Ajker Patrika

নির্দিষ্ট আয়ের মানুষের হাঁসফাঁস অবস্থা

আপডেট : ০৪ জুন ২০২৩, ১০: ২৬
নির্দিষ্ট আয়ের মানুষের হাঁসফাঁস অবস্থা

ড. রাশেদ আল মাহমুদ তিতুমীর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়ন অধ্যয়ন বিভাগের অধ্যাপক ও চেয়ারম্যান। তাঁর লিখিত বইগুলো হলো—যুদ্ধোত্তর থেকে করোনাকাল: বাংলাদেশের পঞ্চাশ বছরের রাজনৈতিক অর্থনীতি ১৯৭১-২০২০, রাজনৈতিক বন্দোবস্ত ও অর্থনৈতিক ফলাফল (১৯৭১-২০১৮), গ্রোথ অর কনট্রাকশন? স্টেট অব বাংলাদেশ ইকোনমি অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট ২০১১-২০১২ প্রভৃতি। সম্প্রতি বাজেট এবং সাধারণ মানুষের ওপর তার প্রভাব নিয়ে আজকের পত্রিকার মাসুদ রানার সঙ্গে কথা বলেছেন।

আজকের পত্রিকা: সামগ্রিকভাবে এবারের বাজেট কেমন হলো?
রাশেদ আল মাহমুদ তিতুমীর: এটা একটা খুব গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন। কোভিডকালে আমরা সেটা লক্ষ করেছি এবং ইউক্রেন-রাশিয়ার মধ্যে যুদ্ধের অভিঘাতের কারণে বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো আমাদের জানাচ্ছে, নতুন করে দারিদ্র্য তৈরি হয়েছে। তাদের হিসাব অনুযায়ী, সেটা ৯ শতাংশ। বাংলাদেশের মানুষের সংখ্যা যদি ১৭ কোটি হয়, সে হিসাবে দারিদ্র্য প্রায় দেড় কোটির মতো। তাদের আবার প্রকৃত আয় কমে গেছে। মূল্যস্ফীতির সঙ্গে প্রকৃত মজুরি বাড়ছে না। তার মানে তাদের ঘাটতি হচ্ছে। একদিকে যেমন নতুন করে দারিদ্র্য তৈরি হচ্ছে, অপরদিকে কিছু মানুষ তাদের নিজস্ব সঞ্চয় ভেঙে খাচ্ছে। কেউ কেউ আত্মীয়ের ওপর নির্ভরশীল হচ্ছে। আবার কেউ কেউ জমি বিক্রি বা বন্ধক রাখছে; অর্থাৎ সমাজে মধ্যবিত্ত ও নিম্নমধ্যবিত্ত শ্রেণির একটা ভাঙন চলছে। সেই মুহূর্তে আমরা লক্ষ করলাম, নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসের দাম বাড়ছে। তার মানে ‘মড়ার উপর খাঁড়ার ঘা’ অবস্থা দাঁড়িয়েছে।

অপরদিকে কৃষিপণ্যের উৎপাদন বেড়েছে কিন্তু বাজারে মধ্যস্থতাকারীদের দৌরাত্ম্যের কারণে কৃষক তাঁর পণ্যের দাম কম পাচ্ছেন। আর ভোক্তা বাজার থেকে জিনিসপত্র বেশি দামে কিনছেন। পেঁয়াজ তো আগে আমদানি করতাম, এটা তো দেশে এখন চাষ হচ্ছে। কিন্তু বাজারে পেঁয়াজের কেজি ৭৫ থেকে ৯০ টাকা। এটা তো হওয়ার কথা ছিল না।

আশা করা হয়েছিল, এবারের বাজেটে মূল্যস্ফীতি কমানোর ব্যবস্থা থাকবে। যেসব পণ্যের দাম সরকার বাড়িয়েছিল, সেই সব পণ্যের দাম কিন্তু কমানো হয়নি। এই পরিস্থিতিতে সমাজে একটা বড় ভাঙন ধরছে; বিশেষ করে নিম্নমধ্যবিত্ত এবং নির্দিষ্ট আয়ের মানুষ, মানে যাঁরা চাকরি করেন, তাঁদের হাঁসফাঁস অবস্থা। 

আজকের পত্রিকা: সামাজিক নিরাপত্তা খাতে বরাদ্দ কম কেন?
রাশেদ আল মাহমুদ তিতুমীর: মোট দেশজ উৎপাদনের তুলনায় কর আদায় অন্যান্য দেশের তুলনায় একেবারে তলানির দিকে। অন্যদিকে কতগুলো খাতে (ঋণ পরিশোধ, বেতন-ভাতাদি) দিন দিন বরাদ্দ বাড়ছেই। এ ক্ষেত্রে শুভংকরের ফাঁকিও সবার জানা। সরকারি কর্মচারী-কর্মকর্তাদের পেনশন, বেতন-ভাতাদিরই একটা অংশ সামাজিক নিরাপত্তা খাতের হিসাবে দেখানো হয়। এর পরিমাণ অনেক বেশি। আবার বিভিন্ন খাতের ভর্তুকিও সামাজিক নিরাপত্তা খাতে বরাদ্দ হিসেবে দেখানো হয়। ভর্তুকি কৃষকের দরকার; রপ্তানি বা উৎপাদনক্ষমতা বজায় রাখার জন্য পানি, গ্যাস, বিদ্যুতে ভর্তুকি দেওয়া যেতেই পারে। তবে সব ভর্তুকি কি খানায় বা কারখানায় যাচ্ছে? যেমন বিদ্যুৎ উৎপাদিত না হলেও ক্যাপাসিটি চার্জ দেওয়া হচ্ছে।

সর্বশেষ বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর জরিপ অনুযায়ী, আনুষ্ঠানিক খাতে ঋণাত্মক কর্মসংস্থান হচ্ছে। অভ্যন্তরীণ উৎপাদনক্ষমতা বাড়ার বিপরীতে অর্থনীতির পরিভাষা অনুযায়ী বিশিল্পায়ন ঘটছে। এটা মোটেই শুভকর লক্ষণ নয়। এবারের বাজেটে সবাই অধিকারভিত্তিক এবং আনুষ্ঠানিক খাতে কর্মসংস্থান তৈরিকারী একটি মেগা প্রকল্প চেয়েছিল। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর বিশ্বে সর্বজনীন সামাজিক নিরাপত্তাব্যবস্থা শক্ত ভিতের ওপর দাঁড়িয়েছিল। লর্ড বেভারেজ যুক্তরাজ্যে সামাজিক নিরাপত্তার কাঠামো বানিয়েছিলেন।

তিনি বাংলাদেশের রংপুরে জন্মগ্রহণ করেছিলেন। ইতিহাসের পরিহাস, রংপুর বিভাগ আজও বাংলাদেশের সবচেয়ে দরিদ্র মানুষের ঠিকানা! সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির অংশ হিসেবে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী ৫০ লাখ মানুষকে নগদ সহায়তা দিতে চেয়েছিলেন। কিন্তু ৩৫ লাখের বেশি মানুষের কাছে তা পৌঁছায়নি।

সংকট উত্তরণে ‘সর্বজনীন জীবনচক্রভিত্তিক সামাজিক নিরাপত্তাব্যবস্থা’ দ্বিতীয় মেগা প্রকল্প হিসেবে যাতে গ্রহণ করা হয়, সেই আকাঙ্ক্ষা অনেকের ছিল। এই প্রকল্প জীবনযাত্রার সংকট থেকে উদ্ভূত ‘নিম্ন সামাজিক ফাঁদ’ থেকে উত্তরণ ঘটাতে বড় রকমের ভূমিকা রাখতে পারে। দেশের মানুষকে যেন আর পিছিয়ে না পড়তে হয়। যেকোনো অভিঘাত সহ্য করার ক্ষমতা যেন তাদের থাকে। সে জন্য শিশুকে প্রতিপালনকালে মাতৃত্ব ভাতা দরকার। অধিকারভিত্তিক বেকারত্ব ভাতা আবশ্যিক। 

আজকের পত্রিকা: মূল্যস্ফীতি, ডলার-সংকট কমানোর জন্য বাজেটে কোনো পথনির্দেশ আছে কি?
রাশেদ আল মাহমুদ তিতুমীর: জীবনযাত্রার ব্যয় সংকট বাজেটে সুরাহা করা হয়নি। প্রায় সব পণ্য ও সেবার দাম বেড়ে যাওয়ায় সাধারণ মানুষের ক্রয়ক্ষমতা কমেছে। ২০২২-২৩ অর্থবছরের বাজেটের লক্ষ্যমাত্রা ৫ দশমিক ৬ শতাংশ ছাপিয়ে প্রথম ১০ মাসে মূল্যস্ফীতি গড়ে ৮ দশমিক ৮৫ শতাংশ। সরকার এখনো ক্রমাগত মুদ্রাস্ফীতির জন্য রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধকে দায়ী করছে। মূল্যস্ফীতি স্বয়ংক্রিয়ভাবে কমে আসবে, এমন ধারণা নিয়ে চলছে। আন্তর্জাতিক বাজারে বিভিন্ন পণ্য তথা সয়াবিন তেল, পাম তেল, চিনি, আটা, গম, পেঁয়াজ, মসুর ডাল, ছোলা ইত্যাদির দাম উল্লেখযোগ্য হারে কমলেও ভোক্তাদের স্বস্তি নেই। দীর্ঘদিন ৭০-৮০ ডলার হলেও প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী তেলের দাম কমার লক্ষণ নেই। সরকার কর সমন্বয় করে দাম কমাতে পারত। ভোক্তারা শক্তিশালী মধ্যস্বত্বভোগীদের নেক্সাসের হাতে জিম্মি থাকলেও বাজেটে বাজারব্যবস্থার কাঠামোগত সংস্কারের কোনো প্রস্তাব নেই।

বিবিএসের মতে, ২০২২-২৩ অর্থবছরে বেসরকারি বিনিয়োগ শূন্য দশমিক ৮৮ শতাংশীয় পয়েন্ট কমে জিডিপির ২৩ দশমিক ৬৪ শতাংশে দাঁড়িয়েছে। অন্তত সাত বছর ধরে স্থবিরতা চলমান। ডলার-সংকটে মূলধন সরঞ্জাম আমদানি হ্রাসে বিনিয়োগ কমেছে। দ্রুত অগ্রগতি না হলে থমকে যাবে নতুন কর্মসংস্থান। মূল্যস্ফীতির চাপও কমবে না। ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান, বিশেষ করে ক্ষুদ্র উদ্যোগগুলো দাম বৃদ্ধির অভিঘাতে আক্রান্ত। যেমন রড, সিমেন্ট, ইট, পাথর, বালু, বিটুমিন এবং আলকাতরার মতো নির্মাণসামগ্রীর দাম ৪০ শতাংশ বেড়েছে। গ্যাস ও বিদ্যুতের দাম বাড়ায় দেশীয় সুতার দাম বেড়েছে। প্রতিদিন টাকার বিপরীতে ডলারের দাম বাড়ায় উৎপাদন খরচ বাড়ছে। 

আজকের পত্রিকা: স্বাস্থ্য, শিক্ষা, কৃষি ও কর্মসংস্থানের জন্য বরাদ্দ বাড়েনি। এর ফলাফল কী হতে পারে?
রাশেদ আল মাহমুদ তিতুমীর: নিম্ন ও মধ্যবিত্তদের কর্মসংস্থান, আয় ও সঞ্চয় মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত। খাদ্য, শিক্ষা এবং স্বাস্থ্যের খরচ কমিয়েছে। কাজের বিনিময়ে খাদ্য এবং খোলাবাজারে বিক্রির মতো খাদ্য বিতরণ কর্মসূচিতে চলতি অর্থবছরের ৩২ দশমিক ৮২ লাখ টন থেকে আগামী বছর খাদ্য কম থাকবে (৩০ দশমিক ৯২ লাখ টন)। বাজেটে খাদ্যবহির্ভূত ব্যয় যেমন বাসাভাড়া, পরিবহন এবং স্বাস্থ্যসেবা রোধে সরকারি হস্তক্ষেপের কথা উল্লেখ করা হয়নি। বাসনপত্র, টিস্যু, কলম, স্যানিটারি ন্যাপকিন ইত্যাদি দৈনন্দিন ব্যবহার্যের ওপর উচ্চমূল্য সংযোজন কর (ভ্যাট) ধার্য হলে ন্যূনতম বেঁচে থাকা দুর্বিষহ হবে। সমস্যা এতটাই ভয়াবহ রূপ নিয়েছ যে বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজের (বিআইডিএস) সাম্প্রতিক জরিপে দেখা গেছে, ২০২২ সালে ঢাকার মোট দারিদ্র্যের ৫১ শতাংশই নতুন দরিদ্র।

একইভাবে সামাজিক ব্যয় তথা স্বাস্থ্য, শিক্ষা এবং সুরক্ষা খাতে বরাদ্দ বাড়েনি। বিদায়ী বছরের তুলনায় আগামী অর্থবছরে শিক্ষা, স্বাস্থ্য এবং বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি খাতে বাজেট বরাদ্দের অংশ হ্রাস করায় জনগণ সেবাগুলোর বর্ধিত ব্যয় থেকে কোনো স্বস্তি পাবে না। কাঠামোগত বড় ব্যাধি তথা বৈষম্য নিরোধের কৌশল বাজেটে অনুপস্থিত। পক্ষপাতমূলক নীতিকাঠামো আয় ও সম্পদের বৈষম্যে বাড়াচ্ছে। ১২ বছর ধরে জিনি সহগ ঊর্ধ্বমুখীন। ২০২২ সালে শূন্য দশমিক ৪৯৯ পৌঁছেছে।

আজকের পত্রিকা: আইএমএফের শর্ত পূরণ করা হয়েছে, জনকল্যাণ উপেক্ষিত হয়েছে—এটা কি ঠিক?
রাশেদ আল মাহমুদ তিতুমীর: বাজেট ঘাটতিকে আইএমএফের সীমায় সীমিত করার মরিয়া প্রচেষ্টায় অস্বাভাবিক উচ্চ রাজস্ব সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা দেওয়া হয়েছে। ধনীদের দাতব্য প্রসারিত করে জীবনযাত্রার ব্যয়-সংকটে নিপতিত মধ্যবিত্তের ওপর ন্যূনতম দুই হাজার টাকা কর আরোপের প্রস্তাব করা হয়েছে। অন্যদিকে চার কোটি টাকা পর্যন্ত মোট সম্পদের ওপর কোনো সারচার্জ দিতে হবে না। বিনিয়োগের ট্যাক্স ক্রেডিট নিয়মের পরিবর্তনের প্রস্তাব উচ্চ আয়কারীদের উপকৃত করবে। কর ফাঁকি, কর ছাড় এবং কর পরিহারসংক্রান্ত কোনো সংস্কার কর্মসূচির ঘোষণা নেই। বাড়তি বিদ্যুৎ ভর্তুকি কীভাবে ব্যবহার করা হবে তা স্পষ্ট করা হয়নি। এটা কি ক্যাপাসিটি চার্জে বাড়াবে? শ্রীলঙ্কার পরে দক্ষিণ এশিয়ায় খেলাপি ঋণে ন্যুব্জ  ব্যাংকিং খাত শুকিয়ে যাওয়ায় গোষ্ঠীতন্ত্র বাজেটের মাধ্যমে স্বজনতোষী পৃষ্ঠপোষকতার সংস্কৃতি বেড়েই চলবে?

আজকের পত্রিকা: বাজেট তো দেওয়া হয়ে গেছে। বাজেট পাসের পর কোন কোন বিষয়ে নজর দেওয়া প্রয়োজন?
রাশেদ আল মাহমুদ তিতুমীর: সবচেয়ে উদ্বেগের বিষয় অনালোচিত থেকেছে। সাম্প্রতিককালে সার্বিক লেনদেন ভারসাম্যের ফিন্যান্সিয়াল অ্যাকাউন্টে ঘাটতি বেড়েই চলছে। ফলে অদূর ভবিষ্যতে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের পতন বন্ধ না-ও হতে পারে। সভরেইন গ্যারান্টি দেওয়া বেসরকারি খাতের বৈদেশিক ঋণের পরিমাণ ২৫ বিলিয়ন ডলারের বেশি। সাড়ে সাত বছরে বৈদেশিক ঋণ ১২৮ শতাংশ বেড়ে ৯৩ দশমিক ৮ বিলিয়ন ডলারে পৌঁছেছে। স্বাধীনতার পর থেকে ২০১৫-১৬ পর্যন্ত ঋণের পরিমাণ ৪১ দশমিক ৪৭ বিলিয়ন ডলার হলেও গত সাড়ে সাত বছরে ৫২ বিলিয়ন ডলারের বেশি ঋণ নিয়েছে। সরকারের ঋণ-জিডিপি অনুপাত ২০১৪ সালের ২৮ দশমিক ৭ শতাংশ থেকে বেড়ে ২০২৩ সালে ৪২ দশমিক ১ শতাংশ। ঋণ দায় পরিশোধ মাথাব্যথার কারণে পরিণত হবে। 

আজকের পত্রিকা: একটা জনবান্ধব বাজেট প্রণয়নের ক্ষেত্রে আপনার পরামর্শ কী? 
রাশেদ আল মাহমুদ তিতুমীর: বাজেট প্রণয়নের ক্ষেত্রে কি জনগণের কোনো ভূমিকা আছে? দুঃখজনক সত্যি হচ্ছে, নেই। বার্ষিক আর্থিক বিবৃতি বা বাজেট অর্থবিল হওয়ায় সংসদীয় কমিটিতে আলোচনা হয় না। সংসদে পেশ করা হয়। অর্থমন্ত্রী উত্থাপিত বিল সংসদ পাস করে। জনগণের প্রতিনিধিত্বকারী সংসদ সদস্যরা নতুন প্রস্তাব যুক্ত করতে পারেন না। সংবিধানে দলের বাইরে গিয়ে কারও ভোট দেওয়ার কোনো সুযোগ নেই। তাহলে মৌলিক প্রশ্ন থেকেই যায়—জাতীয় বাজেট: কার জন্য, কেন এবং কীভাবে নির্ধারিত হয়?

আজকের পত্রিকা: সময় দেওয়ার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ।
রাশেদ আল মাহমুদ তিতুমীর: আপনাদেরও  অনেক ধন্যবাদ।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

হঠাৎ পদত্যাগ করলেন বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার

নির্বাচনে যেতে চায় জাপার একাংশ, কৌশল তুলে ধরবে জাতির সামনে

৩৬ বার অপারেশন, অবশেষে বাড়ি ফিরল মাইলস্টোনের শিক্ষার্থী নাভিদ

ইতালিপ্রবাসী স্ত্রীকে ভিডিও কলে রেখে যুবকের আত্মহত্যা

অগ্নিকাণ্ডের ক্ষতি পোষাতে শাহজালাল বিমানবন্দরে নিজেরাই গুদাম বানাচ্ছেন পোশাক রপ্তানিকারকেরা

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় শেষ সাক্ষীর জেরা চলছে

বাসস, ঢাকা  
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ফাইল ছবি
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ফাইল ছবি

গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।

আজ সোমবার বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের ট্রাইব্যুনাল-১-এ মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা (আইও) মো. আলমগীরের জেরা শুরু করেন রাষ্ট্র নিযুক্ত আইনজীবী আমীর হোসেন। আইনজীবী আমীর হোসেন পলাতক আসামি শেখ হাসিনা ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের পক্ষে শুনানি করছেন। এর আগে গত মঙ্গলবার তদন্তকারী কর্মকর্তা মো. আলমগীরের সাক্ষ্য গ্রহণ সম্পন্ন হয়।

এই মামলার শুনানিতে এর আগে গণ-অভ্যুত্থানের অন্যতম প্রতীক শহীদ আবু সাঈদের বাবাসহ স্বজনহারা পরিবারের একাধিক সদস্য সাক্ষ্য দিয়েছেন। এ ছাড়া মামলার গুরুত্বপূর্ণ ‘স্টার উইটনেস’ হিসেবে সাক্ষ্য দেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক এবং জুলাই আন্দোলনের অন্যতম নেতৃত্বদানকারী নাহিদ ইসলাম এবং দৈনিক আমার দেশ পত্রিকার সম্পাদক ড. মাহমুদুর রহমান।

গত বছরের জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার আন্দোলন দমনে আওয়ামী লীগ সরকার, তাদের দলীয় ক্যাডার ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর একটি অংশ গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটিত করে বলে অভিযোগ ওঠে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে শেখ হাসিনা, তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল এবং তৎকালীন আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের বিরুদ্ধে গত ১০ জুলাই অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দেন ট্রাইব্যুনাল-১।

পরবর্তীকালে, এই মামলার অন্যতম আসামি সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন দোষ স্বীকার করে ঘটনার সত্যতা উদ্‌ঘাটনে রাজসাক্ষী (অ্যাপ্রোভার) হওয়ার জন্য ট্রাইব্যুনালে আবেদন করেন। ট্রাইব্যুনাল তাঁর আবেদন মঞ্জুর করলে তিনি রাজসাক্ষী হিসেবে এই মামলায় সাক্ষ্য দেন।

মামলার প্রসিকিউশন পক্ষে শুনানি করছেন চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম, প্রসিকিউটর মিজানুল ইসলাম এবং গাজী এসএইচ তামিম। শুনানিতে তাঁদের সঙ্গে অপর প্রসিকিউটররাও উপস্থিত ছিলেন।

অন্যদিকে, এই মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে রাজসাক্ষী হওয়া সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের পক্ষে আছেন আইনজীবী যায়েদ বিন আমজাদ।

মানবতাবিরোধী অপরাধের এই মামলা ছাড়াও ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে আরও দুটি মামলা বিচারাধীন। এর মধ্যে একটি মামলায় আওয়ামী লীগের সাড়ে ১৫ বছরের শাসনামলে সংঘটিত গুম-খুনের ঘটনায় তাঁকে আসামি করা হয়েছে। অন্য মামলাটি হলো রাজধানীর মতিঝিলের শাপলা চত্বরে হেফাজতে ইসলামের সমাবেশে হত্যাকাণ্ড নিয়ে। এই তিনটি মামলার বিচারকাজই বর্তমানে দুটি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে চলমান।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

হঠাৎ পদত্যাগ করলেন বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার

নির্বাচনে যেতে চায় জাপার একাংশ, কৌশল তুলে ধরবে জাতির সামনে

৩৬ বার অপারেশন, অবশেষে বাড়ি ফিরল মাইলস্টোনের শিক্ষার্থী নাভিদ

ইতালিপ্রবাসী স্ত্রীকে ভিডিও কলে রেখে যুবকের আত্মহত্যা

অগ্নিকাণ্ডের ক্ষতি পোষাতে শাহজালাল বিমানবন্দরে নিজেরাই গুদাম বানাচ্ছেন পোশাক রপ্তানিকারকেরা

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

ঝাঁকে ঝাঁকে ইলিশ পাওয়ার আশায় সাগরে জেলেরা

  • এবার ভারতের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে নিষেধাজ্ঞা দেয় সরকার।
  • গতকাল দিনভর ছিল উপকূলের জেলে পল্লিগুলোতে ব্যস্ততা।
মাছ শিকারের নিষেধাজ্ঞা শেষ হয়েছে বুধবার রাতে। এর আগে দিনভর সাগরে যাওয়ার প্রস্তুতি নেন জেলেরা। অনেকে দেখে নেন ট্রলার ঠিকঠাক আছে কি না। কেউ আবার জালের ছেঁড়া অংশ সেলাই করেন। ছবিটি কক্সবাজার-টেকনাফ মেরিন ড্রাইভের খুরেরমুখ এলাকার। ছবি: আজকের পত্রিকা
মাছ শিকারের নিষেধাজ্ঞা শেষ হয়েছে বুধবার রাতে। এর আগে দিনভর সাগরে যাওয়ার প্রস্তুতি নেন জেলেরা। অনেকে দেখে নেন ট্রলার ঠিকঠাক আছে কি না। কেউ আবার জালের ছেঁড়া অংশ সেলাই করেন। ছবিটি কক্সবাজার-টেকনাফ মেরিন ড্রাইভের খুরেরমুখ এলাকার। ছবি: আজকের পত্রিকা

‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর সঙ্গে।

মাছের সুষ্ঠু প্রজনন, উৎপাদন, মৎস্যসম্পদ সংরক্ষণ ও টেকসই মৎস্য আহরণের জন্য সমুদ্রে সব ধরনের মাছ শিকার ৫৮ দিনের নিষেধাজ্ঞা গতকাল বুধবার দিবাগত মধ্যরাতে শেষ হয়েছে। তাই গতকাল দিনভর ছিল উপকূলের জেলেপল্লিগুলোতে ব্যস্ততা। অনেকে দেখে নিচ্ছিলেন ট্রলার ঠিকঠাক আছে কি না, কেউ জালের ছেঁড়া অংশ সেলাই করছিলেন, কেউ আবার প্রয়োজনীয় খাদ্যসামগ্রীসহ অন্য সরঞ্জাম গুছিয়ে নিচ্ছিলেন।

বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র এবং ফকিরহাট উপ-মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের ঘাটে গতকাল শত শত ট্রলার নোঙর করে রাখা ছিল। জেলেদের উপস্থিতিতে ঘাট এলাকা সরগরম হয়ে ওঠে। ফকিরহাটের মুদি-মনিহারি দোকানগুলোতে জেলেরা কেনাকাটা করতে ভিড় জমান। ফকিরহাট এলাকার বিসমিল্লাহ ট্রলারের মাঝি রহিম মিয়া বলেন, ‘সাগরে মাছ শিকারে যেতে সকল প্রস্তুতি নিয়েছি। নিষেধাজ্ঞার সময় শেষ হওয়ামাত্রই সাগরে নামব।’

জেলে নুরসাইদ ও ফোরকান মিয়া বলেন, ‘নিষেধাজ্ঞার সময় পরিবার-পরিজন নিয়ে বেশ কষ্টে কেটেছে। ওই সময়ে বেশ টাকা ঋণ করেছি। এখন সাগরে যাব। দেখি আল্লাহ ঋণ পরিশোধ করতে দেন কি না।’

নোয়াখালীর হাতিয়ার সূর্যমুখী, বাংলাবাজার, কাজিরবাজার, পাইতান মার্কেট চেয়ারম্যান ঘাটসহ বেশ কয়েকটি ঘাটে গতকাল জেলেদের ব্যস্ত সময় পার করতে দেখা গেছে। অনেকে নৌকায় জাল তুলছিলেন, আবার অনেকে জ্বালানি তেল মজুতসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্রী ট্রলারে নিয়ে যান। সূর্যমুখী ঘাটের এমভি মায়ের দোয়া ট্রলারের মাঝি জাফর উল্যা বলেন, ‘সাগরে ৮-১০ দিন থাকার প্রস্তুতি নিচ্ছি। সন্ধ্যায় সাগরের উদ্দেশে রওনা দেব।’

সূর্যমুখী ঘাট জেলে সমিতির সভাপতি জবিয়ল হক বলেন, ‘সাগরে নামতে প্রস্তুত নোয়াখালীর হাতিয়ার ২০টি ঘাটের লক্ষাধিক জেলে। এসব ঘাটে প্রায় ১০ হাজার ছোট-বড় ফিশিং ট্রলার রয়েছে। প্রতি ট্রলারে ১০ জন হলেও লক্ষাধিক জেলে এই মাছ ধরার সঙ্গে জড়িত। তাঁদের সবাই গত ৫৮ দিন তীরে বেকার ছিলেন।’

পিরোজপুরের ইন্দুরকানি উপজেলার পাড়েরহাট মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের পার্শ্ববর্তী এলাকার জেলেরা গতকাল দিনভর সাগরে যাওয়ার প্রস্তুতি নেন। এ ছাড়া মঠবাড়িয়া উপজেলার সাপলেজা, খেতাচিড়া, বড়মাছুয়া, ছোটমাছুয়া, ভান্ডারিয়া উপজেলার চরখালী, হেতালিয়া, কাউখালী উপজেলার সোনাকুর এলাকার জেলেরা, সদর উপজেলা এবং নেছারাবাদ উপজেলার বিভিন্ন এলাকার জেলেরা প্রস্তুতি শেষে গত রাতে বঙ্গোপসাগরে রওনা হন।

কয়েক দিন ধরে কক্সবাজার উপকূলের জেলেপল্লিগুলোতে নৌকা, জাল মেরামতসহ বিভিন্ন প্রস্তুতি সেরেছেন জেলেরা। গতকাল মেরিন ড্রাইভের টেকনাফের খুরেরমুখ, সাবরাং ও বাহারছড়া এলাকায় দেখা গেছে, সড়কে দাঁড় করিয়ে রাখা সারি সারি ট্রলারে জাল ও রসদ তোলেন জেলেরা।

একটি ট্রলারের মাঝি আবু তাহের জানান, এবার ভারতের সঙ্গে মিল রেখে নিষেধাজ্ঞা দেওয়ায় কেউ সাগরে মাছ শিকারে নামেনি। এতে উপকূলের কাছাকাছি সাগরে জাল ফেললেই ইলিশসহ অন্য মাছ পাওয়া যাবে বলে আশাবাদী তিনি।

কক্সবাজার শহরের ফিশারি ঘাটের মৎস্য ব্যবসায়ী সমিতির পরিচালক জুলফিকার আলী জানান, কক্সবাজার উপকূলে ছোট-বড় ৭ হাজারের মতো যান্ত্রিক ট্রলার রয়েছে। এসব ট্রলারে প্রায় এক লাখ জেলে ও শ্রমিক নিয়োজিত রয়েছেন। অধিকাংশ ট্রলার নিষেধাজ্ঞা ওঠার সঙ্গে সঙ্গে সাগরে রওনা হবে।

[প্রতিবেদন তৈরিতে তথ্য দিয়ে সহায়তা করেছেন বরগুনা ও আমতলী, পিরোজপুর, কক্সবাজার এবং হাতিয়া প্রতিনিধি]

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

হঠাৎ পদত্যাগ করলেন বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার

নির্বাচনে যেতে চায় জাপার একাংশ, কৌশল তুলে ধরবে জাতির সামনে

৩৬ বার অপারেশন, অবশেষে বাড়ি ফিরল মাইলস্টোনের শিক্ষার্থী নাভিদ

ইতালিপ্রবাসী স্ত্রীকে ভিডিও কলে রেখে যুবকের আত্মহত্যা

অগ্নিকাণ্ডের ক্ষতি পোষাতে শাহজালাল বিমানবন্দরে নিজেরাই গুদাম বানাচ্ছেন পোশাক রপ্তানিকারকেরা

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

ভারতের নিষেধাজ্ঞা: স্থলবন্দর থেকে ফেরত আসছে রপ্তানি পণ্য

  • ক্রয়াদেশের চালান নিয়ে বাড়ছে দুশ্চিন্তা
  • সরকারের সিদ্ধান্তের অপেক্ষা
  • আজ বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ডেকেছে জরুরি বৈঠক
নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা
আপডেট : ২০ মে ২০২৫, ০২: ৪৪
ফাইল ছবি
ফাইল ছবি

ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।

ভারতের নিষেধাজ্ঞার এক দিন পরই গত রোববার লালমনিরহাটের বুড়িমারী ও যশোরের বেনাপোল স্থলবন্দরসহ বিভিন্ন বন্দরে পণ্যের ট্রাক আটকে দেয় ভারত। সংশ্লিষ্টদের সূত্রে জানা যায়, রোববার ভারতের আমদানি বিধিনিষেধের কারণে বুড়িমারী সীমান্তে প্রাণের ১৭ ট্রাক খাদ্যপণ্য আটকে যায়। এ ছাড়া বেনাপোলে ৩৬টি পোশাক বোঝাই ট্রাকসহ অন্যান্য পণ্যের শতাধিক ট্রাক ঢুকতে পারেনি।

গতকাল সোমবার পর্যন্ত বুড়িমারী থেকে প্রাণের পণ্যবোঝাই ট্রাকগুলোর অর্ধেকের বেশি ফেরত নিয়ে আসে প্রতিষ্ঠানটি। এ ছাড়া বেনাপোলে পোর্টের ভেতরে ২৪টি ট্রাক ছাড়া বাকিগুলো ফেরত চলে যায়।

বেনাপোল বন্দর সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট স্টাফ অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মো. সাজেদুর রহমান গতকাল সোমবার আজকের পত্রিকাকে বলেন, গতকাল পোর্টের ভেতর ও বাইরে শতাধিক ট্রাক দাঁড়িয়ে ছিল। আজ পোর্টের ভেতরের ২৪টি ছাড়া বাকিগুলো ফেরত নিয়ে গেছেন মালিকেরা। এখন পর্যন্ত মনে হচ্ছে, পোর্টের ভেতরের ট্রাকগুলোও ফেরত নিতে হবে।

জানতে চাইলে প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের পরিচালক (বিপণন) কামরুজ্জামান কামাল আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমাদের হাতে ৬ মিলিয়ন ডলারের ক্রয় আদেশ রয়েছে। তার মধ্য থেকে রোববার বুড়িমারী দিয়ে ১৭ ট্রাকবোঝাই পণ্য পাঠিয়েছিলাম। কিন্তু সেগুলো ঢুকতে পারেনি। ট্রাকগুলো ফেরত আনা হচ্ছে। নতুন করে কাগজপত্র তৈরি করে অন্য পথ দিয়ে পণ্য পাঠাতে হবে।’

বেনাপোল স্থলবন্দর সূত্রে জানা যায়, ওই ২৪টি ট্রাক পোর্টের ভেতরে থাকায় এখনো তারা ভারতে প্রবেশের অপেক্ষায় রয়েছে। তাদের আশা, যেহেতু নিষেধাজ্ঞার আগে এই পণ্যগুলোর এলসি করা হয়েছিল, তাই এগুলো প্রবেশে অনুমতি পাবে। তবে এটি নির্ভর করবে বাংলাদেশ সরকারের আলোচনার ওপর।

এমন পরিস্থিতিতে সরকারের সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় রয়েছেন ব্যবসায়ীরা। ইতিমধ্যে অনেক রপ্তানিকারক রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) সঙ্গে আলোচনা করে সরকারের সহযোগিতা চেয়েছে।

স্থলবন্দরের মাধ্যমে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জসমূহ এবং আশু করণীয় নির্ধারণে বাণিজ্যসচিবের সভাপতিত্বে আজ মঙ্গলবার আন্তমন্ত্রণালয়ের সভা ডেকেছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।

বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, স্থলবন্দরের মাধ্যমে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জসমূহ এবং আশু করণীয় নির্ধারণে বাণিজ্যসচিবের সভাপতিত্বে বিকেল ৪টায় আন্তমন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে এই সভা অনুষ্ঠিত হবে।

সভায় নৌপরিবহন ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশন, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড, বাংলাদেশ স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষ, রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো, জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের প্রতিনিধিদের উপস্থিত থাকতে বলা হয়েছে। এ ছাড়া ব্যবসায়ী প্রতিনিধি হিসেবে এফবিসিসিআই, বিজিএমইএ, ভারত-বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির প্রতিনিধিদের উপস্থিতির জন্য আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে।

ভারতের শিল্প ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয় গত শনিবার হঠাৎ এক বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে স্থলবন্দর দিয়ে বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক আমদানি নিষিদ্ধ করে। শুধু ভারতের নবসেবা ও কলকাতা সমুদ্রবন্দর ব্যবহার করে দেশটির আমদানিকারকেরা বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক আমদানি করতে পারবেন বলে ওই বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়। এ ছাড়া বাংলাদেশ থেকে ভারতের আসাম, মেঘালয়, ত্রিপুরা ও মিজোরাম, পশ্চিমবঙ্গের চ্যাংড়াবান্দা ও ফুলবাড়ী শুল্ক স্টেশন দিয়ে ফল, ফলের স্বাদযুক্ত পানীয়, কোমল পানীয়, প্রক্রিয়াজাত খাদ্য, প্লাস্টিক পণ্য, সুতা, সুতার উপজাত, আসবাব রপ্তানিও নিষিদ্ধ করা হয় ওই বিজ্ঞপ্তিতে।

আমদানি ও রপ্তানিসংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা জানান, দেশের ২৪টি বন্দরের মধ্যে ১৬টি বন্দর দিয়ে ভারতের সঙ্গে আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য হয়ে থাকে। তবে যোগাযোগব্যবস্থা সহজ হওয়ায় বেনাপোল ও ভারতের পেট্রাপোল বন্দর দিয়ে সবচেয়ে বেশি আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য হয়। এর পরিমাণ ৮০ শতাংশ। বেনাপোল বন্দর দিয়ে প্রতিদিন ভারতে ২৫০ থেকে ৩০০ ট্রাকে বিভিন্ন ধরনের পণ্য রপ্তানি হয়। এর মধ্যে শতাধিক ট্রাক পণ্য থাকে তৈরি পোশাক।

এর আগে গত ৮ এপ্রিল বাংলাদেশের জন্য ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা বাতিল করে ভারত। ফলে ভারতের বিমানবন্দর ব্যবহার করে তৃতীয় কোনো দেশে তৈরি পোশাক রপ্তানি করতে পারছে না বাংলাদেশ। অন্যদিকে প্রায় এক মাস আগে ভারত থেকে বেনাপোল, ভোমরা, সোনামসজিদ, বাংলাবান্ধা, বুড়িমারী স্থলবন্দর দিয়ে সুতা আমদানির সুযোগ বন্ধ করে দেয় বাংলাদেশের জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)।

সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) বিশেষ ফেলো মোস্তাফিজুর রহমানের মতে, এই পাল্টাপাল্টি পদক্ষেপে তুলনামূলকভাবে বেশি নেতিবাচক প্রভাব পড়বে বাংলাদেশের ওপর। তাই ভারতের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য ঘাটতি কমানোর চেষ্টা অব্যাহত রাখাই সরকারের উচিত বলে মনে করছেন তিনি।

মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, আলোচনার মাধ্যমে বাংলাদেশ এবং ভারতের বিরোধপূর্ণ বিষয়সমূহ মিটিয়ে ফেলতে হবে এবং দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য সম্পর্কের ক্ষেত্রে ভারসাম্য প্রতিষ্ঠা করতে হবে। এটাই হবে উভয় দেশের জন্য কল্যাণকর।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

হঠাৎ পদত্যাগ করলেন বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার

নির্বাচনে যেতে চায় জাপার একাংশ, কৌশল তুলে ধরবে জাতির সামনে

৩৬ বার অপারেশন, অবশেষে বাড়ি ফিরল মাইলস্টোনের শিক্ষার্থী নাভিদ

ইতালিপ্রবাসী স্ত্রীকে ভিডিও কলে রেখে যুবকের আত্মহত্যা

অগ্নিকাণ্ডের ক্ষতি পোষাতে শাহজালাল বিমানবন্দরে নিজেরাই গুদাম বানাচ্ছেন পোশাক রপ্তানিকারকেরা

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

নিলামে গৌতম বুদ্ধের রত্নসম্ভার

নিলামে গৌতম বুদ্ধের রত্নসম্ভার

আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।

১৮৯৮ সালে ভারতের উত্তর প্রদেশের একটি ধূলিধূসর টিলা খুঁড়ে পাওয়া মূল্যবান এই রত্নগুলো এক শতাব্দীর বেশি সময় ধরে একটি বেসরকারি ব্রিটিশ সংগ্রহাগারে প্রায় দৃষ্টিচক্ষুর আড়ালে ছিল। এখন যেহেতু রত্নগুলোর হাতবদলের সময় এসেছে, তাই নতুন সংগ্রাহকেরা আগ্রহ নিয়ে এগুলো সংগ্রহের জন্য অপেক্ষা করছেন। কিন্তু এখানে একটা অস্বস্তিও তৈরি হয়েছে।

গৌতম বুদ্ধের জন্মস্থান লুম্বিনীর কাছাকাছি, বর্তমানে ভারতের উত্তর প্রদেশে একটি ইটের ঘরের ভেতর থেকে প্রায় ১ হাজার ৮০০টি মুক্তা, রুবি, টোপাজ, নীলা ও নকশা করা সোনার পাত সংগ্রহ করা হয়েছিল। তবে এই রত্নগুলোর সঙ্গে সঙ্গে একটি খোদাই করা পাত্রে হাড়ের টুকরাও পাওয়া যায়, যেগুলোকে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষ বলে শনাক্ত করা হয়। এই আবিষ্কার তখন প্রত্নতত্ত্বের জগতে ব্যাপক আলোড়ন তোলে।

সাদাবি’স এশিয়ার চেয়ারম্যান নিকোলাস চাউ মনে করেন, স্মরণকালের বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর মাঝে এই রত্নসম্ভার অন্যতম। তবে এগুলো নিলামে তোলার কারণে একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন তৈরি হয়েছে। আর তা হচ্ছে—ভারতের ইতিহাসের সঙ্গে গভীরভাবে জড়িয়ে থাকা এবং বৌদ্ধদের কাছে পবিত্র এই সম্পদ বিক্রি করা কি নৈতিকভাবে গ্রহণযোগ্য?

১৮৯৮ সালে ব্রিটিশ এস্টেট ম্যানেজার উইলিয়াম ক্ল্যাক্সটন পেপ্পে লুম্বিনির ঠিক দক্ষিণে পিপ্রাওয়ায় অবস্থিত একটি ঢিবি খনন করেন। সেখান থেকেই প্রায় ২ হাজার বছর আগের ওই নির্দশনগুলো খুঁজে পাওয়া যায়।

ইতিহাসবিদদের মতে, প্রাপ্ত রত্নসম্ভার ও দেহাবশেষ, যা তখনো পর্যন্ত অক্ষত ছিল, সেগুলো গৌতম বুদ্ধের শাক্য বংশের এবং বিশ্বব্যাপী বৌদ্ধদের ঐতিহ্য। হাড়ের নিদর্শনগুলো থাইল্যান্ড, শ্রীলঙ্কা ও মিয়ানমারের মতো দেশগুলোতে বিতরণ করা হয়েছে। এসব দেশে এখনো সেগুলোর পূজা করা হয়।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

হঠাৎ পদত্যাগ করলেন বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার

নির্বাচনে যেতে চায় জাপার একাংশ, কৌশল তুলে ধরবে জাতির সামনে

৩৬ বার অপারেশন, অবশেষে বাড়ি ফিরল মাইলস্টোনের শিক্ষার্থী নাভিদ

ইতালিপ্রবাসী স্ত্রীকে ভিডিও কলে রেখে যুবকের আত্মহত্যা

অগ্নিকাণ্ডের ক্ষতি পোষাতে শাহজালাল বিমানবন্দরে নিজেরাই গুদাম বানাচ্ছেন পোশাক রপ্তানিকারকেরা

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত