
রাজপথে রাজনৈতিক শক্তি পরীক্ষার পরিস্থিতি অনেকটাই যেন রবিঠাকুরের কবিতার সেই লাইন দুটির মতো: ‘যারে তুমি নীচে ফেল সে তোমারে বাঁধিবে যে নীচে/ পশ্চাতে রেখেছ যারে সে তোমারে পশ্চাতে টানিছে।’
বড় দুটি রাজনৈতিক দল একটি অপরটিকে নিচে ফেলার কিংবা পশ্চাতে বা পেছনে ফেলার চেষ্টা করছে। বিএনপি চেষ্টা করছে আওয়ামী লীগকে ক্ষমতা থেকে টেনে নামাতে আর আওয়ামী লীগ ও সরকার চেষ্টা করছে বিএনপিকে পেছনে ফেলে টপকে সামনে যেতে।
রাজপথে শক্তির পরীক্ষা দিতে গত ২৮ অক্টোবর মুখোমুখি অবস্থানে গিয়ে বিএনপি কি এগিয়ে যেতে পেরেছে? নাকি বিএনপিকে কোণঠাসা করার ক্ষেত্রে আওয়ামী লীগ তথা সরকার এগিয়ে গেছে? রাজপথে সমস্যা সমাধানের কৌশলের যথার্থতা নিয়েও প্রশ্ন উঠছে।
বিএনপি ও তার মিত্ররা ২৮ অক্টোবর শান্তিপূর্ণ সমাবেশ করার মাধ্যমে সরকার পতনের এক দফা আন্দোলনের মহাযাত্রার যে কথা বলেছিল, তা অর্জনে তারা কতটুকু সফল হলো? রাজনৈতিক বিশ্লেষকেরা মনে করছেন, এক বছর ধরে সারা দেশে বিভিন্ন শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি পালনের মাধ্যমে বিএনপি সংগঠনের শক্তি যতটা সংহত করতে পেরেছিল, ২৮ অক্টোবর তা অনেকটাই আবার তছনছ হয়ে গেছে।
তাই ২৮ অক্টোবর বিএনপি এক পা এগিয়ে দুই পা পিছিয়েছে বলেই অনেকে মনে করছেন। ২৮ অক্টোবর বিএনপি বড় জমায়েত করতে সক্ষম হলেও শেষপর্যন্ত পরিস্থিতি তাদের নিয়ন্ত্রণে থাকেনি এবং মহাসমাবেশও পণ্ড হয়ে গেছে। এর বড় কারণ, এত বড় জমায়েত সুশৃঙ্খল রাখার জন্য ছিল না পর্যাপ্ত স্বেচ্ছাসেবক। যাঁরা জমায়েত হয়েছিলেন, তাঁদের কাছে করণীয় সম্পর্কে কোনো সুস্পষ্ট বার্তা ছিল না। ঢাকার বাইরে থেকে আসা নেতা-কর্মীরা গণমাধ্যমের কাছে বলেছেন, ‘যা হওয়ার এবারই হবে।’ ফলে তাঁদের অনেকেরই মনোভাব ছিল বেপরোয়া।
ওই দিন রাজধানীর বেশ কয়েকটি এলাকায় যে হিংসাত্মক ঘটনা ঘটেছে, তার জন্য বিএনপি সরকারের ওপর দোষারোপ করলেও গণমাধ্যমে প্রকাশিত সব তথ্য বিশ্লেষণ করলে অনেকের কাছেই এটা স্পষ্ট যে পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে ওঠার প্রাথমিকভাবে দায় বিএনপির। সকাল থেকে নয়াপল্টন এলাকায় বিএনপির কর্মী-সমর্থকেরা মিছিল নিয়ে জমায়েত হতে থাকেন।
রাজপথে বিএনপিকে ‘পাহারা’ দেওয়ার যে কথা আওয়ামী লীগ বলেছিল, বাস্তবে তা দেখা যায়নি। বিএনপির মিছিলে কেউ কোথাও বাধা দেয়নি। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী সতর্ক অবস্থানে থাকলেও সমাবেশে যোগদানকারীদের বাধাদানের কোনো ঘটনা ঘটেনি।
পরিস্থিতি হঠাৎ বদলে যায় দুপুর সোয়া ১২টার দিকে। মগবাজারের দিক থেকে আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মীদের বহনকারী একটি বাস ও দুটি পিকআপ কাকরাইল মসজিদ ও মৎস্য ভবন হয়ে বায়তুল মোকাররম দক্ষিণ গেটের দিকে যাওয়ার জন্য এগিয়ে যেতে থাকে।
প্রধান বিচারপতির সরকারি বাসভবন ও বিপরীত পাশের মসজিদের সামনে পৌঁছায় বাসটি। তখন পেছন থেকে বিএনপির একটি মিছিল নয়াপল্টনের দিকে যাওয়ার জন্য এগিয়ে আসছিল। বাসের ভেতর থেকে আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা দলীয় স্লোগান দেন। তখনই বিএনপির নেতা-কর্মীরা হঠাৎ হামলা চালান। মূলত এই হামলা থেকেই শনিবার সংঘর্ষ শুরু হয় এবং এর রেশ নগরীর বিভিন্ন স্থানে ছড়িয়ে পড়ে।
প্রত্যক্ষদর্শী ও নিরাপত্তায় দায়িত্বরত পুলিশ সদস্যদের মতে, বিএনপির নেতা-কর্মীরা বাসে হামলা চালালে বাস ও পিকআপ থেকে আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা দ্রুত নেমে দৌড়ে পালাতে থাকেন। বিএনপির নেতা-কর্মীরা তাঁদের হাতে থাকা লাঠিসোঁটা নিয়ে আওয়ামী লীগের কর্মীদের ধাওয়া করেন। এ সময় সেখানকার পরিস্থিতি পাল্টে যায়। বিএনপির নেতা-কর্মীদের মধ্যে চরম উত্তেজনা দেখা দেয়। সড়কের একপাশে প্রধান বিচারপতির বাসভবন ও অপর পাশে জাজেস কমপ্লেক্স থাকায় সেখানে উপস্থিত পুলিশ সদস্যরা এগিয়ে এসে বিএনপির নেতা-কর্মীদের সরিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করেন।
এতে বিএনপির নেতা-কর্মীরা আরও উত্তেজিত হয়ে ওঠেন এবং পুলিশকে লক্ষ্য করে ইটপাটকেল নিক্ষেপ শুরু করেন। বিএনপির নেতা-কর্মীরা রাস্তার আইল্যান্ডের গাছের ডাল ভেঙে এবং হাতে থাকা লাঠিসোঁটা নিয়ে পুলিশের ওপর চড়াও হন। একপর্যায়ে তাঁরা প্রধান বিচারপতির বাসভবনে হামলা চালান। বাসভবনের ভেতরে ইটপাটকেল নিক্ষেপ ও নামফলক ভেঙে ফেলার চেষ্টা করেন। প্রধান বিচারপতির বাড়িতে হামলার খবর পেয়ে দাঙ্গা পুলিশ ঘটনাস্থলে আসে এবং হামলাকারীদের ছত্রভঙ্গ করতে লাঠিচার্জ ও টিয়ার গ্যাস নিক্ষেপ করে। একপর্যায়ে বিএনপির সমর্থকেরা কাকরাইল ট্রাফিক পুলিশ বক্সে অগ্নিসংযোগ করেন।
পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টাকালে পুলিশ ও বিএনপির নেতা-কর্মীদের মধ্যে পাল্টাপাল্টি ধাওয়া চলে। পুলিশ তাঁদের ছত্রভঙ্গ করতে লাগাতার কাঁদানে গ্যাসের শেল নিক্ষেপে করতে থাকে। এ সময় বিএনপিকর্মীরা দুটি মোটরসাইকেলে অগ্নিসংযোগ করেন।
প্রধান বিচারপতির বাসভবনে হামলার রেশ অল্প সময়ের মধ্যেই কাকরাইল, শান্তিনগর, সিদ্ধেশ্বরী লেন, মালিবাগ, বিজয়নগর, পুরানা পল্টন, আরামবাগ, ফকিরাপুলসহ বিভিন্ন স্থানে ছড়িয়ে পড়ে। বিএনপির নেতা-কর্মীদের সঙ্গে পুলিশের দফায় দফায় পাল্টাপাল্টি ধাওয়া, ইটপাটকেল নিক্ষেপ ও সংঘর্ষ চলে দিনভর।
প্রথম আলোর সম্পাদকীয় সহকারী রাফসান গালিব সরেজমিনে পরিস্থিতি দেখে লিখেছেন:
‘শান্তিনগর মোড় ও আশপাশের অলিগলি—সবখানেই বিএনপির কর্মী। সবার মধ্যে মারমুখী মনোভাব, অনেকের হাতে লাঠিসোঁটা। রাস্তায় জায়গায় জায়গায় আগুন জ্বলছে, আর তাকে ঘিরে চলছে স্লোগান। এসবের মাঝখানেই মোড়ের সঙ্গে বেইলি রোডের মুখে আল মদিনা প্যালেস, যেটিকে অনেকে বলছিলেন, বিএফসি ভবন, সেটির নিচে একদল পুলিশ শান্তিপূর্ণভাবে দাঁড়িয়ে আছে।...
রাস্তার পাশে একজন লোককে দেখলাম আরেকজনের মাথায় কাফনের সাদা কাপড় পরিয়ে দিতে। দুজনেরই পঞ্চাশের কমবেশি বয়স। জানালেন, নতুন বাজার থেকে এসেছেন। দলের কোনো পদ-পদবি জানাতে চাইলেন না। জিজ্ঞাসা করলাম, সাদা কাফন পরছেন, আজকে কি আপনারা রাস্তায় থেকে যাবেন? তাঁরা জানালেন, ঢাকা ছেড়ে তাঁরা নড়বেন না।...
শান্তিনগর মোড়ে যেতেই দেখলাম, বিএনপির কর্মীরা সড়কের ওপরে হাতের কাছে যা পাচ্ছেন, তা-ই ভাঙচুর করছেন; বিশেষ করে ট্রাফিক লাইট। রাস্তার পাশে ভবনের ওপর থেকে যাঁরাই ভিডিও করছেন বা ছবি তুলছেন, তাঁদের দিকে তেড়ে গিয়ে ইটপাটকেল মারার ভয় দেখাচ্ছেন।...
এরপর আরেক তরুণের সঙ্গে কথা হলো, কক্সবাজার থেকে এসেছেন। বললেন, ৭০-৮০টি মাইক্রোবাসে করে সকাল ৬টার দিকে তাঁরা ঢাকায় ঢুকেছেন। পথে কোথাও বাধার মুখে পড়েননি। যদিও সংবাদমাধ্যমগুলো বলছে, ঢাকায় প্রবেশ করতে গিয়ে সব গাড়িকে তল্লাশির মুখে পড়তে হয়েছে।...
সোজা রাজমণি মোড়ের দিকে তাকিয়ে গোটা রাস্তা ফাঁকা দেখতে পেলাম। রাস্তাজুড়ে ইটপাটকেল পড়ে আছে। সবখানে সংঘর্ষের চিহ্ন। পুলিশ বক্স আগুনে জ্বালানো। সড়ক বিভাজকের গাছ ছিন্নভিন্ন।...
পুলিশের এক কর্মকর্তার সঙ্গে কথা হলো। তিনি জানান, বিএনপির কাছ থেকে তাঁরা এমন কর্মকাণ্ড আশা করেননি। বিএনপি বলেছিল, সমাবেশ হবে শান্তিপূর্ণ। সেটি থাকল না। সেখানেই জানতে পারলাম, বিএনপি সমাবেশ করতে পারেনি। অন্যদিকে জামায়াত শান্তিপূর্ণভাবে মিছিল করে বেরিয়ে গেছে।...
বিএনপির মারমুখী আচরণের দুটি কারণ থাকতে পারে বলে মনে হলো: শান্তিপূর্ণ সমাবেশের বা যেকোনো পরিস্থিতিতে শান্ত থাকার বার্তা বিএনপির হাইকমান্ড তাদের মাঠপর্যায়ের কর্মীদের কাছে ঠিকঠাকমতো পৌঁছাতে ব্যর্থ হয়েছে। অথবা বারবার ঢাকায় এসে ফিরে যাওয়ার ব্যাপারে নাখোশ ছিলেন কর্মীরা। মাঠ দখল করে সরকার পতনের চূড়ান্ত আন্দোলনের দিকে যাওয়াই তাঁদের মনোভাব ছিল। সেখানে হাইকমান্ডের নির্দেশনা তাঁদের কাছে গুরুত্বহীন হয়ে পড়ে।...
বিএনপির নেতা-কর্মীরা আদৌ কি চূড়ান্ত সংঘর্ষের প্রস্তুতি নিয়ে ঢাকায় এসেছিলেন? শান্তিপূর্ণ সমাবেশ নাকি সংঘর্ষ—এ নিয়ে তাঁদের মধ্যে দ্বিধাগ্রস্ততা ছিল বললে ভুল হবে না। অন্যদিকে আওয়ামী লীগের সাফল্য হচ্ছে, হাইকমান্ড থেকে তাঁদের নেতা-কর্মীদের প্রতি সঠিকভাবে দিকনির্দেশনা দিতে পেরেছিল। সেই অর্থে বড় ধরনের কোনো সংঘর্ষে তাঁরা যাননি।
সবকিছু মিলিয়ে দেখলে প্রশ্ন জাগতে পারে, মারমুখী আচরণ করে বিএনপি কি ভুল করল না?... তাদের কর্মীদের হামলায় একজন পুলিশ নিহত হলেন। সাংবাদিকদের ওপরেও হামলা চালানো হয়েছে। নিজেদের একজন কর্মীও নিহত হলেন।...
অন্যদিকে পুলিশ ও সরকারি দলের অবস্থান ও আচরণ দেখলে যে কারও মনে হতে পারে, তারা বিএনপিকে সহিংস হয়ে উঠতেই সুযোগ করে দিয়েছে। তার মানে কি বিএনপি সরকারের ফাঁদে পা দিল?’
প্রথম আলোর সাংবাদিকের দীর্ঘ বয়ান উদ্ধৃত করা হলো এ জন্যই যে এই পত্রিকাটিকে নিশ্চয়ই কেউ সরকার ও আওয়ামী লীগ দরদি বলে মনে করেন না। রাজনীতিকে বলা হয় কৌশলের খেলা। অভিজ্ঞতা বলছে, এই কৌশলের খেলায় বিএনপি বরাবরই আওয়ামী লীগের কাছে হেরেছে।
রোববার হরতাল ডেকেও বিএনপি কি এগিয়ে গেছে? সংবাদপত্রের খবর: রোববারও রাজপথ ছিল আওয়ামী লীগের নিয়ন্ত্রণে। বিএনপি, জামায়াত এবং সমমনা দলগুলোর ডাকা হরতাল ‘প্রতিরোধে’ মোড়ে মোড়ে লাঠি হাতে ছিলেন দলটির নেতা-কর্মীরা। বিপরীতে বিএনপি ও জামায়াতের ঝটিকা পিকেটিং ছাড়া হরতালের সমর্থনে তেমন একটা তৎপরতা ছিল না রাজধানীতে; বরং বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম গ্রেপ্তার হওয়ায় জ্যেষ্ঠ নেতারা গা-ঢাকা দিয়েছেন। এরপর মঙ্গল, বুধ ও বৃহস্পতিবার বিএনপি টানা যে অবরোধের কর্মসূচি ঘোষণা করেছে, সেটাও বিএনপিকে এগিয়ে নেবে বলে অতি আশাবাদী সরকারবিরোধীও কি মনে করছেন?
বিভুরঞ্জন সরকার, জ্যেষ্ঠ সহকারী সম্পাদক, আজকের পত্রিকা

রাজপথে রাজনৈতিক শক্তি পরীক্ষার পরিস্থিতি অনেকটাই যেন রবিঠাকুরের কবিতার সেই লাইন দুটির মতো: ‘যারে তুমি নীচে ফেল সে তোমারে বাঁধিবে যে নীচে/ পশ্চাতে রেখেছ যারে সে তোমারে পশ্চাতে টানিছে।’
বড় দুটি রাজনৈতিক দল একটি অপরটিকে নিচে ফেলার কিংবা পশ্চাতে বা পেছনে ফেলার চেষ্টা করছে। বিএনপি চেষ্টা করছে আওয়ামী লীগকে ক্ষমতা থেকে টেনে নামাতে আর আওয়ামী লীগ ও সরকার চেষ্টা করছে বিএনপিকে পেছনে ফেলে টপকে সামনে যেতে।
রাজপথে শক্তির পরীক্ষা দিতে গত ২৮ অক্টোবর মুখোমুখি অবস্থানে গিয়ে বিএনপি কি এগিয়ে যেতে পেরেছে? নাকি বিএনপিকে কোণঠাসা করার ক্ষেত্রে আওয়ামী লীগ তথা সরকার এগিয়ে গেছে? রাজপথে সমস্যা সমাধানের কৌশলের যথার্থতা নিয়েও প্রশ্ন উঠছে।
বিএনপি ও তার মিত্ররা ২৮ অক্টোবর শান্তিপূর্ণ সমাবেশ করার মাধ্যমে সরকার পতনের এক দফা আন্দোলনের মহাযাত্রার যে কথা বলেছিল, তা অর্জনে তারা কতটুকু সফল হলো? রাজনৈতিক বিশ্লেষকেরা মনে করছেন, এক বছর ধরে সারা দেশে বিভিন্ন শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি পালনের মাধ্যমে বিএনপি সংগঠনের শক্তি যতটা সংহত করতে পেরেছিল, ২৮ অক্টোবর তা অনেকটাই আবার তছনছ হয়ে গেছে।
তাই ২৮ অক্টোবর বিএনপি এক পা এগিয়ে দুই পা পিছিয়েছে বলেই অনেকে মনে করছেন। ২৮ অক্টোবর বিএনপি বড় জমায়েত করতে সক্ষম হলেও শেষপর্যন্ত পরিস্থিতি তাদের নিয়ন্ত্রণে থাকেনি এবং মহাসমাবেশও পণ্ড হয়ে গেছে। এর বড় কারণ, এত বড় জমায়েত সুশৃঙ্খল রাখার জন্য ছিল না পর্যাপ্ত স্বেচ্ছাসেবক। যাঁরা জমায়েত হয়েছিলেন, তাঁদের কাছে করণীয় সম্পর্কে কোনো সুস্পষ্ট বার্তা ছিল না। ঢাকার বাইরে থেকে আসা নেতা-কর্মীরা গণমাধ্যমের কাছে বলেছেন, ‘যা হওয়ার এবারই হবে।’ ফলে তাঁদের অনেকেরই মনোভাব ছিল বেপরোয়া।
ওই দিন রাজধানীর বেশ কয়েকটি এলাকায় যে হিংসাত্মক ঘটনা ঘটেছে, তার জন্য বিএনপি সরকারের ওপর দোষারোপ করলেও গণমাধ্যমে প্রকাশিত সব তথ্য বিশ্লেষণ করলে অনেকের কাছেই এটা স্পষ্ট যে পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে ওঠার প্রাথমিকভাবে দায় বিএনপির। সকাল থেকে নয়াপল্টন এলাকায় বিএনপির কর্মী-সমর্থকেরা মিছিল নিয়ে জমায়েত হতে থাকেন।
রাজপথে বিএনপিকে ‘পাহারা’ দেওয়ার যে কথা আওয়ামী লীগ বলেছিল, বাস্তবে তা দেখা যায়নি। বিএনপির মিছিলে কেউ কোথাও বাধা দেয়নি। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী সতর্ক অবস্থানে থাকলেও সমাবেশে যোগদানকারীদের বাধাদানের কোনো ঘটনা ঘটেনি।
পরিস্থিতি হঠাৎ বদলে যায় দুপুর সোয়া ১২টার দিকে। মগবাজারের দিক থেকে আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মীদের বহনকারী একটি বাস ও দুটি পিকআপ কাকরাইল মসজিদ ও মৎস্য ভবন হয়ে বায়তুল মোকাররম দক্ষিণ গেটের দিকে যাওয়ার জন্য এগিয়ে যেতে থাকে।
প্রধান বিচারপতির সরকারি বাসভবন ও বিপরীত পাশের মসজিদের সামনে পৌঁছায় বাসটি। তখন পেছন থেকে বিএনপির একটি মিছিল নয়াপল্টনের দিকে যাওয়ার জন্য এগিয়ে আসছিল। বাসের ভেতর থেকে আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা দলীয় স্লোগান দেন। তখনই বিএনপির নেতা-কর্মীরা হঠাৎ হামলা চালান। মূলত এই হামলা থেকেই শনিবার সংঘর্ষ শুরু হয় এবং এর রেশ নগরীর বিভিন্ন স্থানে ছড়িয়ে পড়ে।
প্রত্যক্ষদর্শী ও নিরাপত্তায় দায়িত্বরত পুলিশ সদস্যদের মতে, বিএনপির নেতা-কর্মীরা বাসে হামলা চালালে বাস ও পিকআপ থেকে আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা দ্রুত নেমে দৌড়ে পালাতে থাকেন। বিএনপির নেতা-কর্মীরা তাঁদের হাতে থাকা লাঠিসোঁটা নিয়ে আওয়ামী লীগের কর্মীদের ধাওয়া করেন। এ সময় সেখানকার পরিস্থিতি পাল্টে যায়। বিএনপির নেতা-কর্মীদের মধ্যে চরম উত্তেজনা দেখা দেয়। সড়কের একপাশে প্রধান বিচারপতির বাসভবন ও অপর পাশে জাজেস কমপ্লেক্স থাকায় সেখানে উপস্থিত পুলিশ সদস্যরা এগিয়ে এসে বিএনপির নেতা-কর্মীদের সরিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করেন।
এতে বিএনপির নেতা-কর্মীরা আরও উত্তেজিত হয়ে ওঠেন এবং পুলিশকে লক্ষ্য করে ইটপাটকেল নিক্ষেপ শুরু করেন। বিএনপির নেতা-কর্মীরা রাস্তার আইল্যান্ডের গাছের ডাল ভেঙে এবং হাতে থাকা লাঠিসোঁটা নিয়ে পুলিশের ওপর চড়াও হন। একপর্যায়ে তাঁরা প্রধান বিচারপতির বাসভবনে হামলা চালান। বাসভবনের ভেতরে ইটপাটকেল নিক্ষেপ ও নামফলক ভেঙে ফেলার চেষ্টা করেন। প্রধান বিচারপতির বাড়িতে হামলার খবর পেয়ে দাঙ্গা পুলিশ ঘটনাস্থলে আসে এবং হামলাকারীদের ছত্রভঙ্গ করতে লাঠিচার্জ ও টিয়ার গ্যাস নিক্ষেপ করে। একপর্যায়ে বিএনপির সমর্থকেরা কাকরাইল ট্রাফিক পুলিশ বক্সে অগ্নিসংযোগ করেন।
পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টাকালে পুলিশ ও বিএনপির নেতা-কর্মীদের মধ্যে পাল্টাপাল্টি ধাওয়া চলে। পুলিশ তাঁদের ছত্রভঙ্গ করতে লাগাতার কাঁদানে গ্যাসের শেল নিক্ষেপে করতে থাকে। এ সময় বিএনপিকর্মীরা দুটি মোটরসাইকেলে অগ্নিসংযোগ করেন।
প্রধান বিচারপতির বাসভবনে হামলার রেশ অল্প সময়ের মধ্যেই কাকরাইল, শান্তিনগর, সিদ্ধেশ্বরী লেন, মালিবাগ, বিজয়নগর, পুরানা পল্টন, আরামবাগ, ফকিরাপুলসহ বিভিন্ন স্থানে ছড়িয়ে পড়ে। বিএনপির নেতা-কর্মীদের সঙ্গে পুলিশের দফায় দফায় পাল্টাপাল্টি ধাওয়া, ইটপাটকেল নিক্ষেপ ও সংঘর্ষ চলে দিনভর।
প্রথম আলোর সম্পাদকীয় সহকারী রাফসান গালিব সরেজমিনে পরিস্থিতি দেখে লিখেছেন:
‘শান্তিনগর মোড় ও আশপাশের অলিগলি—সবখানেই বিএনপির কর্মী। সবার মধ্যে মারমুখী মনোভাব, অনেকের হাতে লাঠিসোঁটা। রাস্তায় জায়গায় জায়গায় আগুন জ্বলছে, আর তাকে ঘিরে চলছে স্লোগান। এসবের মাঝখানেই মোড়ের সঙ্গে বেইলি রোডের মুখে আল মদিনা প্যালেস, যেটিকে অনেকে বলছিলেন, বিএফসি ভবন, সেটির নিচে একদল পুলিশ শান্তিপূর্ণভাবে দাঁড়িয়ে আছে।...
রাস্তার পাশে একজন লোককে দেখলাম আরেকজনের মাথায় কাফনের সাদা কাপড় পরিয়ে দিতে। দুজনেরই পঞ্চাশের কমবেশি বয়স। জানালেন, নতুন বাজার থেকে এসেছেন। দলের কোনো পদ-পদবি জানাতে চাইলেন না। জিজ্ঞাসা করলাম, সাদা কাফন পরছেন, আজকে কি আপনারা রাস্তায় থেকে যাবেন? তাঁরা জানালেন, ঢাকা ছেড়ে তাঁরা নড়বেন না।...
শান্তিনগর মোড়ে যেতেই দেখলাম, বিএনপির কর্মীরা সড়কের ওপরে হাতের কাছে যা পাচ্ছেন, তা-ই ভাঙচুর করছেন; বিশেষ করে ট্রাফিক লাইট। রাস্তার পাশে ভবনের ওপর থেকে যাঁরাই ভিডিও করছেন বা ছবি তুলছেন, তাঁদের দিকে তেড়ে গিয়ে ইটপাটকেল মারার ভয় দেখাচ্ছেন।...
এরপর আরেক তরুণের সঙ্গে কথা হলো, কক্সবাজার থেকে এসেছেন। বললেন, ৭০-৮০টি মাইক্রোবাসে করে সকাল ৬টার দিকে তাঁরা ঢাকায় ঢুকেছেন। পথে কোথাও বাধার মুখে পড়েননি। যদিও সংবাদমাধ্যমগুলো বলছে, ঢাকায় প্রবেশ করতে গিয়ে সব গাড়িকে তল্লাশির মুখে পড়তে হয়েছে।...
সোজা রাজমণি মোড়ের দিকে তাকিয়ে গোটা রাস্তা ফাঁকা দেখতে পেলাম। রাস্তাজুড়ে ইটপাটকেল পড়ে আছে। সবখানে সংঘর্ষের চিহ্ন। পুলিশ বক্স আগুনে জ্বালানো। সড়ক বিভাজকের গাছ ছিন্নভিন্ন।...
পুলিশের এক কর্মকর্তার সঙ্গে কথা হলো। তিনি জানান, বিএনপির কাছ থেকে তাঁরা এমন কর্মকাণ্ড আশা করেননি। বিএনপি বলেছিল, সমাবেশ হবে শান্তিপূর্ণ। সেটি থাকল না। সেখানেই জানতে পারলাম, বিএনপি সমাবেশ করতে পারেনি। অন্যদিকে জামায়াত শান্তিপূর্ণভাবে মিছিল করে বেরিয়ে গেছে।...
বিএনপির মারমুখী আচরণের দুটি কারণ থাকতে পারে বলে মনে হলো: শান্তিপূর্ণ সমাবেশের বা যেকোনো পরিস্থিতিতে শান্ত থাকার বার্তা বিএনপির হাইকমান্ড তাদের মাঠপর্যায়ের কর্মীদের কাছে ঠিকঠাকমতো পৌঁছাতে ব্যর্থ হয়েছে। অথবা বারবার ঢাকায় এসে ফিরে যাওয়ার ব্যাপারে নাখোশ ছিলেন কর্মীরা। মাঠ দখল করে সরকার পতনের চূড়ান্ত আন্দোলনের দিকে যাওয়াই তাঁদের মনোভাব ছিল। সেখানে হাইকমান্ডের নির্দেশনা তাঁদের কাছে গুরুত্বহীন হয়ে পড়ে।...
বিএনপির নেতা-কর্মীরা আদৌ কি চূড়ান্ত সংঘর্ষের প্রস্তুতি নিয়ে ঢাকায় এসেছিলেন? শান্তিপূর্ণ সমাবেশ নাকি সংঘর্ষ—এ নিয়ে তাঁদের মধ্যে দ্বিধাগ্রস্ততা ছিল বললে ভুল হবে না। অন্যদিকে আওয়ামী লীগের সাফল্য হচ্ছে, হাইকমান্ড থেকে তাঁদের নেতা-কর্মীদের প্রতি সঠিকভাবে দিকনির্দেশনা দিতে পেরেছিল। সেই অর্থে বড় ধরনের কোনো সংঘর্ষে তাঁরা যাননি।
সবকিছু মিলিয়ে দেখলে প্রশ্ন জাগতে পারে, মারমুখী আচরণ করে বিএনপি কি ভুল করল না?... তাদের কর্মীদের হামলায় একজন পুলিশ নিহত হলেন। সাংবাদিকদের ওপরেও হামলা চালানো হয়েছে। নিজেদের একজন কর্মীও নিহত হলেন।...
অন্যদিকে পুলিশ ও সরকারি দলের অবস্থান ও আচরণ দেখলে যে কারও মনে হতে পারে, তারা বিএনপিকে সহিংস হয়ে উঠতেই সুযোগ করে দিয়েছে। তার মানে কি বিএনপি সরকারের ফাঁদে পা দিল?’
প্রথম আলোর সাংবাদিকের দীর্ঘ বয়ান উদ্ধৃত করা হলো এ জন্যই যে এই পত্রিকাটিকে নিশ্চয়ই কেউ সরকার ও আওয়ামী লীগ দরদি বলে মনে করেন না। রাজনীতিকে বলা হয় কৌশলের খেলা। অভিজ্ঞতা বলছে, এই কৌশলের খেলায় বিএনপি বরাবরই আওয়ামী লীগের কাছে হেরেছে।
রোববার হরতাল ডেকেও বিএনপি কি এগিয়ে গেছে? সংবাদপত্রের খবর: রোববারও রাজপথ ছিল আওয়ামী লীগের নিয়ন্ত্রণে। বিএনপি, জামায়াত এবং সমমনা দলগুলোর ডাকা হরতাল ‘প্রতিরোধে’ মোড়ে মোড়ে লাঠি হাতে ছিলেন দলটির নেতা-কর্মীরা। বিপরীতে বিএনপি ও জামায়াতের ঝটিকা পিকেটিং ছাড়া হরতালের সমর্থনে তেমন একটা তৎপরতা ছিল না রাজধানীতে; বরং বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম গ্রেপ্তার হওয়ায় জ্যেষ্ঠ নেতারা গা-ঢাকা দিয়েছেন। এরপর মঙ্গল, বুধ ও বৃহস্পতিবার বিএনপি টানা যে অবরোধের কর্মসূচি ঘোষণা করেছে, সেটাও বিএনপিকে এগিয়ে নেবে বলে অতি আশাবাদী সরকারবিরোধীও কি মনে করছেন?
বিভুরঞ্জন সরকার, জ্যেষ্ঠ সহকারী সম্পাদক, আজকের পত্রিকা

রাজপথে রাজনৈতিক শক্তি পরীক্ষার পরিস্থিতি অনেকটাই যেন রবিঠাকুরের কবিতার সেই লাইন দুটির মতো: ‘যারে তুমি নীচে ফেল সে তোমারে বাঁধিবে যে নীচে/ পশ্চাতে রেখেছ যারে সে তোমারে পশ্চাতে টানিছে।’
বড় দুটি রাজনৈতিক দল একটি অপরটিকে নিচে ফেলার কিংবা পশ্চাতে বা পেছনে ফেলার চেষ্টা করছে। বিএনপি চেষ্টা করছে আওয়ামী লীগকে ক্ষমতা থেকে টেনে নামাতে আর আওয়ামী লীগ ও সরকার চেষ্টা করছে বিএনপিকে পেছনে ফেলে টপকে সামনে যেতে।
রাজপথে শক্তির পরীক্ষা দিতে গত ২৮ অক্টোবর মুখোমুখি অবস্থানে গিয়ে বিএনপি কি এগিয়ে যেতে পেরেছে? নাকি বিএনপিকে কোণঠাসা করার ক্ষেত্রে আওয়ামী লীগ তথা সরকার এগিয়ে গেছে? রাজপথে সমস্যা সমাধানের কৌশলের যথার্থতা নিয়েও প্রশ্ন উঠছে।
বিএনপি ও তার মিত্ররা ২৮ অক্টোবর শান্তিপূর্ণ সমাবেশ করার মাধ্যমে সরকার পতনের এক দফা আন্দোলনের মহাযাত্রার যে কথা বলেছিল, তা অর্জনে তারা কতটুকু সফল হলো? রাজনৈতিক বিশ্লেষকেরা মনে করছেন, এক বছর ধরে সারা দেশে বিভিন্ন শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি পালনের মাধ্যমে বিএনপি সংগঠনের শক্তি যতটা সংহত করতে পেরেছিল, ২৮ অক্টোবর তা অনেকটাই আবার তছনছ হয়ে গেছে।
তাই ২৮ অক্টোবর বিএনপি এক পা এগিয়ে দুই পা পিছিয়েছে বলেই অনেকে মনে করছেন। ২৮ অক্টোবর বিএনপি বড় জমায়েত করতে সক্ষম হলেও শেষপর্যন্ত পরিস্থিতি তাদের নিয়ন্ত্রণে থাকেনি এবং মহাসমাবেশও পণ্ড হয়ে গেছে। এর বড় কারণ, এত বড় জমায়েত সুশৃঙ্খল রাখার জন্য ছিল না পর্যাপ্ত স্বেচ্ছাসেবক। যাঁরা জমায়েত হয়েছিলেন, তাঁদের কাছে করণীয় সম্পর্কে কোনো সুস্পষ্ট বার্তা ছিল না। ঢাকার বাইরে থেকে আসা নেতা-কর্মীরা গণমাধ্যমের কাছে বলেছেন, ‘যা হওয়ার এবারই হবে।’ ফলে তাঁদের অনেকেরই মনোভাব ছিল বেপরোয়া।
ওই দিন রাজধানীর বেশ কয়েকটি এলাকায় যে হিংসাত্মক ঘটনা ঘটেছে, তার জন্য বিএনপি সরকারের ওপর দোষারোপ করলেও গণমাধ্যমে প্রকাশিত সব তথ্য বিশ্লেষণ করলে অনেকের কাছেই এটা স্পষ্ট যে পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে ওঠার প্রাথমিকভাবে দায় বিএনপির। সকাল থেকে নয়াপল্টন এলাকায় বিএনপির কর্মী-সমর্থকেরা মিছিল নিয়ে জমায়েত হতে থাকেন।
রাজপথে বিএনপিকে ‘পাহারা’ দেওয়ার যে কথা আওয়ামী লীগ বলেছিল, বাস্তবে তা দেখা যায়নি। বিএনপির মিছিলে কেউ কোথাও বাধা দেয়নি। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী সতর্ক অবস্থানে থাকলেও সমাবেশে যোগদানকারীদের বাধাদানের কোনো ঘটনা ঘটেনি।
পরিস্থিতি হঠাৎ বদলে যায় দুপুর সোয়া ১২টার দিকে। মগবাজারের দিক থেকে আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মীদের বহনকারী একটি বাস ও দুটি পিকআপ কাকরাইল মসজিদ ও মৎস্য ভবন হয়ে বায়তুল মোকাররম দক্ষিণ গেটের দিকে যাওয়ার জন্য এগিয়ে যেতে থাকে।
প্রধান বিচারপতির সরকারি বাসভবন ও বিপরীত পাশের মসজিদের সামনে পৌঁছায় বাসটি। তখন পেছন থেকে বিএনপির একটি মিছিল নয়াপল্টনের দিকে যাওয়ার জন্য এগিয়ে আসছিল। বাসের ভেতর থেকে আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা দলীয় স্লোগান দেন। তখনই বিএনপির নেতা-কর্মীরা হঠাৎ হামলা চালান। মূলত এই হামলা থেকেই শনিবার সংঘর্ষ শুরু হয় এবং এর রেশ নগরীর বিভিন্ন স্থানে ছড়িয়ে পড়ে।
প্রত্যক্ষদর্শী ও নিরাপত্তায় দায়িত্বরত পুলিশ সদস্যদের মতে, বিএনপির নেতা-কর্মীরা বাসে হামলা চালালে বাস ও পিকআপ থেকে আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা দ্রুত নেমে দৌড়ে পালাতে থাকেন। বিএনপির নেতা-কর্মীরা তাঁদের হাতে থাকা লাঠিসোঁটা নিয়ে আওয়ামী লীগের কর্মীদের ধাওয়া করেন। এ সময় সেখানকার পরিস্থিতি পাল্টে যায়। বিএনপির নেতা-কর্মীদের মধ্যে চরম উত্তেজনা দেখা দেয়। সড়কের একপাশে প্রধান বিচারপতির বাসভবন ও অপর পাশে জাজেস কমপ্লেক্স থাকায় সেখানে উপস্থিত পুলিশ সদস্যরা এগিয়ে এসে বিএনপির নেতা-কর্মীদের সরিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করেন।
এতে বিএনপির নেতা-কর্মীরা আরও উত্তেজিত হয়ে ওঠেন এবং পুলিশকে লক্ষ্য করে ইটপাটকেল নিক্ষেপ শুরু করেন। বিএনপির নেতা-কর্মীরা রাস্তার আইল্যান্ডের গাছের ডাল ভেঙে এবং হাতে থাকা লাঠিসোঁটা নিয়ে পুলিশের ওপর চড়াও হন। একপর্যায়ে তাঁরা প্রধান বিচারপতির বাসভবনে হামলা চালান। বাসভবনের ভেতরে ইটপাটকেল নিক্ষেপ ও নামফলক ভেঙে ফেলার চেষ্টা করেন। প্রধান বিচারপতির বাড়িতে হামলার খবর পেয়ে দাঙ্গা পুলিশ ঘটনাস্থলে আসে এবং হামলাকারীদের ছত্রভঙ্গ করতে লাঠিচার্জ ও টিয়ার গ্যাস নিক্ষেপ করে। একপর্যায়ে বিএনপির সমর্থকেরা কাকরাইল ট্রাফিক পুলিশ বক্সে অগ্নিসংযোগ করেন।
পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টাকালে পুলিশ ও বিএনপির নেতা-কর্মীদের মধ্যে পাল্টাপাল্টি ধাওয়া চলে। পুলিশ তাঁদের ছত্রভঙ্গ করতে লাগাতার কাঁদানে গ্যাসের শেল নিক্ষেপে করতে থাকে। এ সময় বিএনপিকর্মীরা দুটি মোটরসাইকেলে অগ্নিসংযোগ করেন।
প্রধান বিচারপতির বাসভবনে হামলার রেশ অল্প সময়ের মধ্যেই কাকরাইল, শান্তিনগর, সিদ্ধেশ্বরী লেন, মালিবাগ, বিজয়নগর, পুরানা পল্টন, আরামবাগ, ফকিরাপুলসহ বিভিন্ন স্থানে ছড়িয়ে পড়ে। বিএনপির নেতা-কর্মীদের সঙ্গে পুলিশের দফায় দফায় পাল্টাপাল্টি ধাওয়া, ইটপাটকেল নিক্ষেপ ও সংঘর্ষ চলে দিনভর।
প্রথম আলোর সম্পাদকীয় সহকারী রাফসান গালিব সরেজমিনে পরিস্থিতি দেখে লিখেছেন:
‘শান্তিনগর মোড় ও আশপাশের অলিগলি—সবখানেই বিএনপির কর্মী। সবার মধ্যে মারমুখী মনোভাব, অনেকের হাতে লাঠিসোঁটা। রাস্তায় জায়গায় জায়গায় আগুন জ্বলছে, আর তাকে ঘিরে চলছে স্লোগান। এসবের মাঝখানেই মোড়ের সঙ্গে বেইলি রোডের মুখে আল মদিনা প্যালেস, যেটিকে অনেকে বলছিলেন, বিএফসি ভবন, সেটির নিচে একদল পুলিশ শান্তিপূর্ণভাবে দাঁড়িয়ে আছে।...
রাস্তার পাশে একজন লোককে দেখলাম আরেকজনের মাথায় কাফনের সাদা কাপড় পরিয়ে দিতে। দুজনেরই পঞ্চাশের কমবেশি বয়স। জানালেন, নতুন বাজার থেকে এসেছেন। দলের কোনো পদ-পদবি জানাতে চাইলেন না। জিজ্ঞাসা করলাম, সাদা কাফন পরছেন, আজকে কি আপনারা রাস্তায় থেকে যাবেন? তাঁরা জানালেন, ঢাকা ছেড়ে তাঁরা নড়বেন না।...
শান্তিনগর মোড়ে যেতেই দেখলাম, বিএনপির কর্মীরা সড়কের ওপরে হাতের কাছে যা পাচ্ছেন, তা-ই ভাঙচুর করছেন; বিশেষ করে ট্রাফিক লাইট। রাস্তার পাশে ভবনের ওপর থেকে যাঁরাই ভিডিও করছেন বা ছবি তুলছেন, তাঁদের দিকে তেড়ে গিয়ে ইটপাটকেল মারার ভয় দেখাচ্ছেন।...
এরপর আরেক তরুণের সঙ্গে কথা হলো, কক্সবাজার থেকে এসেছেন। বললেন, ৭০-৮০টি মাইক্রোবাসে করে সকাল ৬টার দিকে তাঁরা ঢাকায় ঢুকেছেন। পথে কোথাও বাধার মুখে পড়েননি। যদিও সংবাদমাধ্যমগুলো বলছে, ঢাকায় প্রবেশ করতে গিয়ে সব গাড়িকে তল্লাশির মুখে পড়তে হয়েছে।...
সোজা রাজমণি মোড়ের দিকে তাকিয়ে গোটা রাস্তা ফাঁকা দেখতে পেলাম। রাস্তাজুড়ে ইটপাটকেল পড়ে আছে। সবখানে সংঘর্ষের চিহ্ন। পুলিশ বক্স আগুনে জ্বালানো। সড়ক বিভাজকের গাছ ছিন্নভিন্ন।...
পুলিশের এক কর্মকর্তার সঙ্গে কথা হলো। তিনি জানান, বিএনপির কাছ থেকে তাঁরা এমন কর্মকাণ্ড আশা করেননি। বিএনপি বলেছিল, সমাবেশ হবে শান্তিপূর্ণ। সেটি থাকল না। সেখানেই জানতে পারলাম, বিএনপি সমাবেশ করতে পারেনি। অন্যদিকে জামায়াত শান্তিপূর্ণভাবে মিছিল করে বেরিয়ে গেছে।...
বিএনপির মারমুখী আচরণের দুটি কারণ থাকতে পারে বলে মনে হলো: শান্তিপূর্ণ সমাবেশের বা যেকোনো পরিস্থিতিতে শান্ত থাকার বার্তা বিএনপির হাইকমান্ড তাদের মাঠপর্যায়ের কর্মীদের কাছে ঠিকঠাকমতো পৌঁছাতে ব্যর্থ হয়েছে। অথবা বারবার ঢাকায় এসে ফিরে যাওয়ার ব্যাপারে নাখোশ ছিলেন কর্মীরা। মাঠ দখল করে সরকার পতনের চূড়ান্ত আন্দোলনের দিকে যাওয়াই তাঁদের মনোভাব ছিল। সেখানে হাইকমান্ডের নির্দেশনা তাঁদের কাছে গুরুত্বহীন হয়ে পড়ে।...
বিএনপির নেতা-কর্মীরা আদৌ কি চূড়ান্ত সংঘর্ষের প্রস্তুতি নিয়ে ঢাকায় এসেছিলেন? শান্তিপূর্ণ সমাবেশ নাকি সংঘর্ষ—এ নিয়ে তাঁদের মধ্যে দ্বিধাগ্রস্ততা ছিল বললে ভুল হবে না। অন্যদিকে আওয়ামী লীগের সাফল্য হচ্ছে, হাইকমান্ড থেকে তাঁদের নেতা-কর্মীদের প্রতি সঠিকভাবে দিকনির্দেশনা দিতে পেরেছিল। সেই অর্থে বড় ধরনের কোনো সংঘর্ষে তাঁরা যাননি।
সবকিছু মিলিয়ে দেখলে প্রশ্ন জাগতে পারে, মারমুখী আচরণ করে বিএনপি কি ভুল করল না?... তাদের কর্মীদের হামলায় একজন পুলিশ নিহত হলেন। সাংবাদিকদের ওপরেও হামলা চালানো হয়েছে। নিজেদের একজন কর্মীও নিহত হলেন।...
অন্যদিকে পুলিশ ও সরকারি দলের অবস্থান ও আচরণ দেখলে যে কারও মনে হতে পারে, তারা বিএনপিকে সহিংস হয়ে উঠতেই সুযোগ করে দিয়েছে। তার মানে কি বিএনপি সরকারের ফাঁদে পা দিল?’
প্রথম আলোর সাংবাদিকের দীর্ঘ বয়ান উদ্ধৃত করা হলো এ জন্যই যে এই পত্রিকাটিকে নিশ্চয়ই কেউ সরকার ও আওয়ামী লীগ দরদি বলে মনে করেন না। রাজনীতিকে বলা হয় কৌশলের খেলা। অভিজ্ঞতা বলছে, এই কৌশলের খেলায় বিএনপি বরাবরই আওয়ামী লীগের কাছে হেরেছে।
রোববার হরতাল ডেকেও বিএনপি কি এগিয়ে গেছে? সংবাদপত্রের খবর: রোববারও রাজপথ ছিল আওয়ামী লীগের নিয়ন্ত্রণে। বিএনপি, জামায়াত এবং সমমনা দলগুলোর ডাকা হরতাল ‘প্রতিরোধে’ মোড়ে মোড়ে লাঠি হাতে ছিলেন দলটির নেতা-কর্মীরা। বিপরীতে বিএনপি ও জামায়াতের ঝটিকা পিকেটিং ছাড়া হরতালের সমর্থনে তেমন একটা তৎপরতা ছিল না রাজধানীতে; বরং বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম গ্রেপ্তার হওয়ায় জ্যেষ্ঠ নেতারা গা-ঢাকা দিয়েছেন। এরপর মঙ্গল, বুধ ও বৃহস্পতিবার বিএনপি টানা যে অবরোধের কর্মসূচি ঘোষণা করেছে, সেটাও বিএনপিকে এগিয়ে নেবে বলে অতি আশাবাদী সরকারবিরোধীও কি মনে করছেন?
বিভুরঞ্জন সরকার, জ্যেষ্ঠ সহকারী সম্পাদক, আজকের পত্রিকা

রাজপথে রাজনৈতিক শক্তি পরীক্ষার পরিস্থিতি অনেকটাই যেন রবিঠাকুরের কবিতার সেই লাইন দুটির মতো: ‘যারে তুমি নীচে ফেল সে তোমারে বাঁধিবে যে নীচে/ পশ্চাতে রেখেছ যারে সে তোমারে পশ্চাতে টানিছে।’
বড় দুটি রাজনৈতিক দল একটি অপরটিকে নিচে ফেলার কিংবা পশ্চাতে বা পেছনে ফেলার চেষ্টা করছে। বিএনপি চেষ্টা করছে আওয়ামী লীগকে ক্ষমতা থেকে টেনে নামাতে আর আওয়ামী লীগ ও সরকার চেষ্টা করছে বিএনপিকে পেছনে ফেলে টপকে সামনে যেতে।
রাজপথে শক্তির পরীক্ষা দিতে গত ২৮ অক্টোবর মুখোমুখি অবস্থানে গিয়ে বিএনপি কি এগিয়ে যেতে পেরেছে? নাকি বিএনপিকে কোণঠাসা করার ক্ষেত্রে আওয়ামী লীগ তথা সরকার এগিয়ে গেছে? রাজপথে সমস্যা সমাধানের কৌশলের যথার্থতা নিয়েও প্রশ্ন উঠছে।
বিএনপি ও তার মিত্ররা ২৮ অক্টোবর শান্তিপূর্ণ সমাবেশ করার মাধ্যমে সরকার পতনের এক দফা আন্দোলনের মহাযাত্রার যে কথা বলেছিল, তা অর্জনে তারা কতটুকু সফল হলো? রাজনৈতিক বিশ্লেষকেরা মনে করছেন, এক বছর ধরে সারা দেশে বিভিন্ন শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি পালনের মাধ্যমে বিএনপি সংগঠনের শক্তি যতটা সংহত করতে পেরেছিল, ২৮ অক্টোবর তা অনেকটাই আবার তছনছ হয়ে গেছে।
তাই ২৮ অক্টোবর বিএনপি এক পা এগিয়ে দুই পা পিছিয়েছে বলেই অনেকে মনে করছেন। ২৮ অক্টোবর বিএনপি বড় জমায়েত করতে সক্ষম হলেও শেষপর্যন্ত পরিস্থিতি তাদের নিয়ন্ত্রণে থাকেনি এবং মহাসমাবেশও পণ্ড হয়ে গেছে। এর বড় কারণ, এত বড় জমায়েত সুশৃঙ্খল রাখার জন্য ছিল না পর্যাপ্ত স্বেচ্ছাসেবক। যাঁরা জমায়েত হয়েছিলেন, তাঁদের কাছে করণীয় সম্পর্কে কোনো সুস্পষ্ট বার্তা ছিল না। ঢাকার বাইরে থেকে আসা নেতা-কর্মীরা গণমাধ্যমের কাছে বলেছেন, ‘যা হওয়ার এবারই হবে।’ ফলে তাঁদের অনেকেরই মনোভাব ছিল বেপরোয়া।
ওই দিন রাজধানীর বেশ কয়েকটি এলাকায় যে হিংসাত্মক ঘটনা ঘটেছে, তার জন্য বিএনপি সরকারের ওপর দোষারোপ করলেও গণমাধ্যমে প্রকাশিত সব তথ্য বিশ্লেষণ করলে অনেকের কাছেই এটা স্পষ্ট যে পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে ওঠার প্রাথমিকভাবে দায় বিএনপির। সকাল থেকে নয়াপল্টন এলাকায় বিএনপির কর্মী-সমর্থকেরা মিছিল নিয়ে জমায়েত হতে থাকেন।
রাজপথে বিএনপিকে ‘পাহারা’ দেওয়ার যে কথা আওয়ামী লীগ বলেছিল, বাস্তবে তা দেখা যায়নি। বিএনপির মিছিলে কেউ কোথাও বাধা দেয়নি। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী সতর্ক অবস্থানে থাকলেও সমাবেশে যোগদানকারীদের বাধাদানের কোনো ঘটনা ঘটেনি।
পরিস্থিতি হঠাৎ বদলে যায় দুপুর সোয়া ১২টার দিকে। মগবাজারের দিক থেকে আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মীদের বহনকারী একটি বাস ও দুটি পিকআপ কাকরাইল মসজিদ ও মৎস্য ভবন হয়ে বায়তুল মোকাররম দক্ষিণ গেটের দিকে যাওয়ার জন্য এগিয়ে যেতে থাকে।
প্রধান বিচারপতির সরকারি বাসভবন ও বিপরীত পাশের মসজিদের সামনে পৌঁছায় বাসটি। তখন পেছন থেকে বিএনপির একটি মিছিল নয়াপল্টনের দিকে যাওয়ার জন্য এগিয়ে আসছিল। বাসের ভেতর থেকে আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা দলীয় স্লোগান দেন। তখনই বিএনপির নেতা-কর্মীরা হঠাৎ হামলা চালান। মূলত এই হামলা থেকেই শনিবার সংঘর্ষ শুরু হয় এবং এর রেশ নগরীর বিভিন্ন স্থানে ছড়িয়ে পড়ে।
প্রত্যক্ষদর্শী ও নিরাপত্তায় দায়িত্বরত পুলিশ সদস্যদের মতে, বিএনপির নেতা-কর্মীরা বাসে হামলা চালালে বাস ও পিকআপ থেকে আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা দ্রুত নেমে দৌড়ে পালাতে থাকেন। বিএনপির নেতা-কর্মীরা তাঁদের হাতে থাকা লাঠিসোঁটা নিয়ে আওয়ামী লীগের কর্মীদের ধাওয়া করেন। এ সময় সেখানকার পরিস্থিতি পাল্টে যায়। বিএনপির নেতা-কর্মীদের মধ্যে চরম উত্তেজনা দেখা দেয়। সড়কের একপাশে প্রধান বিচারপতির বাসভবন ও অপর পাশে জাজেস কমপ্লেক্স থাকায় সেখানে উপস্থিত পুলিশ সদস্যরা এগিয়ে এসে বিএনপির নেতা-কর্মীদের সরিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করেন।
এতে বিএনপির নেতা-কর্মীরা আরও উত্তেজিত হয়ে ওঠেন এবং পুলিশকে লক্ষ্য করে ইটপাটকেল নিক্ষেপ শুরু করেন। বিএনপির নেতা-কর্মীরা রাস্তার আইল্যান্ডের গাছের ডাল ভেঙে এবং হাতে থাকা লাঠিসোঁটা নিয়ে পুলিশের ওপর চড়াও হন। একপর্যায়ে তাঁরা প্রধান বিচারপতির বাসভবনে হামলা চালান। বাসভবনের ভেতরে ইটপাটকেল নিক্ষেপ ও নামফলক ভেঙে ফেলার চেষ্টা করেন। প্রধান বিচারপতির বাড়িতে হামলার খবর পেয়ে দাঙ্গা পুলিশ ঘটনাস্থলে আসে এবং হামলাকারীদের ছত্রভঙ্গ করতে লাঠিচার্জ ও টিয়ার গ্যাস নিক্ষেপ করে। একপর্যায়ে বিএনপির সমর্থকেরা কাকরাইল ট্রাফিক পুলিশ বক্সে অগ্নিসংযোগ করেন।
পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টাকালে পুলিশ ও বিএনপির নেতা-কর্মীদের মধ্যে পাল্টাপাল্টি ধাওয়া চলে। পুলিশ তাঁদের ছত্রভঙ্গ করতে লাগাতার কাঁদানে গ্যাসের শেল নিক্ষেপে করতে থাকে। এ সময় বিএনপিকর্মীরা দুটি মোটরসাইকেলে অগ্নিসংযোগ করেন।
প্রধান বিচারপতির বাসভবনে হামলার রেশ অল্প সময়ের মধ্যেই কাকরাইল, শান্তিনগর, সিদ্ধেশ্বরী লেন, মালিবাগ, বিজয়নগর, পুরানা পল্টন, আরামবাগ, ফকিরাপুলসহ বিভিন্ন স্থানে ছড়িয়ে পড়ে। বিএনপির নেতা-কর্মীদের সঙ্গে পুলিশের দফায় দফায় পাল্টাপাল্টি ধাওয়া, ইটপাটকেল নিক্ষেপ ও সংঘর্ষ চলে দিনভর।
প্রথম আলোর সম্পাদকীয় সহকারী রাফসান গালিব সরেজমিনে পরিস্থিতি দেখে লিখেছেন:
‘শান্তিনগর মোড় ও আশপাশের অলিগলি—সবখানেই বিএনপির কর্মী। সবার মধ্যে মারমুখী মনোভাব, অনেকের হাতে লাঠিসোঁটা। রাস্তায় জায়গায় জায়গায় আগুন জ্বলছে, আর তাকে ঘিরে চলছে স্লোগান। এসবের মাঝখানেই মোড়ের সঙ্গে বেইলি রোডের মুখে আল মদিনা প্যালেস, যেটিকে অনেকে বলছিলেন, বিএফসি ভবন, সেটির নিচে একদল পুলিশ শান্তিপূর্ণভাবে দাঁড়িয়ে আছে।...
রাস্তার পাশে একজন লোককে দেখলাম আরেকজনের মাথায় কাফনের সাদা কাপড় পরিয়ে দিতে। দুজনেরই পঞ্চাশের কমবেশি বয়স। জানালেন, নতুন বাজার থেকে এসেছেন। দলের কোনো পদ-পদবি জানাতে চাইলেন না। জিজ্ঞাসা করলাম, সাদা কাফন পরছেন, আজকে কি আপনারা রাস্তায় থেকে যাবেন? তাঁরা জানালেন, ঢাকা ছেড়ে তাঁরা নড়বেন না।...
শান্তিনগর মোড়ে যেতেই দেখলাম, বিএনপির কর্মীরা সড়কের ওপরে হাতের কাছে যা পাচ্ছেন, তা-ই ভাঙচুর করছেন; বিশেষ করে ট্রাফিক লাইট। রাস্তার পাশে ভবনের ওপর থেকে যাঁরাই ভিডিও করছেন বা ছবি তুলছেন, তাঁদের দিকে তেড়ে গিয়ে ইটপাটকেল মারার ভয় দেখাচ্ছেন।...
এরপর আরেক তরুণের সঙ্গে কথা হলো, কক্সবাজার থেকে এসেছেন। বললেন, ৭০-৮০টি মাইক্রোবাসে করে সকাল ৬টার দিকে তাঁরা ঢাকায় ঢুকেছেন। পথে কোথাও বাধার মুখে পড়েননি। যদিও সংবাদমাধ্যমগুলো বলছে, ঢাকায় প্রবেশ করতে গিয়ে সব গাড়িকে তল্লাশির মুখে পড়তে হয়েছে।...
সোজা রাজমণি মোড়ের দিকে তাকিয়ে গোটা রাস্তা ফাঁকা দেখতে পেলাম। রাস্তাজুড়ে ইটপাটকেল পড়ে আছে। সবখানে সংঘর্ষের চিহ্ন। পুলিশ বক্স আগুনে জ্বালানো। সড়ক বিভাজকের গাছ ছিন্নভিন্ন।...
পুলিশের এক কর্মকর্তার সঙ্গে কথা হলো। তিনি জানান, বিএনপির কাছ থেকে তাঁরা এমন কর্মকাণ্ড আশা করেননি। বিএনপি বলেছিল, সমাবেশ হবে শান্তিপূর্ণ। সেটি থাকল না। সেখানেই জানতে পারলাম, বিএনপি সমাবেশ করতে পারেনি। অন্যদিকে জামায়াত শান্তিপূর্ণভাবে মিছিল করে বেরিয়ে গেছে।...
বিএনপির মারমুখী আচরণের দুটি কারণ থাকতে পারে বলে মনে হলো: শান্তিপূর্ণ সমাবেশের বা যেকোনো পরিস্থিতিতে শান্ত থাকার বার্তা বিএনপির হাইকমান্ড তাদের মাঠপর্যায়ের কর্মীদের কাছে ঠিকঠাকমতো পৌঁছাতে ব্যর্থ হয়েছে। অথবা বারবার ঢাকায় এসে ফিরে যাওয়ার ব্যাপারে নাখোশ ছিলেন কর্মীরা। মাঠ দখল করে সরকার পতনের চূড়ান্ত আন্দোলনের দিকে যাওয়াই তাঁদের মনোভাব ছিল। সেখানে হাইকমান্ডের নির্দেশনা তাঁদের কাছে গুরুত্বহীন হয়ে পড়ে।...
বিএনপির নেতা-কর্মীরা আদৌ কি চূড়ান্ত সংঘর্ষের প্রস্তুতি নিয়ে ঢাকায় এসেছিলেন? শান্তিপূর্ণ সমাবেশ নাকি সংঘর্ষ—এ নিয়ে তাঁদের মধ্যে দ্বিধাগ্রস্ততা ছিল বললে ভুল হবে না। অন্যদিকে আওয়ামী লীগের সাফল্য হচ্ছে, হাইকমান্ড থেকে তাঁদের নেতা-কর্মীদের প্রতি সঠিকভাবে দিকনির্দেশনা দিতে পেরেছিল। সেই অর্থে বড় ধরনের কোনো সংঘর্ষে তাঁরা যাননি।
সবকিছু মিলিয়ে দেখলে প্রশ্ন জাগতে পারে, মারমুখী আচরণ করে বিএনপি কি ভুল করল না?... তাদের কর্মীদের হামলায় একজন পুলিশ নিহত হলেন। সাংবাদিকদের ওপরেও হামলা চালানো হয়েছে। নিজেদের একজন কর্মীও নিহত হলেন।...
অন্যদিকে পুলিশ ও সরকারি দলের অবস্থান ও আচরণ দেখলে যে কারও মনে হতে পারে, তারা বিএনপিকে সহিংস হয়ে উঠতেই সুযোগ করে দিয়েছে। তার মানে কি বিএনপি সরকারের ফাঁদে পা দিল?’
প্রথম আলোর সাংবাদিকের দীর্ঘ বয়ান উদ্ধৃত করা হলো এ জন্যই যে এই পত্রিকাটিকে নিশ্চয়ই কেউ সরকার ও আওয়ামী লীগ দরদি বলে মনে করেন না। রাজনীতিকে বলা হয় কৌশলের খেলা। অভিজ্ঞতা বলছে, এই কৌশলের খেলায় বিএনপি বরাবরই আওয়ামী লীগের কাছে হেরেছে।
রোববার হরতাল ডেকেও বিএনপি কি এগিয়ে গেছে? সংবাদপত্রের খবর: রোববারও রাজপথ ছিল আওয়ামী লীগের নিয়ন্ত্রণে। বিএনপি, জামায়াত এবং সমমনা দলগুলোর ডাকা হরতাল ‘প্রতিরোধে’ মোড়ে মোড়ে লাঠি হাতে ছিলেন দলটির নেতা-কর্মীরা। বিপরীতে বিএনপি ও জামায়াতের ঝটিকা পিকেটিং ছাড়া হরতালের সমর্থনে তেমন একটা তৎপরতা ছিল না রাজধানীতে; বরং বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম গ্রেপ্তার হওয়ায় জ্যেষ্ঠ নেতারা গা-ঢাকা দিয়েছেন। এরপর মঙ্গল, বুধ ও বৃহস্পতিবার বিএনপি টানা যে অবরোধের কর্মসূচি ঘোষণা করেছে, সেটাও বিএনপিকে এগিয়ে নেবে বলে অতি আশাবাদী সরকারবিরোধীও কি মনে করছেন?
বিভুরঞ্জন সরকার, জ্যেষ্ঠ সহকারী সম্পাদক, আজকের পত্রিকা

গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।
০৬ অক্টোবর ২০২৫
‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর...
১২ জুন ২০২৫
ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।
১৯ মে ২০২৫
আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
০৮ মে ২০২৫বাসস, ঢাকা

গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।
আজ সোমবার বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের ট্রাইব্যুনাল-১-এ মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা (আইও) মো. আলমগীরের জেরা শুরু করেন রাষ্ট্র নিযুক্ত আইনজীবী আমীর হোসেন। আইনজীবী আমীর হোসেন পলাতক আসামি শেখ হাসিনা ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের পক্ষে শুনানি করছেন। এর আগে গত মঙ্গলবার তদন্তকারী কর্মকর্তা মো. আলমগীরের সাক্ষ্য গ্রহণ সম্পন্ন হয়।
এই মামলার শুনানিতে এর আগে গণ-অভ্যুত্থানের অন্যতম প্রতীক শহীদ আবু সাঈদের বাবাসহ স্বজনহারা পরিবারের একাধিক সদস্য সাক্ষ্য দিয়েছেন। এ ছাড়া মামলার গুরুত্বপূর্ণ ‘স্টার উইটনেস’ হিসেবে সাক্ষ্য দেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক এবং জুলাই আন্দোলনের অন্যতম নেতৃত্বদানকারী নাহিদ ইসলাম এবং দৈনিক আমার দেশ পত্রিকার সম্পাদক ড. মাহমুদুর রহমান।
গত বছরের জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার আন্দোলন দমনে আওয়ামী লীগ সরকার, তাদের দলীয় ক্যাডার ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর একটি অংশ গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটিত করে বলে অভিযোগ ওঠে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে শেখ হাসিনা, তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল এবং তৎকালীন আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের বিরুদ্ধে গত ১০ জুলাই অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দেন ট্রাইব্যুনাল-১।
পরবর্তীকালে, এই মামলার অন্যতম আসামি সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন দোষ স্বীকার করে ঘটনার সত্যতা উদ্ঘাটনে রাজসাক্ষী (অ্যাপ্রোভার) হওয়ার জন্য ট্রাইব্যুনালে আবেদন করেন। ট্রাইব্যুনাল তাঁর আবেদন মঞ্জুর করলে তিনি রাজসাক্ষী হিসেবে এই মামলায় সাক্ষ্য দেন।
মামলার প্রসিকিউশন পক্ষে শুনানি করছেন চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম, প্রসিকিউটর মিজানুল ইসলাম এবং গাজী এসএইচ তামিম। শুনানিতে তাঁদের সঙ্গে অপর প্রসিকিউটররাও উপস্থিত ছিলেন।
অন্যদিকে, এই মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে রাজসাক্ষী হওয়া সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের পক্ষে আছেন আইনজীবী যায়েদ বিন আমজাদ।
মানবতাবিরোধী অপরাধের এই মামলা ছাড়াও ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে আরও দুটি মামলা বিচারাধীন। এর মধ্যে একটি মামলায় আওয়ামী লীগের সাড়ে ১৫ বছরের শাসনামলে সংঘটিত গুম-খুনের ঘটনায় তাঁকে আসামি করা হয়েছে। অন্য মামলাটি হলো রাজধানীর মতিঝিলের শাপলা চত্বরে হেফাজতে ইসলামের সমাবেশে হত্যাকাণ্ড নিয়ে। এই তিনটি মামলার বিচারকাজই বর্তমানে দুটি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে চলমান।

গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।
আজ সোমবার বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের ট্রাইব্যুনাল-১-এ মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা (আইও) মো. আলমগীরের জেরা শুরু করেন রাষ্ট্র নিযুক্ত আইনজীবী আমীর হোসেন। আইনজীবী আমীর হোসেন পলাতক আসামি শেখ হাসিনা ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের পক্ষে শুনানি করছেন। এর আগে গত মঙ্গলবার তদন্তকারী কর্মকর্তা মো. আলমগীরের সাক্ষ্য গ্রহণ সম্পন্ন হয়।
এই মামলার শুনানিতে এর আগে গণ-অভ্যুত্থানের অন্যতম প্রতীক শহীদ আবু সাঈদের বাবাসহ স্বজনহারা পরিবারের একাধিক সদস্য সাক্ষ্য দিয়েছেন। এ ছাড়া মামলার গুরুত্বপূর্ণ ‘স্টার উইটনেস’ হিসেবে সাক্ষ্য দেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক এবং জুলাই আন্দোলনের অন্যতম নেতৃত্বদানকারী নাহিদ ইসলাম এবং দৈনিক আমার দেশ পত্রিকার সম্পাদক ড. মাহমুদুর রহমান।
গত বছরের জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার আন্দোলন দমনে আওয়ামী লীগ সরকার, তাদের দলীয় ক্যাডার ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর একটি অংশ গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটিত করে বলে অভিযোগ ওঠে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে শেখ হাসিনা, তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল এবং তৎকালীন আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের বিরুদ্ধে গত ১০ জুলাই অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দেন ট্রাইব্যুনাল-১।
পরবর্তীকালে, এই মামলার অন্যতম আসামি সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন দোষ স্বীকার করে ঘটনার সত্যতা উদ্ঘাটনে রাজসাক্ষী (অ্যাপ্রোভার) হওয়ার জন্য ট্রাইব্যুনালে আবেদন করেন। ট্রাইব্যুনাল তাঁর আবেদন মঞ্জুর করলে তিনি রাজসাক্ষী হিসেবে এই মামলায় সাক্ষ্য দেন।
মামলার প্রসিকিউশন পক্ষে শুনানি করছেন চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম, প্রসিকিউটর মিজানুল ইসলাম এবং গাজী এসএইচ তামিম। শুনানিতে তাঁদের সঙ্গে অপর প্রসিকিউটররাও উপস্থিত ছিলেন।
অন্যদিকে, এই মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে রাজসাক্ষী হওয়া সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের পক্ষে আছেন আইনজীবী যায়েদ বিন আমজাদ।
মানবতাবিরোধী অপরাধের এই মামলা ছাড়াও ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে আরও দুটি মামলা বিচারাধীন। এর মধ্যে একটি মামলায় আওয়ামী লীগের সাড়ে ১৫ বছরের শাসনামলে সংঘটিত গুম-খুনের ঘটনায় তাঁকে আসামি করা হয়েছে। অন্য মামলাটি হলো রাজধানীর মতিঝিলের শাপলা চত্বরে হেফাজতে ইসলামের সমাবেশে হত্যাকাণ্ড নিয়ে। এই তিনটি মামলার বিচারকাজই বর্তমানে দুটি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে চলমান।

রাজপথে রাজনৈতিক শক্তি পরীক্ষার পরিস্থিতি অনেকটাই যেন রবিঠাকুরের কবিতার সেই লাইন দুটির মতো: ‘যারে তুমি নীচে ফেল সে তোমারে বাঁধিবে যে নীচে/ পশ্চাতে রেখেছ যারে সে তোমারে পশ্চাতে টানিছে।’ বড় দুটি রাজনৈতিক দল একটি অপরটিকে নিচে ফেলার কিংবা পশ্চাতে বা পেছনে ফেলার চেষ্টা করছে। বিএনপি চেষ্টা করছে আওয়ামী লীগক
০১ নভেম্বর ২০২৩
‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর...
১২ জুন ২০২৫
ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।
১৯ মে ২০২৫
আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
০৮ মে ২০২৫
‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর সঙ্গে।
মাছের সুষ্ঠু প্রজনন, উৎপাদন, মৎস্যসম্পদ সংরক্ষণ ও টেকসই মৎস্য আহরণের জন্য সমুদ্রে সব ধরনের মাছ শিকার ৫৮ দিনের নিষেধাজ্ঞা গতকাল বুধবার দিবাগত মধ্যরাতে শেষ হয়েছে। তাই গতকাল দিনভর ছিল উপকূলের জেলেপল্লিগুলোতে ব্যস্ততা। অনেকে দেখে নিচ্ছিলেন ট্রলার ঠিকঠাক আছে কি না, কেউ জালের ছেঁড়া অংশ সেলাই করছিলেন, কেউ আবার প্রয়োজনীয় খাদ্যসামগ্রীসহ অন্য সরঞ্জাম গুছিয়ে নিচ্ছিলেন।
বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র এবং ফকিরহাট উপ-মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের ঘাটে গতকাল শত শত ট্রলার নোঙর করে রাখা ছিল। জেলেদের উপস্থিতিতে ঘাট এলাকা সরগরম হয়ে ওঠে। ফকিরহাটের মুদি-মনিহারি দোকানগুলোতে জেলেরা কেনাকাটা করতে ভিড় জমান। ফকিরহাট এলাকার বিসমিল্লাহ ট্রলারের মাঝি রহিম মিয়া বলেন, ‘সাগরে মাছ শিকারে যেতে সকল প্রস্তুতি নিয়েছি। নিষেধাজ্ঞার সময় শেষ হওয়ামাত্রই সাগরে নামব।’
জেলে নুরসাইদ ও ফোরকান মিয়া বলেন, ‘নিষেধাজ্ঞার সময় পরিবার-পরিজন নিয়ে বেশ কষ্টে কেটেছে। ওই সময়ে বেশ টাকা ঋণ করেছি। এখন সাগরে যাব। দেখি আল্লাহ ঋণ পরিশোধ করতে দেন কি না।’
নোয়াখালীর হাতিয়ার সূর্যমুখী, বাংলাবাজার, কাজিরবাজার, পাইতান মার্কেট চেয়ারম্যান ঘাটসহ বেশ কয়েকটি ঘাটে গতকাল জেলেদের ব্যস্ত সময় পার করতে দেখা গেছে। অনেকে নৌকায় জাল তুলছিলেন, আবার অনেকে জ্বালানি তেল মজুতসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্রী ট্রলারে নিয়ে যান। সূর্যমুখী ঘাটের এমভি মায়ের দোয়া ট্রলারের মাঝি জাফর উল্যা বলেন, ‘সাগরে ৮-১০ দিন থাকার প্রস্তুতি নিচ্ছি। সন্ধ্যায় সাগরের উদ্দেশে রওনা দেব।’
সূর্যমুখী ঘাট জেলে সমিতির সভাপতি জবিয়ল হক বলেন, ‘সাগরে নামতে প্রস্তুত নোয়াখালীর হাতিয়ার ২০টি ঘাটের লক্ষাধিক জেলে। এসব ঘাটে প্রায় ১০ হাজার ছোট-বড় ফিশিং ট্রলার রয়েছে। প্রতি ট্রলারে ১০ জন হলেও লক্ষাধিক জেলে এই মাছ ধরার সঙ্গে জড়িত। তাঁদের সবাই গত ৫৮ দিন তীরে বেকার ছিলেন।’
পিরোজপুরের ইন্দুরকানি উপজেলার পাড়েরহাট মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের পার্শ্ববর্তী এলাকার জেলেরা গতকাল দিনভর সাগরে যাওয়ার প্রস্তুতি নেন। এ ছাড়া মঠবাড়িয়া উপজেলার সাপলেজা, খেতাচিড়া, বড়মাছুয়া, ছোটমাছুয়া, ভান্ডারিয়া উপজেলার চরখালী, হেতালিয়া, কাউখালী উপজেলার সোনাকুর এলাকার জেলেরা, সদর উপজেলা এবং নেছারাবাদ উপজেলার বিভিন্ন এলাকার জেলেরা প্রস্তুতি শেষে গত রাতে বঙ্গোপসাগরে রওনা হন।
কয়েক দিন ধরে কক্সবাজার উপকূলের জেলেপল্লিগুলোতে নৌকা, জাল মেরামতসহ বিভিন্ন প্রস্তুতি সেরেছেন জেলেরা। গতকাল মেরিন ড্রাইভের টেকনাফের খুরেরমুখ, সাবরাং ও বাহারছড়া এলাকায় দেখা গেছে, সড়কে দাঁড় করিয়ে রাখা সারি সারি ট্রলারে জাল ও রসদ তোলেন জেলেরা।
একটি ট্রলারের মাঝি আবু তাহের জানান, এবার ভারতের সঙ্গে মিল রেখে নিষেধাজ্ঞা দেওয়ায় কেউ সাগরে মাছ শিকারে নামেনি। এতে উপকূলের কাছাকাছি সাগরে জাল ফেললেই ইলিশসহ অন্য মাছ পাওয়া যাবে বলে আশাবাদী তিনি।
কক্সবাজার শহরের ফিশারি ঘাটের মৎস্য ব্যবসায়ী সমিতির পরিচালক জুলফিকার আলী জানান, কক্সবাজার উপকূলে ছোট-বড় ৭ হাজারের মতো যান্ত্রিক ট্রলার রয়েছে। এসব ট্রলারে প্রায় এক লাখ জেলে ও শ্রমিক নিয়োজিত রয়েছেন। অধিকাংশ ট্রলার নিষেধাজ্ঞা ওঠার সঙ্গে সঙ্গে সাগরে রওনা হবে।
[প্রতিবেদন তৈরিতে তথ্য দিয়ে সহায়তা করেছেন বরগুনা ও আমতলী, পিরোজপুর, কক্সবাজার এবং হাতিয়া প্রতিনিধি]

‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর সঙ্গে।
মাছের সুষ্ঠু প্রজনন, উৎপাদন, মৎস্যসম্পদ সংরক্ষণ ও টেকসই মৎস্য আহরণের জন্য সমুদ্রে সব ধরনের মাছ শিকার ৫৮ দিনের নিষেধাজ্ঞা গতকাল বুধবার দিবাগত মধ্যরাতে শেষ হয়েছে। তাই গতকাল দিনভর ছিল উপকূলের জেলেপল্লিগুলোতে ব্যস্ততা। অনেকে দেখে নিচ্ছিলেন ট্রলার ঠিকঠাক আছে কি না, কেউ জালের ছেঁড়া অংশ সেলাই করছিলেন, কেউ আবার প্রয়োজনীয় খাদ্যসামগ্রীসহ অন্য সরঞ্জাম গুছিয়ে নিচ্ছিলেন।
বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র এবং ফকিরহাট উপ-মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের ঘাটে গতকাল শত শত ট্রলার নোঙর করে রাখা ছিল। জেলেদের উপস্থিতিতে ঘাট এলাকা সরগরম হয়ে ওঠে। ফকিরহাটের মুদি-মনিহারি দোকানগুলোতে জেলেরা কেনাকাটা করতে ভিড় জমান। ফকিরহাট এলাকার বিসমিল্লাহ ট্রলারের মাঝি রহিম মিয়া বলেন, ‘সাগরে মাছ শিকারে যেতে সকল প্রস্তুতি নিয়েছি। নিষেধাজ্ঞার সময় শেষ হওয়ামাত্রই সাগরে নামব।’
জেলে নুরসাইদ ও ফোরকান মিয়া বলেন, ‘নিষেধাজ্ঞার সময় পরিবার-পরিজন নিয়ে বেশ কষ্টে কেটেছে। ওই সময়ে বেশ টাকা ঋণ করেছি। এখন সাগরে যাব। দেখি আল্লাহ ঋণ পরিশোধ করতে দেন কি না।’
নোয়াখালীর হাতিয়ার সূর্যমুখী, বাংলাবাজার, কাজিরবাজার, পাইতান মার্কেট চেয়ারম্যান ঘাটসহ বেশ কয়েকটি ঘাটে গতকাল জেলেদের ব্যস্ত সময় পার করতে দেখা গেছে। অনেকে নৌকায় জাল তুলছিলেন, আবার অনেকে জ্বালানি তেল মজুতসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্রী ট্রলারে নিয়ে যান। সূর্যমুখী ঘাটের এমভি মায়ের দোয়া ট্রলারের মাঝি জাফর উল্যা বলেন, ‘সাগরে ৮-১০ দিন থাকার প্রস্তুতি নিচ্ছি। সন্ধ্যায় সাগরের উদ্দেশে রওনা দেব।’
সূর্যমুখী ঘাট জেলে সমিতির সভাপতি জবিয়ল হক বলেন, ‘সাগরে নামতে প্রস্তুত নোয়াখালীর হাতিয়ার ২০টি ঘাটের লক্ষাধিক জেলে। এসব ঘাটে প্রায় ১০ হাজার ছোট-বড় ফিশিং ট্রলার রয়েছে। প্রতি ট্রলারে ১০ জন হলেও লক্ষাধিক জেলে এই মাছ ধরার সঙ্গে জড়িত। তাঁদের সবাই গত ৫৮ দিন তীরে বেকার ছিলেন।’
পিরোজপুরের ইন্দুরকানি উপজেলার পাড়েরহাট মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের পার্শ্ববর্তী এলাকার জেলেরা গতকাল দিনভর সাগরে যাওয়ার প্রস্তুতি নেন। এ ছাড়া মঠবাড়িয়া উপজেলার সাপলেজা, খেতাচিড়া, বড়মাছুয়া, ছোটমাছুয়া, ভান্ডারিয়া উপজেলার চরখালী, হেতালিয়া, কাউখালী উপজেলার সোনাকুর এলাকার জেলেরা, সদর উপজেলা এবং নেছারাবাদ উপজেলার বিভিন্ন এলাকার জেলেরা প্রস্তুতি শেষে গত রাতে বঙ্গোপসাগরে রওনা হন।
কয়েক দিন ধরে কক্সবাজার উপকূলের জেলেপল্লিগুলোতে নৌকা, জাল মেরামতসহ বিভিন্ন প্রস্তুতি সেরেছেন জেলেরা। গতকাল মেরিন ড্রাইভের টেকনাফের খুরেরমুখ, সাবরাং ও বাহারছড়া এলাকায় দেখা গেছে, সড়কে দাঁড় করিয়ে রাখা সারি সারি ট্রলারে জাল ও রসদ তোলেন জেলেরা।
একটি ট্রলারের মাঝি আবু তাহের জানান, এবার ভারতের সঙ্গে মিল রেখে নিষেধাজ্ঞা দেওয়ায় কেউ সাগরে মাছ শিকারে নামেনি। এতে উপকূলের কাছাকাছি সাগরে জাল ফেললেই ইলিশসহ অন্য মাছ পাওয়া যাবে বলে আশাবাদী তিনি।
কক্সবাজার শহরের ফিশারি ঘাটের মৎস্য ব্যবসায়ী সমিতির পরিচালক জুলফিকার আলী জানান, কক্সবাজার উপকূলে ছোট-বড় ৭ হাজারের মতো যান্ত্রিক ট্রলার রয়েছে। এসব ট্রলারে প্রায় এক লাখ জেলে ও শ্রমিক নিয়োজিত রয়েছেন। অধিকাংশ ট্রলার নিষেধাজ্ঞা ওঠার সঙ্গে সঙ্গে সাগরে রওনা হবে।
[প্রতিবেদন তৈরিতে তথ্য দিয়ে সহায়তা করেছেন বরগুনা ও আমতলী, পিরোজপুর, কক্সবাজার এবং হাতিয়া প্রতিনিধি]

রাজপথে রাজনৈতিক শক্তি পরীক্ষার পরিস্থিতি অনেকটাই যেন রবিঠাকুরের কবিতার সেই লাইন দুটির মতো: ‘যারে তুমি নীচে ফেল সে তোমারে বাঁধিবে যে নীচে/ পশ্চাতে রেখেছ যারে সে তোমারে পশ্চাতে টানিছে।’ বড় দুটি রাজনৈতিক দল একটি অপরটিকে নিচে ফেলার কিংবা পশ্চাতে বা পেছনে ফেলার চেষ্টা করছে। বিএনপি চেষ্টা করছে আওয়ামী লীগক
০১ নভেম্বর ২০২৩
গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।
০৬ অক্টোবর ২০২৫
ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।
১৯ মে ২০২৫
আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
০৮ মে ২০২৫নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা

ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।
ভারতের নিষেধাজ্ঞার এক দিন পরই গত রোববার লালমনিরহাটের বুড়িমারী ও যশোরের বেনাপোল স্থলবন্দরসহ বিভিন্ন বন্দরে পণ্যের ট্রাক আটকে দেয় ভারত। সংশ্লিষ্টদের সূত্রে জানা যায়, রোববার ভারতের আমদানি বিধিনিষেধের কারণে বুড়িমারী সীমান্তে প্রাণের ১৭ ট্রাক খাদ্যপণ্য আটকে যায়। এ ছাড়া বেনাপোলে ৩৬টি পোশাক বোঝাই ট্রাকসহ অন্যান্য পণ্যের শতাধিক ট্রাক ঢুকতে পারেনি।
গতকাল সোমবার পর্যন্ত বুড়িমারী থেকে প্রাণের পণ্যবোঝাই ট্রাকগুলোর অর্ধেকের বেশি ফেরত নিয়ে আসে প্রতিষ্ঠানটি। এ ছাড়া বেনাপোলে পোর্টের ভেতরে ২৪টি ট্রাক ছাড়া বাকিগুলো ফেরত চলে যায়।
বেনাপোল বন্দর সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট স্টাফ অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মো. সাজেদুর রহমান গতকাল সোমবার আজকের পত্রিকাকে বলেন, গতকাল পোর্টের ভেতর ও বাইরে শতাধিক ট্রাক দাঁড়িয়ে ছিল। আজ পোর্টের ভেতরের ২৪টি ছাড়া বাকিগুলো ফেরত নিয়ে গেছেন মালিকেরা। এখন পর্যন্ত মনে হচ্ছে, পোর্টের ভেতরের ট্রাকগুলোও ফেরত নিতে হবে।
জানতে চাইলে প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের পরিচালক (বিপণন) কামরুজ্জামান কামাল আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমাদের হাতে ৬ মিলিয়ন ডলারের ক্রয় আদেশ রয়েছে। তার মধ্য থেকে রোববার বুড়িমারী দিয়ে ১৭ ট্রাকবোঝাই পণ্য পাঠিয়েছিলাম। কিন্তু সেগুলো ঢুকতে পারেনি। ট্রাকগুলো ফেরত আনা হচ্ছে। নতুন করে কাগজপত্র তৈরি করে অন্য পথ দিয়ে পণ্য পাঠাতে হবে।’
বেনাপোল স্থলবন্দর সূত্রে জানা যায়, ওই ২৪টি ট্রাক পোর্টের ভেতরে থাকায় এখনো তারা ভারতে প্রবেশের অপেক্ষায় রয়েছে। তাদের আশা, যেহেতু নিষেধাজ্ঞার আগে এই পণ্যগুলোর এলসি করা হয়েছিল, তাই এগুলো প্রবেশে অনুমতি পাবে। তবে এটি নির্ভর করবে বাংলাদেশ সরকারের আলোচনার ওপর।
এমন পরিস্থিতিতে সরকারের সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় রয়েছেন ব্যবসায়ীরা। ইতিমধ্যে অনেক রপ্তানিকারক রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) সঙ্গে আলোচনা করে সরকারের সহযোগিতা চেয়েছে।
স্থলবন্দরের মাধ্যমে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জসমূহ এবং আশু করণীয় নির্ধারণে বাণিজ্যসচিবের সভাপতিত্বে আজ মঙ্গলবার আন্তমন্ত্রণালয়ের সভা ডেকেছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, স্থলবন্দরের মাধ্যমে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জসমূহ এবং আশু করণীয় নির্ধারণে বাণিজ্যসচিবের সভাপতিত্বে বিকেল ৪টায় আন্তমন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে এই সভা অনুষ্ঠিত হবে।
সভায় নৌপরিবহন ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশন, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড, বাংলাদেশ স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষ, রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো, জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের প্রতিনিধিদের উপস্থিত থাকতে বলা হয়েছে। এ ছাড়া ব্যবসায়ী প্রতিনিধি হিসেবে এফবিসিসিআই, বিজিএমইএ, ভারত-বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির প্রতিনিধিদের উপস্থিতির জন্য আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে।
ভারতের শিল্প ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয় গত শনিবার হঠাৎ এক বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে স্থলবন্দর দিয়ে বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক আমদানি নিষিদ্ধ করে। শুধু ভারতের নবসেবা ও কলকাতা সমুদ্রবন্দর ব্যবহার করে দেশটির আমদানিকারকেরা বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক আমদানি করতে পারবেন বলে ওই বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়। এ ছাড়া বাংলাদেশ থেকে ভারতের আসাম, মেঘালয়, ত্রিপুরা ও মিজোরাম, পশ্চিমবঙ্গের চ্যাংড়াবান্দা ও ফুলবাড়ী শুল্ক স্টেশন দিয়ে ফল, ফলের স্বাদযুক্ত পানীয়, কোমল পানীয়, প্রক্রিয়াজাত খাদ্য, প্লাস্টিক পণ্য, সুতা, সুতার উপজাত, আসবাব রপ্তানিও নিষিদ্ধ করা হয় ওই বিজ্ঞপ্তিতে।
আমদানি ও রপ্তানিসংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা জানান, দেশের ২৪টি বন্দরের মধ্যে ১৬টি বন্দর দিয়ে ভারতের সঙ্গে আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য হয়ে থাকে। তবে যোগাযোগব্যবস্থা সহজ হওয়ায় বেনাপোল ও ভারতের পেট্রাপোল বন্দর দিয়ে সবচেয়ে বেশি আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য হয়। এর পরিমাণ ৮০ শতাংশ। বেনাপোল বন্দর দিয়ে প্রতিদিন ভারতে ২৫০ থেকে ৩০০ ট্রাকে বিভিন্ন ধরনের পণ্য রপ্তানি হয়। এর মধ্যে শতাধিক ট্রাক পণ্য থাকে তৈরি পোশাক।
এর আগে গত ৮ এপ্রিল বাংলাদেশের জন্য ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা বাতিল করে ভারত। ফলে ভারতের বিমানবন্দর ব্যবহার করে তৃতীয় কোনো দেশে তৈরি পোশাক রপ্তানি করতে পারছে না বাংলাদেশ। অন্যদিকে প্রায় এক মাস আগে ভারত থেকে বেনাপোল, ভোমরা, সোনামসজিদ, বাংলাবান্ধা, বুড়িমারী স্থলবন্দর দিয়ে সুতা আমদানির সুযোগ বন্ধ করে দেয় বাংলাদেশের জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)।
সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) বিশেষ ফেলো মোস্তাফিজুর রহমানের মতে, এই পাল্টাপাল্টি পদক্ষেপে তুলনামূলকভাবে বেশি নেতিবাচক প্রভাব পড়বে বাংলাদেশের ওপর। তাই ভারতের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য ঘাটতি কমানোর চেষ্টা অব্যাহত রাখাই সরকারের উচিত বলে মনে করছেন তিনি।
মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, আলোচনার মাধ্যমে বাংলাদেশ এবং ভারতের বিরোধপূর্ণ বিষয়সমূহ মিটিয়ে ফেলতে হবে এবং দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য সম্পর্কের ক্ষেত্রে ভারসাম্য প্রতিষ্ঠা করতে হবে। এটাই হবে উভয় দেশের জন্য কল্যাণকর।

ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।
ভারতের নিষেধাজ্ঞার এক দিন পরই গত রোববার লালমনিরহাটের বুড়িমারী ও যশোরের বেনাপোল স্থলবন্দরসহ বিভিন্ন বন্দরে পণ্যের ট্রাক আটকে দেয় ভারত। সংশ্লিষ্টদের সূত্রে জানা যায়, রোববার ভারতের আমদানি বিধিনিষেধের কারণে বুড়িমারী সীমান্তে প্রাণের ১৭ ট্রাক খাদ্যপণ্য আটকে যায়। এ ছাড়া বেনাপোলে ৩৬টি পোশাক বোঝাই ট্রাকসহ অন্যান্য পণ্যের শতাধিক ট্রাক ঢুকতে পারেনি।
গতকাল সোমবার পর্যন্ত বুড়িমারী থেকে প্রাণের পণ্যবোঝাই ট্রাকগুলোর অর্ধেকের বেশি ফেরত নিয়ে আসে প্রতিষ্ঠানটি। এ ছাড়া বেনাপোলে পোর্টের ভেতরে ২৪টি ট্রাক ছাড়া বাকিগুলো ফেরত চলে যায়।
বেনাপোল বন্দর সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট স্টাফ অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মো. সাজেদুর রহমান গতকাল সোমবার আজকের পত্রিকাকে বলেন, গতকাল পোর্টের ভেতর ও বাইরে শতাধিক ট্রাক দাঁড়িয়ে ছিল। আজ পোর্টের ভেতরের ২৪টি ছাড়া বাকিগুলো ফেরত নিয়ে গেছেন মালিকেরা। এখন পর্যন্ত মনে হচ্ছে, পোর্টের ভেতরের ট্রাকগুলোও ফেরত নিতে হবে।
জানতে চাইলে প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের পরিচালক (বিপণন) কামরুজ্জামান কামাল আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমাদের হাতে ৬ মিলিয়ন ডলারের ক্রয় আদেশ রয়েছে। তার মধ্য থেকে রোববার বুড়িমারী দিয়ে ১৭ ট্রাকবোঝাই পণ্য পাঠিয়েছিলাম। কিন্তু সেগুলো ঢুকতে পারেনি। ট্রাকগুলো ফেরত আনা হচ্ছে। নতুন করে কাগজপত্র তৈরি করে অন্য পথ দিয়ে পণ্য পাঠাতে হবে।’
বেনাপোল স্থলবন্দর সূত্রে জানা যায়, ওই ২৪টি ট্রাক পোর্টের ভেতরে থাকায় এখনো তারা ভারতে প্রবেশের অপেক্ষায় রয়েছে। তাদের আশা, যেহেতু নিষেধাজ্ঞার আগে এই পণ্যগুলোর এলসি করা হয়েছিল, তাই এগুলো প্রবেশে অনুমতি পাবে। তবে এটি নির্ভর করবে বাংলাদেশ সরকারের আলোচনার ওপর।
এমন পরিস্থিতিতে সরকারের সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় রয়েছেন ব্যবসায়ীরা। ইতিমধ্যে অনেক রপ্তানিকারক রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) সঙ্গে আলোচনা করে সরকারের সহযোগিতা চেয়েছে।
স্থলবন্দরের মাধ্যমে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জসমূহ এবং আশু করণীয় নির্ধারণে বাণিজ্যসচিবের সভাপতিত্বে আজ মঙ্গলবার আন্তমন্ত্রণালয়ের সভা ডেকেছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, স্থলবন্দরের মাধ্যমে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জসমূহ এবং আশু করণীয় নির্ধারণে বাণিজ্যসচিবের সভাপতিত্বে বিকেল ৪টায় আন্তমন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে এই সভা অনুষ্ঠিত হবে।
সভায় নৌপরিবহন ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশন, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড, বাংলাদেশ স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষ, রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো, জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের প্রতিনিধিদের উপস্থিত থাকতে বলা হয়েছে। এ ছাড়া ব্যবসায়ী প্রতিনিধি হিসেবে এফবিসিসিআই, বিজিএমইএ, ভারত-বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির প্রতিনিধিদের উপস্থিতির জন্য আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে।
ভারতের শিল্প ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয় গত শনিবার হঠাৎ এক বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে স্থলবন্দর দিয়ে বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক আমদানি নিষিদ্ধ করে। শুধু ভারতের নবসেবা ও কলকাতা সমুদ্রবন্দর ব্যবহার করে দেশটির আমদানিকারকেরা বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক আমদানি করতে পারবেন বলে ওই বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়। এ ছাড়া বাংলাদেশ থেকে ভারতের আসাম, মেঘালয়, ত্রিপুরা ও মিজোরাম, পশ্চিমবঙ্গের চ্যাংড়াবান্দা ও ফুলবাড়ী শুল্ক স্টেশন দিয়ে ফল, ফলের স্বাদযুক্ত পানীয়, কোমল পানীয়, প্রক্রিয়াজাত খাদ্য, প্লাস্টিক পণ্য, সুতা, সুতার উপজাত, আসবাব রপ্তানিও নিষিদ্ধ করা হয় ওই বিজ্ঞপ্তিতে।
আমদানি ও রপ্তানিসংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা জানান, দেশের ২৪টি বন্দরের মধ্যে ১৬টি বন্দর দিয়ে ভারতের সঙ্গে আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য হয়ে থাকে। তবে যোগাযোগব্যবস্থা সহজ হওয়ায় বেনাপোল ও ভারতের পেট্রাপোল বন্দর দিয়ে সবচেয়ে বেশি আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য হয়। এর পরিমাণ ৮০ শতাংশ। বেনাপোল বন্দর দিয়ে প্রতিদিন ভারতে ২৫০ থেকে ৩০০ ট্রাকে বিভিন্ন ধরনের পণ্য রপ্তানি হয়। এর মধ্যে শতাধিক ট্রাক পণ্য থাকে তৈরি পোশাক।
এর আগে গত ৮ এপ্রিল বাংলাদেশের জন্য ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা বাতিল করে ভারত। ফলে ভারতের বিমানবন্দর ব্যবহার করে তৃতীয় কোনো দেশে তৈরি পোশাক রপ্তানি করতে পারছে না বাংলাদেশ। অন্যদিকে প্রায় এক মাস আগে ভারত থেকে বেনাপোল, ভোমরা, সোনামসজিদ, বাংলাবান্ধা, বুড়িমারী স্থলবন্দর দিয়ে সুতা আমদানির সুযোগ বন্ধ করে দেয় বাংলাদেশের জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)।
সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) বিশেষ ফেলো মোস্তাফিজুর রহমানের মতে, এই পাল্টাপাল্টি পদক্ষেপে তুলনামূলকভাবে বেশি নেতিবাচক প্রভাব পড়বে বাংলাদেশের ওপর। তাই ভারতের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য ঘাটতি কমানোর চেষ্টা অব্যাহত রাখাই সরকারের উচিত বলে মনে করছেন তিনি।
মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, আলোচনার মাধ্যমে বাংলাদেশ এবং ভারতের বিরোধপূর্ণ বিষয়সমূহ মিটিয়ে ফেলতে হবে এবং দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য সম্পর্কের ক্ষেত্রে ভারসাম্য প্রতিষ্ঠা করতে হবে। এটাই হবে উভয় দেশের জন্য কল্যাণকর।

রাজপথে রাজনৈতিক শক্তি পরীক্ষার পরিস্থিতি অনেকটাই যেন রবিঠাকুরের কবিতার সেই লাইন দুটির মতো: ‘যারে তুমি নীচে ফেল সে তোমারে বাঁধিবে যে নীচে/ পশ্চাতে রেখেছ যারে সে তোমারে পশ্চাতে টানিছে।’ বড় দুটি রাজনৈতিক দল একটি অপরটিকে নিচে ফেলার কিংবা পশ্চাতে বা পেছনে ফেলার চেষ্টা করছে। বিএনপি চেষ্টা করছে আওয়ামী লীগক
০১ নভেম্বর ২০২৩
গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।
০৬ অক্টোবর ২০২৫
‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর...
১২ জুন ২০২৫
আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
০৮ মে ২০২৫
আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
১৮৯৮ সালে ভারতের উত্তর প্রদেশের একটি ধূলিধূসর টিলা খুঁড়ে পাওয়া মূল্যবান এই রত্নগুলো এক শতাব্দীর বেশি সময় ধরে একটি বেসরকারি ব্রিটিশ সংগ্রহাগারে প্রায় দৃষ্টিচক্ষুর আড়ালে ছিল। এখন যেহেতু রত্নগুলোর হাতবদলের সময় এসেছে, তাই নতুন সংগ্রাহকেরা আগ্রহ নিয়ে এগুলো সংগ্রহের জন্য অপেক্ষা করছেন। কিন্তু এখানে একটা অস্বস্তিও তৈরি হয়েছে।
গৌতম বুদ্ধের জন্মস্থান লুম্বিনীর কাছাকাছি, বর্তমানে ভারতের উত্তর প্রদেশে একটি ইটের ঘরের ভেতর থেকে প্রায় ১ হাজার ৮০০টি মুক্তা, রুবি, টোপাজ, নীলা ও নকশা করা সোনার পাত সংগ্রহ করা হয়েছিল। তবে এই রত্নগুলোর সঙ্গে সঙ্গে একটি খোদাই করা পাত্রে হাড়ের টুকরাও পাওয়া যায়, যেগুলোকে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষ বলে শনাক্ত করা হয়। এই আবিষ্কার তখন প্রত্নতত্ত্বের জগতে ব্যাপক আলোড়ন তোলে।
সাদাবি’স এশিয়ার চেয়ারম্যান নিকোলাস চাউ মনে করেন, স্মরণকালের বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর মাঝে এই রত্নসম্ভার অন্যতম। তবে এগুলো নিলামে তোলার কারণে একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন তৈরি হয়েছে। আর তা হচ্ছে—ভারতের ইতিহাসের সঙ্গে গভীরভাবে জড়িয়ে থাকা এবং বৌদ্ধদের কাছে পবিত্র এই সম্পদ বিক্রি করা কি নৈতিকভাবে গ্রহণযোগ্য?
১৮৯৮ সালে ব্রিটিশ এস্টেট ম্যানেজার উইলিয়াম ক্ল্যাক্সটন পেপ্পে লুম্বিনির ঠিক দক্ষিণে পিপ্রাওয়ায় অবস্থিত একটি ঢিবি খনন করেন। সেখান থেকেই প্রায় ২ হাজার বছর আগের ওই নির্দশনগুলো খুঁজে পাওয়া যায়।
ইতিহাসবিদদের মতে, প্রাপ্ত রত্নসম্ভার ও দেহাবশেষ, যা তখনো পর্যন্ত অক্ষত ছিল, সেগুলো গৌতম বুদ্ধের শাক্য বংশের এবং বিশ্বব্যাপী বৌদ্ধদের ঐতিহ্য। হাড়ের নিদর্শনগুলো থাইল্যান্ড, শ্রীলঙ্কা ও মিয়ানমারের মতো দেশগুলোতে বিতরণ করা হয়েছে। এসব দেশে এখনো সেগুলোর পূজা করা হয়।

আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
১৮৯৮ সালে ভারতের উত্তর প্রদেশের একটি ধূলিধূসর টিলা খুঁড়ে পাওয়া মূল্যবান এই রত্নগুলো এক শতাব্দীর বেশি সময় ধরে একটি বেসরকারি ব্রিটিশ সংগ্রহাগারে প্রায় দৃষ্টিচক্ষুর আড়ালে ছিল। এখন যেহেতু রত্নগুলোর হাতবদলের সময় এসেছে, তাই নতুন সংগ্রাহকেরা আগ্রহ নিয়ে এগুলো সংগ্রহের জন্য অপেক্ষা করছেন। কিন্তু এখানে একটা অস্বস্তিও তৈরি হয়েছে।
গৌতম বুদ্ধের জন্মস্থান লুম্বিনীর কাছাকাছি, বর্তমানে ভারতের উত্তর প্রদেশে একটি ইটের ঘরের ভেতর থেকে প্রায় ১ হাজার ৮০০টি মুক্তা, রুবি, টোপাজ, নীলা ও নকশা করা সোনার পাত সংগ্রহ করা হয়েছিল। তবে এই রত্নগুলোর সঙ্গে সঙ্গে একটি খোদাই করা পাত্রে হাড়ের টুকরাও পাওয়া যায়, যেগুলোকে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষ বলে শনাক্ত করা হয়। এই আবিষ্কার তখন প্রত্নতত্ত্বের জগতে ব্যাপক আলোড়ন তোলে।
সাদাবি’স এশিয়ার চেয়ারম্যান নিকোলাস চাউ মনে করেন, স্মরণকালের বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর মাঝে এই রত্নসম্ভার অন্যতম। তবে এগুলো নিলামে তোলার কারণে একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন তৈরি হয়েছে। আর তা হচ্ছে—ভারতের ইতিহাসের সঙ্গে গভীরভাবে জড়িয়ে থাকা এবং বৌদ্ধদের কাছে পবিত্র এই সম্পদ বিক্রি করা কি নৈতিকভাবে গ্রহণযোগ্য?
১৮৯৮ সালে ব্রিটিশ এস্টেট ম্যানেজার উইলিয়াম ক্ল্যাক্সটন পেপ্পে লুম্বিনির ঠিক দক্ষিণে পিপ্রাওয়ায় অবস্থিত একটি ঢিবি খনন করেন। সেখান থেকেই প্রায় ২ হাজার বছর আগের ওই নির্দশনগুলো খুঁজে পাওয়া যায়।
ইতিহাসবিদদের মতে, প্রাপ্ত রত্নসম্ভার ও দেহাবশেষ, যা তখনো পর্যন্ত অক্ষত ছিল, সেগুলো গৌতম বুদ্ধের শাক্য বংশের এবং বিশ্বব্যাপী বৌদ্ধদের ঐতিহ্য। হাড়ের নিদর্শনগুলো থাইল্যান্ড, শ্রীলঙ্কা ও মিয়ানমারের মতো দেশগুলোতে বিতরণ করা হয়েছে। এসব দেশে এখনো সেগুলোর পূজা করা হয়।

রাজপথে রাজনৈতিক শক্তি পরীক্ষার পরিস্থিতি অনেকটাই যেন রবিঠাকুরের কবিতার সেই লাইন দুটির মতো: ‘যারে তুমি নীচে ফেল সে তোমারে বাঁধিবে যে নীচে/ পশ্চাতে রেখেছ যারে সে তোমারে পশ্চাতে টানিছে।’ বড় দুটি রাজনৈতিক দল একটি অপরটিকে নিচে ফেলার কিংবা পশ্চাতে বা পেছনে ফেলার চেষ্টা করছে। বিএনপি চেষ্টা করছে আওয়ামী লীগক
০১ নভেম্বর ২০২৩
গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।
০৬ অক্টোবর ২০২৫
‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর...
১২ জুন ২০২৫
ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।
১৯ মে ২০২৫