Ajker Patrika

তথ্য লুকিয়ে তিন বেঞ্চে জামিন নেওয়ার চেষ্টা খুনের আসামির

এস এম নূর মোহাম্মদ, ঢাকা
তথ্য লুকিয়ে তিন বেঞ্চে জামিন নেওয়ার চেষ্টা খুনের আসামির

একটি হত্যা মামলার প্রধান আসামি তিনি। কারাগার থেকে হাইকোর্টে জামিন আবেদন করেছিলেন। হাইকোর্টের একটি বেঞ্চ তাঁকে জামিন না দিয়ে আবেদন মুলতবি রাখেন। সেই তথ্য গোপন করে তিনি হাইকোর্টের আরেকটি বেঞ্চে জামিন আবেদন করেন। কিন্তু সেই বেঞ্চে শুনানি করতে পারেননি। এরপর আগের দুই বেঞ্চে আবেদনের তথ্য গোপন রেখে আবেদন করেন হাইকোর্টের আরেকটি বেঞ্চে। সেই বেঞ্চ থেকে জামিন পানও তিনি। তবে শেষরক্ষা হয়নি। রাষ্ট্রপক্ষের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের চেম্বার আদালত তাঁর জামিন স্থগিত করেছেন।

ঘটনাটি ঘটিয়েছেন চট্টগ্রামের পটিয়ার মোহাম্মদ সোহেল হত্যা মামলার প্রধান আসামি মো. কাইছ। তাঁর এই চাতুরীকে আদালতের সঙ্গে ভয়ংকর প্রতারণা বলে অভিহিত করেছেন মামলায় রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল সারওয়ার হোসেন বাপ্পী। তিনি আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘একটি বেঞ্চে বিচারাধীন থাকা অবস্থায় অন্য বেঞ্চে যাওয়ার সুযোগ নেই। এর আগে এ রকম কয়েকটি ঘটনা ঘটেছিল। তখন সংশ্লিষ্ট আসামি ছয় মাস দেশের কোনো আদালতে জামিন চাইতে পারবেন না বলে আদেশ দিয়েছিলেন হাইকোর্ট। এখানেও এমন কিছু হতে পারে।’

ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল আরও বলেন, ‘এই মামলায় তদবিরকারক এবং আইনজীবীরা জড়িত থাকতে পারেন। আমরা আপিল বিভাগে লিভ টু আপিল করব। তখন তথ্য গোপনের বিষয়টি তুলে ধরব। আপিল বিভাগ আসামির জামিন বাতিল করে দিতে পারেন।’

মামলা ও আদালত সূত্র বলেছে, চট্টগ্রামের পটিয়ায় সোহেল খুন হন গত বছরের ২২ এপ্রিল। ওই মামলার প্রধান আসামি কাইছ হাইকোর্টে জামিন চেয়ে আবেদন করেছিলেন। বিচারপতি মো. মোস্তফা জামান ইসলাম ও বিচারপতি মো. আমিনুল ইসলামের বেঞ্চ শুনানি শেষে তাঁর জামিন প্রশ্নে গত ২৮ মে রুল জারি এবং তা শুনানির জন্য ২৭ জুলাই দিন ধার্য করেন। তবে ২০ জুলাই থেকে কয়েক দিন বিষয়টি কার্যতালিকায় আসে। অবশেষে ২৭ জুলাই নির্ধারিত দিনে শুনানি শেষে জামিন না দিয়ে দুই মাসের জন্য আবেদন মুলতবি রাখেন আদালত।

এদিকে বিচারপতি মো. মোস্তফা জামান ইসলাম ও বিচারপতি মো. আমিনুল ইসলামের বেঞ্চে বিচারাধীন থাকার তথ্য গোপন করে হাইকোর্টের অপর এক বেঞ্চে জামিন চেয়ে আবেদন করেন আসামি কাইছ। বিচারপতি এ এস এম আব্দুল মোবিন ও বিচারপতি মো. আখতারুজ্জামানের বেঞ্চে বিষয়টি শুনানির জন্য ১০ আগস্ট ও ১৭ আগস্ট কার্যতালিকায় আসে। তবে ওই বেঞ্চে শুনানি করতে না পেরে পরে দুই কোর্টে আবেদনের তথ্য গোপন করে আরও একটি বেঞ্চে জামিন চেয়ে আবেদন করেন কাইছ। আবেদনটি বিচারপতি মো. রুহুল কুদ্দুস ও বিচারপতি আশীষ রঞ্জন দাসের বেঞ্চের কার্যতালিকায় শুনানির জন্য আসে ২৭ আগস্ট। অবকাশ শুরুর আগে শেষ কার্যদিবসে গত ৩১ আগস্ট এই বেঞ্চ কাইছকে রুল নিষ্পত্তি করে জামিন দেন। অথচ রুল দিয়েছেন অন্য একটি বেঞ্চ।

ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, তথ্য গোপন করে তিন বেঞ্চে জামিনচেষ্টার বিষয়টি নজরে আসার পর ওই জামিন স্থগিত চেয়ে আপিল বিভাগের চেম্বার আদালতে আবেদন করে রাষ্ট্রপক্ষ। শুনানি শেষে চেম্বার বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম গত মঙ্গলবার হাইকোর্টের দেওয়া জামিন স্থগিত করেন। 

হত্যার ঘটনা যেভাবে
মামলার এজাহার, স্থানীয়, পুলিশ ও প্রত্যক্ষদর্শী সূত্র বলেছে, ২০২১ সালের ২৬ ডিসেম্বর চতুর্থ ধাপের ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। এই নির্বাচন ঘিরে চট্টগ্রামের পটিয়ার কাশিয়াইশ ইউনিয়নে পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। এর জেরে গত বছরের ২২ এপ্রিল উপজেলার বুধপুরা বাজারে স্থানীয় মো. শরিফ নামের এক যুবককে আবুল কাশেম চেয়ারম্যানের লোকজন মারধর করে। সেদিন রাতেই চেয়ারম্যানের ভাই মোহাম্মদ সোহেলকে ছুরিকাঘাত করে প্রতিপক্ষের লোকজন। গুরুতর আহত অবস্থায় চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিলে চিকিৎসক তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন।

সূত্র আরও বলেছে, ঘটনার পরদিন চেয়ারম্যান আবুল কাশেম বাদী হয়ে কাইছ, মো. শরীফ, মো. মনছুর, মো. সুমন, মো. জাহাঙ্গীর আলম, জসিমুল আনোয়ার খান, মো. আজগর, কায়সার উদ্দিন জনির নামোল্লেখসহ ১০-১২ জনকে অজ্ঞাত আসামি করে মামলা করেন। মামলাটি তদন্তের শেষ দিকে তার দায়িত্বভার পুলিশের কাছ থেকে পিবিআইয়ের কাছে হস্তান্তর করা হয়। পিবিআই তদন্ত শেষে অভিযোগপত্র দেয়। এতে প্রধান আসামি কাইছকে মামলা থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়। তবে আদালত এফআইআরএ থাকা ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী সাক্ষী, আসামি শরীফের স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি এবং ময়নাতদন্ত প্রতিবেদনসহ সবকিছু বিবেচনা করে পিবিআইয়ের প্রতিবেদন প্রত্যাখ্যান করে মামলাটি সরাসরি আমলে নেন।

আদালত বলেন, তদন্তকারী কর্মকর্তা তাঁর তদন্ত প্রতিবেদনে আসামি মো. কাইছ ঘটনাস্থলে ছিলেন না বলে দাবি করেছেন। অথচ আসামি মো. শরীফ ১৬৪ ধারার জবানবন্দিতে বলেছেন, তিনি, কাইছ এবং মো. রিয়াদ ধারালো ছোরা দিয়ে উপর্যুপরি সোহেল চৌধুরীকে আঘাত করেছেন। ফৌজদারি কার্যবিধির ১৬১ ধারার জবানবন্দিতেও সাক্ষীরা আসামি কাইছের বিরুদ্ধে সোহেল চৌধুরীকে ধারালো ছুরি দিয়ে উপর্যুপরি আঘাত করার বিষয়টি সুনির্দিষ্ট করে বলেছেন। ফলে ১ নম্বর আসামি কাইছের বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ থাকায় তাঁকে অব্যাহতি দেওয়ার কোনো যৌক্তিক কারণ পরিলক্ষিত হয় না।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

মেঘালয়ে হানিমুনের সময় ভাড়াটে খুনি দিয়ে স্বামীকে হত্যা, উত্তর প্রদেশে নববধূর আত্মসমর্পণ

ভিকারুননিসার ছাত্রী মেয়েকে সাঁতার শেখাচ্ছিলেন বাবা, ডুবে প্রাণ গেল দুজনেরই

মেঘালয়ে মধুচন্দ্রিমায় খুন—কীভাবে এক নববধূ হয়ে উঠলেন হত্যাকারী

হাসিনার মতো মাফিয়াকে বিতাড়িত করেছি, এখন আমরাই বড় মাফিয়া: এনসিপি নেতা জুবাইরুল

লন্ডনে সাক্ষাতে ইউনূসকে ফেব্রুয়ারির মধ্যে নির্বাচনের প্রস্তাব দিতে পারেন তারেক

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত