আংশিক চালু মেট্রোরেল

জীবনের শেষ ইচ্ছার কথা ফেসবুকে প্রকাশ, বাস্তবেও ঘটল তাই

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

ঝাঁকে ঝাঁকে ইলিশ পাওয়ার আশায় সাগরে জেলেরা

  • এবার ভারতের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে নিষেধাজ্ঞা দেয় সরকার।
  • গতকাল দিনভর ছিল উপকূলের জেলে পল্লিগুলোতে ব্যস্ততা।
মাছ শিকারের নিষেধাজ্ঞা শেষ হয়েছে বুধবার রাতে। এর আগে দিনভর সাগরে যাওয়ার প্রস্তুতি নেন জেলেরা। অনেকে দেখে নেন ট্রলার ঠিকঠাক আছে কি না। কেউ আবার জালের ছেঁড়া অংশ সেলাই করেন। ছবিটি কক্সবাজার-টেকনাফ মেরিন ড্রাইভের খুরেরমুখ এলাকার। ছবি: আজকের পত্রিকা
মাছ শিকারের নিষেধাজ্ঞা শেষ হয়েছে বুধবার রাতে। এর আগে দিনভর সাগরে যাওয়ার প্রস্তুতি নেন জেলেরা। অনেকে দেখে নেন ট্রলার ঠিকঠাক আছে কি না। কেউ আবার জালের ছেঁড়া অংশ সেলাই করেন। ছবিটি কক্সবাজার-টেকনাফ মেরিন ড্রাইভের খুরেরমুখ এলাকার। ছবি: আজকের পত্রিকা

‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর সঙ্গে।

মাছের সুষ্ঠু প্রজনন, উৎপাদন, মৎস্যসম্পদ সংরক্ষণ ও টেকসই মৎস্য আহরণের জন্য সমুদ্রে সব ধরনের মাছ শিকার ৫৮ দিনের নিষেধাজ্ঞা গতকাল বুধবার দিবাগত মধ্যরাতে শেষ হয়েছে। তাই গতকাল দিনভর ছিল উপকূলের জেলেপল্লিগুলোতে ব্যস্ততা। অনেকে দেখে নিচ্ছিলেন ট্রলার ঠিকঠাক আছে কি না, কেউ জালের ছেঁড়া অংশ সেলাই করছিলেন, কেউ আবার প্রয়োজনীয় খাদ্যসামগ্রীসহ অন্য সরঞ্জাম গুছিয়ে নিচ্ছিলেন।

বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র এবং ফকিরহাট উপ-মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের ঘাটে গতকাল শত শত ট্রলার নোঙর করে রাখা ছিল। জেলেদের উপস্থিতিতে ঘাট এলাকা সরগরম হয়ে ওঠে। ফকিরহাটের মুদি-মনিহারি দোকানগুলোতে জেলেরা কেনাকাটা করতে ভিড় জমান। ফকিরহাট এলাকার বিসমিল্লাহ ট্রলারের মাঝি রহিম মিয়া বলেন, ‘সাগরে মাছ শিকারে যেতে সকল প্রস্তুতি নিয়েছি। নিষেধাজ্ঞার সময় শেষ হওয়ামাত্রই সাগরে নামব।’

জেলে নুরসাইদ ও ফোরকান মিয়া বলেন, ‘নিষেধাজ্ঞার সময় পরিবার-পরিজন নিয়ে বেশ কষ্টে কেটেছে। ওই সময়ে বেশ টাকা ঋণ করেছি। এখন সাগরে যাব। দেখি আল্লাহ ঋণ পরিশোধ করতে দেন কি না।’

নোয়াখালীর হাতিয়ার সূর্যমুখী, বাংলাবাজার, কাজিরবাজার, পাইতান মার্কেট চেয়ারম্যান ঘাটসহ বেশ কয়েকটি ঘাটে গতকাল জেলেদের ব্যস্ত সময় পার করতে দেখা গেছে। অনেকে নৌকায় জাল তুলছিলেন, আবার অনেকে জ্বালানি তেল মজুতসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্রী ট্রলারে নিয়ে যান। সূর্যমুখী ঘাটের এমভি মায়ের দোয়া ট্রলারের মাঝি জাফর উল্যা বলেন, ‘সাগরে ৮-১০ দিন থাকার প্রস্তুতি নিচ্ছি। সন্ধ্যায় সাগরের উদ্দেশে রওনা দেব।’

সূর্যমুখী ঘাট জেলে সমিতির সভাপতি জবিয়ল হক বলেন, ‘সাগরে নামতে প্রস্তুত নোয়াখালীর হাতিয়ার ২০টি ঘাটের লক্ষাধিক জেলে। এসব ঘাটে প্রায় ১০ হাজার ছোট-বড় ফিশিং ট্রলার রয়েছে। প্রতি ট্রলারে ১০ জন হলেও লক্ষাধিক জেলে এই মাছ ধরার সঙ্গে জড়িত। তাঁদের সবাই গত ৫৮ দিন তীরে বেকার ছিলেন।’

পিরোজপুরের ইন্দুরকানি উপজেলার পাড়েরহাট মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের পার্শ্ববর্তী এলাকার জেলেরা গতকাল দিনভর সাগরে যাওয়ার প্রস্তুতি নেন। এ ছাড়া মঠবাড়িয়া উপজেলার সাপলেজা, খেতাচিড়া, বড়মাছুয়া, ছোটমাছুয়া, ভান্ডারিয়া উপজেলার চরখালী, হেতালিয়া, কাউখালী উপজেলার সোনাকুর এলাকার জেলেরা, সদর উপজেলা এবং নেছারাবাদ উপজেলার বিভিন্ন এলাকার জেলেরা প্রস্তুতি শেষে গত রাতে বঙ্গোপসাগরে রওনা হন।

কয়েক দিন ধরে কক্সবাজার উপকূলের জেলেপল্লিগুলোতে নৌকা, জাল মেরামতসহ বিভিন্ন প্রস্তুতি সেরেছেন জেলেরা। গতকাল মেরিন ড্রাইভের টেকনাফের খুরেরমুখ, সাবরাং ও বাহারছড়া এলাকায় দেখা গেছে, সড়কে দাঁড় করিয়ে রাখা সারি সারি ট্রলারে জাল ও রসদ তোলেন জেলেরা।

একটি ট্রলারের মাঝি আবু তাহের জানান, এবার ভারতের সঙ্গে মিল রেখে নিষেধাজ্ঞা দেওয়ায় কেউ সাগরে মাছ শিকারে নামেনি। এতে উপকূলের কাছাকাছি সাগরে জাল ফেললেই ইলিশসহ অন্য মাছ পাওয়া যাবে বলে আশাবাদী তিনি।

কক্সবাজার শহরের ফিশারি ঘাটের মৎস্য ব্যবসায়ী সমিতির পরিচালক জুলফিকার আলী জানান, কক্সবাজার উপকূলে ছোট-বড় ৭ হাজারের মতো যান্ত্রিক ট্রলার রয়েছে। এসব ট্রলারে প্রায় এক লাখ জেলে ও শ্রমিক নিয়োজিত রয়েছেন। অধিকাংশ ট্রলার নিষেধাজ্ঞা ওঠার সঙ্গে সঙ্গে সাগরে রওনা হবে।

[প্রতিবেদন তৈরিতে তথ্য দিয়ে সহায়তা করেছেন বরগুনা ও আমতলী, পিরোজপুর, কক্সবাজার এবং হাতিয়া প্রতিনিধি]

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

মসজিদে আমির হামজাকে রাজনৈতিক আলোচনা করতে নিষেধ করায় লাঞ্ছিত বিএনপি নেতা

মেট্রোরেলের বিয়ারিং প্যাড পড়ে নিহত কালাম ভাইয়ের সংসারও সামলাতেন, পরিবারে হাহাকার

ঘুষ হিসেবে পাকা কলা নেওয়ার কথা স্বীকার, দুদকের গণশুনানিতে তাৎক্ষণিক বদলির আদেশ

তিন ঘণ্টা পর আংশিক চালু মেট্রোরেল

জীবনের শেষ ইচ্ছার কথা ফেসবুকে প্রকাশ, বাস্তবেও ঘটল তাই

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

ভারতের নিষেধাজ্ঞা: স্থলবন্দর থেকে ফেরত আসছে রপ্তানি পণ্য

  • ক্রয়াদেশের চালান নিয়ে বাড়ছে দুশ্চিন্তা
  • সরকারের সিদ্ধান্তের অপেক্ষা
  • আজ বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ডেকেছে জরুরি বৈঠক
নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা
আপডেট : ২০ মে ২০২৫, ০২: ৪৪
ফাইল ছবি
ফাইল ছবি

ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।

ভারতের নিষেধাজ্ঞার এক দিন পরই গত রোববার লালমনিরহাটের বুড়িমারী ও যশোরের বেনাপোল স্থলবন্দরসহ বিভিন্ন বন্দরে পণ্যের ট্রাক আটকে দেয় ভারত। সংশ্লিষ্টদের সূত্রে জানা যায়, রোববার ভারতের আমদানি বিধিনিষেধের কারণে বুড়িমারী সীমান্তে প্রাণের ১৭ ট্রাক খাদ্যপণ্য আটকে যায়। এ ছাড়া বেনাপোলে ৩৬টি পোশাক বোঝাই ট্রাকসহ অন্যান্য পণ্যের শতাধিক ট্রাক ঢুকতে পারেনি।

গতকাল সোমবার পর্যন্ত বুড়িমারী থেকে প্রাণের পণ্যবোঝাই ট্রাকগুলোর অর্ধেকের বেশি ফেরত নিয়ে আসে প্রতিষ্ঠানটি। এ ছাড়া বেনাপোলে পোর্টের ভেতরে ২৪টি ট্রাক ছাড়া বাকিগুলো ফেরত চলে যায়।

বেনাপোল বন্দর সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট স্টাফ অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মো. সাজেদুর রহমান গতকাল সোমবার আজকের পত্রিকাকে বলেন, গতকাল পোর্টের ভেতর ও বাইরে শতাধিক ট্রাক দাঁড়িয়ে ছিল। আজ পোর্টের ভেতরের ২৪টি ছাড়া বাকিগুলো ফেরত নিয়ে গেছেন মালিকেরা। এখন পর্যন্ত মনে হচ্ছে, পোর্টের ভেতরের ট্রাকগুলোও ফেরত নিতে হবে।

জানতে চাইলে প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের পরিচালক (বিপণন) কামরুজ্জামান কামাল আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমাদের হাতে ৬ মিলিয়ন ডলারের ক্রয় আদেশ রয়েছে। তার মধ্য থেকে রোববার বুড়িমারী দিয়ে ১৭ ট্রাকবোঝাই পণ্য পাঠিয়েছিলাম। কিন্তু সেগুলো ঢুকতে পারেনি। ট্রাকগুলো ফেরত আনা হচ্ছে। নতুন করে কাগজপত্র তৈরি করে অন্য পথ দিয়ে পণ্য পাঠাতে হবে।’

বেনাপোল স্থলবন্দর সূত্রে জানা যায়, ওই ২৪টি ট্রাক পোর্টের ভেতরে থাকায় এখনো তারা ভারতে প্রবেশের অপেক্ষায় রয়েছে। তাদের আশা, যেহেতু নিষেধাজ্ঞার আগে এই পণ্যগুলোর এলসি করা হয়েছিল, তাই এগুলো প্রবেশে অনুমতি পাবে। তবে এটি নির্ভর করবে বাংলাদেশ সরকারের আলোচনার ওপর।

এমন পরিস্থিতিতে সরকারের সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় রয়েছেন ব্যবসায়ীরা। ইতিমধ্যে অনেক রপ্তানিকারক রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) সঙ্গে আলোচনা করে সরকারের সহযোগিতা চেয়েছে।

স্থলবন্দরের মাধ্যমে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জসমূহ এবং আশু করণীয় নির্ধারণে বাণিজ্যসচিবের সভাপতিত্বে আজ মঙ্গলবার আন্তমন্ত্রণালয়ের সভা ডেকেছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।

বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, স্থলবন্দরের মাধ্যমে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জসমূহ এবং আশু করণীয় নির্ধারণে বাণিজ্যসচিবের সভাপতিত্বে বিকেল ৪টায় আন্তমন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে এই সভা অনুষ্ঠিত হবে।

সভায় নৌপরিবহন ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশন, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড, বাংলাদেশ স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষ, রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো, জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের প্রতিনিধিদের উপস্থিত থাকতে বলা হয়েছে। এ ছাড়া ব্যবসায়ী প্রতিনিধি হিসেবে এফবিসিসিআই, বিজিএমইএ, ভারত-বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির প্রতিনিধিদের উপস্থিতির জন্য আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে।

ভারতের শিল্প ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয় গত শনিবার হঠাৎ এক বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে স্থলবন্দর দিয়ে বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক আমদানি নিষিদ্ধ করে। শুধু ভারতের নবসেবা ও কলকাতা সমুদ্রবন্দর ব্যবহার করে দেশটির আমদানিকারকেরা বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক আমদানি করতে পারবেন বলে ওই বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়। এ ছাড়া বাংলাদেশ থেকে ভারতের আসাম, মেঘালয়, ত্রিপুরা ও মিজোরাম, পশ্চিমবঙ্গের চ্যাংড়াবান্দা ও ফুলবাড়ী শুল্ক স্টেশন দিয়ে ফল, ফলের স্বাদযুক্ত পানীয়, কোমল পানীয়, প্রক্রিয়াজাত খাদ্য, প্লাস্টিক পণ্য, সুতা, সুতার উপজাত, আসবাব রপ্তানিও নিষিদ্ধ করা হয় ওই বিজ্ঞপ্তিতে।

আমদানি ও রপ্তানিসংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা জানান, দেশের ২৪টি বন্দরের মধ্যে ১৬টি বন্দর দিয়ে ভারতের সঙ্গে আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য হয়ে থাকে। তবে যোগাযোগব্যবস্থা সহজ হওয়ায় বেনাপোল ও ভারতের পেট্রাপোল বন্দর দিয়ে সবচেয়ে বেশি আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য হয়। এর পরিমাণ ৮০ শতাংশ। বেনাপোল বন্দর দিয়ে প্রতিদিন ভারতে ২৫০ থেকে ৩০০ ট্রাকে বিভিন্ন ধরনের পণ্য রপ্তানি হয়। এর মধ্যে শতাধিক ট্রাক পণ্য থাকে তৈরি পোশাক।

এর আগে গত ৮ এপ্রিল বাংলাদেশের জন্য ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা বাতিল করে ভারত। ফলে ভারতের বিমানবন্দর ব্যবহার করে তৃতীয় কোনো দেশে তৈরি পোশাক রপ্তানি করতে পারছে না বাংলাদেশ। অন্যদিকে প্রায় এক মাস আগে ভারত থেকে বেনাপোল, ভোমরা, সোনামসজিদ, বাংলাবান্ধা, বুড়িমারী স্থলবন্দর দিয়ে সুতা আমদানির সুযোগ বন্ধ করে দেয় বাংলাদেশের জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)।

সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) বিশেষ ফেলো মোস্তাফিজুর রহমানের মতে, এই পাল্টাপাল্টি পদক্ষেপে তুলনামূলকভাবে বেশি নেতিবাচক প্রভাব পড়বে বাংলাদেশের ওপর। তাই ভারতের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য ঘাটতি কমানোর চেষ্টা অব্যাহত রাখাই সরকারের উচিত বলে মনে করছেন তিনি।

মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, আলোচনার মাধ্যমে বাংলাদেশ এবং ভারতের বিরোধপূর্ণ বিষয়সমূহ মিটিয়ে ফেলতে হবে এবং দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য সম্পর্কের ক্ষেত্রে ভারসাম্য প্রতিষ্ঠা করতে হবে। এটাই হবে উভয় দেশের জন্য কল্যাণকর।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

মসজিদে আমির হামজাকে রাজনৈতিক আলোচনা করতে নিষেধ করায় লাঞ্ছিত বিএনপি নেতা

মেট্রোরেলের বিয়ারিং প্যাড পড়ে নিহত কালাম ভাইয়ের সংসারও সামলাতেন, পরিবারে হাহাকার

ঘুষ হিসেবে পাকা কলা নেওয়ার কথা স্বীকার, দুদকের গণশুনানিতে তাৎক্ষণিক বদলির আদেশ

তিন ঘণ্টা পর আংশিক চালু মেট্রোরেল

জীবনের শেষ ইচ্ছার কথা ফেসবুকে প্রকাশ, বাস্তবেও ঘটল তাই

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

নিলামে গৌতম বুদ্ধের রত্নসম্ভার

নিলামে গৌতম বুদ্ধের রত্নসম্ভার

আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।

১৮৯৮ সালে ভারতের উত্তর প্রদেশের একটি ধূলিধূসর টিলা খুঁড়ে পাওয়া মূল্যবান এই রত্নগুলো এক শতাব্দীর বেশি সময় ধরে একটি বেসরকারি ব্রিটিশ সংগ্রহাগারে প্রায় দৃষ্টিচক্ষুর আড়ালে ছিল। এখন যেহেতু রত্নগুলোর হাতবদলের সময় এসেছে, তাই নতুন সংগ্রাহকেরা আগ্রহ নিয়ে এগুলো সংগ্রহের জন্য অপেক্ষা করছেন। কিন্তু এখানে একটা অস্বস্তিও তৈরি হয়েছে।

গৌতম বুদ্ধের জন্মস্থান লুম্বিনীর কাছাকাছি, বর্তমানে ভারতের উত্তর প্রদেশে একটি ইটের ঘরের ভেতর থেকে প্রায় ১ হাজার ৮০০টি মুক্তা, রুবি, টোপাজ, নীলা ও নকশা করা সোনার পাত সংগ্রহ করা হয়েছিল। তবে এই রত্নগুলোর সঙ্গে সঙ্গে একটি খোদাই করা পাত্রে হাড়ের টুকরাও পাওয়া যায়, যেগুলোকে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষ বলে শনাক্ত করা হয়। এই আবিষ্কার তখন প্রত্নতত্ত্বের জগতে ব্যাপক আলোড়ন তোলে।

সাদাবি’স এশিয়ার চেয়ারম্যান নিকোলাস চাউ মনে করেন, স্মরণকালের বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর মাঝে এই রত্নসম্ভার অন্যতম। তবে এগুলো নিলামে তোলার কারণে একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন তৈরি হয়েছে। আর তা হচ্ছে—ভারতের ইতিহাসের সঙ্গে গভীরভাবে জড়িয়ে থাকা এবং বৌদ্ধদের কাছে পবিত্র এই সম্পদ বিক্রি করা কি নৈতিকভাবে গ্রহণযোগ্য?

১৮৯৮ সালে ব্রিটিশ এস্টেট ম্যানেজার উইলিয়াম ক্ল্যাক্সটন পেপ্পে লুম্বিনির ঠিক দক্ষিণে পিপ্রাওয়ায় অবস্থিত একটি ঢিবি খনন করেন। সেখান থেকেই প্রায় ২ হাজার বছর আগের ওই নির্দশনগুলো খুঁজে পাওয়া যায়।

ইতিহাসবিদদের মতে, প্রাপ্ত রত্নসম্ভার ও দেহাবশেষ, যা তখনো পর্যন্ত অক্ষত ছিল, সেগুলো গৌতম বুদ্ধের শাক্য বংশের এবং বিশ্বব্যাপী বৌদ্ধদের ঐতিহ্য। হাড়ের নিদর্শনগুলো থাইল্যান্ড, শ্রীলঙ্কা ও মিয়ানমারের মতো দেশগুলোতে বিতরণ করা হয়েছে। এসব দেশে এখনো সেগুলোর পূজা করা হয়।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

মসজিদে আমির হামজাকে রাজনৈতিক আলোচনা করতে নিষেধ করায় লাঞ্ছিত বিএনপি নেতা

মেট্রোরেলের বিয়ারিং প্যাড পড়ে নিহত কালাম ভাইয়ের সংসারও সামলাতেন, পরিবারে হাহাকার

ঘুষ হিসেবে পাকা কলা নেওয়ার কথা স্বীকার, দুদকের গণশুনানিতে তাৎক্ষণিক বদলির আদেশ

তিন ঘণ্টা পর আংশিক চালু মেট্রোরেল

জীবনের শেষ ইচ্ছার কথা ফেসবুকে প্রকাশ, বাস্তবেও ঘটল তাই

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত