Ajker Patrika

‘হামরা তো ত্রাণ চাই না, চাই শুধু বেড়িবাঁধ’

গঙ্গাচড়া (রংপুর) প্রতিনিধি
‘হামরা তো ত্রাণ চাই না, চাই শুধু বেড়িবাঁধ’

‘বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা থেকে নদীতে পানি বাড়া শুরু হয়। গরু-ছাগল নিয়া রাস্তার ধারে রাত কাটাইছি। এখন তিনটা বাজে। শুধু মুড়ি খেয়া আছি। আগুন জ্বালার কোনো উপায় নাই। বাড়িভর্তি পানি, কোনোটে বের হওয়ারও জায়গা নাই। হামরা তো সরকারের কাছে ত্রাণ চাই না। শুধু একটাই দাবি জানাই, তিস্তা নদীত হামাক শুধু একটা শক্ত বেড়িবাঁধ যেন দিয়ে দেয়। তাহলে আর তিস্তাপাড়ে বন্যা থাকবার নেয়।’

গতকাল শুক্রবার বিকেলে কথাগুলো বলছিলেন রংপুরের গঙ্গাচড়ার কোলকোন্দ ইউনিয়নের বিনবিনা এলাকার মোফাজ্জল হোসেন।

তিস্তা নদী আবার ফুঁসে ওঠায় গঙ্গাচড়ার ছয় ইউনিয়নের প্রায় চার হাজার পরিবার পানিবন্দী হয়ে পড়েছে এবং তলিয়ে গেছে আমন ধানের খেত। পানিবন্দী পরিবারগুলো গবাদিপশু নিয়ে উঁচু স্থানে আশ্রয় নিয়েছে।

পানি উন্নয়ন বোর্ডের তথ্যমতে, গত বৃহস্পতিবার সকাল ৯টার দিকে তিস্তার ডালিয়া পয়েন্টে পানি বিপৎসীমার ১০ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল। আর বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে ১১টায় ৩২ সেন্টিমিটার ওপরে ছিল।

তবে বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র জানিয়েছে, ভারী বৃষ্টিপাত ও উজানের পানি বৃদ্ধির প্রবণতা কিছুটা কমে আসায় ডালিয়া পয়েন্টে পানি আগামী ১২ ঘণ্টা পর্যন্ত হ্রাস পেতে পারে। তবে পরবর্তী ২৪ থেকে ৪৮ ঘণ্টায় তিস্তার উজানে পুনরায় মাঝারি থেকে ভারী বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা আছে। ফলে পানি পুনরায় বৃদ্ধি এবং বিপৎসীমা অতিক্রম করতে পারে।

গতকাল শুক্রবার উপজেলার বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, বন্যাকবলিত লোকজন উঁচু স্থান, বাঁধ, আশ্রয়কেন্দ্রসহ আত্মীয়স্বজনের বাড়িতে ঠাঁই নিয়েছেন।

লক্ষ্মীটারী ইউনিয়নের বাগেরহাট আবাসন প্রকল্পের বাসিন্দা মনোয়ারা বেগম জানান, বৃহস্পতিবার সারা রাত বাচ্চাদের নিয়ে জেগে কাটিয়েছেন। শুক্রবার বেলা ২টা পর্যন্ত কোনো খাবারের ব্যবস্থা করতে পারেননি।

মনোয়ারা ক্ষুব্ধ কণ্ঠে বলেন, ‘নদীটা যদি দুই ধারে বান্দি দেয় তাহলে কি আর হামাকগুলাক পানিত ডুবে থাকা লাগে? পানিত ডুবি থাকলে সরকারি লোকজন আসি ২-৩ কেজি চাল দিয়া যায়। হামরা কি সরকারের কাছে চাল চাই? হামরা কামাই করি খাবার পাই। হামারগুলার একটায় দাবি, শংকরদহ থাকি বিনবিনা এলাকা পর্যন্ত একটা বেড়িবাঁধ। তাহলে হামরাগুলা বাচ্চা-কাচ্চা নিয়া শান্তিতে থাকনো হয়।’

একই এলাকার বৃদ্ধ আসিমুদ্দিন বলেন, ‘এত কষ্ট করি ফসল আবাদ করি, নদী ভাসে নিয়া যায়। হামাকগুলাক দয়া করি নদীটা বান্দি দিলে হয়। তাহলে হামারগুলার কষ্ট থাকে না। হামাকগুলাক একমাত্র নদী ফকির বানাইছে।’

এ বিষয়ে কোলকোন্দ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আব্দুর রউফ বলেন, ‘আমার ইউনিয়নের প্রায় ৫০০ পরিবার পানিবন্দী হয়ে পড়েছে। আমরা পানি উন্নয়ন বোর্ডের লোকজনকে বারবার বলেছি তিস্তা নদীর ডান তীরে একটি শক্ত বাঁধ নির্মাণের জন্য। তাঁরা আমাদের কোনো কথা রাখেননি। বন্যা এলে শুধু আশ্বাস দিয়ে যান কিন্তু কাজের কাজ কিছুই করেন না।’লক্ষ্মীটারীর ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুল্লাহ আল হাদি জানান, তাঁর এলাকায় প্রায় ৭০০ পরিবার পানিবন্দী হয়ে পড়েছে। তলিয়ে গেছে আগাম জাতের আমন ধানের খেত। আগামী দুই সপ্তাহের মধ্যে যে ধান ঘরে তোলা যেত সে ধান এখন পানির নিচে। বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে।

যোগাযোগ করা হলে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এরশাদ উদ্দিন বলেন, ‘আমরা বন্যাকবলিত এলাকা পরিদর্শন করেছি। স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের কাছে বন্যাকবলিত পরিবারগুলোর তথ্য চাওয়া হয়েছে। তথ্য এলেই প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

মামলার আসামিসহ বিএসইসির ২২ কর্মকর্তাকে বরখাস্তের সিদ্ধান্ত

সরকারি টাকায় ব্যক্তিগত সড়ক কার্পেটিং বিচারপতি খিজির হায়াতের, প্রমাণ পেয়েছে দুদক

অভিনেতা সিদ্দিককে মারধর করে থানায় সোপর্দ, ছিঁড়ে ফেলা হয় পরনের পোশাক

ঐকমত্য কমিশনের সদস্যদের তেলের বরাদ্দ ২৫০ থেকে বেড়ে ৫০০ লিটার

বগুড়ায় ছাত্রদল নেতার ওপর হামলা, পাঁচ নেতা-কর্মীকে শোকজ

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত