Ajker Patrika

সার্কাসপাড়ায় চলছে মৌসুমের প্রস্তুতি

রজত কান্তি রায়, বগুড়া থেকে
Thumbnail image

সাকিন গড় মহাস্থান পূর্বপাড়া, উপজেলা শিবগঞ্জ। বগুড়া শহর থেকে ৫ নম্বর ন্যাশনাল হাইওয়ে অর্থাৎ বগুড়া-রংপুর মহাসড়ক ধরে এগোতে থাকলে মহাস্থানগড় বাসস্ট্যান্ড। সাড়ে ১৩ থেকে ১৪ কিলোমিটার দূরত্ব। বাসস্ট্যান্ড থেকে এই মহাসড়ককে ডানে রেখে প্রবেশ করবেন মহাস্থানগড় জাদুঘরের রাস্তায়। মিনিটখানেক চলার পর প্রথম যে রাস্তাটি হাতের বাঁয়ে চলে গেছে, সেটিই আপনাকে নিয়ে যাবে গড় মহাস্থান পূর্বপাড়ায়। রাস্তার পাশে ধানখেত। তার পাশেই মহাস্থানগড়ের প্রাচীন প্রাচীর। সেটি পেরিয়েই গড় মহাস্থান পূর্বপাড়া। রাস্তা থেকে হেঁটে গেলে দুই মিনিট লাগবে বড়জোর।

রোজার মাসের অফিস সময়সূচির সঙ্গে সখ্য না হওয়ায় মহাস্থানগড় দেখা হলো না। ফলে বিষণ্ন মন নিয়ে ফিরতি পথে খামোখাই আমরা গড় মহাস্থানের পথ ধরেছিলাম। প্রাচীন পুণ্ড্রনগরের প্রাচীরের মাঝে এই জায়গায় একটা দরজা ছিল। সেই গেটে পাল্লা নেই, খোলা থাকে ২৪ ঘণ্টা। পথটা সম্ভবত গেটকে কেন্দ্র করেই তৈরি করেছিল গ্রামবাসী। গেট ছাড়িয়ে চোখে পড়ল একটি টংদোকান আর বয়সী বৃক্ষের আধিক্য। টংদোকান ছাড়িয়ে গ্রামের শুরু। দোকানের বাঁ দিকে দৃষ্টি যেতেই চোখের ফ্রেমে ধরা পড়ল ‘দি বুলবুল সার্কাস’ লেখা সাইনবোর্ড গাছের সঙ্গে হেলান দিয়ে রাখা! এগিয়ে গেলাম। বিশাল মাঠ। প্রায় পুরোটাই গাছের ছায়ায় ঢাকা সেই মাঠের পশ্চিম প্রান্তে একটি বাড়ি। সেই বাড়ির সামনে মাঠজুড়ে ফেলে রাখা হয়েছে সার্কাস দলটির সব সরঞ্জাম। প্রথম দেখায় মনে হবে, টর্নেডো বিধ্বস্ত কোনো এক জনপদে একদল অসহায় মানুষ প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র খুঁজে নিয়ে মেরামত করছেন। এই লোকগুলোর কেউ ভেঙে যাওয়া কোনো লোহার পাইপে ওয়েল্ডিং করছেন, কেউ কাঠের পাটাতনে প্রয়োজনীয় পেরেক ঠুকছেন। কেউ র‍্যাঁদা দিয়ে ঘষে সমান করছেন কাঠের টুকরো, যা সার্কাসের কোনো শোর কাজে লাগবে। লোহা, মোটা টিন, স্টিল পাইপ দিয়ে তৈরি জিনিসপত্র রাখার ফলে আঁকাবাঁকা সরু পথ তৈরি হয়েছে। সে পথ ধরে এগিয়ে গেলাম মাঠের দক্ষিণ দিকের টিনের ছাপরায় বসে থাকা এক যুবকের দিকে। তিনি জিআই তার পরিষ্কার করছিলেন। আমাদের কণ্ঠ শুনে মাথা তুললেন। পাশ থেকে ১২-১৩ বছরের এক বালক উঠে দাঁড়াল বেঞ্চ থেকে। যুবকের উদ্দেশে বললাম, কথা বলতে চাই।

যুবকের নাম সুলতান মাহমুদ। তিনি দি বুলবুল সার্কাসের প্রতিষ্ঠাতা মরহুম আবদুস ছাত্তারের তৃতীয় ছেলে। আবদুস ছাত্তার তাঁর বড় ছেলে বুলবুলের নামে এই সার্কাস দলের নাম রেখেছিলেন। বুলবুল সাহেবের সঙ্গে এখন নাম ছাড়া সার্কাস দলের কোনো সম্পর্ক নেই। তিনি ঢাকায় থাকেন এবং একজন ‘পরহেজগার’ মানুষ। ছাত্তার মিয়ার অবর্তমানে বুলবুল সার্কাস চালাতেন তাঁর দ্বিতীয় ছেলে শাহীন। তিনি বুলবুল সার্কাস থেকে বেরিয়ে গিয়ে রাজমনি নামে আরেকটি সার্কাস দলের মালিক হয়েছেন। ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বন্ধ হয়ে যাওয়া নিউ স্টার সার্কাসের সরঞ্জাম কিনে দ্য বুলবুল সার্কাস চালু রেখেছেন ছাত্তার মিয়ার অন্য দুই ছেলে সুলতান মাহমুদ ও শাকিল আহমেদ।

সুলতান জানালেন, এই মাঠে প্রায় ৫০ লাখ টাকার সরঞ্জাম পর্যবেক্ষণ ও মেরামতের জন্য পড়ে আছে। ঈদের দিন থেকে শুরু হবে সার্কাসের মৌসুম। তারই প্রস্তুতি চলছে এখন দি বুলবুল ও রাজমনি—দুই সার্কাস দলেই। এখনো কোথাও থেকে ডাক আসেনি। তবে সুলতান আশা করছেন, অচিরেই ডাক আসবে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত