সঞ্জীব দ্রং

মহাশ্বেতা দেবী ম্যাগসেসে পুরস্কার পেয়েছিলেন ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী বিষয়ে তাঁর লেখালেখি ও কর্মযজ্ঞের কারণে। ভারতের বহু উপেক্ষিত ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর সঙ্গে মূলধারার মানুষের সেতুবন্ধন রচনায় তাঁর লেখা অসাধারণ ভূমিকা রেখেছিল। কে মূলধারা, কে মূলধারার বাইরে—এই নিয়েও মহাশ্বেতা দেবীর অসাধারণ ভিন্ন বক্তব্য রয়েছে। তাঁর সঙ্গে আমার বেশ কয়েকবার দেখা হয়েছিল ঢাকায়।
প্রথমবার মহাশ্বেতা দেবীর সঙ্গে দেখা করতে সোনারগাঁও হোটেলে গিয়েছিলাম। সেটা নব্বইয়ের দশকের শুরুতে। তখন আমি সাপ্তাহিক খবরের কাগজে ‘আদিবাসী মেয়ে’ কলাম লিখতাম; আর দিদির লেখার কিছু অংশ মাঝেমধ্যে তুলে ধরতাম আমার লেখার ভেতরে। তিনি আমার মাথায় হাত রেখে আশীর্বাদ করেছিলেন। তখন প্রতি সপ্তাহে আমার লেখা বের হতো। তখন তরুণ আমি কী রোমাঞ্চ ও শিহরণ নিয়ে নিজেই নিজের লেখা পড়তাম। আমিও জীবনের সঙ্গে জীবন মেলাবার আয়োজনের কথা বলতাম। মাঝেমধ্যে লিখতে গিয়ে ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর মানুষের বেদনা ও অস্ফুট কান্না দেখে লেখার মাঝখানে থেমে যেতাম। বুকটা হাহাকার করে উঠত আবেগে। মাঝে মাঝে অজান্তে চোখ ফেটে জল ঝরে পড়ত। আজ অবাক হয়ে সেসব দিনের কথা ভাবি। মনে প্রশ্ন আসে—আমরা কি এগিয়েছি আসলে? নাকি সভ্যতায়, মানবিকতায়, সৌজন্যবোধে, মানুষের প্রতি সম্মান প্রদর্শনে, জ্ঞানে ও সংস্কৃতি চেতনায় পিছিয়ে গেছি অনেক দূর?
নব্বইয়ের দশকের শুরুতে যখন প্রতি সপ্তাহে কলাম লিখতাম, অন্য রকম অনুভূতি হতো। সেই সময় বিখ্যাত সব লেখক এই কাগজে লিখতেন। সেই সময় আমি মহাশ্বেতা দেবীর লেখায় অনুপ্রাণিত হতাম। ‘হাজার চুরাশির মা’, ‘অরণ্যের অধিকার’, ‘শালগিরার ডাকে’, ‘চোট্টি মুন্ডা ও তার তীর’, ‘বিছন’, ‘অপারেশন বসাই টুডু’, ‘ঝাঁসির রাণী’, ‘রুদালি’, ‘টেরোড্যাকটিল’, ‘পিরথা ও পূরণ সহায়’ আরও কত উপন্যাস আমি পড়েছি। ‘রুদালি’ নিয়ে ছায়াছবি হয়েছে। মূলধারা নিয়ে তাঁর বক্তব্য, ‘ভারতবর্ষে শাসনব্যবস্থা মূলস্রোত-চিন্তা দ্বারা প্রভাবিত ও নিয়ন্ত্রিত। মূলস্রোত ও ভারতের ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী-তপসিলীদের জীবনস্রোত চিরকালই বিচ্ছিন্ন থেকেছে, বিচ্ছিন্ন করে রেখেছি আমরাই। কিন্তু এটা জানবেন, ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীগুলো নিজেদের ভারতবর্ষের অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ বলেই মনে করে। ভারতের সভ্যতায় ওদের অবদান আছে মিলেমিশে। ভারতের সংস্কৃতি অনেক নিয়েছে। এসব স্বাভাবিকভাবেই হয়েছে। মূলস্রোত এর স্বীকৃতি দেয়নি কখনো। ব্যবহার করে গেছে, শুধু ব্যবহার।’ বাংলাদেশের ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীগুলোর জন্যও কথাগুলো প্রযোজ্য।
মহাশ্বেতা দেবী আবার বলছেন, ‘এই যে এত কিছু করা হয়নি আজও, এর ফলে কী আশা করে মূলস্রোত? উপেক্ষা করেই চলব এবং উপেক্ষিত মানুষ তা মেনে চলবেন নীরবে? যদি ওদের মনে “বিচ্ছিন্নতাবোধ” থাকে, সে জন্য দায়ী মূলস্রোত। বহু বছর ধরে ওদের বিচ্ছিন্ন করে রেখেছে এই মূলস্রোত। মূলস্রোতকেই তো বিচ্ছিন্নতাবাদী বলতে হয় তাহলে। আসলে এখন নম্র, অনুতপ্ত, চিন্তাশীল, আত্মানুসন্ধানী হওয়ার সময়। ক্রুদ্ধ গর্জন ও কথার কচকচির সময় নয়। গঙ্গা-যমুনার সঙ্গে ডুলুং, নেংসাই, চাকা—এসব নদ-নদীকে মেলাবার কাজ তো শুরুই হয়নি এখনো। কবে হবে, তা-ও জানি না। শুধু এটা জানি যে পরিণামে মূলস্রোতকে, সমগ্র দেশকে ভীষণ দাম দিতে হবে এই উপেক্ষার। আর কাদের উপেক্ষার? যারা সত্যিই তো অনেক, অনেক সভ্য আমাদের চেয়ে। মেয়ের বাপ পণ দেয় না, সতীদাহ বা পণের কারণে বধূ হত্যা জানে না, কন্যাসন্তানকে হত্যা করে না, বিধবা-বিবাহ স্বীকৃত, উপযুক্ত কারণ থাকলে বিবাহবিচ্ছেদ ও পুনর্বিবাহ স্বীকৃত, এমন উন্নত সামাজিক প্রথা যাদের, তাদের উপেক্ষা করলাম। তারা যে সভ্য, উন্নত, শ্রদ্ধেয়, মূলস্রোত, সেটা জানার চেষ্টাই করল না। এর দাম আমাদের দিয়ে যেতে হচ্ছে, হবে। কোনো দিন ভারতের সত্যি ইতিহাস লেখা হবে। সে ইতিহাস আমাদের ক্ষমা করবে না, যদি এখনো না বুঝি।’
মহাশ্বেতা দেবীর কাছ থেকে শিখে আমি এই কথাগুলো অনেকবার বলেছি।
অনেক জায়গায়, আমার লেখায়, টিভি টক শোতে, তরুণদের জন্য বক্তৃতায়, বিশ্ববিদ্যালয়ে, গানের সভায়, মহড়ায়। ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীগুলোর জীবন এক মহাদেশ, নানা সম্পদে শোভিত ও সমৃদ্ধ সেই মহাদেশ। অনাবিষ্কৃত, অজানিত রেখেই আমরা সব শেষ করে দিচ্ছি। আমাদের দেশে পাহাড়-পর্বত-নদী-ঝরনা-বন-অরণ্য-পরিবেশ কে রক্ষা করেছে এতকাল? এই ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর মানুষেরা। জাতিসংঘ বলছে, বিশ্বের জীববৈচিত্র্যের শতকরা ৮০ ভাগ সংরক্ষণ করে এই ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর মানুষেরা, ইনডিজিনাস পিপলস। ইউনেসকো পৃথিবীর যে ৬ হাজার মাতৃভাষার কথা বলছে, সেগুলোর মধ্যে ৫ হাজার ভাষা হলো ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর মানুষের, যাদের সংখ্যা ৯০টি দেশে প্রায় ৪৮ কোটি। বাংলাদেশে ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য একটি নীতিমালা দরকার, একটি ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী অধিকার আইন দরকার। ইনডিজিনাস পলিসি দরকার। কবে হবে এসব, জানি না।
দুই.
আমরা স্বাধীনতার ৫০ বছর পূর্ণ করলাম। অনেক উৎসব হলো। প্রান্তিক মানুষসহ ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর মানুষের মানবাধিকার, আত্মপরিচয়, মৌলিক স্বাধীনতা, ঐতিহ্যগত ভূমি ও বনের ওপর প্রথাগত অধিকার ইত্যাদি নিয়ে যদি আমরা কথা বলি, তবে দেখব আশাহত হওয়ার ঘটনা। সরকারের আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউট একটি সমীক্ষা করেছে। সেখানে পাওয়া গেছে, দেশে আছে ৪১টি ভাষা। উর্দু ও বাংলা বাদ দিলে বাকি প্রায় সব ভাষাই ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীগুলোর মাতৃভাষা। সরকারি এই প্রতিষ্ঠান নিজে বলছে, এদের মধ্যে ১৪টি ভাষা বিপন্ন। আমি দুঃখ ও বিস্ময় নিয়ে দেখি, ভাষার জন্য আবেগভরা জীবন উৎসর্গ করা মূলধারার মানুষের মধ্যে অন্যের মাতৃভাষা হারিয়ে যাওয়া নিয়ে কোনো অনুভূতি নেই। আমি দেখিনি। মিডিয়াও এ নিয়ে কোনো হইচই করেনি। সম্ভবত আমি কয়েকটি কলাম লিখেছিলাম। বক্তৃতায় ও টিভি টক শোতে কিছু বলার চেষ্টা করেছিলাম। পারিনি মানুষের হৃদয়ে একটু সহানুভূতির অশ্রু ঝরাতে।
তারপরও বলব, অনেক ইতিবাচক অর্জন হয়েছে আমাদের গত পাঁচ দশকে। মুক্তিযুদ্ধের সময় ১০ এপ্রিল স্বাধীনতার ঘোষণাপত্রে আমরা অঙ্গীকার করেছিলাম, বাংলাদেশের জনগণের জন্য সাম্য, মানবিক মর্যাদা ও সামাজিক সুবিচার নিশ্চিত করব। বাঙালি জাতির পাশাপাশি ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীগুলোও মুক্তিযুদ্ধে ব্যাপকভাবে অংশ নিয়েছিল। ধর্মীয় সংখ্যালঘু হিসেবে অবর্ণনীয় কষ্ট সইতে হয়েছে ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীগুলোর। আমি একাত্তরে পরিবারের সঙ্গে শরণার্থী হয়েছিলাম ভারতের মেঘালয়ে। মুক্তিযুদ্ধ শেষে দেশে ফিরে গ্রামে ধ্বংসস্তূপ দেখেছিলাম। সেই বালক বয়সে উদ্বাস্তু জীবনের পথে আমার মা ও স্বজনদের কান্নার দৃশ্য কোনো দিন ভুলব না আমি।
দেশে ফিরে আমাদের সম্পূর্ণ নতুন করে সব শুরু করতে হয়েছিল। এখন ভাবতে ভালো লাগছে যে স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী পেরিয়ে এসে আমরা দেখছি, প্রিয় স্বদেশ অর্থনৈতিকভাবে এগিয়ে চলেছে। যদিও অন্যদিকে নাগরিকদের একটি অংশ; ৪০ লক্ষাধিক প্রান্তিক মানুষ সবার সঙ্গে সমানতালে এগোতে পারছে না। একদিকে বিশাল বাজেটের মেগা সব প্রকল্প ও অবকাঠামোগত উন্নয়ন, অন্যদিকে সমাজের কিছু মানুষের জীবনে বৈষম্য ও হাহাকারের চিত্র প্রকট হচ্ছে। ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীগুলোর জনগণ, চা-শ্রমিক, দলিত, দূর পাহাড়, চর ও হাওর অঞ্চলের মানুষ, ধর্মীয় সংখ্যালঘু ও অন্যান্য প্রান্তিক
মানুষের দুয়ারে এই উন্নয়নের সুফল সমভাবে পৌঁছাতে পারছে না।
ইতিবাচক যা কিছু অর্জিত হয়েছে স্বাধীনতার ৫০ বছরে, তা হলো, ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী ইস্যু নিয়ে স্থানীয়, জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে বিস্তর আলাপ-আলোচনা হচ্ছে, দেশে নাগরিক সমাজ ও বেসরকারি পর্যায়ে এ বিষয়ে সচেতনতা বৃদ্ধি, মিডিয়া আগের যেকোনো সময়ের চেয়ে এ বিষয়ে অনেক বেশি উচ্চকণ্ঠ। এ ছাড়া সরকারি কর্মকর্তাদের মধ্যেও ইতিবাচক ভাবনা তৈরি হচ্ছে। জাতীয় শিক্ষানীতিতে আদিবাসী ভাষায় পড়াশোনার ব্যবস্থা রাখা হয়েছে এবং এ পর্যন্ত পাঁচটি আদিবাসী ভাষায় বই রচিত হয়েছে। নারী উন্নয়ন নীতি, ষষ্ঠ, সপ্তম ও অষ্টম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনায় ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর ইস্যু অন্তর্ভুক্ত হয়েছে বিস্তারিতভাবে। ২০১০ সালে ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠান আইন হয়েছে, যেখানে নৃগোষ্ঠী বলতে আদিবাসীদের নাম তালিকাভুক্ত করা হয়েছে। ২০১৯ সালের মার্চ মাসে ৫০টি ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী জাতির নাম সংস্কৃতি মন্ত্রণালয় গেজেটভুক্ত করেছে। সমতল অঞ্চলের ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীগুলোর অর্থনৈতিক উন্নয়নে পর্যাপ্ত না হলেও বাজেট বরাদ্দসহ কিছু পদক্ষেপ গৃহীত হয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর শিক্ষার্থীদের বৃত্তি দেওয়া হচ্ছে। গবাদিপশু বিতরণ, কৃষি উপকরণ সরবরাহ, গৃহহীনদের জন্য ঘর, সামাজিক নিরাপত্তাবেষ্টনীর সহায়তা, চাকরিতে সীমিত সুযোগ ইত্যাদি ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীগুলোর জনগণ পাচ্ছে। সীমান্তবর্তী গ্রামগুলোতেও বিদ্যুৎ পৌঁছে গেছে। স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীর জাতীয় উৎসবে ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর শিল্পীরাও অংশ নিয়েছেন। কঠিন করোনাকালে অপ্রতুল হলেও কিছু সহায়তা পেয়েছে। বলা যায়, এ ধরনের অগ্রগতি সাধিত হয়েছে।
সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনীর ২৩ক অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, ‘রাষ্ট্র বিভিন্ন উপজাতি, ক্ষুদ্র জাতিসত্তা, নৃগোষ্ঠী ও সম্প্রদায়ের অনন্য বৈশিষ্ট্যপূর্ণ আঞ্চলিক সংস্কৃতি এবং ঐতিহ্য সংরক্ষণ, উন্নয়ন ও বিকাশের ব্যবস্থা গ্রহণ করিবেন।’ দেশে আদিবাসীবিষয়ক সংসদীয় ককাস গঠিত হয়েছে এবং এই ককাস আদিবাসী অধিকার আইনের খসড়া তৈরি করে সংসদে জমা দিয়েছে। অন্যদিকে এখানে জাতিসংঘসহ অনেকে কাজ করছে। ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর সংগঠনগুলোর মধ্যেও ঐক্য ও সংহতি জোরদার হচ্ছে। জাতীয় মানবাধিকার কমিশন অনেক সীমাবদ্ধতার মধ্যেও ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর অধিকার নিয়ে কাজ করছে এবং এ বিষয়ে থিমেটিক গ্রুপ রয়েছে।
তিন.
তারপরও কিছু প্রশ্ন রয়ে যায়। কথা ছিল সবার জন্য সাম্য, মানবিক মর্যাদা ও সামাজিক সুবিচার নিশ্চিত হবে। কিন্তু আজ জাতিগত ও ধর্মীয় সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মানবাধিকার কোন স্তরে? কথা ছিল সমতল অঞ্চলের ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর ভূমি সমস্যা সমাধানের জন্য একটি পৃথক ভূমি কমিশন গঠন করা হবে। বর্তমান সরকার ২০০৮ সালের ডিসেম্বরে এই প্রতিশ্রুতি দিলেও এ নিয়ে কোনো কাজ শুরু হয়নি। দেশ দৃশ্যমান অর্থনৈতিক উন্নয়নের দিকে ধাবিত হলেও ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীগুলো তাদের চিরায়ত, ঐতিহ্যগত ভূমি থেকে ধীরে ধীরে বিতাড়িত হচ্ছে, নদীগুলো দখল হয়ে যাচ্ছে। প্রাকৃতিক সম্পদ নির্বিচার উত্তোলন করে প্রাণ-প্রকৃতি, জীববৈচিত্র্য ধ্বংস করা হচ্ছে।
স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী পেরিয়ে আরও কিছু প্রশ্ন আছে। কেন জাতিগত ও ধর্মীয় সংখ্যালঘু জনগণের মৌলিক মানবাধিকারকে রাষ্ট্রের চোখে দয়া ও করুণার দৃষ্টিতে দেখা হয়? সমাজকল্যাণে যেসব পদক্ষেপ ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর জন্য নেওয়া হয়, সেখানে কোথাও কি তাদের নিজেদের সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষমতা আছে? যেহেতু ঐতিহাসিকভাবে ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীগুলো শোষণ, অবিচার ও বঞ্চনার শিকার; তাই ওরা অনগ্রসর রয়ে গেছে। ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীগুলোর জন্য চাকরিতে কোটা ছিল, তা-ও কেড়ে নেওয়া হয়েছে। ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীগুলো নিশ্চয় অনন্তকালই ধরে কোটা চায় না। আজ বলি, ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর মানুষের অধিকার হৃদয়ে ধারণ করা, সম্মান করা অথবা ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর অধিকার একটু বুঝতে চেষ্টা করার কাজটা আমরা যথাযথভাবে করতে পারিনি। জাতিগত ও ধর্মীয় সংখ্যালঘু জনগণ সম্পর্কে রাষ্ট্রের সঠিক নীতি প্রণীত হয়নি। ২০১৮ সালের নির্বাচনী ইশতেহারে আওয়ামী লীগ বলেছিল, একটি সংখ্যালঘু কমিশন গঠন করা হবে। এই নিয়েও কোনো অগ্রগতি দৃশ্যমান নয়। সময় বয়ে যায়।
চার.
ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীগুলোর জীবন জড়িয়ে আছে ওদের সামষ্টিক সংস্কৃতি চেতনায়। ‘চাচা আপন প্রাণ বাঁচা’ বলে কোনো প্রবাদ তাদের সংস্কৃতিতে নেই। মানুষ বাঁচে সবার সঙ্গে, সবার জন্য, সামষ্টিক ভাবনা নিয়ে। তাই তো ওরা পাহাড়-বন-নদী-ভূমির মালিকানা, আর বেচাকেনা থেকে অনেক দূরে। ওদের এই মনস্তত্ত্বকে, জীবনভাবনার বিশ্বজনীনতাকে আমাদের বুঝতে হবে। বুঝতে হবে ভালোবাসা ও মমতা দিয়ে; গায়ের জোরে, শক্তির দাপটে নয়। ওদের জীবনে বহিরাগতরা প্রবল রাষ্ট্রীয় শক্তি নিয়ে ঢুকে গেছে। আর সঙ্গে সঙ্গে ঝড়ের মতো চলে গেছে জমি, বন, পাহাড়, প্রাকৃতিক সম্পদ। ওরা এখন অধিকারহীন অসহায় মানুষ। সংবেদনশীল, বিনম্র, প্রচণ্ড ভালোবাসা ছাড়া ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীগুলোর উন্নয়ন এখন আর সম্ভব নয়। রাজনীতি, সমাজনীতি, সংস্কৃতি, অর্থনীতি—সবখানে এই ভালোবাসার প্রতিফলন দরকার। তাদের উন্নয়নের জন্য মানবাধিকারকে অগ্রাধিকার দিতে হবে। এখন সত্যি নম্র, অনুতপ্ত, চিন্তাশীল ও আত্মানুসন্ধানী হওয়ার সময়।
সঞ্জীব দ্রং, কলামিস্ট ও মানবাধিকারকর্মী

মহাশ্বেতা দেবী ম্যাগসেসে পুরস্কার পেয়েছিলেন ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী বিষয়ে তাঁর লেখালেখি ও কর্মযজ্ঞের কারণে। ভারতের বহু উপেক্ষিত ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর সঙ্গে মূলধারার মানুষের সেতুবন্ধন রচনায় তাঁর লেখা অসাধারণ ভূমিকা রেখেছিল। কে মূলধারা, কে মূলধারার বাইরে—এই নিয়েও মহাশ্বেতা দেবীর অসাধারণ ভিন্ন বক্তব্য রয়েছে। তাঁর সঙ্গে আমার বেশ কয়েকবার দেখা হয়েছিল ঢাকায়।
প্রথমবার মহাশ্বেতা দেবীর সঙ্গে দেখা করতে সোনারগাঁও হোটেলে গিয়েছিলাম। সেটা নব্বইয়ের দশকের শুরুতে। তখন আমি সাপ্তাহিক খবরের কাগজে ‘আদিবাসী মেয়ে’ কলাম লিখতাম; আর দিদির লেখার কিছু অংশ মাঝেমধ্যে তুলে ধরতাম আমার লেখার ভেতরে। তিনি আমার মাথায় হাত রেখে আশীর্বাদ করেছিলেন। তখন প্রতি সপ্তাহে আমার লেখা বের হতো। তখন তরুণ আমি কী রোমাঞ্চ ও শিহরণ নিয়ে নিজেই নিজের লেখা পড়তাম। আমিও জীবনের সঙ্গে জীবন মেলাবার আয়োজনের কথা বলতাম। মাঝেমধ্যে লিখতে গিয়ে ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর মানুষের বেদনা ও অস্ফুট কান্না দেখে লেখার মাঝখানে থেমে যেতাম। বুকটা হাহাকার করে উঠত আবেগে। মাঝে মাঝে অজান্তে চোখ ফেটে জল ঝরে পড়ত। আজ অবাক হয়ে সেসব দিনের কথা ভাবি। মনে প্রশ্ন আসে—আমরা কি এগিয়েছি আসলে? নাকি সভ্যতায়, মানবিকতায়, সৌজন্যবোধে, মানুষের প্রতি সম্মান প্রদর্শনে, জ্ঞানে ও সংস্কৃতি চেতনায় পিছিয়ে গেছি অনেক দূর?
নব্বইয়ের দশকের শুরুতে যখন প্রতি সপ্তাহে কলাম লিখতাম, অন্য রকম অনুভূতি হতো। সেই সময় বিখ্যাত সব লেখক এই কাগজে লিখতেন। সেই সময় আমি মহাশ্বেতা দেবীর লেখায় অনুপ্রাণিত হতাম। ‘হাজার চুরাশির মা’, ‘অরণ্যের অধিকার’, ‘শালগিরার ডাকে’, ‘চোট্টি মুন্ডা ও তার তীর’, ‘বিছন’, ‘অপারেশন বসাই টুডু’, ‘ঝাঁসির রাণী’, ‘রুদালি’, ‘টেরোড্যাকটিল’, ‘পিরথা ও পূরণ সহায়’ আরও কত উপন্যাস আমি পড়েছি। ‘রুদালি’ নিয়ে ছায়াছবি হয়েছে। মূলধারা নিয়ে তাঁর বক্তব্য, ‘ভারতবর্ষে শাসনব্যবস্থা মূলস্রোত-চিন্তা দ্বারা প্রভাবিত ও নিয়ন্ত্রিত। মূলস্রোত ও ভারতের ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী-তপসিলীদের জীবনস্রোত চিরকালই বিচ্ছিন্ন থেকেছে, বিচ্ছিন্ন করে রেখেছি আমরাই। কিন্তু এটা জানবেন, ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীগুলো নিজেদের ভারতবর্ষের অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ বলেই মনে করে। ভারতের সভ্যতায় ওদের অবদান আছে মিলেমিশে। ভারতের সংস্কৃতি অনেক নিয়েছে। এসব স্বাভাবিকভাবেই হয়েছে। মূলস্রোত এর স্বীকৃতি দেয়নি কখনো। ব্যবহার করে গেছে, শুধু ব্যবহার।’ বাংলাদেশের ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীগুলোর জন্যও কথাগুলো প্রযোজ্য।
মহাশ্বেতা দেবী আবার বলছেন, ‘এই যে এত কিছু করা হয়নি আজও, এর ফলে কী আশা করে মূলস্রোত? উপেক্ষা করেই চলব এবং উপেক্ষিত মানুষ তা মেনে চলবেন নীরবে? যদি ওদের মনে “বিচ্ছিন্নতাবোধ” থাকে, সে জন্য দায়ী মূলস্রোত। বহু বছর ধরে ওদের বিচ্ছিন্ন করে রেখেছে এই মূলস্রোত। মূলস্রোতকেই তো বিচ্ছিন্নতাবাদী বলতে হয় তাহলে। আসলে এখন নম্র, অনুতপ্ত, চিন্তাশীল, আত্মানুসন্ধানী হওয়ার সময়। ক্রুদ্ধ গর্জন ও কথার কচকচির সময় নয়। গঙ্গা-যমুনার সঙ্গে ডুলুং, নেংসাই, চাকা—এসব নদ-নদীকে মেলাবার কাজ তো শুরুই হয়নি এখনো। কবে হবে, তা-ও জানি না। শুধু এটা জানি যে পরিণামে মূলস্রোতকে, সমগ্র দেশকে ভীষণ দাম দিতে হবে এই উপেক্ষার। আর কাদের উপেক্ষার? যারা সত্যিই তো অনেক, অনেক সভ্য আমাদের চেয়ে। মেয়ের বাপ পণ দেয় না, সতীদাহ বা পণের কারণে বধূ হত্যা জানে না, কন্যাসন্তানকে হত্যা করে না, বিধবা-বিবাহ স্বীকৃত, উপযুক্ত কারণ থাকলে বিবাহবিচ্ছেদ ও পুনর্বিবাহ স্বীকৃত, এমন উন্নত সামাজিক প্রথা যাদের, তাদের উপেক্ষা করলাম। তারা যে সভ্য, উন্নত, শ্রদ্ধেয়, মূলস্রোত, সেটা জানার চেষ্টাই করল না। এর দাম আমাদের দিয়ে যেতে হচ্ছে, হবে। কোনো দিন ভারতের সত্যি ইতিহাস লেখা হবে। সে ইতিহাস আমাদের ক্ষমা করবে না, যদি এখনো না বুঝি।’
মহাশ্বেতা দেবীর কাছ থেকে শিখে আমি এই কথাগুলো অনেকবার বলেছি।
অনেক জায়গায়, আমার লেখায়, টিভি টক শোতে, তরুণদের জন্য বক্তৃতায়, বিশ্ববিদ্যালয়ে, গানের সভায়, মহড়ায়। ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীগুলোর জীবন এক মহাদেশ, নানা সম্পদে শোভিত ও সমৃদ্ধ সেই মহাদেশ। অনাবিষ্কৃত, অজানিত রেখেই আমরা সব শেষ করে দিচ্ছি। আমাদের দেশে পাহাড়-পর্বত-নদী-ঝরনা-বন-অরণ্য-পরিবেশ কে রক্ষা করেছে এতকাল? এই ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর মানুষেরা। জাতিসংঘ বলছে, বিশ্বের জীববৈচিত্র্যের শতকরা ৮০ ভাগ সংরক্ষণ করে এই ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর মানুষেরা, ইনডিজিনাস পিপলস। ইউনেসকো পৃথিবীর যে ৬ হাজার মাতৃভাষার কথা বলছে, সেগুলোর মধ্যে ৫ হাজার ভাষা হলো ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর মানুষের, যাদের সংখ্যা ৯০টি দেশে প্রায় ৪৮ কোটি। বাংলাদেশে ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য একটি নীতিমালা দরকার, একটি ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী অধিকার আইন দরকার। ইনডিজিনাস পলিসি দরকার। কবে হবে এসব, জানি না।
দুই.
আমরা স্বাধীনতার ৫০ বছর পূর্ণ করলাম। অনেক উৎসব হলো। প্রান্তিক মানুষসহ ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর মানুষের মানবাধিকার, আত্মপরিচয়, মৌলিক স্বাধীনতা, ঐতিহ্যগত ভূমি ও বনের ওপর প্রথাগত অধিকার ইত্যাদি নিয়ে যদি আমরা কথা বলি, তবে দেখব আশাহত হওয়ার ঘটনা। সরকারের আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউট একটি সমীক্ষা করেছে। সেখানে পাওয়া গেছে, দেশে আছে ৪১টি ভাষা। উর্দু ও বাংলা বাদ দিলে বাকি প্রায় সব ভাষাই ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীগুলোর মাতৃভাষা। সরকারি এই প্রতিষ্ঠান নিজে বলছে, এদের মধ্যে ১৪টি ভাষা বিপন্ন। আমি দুঃখ ও বিস্ময় নিয়ে দেখি, ভাষার জন্য আবেগভরা জীবন উৎসর্গ করা মূলধারার মানুষের মধ্যে অন্যের মাতৃভাষা হারিয়ে যাওয়া নিয়ে কোনো অনুভূতি নেই। আমি দেখিনি। মিডিয়াও এ নিয়ে কোনো হইচই করেনি। সম্ভবত আমি কয়েকটি কলাম লিখেছিলাম। বক্তৃতায় ও টিভি টক শোতে কিছু বলার চেষ্টা করেছিলাম। পারিনি মানুষের হৃদয়ে একটু সহানুভূতির অশ্রু ঝরাতে।
তারপরও বলব, অনেক ইতিবাচক অর্জন হয়েছে আমাদের গত পাঁচ দশকে। মুক্তিযুদ্ধের সময় ১০ এপ্রিল স্বাধীনতার ঘোষণাপত্রে আমরা অঙ্গীকার করেছিলাম, বাংলাদেশের জনগণের জন্য সাম্য, মানবিক মর্যাদা ও সামাজিক সুবিচার নিশ্চিত করব। বাঙালি জাতির পাশাপাশি ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীগুলোও মুক্তিযুদ্ধে ব্যাপকভাবে অংশ নিয়েছিল। ধর্মীয় সংখ্যালঘু হিসেবে অবর্ণনীয় কষ্ট সইতে হয়েছে ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীগুলোর। আমি একাত্তরে পরিবারের সঙ্গে শরণার্থী হয়েছিলাম ভারতের মেঘালয়ে। মুক্তিযুদ্ধ শেষে দেশে ফিরে গ্রামে ধ্বংসস্তূপ দেখেছিলাম। সেই বালক বয়সে উদ্বাস্তু জীবনের পথে আমার মা ও স্বজনদের কান্নার দৃশ্য কোনো দিন ভুলব না আমি।
দেশে ফিরে আমাদের সম্পূর্ণ নতুন করে সব শুরু করতে হয়েছিল। এখন ভাবতে ভালো লাগছে যে স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী পেরিয়ে এসে আমরা দেখছি, প্রিয় স্বদেশ অর্থনৈতিকভাবে এগিয়ে চলেছে। যদিও অন্যদিকে নাগরিকদের একটি অংশ; ৪০ লক্ষাধিক প্রান্তিক মানুষ সবার সঙ্গে সমানতালে এগোতে পারছে না। একদিকে বিশাল বাজেটের মেগা সব প্রকল্প ও অবকাঠামোগত উন্নয়ন, অন্যদিকে সমাজের কিছু মানুষের জীবনে বৈষম্য ও হাহাকারের চিত্র প্রকট হচ্ছে। ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীগুলোর জনগণ, চা-শ্রমিক, দলিত, দূর পাহাড়, চর ও হাওর অঞ্চলের মানুষ, ধর্মীয় সংখ্যালঘু ও অন্যান্য প্রান্তিক
মানুষের দুয়ারে এই উন্নয়নের সুফল সমভাবে পৌঁছাতে পারছে না।
ইতিবাচক যা কিছু অর্জিত হয়েছে স্বাধীনতার ৫০ বছরে, তা হলো, ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী ইস্যু নিয়ে স্থানীয়, জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে বিস্তর আলাপ-আলোচনা হচ্ছে, দেশে নাগরিক সমাজ ও বেসরকারি পর্যায়ে এ বিষয়ে সচেতনতা বৃদ্ধি, মিডিয়া আগের যেকোনো সময়ের চেয়ে এ বিষয়ে অনেক বেশি উচ্চকণ্ঠ। এ ছাড়া সরকারি কর্মকর্তাদের মধ্যেও ইতিবাচক ভাবনা তৈরি হচ্ছে। জাতীয় শিক্ষানীতিতে আদিবাসী ভাষায় পড়াশোনার ব্যবস্থা রাখা হয়েছে এবং এ পর্যন্ত পাঁচটি আদিবাসী ভাষায় বই রচিত হয়েছে। নারী উন্নয়ন নীতি, ষষ্ঠ, সপ্তম ও অষ্টম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনায় ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর ইস্যু অন্তর্ভুক্ত হয়েছে বিস্তারিতভাবে। ২০১০ সালে ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠান আইন হয়েছে, যেখানে নৃগোষ্ঠী বলতে আদিবাসীদের নাম তালিকাভুক্ত করা হয়েছে। ২০১৯ সালের মার্চ মাসে ৫০টি ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী জাতির নাম সংস্কৃতি মন্ত্রণালয় গেজেটভুক্ত করেছে। সমতল অঞ্চলের ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীগুলোর অর্থনৈতিক উন্নয়নে পর্যাপ্ত না হলেও বাজেট বরাদ্দসহ কিছু পদক্ষেপ গৃহীত হয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর শিক্ষার্থীদের বৃত্তি দেওয়া হচ্ছে। গবাদিপশু বিতরণ, কৃষি উপকরণ সরবরাহ, গৃহহীনদের জন্য ঘর, সামাজিক নিরাপত্তাবেষ্টনীর সহায়তা, চাকরিতে সীমিত সুযোগ ইত্যাদি ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীগুলোর জনগণ পাচ্ছে। সীমান্তবর্তী গ্রামগুলোতেও বিদ্যুৎ পৌঁছে গেছে। স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীর জাতীয় উৎসবে ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর শিল্পীরাও অংশ নিয়েছেন। কঠিন করোনাকালে অপ্রতুল হলেও কিছু সহায়তা পেয়েছে। বলা যায়, এ ধরনের অগ্রগতি সাধিত হয়েছে।
সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনীর ২৩ক অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, ‘রাষ্ট্র বিভিন্ন উপজাতি, ক্ষুদ্র জাতিসত্তা, নৃগোষ্ঠী ও সম্প্রদায়ের অনন্য বৈশিষ্ট্যপূর্ণ আঞ্চলিক সংস্কৃতি এবং ঐতিহ্য সংরক্ষণ, উন্নয়ন ও বিকাশের ব্যবস্থা গ্রহণ করিবেন।’ দেশে আদিবাসীবিষয়ক সংসদীয় ককাস গঠিত হয়েছে এবং এই ককাস আদিবাসী অধিকার আইনের খসড়া তৈরি করে সংসদে জমা দিয়েছে। অন্যদিকে এখানে জাতিসংঘসহ অনেকে কাজ করছে। ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর সংগঠনগুলোর মধ্যেও ঐক্য ও সংহতি জোরদার হচ্ছে। জাতীয় মানবাধিকার কমিশন অনেক সীমাবদ্ধতার মধ্যেও ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর অধিকার নিয়ে কাজ করছে এবং এ বিষয়ে থিমেটিক গ্রুপ রয়েছে।
তিন.
তারপরও কিছু প্রশ্ন রয়ে যায়। কথা ছিল সবার জন্য সাম্য, মানবিক মর্যাদা ও সামাজিক সুবিচার নিশ্চিত হবে। কিন্তু আজ জাতিগত ও ধর্মীয় সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মানবাধিকার কোন স্তরে? কথা ছিল সমতল অঞ্চলের ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর ভূমি সমস্যা সমাধানের জন্য একটি পৃথক ভূমি কমিশন গঠন করা হবে। বর্তমান সরকার ২০০৮ সালের ডিসেম্বরে এই প্রতিশ্রুতি দিলেও এ নিয়ে কোনো কাজ শুরু হয়নি। দেশ দৃশ্যমান অর্থনৈতিক উন্নয়নের দিকে ধাবিত হলেও ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীগুলো তাদের চিরায়ত, ঐতিহ্যগত ভূমি থেকে ধীরে ধীরে বিতাড়িত হচ্ছে, নদীগুলো দখল হয়ে যাচ্ছে। প্রাকৃতিক সম্পদ নির্বিচার উত্তোলন করে প্রাণ-প্রকৃতি, জীববৈচিত্র্য ধ্বংস করা হচ্ছে।
স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী পেরিয়ে আরও কিছু প্রশ্ন আছে। কেন জাতিগত ও ধর্মীয় সংখ্যালঘু জনগণের মৌলিক মানবাধিকারকে রাষ্ট্রের চোখে দয়া ও করুণার দৃষ্টিতে দেখা হয়? সমাজকল্যাণে যেসব পদক্ষেপ ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর জন্য নেওয়া হয়, সেখানে কোথাও কি তাদের নিজেদের সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষমতা আছে? যেহেতু ঐতিহাসিকভাবে ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীগুলো শোষণ, অবিচার ও বঞ্চনার শিকার; তাই ওরা অনগ্রসর রয়ে গেছে। ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীগুলোর জন্য চাকরিতে কোটা ছিল, তা-ও কেড়ে নেওয়া হয়েছে। ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীগুলো নিশ্চয় অনন্তকালই ধরে কোটা চায় না। আজ বলি, ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর মানুষের অধিকার হৃদয়ে ধারণ করা, সম্মান করা অথবা ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর অধিকার একটু বুঝতে চেষ্টা করার কাজটা আমরা যথাযথভাবে করতে পারিনি। জাতিগত ও ধর্মীয় সংখ্যালঘু জনগণ সম্পর্কে রাষ্ট্রের সঠিক নীতি প্রণীত হয়নি। ২০১৮ সালের নির্বাচনী ইশতেহারে আওয়ামী লীগ বলেছিল, একটি সংখ্যালঘু কমিশন গঠন করা হবে। এই নিয়েও কোনো অগ্রগতি দৃশ্যমান নয়। সময় বয়ে যায়।
চার.
ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীগুলোর জীবন জড়িয়ে আছে ওদের সামষ্টিক সংস্কৃতি চেতনায়। ‘চাচা আপন প্রাণ বাঁচা’ বলে কোনো প্রবাদ তাদের সংস্কৃতিতে নেই। মানুষ বাঁচে সবার সঙ্গে, সবার জন্য, সামষ্টিক ভাবনা নিয়ে। তাই তো ওরা পাহাড়-বন-নদী-ভূমির মালিকানা, আর বেচাকেনা থেকে অনেক দূরে। ওদের এই মনস্তত্ত্বকে, জীবনভাবনার বিশ্বজনীনতাকে আমাদের বুঝতে হবে। বুঝতে হবে ভালোবাসা ও মমতা দিয়ে; গায়ের জোরে, শক্তির দাপটে নয়। ওদের জীবনে বহিরাগতরা প্রবল রাষ্ট্রীয় শক্তি নিয়ে ঢুকে গেছে। আর সঙ্গে সঙ্গে ঝড়ের মতো চলে গেছে জমি, বন, পাহাড়, প্রাকৃতিক সম্পদ। ওরা এখন অধিকারহীন অসহায় মানুষ। সংবেদনশীল, বিনম্র, প্রচণ্ড ভালোবাসা ছাড়া ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীগুলোর উন্নয়ন এখন আর সম্ভব নয়। রাজনীতি, সমাজনীতি, সংস্কৃতি, অর্থনীতি—সবখানে এই ভালোবাসার প্রতিফলন দরকার। তাদের উন্নয়নের জন্য মানবাধিকারকে অগ্রাধিকার দিতে হবে। এখন সত্যি নম্র, অনুতপ্ত, চিন্তাশীল ও আত্মানুসন্ধানী হওয়ার সময়।
সঞ্জীব দ্রং, কলামিস্ট ও মানবাধিকারকর্মী
সঞ্জীব দ্রং

মহাশ্বেতা দেবী ম্যাগসেসে পুরস্কার পেয়েছিলেন ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী বিষয়ে তাঁর লেখালেখি ও কর্মযজ্ঞের কারণে। ভারতের বহু উপেক্ষিত ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর সঙ্গে মূলধারার মানুষের সেতুবন্ধন রচনায় তাঁর লেখা অসাধারণ ভূমিকা রেখেছিল। কে মূলধারা, কে মূলধারার বাইরে—এই নিয়েও মহাশ্বেতা দেবীর অসাধারণ ভিন্ন বক্তব্য রয়েছে। তাঁর সঙ্গে আমার বেশ কয়েকবার দেখা হয়েছিল ঢাকায়।
প্রথমবার মহাশ্বেতা দেবীর সঙ্গে দেখা করতে সোনারগাঁও হোটেলে গিয়েছিলাম। সেটা নব্বইয়ের দশকের শুরুতে। তখন আমি সাপ্তাহিক খবরের কাগজে ‘আদিবাসী মেয়ে’ কলাম লিখতাম; আর দিদির লেখার কিছু অংশ মাঝেমধ্যে তুলে ধরতাম আমার লেখার ভেতরে। তিনি আমার মাথায় হাত রেখে আশীর্বাদ করেছিলেন। তখন প্রতি সপ্তাহে আমার লেখা বের হতো। তখন তরুণ আমি কী রোমাঞ্চ ও শিহরণ নিয়ে নিজেই নিজের লেখা পড়তাম। আমিও জীবনের সঙ্গে জীবন মেলাবার আয়োজনের কথা বলতাম। মাঝেমধ্যে লিখতে গিয়ে ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর মানুষের বেদনা ও অস্ফুট কান্না দেখে লেখার মাঝখানে থেমে যেতাম। বুকটা হাহাকার করে উঠত আবেগে। মাঝে মাঝে অজান্তে চোখ ফেটে জল ঝরে পড়ত। আজ অবাক হয়ে সেসব দিনের কথা ভাবি। মনে প্রশ্ন আসে—আমরা কি এগিয়েছি আসলে? নাকি সভ্যতায়, মানবিকতায়, সৌজন্যবোধে, মানুষের প্রতি সম্মান প্রদর্শনে, জ্ঞানে ও সংস্কৃতি চেতনায় পিছিয়ে গেছি অনেক দূর?
নব্বইয়ের দশকের শুরুতে যখন প্রতি সপ্তাহে কলাম লিখতাম, অন্য রকম অনুভূতি হতো। সেই সময় বিখ্যাত সব লেখক এই কাগজে লিখতেন। সেই সময় আমি মহাশ্বেতা দেবীর লেখায় অনুপ্রাণিত হতাম। ‘হাজার চুরাশির মা’, ‘অরণ্যের অধিকার’, ‘শালগিরার ডাকে’, ‘চোট্টি মুন্ডা ও তার তীর’, ‘বিছন’, ‘অপারেশন বসাই টুডু’, ‘ঝাঁসির রাণী’, ‘রুদালি’, ‘টেরোড্যাকটিল’, ‘পিরথা ও পূরণ সহায়’ আরও কত উপন্যাস আমি পড়েছি। ‘রুদালি’ নিয়ে ছায়াছবি হয়েছে। মূলধারা নিয়ে তাঁর বক্তব্য, ‘ভারতবর্ষে শাসনব্যবস্থা মূলস্রোত-চিন্তা দ্বারা প্রভাবিত ও নিয়ন্ত্রিত। মূলস্রোত ও ভারতের ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী-তপসিলীদের জীবনস্রোত চিরকালই বিচ্ছিন্ন থেকেছে, বিচ্ছিন্ন করে রেখেছি আমরাই। কিন্তু এটা জানবেন, ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীগুলো নিজেদের ভারতবর্ষের অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ বলেই মনে করে। ভারতের সভ্যতায় ওদের অবদান আছে মিলেমিশে। ভারতের সংস্কৃতি অনেক নিয়েছে। এসব স্বাভাবিকভাবেই হয়েছে। মূলস্রোত এর স্বীকৃতি দেয়নি কখনো। ব্যবহার করে গেছে, শুধু ব্যবহার।’ বাংলাদেশের ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীগুলোর জন্যও কথাগুলো প্রযোজ্য।
মহাশ্বেতা দেবী আবার বলছেন, ‘এই যে এত কিছু করা হয়নি আজও, এর ফলে কী আশা করে মূলস্রোত? উপেক্ষা করেই চলব এবং উপেক্ষিত মানুষ তা মেনে চলবেন নীরবে? যদি ওদের মনে “বিচ্ছিন্নতাবোধ” থাকে, সে জন্য দায়ী মূলস্রোত। বহু বছর ধরে ওদের বিচ্ছিন্ন করে রেখেছে এই মূলস্রোত। মূলস্রোতকেই তো বিচ্ছিন্নতাবাদী বলতে হয় তাহলে। আসলে এখন নম্র, অনুতপ্ত, চিন্তাশীল, আত্মানুসন্ধানী হওয়ার সময়। ক্রুদ্ধ গর্জন ও কথার কচকচির সময় নয়। গঙ্গা-যমুনার সঙ্গে ডুলুং, নেংসাই, চাকা—এসব নদ-নদীকে মেলাবার কাজ তো শুরুই হয়নি এখনো। কবে হবে, তা-ও জানি না। শুধু এটা জানি যে পরিণামে মূলস্রোতকে, সমগ্র দেশকে ভীষণ দাম দিতে হবে এই উপেক্ষার। আর কাদের উপেক্ষার? যারা সত্যিই তো অনেক, অনেক সভ্য আমাদের চেয়ে। মেয়ের বাপ পণ দেয় না, সতীদাহ বা পণের কারণে বধূ হত্যা জানে না, কন্যাসন্তানকে হত্যা করে না, বিধবা-বিবাহ স্বীকৃত, উপযুক্ত কারণ থাকলে বিবাহবিচ্ছেদ ও পুনর্বিবাহ স্বীকৃত, এমন উন্নত সামাজিক প্রথা যাদের, তাদের উপেক্ষা করলাম। তারা যে সভ্য, উন্নত, শ্রদ্ধেয়, মূলস্রোত, সেটা জানার চেষ্টাই করল না। এর দাম আমাদের দিয়ে যেতে হচ্ছে, হবে। কোনো দিন ভারতের সত্যি ইতিহাস লেখা হবে। সে ইতিহাস আমাদের ক্ষমা করবে না, যদি এখনো না বুঝি।’
মহাশ্বেতা দেবীর কাছ থেকে শিখে আমি এই কথাগুলো অনেকবার বলেছি।
অনেক জায়গায়, আমার লেখায়, টিভি টক শোতে, তরুণদের জন্য বক্তৃতায়, বিশ্ববিদ্যালয়ে, গানের সভায়, মহড়ায়। ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীগুলোর জীবন এক মহাদেশ, নানা সম্পদে শোভিত ও সমৃদ্ধ সেই মহাদেশ। অনাবিষ্কৃত, অজানিত রেখেই আমরা সব শেষ করে দিচ্ছি। আমাদের দেশে পাহাড়-পর্বত-নদী-ঝরনা-বন-অরণ্য-পরিবেশ কে রক্ষা করেছে এতকাল? এই ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর মানুষেরা। জাতিসংঘ বলছে, বিশ্বের জীববৈচিত্র্যের শতকরা ৮০ ভাগ সংরক্ষণ করে এই ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর মানুষেরা, ইনডিজিনাস পিপলস। ইউনেসকো পৃথিবীর যে ৬ হাজার মাতৃভাষার কথা বলছে, সেগুলোর মধ্যে ৫ হাজার ভাষা হলো ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর মানুষের, যাদের সংখ্যা ৯০টি দেশে প্রায় ৪৮ কোটি। বাংলাদেশে ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য একটি নীতিমালা দরকার, একটি ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী অধিকার আইন দরকার। ইনডিজিনাস পলিসি দরকার। কবে হবে এসব, জানি না।
দুই.
আমরা স্বাধীনতার ৫০ বছর পূর্ণ করলাম। অনেক উৎসব হলো। প্রান্তিক মানুষসহ ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর মানুষের মানবাধিকার, আত্মপরিচয়, মৌলিক স্বাধীনতা, ঐতিহ্যগত ভূমি ও বনের ওপর প্রথাগত অধিকার ইত্যাদি নিয়ে যদি আমরা কথা বলি, তবে দেখব আশাহত হওয়ার ঘটনা। সরকারের আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউট একটি সমীক্ষা করেছে। সেখানে পাওয়া গেছে, দেশে আছে ৪১টি ভাষা। উর্দু ও বাংলা বাদ দিলে বাকি প্রায় সব ভাষাই ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীগুলোর মাতৃভাষা। সরকারি এই প্রতিষ্ঠান নিজে বলছে, এদের মধ্যে ১৪টি ভাষা বিপন্ন। আমি দুঃখ ও বিস্ময় নিয়ে দেখি, ভাষার জন্য আবেগভরা জীবন উৎসর্গ করা মূলধারার মানুষের মধ্যে অন্যের মাতৃভাষা হারিয়ে যাওয়া নিয়ে কোনো অনুভূতি নেই। আমি দেখিনি। মিডিয়াও এ নিয়ে কোনো হইচই করেনি। সম্ভবত আমি কয়েকটি কলাম লিখেছিলাম। বক্তৃতায় ও টিভি টক শোতে কিছু বলার চেষ্টা করেছিলাম। পারিনি মানুষের হৃদয়ে একটু সহানুভূতির অশ্রু ঝরাতে।
তারপরও বলব, অনেক ইতিবাচক অর্জন হয়েছে আমাদের গত পাঁচ দশকে। মুক্তিযুদ্ধের সময় ১০ এপ্রিল স্বাধীনতার ঘোষণাপত্রে আমরা অঙ্গীকার করেছিলাম, বাংলাদেশের জনগণের জন্য সাম্য, মানবিক মর্যাদা ও সামাজিক সুবিচার নিশ্চিত করব। বাঙালি জাতির পাশাপাশি ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীগুলোও মুক্তিযুদ্ধে ব্যাপকভাবে অংশ নিয়েছিল। ধর্মীয় সংখ্যালঘু হিসেবে অবর্ণনীয় কষ্ট সইতে হয়েছে ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীগুলোর। আমি একাত্তরে পরিবারের সঙ্গে শরণার্থী হয়েছিলাম ভারতের মেঘালয়ে। মুক্তিযুদ্ধ শেষে দেশে ফিরে গ্রামে ধ্বংসস্তূপ দেখেছিলাম। সেই বালক বয়সে উদ্বাস্তু জীবনের পথে আমার মা ও স্বজনদের কান্নার দৃশ্য কোনো দিন ভুলব না আমি।
দেশে ফিরে আমাদের সম্পূর্ণ নতুন করে সব শুরু করতে হয়েছিল। এখন ভাবতে ভালো লাগছে যে স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী পেরিয়ে এসে আমরা দেখছি, প্রিয় স্বদেশ অর্থনৈতিকভাবে এগিয়ে চলেছে। যদিও অন্যদিকে নাগরিকদের একটি অংশ; ৪০ লক্ষাধিক প্রান্তিক মানুষ সবার সঙ্গে সমানতালে এগোতে পারছে না। একদিকে বিশাল বাজেটের মেগা সব প্রকল্প ও অবকাঠামোগত উন্নয়ন, অন্যদিকে সমাজের কিছু মানুষের জীবনে বৈষম্য ও হাহাকারের চিত্র প্রকট হচ্ছে। ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীগুলোর জনগণ, চা-শ্রমিক, দলিত, দূর পাহাড়, চর ও হাওর অঞ্চলের মানুষ, ধর্মীয় সংখ্যালঘু ও অন্যান্য প্রান্তিক
মানুষের দুয়ারে এই উন্নয়নের সুফল সমভাবে পৌঁছাতে পারছে না।
ইতিবাচক যা কিছু অর্জিত হয়েছে স্বাধীনতার ৫০ বছরে, তা হলো, ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী ইস্যু নিয়ে স্থানীয়, জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে বিস্তর আলাপ-আলোচনা হচ্ছে, দেশে নাগরিক সমাজ ও বেসরকারি পর্যায়ে এ বিষয়ে সচেতনতা বৃদ্ধি, মিডিয়া আগের যেকোনো সময়ের চেয়ে এ বিষয়ে অনেক বেশি উচ্চকণ্ঠ। এ ছাড়া সরকারি কর্মকর্তাদের মধ্যেও ইতিবাচক ভাবনা তৈরি হচ্ছে। জাতীয় শিক্ষানীতিতে আদিবাসী ভাষায় পড়াশোনার ব্যবস্থা রাখা হয়েছে এবং এ পর্যন্ত পাঁচটি আদিবাসী ভাষায় বই রচিত হয়েছে। নারী উন্নয়ন নীতি, ষষ্ঠ, সপ্তম ও অষ্টম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনায় ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর ইস্যু অন্তর্ভুক্ত হয়েছে বিস্তারিতভাবে। ২০১০ সালে ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠান আইন হয়েছে, যেখানে নৃগোষ্ঠী বলতে আদিবাসীদের নাম তালিকাভুক্ত করা হয়েছে। ২০১৯ সালের মার্চ মাসে ৫০টি ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী জাতির নাম সংস্কৃতি মন্ত্রণালয় গেজেটভুক্ত করেছে। সমতল অঞ্চলের ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীগুলোর অর্থনৈতিক উন্নয়নে পর্যাপ্ত না হলেও বাজেট বরাদ্দসহ কিছু পদক্ষেপ গৃহীত হয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর শিক্ষার্থীদের বৃত্তি দেওয়া হচ্ছে। গবাদিপশু বিতরণ, কৃষি উপকরণ সরবরাহ, গৃহহীনদের জন্য ঘর, সামাজিক নিরাপত্তাবেষ্টনীর সহায়তা, চাকরিতে সীমিত সুযোগ ইত্যাদি ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীগুলোর জনগণ পাচ্ছে। সীমান্তবর্তী গ্রামগুলোতেও বিদ্যুৎ পৌঁছে গেছে। স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীর জাতীয় উৎসবে ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর শিল্পীরাও অংশ নিয়েছেন। কঠিন করোনাকালে অপ্রতুল হলেও কিছু সহায়তা পেয়েছে। বলা যায়, এ ধরনের অগ্রগতি সাধিত হয়েছে।
সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনীর ২৩ক অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, ‘রাষ্ট্র বিভিন্ন উপজাতি, ক্ষুদ্র জাতিসত্তা, নৃগোষ্ঠী ও সম্প্রদায়ের অনন্য বৈশিষ্ট্যপূর্ণ আঞ্চলিক সংস্কৃতি এবং ঐতিহ্য সংরক্ষণ, উন্নয়ন ও বিকাশের ব্যবস্থা গ্রহণ করিবেন।’ দেশে আদিবাসীবিষয়ক সংসদীয় ককাস গঠিত হয়েছে এবং এই ককাস আদিবাসী অধিকার আইনের খসড়া তৈরি করে সংসদে জমা দিয়েছে। অন্যদিকে এখানে জাতিসংঘসহ অনেকে কাজ করছে। ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর সংগঠনগুলোর মধ্যেও ঐক্য ও সংহতি জোরদার হচ্ছে। জাতীয় মানবাধিকার কমিশন অনেক সীমাবদ্ধতার মধ্যেও ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর অধিকার নিয়ে কাজ করছে এবং এ বিষয়ে থিমেটিক গ্রুপ রয়েছে।
তিন.
তারপরও কিছু প্রশ্ন রয়ে যায়। কথা ছিল সবার জন্য সাম্য, মানবিক মর্যাদা ও সামাজিক সুবিচার নিশ্চিত হবে। কিন্তু আজ জাতিগত ও ধর্মীয় সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মানবাধিকার কোন স্তরে? কথা ছিল সমতল অঞ্চলের ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর ভূমি সমস্যা সমাধানের জন্য একটি পৃথক ভূমি কমিশন গঠন করা হবে। বর্তমান সরকার ২০০৮ সালের ডিসেম্বরে এই প্রতিশ্রুতি দিলেও এ নিয়ে কোনো কাজ শুরু হয়নি। দেশ দৃশ্যমান অর্থনৈতিক উন্নয়নের দিকে ধাবিত হলেও ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীগুলো তাদের চিরায়ত, ঐতিহ্যগত ভূমি থেকে ধীরে ধীরে বিতাড়িত হচ্ছে, নদীগুলো দখল হয়ে যাচ্ছে। প্রাকৃতিক সম্পদ নির্বিচার উত্তোলন করে প্রাণ-প্রকৃতি, জীববৈচিত্র্য ধ্বংস করা হচ্ছে।
স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী পেরিয়ে আরও কিছু প্রশ্ন আছে। কেন জাতিগত ও ধর্মীয় সংখ্যালঘু জনগণের মৌলিক মানবাধিকারকে রাষ্ট্রের চোখে দয়া ও করুণার দৃষ্টিতে দেখা হয়? সমাজকল্যাণে যেসব পদক্ষেপ ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর জন্য নেওয়া হয়, সেখানে কোথাও কি তাদের নিজেদের সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষমতা আছে? যেহেতু ঐতিহাসিকভাবে ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীগুলো শোষণ, অবিচার ও বঞ্চনার শিকার; তাই ওরা অনগ্রসর রয়ে গেছে। ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীগুলোর জন্য চাকরিতে কোটা ছিল, তা-ও কেড়ে নেওয়া হয়েছে। ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীগুলো নিশ্চয় অনন্তকালই ধরে কোটা চায় না। আজ বলি, ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর মানুষের অধিকার হৃদয়ে ধারণ করা, সম্মান করা অথবা ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর অধিকার একটু বুঝতে চেষ্টা করার কাজটা আমরা যথাযথভাবে করতে পারিনি। জাতিগত ও ধর্মীয় সংখ্যালঘু জনগণ সম্পর্কে রাষ্ট্রের সঠিক নীতি প্রণীত হয়নি। ২০১৮ সালের নির্বাচনী ইশতেহারে আওয়ামী লীগ বলেছিল, একটি সংখ্যালঘু কমিশন গঠন করা হবে। এই নিয়েও কোনো অগ্রগতি দৃশ্যমান নয়। সময় বয়ে যায়।
চার.
ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীগুলোর জীবন জড়িয়ে আছে ওদের সামষ্টিক সংস্কৃতি চেতনায়। ‘চাচা আপন প্রাণ বাঁচা’ বলে কোনো প্রবাদ তাদের সংস্কৃতিতে নেই। মানুষ বাঁচে সবার সঙ্গে, সবার জন্য, সামষ্টিক ভাবনা নিয়ে। তাই তো ওরা পাহাড়-বন-নদী-ভূমির মালিকানা, আর বেচাকেনা থেকে অনেক দূরে। ওদের এই মনস্তত্ত্বকে, জীবনভাবনার বিশ্বজনীনতাকে আমাদের বুঝতে হবে। বুঝতে হবে ভালোবাসা ও মমতা দিয়ে; গায়ের জোরে, শক্তির দাপটে নয়। ওদের জীবনে বহিরাগতরা প্রবল রাষ্ট্রীয় শক্তি নিয়ে ঢুকে গেছে। আর সঙ্গে সঙ্গে ঝড়ের মতো চলে গেছে জমি, বন, পাহাড়, প্রাকৃতিক সম্পদ। ওরা এখন অধিকারহীন অসহায় মানুষ। সংবেদনশীল, বিনম্র, প্রচণ্ড ভালোবাসা ছাড়া ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীগুলোর উন্নয়ন এখন আর সম্ভব নয়। রাজনীতি, সমাজনীতি, সংস্কৃতি, অর্থনীতি—সবখানে এই ভালোবাসার প্রতিফলন দরকার। তাদের উন্নয়নের জন্য মানবাধিকারকে অগ্রাধিকার দিতে হবে। এখন সত্যি নম্র, অনুতপ্ত, চিন্তাশীল ও আত্মানুসন্ধানী হওয়ার সময়।
সঞ্জীব দ্রং, কলামিস্ট ও মানবাধিকারকর্মী

মহাশ্বেতা দেবী ম্যাগসেসে পুরস্কার পেয়েছিলেন ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী বিষয়ে তাঁর লেখালেখি ও কর্মযজ্ঞের কারণে। ভারতের বহু উপেক্ষিত ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর সঙ্গে মূলধারার মানুষের সেতুবন্ধন রচনায় তাঁর লেখা অসাধারণ ভূমিকা রেখেছিল। কে মূলধারা, কে মূলধারার বাইরে—এই নিয়েও মহাশ্বেতা দেবীর অসাধারণ ভিন্ন বক্তব্য রয়েছে। তাঁর সঙ্গে আমার বেশ কয়েকবার দেখা হয়েছিল ঢাকায়।
প্রথমবার মহাশ্বেতা দেবীর সঙ্গে দেখা করতে সোনারগাঁও হোটেলে গিয়েছিলাম। সেটা নব্বইয়ের দশকের শুরুতে। তখন আমি সাপ্তাহিক খবরের কাগজে ‘আদিবাসী মেয়ে’ কলাম লিখতাম; আর দিদির লেখার কিছু অংশ মাঝেমধ্যে তুলে ধরতাম আমার লেখার ভেতরে। তিনি আমার মাথায় হাত রেখে আশীর্বাদ করেছিলেন। তখন প্রতি সপ্তাহে আমার লেখা বের হতো। তখন তরুণ আমি কী রোমাঞ্চ ও শিহরণ নিয়ে নিজেই নিজের লেখা পড়তাম। আমিও জীবনের সঙ্গে জীবন মেলাবার আয়োজনের কথা বলতাম। মাঝেমধ্যে লিখতে গিয়ে ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর মানুষের বেদনা ও অস্ফুট কান্না দেখে লেখার মাঝখানে থেমে যেতাম। বুকটা হাহাকার করে উঠত আবেগে। মাঝে মাঝে অজান্তে চোখ ফেটে জল ঝরে পড়ত। আজ অবাক হয়ে সেসব দিনের কথা ভাবি। মনে প্রশ্ন আসে—আমরা কি এগিয়েছি আসলে? নাকি সভ্যতায়, মানবিকতায়, সৌজন্যবোধে, মানুষের প্রতি সম্মান প্রদর্শনে, জ্ঞানে ও সংস্কৃতি চেতনায় পিছিয়ে গেছি অনেক দূর?
নব্বইয়ের দশকের শুরুতে যখন প্রতি সপ্তাহে কলাম লিখতাম, অন্য রকম অনুভূতি হতো। সেই সময় বিখ্যাত সব লেখক এই কাগজে লিখতেন। সেই সময় আমি মহাশ্বেতা দেবীর লেখায় অনুপ্রাণিত হতাম। ‘হাজার চুরাশির মা’, ‘অরণ্যের অধিকার’, ‘শালগিরার ডাকে’, ‘চোট্টি মুন্ডা ও তার তীর’, ‘বিছন’, ‘অপারেশন বসাই টুডু’, ‘ঝাঁসির রাণী’, ‘রুদালি’, ‘টেরোড্যাকটিল’, ‘পিরথা ও পূরণ সহায়’ আরও কত উপন্যাস আমি পড়েছি। ‘রুদালি’ নিয়ে ছায়াছবি হয়েছে। মূলধারা নিয়ে তাঁর বক্তব্য, ‘ভারতবর্ষে শাসনব্যবস্থা মূলস্রোত-চিন্তা দ্বারা প্রভাবিত ও নিয়ন্ত্রিত। মূলস্রোত ও ভারতের ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী-তপসিলীদের জীবনস্রোত চিরকালই বিচ্ছিন্ন থেকেছে, বিচ্ছিন্ন করে রেখেছি আমরাই। কিন্তু এটা জানবেন, ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীগুলো নিজেদের ভারতবর্ষের অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ বলেই মনে করে। ভারতের সভ্যতায় ওদের অবদান আছে মিলেমিশে। ভারতের সংস্কৃতি অনেক নিয়েছে। এসব স্বাভাবিকভাবেই হয়েছে। মূলস্রোত এর স্বীকৃতি দেয়নি কখনো। ব্যবহার করে গেছে, শুধু ব্যবহার।’ বাংলাদেশের ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীগুলোর জন্যও কথাগুলো প্রযোজ্য।
মহাশ্বেতা দেবী আবার বলছেন, ‘এই যে এত কিছু করা হয়নি আজও, এর ফলে কী আশা করে মূলস্রোত? উপেক্ষা করেই চলব এবং উপেক্ষিত মানুষ তা মেনে চলবেন নীরবে? যদি ওদের মনে “বিচ্ছিন্নতাবোধ” থাকে, সে জন্য দায়ী মূলস্রোত। বহু বছর ধরে ওদের বিচ্ছিন্ন করে রেখেছে এই মূলস্রোত। মূলস্রোতকেই তো বিচ্ছিন্নতাবাদী বলতে হয় তাহলে। আসলে এখন নম্র, অনুতপ্ত, চিন্তাশীল, আত্মানুসন্ধানী হওয়ার সময়। ক্রুদ্ধ গর্জন ও কথার কচকচির সময় নয়। গঙ্গা-যমুনার সঙ্গে ডুলুং, নেংসাই, চাকা—এসব নদ-নদীকে মেলাবার কাজ তো শুরুই হয়নি এখনো। কবে হবে, তা-ও জানি না। শুধু এটা জানি যে পরিণামে মূলস্রোতকে, সমগ্র দেশকে ভীষণ দাম দিতে হবে এই উপেক্ষার। আর কাদের উপেক্ষার? যারা সত্যিই তো অনেক, অনেক সভ্য আমাদের চেয়ে। মেয়ের বাপ পণ দেয় না, সতীদাহ বা পণের কারণে বধূ হত্যা জানে না, কন্যাসন্তানকে হত্যা করে না, বিধবা-বিবাহ স্বীকৃত, উপযুক্ত কারণ থাকলে বিবাহবিচ্ছেদ ও পুনর্বিবাহ স্বীকৃত, এমন উন্নত সামাজিক প্রথা যাদের, তাদের উপেক্ষা করলাম। তারা যে সভ্য, উন্নত, শ্রদ্ধেয়, মূলস্রোত, সেটা জানার চেষ্টাই করল না। এর দাম আমাদের দিয়ে যেতে হচ্ছে, হবে। কোনো দিন ভারতের সত্যি ইতিহাস লেখা হবে। সে ইতিহাস আমাদের ক্ষমা করবে না, যদি এখনো না বুঝি।’
মহাশ্বেতা দেবীর কাছ থেকে শিখে আমি এই কথাগুলো অনেকবার বলেছি।
অনেক জায়গায়, আমার লেখায়, টিভি টক শোতে, তরুণদের জন্য বক্তৃতায়, বিশ্ববিদ্যালয়ে, গানের সভায়, মহড়ায়। ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীগুলোর জীবন এক মহাদেশ, নানা সম্পদে শোভিত ও সমৃদ্ধ সেই মহাদেশ। অনাবিষ্কৃত, অজানিত রেখেই আমরা সব শেষ করে দিচ্ছি। আমাদের দেশে পাহাড়-পর্বত-নদী-ঝরনা-বন-অরণ্য-পরিবেশ কে রক্ষা করেছে এতকাল? এই ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর মানুষেরা। জাতিসংঘ বলছে, বিশ্বের জীববৈচিত্র্যের শতকরা ৮০ ভাগ সংরক্ষণ করে এই ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর মানুষেরা, ইনডিজিনাস পিপলস। ইউনেসকো পৃথিবীর যে ৬ হাজার মাতৃভাষার কথা বলছে, সেগুলোর মধ্যে ৫ হাজার ভাষা হলো ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর মানুষের, যাদের সংখ্যা ৯০টি দেশে প্রায় ৪৮ কোটি। বাংলাদেশে ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য একটি নীতিমালা দরকার, একটি ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী অধিকার আইন দরকার। ইনডিজিনাস পলিসি দরকার। কবে হবে এসব, জানি না।
দুই.
আমরা স্বাধীনতার ৫০ বছর পূর্ণ করলাম। অনেক উৎসব হলো। প্রান্তিক মানুষসহ ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর মানুষের মানবাধিকার, আত্মপরিচয়, মৌলিক স্বাধীনতা, ঐতিহ্যগত ভূমি ও বনের ওপর প্রথাগত অধিকার ইত্যাদি নিয়ে যদি আমরা কথা বলি, তবে দেখব আশাহত হওয়ার ঘটনা। সরকারের আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউট একটি সমীক্ষা করেছে। সেখানে পাওয়া গেছে, দেশে আছে ৪১টি ভাষা। উর্দু ও বাংলা বাদ দিলে বাকি প্রায় সব ভাষাই ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীগুলোর মাতৃভাষা। সরকারি এই প্রতিষ্ঠান নিজে বলছে, এদের মধ্যে ১৪টি ভাষা বিপন্ন। আমি দুঃখ ও বিস্ময় নিয়ে দেখি, ভাষার জন্য আবেগভরা জীবন উৎসর্গ করা মূলধারার মানুষের মধ্যে অন্যের মাতৃভাষা হারিয়ে যাওয়া নিয়ে কোনো অনুভূতি নেই। আমি দেখিনি। মিডিয়াও এ নিয়ে কোনো হইচই করেনি। সম্ভবত আমি কয়েকটি কলাম লিখেছিলাম। বক্তৃতায় ও টিভি টক শোতে কিছু বলার চেষ্টা করেছিলাম। পারিনি মানুষের হৃদয়ে একটু সহানুভূতির অশ্রু ঝরাতে।
তারপরও বলব, অনেক ইতিবাচক অর্জন হয়েছে আমাদের গত পাঁচ দশকে। মুক্তিযুদ্ধের সময় ১০ এপ্রিল স্বাধীনতার ঘোষণাপত্রে আমরা অঙ্গীকার করেছিলাম, বাংলাদেশের জনগণের জন্য সাম্য, মানবিক মর্যাদা ও সামাজিক সুবিচার নিশ্চিত করব। বাঙালি জাতির পাশাপাশি ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীগুলোও মুক্তিযুদ্ধে ব্যাপকভাবে অংশ নিয়েছিল। ধর্মীয় সংখ্যালঘু হিসেবে অবর্ণনীয় কষ্ট সইতে হয়েছে ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীগুলোর। আমি একাত্তরে পরিবারের সঙ্গে শরণার্থী হয়েছিলাম ভারতের মেঘালয়ে। মুক্তিযুদ্ধ শেষে দেশে ফিরে গ্রামে ধ্বংসস্তূপ দেখেছিলাম। সেই বালক বয়সে উদ্বাস্তু জীবনের পথে আমার মা ও স্বজনদের কান্নার দৃশ্য কোনো দিন ভুলব না আমি।
দেশে ফিরে আমাদের সম্পূর্ণ নতুন করে সব শুরু করতে হয়েছিল। এখন ভাবতে ভালো লাগছে যে স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী পেরিয়ে এসে আমরা দেখছি, প্রিয় স্বদেশ অর্থনৈতিকভাবে এগিয়ে চলেছে। যদিও অন্যদিকে নাগরিকদের একটি অংশ; ৪০ লক্ষাধিক প্রান্তিক মানুষ সবার সঙ্গে সমানতালে এগোতে পারছে না। একদিকে বিশাল বাজেটের মেগা সব প্রকল্প ও অবকাঠামোগত উন্নয়ন, অন্যদিকে সমাজের কিছু মানুষের জীবনে বৈষম্য ও হাহাকারের চিত্র প্রকট হচ্ছে। ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীগুলোর জনগণ, চা-শ্রমিক, দলিত, দূর পাহাড়, চর ও হাওর অঞ্চলের মানুষ, ধর্মীয় সংখ্যালঘু ও অন্যান্য প্রান্তিক
মানুষের দুয়ারে এই উন্নয়নের সুফল সমভাবে পৌঁছাতে পারছে না।
ইতিবাচক যা কিছু অর্জিত হয়েছে স্বাধীনতার ৫০ বছরে, তা হলো, ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী ইস্যু নিয়ে স্থানীয়, জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে বিস্তর আলাপ-আলোচনা হচ্ছে, দেশে নাগরিক সমাজ ও বেসরকারি পর্যায়ে এ বিষয়ে সচেতনতা বৃদ্ধি, মিডিয়া আগের যেকোনো সময়ের চেয়ে এ বিষয়ে অনেক বেশি উচ্চকণ্ঠ। এ ছাড়া সরকারি কর্মকর্তাদের মধ্যেও ইতিবাচক ভাবনা তৈরি হচ্ছে। জাতীয় শিক্ষানীতিতে আদিবাসী ভাষায় পড়াশোনার ব্যবস্থা রাখা হয়েছে এবং এ পর্যন্ত পাঁচটি আদিবাসী ভাষায় বই রচিত হয়েছে। নারী উন্নয়ন নীতি, ষষ্ঠ, সপ্তম ও অষ্টম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনায় ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর ইস্যু অন্তর্ভুক্ত হয়েছে বিস্তারিতভাবে। ২০১০ সালে ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠান আইন হয়েছে, যেখানে নৃগোষ্ঠী বলতে আদিবাসীদের নাম তালিকাভুক্ত করা হয়েছে। ২০১৯ সালের মার্চ মাসে ৫০টি ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী জাতির নাম সংস্কৃতি মন্ত্রণালয় গেজেটভুক্ত করেছে। সমতল অঞ্চলের ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীগুলোর অর্থনৈতিক উন্নয়নে পর্যাপ্ত না হলেও বাজেট বরাদ্দসহ কিছু পদক্ষেপ গৃহীত হয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর শিক্ষার্থীদের বৃত্তি দেওয়া হচ্ছে। গবাদিপশু বিতরণ, কৃষি উপকরণ সরবরাহ, গৃহহীনদের জন্য ঘর, সামাজিক নিরাপত্তাবেষ্টনীর সহায়তা, চাকরিতে সীমিত সুযোগ ইত্যাদি ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীগুলোর জনগণ পাচ্ছে। সীমান্তবর্তী গ্রামগুলোতেও বিদ্যুৎ পৌঁছে গেছে। স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীর জাতীয় উৎসবে ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর শিল্পীরাও অংশ নিয়েছেন। কঠিন করোনাকালে অপ্রতুল হলেও কিছু সহায়তা পেয়েছে। বলা যায়, এ ধরনের অগ্রগতি সাধিত হয়েছে।
সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনীর ২৩ক অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, ‘রাষ্ট্র বিভিন্ন উপজাতি, ক্ষুদ্র জাতিসত্তা, নৃগোষ্ঠী ও সম্প্রদায়ের অনন্য বৈশিষ্ট্যপূর্ণ আঞ্চলিক সংস্কৃতি এবং ঐতিহ্য সংরক্ষণ, উন্নয়ন ও বিকাশের ব্যবস্থা গ্রহণ করিবেন।’ দেশে আদিবাসীবিষয়ক সংসদীয় ককাস গঠিত হয়েছে এবং এই ককাস আদিবাসী অধিকার আইনের খসড়া তৈরি করে সংসদে জমা দিয়েছে। অন্যদিকে এখানে জাতিসংঘসহ অনেকে কাজ করছে। ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর সংগঠনগুলোর মধ্যেও ঐক্য ও সংহতি জোরদার হচ্ছে। জাতীয় মানবাধিকার কমিশন অনেক সীমাবদ্ধতার মধ্যেও ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর অধিকার নিয়ে কাজ করছে এবং এ বিষয়ে থিমেটিক গ্রুপ রয়েছে।
তিন.
তারপরও কিছু প্রশ্ন রয়ে যায়। কথা ছিল সবার জন্য সাম্য, মানবিক মর্যাদা ও সামাজিক সুবিচার নিশ্চিত হবে। কিন্তু আজ জাতিগত ও ধর্মীয় সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মানবাধিকার কোন স্তরে? কথা ছিল সমতল অঞ্চলের ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর ভূমি সমস্যা সমাধানের জন্য একটি পৃথক ভূমি কমিশন গঠন করা হবে। বর্তমান সরকার ২০০৮ সালের ডিসেম্বরে এই প্রতিশ্রুতি দিলেও এ নিয়ে কোনো কাজ শুরু হয়নি। দেশ দৃশ্যমান অর্থনৈতিক উন্নয়নের দিকে ধাবিত হলেও ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীগুলো তাদের চিরায়ত, ঐতিহ্যগত ভূমি থেকে ধীরে ধীরে বিতাড়িত হচ্ছে, নদীগুলো দখল হয়ে যাচ্ছে। প্রাকৃতিক সম্পদ নির্বিচার উত্তোলন করে প্রাণ-প্রকৃতি, জীববৈচিত্র্য ধ্বংস করা হচ্ছে।
স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী পেরিয়ে আরও কিছু প্রশ্ন আছে। কেন জাতিগত ও ধর্মীয় সংখ্যালঘু জনগণের মৌলিক মানবাধিকারকে রাষ্ট্রের চোখে দয়া ও করুণার দৃষ্টিতে দেখা হয়? সমাজকল্যাণে যেসব পদক্ষেপ ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর জন্য নেওয়া হয়, সেখানে কোথাও কি তাদের নিজেদের সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষমতা আছে? যেহেতু ঐতিহাসিকভাবে ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীগুলো শোষণ, অবিচার ও বঞ্চনার শিকার; তাই ওরা অনগ্রসর রয়ে গেছে। ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীগুলোর জন্য চাকরিতে কোটা ছিল, তা-ও কেড়ে নেওয়া হয়েছে। ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীগুলো নিশ্চয় অনন্তকালই ধরে কোটা চায় না। আজ বলি, ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর মানুষের অধিকার হৃদয়ে ধারণ করা, সম্মান করা অথবা ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর অধিকার একটু বুঝতে চেষ্টা করার কাজটা আমরা যথাযথভাবে করতে পারিনি। জাতিগত ও ধর্মীয় সংখ্যালঘু জনগণ সম্পর্কে রাষ্ট্রের সঠিক নীতি প্রণীত হয়নি। ২০১৮ সালের নির্বাচনী ইশতেহারে আওয়ামী লীগ বলেছিল, একটি সংখ্যালঘু কমিশন গঠন করা হবে। এই নিয়েও কোনো অগ্রগতি দৃশ্যমান নয়। সময় বয়ে যায়।
চার.
ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীগুলোর জীবন জড়িয়ে আছে ওদের সামষ্টিক সংস্কৃতি চেতনায়। ‘চাচা আপন প্রাণ বাঁচা’ বলে কোনো প্রবাদ তাদের সংস্কৃতিতে নেই। মানুষ বাঁচে সবার সঙ্গে, সবার জন্য, সামষ্টিক ভাবনা নিয়ে। তাই তো ওরা পাহাড়-বন-নদী-ভূমির মালিকানা, আর বেচাকেনা থেকে অনেক দূরে। ওদের এই মনস্তত্ত্বকে, জীবনভাবনার বিশ্বজনীনতাকে আমাদের বুঝতে হবে। বুঝতে হবে ভালোবাসা ও মমতা দিয়ে; গায়ের জোরে, শক্তির দাপটে নয়। ওদের জীবনে বহিরাগতরা প্রবল রাষ্ট্রীয় শক্তি নিয়ে ঢুকে গেছে। আর সঙ্গে সঙ্গে ঝড়ের মতো চলে গেছে জমি, বন, পাহাড়, প্রাকৃতিক সম্পদ। ওরা এখন অধিকারহীন অসহায় মানুষ। সংবেদনশীল, বিনম্র, প্রচণ্ড ভালোবাসা ছাড়া ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীগুলোর উন্নয়ন এখন আর সম্ভব নয়। রাজনীতি, সমাজনীতি, সংস্কৃতি, অর্থনীতি—সবখানে এই ভালোবাসার প্রতিফলন দরকার। তাদের উন্নয়নের জন্য মানবাধিকারকে অগ্রাধিকার দিতে হবে। এখন সত্যি নম্র, অনুতপ্ত, চিন্তাশীল ও আত্মানুসন্ধানী হওয়ার সময়।
সঞ্জীব দ্রং, কলামিস্ট ও মানবাধিকারকর্মী

গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।
২১ দিন আগে
‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর...
১২ জুন ২০২৫
ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।
১৯ মে ২০২৫
আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
০৮ মে ২০২৫বাসস, ঢাকা

গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।
আজ সোমবার বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের ট্রাইব্যুনাল-১-এ মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা (আইও) মো. আলমগীরের জেরা শুরু করেন রাষ্ট্র নিযুক্ত আইনজীবী আমীর হোসেন। আইনজীবী আমীর হোসেন পলাতক আসামি শেখ হাসিনা ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের পক্ষে শুনানি করছেন। এর আগে গত মঙ্গলবার তদন্তকারী কর্মকর্তা মো. আলমগীরের সাক্ষ্য গ্রহণ সম্পন্ন হয়।
এই মামলার শুনানিতে এর আগে গণ-অভ্যুত্থানের অন্যতম প্রতীক শহীদ আবু সাঈদের বাবাসহ স্বজনহারা পরিবারের একাধিক সদস্য সাক্ষ্য দিয়েছেন। এ ছাড়া মামলার গুরুত্বপূর্ণ ‘স্টার উইটনেস’ হিসেবে সাক্ষ্য দেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক এবং জুলাই আন্দোলনের অন্যতম নেতৃত্বদানকারী নাহিদ ইসলাম এবং দৈনিক আমার দেশ পত্রিকার সম্পাদক ড. মাহমুদুর রহমান।
গত বছরের জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার আন্দোলন দমনে আওয়ামী লীগ সরকার, তাদের দলীয় ক্যাডার ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর একটি অংশ গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটিত করে বলে অভিযোগ ওঠে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে শেখ হাসিনা, তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল এবং তৎকালীন আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের বিরুদ্ধে গত ১০ জুলাই অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দেন ট্রাইব্যুনাল-১।
পরবর্তীকালে, এই মামলার অন্যতম আসামি সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন দোষ স্বীকার করে ঘটনার সত্যতা উদ্ঘাটনে রাজসাক্ষী (অ্যাপ্রোভার) হওয়ার জন্য ট্রাইব্যুনালে আবেদন করেন। ট্রাইব্যুনাল তাঁর আবেদন মঞ্জুর করলে তিনি রাজসাক্ষী হিসেবে এই মামলায় সাক্ষ্য দেন।
মামলার প্রসিকিউশন পক্ষে শুনানি করছেন চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম, প্রসিকিউটর মিজানুল ইসলাম এবং গাজী এসএইচ তামিম। শুনানিতে তাঁদের সঙ্গে অপর প্রসিকিউটররাও উপস্থিত ছিলেন।
অন্যদিকে, এই মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে রাজসাক্ষী হওয়া সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের পক্ষে আছেন আইনজীবী যায়েদ বিন আমজাদ।
মানবতাবিরোধী অপরাধের এই মামলা ছাড়াও ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে আরও দুটি মামলা বিচারাধীন। এর মধ্যে একটি মামলায় আওয়ামী লীগের সাড়ে ১৫ বছরের শাসনামলে সংঘটিত গুম-খুনের ঘটনায় তাঁকে আসামি করা হয়েছে। অন্য মামলাটি হলো রাজধানীর মতিঝিলের শাপলা চত্বরে হেফাজতে ইসলামের সমাবেশে হত্যাকাণ্ড নিয়ে। এই তিনটি মামলার বিচারকাজই বর্তমানে দুটি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে চলমান।

গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।
আজ সোমবার বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের ট্রাইব্যুনাল-১-এ মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা (আইও) মো. আলমগীরের জেরা শুরু করেন রাষ্ট্র নিযুক্ত আইনজীবী আমীর হোসেন। আইনজীবী আমীর হোসেন পলাতক আসামি শেখ হাসিনা ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের পক্ষে শুনানি করছেন। এর আগে গত মঙ্গলবার তদন্তকারী কর্মকর্তা মো. আলমগীরের সাক্ষ্য গ্রহণ সম্পন্ন হয়।
এই মামলার শুনানিতে এর আগে গণ-অভ্যুত্থানের অন্যতম প্রতীক শহীদ আবু সাঈদের বাবাসহ স্বজনহারা পরিবারের একাধিক সদস্য সাক্ষ্য দিয়েছেন। এ ছাড়া মামলার গুরুত্বপূর্ণ ‘স্টার উইটনেস’ হিসেবে সাক্ষ্য দেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক এবং জুলাই আন্দোলনের অন্যতম নেতৃত্বদানকারী নাহিদ ইসলাম এবং দৈনিক আমার দেশ পত্রিকার সম্পাদক ড. মাহমুদুর রহমান।
গত বছরের জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার আন্দোলন দমনে আওয়ামী লীগ সরকার, তাদের দলীয় ক্যাডার ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর একটি অংশ গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটিত করে বলে অভিযোগ ওঠে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে শেখ হাসিনা, তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল এবং তৎকালীন আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের বিরুদ্ধে গত ১০ জুলাই অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দেন ট্রাইব্যুনাল-১।
পরবর্তীকালে, এই মামলার অন্যতম আসামি সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন দোষ স্বীকার করে ঘটনার সত্যতা উদ্ঘাটনে রাজসাক্ষী (অ্যাপ্রোভার) হওয়ার জন্য ট্রাইব্যুনালে আবেদন করেন। ট্রাইব্যুনাল তাঁর আবেদন মঞ্জুর করলে তিনি রাজসাক্ষী হিসেবে এই মামলায় সাক্ষ্য দেন।
মামলার প্রসিকিউশন পক্ষে শুনানি করছেন চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম, প্রসিকিউটর মিজানুল ইসলাম এবং গাজী এসএইচ তামিম। শুনানিতে তাঁদের সঙ্গে অপর প্রসিকিউটররাও উপস্থিত ছিলেন।
অন্যদিকে, এই মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে রাজসাক্ষী হওয়া সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের পক্ষে আছেন আইনজীবী যায়েদ বিন আমজাদ।
মানবতাবিরোধী অপরাধের এই মামলা ছাড়াও ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে আরও দুটি মামলা বিচারাধীন। এর মধ্যে একটি মামলায় আওয়ামী লীগের সাড়ে ১৫ বছরের শাসনামলে সংঘটিত গুম-খুনের ঘটনায় তাঁকে আসামি করা হয়েছে। অন্য মামলাটি হলো রাজধানীর মতিঝিলের শাপলা চত্বরে হেফাজতে ইসলামের সমাবেশে হত্যাকাণ্ড নিয়ে। এই তিনটি মামলার বিচারকাজই বর্তমানে দুটি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে চলমান।

মহাশ্বেতা দেবী ম্যাগসেসে পুরস্কার পেয়েছিলেন ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী বিষয়ে তাঁর লেখালেখি ও কর্মযজ্ঞের কারণে। ভারতের বহু উপেক্ষিত ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর সঙ্গে মূলধারার মানুষের সেতুবন্ধন রচনায় তাঁর লেখা অসাধারণ ভূমিকা রেখেছিল।
০১ জুলাই ২০২২
‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর...
১২ জুন ২০২৫
ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।
১৯ মে ২০২৫
আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
০৮ মে ২০২৫
‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর সঙ্গে।
মাছের সুষ্ঠু প্রজনন, উৎপাদন, মৎস্যসম্পদ সংরক্ষণ ও টেকসই মৎস্য আহরণের জন্য সমুদ্রে সব ধরনের মাছ শিকার ৫৮ দিনের নিষেধাজ্ঞা গতকাল বুধবার দিবাগত মধ্যরাতে শেষ হয়েছে। তাই গতকাল দিনভর ছিল উপকূলের জেলেপল্লিগুলোতে ব্যস্ততা। অনেকে দেখে নিচ্ছিলেন ট্রলার ঠিকঠাক আছে কি না, কেউ জালের ছেঁড়া অংশ সেলাই করছিলেন, কেউ আবার প্রয়োজনীয় খাদ্যসামগ্রীসহ অন্য সরঞ্জাম গুছিয়ে নিচ্ছিলেন।
বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র এবং ফকিরহাট উপ-মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের ঘাটে গতকাল শত শত ট্রলার নোঙর করে রাখা ছিল। জেলেদের উপস্থিতিতে ঘাট এলাকা সরগরম হয়ে ওঠে। ফকিরহাটের মুদি-মনিহারি দোকানগুলোতে জেলেরা কেনাকাটা করতে ভিড় জমান। ফকিরহাট এলাকার বিসমিল্লাহ ট্রলারের মাঝি রহিম মিয়া বলেন, ‘সাগরে মাছ শিকারে যেতে সকল প্রস্তুতি নিয়েছি। নিষেধাজ্ঞার সময় শেষ হওয়ামাত্রই সাগরে নামব।’
জেলে নুরসাইদ ও ফোরকান মিয়া বলেন, ‘নিষেধাজ্ঞার সময় পরিবার-পরিজন নিয়ে বেশ কষ্টে কেটেছে। ওই সময়ে বেশ টাকা ঋণ করেছি। এখন সাগরে যাব। দেখি আল্লাহ ঋণ পরিশোধ করতে দেন কি না।’
নোয়াখালীর হাতিয়ার সূর্যমুখী, বাংলাবাজার, কাজিরবাজার, পাইতান মার্কেট চেয়ারম্যান ঘাটসহ বেশ কয়েকটি ঘাটে গতকাল জেলেদের ব্যস্ত সময় পার করতে দেখা গেছে। অনেকে নৌকায় জাল তুলছিলেন, আবার অনেকে জ্বালানি তেল মজুতসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্রী ট্রলারে নিয়ে যান। সূর্যমুখী ঘাটের এমভি মায়ের দোয়া ট্রলারের মাঝি জাফর উল্যা বলেন, ‘সাগরে ৮-১০ দিন থাকার প্রস্তুতি নিচ্ছি। সন্ধ্যায় সাগরের উদ্দেশে রওনা দেব।’
সূর্যমুখী ঘাট জেলে সমিতির সভাপতি জবিয়ল হক বলেন, ‘সাগরে নামতে প্রস্তুত নোয়াখালীর হাতিয়ার ২০টি ঘাটের লক্ষাধিক জেলে। এসব ঘাটে প্রায় ১০ হাজার ছোট-বড় ফিশিং ট্রলার রয়েছে। প্রতি ট্রলারে ১০ জন হলেও লক্ষাধিক জেলে এই মাছ ধরার সঙ্গে জড়িত। তাঁদের সবাই গত ৫৮ দিন তীরে বেকার ছিলেন।’
পিরোজপুরের ইন্দুরকানি উপজেলার পাড়েরহাট মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের পার্শ্ববর্তী এলাকার জেলেরা গতকাল দিনভর সাগরে যাওয়ার প্রস্তুতি নেন। এ ছাড়া মঠবাড়িয়া উপজেলার সাপলেজা, খেতাচিড়া, বড়মাছুয়া, ছোটমাছুয়া, ভান্ডারিয়া উপজেলার চরখালী, হেতালিয়া, কাউখালী উপজেলার সোনাকুর এলাকার জেলেরা, সদর উপজেলা এবং নেছারাবাদ উপজেলার বিভিন্ন এলাকার জেলেরা প্রস্তুতি শেষে গত রাতে বঙ্গোপসাগরে রওনা হন।
কয়েক দিন ধরে কক্সবাজার উপকূলের জেলেপল্লিগুলোতে নৌকা, জাল মেরামতসহ বিভিন্ন প্রস্তুতি সেরেছেন জেলেরা। গতকাল মেরিন ড্রাইভের টেকনাফের খুরেরমুখ, সাবরাং ও বাহারছড়া এলাকায় দেখা গেছে, সড়কে দাঁড় করিয়ে রাখা সারি সারি ট্রলারে জাল ও রসদ তোলেন জেলেরা।
একটি ট্রলারের মাঝি আবু তাহের জানান, এবার ভারতের সঙ্গে মিল রেখে নিষেধাজ্ঞা দেওয়ায় কেউ সাগরে মাছ শিকারে নামেনি। এতে উপকূলের কাছাকাছি সাগরে জাল ফেললেই ইলিশসহ অন্য মাছ পাওয়া যাবে বলে আশাবাদী তিনি।
কক্সবাজার শহরের ফিশারি ঘাটের মৎস্য ব্যবসায়ী সমিতির পরিচালক জুলফিকার আলী জানান, কক্সবাজার উপকূলে ছোট-বড় ৭ হাজারের মতো যান্ত্রিক ট্রলার রয়েছে। এসব ট্রলারে প্রায় এক লাখ জেলে ও শ্রমিক নিয়োজিত রয়েছেন। অধিকাংশ ট্রলার নিষেধাজ্ঞা ওঠার সঙ্গে সঙ্গে সাগরে রওনা হবে।
[প্রতিবেদন তৈরিতে তথ্য দিয়ে সহায়তা করেছেন বরগুনা ও আমতলী, পিরোজপুর, কক্সবাজার এবং হাতিয়া প্রতিনিধি]

‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর সঙ্গে।
মাছের সুষ্ঠু প্রজনন, উৎপাদন, মৎস্যসম্পদ সংরক্ষণ ও টেকসই মৎস্য আহরণের জন্য সমুদ্রে সব ধরনের মাছ শিকার ৫৮ দিনের নিষেধাজ্ঞা গতকাল বুধবার দিবাগত মধ্যরাতে শেষ হয়েছে। তাই গতকাল দিনভর ছিল উপকূলের জেলেপল্লিগুলোতে ব্যস্ততা। অনেকে দেখে নিচ্ছিলেন ট্রলার ঠিকঠাক আছে কি না, কেউ জালের ছেঁড়া অংশ সেলাই করছিলেন, কেউ আবার প্রয়োজনীয় খাদ্যসামগ্রীসহ অন্য সরঞ্জাম গুছিয়ে নিচ্ছিলেন।
বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র এবং ফকিরহাট উপ-মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের ঘাটে গতকাল শত শত ট্রলার নোঙর করে রাখা ছিল। জেলেদের উপস্থিতিতে ঘাট এলাকা সরগরম হয়ে ওঠে। ফকিরহাটের মুদি-মনিহারি দোকানগুলোতে জেলেরা কেনাকাটা করতে ভিড় জমান। ফকিরহাট এলাকার বিসমিল্লাহ ট্রলারের মাঝি রহিম মিয়া বলেন, ‘সাগরে মাছ শিকারে যেতে সকল প্রস্তুতি নিয়েছি। নিষেধাজ্ঞার সময় শেষ হওয়ামাত্রই সাগরে নামব।’
জেলে নুরসাইদ ও ফোরকান মিয়া বলেন, ‘নিষেধাজ্ঞার সময় পরিবার-পরিজন নিয়ে বেশ কষ্টে কেটেছে। ওই সময়ে বেশ টাকা ঋণ করেছি। এখন সাগরে যাব। দেখি আল্লাহ ঋণ পরিশোধ করতে দেন কি না।’
নোয়াখালীর হাতিয়ার সূর্যমুখী, বাংলাবাজার, কাজিরবাজার, পাইতান মার্কেট চেয়ারম্যান ঘাটসহ বেশ কয়েকটি ঘাটে গতকাল জেলেদের ব্যস্ত সময় পার করতে দেখা গেছে। অনেকে নৌকায় জাল তুলছিলেন, আবার অনেকে জ্বালানি তেল মজুতসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্রী ট্রলারে নিয়ে যান। সূর্যমুখী ঘাটের এমভি মায়ের দোয়া ট্রলারের মাঝি জাফর উল্যা বলেন, ‘সাগরে ৮-১০ দিন থাকার প্রস্তুতি নিচ্ছি। সন্ধ্যায় সাগরের উদ্দেশে রওনা দেব।’
সূর্যমুখী ঘাট জেলে সমিতির সভাপতি জবিয়ল হক বলেন, ‘সাগরে নামতে প্রস্তুত নোয়াখালীর হাতিয়ার ২০টি ঘাটের লক্ষাধিক জেলে। এসব ঘাটে প্রায় ১০ হাজার ছোট-বড় ফিশিং ট্রলার রয়েছে। প্রতি ট্রলারে ১০ জন হলেও লক্ষাধিক জেলে এই মাছ ধরার সঙ্গে জড়িত। তাঁদের সবাই গত ৫৮ দিন তীরে বেকার ছিলেন।’
পিরোজপুরের ইন্দুরকানি উপজেলার পাড়েরহাট মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের পার্শ্ববর্তী এলাকার জেলেরা গতকাল দিনভর সাগরে যাওয়ার প্রস্তুতি নেন। এ ছাড়া মঠবাড়িয়া উপজেলার সাপলেজা, খেতাচিড়া, বড়মাছুয়া, ছোটমাছুয়া, ভান্ডারিয়া উপজেলার চরখালী, হেতালিয়া, কাউখালী উপজেলার সোনাকুর এলাকার জেলেরা, সদর উপজেলা এবং নেছারাবাদ উপজেলার বিভিন্ন এলাকার জেলেরা প্রস্তুতি শেষে গত রাতে বঙ্গোপসাগরে রওনা হন।
কয়েক দিন ধরে কক্সবাজার উপকূলের জেলেপল্লিগুলোতে নৌকা, জাল মেরামতসহ বিভিন্ন প্রস্তুতি সেরেছেন জেলেরা। গতকাল মেরিন ড্রাইভের টেকনাফের খুরেরমুখ, সাবরাং ও বাহারছড়া এলাকায় দেখা গেছে, সড়কে দাঁড় করিয়ে রাখা সারি সারি ট্রলারে জাল ও রসদ তোলেন জেলেরা।
একটি ট্রলারের মাঝি আবু তাহের জানান, এবার ভারতের সঙ্গে মিল রেখে নিষেধাজ্ঞা দেওয়ায় কেউ সাগরে মাছ শিকারে নামেনি। এতে উপকূলের কাছাকাছি সাগরে জাল ফেললেই ইলিশসহ অন্য মাছ পাওয়া যাবে বলে আশাবাদী তিনি।
কক্সবাজার শহরের ফিশারি ঘাটের মৎস্য ব্যবসায়ী সমিতির পরিচালক জুলফিকার আলী জানান, কক্সবাজার উপকূলে ছোট-বড় ৭ হাজারের মতো যান্ত্রিক ট্রলার রয়েছে। এসব ট্রলারে প্রায় এক লাখ জেলে ও শ্রমিক নিয়োজিত রয়েছেন। অধিকাংশ ট্রলার নিষেধাজ্ঞা ওঠার সঙ্গে সঙ্গে সাগরে রওনা হবে।
[প্রতিবেদন তৈরিতে তথ্য দিয়ে সহায়তা করেছেন বরগুনা ও আমতলী, পিরোজপুর, কক্সবাজার এবং হাতিয়া প্রতিনিধি]

মহাশ্বেতা দেবী ম্যাগসেসে পুরস্কার পেয়েছিলেন ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী বিষয়ে তাঁর লেখালেখি ও কর্মযজ্ঞের কারণে। ভারতের বহু উপেক্ষিত ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর সঙ্গে মূলধারার মানুষের সেতুবন্ধন রচনায় তাঁর লেখা অসাধারণ ভূমিকা রেখেছিল।
০১ জুলাই ২০২২
গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।
২১ দিন আগে
ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।
১৯ মে ২০২৫
আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
০৮ মে ২০২৫নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা

ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।
ভারতের নিষেধাজ্ঞার এক দিন পরই গত রোববার লালমনিরহাটের বুড়িমারী ও যশোরের বেনাপোল স্থলবন্দরসহ বিভিন্ন বন্দরে পণ্যের ট্রাক আটকে দেয় ভারত। সংশ্লিষ্টদের সূত্রে জানা যায়, রোববার ভারতের আমদানি বিধিনিষেধের কারণে বুড়িমারী সীমান্তে প্রাণের ১৭ ট্রাক খাদ্যপণ্য আটকে যায়। এ ছাড়া বেনাপোলে ৩৬টি পোশাক বোঝাই ট্রাকসহ অন্যান্য পণ্যের শতাধিক ট্রাক ঢুকতে পারেনি।
গতকাল সোমবার পর্যন্ত বুড়িমারী থেকে প্রাণের পণ্যবোঝাই ট্রাকগুলোর অর্ধেকের বেশি ফেরত নিয়ে আসে প্রতিষ্ঠানটি। এ ছাড়া বেনাপোলে পোর্টের ভেতরে ২৪টি ট্রাক ছাড়া বাকিগুলো ফেরত চলে যায়।
বেনাপোল বন্দর সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট স্টাফ অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মো. সাজেদুর রহমান গতকাল সোমবার আজকের পত্রিকাকে বলেন, গতকাল পোর্টের ভেতর ও বাইরে শতাধিক ট্রাক দাঁড়িয়ে ছিল। আজ পোর্টের ভেতরের ২৪টি ছাড়া বাকিগুলো ফেরত নিয়ে গেছেন মালিকেরা। এখন পর্যন্ত মনে হচ্ছে, পোর্টের ভেতরের ট্রাকগুলোও ফেরত নিতে হবে।
জানতে চাইলে প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের পরিচালক (বিপণন) কামরুজ্জামান কামাল আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমাদের হাতে ৬ মিলিয়ন ডলারের ক্রয় আদেশ রয়েছে। তার মধ্য থেকে রোববার বুড়িমারী দিয়ে ১৭ ট্রাকবোঝাই পণ্য পাঠিয়েছিলাম। কিন্তু সেগুলো ঢুকতে পারেনি। ট্রাকগুলো ফেরত আনা হচ্ছে। নতুন করে কাগজপত্র তৈরি করে অন্য পথ দিয়ে পণ্য পাঠাতে হবে।’
বেনাপোল স্থলবন্দর সূত্রে জানা যায়, ওই ২৪টি ট্রাক পোর্টের ভেতরে থাকায় এখনো তারা ভারতে প্রবেশের অপেক্ষায় রয়েছে। তাদের আশা, যেহেতু নিষেধাজ্ঞার আগে এই পণ্যগুলোর এলসি করা হয়েছিল, তাই এগুলো প্রবেশে অনুমতি পাবে। তবে এটি নির্ভর করবে বাংলাদেশ সরকারের আলোচনার ওপর।
এমন পরিস্থিতিতে সরকারের সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় রয়েছেন ব্যবসায়ীরা। ইতিমধ্যে অনেক রপ্তানিকারক রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) সঙ্গে আলোচনা করে সরকারের সহযোগিতা চেয়েছে।
স্থলবন্দরের মাধ্যমে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জসমূহ এবং আশু করণীয় নির্ধারণে বাণিজ্যসচিবের সভাপতিত্বে আজ মঙ্গলবার আন্তমন্ত্রণালয়ের সভা ডেকেছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, স্থলবন্দরের মাধ্যমে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জসমূহ এবং আশু করণীয় নির্ধারণে বাণিজ্যসচিবের সভাপতিত্বে বিকেল ৪টায় আন্তমন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে এই সভা অনুষ্ঠিত হবে।
সভায় নৌপরিবহন ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশন, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড, বাংলাদেশ স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষ, রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো, জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের প্রতিনিধিদের উপস্থিত থাকতে বলা হয়েছে। এ ছাড়া ব্যবসায়ী প্রতিনিধি হিসেবে এফবিসিসিআই, বিজিএমইএ, ভারত-বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির প্রতিনিধিদের উপস্থিতির জন্য আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে।
ভারতের শিল্প ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয় গত শনিবার হঠাৎ এক বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে স্থলবন্দর দিয়ে বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক আমদানি নিষিদ্ধ করে। শুধু ভারতের নবসেবা ও কলকাতা সমুদ্রবন্দর ব্যবহার করে দেশটির আমদানিকারকেরা বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক আমদানি করতে পারবেন বলে ওই বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়। এ ছাড়া বাংলাদেশ থেকে ভারতের আসাম, মেঘালয়, ত্রিপুরা ও মিজোরাম, পশ্চিমবঙ্গের চ্যাংড়াবান্দা ও ফুলবাড়ী শুল্ক স্টেশন দিয়ে ফল, ফলের স্বাদযুক্ত পানীয়, কোমল পানীয়, প্রক্রিয়াজাত খাদ্য, প্লাস্টিক পণ্য, সুতা, সুতার উপজাত, আসবাব রপ্তানিও নিষিদ্ধ করা হয় ওই বিজ্ঞপ্তিতে।
আমদানি ও রপ্তানিসংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা জানান, দেশের ২৪টি বন্দরের মধ্যে ১৬টি বন্দর দিয়ে ভারতের সঙ্গে আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য হয়ে থাকে। তবে যোগাযোগব্যবস্থা সহজ হওয়ায় বেনাপোল ও ভারতের পেট্রাপোল বন্দর দিয়ে সবচেয়ে বেশি আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য হয়। এর পরিমাণ ৮০ শতাংশ। বেনাপোল বন্দর দিয়ে প্রতিদিন ভারতে ২৫০ থেকে ৩০০ ট্রাকে বিভিন্ন ধরনের পণ্য রপ্তানি হয়। এর মধ্যে শতাধিক ট্রাক পণ্য থাকে তৈরি পোশাক।
এর আগে গত ৮ এপ্রিল বাংলাদেশের জন্য ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা বাতিল করে ভারত। ফলে ভারতের বিমানবন্দর ব্যবহার করে তৃতীয় কোনো দেশে তৈরি পোশাক রপ্তানি করতে পারছে না বাংলাদেশ। অন্যদিকে প্রায় এক মাস আগে ভারত থেকে বেনাপোল, ভোমরা, সোনামসজিদ, বাংলাবান্ধা, বুড়িমারী স্থলবন্দর দিয়ে সুতা আমদানির সুযোগ বন্ধ করে দেয় বাংলাদেশের জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)।
সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) বিশেষ ফেলো মোস্তাফিজুর রহমানের মতে, এই পাল্টাপাল্টি পদক্ষেপে তুলনামূলকভাবে বেশি নেতিবাচক প্রভাব পড়বে বাংলাদেশের ওপর। তাই ভারতের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য ঘাটতি কমানোর চেষ্টা অব্যাহত রাখাই সরকারের উচিত বলে মনে করছেন তিনি।
মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, আলোচনার মাধ্যমে বাংলাদেশ এবং ভারতের বিরোধপূর্ণ বিষয়সমূহ মিটিয়ে ফেলতে হবে এবং দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য সম্পর্কের ক্ষেত্রে ভারসাম্য প্রতিষ্ঠা করতে হবে। এটাই হবে উভয় দেশের জন্য কল্যাণকর।

ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।
ভারতের নিষেধাজ্ঞার এক দিন পরই গত রোববার লালমনিরহাটের বুড়িমারী ও যশোরের বেনাপোল স্থলবন্দরসহ বিভিন্ন বন্দরে পণ্যের ট্রাক আটকে দেয় ভারত। সংশ্লিষ্টদের সূত্রে জানা যায়, রোববার ভারতের আমদানি বিধিনিষেধের কারণে বুড়িমারী সীমান্তে প্রাণের ১৭ ট্রাক খাদ্যপণ্য আটকে যায়। এ ছাড়া বেনাপোলে ৩৬টি পোশাক বোঝাই ট্রাকসহ অন্যান্য পণ্যের শতাধিক ট্রাক ঢুকতে পারেনি।
গতকাল সোমবার পর্যন্ত বুড়িমারী থেকে প্রাণের পণ্যবোঝাই ট্রাকগুলোর অর্ধেকের বেশি ফেরত নিয়ে আসে প্রতিষ্ঠানটি। এ ছাড়া বেনাপোলে পোর্টের ভেতরে ২৪টি ট্রাক ছাড়া বাকিগুলো ফেরত চলে যায়।
বেনাপোল বন্দর সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট স্টাফ অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মো. সাজেদুর রহমান গতকাল সোমবার আজকের পত্রিকাকে বলেন, গতকাল পোর্টের ভেতর ও বাইরে শতাধিক ট্রাক দাঁড়িয়ে ছিল। আজ পোর্টের ভেতরের ২৪টি ছাড়া বাকিগুলো ফেরত নিয়ে গেছেন মালিকেরা। এখন পর্যন্ত মনে হচ্ছে, পোর্টের ভেতরের ট্রাকগুলোও ফেরত নিতে হবে।
জানতে চাইলে প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের পরিচালক (বিপণন) কামরুজ্জামান কামাল আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমাদের হাতে ৬ মিলিয়ন ডলারের ক্রয় আদেশ রয়েছে। তার মধ্য থেকে রোববার বুড়িমারী দিয়ে ১৭ ট্রাকবোঝাই পণ্য পাঠিয়েছিলাম। কিন্তু সেগুলো ঢুকতে পারেনি। ট্রাকগুলো ফেরত আনা হচ্ছে। নতুন করে কাগজপত্র তৈরি করে অন্য পথ দিয়ে পণ্য পাঠাতে হবে।’
বেনাপোল স্থলবন্দর সূত্রে জানা যায়, ওই ২৪টি ট্রাক পোর্টের ভেতরে থাকায় এখনো তারা ভারতে প্রবেশের অপেক্ষায় রয়েছে। তাদের আশা, যেহেতু নিষেধাজ্ঞার আগে এই পণ্যগুলোর এলসি করা হয়েছিল, তাই এগুলো প্রবেশে অনুমতি পাবে। তবে এটি নির্ভর করবে বাংলাদেশ সরকারের আলোচনার ওপর।
এমন পরিস্থিতিতে সরকারের সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় রয়েছেন ব্যবসায়ীরা। ইতিমধ্যে অনেক রপ্তানিকারক রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) সঙ্গে আলোচনা করে সরকারের সহযোগিতা চেয়েছে।
স্থলবন্দরের মাধ্যমে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জসমূহ এবং আশু করণীয় নির্ধারণে বাণিজ্যসচিবের সভাপতিত্বে আজ মঙ্গলবার আন্তমন্ত্রণালয়ের সভা ডেকেছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, স্থলবন্দরের মাধ্যমে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জসমূহ এবং আশু করণীয় নির্ধারণে বাণিজ্যসচিবের সভাপতিত্বে বিকেল ৪টায় আন্তমন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে এই সভা অনুষ্ঠিত হবে।
সভায় নৌপরিবহন ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশন, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড, বাংলাদেশ স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষ, রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো, জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের প্রতিনিধিদের উপস্থিত থাকতে বলা হয়েছে। এ ছাড়া ব্যবসায়ী প্রতিনিধি হিসেবে এফবিসিসিআই, বিজিএমইএ, ভারত-বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির প্রতিনিধিদের উপস্থিতির জন্য আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে।
ভারতের শিল্প ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয় গত শনিবার হঠাৎ এক বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে স্থলবন্দর দিয়ে বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক আমদানি নিষিদ্ধ করে। শুধু ভারতের নবসেবা ও কলকাতা সমুদ্রবন্দর ব্যবহার করে দেশটির আমদানিকারকেরা বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক আমদানি করতে পারবেন বলে ওই বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়। এ ছাড়া বাংলাদেশ থেকে ভারতের আসাম, মেঘালয়, ত্রিপুরা ও মিজোরাম, পশ্চিমবঙ্গের চ্যাংড়াবান্দা ও ফুলবাড়ী শুল্ক স্টেশন দিয়ে ফল, ফলের স্বাদযুক্ত পানীয়, কোমল পানীয়, প্রক্রিয়াজাত খাদ্য, প্লাস্টিক পণ্য, সুতা, সুতার উপজাত, আসবাব রপ্তানিও নিষিদ্ধ করা হয় ওই বিজ্ঞপ্তিতে।
আমদানি ও রপ্তানিসংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা জানান, দেশের ২৪টি বন্দরের মধ্যে ১৬টি বন্দর দিয়ে ভারতের সঙ্গে আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য হয়ে থাকে। তবে যোগাযোগব্যবস্থা সহজ হওয়ায় বেনাপোল ও ভারতের পেট্রাপোল বন্দর দিয়ে সবচেয়ে বেশি আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য হয়। এর পরিমাণ ৮০ শতাংশ। বেনাপোল বন্দর দিয়ে প্রতিদিন ভারতে ২৫০ থেকে ৩০০ ট্রাকে বিভিন্ন ধরনের পণ্য রপ্তানি হয়। এর মধ্যে শতাধিক ট্রাক পণ্য থাকে তৈরি পোশাক।
এর আগে গত ৮ এপ্রিল বাংলাদেশের জন্য ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা বাতিল করে ভারত। ফলে ভারতের বিমানবন্দর ব্যবহার করে তৃতীয় কোনো দেশে তৈরি পোশাক রপ্তানি করতে পারছে না বাংলাদেশ। অন্যদিকে প্রায় এক মাস আগে ভারত থেকে বেনাপোল, ভোমরা, সোনামসজিদ, বাংলাবান্ধা, বুড়িমারী স্থলবন্দর দিয়ে সুতা আমদানির সুযোগ বন্ধ করে দেয় বাংলাদেশের জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)।
সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) বিশেষ ফেলো মোস্তাফিজুর রহমানের মতে, এই পাল্টাপাল্টি পদক্ষেপে তুলনামূলকভাবে বেশি নেতিবাচক প্রভাব পড়বে বাংলাদেশের ওপর। তাই ভারতের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য ঘাটতি কমানোর চেষ্টা অব্যাহত রাখাই সরকারের উচিত বলে মনে করছেন তিনি।
মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, আলোচনার মাধ্যমে বাংলাদেশ এবং ভারতের বিরোধপূর্ণ বিষয়সমূহ মিটিয়ে ফেলতে হবে এবং দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য সম্পর্কের ক্ষেত্রে ভারসাম্য প্রতিষ্ঠা করতে হবে। এটাই হবে উভয় দেশের জন্য কল্যাণকর।

মহাশ্বেতা দেবী ম্যাগসেসে পুরস্কার পেয়েছিলেন ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী বিষয়ে তাঁর লেখালেখি ও কর্মযজ্ঞের কারণে। ভারতের বহু উপেক্ষিত ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর সঙ্গে মূলধারার মানুষের সেতুবন্ধন রচনায় তাঁর লেখা অসাধারণ ভূমিকা রেখেছিল।
০১ জুলাই ২০২২
গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।
২১ দিন আগে
‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর...
১২ জুন ২০২৫
আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
০৮ মে ২০২৫
আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
১৮৯৮ সালে ভারতের উত্তর প্রদেশের একটি ধূলিধূসর টিলা খুঁড়ে পাওয়া মূল্যবান এই রত্নগুলো এক শতাব্দীর বেশি সময় ধরে একটি বেসরকারি ব্রিটিশ সংগ্রহাগারে প্রায় দৃষ্টিচক্ষুর আড়ালে ছিল। এখন যেহেতু রত্নগুলোর হাতবদলের সময় এসেছে, তাই নতুন সংগ্রাহকেরা আগ্রহ নিয়ে এগুলো সংগ্রহের জন্য অপেক্ষা করছেন। কিন্তু এখানে একটা অস্বস্তিও তৈরি হয়েছে।
গৌতম বুদ্ধের জন্মস্থান লুম্বিনীর কাছাকাছি, বর্তমানে ভারতের উত্তর প্রদেশে একটি ইটের ঘরের ভেতর থেকে প্রায় ১ হাজার ৮০০টি মুক্তা, রুবি, টোপাজ, নীলা ও নকশা করা সোনার পাত সংগ্রহ করা হয়েছিল। তবে এই রত্নগুলোর সঙ্গে সঙ্গে একটি খোদাই করা পাত্রে হাড়ের টুকরাও পাওয়া যায়, যেগুলোকে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষ বলে শনাক্ত করা হয়। এই আবিষ্কার তখন প্রত্নতত্ত্বের জগতে ব্যাপক আলোড়ন তোলে।
সাদাবি’স এশিয়ার চেয়ারম্যান নিকোলাস চাউ মনে করেন, স্মরণকালের বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর মাঝে এই রত্নসম্ভার অন্যতম। তবে এগুলো নিলামে তোলার কারণে একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন তৈরি হয়েছে। আর তা হচ্ছে—ভারতের ইতিহাসের সঙ্গে গভীরভাবে জড়িয়ে থাকা এবং বৌদ্ধদের কাছে পবিত্র এই সম্পদ বিক্রি করা কি নৈতিকভাবে গ্রহণযোগ্য?
১৮৯৮ সালে ব্রিটিশ এস্টেট ম্যানেজার উইলিয়াম ক্ল্যাক্সটন পেপ্পে লুম্বিনির ঠিক দক্ষিণে পিপ্রাওয়ায় অবস্থিত একটি ঢিবি খনন করেন। সেখান থেকেই প্রায় ২ হাজার বছর আগের ওই নির্দশনগুলো খুঁজে পাওয়া যায়।
ইতিহাসবিদদের মতে, প্রাপ্ত রত্নসম্ভার ও দেহাবশেষ, যা তখনো পর্যন্ত অক্ষত ছিল, সেগুলো গৌতম বুদ্ধের শাক্য বংশের এবং বিশ্বব্যাপী বৌদ্ধদের ঐতিহ্য। হাড়ের নিদর্শনগুলো থাইল্যান্ড, শ্রীলঙ্কা ও মিয়ানমারের মতো দেশগুলোতে বিতরণ করা হয়েছে। এসব দেশে এখনো সেগুলোর পূজা করা হয়।

আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
১৮৯৮ সালে ভারতের উত্তর প্রদেশের একটি ধূলিধূসর টিলা খুঁড়ে পাওয়া মূল্যবান এই রত্নগুলো এক শতাব্দীর বেশি সময় ধরে একটি বেসরকারি ব্রিটিশ সংগ্রহাগারে প্রায় দৃষ্টিচক্ষুর আড়ালে ছিল। এখন যেহেতু রত্নগুলোর হাতবদলের সময় এসেছে, তাই নতুন সংগ্রাহকেরা আগ্রহ নিয়ে এগুলো সংগ্রহের জন্য অপেক্ষা করছেন। কিন্তু এখানে একটা অস্বস্তিও তৈরি হয়েছে।
গৌতম বুদ্ধের জন্মস্থান লুম্বিনীর কাছাকাছি, বর্তমানে ভারতের উত্তর প্রদেশে একটি ইটের ঘরের ভেতর থেকে প্রায় ১ হাজার ৮০০টি মুক্তা, রুবি, টোপাজ, নীলা ও নকশা করা সোনার পাত সংগ্রহ করা হয়েছিল। তবে এই রত্নগুলোর সঙ্গে সঙ্গে একটি খোদাই করা পাত্রে হাড়ের টুকরাও পাওয়া যায়, যেগুলোকে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষ বলে শনাক্ত করা হয়। এই আবিষ্কার তখন প্রত্নতত্ত্বের জগতে ব্যাপক আলোড়ন তোলে।
সাদাবি’স এশিয়ার চেয়ারম্যান নিকোলাস চাউ মনে করেন, স্মরণকালের বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর মাঝে এই রত্নসম্ভার অন্যতম। তবে এগুলো নিলামে তোলার কারণে একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন তৈরি হয়েছে। আর তা হচ্ছে—ভারতের ইতিহাসের সঙ্গে গভীরভাবে জড়িয়ে থাকা এবং বৌদ্ধদের কাছে পবিত্র এই সম্পদ বিক্রি করা কি নৈতিকভাবে গ্রহণযোগ্য?
১৮৯৮ সালে ব্রিটিশ এস্টেট ম্যানেজার উইলিয়াম ক্ল্যাক্সটন পেপ্পে লুম্বিনির ঠিক দক্ষিণে পিপ্রাওয়ায় অবস্থিত একটি ঢিবি খনন করেন। সেখান থেকেই প্রায় ২ হাজার বছর আগের ওই নির্দশনগুলো খুঁজে পাওয়া যায়।
ইতিহাসবিদদের মতে, প্রাপ্ত রত্নসম্ভার ও দেহাবশেষ, যা তখনো পর্যন্ত অক্ষত ছিল, সেগুলো গৌতম বুদ্ধের শাক্য বংশের এবং বিশ্বব্যাপী বৌদ্ধদের ঐতিহ্য। হাড়ের নিদর্শনগুলো থাইল্যান্ড, শ্রীলঙ্কা ও মিয়ানমারের মতো দেশগুলোতে বিতরণ করা হয়েছে। এসব দেশে এখনো সেগুলোর পূজা করা হয়।

মহাশ্বেতা দেবী ম্যাগসেসে পুরস্কার পেয়েছিলেন ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী বিষয়ে তাঁর লেখালেখি ও কর্মযজ্ঞের কারণে। ভারতের বহু উপেক্ষিত ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর সঙ্গে মূলধারার মানুষের সেতুবন্ধন রচনায় তাঁর লেখা অসাধারণ ভূমিকা রেখেছিল।
০১ জুলাই ২০২২
গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।
২১ দিন আগে
‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর...
১২ জুন ২০২৫
ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।
১৯ মে ২০২৫