Ajker Patrika

জুমার দিনের আমলগুলো

ড. আবু সালেহ মুহাম্মদ তোহা
আপডেট : ০৬ মে ২০২২, ১১: ১৭
জুমার দিনের আমলগুলো

জুমার রাত ও দিন জুড়ে রয়েছে অনেক আমল। বৃহস্পতিবার সূর্যাস্তের পর থেকে শুক্রবার সূর্যাস্ত পর্যন্ত জুমার পরিধি। শুধু জুমার নামাজ আদায় করাকেই জুমার একমাত্র আমল মনে করার অবকাশ নেই। সপ্তাহের অন্যান্য দিনের স্বাভাবিক রুটিনমাফিক ইবাদতের পাশাপাশি জুমার রাত ও দিনে বাড়তি ইবাদত-বন্দেগি করা চাই। তাহলেই জুমা অর্থবহ ও যথার্থ হবে। একটু বাড়তি ও বিশেষ আমলের জন্যই আল্লাহ জুমা দান করেছেন। এখানে জুমার ১০টি আমলের কথা তুলে ধরা হলো:
১. জুমার রাতের (বৃহস্পতিবার দিনগত রাত) মাগরিব ও এশার নামাজে নির্ধারিত সুরা পড়া। জাবির ইবনে সামুরা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) জুমার রাতে মাগরিবের নামাজে সুরা কাফিরুন ও সুরা ইখলাস তিলাওয়াত করতেন। আর এশার নামাজে সুরা জুমা ও সুরা মুনাফিকুন তিলাওয়াত করতেন। (ইবনে হিব্বান, হাদিস: ১৮৪১)

২. রাতে সুরা দুখান তিলাওয়াত করা। আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, যে ব্যক্তি জুমার রাতে সুরা দুখান তিলাওয়াত করে আল্লাহ তাআলা তাকে ক্ষমা করে দেন। (তিরমিজি, হাদিস: ২৮৮৯)

৩. জুমার দিন ফজরের ফরজ নামাজের প্রথম রাকাতে সুরা সিজদা এবং দ্বিতীয় রাকাতে সুরা দাহর তিলাওয়াত করা। আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) জুমার দিন ফজর নামাজের প্রথম রাকাতে সুরা সিজদা এবং দ্বিতীয় রাকাতে সুরা আদ-দাহর তিলাওয়াত করতেন। (বুখারি, হাদিস: ৮৫১)
৪. দিনে সুরা কাহফ তিলাওয়াত করা। আবু সাইদ খুদরি (রা.) থেকে বর্ণিত, নবী (সা.) বলেছেন, ‘যে জুমার দিন সুরা কাহফ তিলাওয়াত করে তার জন্য দুই জুমার মধ্যবর্তী সময়টি বিশেষ আলো দিয়ে আলোকিত করা হয়। (বায়হাকি, হাদিস: ৫৭৯২) এ ছাড়া দাজ্জালের ফিতনা থেকে রক্ষা পাওয়া যায়।’ (মুসলিম, হাদিস: ১৯১৯)

৫. কেয়ামতের ভয়াবহতা স্মরণ করা। জুমার দিন কিয়ামত সংঘটিত হবে। এ জন্য আল্লাহর নিকটতম ফেরেশতারা এবং বৃহৎ সৃষ্টিকুল জুমার দিন কিয়ামত সংঘটিত হওয়ার আশঙ্কায় ভীতসন্ত্রস্ত থাকে। কাজেই প্রত্যেক ইমানদারের জন্যও দিনটিতে কিয়ামতের ভয়াবহতা স্মরণ করে আল্লাহর দিকে মনোনিবেশ করা উচিত। আবু লুবাবা (রা.) থেকে বর্ণিত, নবী (সা.) জুমার প্রসঙ্গ বলতে গিয়ে বলেছেন, ‘জুমার দিন কিয়ামত সংঘটিত হবে। প্রত্যেক সম্মানিত ফেরেশতা, আকাশ, জমিন, বাতাস, পাহাড়-পর্বত ও সমুদ্র—সবকিছুই জুমার দিন ভীতসন্ত্রস্ত থাকবে।’ (ইবনে মাজাহ, হাদিস: ১০৮৪)

৬. জুমার দিন আগে-আগে মসজিদে যাওয়া। মহানবী (সা.)-এর যুগে সকাল থেকেই জুমার প্রস্তুতি শুরু হতো। মুসল্লিরা এত আগে জুমার নামাজে হাজির হতো যে প্রথম আজানেরই প্রয়োজন হতো না। ক্রমান্বয়ে মানুষের দুর্বলতার কারণে উসমান (রা.) সাহাবাদের সঙ্গে পরামর্শ করে প্রথম আজান চালু করেন। আউস ইবনে আউস আস-সাকাফি (রা.) থেকে বর্ণিত, আমি রাসুল (সা.)-কে বলতে শুনেছি, ‘যে ব্যক্তি জুমার দিন ভালোভাবে গোসল করে, এরপর তাড়াতাড়ি প্রস্তুত হয় এবং আগেভাগে কোনো বাহনে না চড়ে হেঁটে মসজিদে যায়, ইমামের নিকটবর্তী হয়ে বসে, মনোযোগসহকারে খুতবা শ্রবণ করে আর অনর্থক কথা ও কাজ থেকে বিরত থাকে, তার প্রতি কদমে পূর্ণ এক বছরের রোজা ও নামাজের সওয়াব প্রদান করা হয়।’ (তিরমিজি, হাদিস: ৪৯৬)

৭. নবী (সা.)-এর প্রতি দরুদ পাঠ করা। জুমার দিন সময় করে নবী (সা.)-এর প্রতি বেশি বেশি দরুদ পাঠ করা উচিত। আবু দারদা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘জুমার দিন আমার প্রতি বেশি বেশি দরুদ পাঠ করো। কেননা, এটি উপস্থিতির দিন। এ দিনে ফেরেশতারা (আল্লাহর বিশেষ রহমত নিয়ে) উপস্থিত হন। তোমাদের যে কেউই আমার প্রতি দরুদ পাঠ করে, তার দরুদ আমার কাছে পেশ করা হয়, যতক্ষণ পর্যন্ত সে দরুদপাঠ থেকে অবসর না হয়।’ (আবু দাউদ, হাদিস: ১০৪৯)

জুমার দিনের একটি বিশেষ দরুদ রয়েছে। যে ব্যক্তি জুমার দিন আসরের নামাজ আদায় করে নিজ স্থানে বসে ৮০ বার দরুদটি পাঠ করে, তার ৮০ বছরের গুনাহ মাফ হয় এবং ৮০ বছরের ইবাদতের সওয়াব লাভ হয়। (ইরশাদুল ইবাদ ইলা-সাবিলির রাশাদ: ১/৮১) 
দরুদটি হলো—আল্লাহুম্মা সাল্লি ‘আলা মুহাম্মাদিনিন্ নাবিয়্যিল উম্মিয়্যি ওয়া ‘আলা আলিহি ওয়া-সাল্লিম তাসলিমা।

৮. দান-সদকা করা। জুমার দিন সাধ্যমতো দান-সদকা করতে হবে। এ দিনের দান-সদকা অন্যদিনের চেয়ে বেশি ফজিলতপূর্ণ। আবু সাইদ খুদরি (রা.) থেকে বর্ণিত, কা’ব (রা.) বলেন, ‘আমি কি তোমাদের জুমার দিন সম্পর্কে বলব না? জুমার দিন দান-সদকা করা অন্যান্য দিনে দান-সদকা করার চেয়ে অতি উত্তম।’ (যাদুল মায়াদ, পৃ. ৪১২)

৯. বাবা-মা মারা গিয়ে থাকলে কমপক্ষে জুমার দিন তাদের কবর জিয়ারত করা। মুহাম্মদ ইবনে নোমান বর্ণনা করেন, নবী (সা.) বলেন, ‘যে ব্যক্তি প্রত্যেক জুমার দিন তার বাবা-মায়ের অথবা অন্য কারও কবর জিয়ারত করে, তাকে ক্ষমা করা হয় এবং সে বাবা-মায়ের অনুগত সন্তান হিসেবে পরিগণিত হয়।’ (শুআবুল ইমান, হাদিস: ৭৯০১)

১০. জুমার দিন একটি বিশেষ সময়ে আল্লাহ তাআলার কাছে দোয়া করা। মুসলিমের বর্ণনা অনুযায়ী এ সময়টি হলো, ইমামের মিম্বারে বসার সময় থেকে নামাজ শেষ করা পর্যন্ত। (মুসলিম, হাদিস: ২০১২)

তিরমিজির বর্ণনা অনুযায়ী এ সময়টি হলো, আসর থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত। (তিরমিজি, হাদিস: ৪৮৯)সূর্যাস্তের মাধ্যমে জুমার দিনের সমাপ্তি ঘটে। কাজেই এই প্রান্তিক পর্যায়ে বেশি বেশি দোয়া, ইস্তিগফার ও আল্লাহর কাছে কল্যাণ প্রার্থনা করা খুব জরুরি। আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) জুমার দিনের আলোচনায় বলেন, ‘জুমার দিন এমন একটি মুহূর্ত রয়েছে, যদি কোনো মুসলমান বান্দা নামাজ অবস্থায় সে সময়টি লাভ করে এবং আল্লাহর কাছে কোনো কল্যাণ প্রার্থনা করে, আল্লাহ তাকে অবশ্যই তা দান করেন।’ আর তিনি হাত দিয়ে সময়টির স্বল্পতার প্রতি ইঙ্গিত করেন। (বুখারি, হাদিস: ৮৯৩)

ড. আবু সালেহ মুহাম্মদ তোহা, সহযোগী অধ্যাপক, আরবি বিভাগ, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত