Ajker Patrika

করোনার শঙ্কা বাড়িয়ে দিচ্ছে উৎসবের ভোট

মারুফ কিবরিয়া, ঢাকা
আপডেট : ১২ জানুয়ারি ২০২২, ০৭: ৪৫
করোনার শঙ্কা বাড়িয়ে  দিচ্ছে উৎসবের ভোট

দেশের করোনা ভাইরাস সংক্রমণ পরিস্থিতি স্থিতিশীল। হাসপাতালে রোগীর ভিড় নেই। অনেক হাসপাতালে করোনা ইউনিট রোগীশূন্য। অন্য যেকোনো সময়ের চেয়ে সংক্রমণ অনেক কম। এমন সুসময়ের মধ্যেই ডিসেম্বর-জানুয়ারি মাস সামনে রেখে একগুচ্ছ ভোটের তফসিল ঘোষণা করে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। সে অনুযায়ী ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চতুর্থ ও পঞ্চম ধাপের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়ে গেল। বাকি আছে নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন (নাসিক), টাঙ্গাইল-৭ আসনের উপনির্বাচন, কয়েকটি পৌরসভা ও ষষ্ঠ ধাপের ইউপি ভোট। চলতি মাসের শেষ দিন অবধি এসব নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে।

তাই নির্বাচন সামনে রেখে জোর প্রচারে নেমেছেন প্রার্থীরা। বিশেষ করে নাসিক নির্বাচনই দেশজুড়ে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে উঠে এসেছে। নারায়ণগঞ্জের এই ভোটের আমেজ ছড়িয়ে পড়েছে সর্বত্র। কিন্তু এই উৎসবমুখর পরিস্থিতিতেই দেশে হঠাৎ করেই করোনার সংক্রমণ ঊর্ধ্বমুখী। শনাক্তের পাশাপাশি বাড়ছে শনাক্তের হারও। করোনার এই ভয়াবহতার কারণে গত বছর ইউপি নির্বাচনের দিনক্ষণ পিছিয়েছে। এখনো সব ধাপের নির্বাচন শেষ করতে পারেনি ইসি। এমতাবস্থায় সরকার করোনা প্রতিরোধে বিধিনিষেধ আরোপ করেছে। সভা-সমাবেশসহ জনসমাগম হয় এমন কার্যক্রম বন্ধ রাখতে বলা হয়েছে।

তবে সুনির্দিষ্ট করে নির্বাচনী প্রচারের বিধিনিষেধে কিছু বলা হয়নি। এমনকি নির্বাচন কমিশনও যথাসময়ে ভোট গ্রহণের ব্যাপারে ভাবছে। সাংবিধানিক এই প্রতিষ্ঠানটি বলছে, যেহেতু নাসিক ভোটের প্রচারে ১৪ জানুয়ারি শেষ হয়ে যাচ্ছে সে হিসেবে ১৩ জানুয়ারি থেকে বিধিনিষেধ হলে প্রচারে তেমন প্রভাব পড়বে না। আর ১৬ জানুয়ারি স্বাস্থ্যবিধি মেনে ভোট গ্রহণের বিষয়ে আগেই নির্দেশনা দেওয়া রয়েছে। তাই এ মুহূর্তে ভোট বন্ধ করার মতো কোনো কারণ নেই বলেও জানিয়েছেন ইসির অতিরিক্ত সচিব অশোক কুমার দেবনাথ।

বিধিনিষেধে সভা-সমাবেশ এমনকি রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত হলেও নির্বাচনী কর্মকাণ্ড চলমান রাখার বিষয়টিকে ভালোভাবে দেখছেন না স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা। জাতীয় কারিগরি পরামর্শক কমিটির সদস্য অধ্যাপক ডা. নজরুল ইসলাম বলেন, সরকারের বিধিনিষেধে বলা হয়েছে সব রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড বন্ধ রাখতে হবে। নির্বাচন কী রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডের বাইরে? যদি নির্বাচন চলমান থাকে তাহলে বুঝতে হবে সরকারের কথা কেউ শুনছে না। এ ক্ষেত্রে করণীয় কী, জানতে চাইলে এই স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ বলেন, এখানে তো কারও কিছু করার নেই। যাঁরা বিধিনিষেধ আরোপ করেছে তাঁরাই ভালো বলতে পারবেন।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে স্থানীয় সরকার বিভাগের সিনিয়র সচিব হেলালুদ্দীন আহমদ আজকের পত্রিকাকে বলেন, এসব ব্যাপারে নির্বাচন কমিশন ‘সোল এজেন্ট’। তারাই যা সিদ্ধান্ত নেওয়ার নেবে। তাঁদের কিছু করণীয় নেই।

নারায়ণগঞ্জে সিইসি
নাসিক নির্বাচনে নিয়োগ পাওয়া প্রিসাইডিং কর্মকর্তাদের সঙ্গে মতবিনিময় ও দিকনির্দেশনা দিতে আজ বুধবার নারায়ণগঞ্জে অবস্থান করবেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কে এম নূরুল হুদা। গতকালই তিনি ঢাকা ছেড়েছেন বলে ইসির জনসংযোগ বিভাগ জানিয়েছে। নির্বাচনসংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা ছাড়া প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সঙ্গেও বৈঠকে বসবেন তিনি।

করোনা আতঙ্ক নিয়ে যা বলছেন প্রার্থীরা
নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন নির্বাচন ঘিরে জমজমাট প্রচার চলছে শহরজুড়ে। করোনার জন্য বিধিনিষেধ দিলেও এখন ভোটে কোনো প্রভাব পড়বে না বলেই দাবি করছেন প্রার্থীরা।

নাসিক নির্বাচনে লড়ছেন আওয়ামী লীগ মনোনীত মেয়র প্রার্থী সেলিনা হায়াৎ আইভী। এ ব্যাপারে তাঁর নির্বাচনী প্রচারবিষয়ক সমন্বয়ক আদিনাথ বসু আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘নির্বাচন সফল করতে গেলে জনসমাগম ছাড়া সম্ভব নয়। তবে আমরা চেষ্টা করছি স্বাস্থ্যবিধি মেনে প্রচার চালাতে। বিশেষ করে মাস্ক ব্যবহার নিশ্চিত করছি সভা-সমাবেশে। আর করোনার এই বিধিনিষেধ ভোটে কোনো প্রভাব ফেলবে না বলেই আমার বিশ্বাস। কারণ, ভোটারদের আগ্রহ রয়েছে এই নির্বাচন ঘিরে।’

একই সুরে কথা বললেন আরেক প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী ইসলামী আন্দোলনের মাসুম বিল্লাহ। তিনি বলেন, ‘বিধিনিষেধ থাকলেও নির্বাচন কমিশন এখনো আমাদের কোনো নির্দেশনা দেয়নি। তবে মাস্ক ব্যবহার করে স্বাস্থ্যবিধি মেনে নির্বাচনী প্রচার আমরা শুরু থেকেই চালিয়ে যাচ্ছি। আশা করি, ভোটের দিনও সবাই তা মেনে চলবেন।’

কল্যাণ পার্টির প্রার্থী মো. রাশেদ ফেরদৌস বলেন, তাঁরা স্বাস্থ্যবিধি মেনেই ভোটের প্রচার চালাচ্ছেন। ভোটারদের মধ্যেও এ নিয়ে কোনো শঙ্কা নেই।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত