Ajker Patrika

পোটনের সার আত্মসাতের ৬০ দিনের তদন্ত ৭ মাসেও শেষ হয়নি

আবু বকর ছিদ্দিক, চট্টগ্রাম
পোটনের সার  আত্মসাতের ৬০ দিনের তদন্ত ৭ মাসেও শেষ হয়নি

আমদানি করা ৭১ হাজার ৮০১ টন সার আত্মসাতের অভিযোগে গত ৫ জানুয়ারি মেসার্স পোটন ট্রেডার্সের বিরুদ্ধে তদন্তের নির্দেশ দিয়েছিলেন হাইকোর্ট। দুর্নীতি দমন কমিশনকে (দুদক) ৬০ দিনের মধ্যে তদন্ত শেষ করে হাইকোর্টে প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়। কিন্তু গতকাল বুধবার পর্যন্ত প্রায় সাত মাস হলেও সেই তদন্ত শেষ করতে পারেনি দুদক।

নরসিংদী-২ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য কামরুল আশরাফ খানের (পোটন) মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠান মেসার্স পোটন ট্রেডার্সের বিরুদ্ধে সরকারের ৫৮২ কোটি টাকার এসব সার আত্মসাতের ঘটনায় অনুসন্ধান করছে দুদকের তদন্ত দল।

এর আগে ঘটনাটি তদন্ত করে বাংলাদেশ রসায়ন শিল্প করপোরেশনের (বিসিআইসি) একাধিক কমিটি। কিন্তু গায়েব হওয়া কোনো সার পোটনের কাছ থেকে উদ্ধার হয়নি। দফায় দফায় তদন্ত, বিসিআইসির বোর্ড সভায় আলোচনা আর দুদকের অনুসন্ধানেই সীমাবদ্ধ রয়েছে সরকারের কেনা এই সার আত্মসাতের ঘটনাটি।

জানা গেছে, হাইকোর্টের নির্দেশের পরিপ্রেক্ষিতে গত মার্চের শেষ দিকে দুদকের প্রধান কার্যালয়ের একজন উপপরিচালকের নেতৃত্বে তিন সদস্যের কমিটি গঠন করা হয়। কমিটির প্রধান করা হয় দুদকের প্রধান কার্যালয়ের উপপরিচালক মো. রফিকুজ্জমানকে। অপর দুই সদস্য হলেন দুদকের সহকারী পরিচালক মো. আবুল কালাম আজাদ ও মো. আশিকুর রহমান।

অনুসন্ধানের অংশ হিসেবে সম্প্রতি দুদকের অনুসন্ধান দল চট্টগ্রাম ঘুরে গেছে। কমিটি অনুসন্ধানকালে চট্টগ্রামে বিসিআইসির শাখা কার্যালয়, পাঁচটি সার্ভে প্রতিষ্ঠান ও পাঁচটি ক্লিয়ারিং অ্যান্ড ফরোয়ার্ডিং এজেন্ট (সিঅ্যান্ডএফ) কর্মকর্তা এবং মেসার্স পোটন ট্রেডার্সের সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে।

তদন্ত কমিটির প্রধান রফিকুজ্জামান বলেন, ‘হাইকোর্টের দেওয়া ৬০ দিন শেষ হয়ে গেছে। অনুসন্ধানের জন্য দুদকের তরফ থেকে আরও এক মাস সময় চাওয়া হয়েছে। চলতি মাসের প্রথম সপ্তাহেই পোটন ট্রেডার্সের সার কেলেঙ্কারির বিষয়ে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেওয়া হবে।’

বিসিআইসি সূত্র জানায়, ২০২১-২২ অর্থবছরে সরকারিভাবে আমদানি করা ৭১ হাজার ৮০১ টন রাসায়নিক সার বন্দর থেকে খালাসের পর গুদামে না নিয়ে আত্মসাৎ করে পরিবহনের দায়িত্বে থাকা মেসার্স পোটন ট্রেডার্স। এতে সরকারের আর্থিক ক্ষতি হয়েছে ৫৮১ কোটি ৫৮ লাখ ৯ হাজার ৬৪ টাকা। এ জন্য বিসিআইসির ক্রয় বিভাগ ও বিপণন বিভাগ থেকে পোটন ট্রেডার্সকে ৪৩ বার চিঠি দিয়ে তাগাদা দেয়। এর আগেও ২০১৫-১৬ অর্থবছরে পরিবহনকালে গুদামে জমা না দেওয়ার মামলা চলছে। সারগুলো খালাস হয়েছিল ২০২১ সালের নভেম্বর থেকে ২০২২ সালের ১৫ মের মধ্যে। বিদেশ থেকে সাতটি জাহাজে আসা সার গত বছরের ১০ জানুয়ারি থেকে ৫ জুলাইয়ের মধ্যে দেশের সব বাফার গুদামে জমা করার কথা ছিল।

পোটন ট্রেডার্সের সার গায়েব হওয়া নিয়ে গত ১০ নভেম্বর বিসিআইসি দুটি তদন্ত কমিটি গঠন করে। প্রতিবেদন দাখিল করা হয় গত ৮ ডিসেম্বর। প্রতিবেদন অনুযায়ী, পোটন ট্রেডার্স গত অক্টোবরের শুরুতে জানিয়েছিল, তাদের ৬টি গুদামে ৬৬ হাজার টন সার রয়েছে। সরেজমিন তদন্তে দেখা গেছে, গুদামে আছে মাত্র ১ হাজার ৩০৭ টন সার। এই সারও ব্যবহারের অনুপযোগী এবং কৃষক পর্যায়ে বিতরণযোগ্য নয়।

সার আত্মসাতের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের অংশ হিসেবে বিসিআইসি তাদের অধীনে থাকা সব প্রতিষ্ঠানের দরপত্রে পোটন ট্রেডার্সকে সাময়িক নিষিদ্ধ করে। পোটনের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা এতটুকুই। বাকিটা অনুসন্ধান, চিঠি চালাচালি ও তদন্তেই সীমাবদ্ধ রয়েছে।

এ বিষয়ে গত মঙ্গলবার কামরুল আশরাফ খানের মোবাইল ফোনে একাধিকবার কল দেওয়া হলেও তাঁর বক্তব্য পাওয়া যায়নি।

পোটন ট্রেডার্সের ব্যবস্থাপক মেহেদী হাসান বলেন, ‘এই বিষয়ে হাইকোর্টে রিট পিটিশন রয়েছে। আমরা কোনো কথা বলতে পারব না। এই বিষয়ে কেউ লিখতেও পারবেন না।’ তবে রিট পিটিশনের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বিষয়টি এড়িয়ে যান।

বিসিআইসির চেয়ারম্যান মো. সাইদুর রহমান আজকের পত্রিকাকে বলেন, পোটন ট্রেডার্স থেকে সার উদ্ধারে নানা পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। তবে সাইদুর রহমান এর বাইরে আর কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি। তিনি বিপণন ও ক্রয় শাখায় খোঁজ নিতে বলেন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

মুসলিম ছেলে বিয়ে করে পরিবারহারা, স্বামী পরিত্যক্ত হয়ে ঢাকায় এসে ধর্ষণের শিকার

মাদারীপুরে ৩ খুন: ঘটনার পেছনে পা ভাঙার প্রতিশোধসহ ৩ কারণ

পদত্যাগ করেছেন প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী আমিনুল ইসলাম

স্ত্রীর সামনে ব্যবসায়ীকে কুপিয়ে হত্যা, বোমা ফাটিয়ে ২০ ভরি স্বর্ণালংকার লুট

ধর্ষণের শিকার নারী-শিশুর ছবি-পরিচয় প্রকাশ করলেই আটক

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত