মাসুদ রানা
সম্প্রতি ‘কুড়া পক্ষীর শূন্যে উড়া’ সিনেমাটি দেখা হলো। শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত প্রেক্ষাগৃহে নয়, ঢাকার পরীবাগের সংস্কৃতি বিকাশ কেন্দ্রের উন্মুক্ত প্রান্তরে। মুহাম্মদ কাইয়ুম প্রযোজিত, রচিত ও পরিচালিত সিনেমাটি বাংলাদেশে প্রথম মুক্তি পেয়েছে গত ৪ নভেম্বর। এটি পরিচালকের প্রথম ছবি।
মুক্তি পাওয়ার পর সাধারণ দর্শক থেকে শুরু করে সিনেমাবোদ্ধাদের প্রশংসা পেয়ে আসছে ছবিটি। দেশের সিনেমা হলগুলোয় সেভাবে প্রদর্শনের সুযোগ পায়নি। সিনেমাটি বাণিজ্যিক ধারার না হওয়ার কারণেই সিনেমা হলগুলোয় তা চালানো যায়নি।
হাওর আমাদের কাছে ভ্রমণের জায়গা, থইথই পানির উথাল-পাথাল ঢেউয়ের সঙ্গে সে অঞ্চলের নৈসর্গিক দৃশ্যাবলিই মূলত মানুষকে আকর্ষণ করে। কিন্তু এসব দৃশ্যের বাইরে হাওরের কান্না, হাহাকার ও মানুষের সংগ্রামের গল্প আমরা কতটুকু জানি বা জানতে চাই? সিনেমাটি দেশের হাওর অঞ্চলের শ্রমজীবী মানুষের জীবনসংগ্রামের গল্প। এ কারণেই সিনেমাটি ব্যতিক্রম। বাংলাদেশে সুস্থ চলচ্চিত্র নিয়ে অনেক দিন ধরে যে হাহাকার চলছে, সে হাহাকার কাটানোর একটি পথ দেখায় সিনেমাটি।
সিনেমার শুরুতেই দেখি, দূরের অঞ্চল থেকে জীবিকা অর্জনের জন্য কাজের সন্ধানে এসেছেন মাতৃহারা সুলতান। যাঁর আসলে পরিবার বলতে কিছু নেই। তিনি আবার হাওরে এসে স্থিত হয়েছেন এমন এক নিরন্ন পরিবারে, যে পরিবারে সত্যিকার অর্থে কোনো গৃহকর্তা নেই। যাদের নিজেদেরই দিন চলে কায়ক্লেশে।
এখানে আসার পর বিস্ময়করভাবে তিনি হাওরের নতুন নতুন রূপ, পরিস্থিতি, অবস্থার সঙ্গে খাপ খাওয়াতে থাকেন। হাওরের যে কত রূপ এবং এখানকার মানুষকে যে কত ধরনের পরিস্থিতির সঙ্গে লড়াই করতে হয়, তা জেনে প্রথমেই তিনি অবাক হয়ে যান। মূলত সিনেমাটি একটি দরিদ্র খুদে কৃষক পরিবারের অভাব-অনটন, দুঃখ-কষ্টের ভেতর দিয়ে এগিয়েছে। আবার একটি পরিবারের ঘটনা পুরো হাওর অঞ্চলের পরিস্থিতিকে মূর্ত করে তুলেছে।
হাওর অঞ্চলের মানুষ এক ফসলি ধানের ওপর নির্ভর করে সারা বছর চলেন। আবার সেই ফসল যে তুলতে পারবেন, তারও কোনো নিশ্চয়তা নেই। ফসল কাটার আগমুহূর্তে উজানের পাহাড়ি ঢালের পানিতে সব তলিয়ে যায় কোনো কোনো বছর। তখন সত্যিই দিন পার করা কষ্টকর হয়ে যায়।
এরপর আছে বর্ষাকালে হাওরের পানিতে মাছ ধরার ওপর নিষেধাজ্ঞা। কারণ, সরকার থেকে ব্যবসায়ীরা হাওরের জলের বন্দোবস্ত নেওয়ার কারণে কেউ আর মাছ ধরতে পারে না। তখন কৃষক তাঁর নিজ জমিতে ওঠা জলে মাছ ধরলেও চোর বলে সাব্যস্ত হন। সম্মুখীন হন পুলিশি বাধা, জেল-জরিমানার। ছোট্ট মেয়ে রুকুর দাদা তাই এক চিরসত্য উচ্চারণ করেন—‘আকাশের কোনো সীমানা নেই, মানুষ কেবল জমির সীমানা দিতে চায়!’
সিনেমাটিতে দুটি হাওর অঞ্চলের গান আছে, যা আমাদের সমৃদ্ধ লোকগানের কথাই মনে করিয়ে দেয়। একই সঙ্গে প্রতিটি অঞ্চলের নিজস্ব লোকসংস্কৃতি প্রতিটি অঞ্চলকে আলাদা স্বাতন্ত্র্যমণ্ডিত করে তোলে। এ সিনেমাটিতেও তার যথার্থ রূপায়ণ ঘটেছে। যেমন ধানের শিষ যখন পুষ্ট হয়ে আসে, তখন তেলসুন্দি পূজা দিলে পরমা দেবী শস্য দেখেশুনে রাখেন। আবার ধান পাকার আগে স্থানীয় মন্ত্র বিশ্বাসী সন্ন্যাসী মন্ত্র পড়তে পড়তে আল ধরে হেঁটে যান, ফসল ভালো হলে কিছু ধান পাওয়ার প্রতিশ্রুতিতে। আসলে এসব না থাকলে সিনেমাটিকে আমাদের কাছে কৃত্রিম মনে হতো বুঝি।
আর বাড়িতে একদিন একমুঠো চাল না থাকে আর ছোট্ট রুকু মাঠ থেকে গিমা শাক তুলে আনার পরেও ভাত খেতে পারে না, সে দৃশ্য দর্শকের কাছে হাওরের দারিদ্র্যের ছবিই তুলে ধরে। ধানের মৌসুমের আগে এনজিও থেকে ঋণ নেওয়া হয়, কিন্তু ধান ওঠার আগে হঠাৎ বন্যায় তলিয়ে যায়। তখন তাঁদের অন্য জায়গায় কাজের সন্ধানে চলে যেতে বাধ্য হতে হয়। এভাবে সিনেমার যবনিকাপাত হয়েছে।
প্রান্তিক মানুষগুলোর প্রধান শত্রু প্রাকৃতিক দুর্যোগ আর তার মোকাবিলাকে ঘিরেই আবর্তিত হয়েছে এই চলচ্চিত্রের কাহিনি। প্রকৃতি আর দুর্যোগই তাই এই চলচ্চিত্রের খলনায়ক। চটকদার, গভীরতাহীন ছবির বিরুদ্ধে সিনেমাটিকে একটি নন্দনতাত্ত্বিক প্রতিবাদও বলা যায়। মুহাম্মদ কাইয়ুম সম্ভাবনাময় চলচ্চিত্রকার হিসেবে নিজেকে চিনিয়েছেন, যা আমাদের ভালো লেগেছে।
মাসুদ রানা, সহসম্পাদক,আজকের পত্রিকা
সম্প্রতি ‘কুড়া পক্ষীর শূন্যে উড়া’ সিনেমাটি দেখা হলো। শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত প্রেক্ষাগৃহে নয়, ঢাকার পরীবাগের সংস্কৃতি বিকাশ কেন্দ্রের উন্মুক্ত প্রান্তরে। মুহাম্মদ কাইয়ুম প্রযোজিত, রচিত ও পরিচালিত সিনেমাটি বাংলাদেশে প্রথম মুক্তি পেয়েছে গত ৪ নভেম্বর। এটি পরিচালকের প্রথম ছবি।
মুক্তি পাওয়ার পর সাধারণ দর্শক থেকে শুরু করে সিনেমাবোদ্ধাদের প্রশংসা পেয়ে আসছে ছবিটি। দেশের সিনেমা হলগুলোয় সেভাবে প্রদর্শনের সুযোগ পায়নি। সিনেমাটি বাণিজ্যিক ধারার না হওয়ার কারণেই সিনেমা হলগুলোয় তা চালানো যায়নি।
হাওর আমাদের কাছে ভ্রমণের জায়গা, থইথই পানির উথাল-পাথাল ঢেউয়ের সঙ্গে সে অঞ্চলের নৈসর্গিক দৃশ্যাবলিই মূলত মানুষকে আকর্ষণ করে। কিন্তু এসব দৃশ্যের বাইরে হাওরের কান্না, হাহাকার ও মানুষের সংগ্রামের গল্প আমরা কতটুকু জানি বা জানতে চাই? সিনেমাটি দেশের হাওর অঞ্চলের শ্রমজীবী মানুষের জীবনসংগ্রামের গল্প। এ কারণেই সিনেমাটি ব্যতিক্রম। বাংলাদেশে সুস্থ চলচ্চিত্র নিয়ে অনেক দিন ধরে যে হাহাকার চলছে, সে হাহাকার কাটানোর একটি পথ দেখায় সিনেমাটি।
সিনেমার শুরুতেই দেখি, দূরের অঞ্চল থেকে জীবিকা অর্জনের জন্য কাজের সন্ধানে এসেছেন মাতৃহারা সুলতান। যাঁর আসলে পরিবার বলতে কিছু নেই। তিনি আবার হাওরে এসে স্থিত হয়েছেন এমন এক নিরন্ন পরিবারে, যে পরিবারে সত্যিকার অর্থে কোনো গৃহকর্তা নেই। যাদের নিজেদেরই দিন চলে কায়ক্লেশে।
এখানে আসার পর বিস্ময়করভাবে তিনি হাওরের নতুন নতুন রূপ, পরিস্থিতি, অবস্থার সঙ্গে খাপ খাওয়াতে থাকেন। হাওরের যে কত রূপ এবং এখানকার মানুষকে যে কত ধরনের পরিস্থিতির সঙ্গে লড়াই করতে হয়, তা জেনে প্রথমেই তিনি অবাক হয়ে যান। মূলত সিনেমাটি একটি দরিদ্র খুদে কৃষক পরিবারের অভাব-অনটন, দুঃখ-কষ্টের ভেতর দিয়ে এগিয়েছে। আবার একটি পরিবারের ঘটনা পুরো হাওর অঞ্চলের পরিস্থিতিকে মূর্ত করে তুলেছে।
হাওর অঞ্চলের মানুষ এক ফসলি ধানের ওপর নির্ভর করে সারা বছর চলেন। আবার সেই ফসল যে তুলতে পারবেন, তারও কোনো নিশ্চয়তা নেই। ফসল কাটার আগমুহূর্তে উজানের পাহাড়ি ঢালের পানিতে সব তলিয়ে যায় কোনো কোনো বছর। তখন সত্যিই দিন পার করা কষ্টকর হয়ে যায়।
এরপর আছে বর্ষাকালে হাওরের পানিতে মাছ ধরার ওপর নিষেধাজ্ঞা। কারণ, সরকার থেকে ব্যবসায়ীরা হাওরের জলের বন্দোবস্ত নেওয়ার কারণে কেউ আর মাছ ধরতে পারে না। তখন কৃষক তাঁর নিজ জমিতে ওঠা জলে মাছ ধরলেও চোর বলে সাব্যস্ত হন। সম্মুখীন হন পুলিশি বাধা, জেল-জরিমানার। ছোট্ট মেয়ে রুকুর দাদা তাই এক চিরসত্য উচ্চারণ করেন—‘আকাশের কোনো সীমানা নেই, মানুষ কেবল জমির সীমানা দিতে চায়!’
সিনেমাটিতে দুটি হাওর অঞ্চলের গান আছে, যা আমাদের সমৃদ্ধ লোকগানের কথাই মনে করিয়ে দেয়। একই সঙ্গে প্রতিটি অঞ্চলের নিজস্ব লোকসংস্কৃতি প্রতিটি অঞ্চলকে আলাদা স্বাতন্ত্র্যমণ্ডিত করে তোলে। এ সিনেমাটিতেও তার যথার্থ রূপায়ণ ঘটেছে। যেমন ধানের শিষ যখন পুষ্ট হয়ে আসে, তখন তেলসুন্দি পূজা দিলে পরমা দেবী শস্য দেখেশুনে রাখেন। আবার ধান পাকার আগে স্থানীয় মন্ত্র বিশ্বাসী সন্ন্যাসী মন্ত্র পড়তে পড়তে আল ধরে হেঁটে যান, ফসল ভালো হলে কিছু ধান পাওয়ার প্রতিশ্রুতিতে। আসলে এসব না থাকলে সিনেমাটিকে আমাদের কাছে কৃত্রিম মনে হতো বুঝি।
আর বাড়িতে একদিন একমুঠো চাল না থাকে আর ছোট্ট রুকু মাঠ থেকে গিমা শাক তুলে আনার পরেও ভাত খেতে পারে না, সে দৃশ্য দর্শকের কাছে হাওরের দারিদ্র্যের ছবিই তুলে ধরে। ধানের মৌসুমের আগে এনজিও থেকে ঋণ নেওয়া হয়, কিন্তু ধান ওঠার আগে হঠাৎ বন্যায় তলিয়ে যায়। তখন তাঁদের অন্য জায়গায় কাজের সন্ধানে চলে যেতে বাধ্য হতে হয়। এভাবে সিনেমার যবনিকাপাত হয়েছে।
প্রান্তিক মানুষগুলোর প্রধান শত্রু প্রাকৃতিক দুর্যোগ আর তার মোকাবিলাকে ঘিরেই আবর্তিত হয়েছে এই চলচ্চিত্রের কাহিনি। প্রকৃতি আর দুর্যোগই তাই এই চলচ্চিত্রের খলনায়ক। চটকদার, গভীরতাহীন ছবির বিরুদ্ধে সিনেমাটিকে একটি নন্দনতাত্ত্বিক প্রতিবাদও বলা যায়। মুহাম্মদ কাইয়ুম সম্ভাবনাময় চলচ্চিত্রকার হিসেবে নিজেকে চিনিয়েছেন, যা আমাদের ভালো লেগেছে।
মাসুদ রানা, সহসম্পাদক,আজকের পত্রিকা
বিআরটিসির বাস দিয়ে চালু করা বিশেষায়িত বাস র্যাপিড ট্রানজিট (বিআরটি) লেনে অনুমতি না নিয়েই চলছে বেসরকারি কোম্পানির কিছু বাস। ঢুকে পড়ছে সিএনজিচালিত অটোরিকশা, ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা। উল্টো পথে চলছে মোটরসাইকেল। অন্যদিকে বিআরটিসির মাত্র ১০টি বাস চলাচল করায় সোয়া চার হাজার কোটি টাকার এই প্রকল্প থেকে...
১৬ দিন আগেগাজীপুর মহানগরের বোর্ডবাজার এলাকার ইসলামিক ইউনিভার্সিটি অব টেকনোলজির (আইইউটি) মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের শিক্ষার্থীরা পিকনিকে যাচ্ছিলেন শ্রীপুরের মাটির মায়া ইকো রিসোর্টে। ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক থেকে বাসগুলো গ্রামের সরু সড়কে ঢোকার পর বিদ্যুতের তারে জড়িয়ে যায় বিআরটিসির একটি দোতলা বাস...
২৪ নভেম্বর ২০২৪ঝড়-জলোচ্ছ্বাস থেকে রক্ষায় সন্দ্বীপের ব্লক বেড়িবাঁধসহ একাধিক প্রকল্প হাতে নিয়েছে সরকার। এ লক্ষ্যে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে ৫৬২ কোটি টাকা। এ জন্য টেন্ডারও হয়েছে। প্রায় এক বছর পেরিয়ে গেলেও ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানগুলো কাজ শুরু করছে না। পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) তাগাদায়ও কোনো কাজ হচ্ছে না বলে জানিয়েছেন...
২০ নভেম্বর ২০২৪দেশের পরিবহন খাতের অন্যতম নিয়ন্ত্রণকারী ঢাকা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির কমিটির বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। সাইফুল আলমের নেতৃত্বাধীন এ কমিটিকে নিবন্ধন দেয়নি শ্রম অধিদপ্তর। তবে এটি কার্যক্রম চালাচ্ছে। কমিটির নেতারা অংশ নিচ্ছেন ঢাকা পরিবহন সমন্বয় কর্তৃপক্ষ (ডিটিসিএ) ও বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের...
২০ নভেম্বর ২০২৪