পরপর হত্যাকাণ্ডে আতঙ্ক

যশোরে খুন-জখমের ঘটনা বেড়েই চলছে। অধিকাংশ ঘটনার পর পুলিশ অপরাধীদের গ্রেপ্তারও করেছে। তবু থামছে না এসব অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা। একের পর এক খুনের ঘটনায় উৎকণ্ঠা বাড়ছে সাধারণ মানুষের মধ্যে। বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই দেখা যাচ্ছে, তুচ্ছ ঘটনা বা এলাকাভিত্তিক আধিপত্য বিস্তারের দ্বন্দ্বে হত্যাকাণ্ডগুলো ঘটছে।

গত কয়েক দিনের ব্যবধানে যশোর শহরের খালধার রোড, খোলাডাঙ্গা, সুজলপুর, শংকরপুর চাতাল মোড় চৌগাছার কপোতাক্ষ নদ এলাকায় ৫টি খুনের ঘটনা ঘটেছে। যশোর পৌরসভার কাউন্সিলর আসাদুজ্জমান বাবুলসহ ৫ জনকে কুপিয়ে হত্যার চেষ্টা করা হয়েছে। যশোর সদর উপজেলায় চিহ্নিত প্রতিপক্ষ ও পরিচিত জনদের হাতে খুনের ঘটনাগুলো ঘটেছে বেশি। চৌগাছার কিশোর চয়নের খুনও সঙ্গীদের হাতেই ঘটেছে বলে পুলিশের দাবি। হত্যাকাণ্ড বা হামলা চালিয়ে সহজেই সরে পড়া যাবে ধারণা থেকেই অপরাধীরা এসব ঘটনা ঘটিয়ে চলেছে বলে স্থানীয় বাসিন্দা ও নিহতদের স্বজনরা বলছেন।

সর্বশেষ গত সোমবার সকালে চৌগাছা শহরের কপোতাক্ষ নদ থেকে উদ্ধার করা হয় মিরাজ হোসেন চয়ন (১৭) নামে দশম শ্রেণির এক শিক্ষার্থীর বস্তাবন্দী লাশ। এ ঘটনায় প্রধান সন্দেহভাজন রাজুসহ বেশ কয়েকজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন। তবে আনুষ্ঠানিক বক্তব্য পাওয়া যায়নি সংস্থাটির।

এর আগের রাতেই একই উপজেলার দক্ষিণ কয়ারপাড়ায় একটি পুকুরপাড় থেকে মুকুল (২২) নামে এক যুবককে জখম অবস্থায় উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। তিনি যশোরের একটি বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। গত বছর বোরো মৌসুমে ধানের খেতে মুকুলের বড়ভাই বিপুলের জবাই করা লাশ উদ্ধার করে পুলিশ।

গত ৯ জুন রাতে যশোর শহরের খোলাডাঙ্গায় খুন হয় ওই এলাকার রেল কলোনির আবদুল মান্নানের ছেলে লাভলু (৪৫)। আফিল গ্রুপের কর্মচারী লাভলুর লাশ ১০ জুন সকালে খোলাডাঙ্গা কলোনীপাড়া রেললাইনের পাশ থেকে উদ্ধার করে পুলিশ। পরে পুলিশি তদন্তে প্রমাণিত হয় চোরাকারবারিদের কাছ থেকে ছিনতাই করা ৬-৭ কেজি সোনা ভাগাভাগিকে কেন্দ্র করে গুলি করে হত্যা করা হয় লাভলুকে।

গত ৭ জুন সকাল ৬টায় যশোর শহরের খালধার রোডে আমিনিয়া মাদ্রাসা মোড়ে প্রকাশ্যে কুপিয়ে হত্যা করা হয় ওই এলাকার যুবক অনুরাগ ইসলাম অপুকে। অপু একটি হত্যাসহ সাত মামলার আসামি ছিল। ওই দিন বাড়ি থেকে রিকশায় করে শহরের বড় মাছ বাজারে যাচ্ছিলেন অপু। পথিমধ্যে রিকশার গতিরোধ করে ৫-৬ জনের চিহ্নিত দুর্বৃত্ত দল অপুকে কুপিয়ে হত্যা করে।

গত ২৯ মে রাত ৮টার দিকে যশোর শহরের শংকরপুরের চাতাল মোড়ের সোলাইমান হোসেনের ছেলে আফজাল হোসেনকে (২৮) কুপিয়ে হত্যা করে দুর্বৃত্তরা। এ সময় তাঁকে রক্ষায় এগিয়ে আসলে ছোট ভাই উজ্জ্বলকেও হত্যার চেষ্টা করে তাঁরা। এ ঘটনার পরদিন রাত ৮টার দিকে আফজালকে দাফন করে ফেরার পথে আফজালের অনুসারীরা কুপিয়ে হত্যার চেষ্টা করে যশোর পৌরসভার ৯ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর অ্যাডভোকেট আসাদুজ্জমান বাবুলকে। এসব ঘটনায় প্রশাসন তৎপরতা দেখালেও কার্যত কেউ আটক হয়নি।

গত ২১ মে সকালে কিশোর সন্ত্রাসীদের হামলায় খুন হন যশোর সদর উপজেলার সুজলপুর গ্রামের খোরশেদ গাজীর ছেলে ইরিয়ান (২২)। এ ঘটনায় তাঁর সহোদরকেও হত্যার উদ্দেশ্যে ধাওয়া করে ওই সন্ত্রাসী চক্র। ইরিয়ান হত্যার বিচারের দাবিতে মানববন্ধনও হয়েছে। এ ছাড়া গত কয়েক মাসে কলেজছাত্র, স্কুলছাত্র, ইজিবাইক চালক, দোকানি ও রাজনৈতিক ঘরানার যুবক ও তৃতীয় লিঙ্গের একজন খুন হন।

খোঁজ খবর নিয়ে দেখা যায় হত্যাকাণ্ডগুলো ঘটেছে এলাকায় আধিপত্য বিস্তার ও তুচ্ছ স্বার্থ নিয়ে। উঠতি বয়সী অস্ত্রধারীরা একের পর এক ঘটনা ঘটিয়েই চলেছে। এ নিয়ে যশোর জেলার আইনশৃঙ্খলা মিটিংয়েও উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়েছে। ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য সিদ্ধান্ত হয়েছে। আটক হয়েছে বেশ কিছু কিশোর ও কিশোরী অপরাধী।

দুর্ঘটনা ঘটে যাওয়া পরিবারের ভুক্তভোগী ও সংশ্লিষ্ট এলাকার বাসিন্দাদের দাবি ঘাতকেরা এলাকারই বাসিন্দা। জোরালো পুলিশি টহলের পাশাপাশি উঠতি সন্ত্রাসী ও অস্ত্রধারীদের নতুন তালিকা করে অভিযান চালিয়ে আইনি ব্যবস্থা নিলে অঘটন কমে আসবে বলে মন্তব্য তাঁদের।

এ বিষয়ে যশোর কোতোয়ালি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) তাজুল ইসলাম সাংবাদিকদের জানান, হত্যাকাণ্ডগুলো ঘটে যাচ্ছে বিচ্ছিন্নভাবে। পুলিশের চোখ ফাঁকি দিয়ে অপরাধী চক্র অপরাধ ঘটাচ্ছে। পুলিশি টহল জোরদার রয়েছে। এ ছাড়া হত্যাকাণ্ডগুলো যত্নসহকারে তদন্ত হয়েছে এবং হচ্ছে। হত্যায় জড়িতরা আত্মগোপনে গেলেও সোর্স লাগিয়ে আটকের চেষ্টা চলছে।

অন্যদিকে চৌগাছা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সাইফুল ইসলাম সবুজ বলেন, চয়ন হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় প্রধান সন্দেহভাজনকে গ্রেপ্তার করেছে পিবিআই। এ ঘটনায় চৌগাছা থানায় মামলা হয়েছে। এ বিষয়ে পিবিআই বিস্তারিত ব্রিফিং দিবে। বাকি ঘটনাগুলোর তদন্তও চলছে।