Ajker Patrika

ব্রিটিশ রানির রেলগাড়ি

রেজা মাহমুদ, সৈয়দপুর (নীলফামারী)
আপডেট : ০৮ সেপ্টেম্বর ২০২২, ০৯: ২১
ব্রিটিশ রানির রেলগাড়ি

লালগালিচায় মোড়ানো কাঠের ছয়টি কামরা। চমৎকার রং আর বৈচিত্র্যপূর্ণ নকশা সেই কাঠজুড়ে। ভেতরে আছে রাজকীয় শয়নকক্ষ ও একটি কনফারেন্স রুম। এটি কোনো রাজপ্রাসাদ নয়, একটি রেলওয়ে কোচ। ব্রিটেনের রানি এলিজাবেথের ভারতবর্ষ ভ্রমণের জন্য ১৯২৭ সালে তৈরি করা হয় বিলাসবহুল এই কোচ। নীলফামারীর সৈয়দপুরে দেশের বৃহত্তম রেলওয়ে কারখানায় গেলেই দেখা যাবে কোচটি। মেরামতের জন্য এটি সৈয়দপুর রেলওয়ে কারখানার ক্যারেজ শপে রাখা হয়েছে।

কোচটির ভেতরে ঢুকলেই মনে হবে এটি কোনো আধুনিক বাসভবন। প্রবেশদ্বারেই রয়েছে কোচটির ইতিহাসসংবলিত একটি ওয়ালবোর্ড। এক পা এগোতেই চোখে পড়বে নিরাপত্তাকর্মীদের জন্য বরাদ্দ করা একটি কামরা। রয়েছে রানির সঙ্গে আসা পাইক-পেয়াদা ও তাঁর স্টাফদের জন্য থাকার আলাদা কক্ষ।

এরপর দেখা মিলবে বেশ বড় একটি সভাকক্ষের। সেগুন কাঠের তৈরি বড় দুটি সোফা রাখা আছে সেখানে, সেই সোফার সামনে আছে ৮ থেকে ১০টি চেয়ার। নান্দনিক কারুকার্য দেয়ালজুড়ে। লালগালিচা আর সাদা কাপড় দিয়ে মোড়ানো পুরো সভাকক্ষ। সেখানে আলমারিতে আছে ড্রিংকস কেস ও ছাইদানি। রয়েছে এসি, নান্দনিক ডিজাইনের লাইটিং, ফ্যান, উন্নত কাঠের আসবাব আর দামি ঝাড়বাতি।

এরপরেই আছে খাট, ফোল্ডিং বেসিনযুক্ত রানির জন্য বরাদ্দ করা দুই বিছানার একটি শয়নকক্ষ। দোতলা আলমারি, জিনিসপত্র রাখার জন্য তামার তৈরি ছোট দুটি পাত্র ও ঝাড়বাতি। এরপর এক কক্ষজুড়ে বাথরুম। তার পুরো দেয়াল উন্নতমানের ছোট ছোট টাইলসে বাঁধানো। স্ক্রু দিয়ে আটকানো প্রতিটি টাইলস। সিলিংও সবুজাভ টাইলসে মোড়ানো। মেঝেতে কাঠের ওপর মোজাইক। সেখানকার ঝাড়বাতিগুলো নকশাদার ও রঙিন। দেয়ালজুড়ে তামা-পিতলের আলপনা। সাবান-শ্যাম্পু আর ব্রাশ রাখার জন্য আছে তামার তৈরি নান্দনিক ঝুড়ি। আছে বিশাল সবুজ মার্বেলের বাথটাব ও পিতলের ঝরনা।

 এরপরের কক্ষটি বাবুর্চিদের থাকার জন্য। তারপরের কক্ষটি রান্নাঘর। বাইরে থেকে বোঝার উপায় নেই এই কোচের ভেতরের অবস্থা। লাইটগুলো অচল হওয়ায় আলোর জন্য নতুন করে লাইট লাগানো হয়েছে।

ছয় কামরাবিশিষ্ট এই পুরো কোচ লাল মখমলে কার্পেটিং করা। প্রতিটি কক্ষের সঙ্গে একটি করে অ্যাটাচ বাথরুম ও বেলজিয়ামের উন্নত স্যানিটারি ফিটিংস। বোঝাই যায় না, এগুলো শত বছর আগের তৈরি।

সাধারণ কোচে ৮টি চাকা থাকলেও সেলুনটিতে রয়েছে ১২টি চাকা।

সৈয়দপুর রেলওয়ে কারখানার বিভাগীয় তত্ত্বাবধায়ক (ডিএস) সাদেকুর রহমান আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘রানি এলিজাবেথ এই কোচে ভ্রমণ করেন। পরে এটি পরিবর্তিত হয়ে প্রেসিডেন্ট সেলুন কোচ হিসেবে ব্যবহার করা হয়। চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়লে এটি মেরামতের জন্য আনা হয় সৈয়দপুর রেলওয়ে কারখানায়। বর্তমানে ব্যবহার না হলেও, আমরা ইতিহাস ও ঐতিহ্যের সাক্ষী হিসেবে রেখে দিয়েছি এটি।’

রেলওয়ে কারখানা সূত্রে জানা গেছে, এটি ১৯২৭ সালে ব্রিটিশদের বানানো বিশেষায়িত একটি কোচ। দেশভাগের পর ব্রিটিশ সরকার তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান রেলওয়েকে এই সেলুন কোচটি উপহার হিসেবে দিয়ে যায়। এর পর থেকে এটি শুধু রাষ্ট্রপতির ভ্রমণের জন্য জন্য সংরক্ষিত থাকায় এর নাম হয় রেলওয়ে প্রেসিডেন্ট সেলুন। একমাত্র প্রয়াত হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ রাষ্ট্রপতি থাকাকালীন এই সেলুন ব্যবহার করেছিলেন। ১৯৮১ সালে কোচটি ব্যবহারের অনুপযোগী হয়ে পড়লে মেরামতের জন্য আনা হয় সৈয়দপুর রেলওয়ে কারখানায়।

কারখানার ক্যারেজ শপের ইনচার্জ মোমিনুল ইসলাম বলেন, ‘বর্তমানে সেলুন কোচটি কারখানার ক্যারেজ শপে থাকলেও কিছু জিনিস মেরামত করে দর্শনার্থীদের জন্য রাখা হবে নবনির্মিত রেলওয়ে জাদুঘরে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

আ.লীগের এমপি শাম্মীর বাসায় ১০ লাখ টাকা চাঁদাবাজি ও ভাগ-বাঁটোয়ারার বিবরণ দিলেন রিয়াদ

কোটি টাকা আত্মসাৎ করে লাপাত্তা: কে এই ফ্লাইট এক্সপার্ট এমডি সালমান, বাবার হাত ধরে যাঁর উত্থান

গঙ্গাচড়ায় হিন্দুপল্লিতে হামলাকারীদের উসকানি, স্থানীয় সাংবাদিক গ্রেপ্তার

কিশোরগঞ্জে হর্টিকালচারের উপপরিচালকের বিরুদ্ধে ‘সমকামিতার’ অভিযোগ, মামলা বাবুর্চির

অতিরিক্ত ফি দাবি করায় বিমানবন্দর স্টাফের চোয়াল ভেঙে দিলেন যাত্রী

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত