Ajker Patrika

আক্রান্তের সংখ্যা বাড়লেও ওমিক্রন বিপজ্জনক নয়

নিজস্ব প্রতিবেদক, চট্টগ্রাম
আপডেট : ২২ জানুয়ারি ২০২২, ১৯: ১৫
Thumbnail image

চট্টগ্রামে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হওয়া ৭৫ শতাংশ রোগীর শরীরে ওমিক্রনের অস্তিত্ব পাওয়া গেছে। এদের ৯০ ভাগের মধ্যে প্রধান লক্ষণ দেখা গেছে, গলাব্যথা ও গলার স্বর বিকৃত হওয়া। ৮৫ শতাংশ রোগীর শরীরে ব্যথা, মাথা ব্যথা ও ৮০ ভাগ রোগীর মধ্যে জ্বর হওয়ার প্রবণতা পেয়েছেন তাঁরা। তবে সুখবর হলো, এই ওমিক্রন করোনার অন্যান্য ধরনের তুলনায় তেমন বিপজ্জনক নয়। আক্রান্ত রোগীরা জটিলতা ছাড়াই সুস্থ হয়ে উঠছেন।

চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতাল এবং আগ্রাবাদ মা ও শিশু হাসপাতালে আসা করোনা পজিটিভ রোগীর নমুনার জিনোম সিকোয়েন্সিংয়ে এ তথ্য উঠে আসে। ২০২১ সালের নভেম্বর ও ডিসেম্বর এবং ২০২২ সালে জানুয়ারি মাসের প্রথম সপ্তাহের করোনা পজিটিভ ৩০ জনের নমুনা বিশ্লেষণ করা হয়। এতে দেখা গেছে, গত ২৫ ডিসেম্বরের পর থেকে করোনা পজিটিভ রোগীদের ৭৫ ভাগই ওমিক্রন ভেরিয়েন্টে আক্রান্ত। জার্মানির আন্তর্জাতিক ডেটাবেইস ‘গ্লোবাল ইনিশিয়েটিভ অন শেয়ারিং অল ইনফ্লুয়েঞ্জা ডাটা (জিআইএসএইড)’-এ এসব তথ্য প্রকাশিত হয়।

গবেষণায় নেতৃত্ব দেন চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতালের মেডিসিন বিভাগের জুনিয়র কনসালট্যান্ট ও করোনা ইউনিটের চিকিৎসক এইচ এম হামিদুল্লাহ মেহেদী ও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড বায়োটেকনোলজি বিভাগের শিক্ষক ড. আদনান মান্নান।

ড. আদনান মান্নান এ বিষয়ে বলেন, ৩০ জন রোগীর নমুনা থেকে করা জিনোম সিকোয়েন্সিংয়ে দেখা যায়, ১ নভেম্বর থেকে ২০২১ সালের ২৫ ডিসেম্বর পর্যন্ত আসা সব রোগীই ডেলটা ভেরিয়েন্টে আক্রান্ত ছিল। কিন্তু ২৫ ডিসেম্বরের পর থেকে পাওয়া ৭৫ ভাগ রোগী ওমিক্রনে আক্রান্ত। এতে উল্লেখযোগ্য বিষয় হলো ২ রোগীর শরীরে ওমিক্রনের সাম্প্রতিক ধরন ‘বিএ২’ বা ‘স্টেলথ ওমিক্রন’র অস্তিত্ব রয়েছে।

চট্টগ্রামে এটিই প্রথম ‘বিএ২’ শনাক্তকরণের তথ্য বলে দাবি করেন গবেষকেরা। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের টেক্সাস ও হিউস্টন, ভারত, চীন ও ওমানে এই (বিএ২) ভেরিয়েন্টটি পাওয়া গেছে। তেমন বিপজ্জনক না হলেও এটির স্পাইক প্রোটিনে বেশ কিছু নতুন পরিবর্তন পাওয়া গেছে।

গবেষকেরা জানিয়েছেন, ওমিক্রনে আক্রান্ত রোগীদের গলাব্যথা ও গলার স্বর বিকৃত হওয়ার উপসর্গ রয়েছে। প্রায় ৯০ ভাগ রোগীর মধ্যেই এ লক্ষণ পাওয়া গেছে। এ ছাড়া ৮৫ ভাগ রোগীর শরীরের বিভিন্ন অংশে ব্যথা ও মাথাব্যথা এবং ৮০ ভাগের জ্বরের উপসর্গ দেখা যায়। ওমিক্রনে আক্রান্ত সবার বয়স ২১ বছরের ঊর্ধ্বে। শিশু-কিশোরদের মধ্যে এখনো এটি শনাক্ত হয়নি।

চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতালের মেডিসিন বিভাগের জুনিয়র কনসালট্যান্ট হামিদুল্লাহ মেহেদীর সই করা বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, মাত্র ৩০টি নমুনার জিনোম সিকোয়েন্সিংয়ে এ তথ্য পাওয়া গেছে। তবে এত অল্প নমুনার বিশ্লেষণে কোনো উপসংহারে আসা সম্ভব নয়। আরও কয়েক শ’ নমুনার জিনোম সিকোয়েন্সিংয়ে এর চরিত্র নিয়ে আরও ধারণা পাওয়া যাবে।

গবেষণায় সহায়তায় ও পৃষ্ঠপোষকতা করেছে কানাডার ডালহৌসি বিশ্ববিদ্যালয়ের ল্যাবরেটরি অব ইমার্জিং ইনফেকশাস ডিজিজ। তথ্য-উপাত্ত বিশ্লেষণ করেন অধ্যাপক ডেভিড কেলভিন এবং আব্দুল্লাহ মাহমুদ আল রাফাত। এতে সহকারী গবেষক ছিলেন চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতালের চিকিৎসক রাজদ্বীপ বিশ্বাস, মিনহাজুল হক এবং মা ও শিশু হাসপাতালের চিকিৎসক ফাহিম হাসান রেজা। সামগ্রিক তত্ত্বাবধানে ছিলেন আইসিডিডিআরবির ভাইরোলজি ল্যাবরেটরির বিজ্ঞানীরা।

জিনোমিক সার্ভেইল্যান্স প্রকল্পের আওতায় গত এপ্রিল ২০২১ থেকে জেনারেল হাসপাতাল এবং মা ও শিশু হাসপাতালের রোগীদের জিনোম সিকোয়েন্সিং হচ্ছে। এতে সহপ্রকল্প পরিচালক রয়েছেন চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতালের সিনিয়র মেডিসিন কনসালট্যান্ট আব্দুর রব মাসুম, মা ও শিশু হাসপাতালের মাইক্রোবায়োলজি বিভাগের অধ্যাপক সঞ্জয় বিশ্বাস এবং ডা. নাহিদ সুলতানা, আইসিডিডিআরবির ভাইরোলজি বিভাগের বিজ্ঞানী ড. মুস্তাফিজুর রহমান এবং ড. মোহাম্মদ এনায়েত হোসেন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত