Ajker Patrika

পছন্দের লোককে সভাপতি করা নিয়েই দুপক্ষে বিবাদ

শিপুল ইসলাম, রংপুর
Thumbnail image

রংপুরের পীরগঞ্জে স্কুলছাত্র রমজান আলী আকাশ যে সংঘর্ষের বলি হয়েছে তা মূলত ছিল শিক্ষকদের দুটি পক্ষের দ্বন্দ্বের জের আর এটি সৃষ্টি হয় নিজেদের পছন্দের লোককে বিদ্যালয় ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতির আসনে বসানো নিয়ে।

স্থানীয় বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, মদনখালী ইউনিয়নের খেতাবেরপাড়া পল্লীমঙ্গল উচ্চবিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক নুরুন্নবী তালুকদার ও সহকারী শিক্ষক আনোয়ারুল ইসলামের পক্ষের মধ্যে দীর্ঘদিন ধরে এই বিবাদ চলছে।

গত সোমবার তাঁদের সংঘর্ষে রমজান প্রাণ হারায়।

পীরগঞ্জ শিক্ষা কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, উপজেলা সদর থেকে ১৭ কিলোমিটার দূরে খেতাবেরপাড়া পল্লীমঙ্গল উচ্চবিদ্যালয়টির অবস্থান। ১৯৬৯ সালে প্রতিষ্ঠিত বিদ্যালয়টিতে ১২ জন শিক্ষক দিয়ে শিক্ষাকার্যক্রম চলছে।

অভিযোগ উঠেছে, দুই বছর আগে বিদ্যালয়টিতে আয়া ও পিয়ন নিয়োগ দেওয়া হয়। এই নিয়োগ নিয়ে সহকারী শিক্ষক আনোয়ারুলের সঙ্গে প্রধান শিক্ষক নুরুন্নবীর দ্বন্দ্ব দেখা দেয়। দুই মাস আগে বিদ্যালয় ব্যবস্থাপনা কমিটির মেয়াদ শেষ হলে নির্বাচনের ঘোষণা দেওয়া হয়। নতুন কমিটিতে নিজেদের পছন্দের লোককে সভাপতি বানানোর জন্য দুই শিক্ষক মরিয়া হয়ে ওঠেন। প্রধান শিক্ষক কৌশলে তাঁর পছন্দের প্রার্থী মদনখালী ইউনিয়নের ৯ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি শহিদুল ইসলাম বাবুকে কমিটির ফের সভাপতি নির্বাচিত করেন। এতে ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠেন আনোয়ারুল ও তাঁর অনুসারীরা। তাঁরা কমিটি বাতিলের দাবি জানিয়ে বিক্ষোভ করেন।

এদিকে পূজার ১০ দিনের ছুটির পর গত সোমবার সভাপতি শহিদুলকে নিয়ে বিদ্যালয়ে আসেন প্রধান শিক্ষক নুরুন্নবী। এ সময় বাধা দেন আনোয়ারুল ও তাঁর অনুসারীরা। এ নিয়ে দুপক্ষের মধ্যে উত্তেজনা সৃষ্টি হয়। খবর পেয়ে সেখানে ছুটে আসে পীরগঞ্জ থানার পুলিশ। একপর্যায়ে পুলিশের উপস্থিতিতে দুপক্ষ সংঘর্ষে জড়ায়। এতে প্রধান শিক্ষককে লক্ষ্য করে ছোড়া বল্লমের আঘাতে প্রাণ যায় ওই বিদ্যালয়ের অষ্টম শ্রেণির ছাত্র রমজানের। এ সময় স্থানীয় লোকজন ক্ষুব্ধ হয়ে পুলিশকে অবরুদ্ধ করে রাখেন। এ ঘটনায় ওসিসহ আহত হন অন্তত ৩০ জন। এ ঘটনায় পৃথক দুটি মামলায় পুলিশ ১১ জনকে গ্রেপ্তার করেছে।

বিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থীর অভিভাবক নাম প্রকাশ না করে বলেন, ‘দুজনই নিজের পছন্দের লোককে সভাপতি করার জন্য দ্বন্দ্বে জড়িয়ে পড়েন। তাঁদের দ্বন্দ্বের কারণেই রমজান প্রাণ হারাল। সন্তানদের বিদ্যালয়ে আমরা লেখাপড়া করতে পাঠাই, শিক্ষকের রাজনীতির বলি হয়ে জীবন দিতে নয়।’

আরেক অভিভাবক বলেন, এই বিদ্যালয়ে শিক্ষার নামে রাজনীতি শুরু হয়েছে। এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছেন শিক্ষকেরাও। শিক্ষক ও গ্রামবাসী দুই ভাগে বিভক্ত হয়ে পড়েছে। এর কবলে পড়ে কোমলমতি শিশুদের শিক্ষাজীবন নষ্ট হচ্ছে। এটির প্রতিকার দরকার।

যোগাযোগ করা হলে রংপুরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ডি-সার্কেল) মো. কামরুজ্জামান আজকের পত্রিকাকে জানান, শিক্ষকদের দুই পক্ষের দ্বন্দ্বে শিক্ষার্থী নিহতের ঘটনায় পৃথক দুটি মামলা হয়েছে আরও একটি মামলা প্রক্রিয়াধীন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত