Ajker Patrika

অবৈধ ইটভাটায় পুড়ছে কাঠ

সনি আজাদ, চারঘাট 
আপডেট : ১০ ডিসেম্বর ২০২১, ১৫: ৪৫
অবৈধ ইটভাটায় পুড়ছে কাঠ

চারঘাট উপজেলায় অবৈধভাবে গড়ে উঠেছে ১১টি ইটভাটা। একটিরও নেই পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র। এসব ইটভাটায় কয়লার পরিবর্তে দেদারসে পোড়ানো হচ্ছে কাঠ। এর ফলে একদিকে দূষিত হচ্ছে পরিবেশ। অন্যদিকে উজাড় হচ্ছে গাছপালা। ধ্বংস হচ্ছে তিন ফসলি কৃষি জমি।

উপজেলা ইটভাটা মালিক সমিতি সূত্রে জানা যায়, উপজেলা জুড়ে মোট ১১টি ইটভাটা রয়েছে। নিয়ম অনুযায়ী এসব ইটভাটায় কয়লা দিয়ে ইট পোড়ানোর কথা। কিন্তু কয়লার দাম বাড়ার অজুহাতে কাঠ দিয়েই পোড়ানো হচ্ছে ইট। একটি বড় ইটভাটায় একবারে সাড়ে চার থেকে পাঁচ লাখ ইট পোড়াতে ২২-২৫ দিন সময় লাগে। এ সময় কমপক্ষে ১১ হাজার মণ জ্বালানির প্রয়োজন। আবহাওয়া ভালো থাকলে এক মৌসুমে পাঁচ-ছয়বারে ৪৫-৫০ লাখ ইট পোড়ানো সম্ভব। এ পরিমাণ ইট পোড়াতে ৬৫ থেকে ৬৭ হাজার মণ (প্রায় দুই হাজার ৭০০ মেট্রিক টন) জ্বালানি কাঠ পোড়াতে হয়।

পরিবেশ অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, ও সংক্রান্ত আইন অনুযায়ী কাঠ দিয়ে ইট পোড়ানো যাবে না। আইন অমান্যকারীদের বিরুদ্ধে প্রথমবার সর্বোচ্চ ৫০ হাজার টাকা জরিমানা করা যাবে। দ্বিতীয়বার অপরাধ করলে এক লাখ থেকে ১০ লাখ টাকা পর্যন্ত জরিমানা ও সাজার বিধান রাখা হয়েছে। তৃতীয়বার করলে নিবন্ধন বাতিল ও ভাটা বাজেয়াপ্ত করারও বিধান রাখা হয়েছে। আইনের কঠোর নির্দেশনা থাকলেও বাস্তবে এর প্রয়োগ নেই।

সরেজমিনে উপজেলার অনুপামপুর, হলিদাগাছী ও নিমপাড়া গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, শুধুমাত্র এই তিন গ্রামেই প্রাথমিক ও মাধ্যমিক বিদ্যালয় এবং জনবসতিপূর্ণ এলাকায় ফসলি জমি নষ্ট করে তৈরি করা হয়েছে ৭টি ইটভাটা। সেসব জমির সঙ্গে লাগোয়া জায়গায় তৈরি কাঁচা ইট শুকানো হচ্ছে। ভাটায় কয়লা থাকলেও চারপাশে জমা করে রাখা হয়েছে হাজার হাজার মণ বিভিন্ন গাছের কাঠ।

একতা ইট ভাটার ম্যানেজার মোস্তাকিন আলী বলেন, ভাটায় আগুন জ্বালানোর জন্য কাঠের প্রয়োজন হয়। প্রতিবার আগুন জ্বালাতে সাতশো থেকে আটশো মণ কাঠ লাগে। মহাজন সবাইকে ‘ম্যানেজ’ করেই ভাটায় কাঠ পোড়ান।

পরিবেশ নিয়ে কাজ করা স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন ‘নতুন প্রহর’ এর সভাপতি সেলিম রেজা বলেন, কয়লা সংকটের দোহাই দিয়ে ভাটাগুলোতে দেশের সংরক্ষিত বনাঞ্চলের কাঠ ও স্থানীয়ভাবে সরবরাহকৃত কাঠ পোড়ানো হচ্ছে।

উপজেলা ইটভাটা মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক ও ভাটা মালিক আজিবার রহমান বলেন, ‘কয়লা সংকটে ইট পোড়াতে পারছে না ভাটাগুলো। এ অবস্থায় আমরা সমিতি থেকে ভাটায় কাঠ না পোড়াতে নির্দেশনা দিচ্ছি। তারপরও কেউ কাঠ পোড়াচ্ছে কিনা তা আমার জানা নেই।’

পরিবেশ অধিদপ্তর রাজশাহী জেলা কার্যালয়ের সিনিয়র কেমিস্ট মিজানুর রহমান জানান, ইট পোড়ানো নিয়ন্ত্রণ আইনে (১৯৮৯ ও ২০০১) উল্লেখ আছে, আবাদি জমিতে কোনো ইটভাটা তৈরি করা যাবে না। ফিক্সড চিমনি ব্যবহার করতে হবে। কাঠ পোড়ানো যাবে না। এজন্য জেল-জরিমানাসহ ভাটার নিবন্ধন বাতিল ও ভাটা বাজেয়াপ্ত করারও বিধান রাখা হয়েছে। চারঘাটের ১১টি ভাটার সব চলছে অবৈধভাবে।’

পরিবেশ অধিদপ্তর রাজশাহী বিভাগীয় কার্যালয়ের পরিচালক সুফিয়া নাজিম বলেন, এ সব ভাটা পরিবেশের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর। কাঠ পোড়ানোর বিষয়টি নজরে এসেছে। খুব দ্রুতই এগুলোর বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত