Ajker Patrika
সাক্ষাৎকার

অবকাঠামোর পাশাপাশি দরকার নীতি পরিবর্তন

অবকাঠামোর পাশাপাশি দরকার নীতি পরিবর্তন

ড. মো. হাদিউজ্জামান বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের অধ্যাপক এবং বুয়েটের দুর্ঘটনা গবেষণা ইনস্টিটিউটের সাবেক পরিচালক। তিনি ভিজিটিং প্রফেসর হিসেবে গবেষণা করেছেন কানাডার ইউনিভার্সিটি অব আলবার্টায়। সম্প্রতি অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টার আমন্ত্রণে তিনি ও অধ্যাপক মোয়াজ্জেম হোসেন দেখা করে ঢাকার যানজট নিয়ন্ত্রণের জন্য সুপারিশ তুলে ধরেছেন। এ বিষয় নিয়ে ড. মো. হাদিউজ্জামানের সঙ্গে কথা বলেছেন আজকের পত্রিকার মাসুদ রানা

ঢাকায় দিন দিন যানজট না কমে বরং বাড়ছে—সমস্যাটা কোথায়?
আমরা অতীতে প্রকল্পভিত্তিক সমাধানের পথে হেঁটেছি, সমস্যাভিত্তিক সমাধানের পথে হাঁটিনি। একটা উদাহরণ দিয়ে বলি, যানজট একটা জায়গায় প্রকট আকার ধারণ করলে যানজট নিরসনের চেষ্টা করা হয়েছে অবকাঠামো নির্মাণ করে। যানজট যেখানে সৃষ্টি হচ্ছে, সেখানে কাজ করা হয়নি। অবকাঠামো তৈরি করে যানবাহনকে আরও উৎসাহিত করা হয়েছে। বিআরটিএর তথ্য দেখলে বোঝা যায়, বিগত এক যুগে অবকাঠামো নির্মাণের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে যানবাহনের সংখ্যা বেড়েছে। শুধু অবকাঠামো নির্মাণ করে যানজট নিরসন সম্ভব না।

অবকাঠামোর পাশাপাশি আমাদের পলিসির পরিবর্তন দরকার। যানবাহন নিয়ন্ত্রণ করাটা প্রকল্পভিত্তিক সমাধান না। সেটা হলো সমস্যাভিত্তিক সমাধান। যানবাহন নিয়ন্ত্রণ না করে অবকাঠামো নির্মাণ করা হয়েছে। অবাধে নিয়ন্ত্রণহীনভাবে যানবাহন চলাচলের সুযোগ দেওয়া হয়েছে। আমরা প্রকল্প করে বিশাল অর্থের বিনিয়োগ করেছি। তাতে যানজট নিয়ন্ত্রণ তো হয়নি, বরং সেই অবকাঠামো আরও যানবাহন নামাতে উৎসাহ দিয়েছে। ফ্লাইওভার করে ছোট ছোট যানবাহন চলাচলে উৎসাহিত করা হয়েছে।

ঢাকার মতো মেগাসিটিকে নিয়ে বিজ্ঞানভিত্তিক গবেষণা করা দরকার। সড়কের সক্ষমতা ও ধারণক্ষমতা অনুযায়ী কী পরিমাণ যানবাহন থাকা দরকার—এটা নিয়ে এখন পর্যন্ত কোনো কাজ হয়নি।

আপনারা এক সুপারিশে বলেছেন, সব পরিবহনকে এক কোম্পানির আওতায় আনলে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হবে। 

কিন্তু পরিবহন সেক্টরে মাফিয়াদের দৌরাত্ম্য আছে। তাহলে সমাধান কীভাবে হবে?
এই শহরে আড়াই থেকে তিন কোটি লোকের বাস। একটি আদর্শ শহরে মোট শহরের তুলনায় ২৫ শতাংশ সড়ক থাকতে হয়। কিন্তু আমাদের আছে মাত্র ৭ শতাংশ। এই ৭ শতাংশও ব্যবহার করতে পারি না মূলত রাজনৈতিক কারণে। সড়কে পার্কিং, ফুটপাত দখল এবং গণপরিবহনকে নিয়ন্ত্রণ না করা হলো রাজনৈতিক কারণ। রাজনৈতিক দৌরাত্ম্যের ব্যাপারটা পরিবহন সেক্টরের সব জায়গায় ছড়িয়ে পড়েছে। এটা রাজনৈতিকভাবেই মোকাবিলা করতে হবে।

আমাদের প্রস্তাবগুলো দর্শনগতভাবে আলাদা। সব রুটের বাস একটা কোম্পানির আওতায় আনতে হবে। আমাদের প্রস্তাব হলো, সরকার হবে সব পরিবহনের প্রধান। সরকারের মাধ্যমে ঢাকা শহরের বাসগুলো পরিচালিত হবে। বাসের মালিকেরা হবেন এর অংশীজন, তাঁদের হাতে কোনো নিয়ন্ত্রণ থাকবে না। প্রয়োজনবোধে বাসের মালিক হিসেবে তাঁরা ক্ষতিপূরণ নিয়ে চলে যাবেন।

সরকারের হাতে মালিকানা এবং নিয়ন্ত্রণ না গেলে মালিকদের দৌরাত্ম্য বা সিন্ডিকেট ভাঙা সম্ভব হবে না। যদি এ সেক্টরে কোনো লোকসান হয়, তাহলে সরকার ভর্তুকি দেবে। পৃথিবীর সব উন্নত দেশে গণপরিবহনে ভর্তুকি দেওয়া হয়। কারণ বছরে যানজটের ফলে যে পরিমাণ ক্ষতি হয়, তার সামান্য যদি ভর্তুকি দেওয়া হয়, সেটা ওই ক্ষতির তুলনায় সাশ্রয়ী হবে। যে কারণে আমরা সরকারনিয়ন্ত্রিত গণপরিবহনের কথা বলছি। এই চিন্তা বা দর্শনটা বাস্তবায়ন করা অসম্ভব নয়। এটা করা হলে পরিবহন সেক্টরে মাফিয়াদের দৌরাত্ম্য থাকবে না।

গণপরিবহনের মাধ্যমে যদি শহরের ৭০ শতাংশ মানুষকে সুবিধা দেওয়া সম্ভব না হয়, তাহলে ঢাকার এই সমস্যার সমাধান কখনো হবে না।

আনফিট এবং প্রাইভেট গাড়িকে কীভাবে নিয়ন্ত্রণ করা যাবে?
গণপরিবহনের নিয়ন্ত্রণটা পুরোপুরি মালিকদের হাতে থাকায় আনফিট গাড়ি বন্ধ করা যাচ্ছে না। সরকার যদি নিয়ন্ত্রণ নেয় কোম্পানির আন্ডারে, তখন এমনিতেই আনফিট গাড়ি বাতিল হয়ে যাবে। সরকার তখন ঝুঁকিটা নেবে। কিন্তু এখন যারা চালাচ্ছে, তারা এই ঝুঁকি নিচ্ছে না, কারণ তারা এটাকে দেখছে ব্যবসায়ীর দৃষ্টিতে, সেবার দৃষ্টিতে নয়। বিভিন্নজনকে ম্যানেজ করে আনফিট গাড়ি চালানো হয়। এ জন্য তারা ভালো গাড়ির জন্য বিনিয়োগ করতে রাজি নয়।

প্রকৃত অর্থে যেটাকে গণপরিবহন বলে, সেটা এখানে নেই। মডেল গণপরিবহনে কোন বাসস্টপেজে কখন গাড়ি থামবে এবং কত সময় পর আসবে, সেটা নির্দিষ্ট করা থাকে। যেটা মেট্রোরেল মেনে চলে। এ জন্য গণপরিবহনভিত্তিক পরিবহন ব্যবস্থাপনা তৈরি করতে হবে।

২০২৬ সালের মধ্যে তিনটি মেট্রোরেলের জন্য সরকারের প্রায় দেড় লাখ কোটি টাকা বিনিয়োগ করার কথা। গণপরিবহনের জন্য ৬ হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগ করা হলে মেট্রোরেলের কোচের মানের বাস নামিয়ে মেট্রোরেল যে পরিমাণ যাত্রী পরিবহন করবে, তার চেয়ে সাত গুণ বেশি পরিমাণ যাত্রী বাসে পরিবহন করা সম্ভব। তখন ব্যক্তিগত গাড়ি ব্যবহার নিরুৎসাহিত হবে। এর জন্য দরকার কিছু নীতিগত সিদ্ধান্ত। সেন্ট্রাল লন্ডনে পিক আওয়ারে কেউ ব্যক্তিগত গাড়ি ব্যবহার করলে তাঁকে দেড় থেকে দুই হাজার টাকা জরিমানা দিতে হয়। সেখানে পার্কিং কস্ট ব্যয়বহুল। একটা গাড়ি পার্কিংয়ের জন্য দৈনিক এক হাজার টাকা দিতে হয়। সে হিসাবে কেউ যদি অফিসে গাড়ি নিয়ে যান, তাহলে তাঁর দুই থেকে তিন হাজার টাকা ব্যয় হবে। এর উদ্দেশ্য হলো, ভালো গণপরিবহন থাকা সত্ত্বেও কেউ ব্যক্তিগত গাড়ি ব্যবহার করলে বাড়তি খরচ করতে হবে। 

ভালো মানের গণপরিবহনের সঙ্গে সঙ্গে আমাদের কিছু নীতিগত সিদ্ধান্তও পালন করতে হবে। পলিসি লাগবে। সড়ক থেকে ব্যক্তিগত গাড়ি সরানো গেলে একটা চমৎকার গণপরিবহনের সেবা দেওয়া সম্ভব।

কেউ কেউ যানজট নিয়ন্ত্রণের জন্য ঢাকা শহরকে বিকেন্দ্রীকরণের কথা বলেন। আপনার বক্তব্য কী?
একমত। ঢাকার ওপর অনেক অত্যাচার হয়েছে। একটা বাসযোগ্য শহরের নির্দিষ্ট ধারণক্ষমতা থাকে। ঢাকা শহরের আয়তন ৩০৪ বর্গকিলোমিটার। এখানে প্রতি বর্গকিলোমিটারে এখন ৪০ থেকে ৫০ হাজার লোক বাস করে। এটা আন্তর্জাতিক মানদণ্ডের সঙ্গে বেমানান। উন্নত বিশ্বের শহরে প্রতি বর্গকিলোমিটারে সর্বোচ্চ ৪ থেকে ৫ হাজার লোকের বাস। আমাদের এখানে সে তুলনায় প্রতি বর্গকিলোমিটারে দশ গুণ লোক বাস করছে। প্রতিদিন কর্মসংস্থান, শিক্ষা, চিকিৎসাসহ নানা কারণে প্রায় দুই হাজার লোক স্থায়ীভাবে ঢাকায় প্রবেশ করছে। এ জন্য যানজট নিয়ন্ত্রণের জন্য বিকেন্দ্রীকরণ হতে পারে একটা ভালো উপায়। যেমন পাকিস্তান ও মালয়েশিয়া তাদের রাজধানী অন্য জায়গায় নিয়ে গেছে। ভারতও তাদের রাজধানী দুইবার স্থানান্তর করেছে। রাজধানী সরিয়ে নিলে অথবা ঢাকা বিকেন্দ্রীকরণ করলে এর ওপর চাপ কমবে। আমাদের যাঁরা নীতিনির্ধারক আছেন, তাঁরা এ বিষয়টা নিয়ে ভাবছেন বলে আমার মনে হয় না। পুরোপুরি বিকেন্দ্রীকরণ করা সম্ভব না হলেও অন্তত প্রশাসনিক বিকেন্দ্রীকরণ করা যায় কি না, সেটা ভাবা উচিত। ঢাকা শহরে অনেক প্রতিষ্ঠান আছে, যেগুলো এ শহরে থাকার কোনো যৌক্তিকতা আমি দেখি না। অনেক গবেষণা ইনস্টিটিউট ঢাকার মধ্যে আছে, তাদের আসলে এখানে কোনো কাজ নেই। পুরো রাজধানী বিকেন্দ্রীকরণ করা সম্ভব না হলে, প্রশাসনিক বিকেন্দ্রীকরণ করা দরকার। তাতে ঢাকার ওপর কিছুটা চাপ কমবে।

সবাই ঢাকায় থাকতে চায়। প্রশাসনিক বিকেন্দ্রীকরণ শুরু হলে সেটা মেনে নিতে হবে। অন্যজন ঢাকার বাইরে যাবে, শুধু আমি যাব না—এই মানসিকতার পরিবর্তন দরকার। জনগণ বিকেন্দ্রীকরণের পক্ষে না বিপক্ষে, তা নিয়ে সরকার একটা গণভোটের আয়োজন করতে পারে।

সম্প্রতি আপনারা প্রধান উপদেষ্টার আমন্ত্রণে তাঁর সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন। আপনারা কতটা আশাবাদী?
আমরা বিজ্ঞানভিত্তিক সুপারিশ দিয়েছি। পরিবহন সেক্টর হলো পুরোপুরি বিজ্ঞান। আমি আশাবাদী যে স্বল্প সময়ে সুপারিশগুলো বাস্তবায়ন করা হলে গত দেড় মাসে যে যানজট দেখেছি, সেটা কেটে যাবে। তবে ট্রাফিককে তাদের পূর্ণ সক্ষমতা নিয়ে নামাতে হবে। মধ্য থেকে দীর্ঘমেয়াদি সুপারিশে আমরা পুরো ঢাকার নেটওয়ার্কের কথা বলেছি।

প্রধান উপদেষ্টা আমাদের সুপারিশগুলো ইতিবাচক হিসেবে গ্রহণ করেছেন এবং সাধুবাদ জানিয়েছেন। যাঁরা এটা বাস্তবায়ন করবেন তাঁদের তিনি তৎক্ষণাৎ নির্দেশ দিয়েছেন কয়েকটি জায়গায় পরীক্ষামূলকভাবে কাজ শুরু করতে। 

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় শেষ সাক্ষীর জেরা চলছে

বাসস, ঢাকা  
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ফাইল ছবি
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ফাইল ছবি

গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।

আজ সোমবার বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের ট্রাইব্যুনাল-১-এ মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা (আইও) মো. আলমগীরের জেরা শুরু করেন রাষ্ট্র নিযুক্ত আইনজীবী আমীর হোসেন। আইনজীবী আমীর হোসেন পলাতক আসামি শেখ হাসিনা ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের পক্ষে শুনানি করছেন। এর আগে গত মঙ্গলবার তদন্তকারী কর্মকর্তা মো. আলমগীরের সাক্ষ্য গ্রহণ সম্পন্ন হয়।

এই মামলার শুনানিতে এর আগে গণ-অভ্যুত্থানের অন্যতম প্রতীক শহীদ আবু সাঈদের বাবাসহ স্বজনহারা পরিবারের একাধিক সদস্য সাক্ষ্য দিয়েছেন। এ ছাড়া মামলার গুরুত্বপূর্ণ ‘স্টার উইটনেস’ হিসেবে সাক্ষ্য দেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক এবং জুলাই আন্দোলনের অন্যতম নেতৃত্বদানকারী নাহিদ ইসলাম এবং দৈনিক আমার দেশ পত্রিকার সম্পাদক ড. মাহমুদুর রহমান।

গত বছরের জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার আন্দোলন দমনে আওয়ামী লীগ সরকার, তাদের দলীয় ক্যাডার ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর একটি অংশ গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটিত করে বলে অভিযোগ ওঠে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে শেখ হাসিনা, তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল এবং তৎকালীন আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের বিরুদ্ধে গত ১০ জুলাই অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দেন ট্রাইব্যুনাল-১।

পরবর্তীকালে, এই মামলার অন্যতম আসামি সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন দোষ স্বীকার করে ঘটনার সত্যতা উদ্‌ঘাটনে রাজসাক্ষী (অ্যাপ্রোভার) হওয়ার জন্য ট্রাইব্যুনালে আবেদন করেন। ট্রাইব্যুনাল তাঁর আবেদন মঞ্জুর করলে তিনি রাজসাক্ষী হিসেবে এই মামলায় সাক্ষ্য দেন।

মামলার প্রসিকিউশন পক্ষে শুনানি করছেন চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম, প্রসিকিউটর মিজানুল ইসলাম এবং গাজী এসএইচ তামিম। শুনানিতে তাঁদের সঙ্গে অপর প্রসিকিউটররাও উপস্থিত ছিলেন।

অন্যদিকে, এই মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে রাজসাক্ষী হওয়া সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের পক্ষে আছেন আইনজীবী যায়েদ বিন আমজাদ।

মানবতাবিরোধী অপরাধের এই মামলা ছাড়াও ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে আরও দুটি মামলা বিচারাধীন। এর মধ্যে একটি মামলায় আওয়ামী লীগের সাড়ে ১৫ বছরের শাসনামলে সংঘটিত গুম-খুনের ঘটনায় তাঁকে আসামি করা হয়েছে। অন্য মামলাটি হলো রাজধানীর মতিঝিলের শাপলা চত্বরে হেফাজতে ইসলামের সমাবেশে হত্যাকাণ্ড নিয়ে। এই তিনটি মামলার বিচারকাজই বর্তমানে দুটি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে চলমান।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

ঝাঁকে ঝাঁকে ইলিশ পাওয়ার আশায় সাগরে জেলেরা

  • এবার ভারতের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে নিষেধাজ্ঞা দেয় সরকার।
  • গতকাল দিনভর ছিল উপকূলের জেলে পল্লিগুলোতে ব্যস্ততা।
মাছ শিকারের নিষেধাজ্ঞা শেষ হয়েছে বুধবার রাতে। এর আগে দিনভর সাগরে যাওয়ার প্রস্তুতি নেন জেলেরা। অনেকে দেখে নেন ট্রলার ঠিকঠাক আছে কি না। কেউ আবার জালের ছেঁড়া অংশ সেলাই করেন। ছবিটি কক্সবাজার-টেকনাফ মেরিন ড্রাইভের খুরেরমুখ এলাকার। ছবি: আজকের পত্রিকা
মাছ শিকারের নিষেধাজ্ঞা শেষ হয়েছে বুধবার রাতে। এর আগে দিনভর সাগরে যাওয়ার প্রস্তুতি নেন জেলেরা। অনেকে দেখে নেন ট্রলার ঠিকঠাক আছে কি না। কেউ আবার জালের ছেঁড়া অংশ সেলাই করেন। ছবিটি কক্সবাজার-টেকনাফ মেরিন ড্রাইভের খুরেরমুখ এলাকার। ছবি: আজকের পত্রিকা

‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর সঙ্গে।

মাছের সুষ্ঠু প্রজনন, উৎপাদন, মৎস্যসম্পদ সংরক্ষণ ও টেকসই মৎস্য আহরণের জন্য সমুদ্রে সব ধরনের মাছ শিকার ৫৮ দিনের নিষেধাজ্ঞা গতকাল বুধবার দিবাগত মধ্যরাতে শেষ হয়েছে। তাই গতকাল দিনভর ছিল উপকূলের জেলেপল্লিগুলোতে ব্যস্ততা। অনেকে দেখে নিচ্ছিলেন ট্রলার ঠিকঠাক আছে কি না, কেউ জালের ছেঁড়া অংশ সেলাই করছিলেন, কেউ আবার প্রয়োজনীয় খাদ্যসামগ্রীসহ অন্য সরঞ্জাম গুছিয়ে নিচ্ছিলেন।

বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র এবং ফকিরহাট উপ-মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের ঘাটে গতকাল শত শত ট্রলার নোঙর করে রাখা ছিল। জেলেদের উপস্থিতিতে ঘাট এলাকা সরগরম হয়ে ওঠে। ফকিরহাটের মুদি-মনিহারি দোকানগুলোতে জেলেরা কেনাকাটা করতে ভিড় জমান। ফকিরহাট এলাকার বিসমিল্লাহ ট্রলারের মাঝি রহিম মিয়া বলেন, ‘সাগরে মাছ শিকারে যেতে সকল প্রস্তুতি নিয়েছি। নিষেধাজ্ঞার সময় শেষ হওয়ামাত্রই সাগরে নামব।’

জেলে নুরসাইদ ও ফোরকান মিয়া বলেন, ‘নিষেধাজ্ঞার সময় পরিবার-পরিজন নিয়ে বেশ কষ্টে কেটেছে। ওই সময়ে বেশ টাকা ঋণ করেছি। এখন সাগরে যাব। দেখি আল্লাহ ঋণ পরিশোধ করতে দেন কি না।’

নোয়াখালীর হাতিয়ার সূর্যমুখী, বাংলাবাজার, কাজিরবাজার, পাইতান মার্কেট চেয়ারম্যান ঘাটসহ বেশ কয়েকটি ঘাটে গতকাল জেলেদের ব্যস্ত সময় পার করতে দেখা গেছে। অনেকে নৌকায় জাল তুলছিলেন, আবার অনেকে জ্বালানি তেল মজুতসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্রী ট্রলারে নিয়ে যান। সূর্যমুখী ঘাটের এমভি মায়ের দোয়া ট্রলারের মাঝি জাফর উল্যা বলেন, ‘সাগরে ৮-১০ দিন থাকার প্রস্তুতি নিচ্ছি। সন্ধ্যায় সাগরের উদ্দেশে রওনা দেব।’

সূর্যমুখী ঘাট জেলে সমিতির সভাপতি জবিয়ল হক বলেন, ‘সাগরে নামতে প্রস্তুত নোয়াখালীর হাতিয়ার ২০টি ঘাটের লক্ষাধিক জেলে। এসব ঘাটে প্রায় ১০ হাজার ছোট-বড় ফিশিং ট্রলার রয়েছে। প্রতি ট্রলারে ১০ জন হলেও লক্ষাধিক জেলে এই মাছ ধরার সঙ্গে জড়িত। তাঁদের সবাই গত ৫৮ দিন তীরে বেকার ছিলেন।’

পিরোজপুরের ইন্দুরকানি উপজেলার পাড়েরহাট মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের পার্শ্ববর্তী এলাকার জেলেরা গতকাল দিনভর সাগরে যাওয়ার প্রস্তুতি নেন। এ ছাড়া মঠবাড়িয়া উপজেলার সাপলেজা, খেতাচিড়া, বড়মাছুয়া, ছোটমাছুয়া, ভান্ডারিয়া উপজেলার চরখালী, হেতালিয়া, কাউখালী উপজেলার সোনাকুর এলাকার জেলেরা, সদর উপজেলা এবং নেছারাবাদ উপজেলার বিভিন্ন এলাকার জেলেরা প্রস্তুতি শেষে গত রাতে বঙ্গোপসাগরে রওনা হন।

কয়েক দিন ধরে কক্সবাজার উপকূলের জেলেপল্লিগুলোতে নৌকা, জাল মেরামতসহ বিভিন্ন প্রস্তুতি সেরেছেন জেলেরা। গতকাল মেরিন ড্রাইভের টেকনাফের খুরেরমুখ, সাবরাং ও বাহারছড়া এলাকায় দেখা গেছে, সড়কে দাঁড় করিয়ে রাখা সারি সারি ট্রলারে জাল ও রসদ তোলেন জেলেরা।

একটি ট্রলারের মাঝি আবু তাহের জানান, এবার ভারতের সঙ্গে মিল রেখে নিষেধাজ্ঞা দেওয়ায় কেউ সাগরে মাছ শিকারে নামেনি। এতে উপকূলের কাছাকাছি সাগরে জাল ফেললেই ইলিশসহ অন্য মাছ পাওয়া যাবে বলে আশাবাদী তিনি।

কক্সবাজার শহরের ফিশারি ঘাটের মৎস্য ব্যবসায়ী সমিতির পরিচালক জুলফিকার আলী জানান, কক্সবাজার উপকূলে ছোট-বড় ৭ হাজারের মতো যান্ত্রিক ট্রলার রয়েছে। এসব ট্রলারে প্রায় এক লাখ জেলে ও শ্রমিক নিয়োজিত রয়েছেন। অধিকাংশ ট্রলার নিষেধাজ্ঞা ওঠার সঙ্গে সঙ্গে সাগরে রওনা হবে।

[প্রতিবেদন তৈরিতে তথ্য দিয়ে সহায়তা করেছেন বরগুনা ও আমতলী, পিরোজপুর, কক্সবাজার এবং হাতিয়া প্রতিনিধি]

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

ভারতের নিষেধাজ্ঞা: স্থলবন্দর থেকে ফেরত আসছে রপ্তানি পণ্য

  • ক্রয়াদেশের চালান নিয়ে বাড়ছে দুশ্চিন্তা
  • সরকারের সিদ্ধান্তের অপেক্ষা
  • আজ বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ডেকেছে জরুরি বৈঠক
নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা
আপডেট : ২০ মে ২০২৫, ০২: ৪৪
ফাইল ছবি
ফাইল ছবি

ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।

ভারতের নিষেধাজ্ঞার এক দিন পরই গত রোববার লালমনিরহাটের বুড়িমারী ও যশোরের বেনাপোল স্থলবন্দরসহ বিভিন্ন বন্দরে পণ্যের ট্রাক আটকে দেয় ভারত। সংশ্লিষ্টদের সূত্রে জানা যায়, রোববার ভারতের আমদানি বিধিনিষেধের কারণে বুড়িমারী সীমান্তে প্রাণের ১৭ ট্রাক খাদ্যপণ্য আটকে যায়। এ ছাড়া বেনাপোলে ৩৬টি পোশাক বোঝাই ট্রাকসহ অন্যান্য পণ্যের শতাধিক ট্রাক ঢুকতে পারেনি।

গতকাল সোমবার পর্যন্ত বুড়িমারী থেকে প্রাণের পণ্যবোঝাই ট্রাকগুলোর অর্ধেকের বেশি ফেরত নিয়ে আসে প্রতিষ্ঠানটি। এ ছাড়া বেনাপোলে পোর্টের ভেতরে ২৪টি ট্রাক ছাড়া বাকিগুলো ফেরত চলে যায়।

বেনাপোল বন্দর সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট স্টাফ অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মো. সাজেদুর রহমান গতকাল সোমবার আজকের পত্রিকাকে বলেন, গতকাল পোর্টের ভেতর ও বাইরে শতাধিক ট্রাক দাঁড়িয়ে ছিল। আজ পোর্টের ভেতরের ২৪টি ছাড়া বাকিগুলো ফেরত নিয়ে গেছেন মালিকেরা। এখন পর্যন্ত মনে হচ্ছে, পোর্টের ভেতরের ট্রাকগুলোও ফেরত নিতে হবে।

জানতে চাইলে প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের পরিচালক (বিপণন) কামরুজ্জামান কামাল আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমাদের হাতে ৬ মিলিয়ন ডলারের ক্রয় আদেশ রয়েছে। তার মধ্য থেকে রোববার বুড়িমারী দিয়ে ১৭ ট্রাকবোঝাই পণ্য পাঠিয়েছিলাম। কিন্তু সেগুলো ঢুকতে পারেনি। ট্রাকগুলো ফেরত আনা হচ্ছে। নতুন করে কাগজপত্র তৈরি করে অন্য পথ দিয়ে পণ্য পাঠাতে হবে।’

বেনাপোল স্থলবন্দর সূত্রে জানা যায়, ওই ২৪টি ট্রাক পোর্টের ভেতরে থাকায় এখনো তারা ভারতে প্রবেশের অপেক্ষায় রয়েছে। তাদের আশা, যেহেতু নিষেধাজ্ঞার আগে এই পণ্যগুলোর এলসি করা হয়েছিল, তাই এগুলো প্রবেশে অনুমতি পাবে। তবে এটি নির্ভর করবে বাংলাদেশ সরকারের আলোচনার ওপর।

এমন পরিস্থিতিতে সরকারের সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় রয়েছেন ব্যবসায়ীরা। ইতিমধ্যে অনেক রপ্তানিকারক রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) সঙ্গে আলোচনা করে সরকারের সহযোগিতা চেয়েছে।

স্থলবন্দরের মাধ্যমে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জসমূহ এবং আশু করণীয় নির্ধারণে বাণিজ্যসচিবের সভাপতিত্বে আজ মঙ্গলবার আন্তমন্ত্রণালয়ের সভা ডেকেছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।

বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, স্থলবন্দরের মাধ্যমে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জসমূহ এবং আশু করণীয় নির্ধারণে বাণিজ্যসচিবের সভাপতিত্বে বিকেল ৪টায় আন্তমন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে এই সভা অনুষ্ঠিত হবে।

সভায় নৌপরিবহন ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশন, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড, বাংলাদেশ স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষ, রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো, জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের প্রতিনিধিদের উপস্থিত থাকতে বলা হয়েছে। এ ছাড়া ব্যবসায়ী প্রতিনিধি হিসেবে এফবিসিসিআই, বিজিএমইএ, ভারত-বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির প্রতিনিধিদের উপস্থিতির জন্য আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে।

ভারতের শিল্প ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয় গত শনিবার হঠাৎ এক বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে স্থলবন্দর দিয়ে বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক আমদানি নিষিদ্ধ করে। শুধু ভারতের নবসেবা ও কলকাতা সমুদ্রবন্দর ব্যবহার করে দেশটির আমদানিকারকেরা বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক আমদানি করতে পারবেন বলে ওই বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়। এ ছাড়া বাংলাদেশ থেকে ভারতের আসাম, মেঘালয়, ত্রিপুরা ও মিজোরাম, পশ্চিমবঙ্গের চ্যাংড়াবান্দা ও ফুলবাড়ী শুল্ক স্টেশন দিয়ে ফল, ফলের স্বাদযুক্ত পানীয়, কোমল পানীয়, প্রক্রিয়াজাত খাদ্য, প্লাস্টিক পণ্য, সুতা, সুতার উপজাত, আসবাব রপ্তানিও নিষিদ্ধ করা হয় ওই বিজ্ঞপ্তিতে।

আমদানি ও রপ্তানিসংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা জানান, দেশের ২৪টি বন্দরের মধ্যে ১৬টি বন্দর দিয়ে ভারতের সঙ্গে আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য হয়ে থাকে। তবে যোগাযোগব্যবস্থা সহজ হওয়ায় বেনাপোল ও ভারতের পেট্রাপোল বন্দর দিয়ে সবচেয়ে বেশি আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য হয়। এর পরিমাণ ৮০ শতাংশ। বেনাপোল বন্দর দিয়ে প্রতিদিন ভারতে ২৫০ থেকে ৩০০ ট্রাকে বিভিন্ন ধরনের পণ্য রপ্তানি হয়। এর মধ্যে শতাধিক ট্রাক পণ্য থাকে তৈরি পোশাক।

এর আগে গত ৮ এপ্রিল বাংলাদেশের জন্য ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা বাতিল করে ভারত। ফলে ভারতের বিমানবন্দর ব্যবহার করে তৃতীয় কোনো দেশে তৈরি পোশাক রপ্তানি করতে পারছে না বাংলাদেশ। অন্যদিকে প্রায় এক মাস আগে ভারত থেকে বেনাপোল, ভোমরা, সোনামসজিদ, বাংলাবান্ধা, বুড়িমারী স্থলবন্দর দিয়ে সুতা আমদানির সুযোগ বন্ধ করে দেয় বাংলাদেশের জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)।

সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) বিশেষ ফেলো মোস্তাফিজুর রহমানের মতে, এই পাল্টাপাল্টি পদক্ষেপে তুলনামূলকভাবে বেশি নেতিবাচক প্রভাব পড়বে বাংলাদেশের ওপর। তাই ভারতের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য ঘাটতি কমানোর চেষ্টা অব্যাহত রাখাই সরকারের উচিত বলে মনে করছেন তিনি।

মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, আলোচনার মাধ্যমে বাংলাদেশ এবং ভারতের বিরোধপূর্ণ বিষয়সমূহ মিটিয়ে ফেলতে হবে এবং দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য সম্পর্কের ক্ষেত্রে ভারসাম্য প্রতিষ্ঠা করতে হবে। এটাই হবে উভয় দেশের জন্য কল্যাণকর।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

নিলামে গৌতম বুদ্ধের রত্নসম্ভার

নিলামে গৌতম বুদ্ধের রত্নসম্ভার

আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।

১৮৯৮ সালে ভারতের উত্তর প্রদেশের একটি ধূলিধূসর টিলা খুঁড়ে পাওয়া মূল্যবান এই রত্নগুলো এক শতাব্দীর বেশি সময় ধরে একটি বেসরকারি ব্রিটিশ সংগ্রহাগারে প্রায় দৃষ্টিচক্ষুর আড়ালে ছিল। এখন যেহেতু রত্নগুলোর হাতবদলের সময় এসেছে, তাই নতুন সংগ্রাহকেরা আগ্রহ নিয়ে এগুলো সংগ্রহের জন্য অপেক্ষা করছেন। কিন্তু এখানে একটা অস্বস্তিও তৈরি হয়েছে।

গৌতম বুদ্ধের জন্মস্থান লুম্বিনীর কাছাকাছি, বর্তমানে ভারতের উত্তর প্রদেশে একটি ইটের ঘরের ভেতর থেকে প্রায় ১ হাজার ৮০০টি মুক্তা, রুবি, টোপাজ, নীলা ও নকশা করা সোনার পাত সংগ্রহ করা হয়েছিল। তবে এই রত্নগুলোর সঙ্গে সঙ্গে একটি খোদাই করা পাত্রে হাড়ের টুকরাও পাওয়া যায়, যেগুলোকে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষ বলে শনাক্ত করা হয়। এই আবিষ্কার তখন প্রত্নতত্ত্বের জগতে ব্যাপক আলোড়ন তোলে।

সাদাবি’স এশিয়ার চেয়ারম্যান নিকোলাস চাউ মনে করেন, স্মরণকালের বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর মাঝে এই রত্নসম্ভার অন্যতম। তবে এগুলো নিলামে তোলার কারণে একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন তৈরি হয়েছে। আর তা হচ্ছে—ভারতের ইতিহাসের সঙ্গে গভীরভাবে জড়িয়ে থাকা এবং বৌদ্ধদের কাছে পবিত্র এই সম্পদ বিক্রি করা কি নৈতিকভাবে গ্রহণযোগ্য?

১৮৯৮ সালে ব্রিটিশ এস্টেট ম্যানেজার উইলিয়াম ক্ল্যাক্সটন পেপ্পে লুম্বিনির ঠিক দক্ষিণে পিপ্রাওয়ায় অবস্থিত একটি ঢিবি খনন করেন। সেখান থেকেই প্রায় ২ হাজার বছর আগের ওই নির্দশনগুলো খুঁজে পাওয়া যায়।

ইতিহাসবিদদের মতে, প্রাপ্ত রত্নসম্ভার ও দেহাবশেষ, যা তখনো পর্যন্ত অক্ষত ছিল, সেগুলো গৌতম বুদ্ধের শাক্য বংশের এবং বিশ্বব্যাপী বৌদ্ধদের ঐতিহ্য। হাড়ের নিদর্শনগুলো থাইল্যান্ড, শ্রীলঙ্কা ও মিয়ানমারের মতো দেশগুলোতে বিতরণ করা হয়েছে। এসব দেশে এখনো সেগুলোর পূজা করা হয়।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত