Ajker Patrika

বয়স্ক ভাতায় চক্রের থাবা

সিঙ্গাইর (মানিকগঞ্জ) প্রতিনিধি
Thumbnail image

মানিকগঞ্জের সিঙ্গাইর উপজেলার জামির্ত্তা ইউনিয়নে ২০০ ব্যক্তির বয়স্ক ভাতার টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে একটি চক্রের বিরুদ্ধে। ভাতার কার্ডধারী সবার মোবাইল ব্যাংকিংয়ের সিম কার্ড নিজেদের কাছে রেখে প্রথম ধাপের ৬ হাজার টাকা হাতিয়ে নেওয়া হয়েছে। সেই হিসাবে ১২ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছে চক্রটি।

এদিকে মোবাইল ব্যাংকিং নগদ-এর অ্যাকাউন্ট থাকা সিম ফিরিয়ে দিলেও গোপন পিন নম্বর (পাসওয়ার্ড) না পাওয়ায় দ্বিতীয় ধাপের টাকাও তুলতে পারছেন না অনেকে। উপজেলা সমাজসেবা কার্যালয়ের এক কর্মকর্তা, জনপ্রতিনিধিসহ অন্তত চারজন এই চক্রে জড়িত বলে জানিয়েছেন ভুক্তভোগীরা।

উপজেলা সমাজসেবা কার্যালয়ের কারিগরি প্রশিক্ষক খোরশেদ আনসার খান বাচ্চু, জামির্ত্তা ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) ১, ২ ও ৩ নম্বর ওয়ার্ডের সংরক্ষিত নারী সদস্য শাহনাজ পারভীন, ধল্লা ইউনিয়নের বিন্যাডাঙ্গি এলাকার রিপন শিকদার ও আক্তার হোসেন বয়স্ক ভাতার টাকা হাতিয়ে নেওয়া চক্রে জড়িত বলে জানা গেছে।

উপজেলা সমাজসেবা কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, ২০২১-২২ অর্থবছরে সিঙ্গাইরের জামির্ত্তা ইউনিয়নে ২০০ জন বয়স্ক ভাতার কার্ড পেয়েছেন। চলতি বছরে কার্ডধারী প্রত্যেককে মোবাইল ব্যাংকিং ‘নগদ’-এর মাধ্যমে ভাতার টাকা পরিশোধের কথা। ভাতার কার্ডধারীদের রেজিস্ট্রেশনের পর প্রথম ধাপে ৬ হাজার টাকা ও দ্বিতীয় ধাপে ১ হাজার ৫০০ টাকা পাওয়ার কথা।

জানা গেছে, নিয়মানুযায়ী বয়স্ক ভাতার টাকা পাওয়ার জন্য কার্ডধারী ব্যক্তির মোবাইল ফোন নম্বরে নগদ অ্যাকাউন্ট খুলতে হবে। এ জন্য পূর্ববর্তী নম্বর ও অ্যাকাউন্ট থাকলেও হবে। কিন্তু অভিযুক্তরা নতুন করে মোবাইল ফোনের সিম কিনে বাধ্য করেন তাতে নগদ অ্যাকাউন্ট খুলতে। পরে সেই সিম নিজেদের কাছে আটকে রেখে ভাতার প্রথম ধাপের ৬ হাজার টাকা উত্তোলন করেন তাঁরা।

এদিকে এর তিন থেকে সাড়ে তিন মাস পর গ্রাহকদের কাছে ফোনের সিমটি পৌঁছে দেওয়া হয়। তবে ভাতার কার্ডধারী অনেকের নগদ-এর গোপন পিন নম্বরও দেওয়া হয়নি। এতে তাঁদের অ্যাকাউন্টে দ্বিতীয় ধাপের টাকা এলেও উত্তোলন করতে পারছেন না।

জামির্ত্তা ইউনিয়নের সুদক্ষিরা এলাকার মো. শাহাবুদ্দিন বলেন, ‘আমার মোবাইল ফোনে নগদ অ্যাকাউন্ট আছে। তারপরও বয়স্ক ভাতার জন্য অফিস থেকে নতুন করে সিম কেনাসহ নগদ অ্যাকাউন্ট করান এক কর্মকর্তা। তিন মাস পর আমাকে ফোনের সিম দেন আক্তার হোসেন। কিন্তু এখন পর্যন্ত আমি এক টাকাও পাইনি। নতুন নগদ অ্যাকাউন্টের পিন নম্বরও দেননি।’ 
একই অভিযোগ করেন জামির্ত্তা ইউনিয়নের কহিলাতুলির এলাকার হাবেজা খাতুন, মমতাজ ও সুদক্ষিরা এলাকার মো. বাচ্চু মিয়াসহ অনেকে।

জামির্ত্তা ইউপির সদস্য শাহনাজ পারভীন বলেন, ‘মোবাইল ফোনের নতুন নগদ অ্যাকাউন্ট করা ও ভাতার টাকা উত্তোলনের বিষয়ে আমি কিছুই জানি না। আমি শুধু নামের তালিকা তৈরি করেছি। মোবাইল ব্যাংকিং অ্যাকাউন্টের জন্য আঙুলের ছাপ নেওয়া ও সিম বিতরণ করেছেন রিপন শিকদার, আক্তার হোসেন ও খোরশেদ আনসার খান বাচ্চু।’

আক্তার হোসেন বলেন, ‘রিপন শিকদারকে আমি নগদ-এর মোবাইল ব্যাংকিং করার জন্য সহযোগিতা করেছি। গ্রাহকের টাকা কে নিয়েছে, এ বিষয়ে আমার জানা নেই। আপনি রিপন শিকদারের সঙ্গে কথা বলেন।’ রিপন শিকদারের মোবাইল ফোনে একাধিকবার কল করলে তিনি রিসিভ করেননি।

অভিযোগ প্রসঙ্গে সমাজসেবা কার্যালয়ের কারিগরি প্রশিক্ষক খোরশেদ আনসার খান বাচ্চু বলেন, ‘এ বিষয়ে আমি এখন কোনো কথা বলতে পারব না। আপনি এক সপ্তাহ পর যোগাযোগ করেন। বয়স্ক ভাতার ওই কাজ নিয়ে আমি খুব ব্যস্ত আছি।’

উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা (অতিরিক্ত) পলাশ হোসাইন বলেন, ‘এ বিষয়ে খোঁজখবর নেওয়া হচ্ছে। যদি আমার অফিসের কেউ জড়িত থাকেন, তাঁর বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা দিপন দেবনাথ বলেন, ‘বয়স্ক ভাতার টাকা নিয়ে অনিয়মের বিষয়ে আমি শুনেছি। সমাজসেবা কার্যালয়ের মাধ্যমে সাত দিনের মধ্যে এ বিষয়ে রিপোর্ট দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।’ 

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত