Ajker Patrika

ইউপি চেয়ারম্যানের ক্ষমতা

সম্পাদকীয়
আপডেট : ০৭ আগস্ট ২০২২, ০৯: ৫৫
ইউপি চেয়ারম্যানের ক্ষমতা

এমন ঘটনাও ঘটে তাহলে! খেলার মাঝখানে উপস্থিত হয়ে একজন চেয়ারম্যান অকথ্য ভাষায় গালাগাল করতে পারেন টুর্নামেন্টের আয়োজকদের! আয়োজকদের বিরুদ্ধে ইউপি চেয়ারম্যানের 

অভিযোগটিও হাস্যকর। চেয়ারম্যান সাহেবকে প্রধান অতিথি না করে সভাপতি করা হয়েছে কেন, সেটাই তাঁর ক্রোধের কারণ।

চেয়ারম্যানের এই ক্রোধকে একিলিসের ক্রোধ হিসেবে বিবেচনা করার কোনো সুযোগ নেই। হোমারের লেখা মহাকাব্যও নয় এটি। মহাকাব্যে একিলিস বীরত্বপূর্ণ লড়াই করেছিলেন। আর আমাদের লালমনিরহাটের হাতীবান্ধার টংভাঙ্গা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান সাহেব? কোনো বীরত্বপূর্ণ যুদ্ধে তিনি অবতীর্ণ হননি। তাঁর এই যুদ্ধ নিজের এলাকার মানুষদের বিরুদ্ধে, ফুটবল টুর্নামেন্টের বিরুদ্ধে। নিজের ক্ষমতার দাপট দেখিয়ে এমন এক দৃষ্টান্ত তৈরি করলেন তিনি, যা নিয়ে কেবল ধিক্কারই জানাতে হয়।

চেয়ারম্যান সাহেব এমন একটি টুর্নামেন্টের ফাইনাল খেলা বন্ধ করে এসেছেন, যার সঙ্গে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এবং বঙ্গমাতার নাম যুক্ত। বঙ্গবন্ধু ও বঙ্গমাতা ফুটবল টুর্নামেন্টের মতো একটি আড়ম্বরপূর্ণ টুর্নামেন্টের চূড়ান্ত খেলা মাঝপথে বন্ধ করে দিয়ে তিনি প্রমাণ করলেন, কতটা অবিবেচক তিনি। চেয়ারম্যান সাহেবের নাম সভাপতি নাকি প্রধান অতিথি হিসেবে থাকবে, তার ওপর তো টুর্নামেন্টের খেলা হওয়া না-হওয়া নির্ভর করে না। এই সহজ সত্যটি যেকোনো আক্কেলওয়ালা মানুষ বুঝতে পারে। কিন্তু আক্কেল যে সবার সময়মতো কাজ করে না, তারই একটা দৃষ্টান্ত হয়ে উঠলেন চেয়ারম্যান সাহেব। ক্ষমতায় গেলে রাজনীতিবিদেরা জনগণের মঙ্গলের জন্য কিছু করার চেষ্টা করেন। কিন্তু সে ধরনের জনদরদি রাজনীতিবিদ রাজনীতির মাঠে ক্রমেই কমে যাচ্ছে এবং সেই শূন্য জায়গায় ভুঁইফোড়ের মতো গজাচ্ছে আক্কেলবিহীন কিছু রাজনীতিবিদ। তাঁদের শক্তি জনগণ নয়, তাঁদের ক্ষমতার উৎস অন্য কিছু। এ ধরনের মানুষের কাছে কী শিখবে জনগণ?

সেলিম হোসেন নামের এই ইউপি চেয়ারম্যান যে দৃষ্টান্ত রাখলেন, তাতে অনুপ্রাণিত হয়ে তাঁর অনুগামীরা যদি আরও ভয়ংকর কিছু করে বসেন, তাহলে অবাক হওয়ার কিছু থাকবে না। ঘটনাটাকে যতই ছোট ভাবা হোক না কেন, আসলে তা কোনো ছোট ঘটনা নয়। রাজনীতি, সমাজনীতি থেকে শিষ্টাচার উঠে গেলে সমাজে ভারসাম্য থাকে না। যে মানুষদের অপমান করলেন চেয়ারম্যান সাহেব, তাঁরা সবাই এলাকার গণ্যমান্য মানুষ। সবার সামনে চেয়ারম্যানের মাধ্যমে এভাবে অপমানিত হওয়ার পর ভবিষ্যতে তাঁরা কোনো ভালো উদ্যোগ নেওয়ার পথে এগোবেন কি না, সে সম্পর্কে তাঁদের মনে দ্বিধাদ্বন্দ্ব থাকবে।

একটা ভয়াবহ সময় পার করছি আমরা। যোগ্য মানুষেরা থেকে যাচ্ছে আড়ালে, ভুঁইফোড় মানুষেরা সমাজের নানা ক্ষেত্রে, রাজনীতির গলিঘুঁজিতে নিজের ক্ষমতা দেখিয়ে যাচ্ছে। সততা, জনগণের প্রতি ভালোবাসার মূল্য দিন দিন কমে যাচ্ছে। যেকোনো মূল্যে ক্ষমতায় যাওয়া ও তা টিকিয়ে রাখার প্রবণতা বাড়ছে। এ রকম সময় এই চেয়ারম্যানের মতো চেয়ারম্যানরাই দণ্ড-মুণ্ডের কর্তা হয়ে বসলে তো বিপদ!

চেয়ারম্যানের এহেন কর্মকাণ্ডের বিষয়ে তদন্ত করে তাঁকে জবাবদিহির মধ্যে আনা জরুরি।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

ঢাবিতে ‘তুর্কি এনজিও সমর্থিত’ সংগঠনের ‘বৃহত্তর বাংলাদেশ’ মানচিত্রে ভারতের অংশ, বললেন জয়শঙ্কর

কালো জাদুর অভিযোগে মবের তাণ্ডব, এক পরিবারে পাঁচজনকে জীবন্ত পুড়িয়ে হত্যা

খিলগাঁওয়ে পুরি-শিঙাড়া বিক্রেতাকে পিটিয়ে হত্যা

ফ্লাইটে অসুস্থ ব্যক্তিকে সহযাত্রীর চড়, তারপর থেকে তিনি নিখোঁজ

সাপের বিষে তৈরি যে মদ পাওয়া যায় এশিয়ার বিভিন্ন দেশে

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত