Ajker Patrika

কালীগঙ্গা এখন ফসলের মাঠ

আব্দুর রাজ্জাক, ঘিওর (মানিকগঞ্জ)
আপডেট : ১৯ ফেব্রুয়ারি ২০২২, ১৩: ০৪
কালীগঙ্গা এখন ফসলের মাঠ

মানিকগঞ্জের ওপর দিয়ে বয়ে চলা একসময়ের প্রমত্তা কালীগঙ্গা নদী এখন মৃতপ্রায়। বর্ষা মৌসুম ছাড়া বছরের প্রায় পুরো সময় থাকে পানিশূন্য। নদীর বুকজুড়ে ধু ধু বালুচর, কোথাও চাষাবাদ, কোথাও গরু চরানো কিংবা ক্রিকেট ও ফুটবল খেলার দৃশ্য চোখে পড়ে। অথচ মাত্র তিন যুগ আগেও এ নদীর তরা-বানিয়াজুরী নৌপথে চলত ফেরি ও লঞ্চ।

মানিকগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) তথ্যমতে, কালীগঙ্গার দৈর্ঘ্য ৭৮ কিলোমিটার, গড় প্রস্থ ২৪২ মিটার। জেলার দৌলতপুর উপজেলার চর কাটারি এলাকায় যমুনা থেকে উৎপন্ন হয়ে কালীগঙ্গা ঘিওর উপজেলার আশাপুরের পাশ দিয়ে জাবরা, দুর্গাপুর ও তরা এলাকায় ধলেশ্বরীর সঙ্গে মিশেছে। এখান থেকে গালিন্দা, নবগ্রাম, চরঘোসতা, আলীগর চর, শিমুলিয়ায় এসে পদ্মার সঙ্গে মিশেছে। বর্তমানে এখান থেকে আরও খানিকটা এগিয়ে হাতিপাড়া, বালুখন্দ, পাতিলঝাঁপ, শল্লা হয়ে আলীনগরে এসে ধলেশ্বরীতে মিশেছে।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, আশির দশকের শুরুর দিকেও কালীগঙ্গা দিয়ে বড় বড় ফেরি-লঞ্চ চলত। তবে এখন কালীগঙ্গার বুকে পানির অস্তিত্ব নেই বললেই চলে। বৃহৎ এ নদীর দুরবস্থার কারণে শুধু নৌযান চলাচলই বন্ধ হয়নি, নদীতে মাছ শিকার করে জীবিকা নির্বাহ করা হাজারো পরিবারেও চলছে দুর্দিন। নদীতে দেশীয় মাছ বিলুপ্তির পথে। নদী মরে যাওয়ার ফলে কৃষিনির্ভর এ এলাকার সেচকাজও দারুণভাবে ব্যাহত হচ্ছে।

মানিকগঞ্জ সদর ও ঘিওর উপজেলা ঘুরে দেখা গেছে, সদরের বেউথা, বান্দুটিয়া, পৌলী ও ঘিওর উপজেলার তরা, উত্তর তরা, কালীগঙ্গায় বিশাল বিশাল চর পড়েছে। চরে আবাদ হচ্ছে ফসল। অনেক জায়গায় চলছে নদী দখলের নানা কর্মযজ্ঞ।

তরা এলাকার ৮২ বছরের বৃদ্ধ জামাল উদ্দিন বলেন, ‘১৫-২০ বছর আগেও নদীর এত খারাপ অবস্থা ছিল না। এই নদী এক সময় বাড়ির পাশে ছিল। মাছ ধরতাম, গোসল করতাম। ঘরের কাজ, কৃষিকাজ সব নদীর পানি দিয়েই করতাম। এখন আর নদীতে পানি নেই। বেশির ভাগ জায়গা ভরাট হয়ে গেছে, দখল হয়ে গেছে।’

একই এলাকার আরেক কৃষক ইসমাইল বলেন, নদী ভরাট হয়ে যাওয়ায় সেচকাজে পানির তীব্র সংকট দেখা দিয়েছে। কৃষিকাজ করতে তাঁদের পানির সংকটে পড়তে হচ্ছে।

কালীগঙ্গা নদী পাড়ের মির্জাপুর গ্রামের সঞ্জিত রাজবংশী বলেন, ‘আমরা বাপ-দাদার আমল থেকে এই নদী থেকে মাছ ধরে বিক্রি করে সংসার চালাতাম। বর্ষাকাল ছাড়া নদীতে পানি থাকে না। নদীতে পানিও নেই, মাছও নেই। গত ৭-৮ বছর আগে এই পেশা ছেড়ে দিয়েছি। জীবিকার তাগিদে এখন অটোরিকশা চালিয়ে সংসার চালাই।’

ঘিওরের রমজান আলী আদর্শ উচ্চবিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মুহাম্মদ আশরাফ হোসেন বলেন, নদীর উত্তর পাড়ে তরা ও বেউথা সেতু এলাকায় অবৈধভাবে নদী দখল করে ভরাট করেছেন ব্যবসায়ীরা। দুই পাড়েই নদীর ওপর গড়ে উঠেছে বিভিন্ন ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান।

মানিকগঞ্জ পরিবেশ রক্ষা কমিটির সদস্যসচিব লক্ষ্মী চ্যাটার্জি বলেন, কালীগঙ্গা নদীতে বেশ কয়েকটি বড় ব্রিজ নির্মাণের ফলে নদীর কিছু অংশ সংকুচিত হয়ে গেছে। এ ছাড়া অবৈধ দখল এবং পলিতে ভরাট হয়ে গেছে নদী। নদী খনন করে এর পানি প্রবাহ অব্যাহত রাখতে দ্রুত কর্তৃপক্ষের পদক্ষেপ নেওয়া জরুরি।

মানিকগঞ্জ পরিবেশ অধিদপ্তরের উপপরিচালক নুর আলম বলেন, প্রতিবছর নদীভাঙনের ফলে মাটি ও পলিতে কালীগঙ্গা ভরাট হয়ে যাচ্ছে। সেই সঙ্গে অবৈধভাবে দখল, অপরিকল্পিত বালু উত্তোলন এবং বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্পে নদী শাসনের ফলে নদীর এই দৈন্যদশা।

মানিকগঞ্জ পাউবোর নির্বাহী প্রকৌশলী মাইন উদ্দিন বলেন, বিআইডব্লিউটিএ’র প্রকল্পের আওতায় কালীগঙ্গায় খননকাজ চলছে। এ ছাড়া কালীগঙ্গার ভাঙনরোধে ও স্বাভাবিক স্রোতোধারা ফিরিয়ে আনার লক্ষ্যে একটি মেগা প্রকল্প আগামী একনেকে পাস হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত