Ajker Patrika

চোখে আলো নেই, গানেই চলে শাহিনের সংসার

তারাগঞ্জ প্রতিনিধি
আপডেট : ০১ এপ্রিল ২০২২, ২২: ০২
চোখে আলো নেই, গানেই চলে শাহিনের সংসার

বেলা ২টা। তারাগঞ্জ বাজারের অগ্রণী ব্যাংকের মোড়ে একটি পান দোকানে একদল মানুষের জটলা। সেখান থেকে ঢোলের তালে মধুর সুরে ভেসে আসছে গান। ভিড় ঠেলে এগোতেই দেখা মেলে শাহিনের। পুরো নাম শাহিনুর ইসলাম শাহিন। জন্ম থেকে অন্ধ শাহিন ভিক্ষা না করে মানুষকে গান শুনিয়ে জীবিকা নির্বাহ করেন। শাহিনের বাড়ি রংপুর সদর উপজেলার হরিদেবপুর ইউনিয়নের বানিয়াপাড়া গ্রামে। বিভিন্ন বাজার, বাসস্ট্যান্ড, পাড়ার মোড়ে গান করে শাহিন জীবিকা নির্বাহ করেন। নির্বাচন বা অন্য কোনো প্রচারের সময় শাহিনের কদর বেড়ে যায়।

গানের পসরায় দাঁড়িয়ে থাকা মানুষগুলোর কথা শুনে বোঝা যায় শাহিন তাঁদের সুপরিচিত। তাই সবাই আপন মনে তাঁর গান শুনছিলেন। গান শুনে শ্রোতারা খুশি হয়ে শাহিনের হাতে যা দেন তাতেই তাঁর সংসারের খরচ চলে।

শাহিনুর ইসলাম জানান, ১৪ বছরে আগে বিয়ে করেন। এরপর থেকে শাহিন জীবিকা হিসেবে গান গাওয়াকে বেছে নেন। তাঁর এক মেয়ে শারমিন আক্তার (১১) স্থানীয় বিদ্যালয়ের চতুর্থ শ্রেণিতে ও ছেলে শামীম ইসলাম (৮) দ্বিতীয় শ্রেণিতে পড়ে। সহায় সম্বল বলতে তিন শতক জমি ও একটি টিনের ভাঙাচোরা ঘর।

ওই মোড়ের প্রান্ত পান বিতানের মালিক তিলক চন্দ্র রায় বলেন, ‘শাহিন আধ্যাত্মিক ধরনের গান করেন। তাঁর গান শুনে প্রাণ জুড়ে যায়। মনে প্রশান্তি আসে। সে নিজের মনের কথা দিয়েও অনেক গান বানিয়েছেন। সেগুলোও আমাদের মাঝে মধ্যে শোনায়। বিনিময়ে আমরা ৫-১০ টাকা করে দিই।’

গানের আসরে দাঁড়িয়ে থাকা ডাঙ্গাপাড় গ্রামের রহমত মন্ডল বলেন, ‘প্রতিবন্ধীদের আদর্শ শাহিনুর। তাকে এমনি টাকা দিলে কখনো নেন না। গান শোনাবেন তারপর টাকা নেবেন। শাহিন ভিক্ষাবৃত্তিকে মন থেকে ঘৃণা করেন। শুধু তারাগঞ্জই নয়, রংপুরের বিভিন্ন হাট বাজারে গান করেন। মানুষ তাঁর গানকে ভালোবাসে।’

শাহিনুর ইসলাম বলেন, ‘ভিক্ষা নয় মানুষকে আনন্দ দিয়ে আয় করেই জীবিকা নির্বাহ করতে চাই। আমি দৃষ্টি প্রতিবন্ধী রিকশাভ্যান চালাতে পারি না। অন্য কাজও করতে পারি না। সহায় সম্বলও নেই। এ অবস্থায় আমার আয়ের পথ ভিক্ষা করা। কিন্তু আমি ভিক্ষা করা পছন্দ করি না। গান গেয়ে মানুষকে আনন্দ দিয়ে যা আয় করছি তাই দিয়ে সংসার চালাচ্ছি। জীবন যত দিন আছে মানুষকে গান শুনিয়ে, আনন্দ দিয়ে যা রোজগার হবে তাই দিয়ে জীবন নির্বাহ করব।’

প্রতিবন্ধী ভাতা পেয়েছেন কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘৯০ দিন পর ভাতার যে ২ হাজার ২০০ টাকা দেয় তা দিয়ে সংসারের নয় দিনের খরচ চলে না। শাহিন দাবি করেন, দুস্থদের জন্য সরকারি ঘর বরাদ্দ হলেও ইউনিয়ন পরিষদে ধরনা দিয়েও তা পাননি। তাঁর আশপাশের পাকা বাড়ির মালিক সরকারি ঘর পেয়েছেন। পৈতৃক সূত্রে পাওয়া বসতভিটার তিন শতক জমিতে সরকারি আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘর চান তিনি।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

শতকোটি টাকার পাওনা বকেয়া রেখেই ‘দেশ ছাড়লেন’ ফ্লাইট এক্সপার্টের মালিকেরা

‘অনিয়ম হয়নি’ বলায় এলজিইডি কর্মচারীকে পিটুনি

দলীয় প্রধান আসবেন, তাই পুলিশ এনে খোলা হলো কার্যালয়ের তালা

৪ দাবি নিয়ে মার্কিন চাপ, বাংলাদেশের সায় ৩ শর্তে

যেভাবে চীনা ক্ষেপণাস্ত্র দিয়ে ভারতের অত্যাধুনিক যুদ্ধবিমান ভূপাতিত করে পাকিস্তান

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত