মীর রাকিব হাসান

বাংলাদেশে হাওয়াইয়ান গিটার জনপ্রিয় করার নেপথ্য সৈনিক শিল্পী এনামুল কবির। বয়স এখন ৮০। কৈশোর-যৌবনে পেয়েছেন বঙ্গবন্ধুর স্নেহ, সান্নিধ্য। স্বাধীনতার গান, মুক্তিযুদ্ধের গান, বঙ্গবন্ধুর গান, দেশাত্মবোধক গান, লোকজ গানে তাঁর অবদান উল্লেখ করার মতো। জনপ্রিয়তা, সম্মান, পুরস্কার—সবই মিলেছে, মেলেনি আজ অবধি কোনো রাষ্ট্রীয় সম্মাননা। তাঁকে নিয়ে লিখেছেন মীর রাকিব হাসান।
ঘরজুড়ে স্মৃতিকাহন
বাসায় ঢুকলেই চারপাশে সংগীতের আবহ। কোথাও গিটার, কোথাও নিজের সম্পাদিত স্বরলিপির বই কিংবা গান আর নিজ বাদনের গিটারের ক্যাসেট, সিডি। আলাপে আলাপে এনামুল কবির আমন্ত্রণ জানালেন বাসা ঘুরে দেখার। বললেন, ‘আমার প্রায় ৬৫ বছরের সংগীতজীবনের সংগ্রহশালা।’ তাঁর নিজস্ব রেকর্ডিং স্টুডিও, আনুষঙ্গিক বিভিন্ন বাদ্যযন্ত্র, বই, সিডি, ক্যাসেট। দেয়ালে ঝুলছে স্বনামধন্য ব্যক্তিদের সঙ্গে ঘরোয়া আড্ডার কিছু স্থিরচিত্র, যেখানে রয়েছে বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদসহ অনেকর সঙ্গে তোলা ছবি। এনামুল কবির জানালেন, ছেলে এনায়েত কবির চঞ্চল ছিলেন ঢাকা কলেজের ছাত্রলীগের একসময়ের ভিপি। বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যখন ১৯৮১ সালে দেশে ফেরেন, সেই সময় যাঁরা তাঁকে নিরাপত্তা দিতে বুক পেতে সামনে থাকতেন, তাঁদের একজন ছিলেন চঞ্চল। পরে যুবলীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য হন চঞ্চল। শেখ হাসিনার যেমন ছিলেন আস্থাভাজন, ছিলেন স্নেহভাজনও। তাই ঘরোয়া অনুষ্ঠানাদিতে শেখ হাসিনা বাসায় আসতেন।
নেই রাষ্ট্রীয় সম্মাননা
ঘরজুড়ে রয়েছে দেশের বিভিন্ন সংগঠন থেকে প্রাপ্ত অসংখ্য সম্মাননা—পদক, পুরস্কার। আন্তর্জাতিক অঙ্গন থেকেও এসেছে সম্মাননা। কিন্তু নেই কোনো রাষ্ট্রীয় সম্মাননা-পদক। কৌতূহলী হয়ে প্রশ্ন করলাম, রাষ্ট্রীয় কোনো সম্মাননা পাননি? এনামুল কবির হাসিমুখে বললেন, ‘সেজন্য আক্ষেপ নেই। আমি হয়তো এখনো সেই সম্মানের যোগ্য হইনি। তবে মেয়েকে বলে রেখেছি, আমার মৃত্যুর পর যেন কোনো রাষ্ট্রীয় সম্মাননা গ্রহণ করা না হয়। আমি আমার শ্রোতা ও দেশের মানুষের যে ভালোবাসা পেয়েছি, সৃষ্টিকর্তার অশেষ রহমতে এখনো দেশের সংগীতের জন্য কাজ করে যাচ্ছি, এর ওপরে আর কী সম্মান হতে পারে! বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশ দিয়েছেন, আমি বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে সুরে গানে স্বরলিপিতে কিছু করতে পেরেছি, আন্তর্জাতিক অঙ্গনে তাঁকে তুলে ধরার চেষ্টা করেছি—এটাই তো বড় প্রাপ্তি। আমার চাওয়া হলো, রাষ্ট্রীয় পদকের যেন অবমাননা না হয়।’
আক্ষেপ তো আছেই
বেশ কিছু বিষয়ে আক্ষেপ রয়েছ এনামুল কবিরের। বললেন, ‘সংসদ টেলিভিশনে সারাক্ষণ যে ব্যাকগ্রাউন্ড মিউজিক বাজে, তা আমার বাজানো হাওয়াইয়ান গিটারের সুর। অথচ এর জন্য কর্তৃপক্ষ আমার অনুমতি দূরের কথা, রয়্যালটি পর্যন্ত দেয় না, কোনো দিন ধন্যবাদ পর্যন্ত দেয়নি। আর বড় আক্ষেপের বিষয়, আমার নামটা পর্যন্ত তারা কখনো উল্লেখ করে না।’ আরেকটি বিষয় নিয়ে আক্ষেপ আছে। বঙ্গবন্ধুর ১১০টি ভাষণের ২৭টি সিডি তৎকালীন তথ্যপ্রতিমন্ত্রী অধ্যাপক আব্দুল্লাহ আবু সায়ীদের তত্ত্বাবধানে প্রকাশিত হয়। এনামুল করিম বললেন, ‘একদিন অধ্যাপক সায়ীদ ফোন করে বললেন, কবির ভাই, বঙ্গবন্ধুকে এই দেশে মুছে ফেলার পাঁয়তারা চলছে। আমরা বঙ্গবন্ধুর যেখানে যে ভাষণ আছে, তা সংরক্ষণ করে সিডি আকারে প্রকাশ করব এবং বঙ্গবন্ধুর প্রতিটি ভাষণের আগে আপনার বাজানো হাওয়াইয়ান গিটারের সুর সংযোজন করব। মুক্তিযুদ্ধের গানের ওপর আপনার বাজানো সিডিগুলো যদি দেন, উপকৃত হব। আমি আনন্দের সাথে আমার সব সিডি দিলাম। বঙ্গবন্ধুর প্রতিটি ভাষণের আগে আমার বাজানো সুর সংযোজিত হলো। যথাসময়ে ২৭টি সিডি প্রকাশিত হলো। বিচারপতি হবিবুর রহমান ঘটা করে উদ্বোধন করলেন। আমি গর্বের সঙ্গে সেই অনুষ্ঠানে পরিবারসহ গেলাম। সৌজন্য কপি দেওয়া তো দূরের কথা, কোথাও আমার নামটি পর্যন্ত উচ্চারিত হলো না। পরবর্তী সময়ে সিডিগুলো কিনলাম, কিন্তু সেখানেও আমার নামটি পর্যন্ত দেওয়া হয়নি। অধ্যাপক সায়ীদকে অনুযোগ করলাম, তিনি দুঃখ প্রকাশ করে পরবর্তী সংস্করণে নাম সংযোজনের প্রতিশ্রুতি দিলেন। কিন্তু আজও নাম সংযোজিত হয়নি। আক্ষেপ যেমন থেকে গেছে, আনন্দও তো কম না। বঙ্গবন্ধুর ভাষণের আগে আমার বাজানো হাওয়াইয়ান গিটারের সুর সংযোজিত হয়েছে, আমি গর্বিত।’
বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে প্রথম দেখা
১৯৫৭ সালে এনামুল কবিরকে তাঁর আশরাফ চাচা ঢাকার গেন্ডারিয়ার এক বাসায় নিয়ে গেলেন। এনামুল কবির বলেন, ‘আমি তখন হাফপ্যান্ট পরি। বিশাল এক রুম, সাদা চাদর বিছানো। কতকগুলো কোলবালিশ রাখা। একসময় দেখলাম, এক ভদ্রলোক পাইপ টানতে টানতে সাথে বেশ কজনকে নিয়ে ঘরে ঢুকছেন। আমি জানতাম না উনি কে। আমি সেখানে কাউকেই চিনি না। শুধু চিনলাম মানিক মিয়াকে, দৈনিক ইত্তেফাকের সুবাদে। ইত্তেফাকে তাঁর ছবি ছাপা হতো বলে। এর মধ্যে লোকে ঘর ভরে গেছে। কথাবার্তা চলছে, আর এক কোনায় আমি ঝিমুচ্ছি। চাচা বললেন, চল তোকে বাসায় দিয়ে আসি। চলে যাব, এমন সময় বঙ্গবন্ধু বললেন, এই আশরাফ, ওই ছ্যামরাডা কেডা? চাচা বললেন, ভাইয়ের ছেলে। বঙ্গবন্ধু আমাকে কাছে ডেকে নিয়ে মাথায় হাত দিয়ে চুলগুলো নাড়াচাড়া করতে করতে বললেন, তোর চুলগুলান তো ভারী সুন্দর! বাইরে এসে চাচা বললেন, ‘তোর মাথায় যিনি হাত বোলালেন, কথা বললেন, উনি শেখ সাব। আমাদের অনেক বড় নেতা।’
বঙ্গবন্ধুর উৎসাহ
বঙ্গবন্ধুর ঘনিষ্ঠ সহচর ছিলেন নারায়ণগঞ্জের আওয়ামী লীগ নেতা এ কে এম শামসুজ্জোহা। তাঁর স্ত্রী নাগিনা জ্বোহা এনামুল কবিরের কাছে হাওয়াইয়ান গিটার শিখতেন। সত্তরের নির্বাচনে আওয়ামী লীগ নিরঙ্কুশ জয় পেলে একটি নৌবিহারের আয়োজন করা হয়। পশ্চিম পাকিস্তান থেকে বেশ কয়েকজন ডেলিগেট এলেন। এ কে এম শামসুজ্জোহা দাওয়াত করলেন এনামুল কবিরকে। বললেন, ‘কবির ভাই, বঙ্গবন্ধু নৌবিহারে যাবেন। সেখানে পাকিস্তানি অতিথিদের বাংলা গান শোনাতে হবে। সাথে আরো কিছু শিল্পী নিয়ে আপনি আমাদের সাথে যাবেন।’ উস্তাদ নিতাই রায়, সরদার আলাউদ্দীনসহ বেশ কয়েকজন শিল্পী ও যন্ত্রী নিয়ে মেরি এন্ডারসন জাহাজে উঠলেন এনামুল কবির। পাগলা থেকে চাঁদপুর পর্যন্ত ছিল নৌবিহার। যাওয়া-আসার পথে প্রচুর গান হলো। গিটারে গানের সুর তোলা হলো। বাজানো শেষ হলে বঙ্গবন্ধু বললেন, ‘তুই তো আমার পছন্দের গান বাজায়ছস। তোর বাড়ি কোহানে? এনামুল বললেন, ‘যশোরের কালিয়া থানায়।’ ‘কালিয়ার কোন গ্রাম? বাপের নাম কী?’ এনামুল উত্তর দিলেন ‘শেখ সরোয়ার।’ বঙ্গবন্ধু বললেন, ‘ও! সরোয়ার মিঞা ভাই! গোপালগঞ্জে স্কুলে আমার এক বছরের সিনিয়র ছিল। তুই তার ছাওয়াল?’ নিজের পাশে বসিয়ে বঙ্গবন্ধু বললেন, ‘তুই তো ভালো গিটার বাজাস। চালায়া যা। একদিন বড় শিল্পী হবি, দেশের মুখ উজ্জ্বল করবি।’
মুক্তিযুদ্ধে গান সংগ্রহ
মুক্তিযুদ্ধ যখন শুরু হয়ে গেল, এনামুল কবির তখন ঢাকায়। জানালেন সে সময়ের স্মৃতি, ‘গোপনে স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র শুনতাম আর মুক্তিযুদ্ধের উদ্দীপনামূলক গানগুলো রেকর্ড করে রাখতাম। পরে দরজা-জানালা বন্ধ করে সেসব গানের স্বরলিপি করে সংগ্রহে রাখতাম। বিশ্বাস করতাম, দেশ একদিন স্বাধীন হবেই। তখন এসব স্বরলিপি, গান কাজে লাগবে। পরবর্তী সময়ে ঠিকই কাজে লাগিয়েছি। সেসব গানের স্বরলিপি বই আকারে প্রকাশ করেছি, গিটার বাদন ক্যাসেট-সিডি আকরে প্রকাশ করেছি। প্রতিটি গানের মূল শিল্পী, গীতিকার, সুরকারসহ বিভিন্ন তথ্য সংযোজনের চেষ্টা করেছি, ফলে এসব গান টিকে থাকবে যুগের পর যুগ। শুধু তাই নয়, স্বরলিপির পাশাপাশি স্টাফ নোটেশন করে গানগুলো ভিনদেশি ভাষাভাষীদের জন্য তুলে ধরেছি। দেশের মুক্তিযুদ্ধ সম্পর্কে, বঙ্গবন্ধু সম্পর্কে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে সুরে গানে জানার একটা সুযোগ সৃষ্টি করে দিয়েছি।’
বাঁশি ছেড়ে গিটার
কৈশোরে শেখ কাওসার নামের এক চাচার বাজানো সুর শুনে প্রথম বাঁশির প্রেমে পড়েন এনামুল কবির। চাচার পেছনে ঘুরে ঘুরে একসময় শিখে ফেলন বাঁশি বাজানো। এরপর পড়াশোনার জন্য চলে আসেন ঢাকায়। হঠাৎ বাতজ্বরে আক্রান্ত হলে ডাক্তারের পরামর্শে ছাড়তে হয় শখের বাঁশি। বিশ্রামের জন্য বছরখানেক গ্রামে গিয়ে থাকতে বললেন চিকিৎসক। ঢাকা ছাড়ার আগে মনে হলো সংগীত ছাড়া বাঁচতে পারবেন না। হাতে তুলে নিলেন গিটার। সেটা ১৯৫৯ সালের দিকের কথা। ঘরে বসে কলকাতা, শিলং রেডিওতে প্রচারিত গিটার বাজনা শুনতেন। গান শুনে শুনেই হারিকেনের আলোয় সন্ধ্যার পর গিটার নিয়ে ঘণ্টার পর ঘণ্টা চর্চা করতেন।
১৯৬৪ সালে বেতারে হাওয়াইয়ান গিটারশিল্পী হিসেবে তালিকাবুক্ত হন। টেলিভিশনে প্রথম সুযোগ পান ১৯৬৯ সালে। অনেক চলচ্চিত্রের ব্যাকগ্রাউন্ড মিউজিক বাজিয়েছেন। একসময় সুর করা শুরু করেন এবং খ্যাতি অর্জন করেন।
গিটারের শিক্ষক হয়ে ওঠা
গ্রাজুয়েট স্কুল শেষ করে তৎকালীন জিন্নাহ কলেজে ভর্তি হলেন এনামুল কবির। এদিকে গিটারে প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা বলতে বুলবুল ললিতকলা একাডেমিতে (বাফা) মাত্র ছয় মাসের শিক্ষা। অনিবার্য কারণে চার বছরের সার্টিফিকেট কোর্স শেষ করা হয়নি। এরপর নিজের অদম্য চেষ্টায় হয়ে ওঠেন দেশে-বিদেশে হাওয়াইয়ান গিটারের এক দিকপাল। যেকোনো অনুষ্ঠানেই ডাক পড়ত। অনেকই আবদার করতেন গিটার শেখানোর জন্য। সেই আবদার মেটাতে মেটাতেই একসময় হয়ে ওঠেন ‘গিটারের স্যার’। এনামুল কবির বলেন, ‘আমি তখন নারিন্দায় থাকি। পাশেই থাকতেন বর্তমান সময়ের মন্ত্রী বীর মুক্তিযোদ্ধা গাজী গোলাম দস্তগীর। আমার কাছে গিটার শেখা শুরু করলেন। অসংখ্য ছেলেমেয়ে, যুবক-যুবতী, ছাত্রছাত্রী, গৃহবধূ, ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ারকে গিটার শিখিয়েছি। বলতে দ্বিধা নেই, সাবেক রাষ্ট্রপতি, তৎকালীন রাজনৈতিক নেতা ও খ্যাতিমান ডাক্তার এ কিউ এম বদরুদ্দোজা চৌধুরীর স্ত্রীকেও শিখিয়েছি।’ ১৯৬৪ সালেই এনামুল কবির বেতারে হাওয়াইয়ান গিটারশিল্পী হিসেবে তালিকাভুক্ত হন। টেলিভিশনে প্রথম সুযোগ পান ১৯৬৯ সালে। অনেক চলচ্চিত্রের ব্যাকগ্রাউন্ড মিউজিক বাজিয়েছেন, এর মধ্যে ‘অনন্ত প্রেম’ উল্লেখযোগ্য। এরপর সুরকার হিসেবেও খ্যাতি অর্জন করেন। তাঁর সুরারোপিত গানে হৈমন্তী শুক্লা, সুবীর নন্দীসহ দেশের বিশিষ্ট শিল্পীরা কণ্ঠ দেন। গীতিকার কে জি মুস্তাফার অসংখ্য গানে তিনি সুর দিয়েছেন। আর স্বরলিপিতে সিদ্ধহস্ত এপার-ওপারে তাঁর মতো গুণী খুঁজতে হবে।
ইলেকট্রনিকস দোকানে গিটারের চর্চা
১৯৬৫ সালে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হলেন। স্ত্রী মমতাজ জাহান একসময় বললেন, ‘সারা জীবন গিটার বাজিয়ে সংসার চলবে না। এর পাশাপাশি কিছু একটা করা উচিত।’ তখন স্টেডিয়ামে একটা ইলেকট্রনিকসের দোকান করলেন এনামুল কবির ‘মিতা ইলেকট্রনিক্স’ নামে। দোকান করার পর সংগীতের চর্চা আর হাওয়াইয়ান গিটারের প্রসার আরো বেড়ে গেল। দোকানে তাঁর বাজানো হাওয়াইয়ান গিটারের ক্যাসেট দেদার বিক্রি হতে শুরু করল, আয় বাড়ল, উৎসাহ বাড়ল। শুরু হলো একের পর এক হাওয়াইয়ান গিটার বাদনের ক্যাসেট প্রকাশনা। ১৯৬৯ সালে প্রথম ছোট পরিসরে একটি স্বরলিপির বই প্রকাশ করলেন। এরপর ১৯৮৪ সালে মুক্তিযুদ্ধের সময়ের বেশ কিছু জনপ্রিয় গান নিয়ে প্রকাশিত হলো ‘জন্মভূমির গান’ শিরোনামে দ্বিতীয় স্বরলিপির বই। এরপর তো তিনি থেমে থাকেননি। এক এক করে বিভিন্ন ধরনের গান নিয়ে বিভিন্ন শিরোনামে আজ অবধি প্রকাশ করেছেন প্রায় ২৬টি স্বরলিপির বই, যেখানে স্থান পেয়েছে মুক্তিযুদ্ধের গান, বঙ্গবন্ধুর গান, দেশাত্মবোধক গান, বাংলা আধুনিক ও চলচ্চিত্রের গান, লালন, হাসন, রবীন্দ্র, নজরুলের গান, হিন্দি, উর্দু—এমন কোনো জনপ্রিয় গান নেই, যার স্বরলিপি তিনি করেননি। শুধু তাই নয়, সেসব গান আবার হাওয়াইয়ান গিটারে বাজিয়ে ক্যাসেট, সিডি, ভিসিডি করেছেন; যার সংখ্যা হবে প্রায় ৬০। এসব স্বরলিপি বই ও সিডিতে কম-বেশি প্রায় দেড় হাজার গান স্থান পেয়েছে।
পঁচাত্তরের পর নীরবে চলেছে প্রতিবাদ
স্টেডিয়াম মার্কেটে নিজের ইলেকট্রনিকসের দোকানে বসে লাউড স্পিকারে উচ্চ ভলিয়মে বাজাতেন হাওয়াইয়ান গিটারে নিজের বাজানো যত সব মুক্তিযুদ্ধের গানের সুর। এর জন্য কম ঝামেলা পোহাতে হয়নি তাঁকে, হুমকিও এসেছে। এনামুল কবির বলেন, ‘জিয়াউর রহমান বা এরশাদ সরকারের আমল বলো, সব সময়ই আমি মুক্তিযুদ্ধের সময়কালীন গানগুলোই বাজাতাম। যেমন—‘জয় বাংলা’, ‘শোনো একটি মুজিবুরের থেকে’, ‘তীর হারা এই ঢেউয়ের সাগর’ ইত্যাদি। প্রতিবেশী দোকানের মালিকরা বলতেন, ‘আপনি যে বঙ্গবন্ধুর গান, জয় বাংলার গান বাজান, তাতে আপনার তো বিপদ হবে, সঙ্গে আমাদেরও ক্ষতি হয়ে যাবে।’ স্টেডিয়াম মার্কেটের তখনকার সভাপতি মহিউদ্দিন ভাই, যিনি একসময় বঙ্গবন্ধুর বডিগার্ড ছিলেন, তাঁকে বিষয়টি জানালাম। তিনি বললেন, ‘আপনি বাজিয়ে যান, কে কী করে আমি দেখব।’ তখন সবাই জানতেন, জিয়া কিংবা এরশাদের আমলে বঙ্গবন্ধু বা স্বাধীনতার সপক্ষীয় কোনো কাজ করা মানে বিপদ। যা হোক, সাহস নিয়ে মুক্তিযুদ্ধের সপক্ষীয় কাজ তখনো করেছি, এখনো করে যাচ্ছি, কোনো রাষ্ট্রীয় পুরস্কারের আশায় নয়। কৈশোর, যৌবনে বঙ্গবন্ধুর যে আশীর্বাদ পেয়েছি, সেই থেকে তাঁর প্রতি ভালোবাসা আর দেশের সংগীতের ভান্ডার সমৃদ্ধ করতে, টিকিয়ে রাখতেই আমার এই নিরলস শ্রম। আর এখানেই আমার তৃপ্তি, আনন্দ। এ কারণেই দেশের গানগুলো শুদ্ধ সুরে স্বরলিপি করে রেখে যেতে পারলাম। এমনও গানের স্বরলিপি বা বাজনা আছে, যা বাংলাদেশ বেতার বা টেলিভিশন, এমনকি জাতীয় আর্কাইভেও নেই। আমি গর্ব করে বলতে পারি, আমার একেকটি স্বরলিপির বই একেকটি আর্কাইভ। আরো উল্লেখ করতে চাই, যখনই যে গানটি স্টেডিয়ামে বাজাতাম, সেই ক্যাসেটটি কেনার জন্য শ্রোতারা দোকানের সামনে ভিড় করত। দেদার বিক্রি হতো 'জয় বাংলা' গানের সুরের ক্যাসেট। আজ সব ইতিহাস।
জন্ম ও বেড়ে ওঠা
এনামুল কবিরের জন্ম ১৯৪২ সালের ৫ জুলাই নড়াইল জেলার নড়াগাতী থানার ডুমুরিয়া গ্রামে। জ্ঞান হওয়ার পর থেকেই বাড়িতে কলের গান বাজতে শুনেছেন। ছোটবেলা থেকেই গানের প্রতি বিশেষ আকর্ষণ তৈরি হয়ে যায়। বাবার সরকারি চাকরির সুবাধে চলে যেতে হয় কলকাতায়। শৈশব কেটেছে কলকাতায়। ১৯৪২ থেকে ৫০ সাল পর্যন্ত কলকাতায় ছিলেন। দেশভাগের সময় খালি হাতেই কলকাতা থেকে বাংলাদেশে এলেন।
পরিবার
এক ছেলে এক মেয়ে। ছেলে এনায়েত কবির চঞ্চল ২০১৫ সালে মারা যান। স্ত্রী মারা গেছেন ২০১৫ সালের ফেব্রুয়ারিতে, এপ্রিলে ছেলে। মেয়ে নাহিদ কবির কাকলী কানাডায় আছেন অনেক বছর ধরে। ওখানে ব্যাংকে চাকরি করেন রবীন্দ্রসংগীত শিল্পীও কাকলী। অনেকগুলো গানের অ্যালবামও বের হয়েছে। ছেলের ঘরে তিন নাতি। মেয়ে কাকলীর এক কন্যাসন্তান আছে।
সময় কীভাবে কাটে
গত দুই বছর তো করোনায় ঘরবন্দি সময় গেল। সময় তো কাটতেই চায় না। এনামুল কবির বলেন, ‘মঙ্গলবার আমার বাসায় একটা গানের আসর বসে। আমার গানের বন্ধুরা আসে, আড্ডা হয়, গান গাওয়া হয়। এখনো স্বরলিপি করি, গিটার বাজাই। করোনাকালীন অনলাইনে প্রচুর প্রোগ্রাম করতাম আমরা। শুধু গিটারে গান বাজানোই আমার শেষ নয়, আমি নিজে যা শিখেছি, তা ছড়িয়ে দেওয়ার ইচ্ছেতেই ছাত্রছাত্রীদের শেখানো শুরু করি। ১ হাজারেরও বেশি ছাত্রছাত্রীকে আমি হাওয়াইন গিটার শিখিয়েছি।’
সংগীতের আর্কাইভ এনামুল কবির
এনামুল কবির সম্পর্কে তাঁর আত্মজীবনী ‘আমার সঙ্গীত আমার জীবন‘ পড়ে কিংবা বাসার প্রতিটি রুম স্বচক্ষে দেখে, তাঁর সাথে দীর্ঘ আলাপচারিতায় এতটুকুই প্রমাণ মেলে যে, ‘এনামুল কবির সত্যিই এ দেশের সংগীত ভুবনের আর্কাইভ’, ‘দেশের সংগীতের আলোকবর্তিকা’। যিনি তাঁর সংগীতজীবনের ৬৫টি বছর রাত-দিন এত কাজ করেছেন, যা আর দশজন সংগীতজ্ঞের ক্ষেত্রে পাওয়া দুষ্কর। একাধারে তিনি হাওয়াইয়ান গিটারশিল্পী, সুরকার, স্বরলিপিকার, গায়ক, দেশের অপসংস্কৃতির বিরুদ্ধে সম্মুখ সারির যোদ্ধা। তাহলে দেশকে ভালোবেসে, দেশের সংগীতকে ভালোবেসে, বঙ্গবন্ধু, মুক্তিযুদ্ধকে ভালোবেসে আর কত কাজ করলে রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি মিলবে তা আমাদের জানা নেই।

বাংলাদেশে হাওয়াইয়ান গিটার জনপ্রিয় করার নেপথ্য সৈনিক শিল্পী এনামুল কবির। বয়স এখন ৮০। কৈশোর-যৌবনে পেয়েছেন বঙ্গবন্ধুর স্নেহ, সান্নিধ্য। স্বাধীনতার গান, মুক্তিযুদ্ধের গান, বঙ্গবন্ধুর গান, দেশাত্মবোধক গান, লোকজ গানে তাঁর অবদান উল্লেখ করার মতো। জনপ্রিয়তা, সম্মান, পুরস্কার—সবই মিলেছে, মেলেনি আজ অবধি কোনো রাষ্ট্রীয় সম্মাননা। তাঁকে নিয়ে লিখেছেন মীর রাকিব হাসান।
ঘরজুড়ে স্মৃতিকাহন
বাসায় ঢুকলেই চারপাশে সংগীতের আবহ। কোথাও গিটার, কোথাও নিজের সম্পাদিত স্বরলিপির বই কিংবা গান আর নিজ বাদনের গিটারের ক্যাসেট, সিডি। আলাপে আলাপে এনামুল কবির আমন্ত্রণ জানালেন বাসা ঘুরে দেখার। বললেন, ‘আমার প্রায় ৬৫ বছরের সংগীতজীবনের সংগ্রহশালা।’ তাঁর নিজস্ব রেকর্ডিং স্টুডিও, আনুষঙ্গিক বিভিন্ন বাদ্যযন্ত্র, বই, সিডি, ক্যাসেট। দেয়ালে ঝুলছে স্বনামধন্য ব্যক্তিদের সঙ্গে ঘরোয়া আড্ডার কিছু স্থিরচিত্র, যেখানে রয়েছে বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদসহ অনেকর সঙ্গে তোলা ছবি। এনামুল কবির জানালেন, ছেলে এনায়েত কবির চঞ্চল ছিলেন ঢাকা কলেজের ছাত্রলীগের একসময়ের ভিপি। বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যখন ১৯৮১ সালে দেশে ফেরেন, সেই সময় যাঁরা তাঁকে নিরাপত্তা দিতে বুক পেতে সামনে থাকতেন, তাঁদের একজন ছিলেন চঞ্চল। পরে যুবলীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য হন চঞ্চল। শেখ হাসিনার যেমন ছিলেন আস্থাভাজন, ছিলেন স্নেহভাজনও। তাই ঘরোয়া অনুষ্ঠানাদিতে শেখ হাসিনা বাসায় আসতেন।
নেই রাষ্ট্রীয় সম্মাননা
ঘরজুড়ে রয়েছে দেশের বিভিন্ন সংগঠন থেকে প্রাপ্ত অসংখ্য সম্মাননা—পদক, পুরস্কার। আন্তর্জাতিক অঙ্গন থেকেও এসেছে সম্মাননা। কিন্তু নেই কোনো রাষ্ট্রীয় সম্মাননা-পদক। কৌতূহলী হয়ে প্রশ্ন করলাম, রাষ্ট্রীয় কোনো সম্মাননা পাননি? এনামুল কবির হাসিমুখে বললেন, ‘সেজন্য আক্ষেপ নেই। আমি হয়তো এখনো সেই সম্মানের যোগ্য হইনি। তবে মেয়েকে বলে রেখেছি, আমার মৃত্যুর পর যেন কোনো রাষ্ট্রীয় সম্মাননা গ্রহণ করা না হয়। আমি আমার শ্রোতা ও দেশের মানুষের যে ভালোবাসা পেয়েছি, সৃষ্টিকর্তার অশেষ রহমতে এখনো দেশের সংগীতের জন্য কাজ করে যাচ্ছি, এর ওপরে আর কী সম্মান হতে পারে! বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশ দিয়েছেন, আমি বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে সুরে গানে স্বরলিপিতে কিছু করতে পেরেছি, আন্তর্জাতিক অঙ্গনে তাঁকে তুলে ধরার চেষ্টা করেছি—এটাই তো বড় প্রাপ্তি। আমার চাওয়া হলো, রাষ্ট্রীয় পদকের যেন অবমাননা না হয়।’
আক্ষেপ তো আছেই
বেশ কিছু বিষয়ে আক্ষেপ রয়েছ এনামুল কবিরের। বললেন, ‘সংসদ টেলিভিশনে সারাক্ষণ যে ব্যাকগ্রাউন্ড মিউজিক বাজে, তা আমার বাজানো হাওয়াইয়ান গিটারের সুর। অথচ এর জন্য কর্তৃপক্ষ আমার অনুমতি দূরের কথা, রয়্যালটি পর্যন্ত দেয় না, কোনো দিন ধন্যবাদ পর্যন্ত দেয়নি। আর বড় আক্ষেপের বিষয়, আমার নামটা পর্যন্ত তারা কখনো উল্লেখ করে না।’ আরেকটি বিষয় নিয়ে আক্ষেপ আছে। বঙ্গবন্ধুর ১১০টি ভাষণের ২৭টি সিডি তৎকালীন তথ্যপ্রতিমন্ত্রী অধ্যাপক আব্দুল্লাহ আবু সায়ীদের তত্ত্বাবধানে প্রকাশিত হয়। এনামুল করিম বললেন, ‘একদিন অধ্যাপক সায়ীদ ফোন করে বললেন, কবির ভাই, বঙ্গবন্ধুকে এই দেশে মুছে ফেলার পাঁয়তারা চলছে। আমরা বঙ্গবন্ধুর যেখানে যে ভাষণ আছে, তা সংরক্ষণ করে সিডি আকারে প্রকাশ করব এবং বঙ্গবন্ধুর প্রতিটি ভাষণের আগে আপনার বাজানো হাওয়াইয়ান গিটারের সুর সংযোজন করব। মুক্তিযুদ্ধের গানের ওপর আপনার বাজানো সিডিগুলো যদি দেন, উপকৃত হব। আমি আনন্দের সাথে আমার সব সিডি দিলাম। বঙ্গবন্ধুর প্রতিটি ভাষণের আগে আমার বাজানো সুর সংযোজিত হলো। যথাসময়ে ২৭টি সিডি প্রকাশিত হলো। বিচারপতি হবিবুর রহমান ঘটা করে উদ্বোধন করলেন। আমি গর্বের সঙ্গে সেই অনুষ্ঠানে পরিবারসহ গেলাম। সৌজন্য কপি দেওয়া তো দূরের কথা, কোথাও আমার নামটি পর্যন্ত উচ্চারিত হলো না। পরবর্তী সময়ে সিডিগুলো কিনলাম, কিন্তু সেখানেও আমার নামটি পর্যন্ত দেওয়া হয়নি। অধ্যাপক সায়ীদকে অনুযোগ করলাম, তিনি দুঃখ প্রকাশ করে পরবর্তী সংস্করণে নাম সংযোজনের প্রতিশ্রুতি দিলেন। কিন্তু আজও নাম সংযোজিত হয়নি। আক্ষেপ যেমন থেকে গেছে, আনন্দও তো কম না। বঙ্গবন্ধুর ভাষণের আগে আমার বাজানো হাওয়াইয়ান গিটারের সুর সংযোজিত হয়েছে, আমি গর্বিত।’
বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে প্রথম দেখা
১৯৫৭ সালে এনামুল কবিরকে তাঁর আশরাফ চাচা ঢাকার গেন্ডারিয়ার এক বাসায় নিয়ে গেলেন। এনামুল কবির বলেন, ‘আমি তখন হাফপ্যান্ট পরি। বিশাল এক রুম, সাদা চাদর বিছানো। কতকগুলো কোলবালিশ রাখা। একসময় দেখলাম, এক ভদ্রলোক পাইপ টানতে টানতে সাথে বেশ কজনকে নিয়ে ঘরে ঢুকছেন। আমি জানতাম না উনি কে। আমি সেখানে কাউকেই চিনি না। শুধু চিনলাম মানিক মিয়াকে, দৈনিক ইত্তেফাকের সুবাদে। ইত্তেফাকে তাঁর ছবি ছাপা হতো বলে। এর মধ্যে লোকে ঘর ভরে গেছে। কথাবার্তা চলছে, আর এক কোনায় আমি ঝিমুচ্ছি। চাচা বললেন, চল তোকে বাসায় দিয়ে আসি। চলে যাব, এমন সময় বঙ্গবন্ধু বললেন, এই আশরাফ, ওই ছ্যামরাডা কেডা? চাচা বললেন, ভাইয়ের ছেলে। বঙ্গবন্ধু আমাকে কাছে ডেকে নিয়ে মাথায় হাত দিয়ে চুলগুলো নাড়াচাড়া করতে করতে বললেন, তোর চুলগুলান তো ভারী সুন্দর! বাইরে এসে চাচা বললেন, ‘তোর মাথায় যিনি হাত বোলালেন, কথা বললেন, উনি শেখ সাব। আমাদের অনেক বড় নেতা।’
বঙ্গবন্ধুর উৎসাহ
বঙ্গবন্ধুর ঘনিষ্ঠ সহচর ছিলেন নারায়ণগঞ্জের আওয়ামী লীগ নেতা এ কে এম শামসুজ্জোহা। তাঁর স্ত্রী নাগিনা জ্বোহা এনামুল কবিরের কাছে হাওয়াইয়ান গিটার শিখতেন। সত্তরের নির্বাচনে আওয়ামী লীগ নিরঙ্কুশ জয় পেলে একটি নৌবিহারের আয়োজন করা হয়। পশ্চিম পাকিস্তান থেকে বেশ কয়েকজন ডেলিগেট এলেন। এ কে এম শামসুজ্জোহা দাওয়াত করলেন এনামুল কবিরকে। বললেন, ‘কবির ভাই, বঙ্গবন্ধু নৌবিহারে যাবেন। সেখানে পাকিস্তানি অতিথিদের বাংলা গান শোনাতে হবে। সাথে আরো কিছু শিল্পী নিয়ে আপনি আমাদের সাথে যাবেন।’ উস্তাদ নিতাই রায়, সরদার আলাউদ্দীনসহ বেশ কয়েকজন শিল্পী ও যন্ত্রী নিয়ে মেরি এন্ডারসন জাহাজে উঠলেন এনামুল কবির। পাগলা থেকে চাঁদপুর পর্যন্ত ছিল নৌবিহার। যাওয়া-আসার পথে প্রচুর গান হলো। গিটারে গানের সুর তোলা হলো। বাজানো শেষ হলে বঙ্গবন্ধু বললেন, ‘তুই তো আমার পছন্দের গান বাজায়ছস। তোর বাড়ি কোহানে? এনামুল বললেন, ‘যশোরের কালিয়া থানায়।’ ‘কালিয়ার কোন গ্রাম? বাপের নাম কী?’ এনামুল উত্তর দিলেন ‘শেখ সরোয়ার।’ বঙ্গবন্ধু বললেন, ‘ও! সরোয়ার মিঞা ভাই! গোপালগঞ্জে স্কুলে আমার এক বছরের সিনিয়র ছিল। তুই তার ছাওয়াল?’ নিজের পাশে বসিয়ে বঙ্গবন্ধু বললেন, ‘তুই তো ভালো গিটার বাজাস। চালায়া যা। একদিন বড় শিল্পী হবি, দেশের মুখ উজ্জ্বল করবি।’
মুক্তিযুদ্ধে গান সংগ্রহ
মুক্তিযুদ্ধ যখন শুরু হয়ে গেল, এনামুল কবির তখন ঢাকায়। জানালেন সে সময়ের স্মৃতি, ‘গোপনে স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র শুনতাম আর মুক্তিযুদ্ধের উদ্দীপনামূলক গানগুলো রেকর্ড করে রাখতাম। পরে দরজা-জানালা বন্ধ করে সেসব গানের স্বরলিপি করে সংগ্রহে রাখতাম। বিশ্বাস করতাম, দেশ একদিন স্বাধীন হবেই। তখন এসব স্বরলিপি, গান কাজে লাগবে। পরবর্তী সময়ে ঠিকই কাজে লাগিয়েছি। সেসব গানের স্বরলিপি বই আকারে প্রকাশ করেছি, গিটার বাদন ক্যাসেট-সিডি আকরে প্রকাশ করেছি। প্রতিটি গানের মূল শিল্পী, গীতিকার, সুরকারসহ বিভিন্ন তথ্য সংযোজনের চেষ্টা করেছি, ফলে এসব গান টিকে থাকবে যুগের পর যুগ। শুধু তাই নয়, স্বরলিপির পাশাপাশি স্টাফ নোটেশন করে গানগুলো ভিনদেশি ভাষাভাষীদের জন্য তুলে ধরেছি। দেশের মুক্তিযুদ্ধ সম্পর্কে, বঙ্গবন্ধু সম্পর্কে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে সুরে গানে জানার একটা সুযোগ সৃষ্টি করে দিয়েছি।’
বাঁশি ছেড়ে গিটার
কৈশোরে শেখ কাওসার নামের এক চাচার বাজানো সুর শুনে প্রথম বাঁশির প্রেমে পড়েন এনামুল কবির। চাচার পেছনে ঘুরে ঘুরে একসময় শিখে ফেলন বাঁশি বাজানো। এরপর পড়াশোনার জন্য চলে আসেন ঢাকায়। হঠাৎ বাতজ্বরে আক্রান্ত হলে ডাক্তারের পরামর্শে ছাড়তে হয় শখের বাঁশি। বিশ্রামের জন্য বছরখানেক গ্রামে গিয়ে থাকতে বললেন চিকিৎসক। ঢাকা ছাড়ার আগে মনে হলো সংগীত ছাড়া বাঁচতে পারবেন না। হাতে তুলে নিলেন গিটার। সেটা ১৯৫৯ সালের দিকের কথা। ঘরে বসে কলকাতা, শিলং রেডিওতে প্রচারিত গিটার বাজনা শুনতেন। গান শুনে শুনেই হারিকেনের আলোয় সন্ধ্যার পর গিটার নিয়ে ঘণ্টার পর ঘণ্টা চর্চা করতেন।
১৯৬৪ সালে বেতারে হাওয়াইয়ান গিটারশিল্পী হিসেবে তালিকাবুক্ত হন। টেলিভিশনে প্রথম সুযোগ পান ১৯৬৯ সালে। অনেক চলচ্চিত্রের ব্যাকগ্রাউন্ড মিউজিক বাজিয়েছেন। একসময় সুর করা শুরু করেন এবং খ্যাতি অর্জন করেন।
গিটারের শিক্ষক হয়ে ওঠা
গ্রাজুয়েট স্কুল শেষ করে তৎকালীন জিন্নাহ কলেজে ভর্তি হলেন এনামুল কবির। এদিকে গিটারে প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা বলতে বুলবুল ললিতকলা একাডেমিতে (বাফা) মাত্র ছয় মাসের শিক্ষা। অনিবার্য কারণে চার বছরের সার্টিফিকেট কোর্স শেষ করা হয়নি। এরপর নিজের অদম্য চেষ্টায় হয়ে ওঠেন দেশে-বিদেশে হাওয়াইয়ান গিটারের এক দিকপাল। যেকোনো অনুষ্ঠানেই ডাক পড়ত। অনেকই আবদার করতেন গিটার শেখানোর জন্য। সেই আবদার মেটাতে মেটাতেই একসময় হয়ে ওঠেন ‘গিটারের স্যার’। এনামুল কবির বলেন, ‘আমি তখন নারিন্দায় থাকি। পাশেই থাকতেন বর্তমান সময়ের মন্ত্রী বীর মুক্তিযোদ্ধা গাজী গোলাম দস্তগীর। আমার কাছে গিটার শেখা শুরু করলেন। অসংখ্য ছেলেমেয়ে, যুবক-যুবতী, ছাত্রছাত্রী, গৃহবধূ, ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ারকে গিটার শিখিয়েছি। বলতে দ্বিধা নেই, সাবেক রাষ্ট্রপতি, তৎকালীন রাজনৈতিক নেতা ও খ্যাতিমান ডাক্তার এ কিউ এম বদরুদ্দোজা চৌধুরীর স্ত্রীকেও শিখিয়েছি।’ ১৯৬৪ সালেই এনামুল কবির বেতারে হাওয়াইয়ান গিটারশিল্পী হিসেবে তালিকাভুক্ত হন। টেলিভিশনে প্রথম সুযোগ পান ১৯৬৯ সালে। অনেক চলচ্চিত্রের ব্যাকগ্রাউন্ড মিউজিক বাজিয়েছেন, এর মধ্যে ‘অনন্ত প্রেম’ উল্লেখযোগ্য। এরপর সুরকার হিসেবেও খ্যাতি অর্জন করেন। তাঁর সুরারোপিত গানে হৈমন্তী শুক্লা, সুবীর নন্দীসহ দেশের বিশিষ্ট শিল্পীরা কণ্ঠ দেন। গীতিকার কে জি মুস্তাফার অসংখ্য গানে তিনি সুর দিয়েছেন। আর স্বরলিপিতে সিদ্ধহস্ত এপার-ওপারে তাঁর মতো গুণী খুঁজতে হবে।
ইলেকট্রনিকস দোকানে গিটারের চর্চা
১৯৬৫ সালে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হলেন। স্ত্রী মমতাজ জাহান একসময় বললেন, ‘সারা জীবন গিটার বাজিয়ে সংসার চলবে না। এর পাশাপাশি কিছু একটা করা উচিত।’ তখন স্টেডিয়ামে একটা ইলেকট্রনিকসের দোকান করলেন এনামুল কবির ‘মিতা ইলেকট্রনিক্স’ নামে। দোকান করার পর সংগীতের চর্চা আর হাওয়াইয়ান গিটারের প্রসার আরো বেড়ে গেল। দোকানে তাঁর বাজানো হাওয়াইয়ান গিটারের ক্যাসেট দেদার বিক্রি হতে শুরু করল, আয় বাড়ল, উৎসাহ বাড়ল। শুরু হলো একের পর এক হাওয়াইয়ান গিটার বাদনের ক্যাসেট প্রকাশনা। ১৯৬৯ সালে প্রথম ছোট পরিসরে একটি স্বরলিপির বই প্রকাশ করলেন। এরপর ১৯৮৪ সালে মুক্তিযুদ্ধের সময়ের বেশ কিছু জনপ্রিয় গান নিয়ে প্রকাশিত হলো ‘জন্মভূমির গান’ শিরোনামে দ্বিতীয় স্বরলিপির বই। এরপর তো তিনি থেমে থাকেননি। এক এক করে বিভিন্ন ধরনের গান নিয়ে বিভিন্ন শিরোনামে আজ অবধি প্রকাশ করেছেন প্রায় ২৬টি স্বরলিপির বই, যেখানে স্থান পেয়েছে মুক্তিযুদ্ধের গান, বঙ্গবন্ধুর গান, দেশাত্মবোধক গান, বাংলা আধুনিক ও চলচ্চিত্রের গান, লালন, হাসন, রবীন্দ্র, নজরুলের গান, হিন্দি, উর্দু—এমন কোনো জনপ্রিয় গান নেই, যার স্বরলিপি তিনি করেননি। শুধু তাই নয়, সেসব গান আবার হাওয়াইয়ান গিটারে বাজিয়ে ক্যাসেট, সিডি, ভিসিডি করেছেন; যার সংখ্যা হবে প্রায় ৬০। এসব স্বরলিপি বই ও সিডিতে কম-বেশি প্রায় দেড় হাজার গান স্থান পেয়েছে।
পঁচাত্তরের পর নীরবে চলেছে প্রতিবাদ
স্টেডিয়াম মার্কেটে নিজের ইলেকট্রনিকসের দোকানে বসে লাউড স্পিকারে উচ্চ ভলিয়মে বাজাতেন হাওয়াইয়ান গিটারে নিজের বাজানো যত সব মুক্তিযুদ্ধের গানের সুর। এর জন্য কম ঝামেলা পোহাতে হয়নি তাঁকে, হুমকিও এসেছে। এনামুল কবির বলেন, ‘জিয়াউর রহমান বা এরশাদ সরকারের আমল বলো, সব সময়ই আমি মুক্তিযুদ্ধের সময়কালীন গানগুলোই বাজাতাম। যেমন—‘জয় বাংলা’, ‘শোনো একটি মুজিবুরের থেকে’, ‘তীর হারা এই ঢেউয়ের সাগর’ ইত্যাদি। প্রতিবেশী দোকানের মালিকরা বলতেন, ‘আপনি যে বঙ্গবন্ধুর গান, জয় বাংলার গান বাজান, তাতে আপনার তো বিপদ হবে, সঙ্গে আমাদেরও ক্ষতি হয়ে যাবে।’ স্টেডিয়াম মার্কেটের তখনকার সভাপতি মহিউদ্দিন ভাই, যিনি একসময় বঙ্গবন্ধুর বডিগার্ড ছিলেন, তাঁকে বিষয়টি জানালাম। তিনি বললেন, ‘আপনি বাজিয়ে যান, কে কী করে আমি দেখব।’ তখন সবাই জানতেন, জিয়া কিংবা এরশাদের আমলে বঙ্গবন্ধু বা স্বাধীনতার সপক্ষীয় কোনো কাজ করা মানে বিপদ। যা হোক, সাহস নিয়ে মুক্তিযুদ্ধের সপক্ষীয় কাজ তখনো করেছি, এখনো করে যাচ্ছি, কোনো রাষ্ট্রীয় পুরস্কারের আশায় নয়। কৈশোর, যৌবনে বঙ্গবন্ধুর যে আশীর্বাদ পেয়েছি, সেই থেকে তাঁর প্রতি ভালোবাসা আর দেশের সংগীতের ভান্ডার সমৃদ্ধ করতে, টিকিয়ে রাখতেই আমার এই নিরলস শ্রম। আর এখানেই আমার তৃপ্তি, আনন্দ। এ কারণেই দেশের গানগুলো শুদ্ধ সুরে স্বরলিপি করে রেখে যেতে পারলাম। এমনও গানের স্বরলিপি বা বাজনা আছে, যা বাংলাদেশ বেতার বা টেলিভিশন, এমনকি জাতীয় আর্কাইভেও নেই। আমি গর্ব করে বলতে পারি, আমার একেকটি স্বরলিপির বই একেকটি আর্কাইভ। আরো উল্লেখ করতে চাই, যখনই যে গানটি স্টেডিয়ামে বাজাতাম, সেই ক্যাসেটটি কেনার জন্য শ্রোতারা দোকানের সামনে ভিড় করত। দেদার বিক্রি হতো 'জয় বাংলা' গানের সুরের ক্যাসেট। আজ সব ইতিহাস।
জন্ম ও বেড়ে ওঠা
এনামুল কবিরের জন্ম ১৯৪২ সালের ৫ জুলাই নড়াইল জেলার নড়াগাতী থানার ডুমুরিয়া গ্রামে। জ্ঞান হওয়ার পর থেকেই বাড়িতে কলের গান বাজতে শুনেছেন। ছোটবেলা থেকেই গানের প্রতি বিশেষ আকর্ষণ তৈরি হয়ে যায়। বাবার সরকারি চাকরির সুবাধে চলে যেতে হয় কলকাতায়। শৈশব কেটেছে কলকাতায়। ১৯৪২ থেকে ৫০ সাল পর্যন্ত কলকাতায় ছিলেন। দেশভাগের সময় খালি হাতেই কলকাতা থেকে বাংলাদেশে এলেন।
পরিবার
এক ছেলে এক মেয়ে। ছেলে এনায়েত কবির চঞ্চল ২০১৫ সালে মারা যান। স্ত্রী মারা গেছেন ২০১৫ সালের ফেব্রুয়ারিতে, এপ্রিলে ছেলে। মেয়ে নাহিদ কবির কাকলী কানাডায় আছেন অনেক বছর ধরে। ওখানে ব্যাংকে চাকরি করেন রবীন্দ্রসংগীত শিল্পীও কাকলী। অনেকগুলো গানের অ্যালবামও বের হয়েছে। ছেলের ঘরে তিন নাতি। মেয়ে কাকলীর এক কন্যাসন্তান আছে।
সময় কীভাবে কাটে
গত দুই বছর তো করোনায় ঘরবন্দি সময় গেল। সময় তো কাটতেই চায় না। এনামুল কবির বলেন, ‘মঙ্গলবার আমার বাসায় একটা গানের আসর বসে। আমার গানের বন্ধুরা আসে, আড্ডা হয়, গান গাওয়া হয়। এখনো স্বরলিপি করি, গিটার বাজাই। করোনাকালীন অনলাইনে প্রচুর প্রোগ্রাম করতাম আমরা। শুধু গিটারে গান বাজানোই আমার শেষ নয়, আমি নিজে যা শিখেছি, তা ছড়িয়ে দেওয়ার ইচ্ছেতেই ছাত্রছাত্রীদের শেখানো শুরু করি। ১ হাজারেরও বেশি ছাত্রছাত্রীকে আমি হাওয়াইন গিটার শিখিয়েছি।’
সংগীতের আর্কাইভ এনামুল কবির
এনামুল কবির সম্পর্কে তাঁর আত্মজীবনী ‘আমার সঙ্গীত আমার জীবন‘ পড়ে কিংবা বাসার প্রতিটি রুম স্বচক্ষে দেখে, তাঁর সাথে দীর্ঘ আলাপচারিতায় এতটুকুই প্রমাণ মেলে যে, ‘এনামুল কবির সত্যিই এ দেশের সংগীত ভুবনের আর্কাইভ’, ‘দেশের সংগীতের আলোকবর্তিকা’। যিনি তাঁর সংগীতজীবনের ৬৫টি বছর রাত-দিন এত কাজ করেছেন, যা আর দশজন সংগীতজ্ঞের ক্ষেত্রে পাওয়া দুষ্কর। একাধারে তিনি হাওয়াইয়ান গিটারশিল্পী, সুরকার, স্বরলিপিকার, গায়ক, দেশের অপসংস্কৃতির বিরুদ্ধে সম্মুখ সারির যোদ্ধা। তাহলে দেশকে ভালোবেসে, দেশের সংগীতকে ভালোবেসে, বঙ্গবন্ধু, মুক্তিযুদ্ধকে ভালোবেসে আর কত কাজ করলে রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি মিলবে তা আমাদের জানা নেই।
মীর রাকিব হাসান

বাংলাদেশে হাওয়াইয়ান গিটার জনপ্রিয় করার নেপথ্য সৈনিক শিল্পী এনামুল কবির। বয়স এখন ৮০। কৈশোর-যৌবনে পেয়েছেন বঙ্গবন্ধুর স্নেহ, সান্নিধ্য। স্বাধীনতার গান, মুক্তিযুদ্ধের গান, বঙ্গবন্ধুর গান, দেশাত্মবোধক গান, লোকজ গানে তাঁর অবদান উল্লেখ করার মতো। জনপ্রিয়তা, সম্মান, পুরস্কার—সবই মিলেছে, মেলেনি আজ অবধি কোনো রাষ্ট্রীয় সম্মাননা। তাঁকে নিয়ে লিখেছেন মীর রাকিব হাসান।
ঘরজুড়ে স্মৃতিকাহন
বাসায় ঢুকলেই চারপাশে সংগীতের আবহ। কোথাও গিটার, কোথাও নিজের সম্পাদিত স্বরলিপির বই কিংবা গান আর নিজ বাদনের গিটারের ক্যাসেট, সিডি। আলাপে আলাপে এনামুল কবির আমন্ত্রণ জানালেন বাসা ঘুরে দেখার। বললেন, ‘আমার প্রায় ৬৫ বছরের সংগীতজীবনের সংগ্রহশালা।’ তাঁর নিজস্ব রেকর্ডিং স্টুডিও, আনুষঙ্গিক বিভিন্ন বাদ্যযন্ত্র, বই, সিডি, ক্যাসেট। দেয়ালে ঝুলছে স্বনামধন্য ব্যক্তিদের সঙ্গে ঘরোয়া আড্ডার কিছু স্থিরচিত্র, যেখানে রয়েছে বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদসহ অনেকর সঙ্গে তোলা ছবি। এনামুল কবির জানালেন, ছেলে এনায়েত কবির চঞ্চল ছিলেন ঢাকা কলেজের ছাত্রলীগের একসময়ের ভিপি। বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যখন ১৯৮১ সালে দেশে ফেরেন, সেই সময় যাঁরা তাঁকে নিরাপত্তা দিতে বুক পেতে সামনে থাকতেন, তাঁদের একজন ছিলেন চঞ্চল। পরে যুবলীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য হন চঞ্চল। শেখ হাসিনার যেমন ছিলেন আস্থাভাজন, ছিলেন স্নেহভাজনও। তাই ঘরোয়া অনুষ্ঠানাদিতে শেখ হাসিনা বাসায় আসতেন।
নেই রাষ্ট্রীয় সম্মাননা
ঘরজুড়ে রয়েছে দেশের বিভিন্ন সংগঠন থেকে প্রাপ্ত অসংখ্য সম্মাননা—পদক, পুরস্কার। আন্তর্জাতিক অঙ্গন থেকেও এসেছে সম্মাননা। কিন্তু নেই কোনো রাষ্ট্রীয় সম্মাননা-পদক। কৌতূহলী হয়ে প্রশ্ন করলাম, রাষ্ট্রীয় কোনো সম্মাননা পাননি? এনামুল কবির হাসিমুখে বললেন, ‘সেজন্য আক্ষেপ নেই। আমি হয়তো এখনো সেই সম্মানের যোগ্য হইনি। তবে মেয়েকে বলে রেখেছি, আমার মৃত্যুর পর যেন কোনো রাষ্ট্রীয় সম্মাননা গ্রহণ করা না হয়। আমি আমার শ্রোতা ও দেশের মানুষের যে ভালোবাসা পেয়েছি, সৃষ্টিকর্তার অশেষ রহমতে এখনো দেশের সংগীতের জন্য কাজ করে যাচ্ছি, এর ওপরে আর কী সম্মান হতে পারে! বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশ দিয়েছেন, আমি বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে সুরে গানে স্বরলিপিতে কিছু করতে পেরেছি, আন্তর্জাতিক অঙ্গনে তাঁকে তুলে ধরার চেষ্টা করেছি—এটাই তো বড় প্রাপ্তি। আমার চাওয়া হলো, রাষ্ট্রীয় পদকের যেন অবমাননা না হয়।’
আক্ষেপ তো আছেই
বেশ কিছু বিষয়ে আক্ষেপ রয়েছ এনামুল কবিরের। বললেন, ‘সংসদ টেলিভিশনে সারাক্ষণ যে ব্যাকগ্রাউন্ড মিউজিক বাজে, তা আমার বাজানো হাওয়াইয়ান গিটারের সুর। অথচ এর জন্য কর্তৃপক্ষ আমার অনুমতি দূরের কথা, রয়্যালটি পর্যন্ত দেয় না, কোনো দিন ধন্যবাদ পর্যন্ত দেয়নি। আর বড় আক্ষেপের বিষয়, আমার নামটা পর্যন্ত তারা কখনো উল্লেখ করে না।’ আরেকটি বিষয় নিয়ে আক্ষেপ আছে। বঙ্গবন্ধুর ১১০টি ভাষণের ২৭টি সিডি তৎকালীন তথ্যপ্রতিমন্ত্রী অধ্যাপক আব্দুল্লাহ আবু সায়ীদের তত্ত্বাবধানে প্রকাশিত হয়। এনামুল করিম বললেন, ‘একদিন অধ্যাপক সায়ীদ ফোন করে বললেন, কবির ভাই, বঙ্গবন্ধুকে এই দেশে মুছে ফেলার পাঁয়তারা চলছে। আমরা বঙ্গবন্ধুর যেখানে যে ভাষণ আছে, তা সংরক্ষণ করে সিডি আকারে প্রকাশ করব এবং বঙ্গবন্ধুর প্রতিটি ভাষণের আগে আপনার বাজানো হাওয়াইয়ান গিটারের সুর সংযোজন করব। মুক্তিযুদ্ধের গানের ওপর আপনার বাজানো সিডিগুলো যদি দেন, উপকৃত হব। আমি আনন্দের সাথে আমার সব সিডি দিলাম। বঙ্গবন্ধুর প্রতিটি ভাষণের আগে আমার বাজানো সুর সংযোজিত হলো। যথাসময়ে ২৭টি সিডি প্রকাশিত হলো। বিচারপতি হবিবুর রহমান ঘটা করে উদ্বোধন করলেন। আমি গর্বের সঙ্গে সেই অনুষ্ঠানে পরিবারসহ গেলাম। সৌজন্য কপি দেওয়া তো দূরের কথা, কোথাও আমার নামটি পর্যন্ত উচ্চারিত হলো না। পরবর্তী সময়ে সিডিগুলো কিনলাম, কিন্তু সেখানেও আমার নামটি পর্যন্ত দেওয়া হয়নি। অধ্যাপক সায়ীদকে অনুযোগ করলাম, তিনি দুঃখ প্রকাশ করে পরবর্তী সংস্করণে নাম সংযোজনের প্রতিশ্রুতি দিলেন। কিন্তু আজও নাম সংযোজিত হয়নি। আক্ষেপ যেমন থেকে গেছে, আনন্দও তো কম না। বঙ্গবন্ধুর ভাষণের আগে আমার বাজানো হাওয়াইয়ান গিটারের সুর সংযোজিত হয়েছে, আমি গর্বিত।’
বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে প্রথম দেখা
১৯৫৭ সালে এনামুল কবিরকে তাঁর আশরাফ চাচা ঢাকার গেন্ডারিয়ার এক বাসায় নিয়ে গেলেন। এনামুল কবির বলেন, ‘আমি তখন হাফপ্যান্ট পরি। বিশাল এক রুম, সাদা চাদর বিছানো। কতকগুলো কোলবালিশ রাখা। একসময় দেখলাম, এক ভদ্রলোক পাইপ টানতে টানতে সাথে বেশ কজনকে নিয়ে ঘরে ঢুকছেন। আমি জানতাম না উনি কে। আমি সেখানে কাউকেই চিনি না। শুধু চিনলাম মানিক মিয়াকে, দৈনিক ইত্তেফাকের সুবাদে। ইত্তেফাকে তাঁর ছবি ছাপা হতো বলে। এর মধ্যে লোকে ঘর ভরে গেছে। কথাবার্তা চলছে, আর এক কোনায় আমি ঝিমুচ্ছি। চাচা বললেন, চল তোকে বাসায় দিয়ে আসি। চলে যাব, এমন সময় বঙ্গবন্ধু বললেন, এই আশরাফ, ওই ছ্যামরাডা কেডা? চাচা বললেন, ভাইয়ের ছেলে। বঙ্গবন্ধু আমাকে কাছে ডেকে নিয়ে মাথায় হাত দিয়ে চুলগুলো নাড়াচাড়া করতে করতে বললেন, তোর চুলগুলান তো ভারী সুন্দর! বাইরে এসে চাচা বললেন, ‘তোর মাথায় যিনি হাত বোলালেন, কথা বললেন, উনি শেখ সাব। আমাদের অনেক বড় নেতা।’
বঙ্গবন্ধুর উৎসাহ
বঙ্গবন্ধুর ঘনিষ্ঠ সহচর ছিলেন নারায়ণগঞ্জের আওয়ামী লীগ নেতা এ কে এম শামসুজ্জোহা। তাঁর স্ত্রী নাগিনা জ্বোহা এনামুল কবিরের কাছে হাওয়াইয়ান গিটার শিখতেন। সত্তরের নির্বাচনে আওয়ামী লীগ নিরঙ্কুশ জয় পেলে একটি নৌবিহারের আয়োজন করা হয়। পশ্চিম পাকিস্তান থেকে বেশ কয়েকজন ডেলিগেট এলেন। এ কে এম শামসুজ্জোহা দাওয়াত করলেন এনামুল কবিরকে। বললেন, ‘কবির ভাই, বঙ্গবন্ধু নৌবিহারে যাবেন। সেখানে পাকিস্তানি অতিথিদের বাংলা গান শোনাতে হবে। সাথে আরো কিছু শিল্পী নিয়ে আপনি আমাদের সাথে যাবেন।’ উস্তাদ নিতাই রায়, সরদার আলাউদ্দীনসহ বেশ কয়েকজন শিল্পী ও যন্ত্রী নিয়ে মেরি এন্ডারসন জাহাজে উঠলেন এনামুল কবির। পাগলা থেকে চাঁদপুর পর্যন্ত ছিল নৌবিহার। যাওয়া-আসার পথে প্রচুর গান হলো। গিটারে গানের সুর তোলা হলো। বাজানো শেষ হলে বঙ্গবন্ধু বললেন, ‘তুই তো আমার পছন্দের গান বাজায়ছস। তোর বাড়ি কোহানে? এনামুল বললেন, ‘যশোরের কালিয়া থানায়।’ ‘কালিয়ার কোন গ্রাম? বাপের নাম কী?’ এনামুল উত্তর দিলেন ‘শেখ সরোয়ার।’ বঙ্গবন্ধু বললেন, ‘ও! সরোয়ার মিঞা ভাই! গোপালগঞ্জে স্কুলে আমার এক বছরের সিনিয়র ছিল। তুই তার ছাওয়াল?’ নিজের পাশে বসিয়ে বঙ্গবন্ধু বললেন, ‘তুই তো ভালো গিটার বাজাস। চালায়া যা। একদিন বড় শিল্পী হবি, দেশের মুখ উজ্জ্বল করবি।’
মুক্তিযুদ্ধে গান সংগ্রহ
মুক্তিযুদ্ধ যখন শুরু হয়ে গেল, এনামুল কবির তখন ঢাকায়। জানালেন সে সময়ের স্মৃতি, ‘গোপনে স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র শুনতাম আর মুক্তিযুদ্ধের উদ্দীপনামূলক গানগুলো রেকর্ড করে রাখতাম। পরে দরজা-জানালা বন্ধ করে সেসব গানের স্বরলিপি করে সংগ্রহে রাখতাম। বিশ্বাস করতাম, দেশ একদিন স্বাধীন হবেই। তখন এসব স্বরলিপি, গান কাজে লাগবে। পরবর্তী সময়ে ঠিকই কাজে লাগিয়েছি। সেসব গানের স্বরলিপি বই আকারে প্রকাশ করেছি, গিটার বাদন ক্যাসেট-সিডি আকরে প্রকাশ করেছি। প্রতিটি গানের মূল শিল্পী, গীতিকার, সুরকারসহ বিভিন্ন তথ্য সংযোজনের চেষ্টা করেছি, ফলে এসব গান টিকে থাকবে যুগের পর যুগ। শুধু তাই নয়, স্বরলিপির পাশাপাশি স্টাফ নোটেশন করে গানগুলো ভিনদেশি ভাষাভাষীদের জন্য তুলে ধরেছি। দেশের মুক্তিযুদ্ধ সম্পর্কে, বঙ্গবন্ধু সম্পর্কে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে সুরে গানে জানার একটা সুযোগ সৃষ্টি করে দিয়েছি।’
বাঁশি ছেড়ে গিটার
কৈশোরে শেখ কাওসার নামের এক চাচার বাজানো সুর শুনে প্রথম বাঁশির প্রেমে পড়েন এনামুল কবির। চাচার পেছনে ঘুরে ঘুরে একসময় শিখে ফেলন বাঁশি বাজানো। এরপর পড়াশোনার জন্য চলে আসেন ঢাকায়। হঠাৎ বাতজ্বরে আক্রান্ত হলে ডাক্তারের পরামর্শে ছাড়তে হয় শখের বাঁশি। বিশ্রামের জন্য বছরখানেক গ্রামে গিয়ে থাকতে বললেন চিকিৎসক। ঢাকা ছাড়ার আগে মনে হলো সংগীত ছাড়া বাঁচতে পারবেন না। হাতে তুলে নিলেন গিটার। সেটা ১৯৫৯ সালের দিকের কথা। ঘরে বসে কলকাতা, শিলং রেডিওতে প্রচারিত গিটার বাজনা শুনতেন। গান শুনে শুনেই হারিকেনের আলোয় সন্ধ্যার পর গিটার নিয়ে ঘণ্টার পর ঘণ্টা চর্চা করতেন।
১৯৬৪ সালে বেতারে হাওয়াইয়ান গিটারশিল্পী হিসেবে তালিকাবুক্ত হন। টেলিভিশনে প্রথম সুযোগ পান ১৯৬৯ সালে। অনেক চলচ্চিত্রের ব্যাকগ্রাউন্ড মিউজিক বাজিয়েছেন। একসময় সুর করা শুরু করেন এবং খ্যাতি অর্জন করেন।
গিটারের শিক্ষক হয়ে ওঠা
গ্রাজুয়েট স্কুল শেষ করে তৎকালীন জিন্নাহ কলেজে ভর্তি হলেন এনামুল কবির। এদিকে গিটারে প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা বলতে বুলবুল ললিতকলা একাডেমিতে (বাফা) মাত্র ছয় মাসের শিক্ষা। অনিবার্য কারণে চার বছরের সার্টিফিকেট কোর্স শেষ করা হয়নি। এরপর নিজের অদম্য চেষ্টায় হয়ে ওঠেন দেশে-বিদেশে হাওয়াইয়ান গিটারের এক দিকপাল। যেকোনো অনুষ্ঠানেই ডাক পড়ত। অনেকই আবদার করতেন গিটার শেখানোর জন্য। সেই আবদার মেটাতে মেটাতেই একসময় হয়ে ওঠেন ‘গিটারের স্যার’। এনামুল কবির বলেন, ‘আমি তখন নারিন্দায় থাকি। পাশেই থাকতেন বর্তমান সময়ের মন্ত্রী বীর মুক্তিযোদ্ধা গাজী গোলাম দস্তগীর। আমার কাছে গিটার শেখা শুরু করলেন। অসংখ্য ছেলেমেয়ে, যুবক-যুবতী, ছাত্রছাত্রী, গৃহবধূ, ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ারকে গিটার শিখিয়েছি। বলতে দ্বিধা নেই, সাবেক রাষ্ট্রপতি, তৎকালীন রাজনৈতিক নেতা ও খ্যাতিমান ডাক্তার এ কিউ এম বদরুদ্দোজা চৌধুরীর স্ত্রীকেও শিখিয়েছি।’ ১৯৬৪ সালেই এনামুল কবির বেতারে হাওয়াইয়ান গিটারশিল্পী হিসেবে তালিকাভুক্ত হন। টেলিভিশনে প্রথম সুযোগ পান ১৯৬৯ সালে। অনেক চলচ্চিত্রের ব্যাকগ্রাউন্ড মিউজিক বাজিয়েছেন, এর মধ্যে ‘অনন্ত প্রেম’ উল্লেখযোগ্য। এরপর সুরকার হিসেবেও খ্যাতি অর্জন করেন। তাঁর সুরারোপিত গানে হৈমন্তী শুক্লা, সুবীর নন্দীসহ দেশের বিশিষ্ট শিল্পীরা কণ্ঠ দেন। গীতিকার কে জি মুস্তাফার অসংখ্য গানে তিনি সুর দিয়েছেন। আর স্বরলিপিতে সিদ্ধহস্ত এপার-ওপারে তাঁর মতো গুণী খুঁজতে হবে।
ইলেকট্রনিকস দোকানে গিটারের চর্চা
১৯৬৫ সালে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হলেন। স্ত্রী মমতাজ জাহান একসময় বললেন, ‘সারা জীবন গিটার বাজিয়ে সংসার চলবে না। এর পাশাপাশি কিছু একটা করা উচিত।’ তখন স্টেডিয়ামে একটা ইলেকট্রনিকসের দোকান করলেন এনামুল কবির ‘মিতা ইলেকট্রনিক্স’ নামে। দোকান করার পর সংগীতের চর্চা আর হাওয়াইয়ান গিটারের প্রসার আরো বেড়ে গেল। দোকানে তাঁর বাজানো হাওয়াইয়ান গিটারের ক্যাসেট দেদার বিক্রি হতে শুরু করল, আয় বাড়ল, উৎসাহ বাড়ল। শুরু হলো একের পর এক হাওয়াইয়ান গিটার বাদনের ক্যাসেট প্রকাশনা। ১৯৬৯ সালে প্রথম ছোট পরিসরে একটি স্বরলিপির বই প্রকাশ করলেন। এরপর ১৯৮৪ সালে মুক্তিযুদ্ধের সময়ের বেশ কিছু জনপ্রিয় গান নিয়ে প্রকাশিত হলো ‘জন্মভূমির গান’ শিরোনামে দ্বিতীয় স্বরলিপির বই। এরপর তো তিনি থেমে থাকেননি। এক এক করে বিভিন্ন ধরনের গান নিয়ে বিভিন্ন শিরোনামে আজ অবধি প্রকাশ করেছেন প্রায় ২৬টি স্বরলিপির বই, যেখানে স্থান পেয়েছে মুক্তিযুদ্ধের গান, বঙ্গবন্ধুর গান, দেশাত্মবোধক গান, বাংলা আধুনিক ও চলচ্চিত্রের গান, লালন, হাসন, রবীন্দ্র, নজরুলের গান, হিন্দি, উর্দু—এমন কোনো জনপ্রিয় গান নেই, যার স্বরলিপি তিনি করেননি। শুধু তাই নয়, সেসব গান আবার হাওয়াইয়ান গিটারে বাজিয়ে ক্যাসেট, সিডি, ভিসিডি করেছেন; যার সংখ্যা হবে প্রায় ৬০। এসব স্বরলিপি বই ও সিডিতে কম-বেশি প্রায় দেড় হাজার গান স্থান পেয়েছে।
পঁচাত্তরের পর নীরবে চলেছে প্রতিবাদ
স্টেডিয়াম মার্কেটে নিজের ইলেকট্রনিকসের দোকানে বসে লাউড স্পিকারে উচ্চ ভলিয়মে বাজাতেন হাওয়াইয়ান গিটারে নিজের বাজানো যত সব মুক্তিযুদ্ধের গানের সুর। এর জন্য কম ঝামেলা পোহাতে হয়নি তাঁকে, হুমকিও এসেছে। এনামুল কবির বলেন, ‘জিয়াউর রহমান বা এরশাদ সরকারের আমল বলো, সব সময়ই আমি মুক্তিযুদ্ধের সময়কালীন গানগুলোই বাজাতাম। যেমন—‘জয় বাংলা’, ‘শোনো একটি মুজিবুরের থেকে’, ‘তীর হারা এই ঢেউয়ের সাগর’ ইত্যাদি। প্রতিবেশী দোকানের মালিকরা বলতেন, ‘আপনি যে বঙ্গবন্ধুর গান, জয় বাংলার গান বাজান, তাতে আপনার তো বিপদ হবে, সঙ্গে আমাদেরও ক্ষতি হয়ে যাবে।’ স্টেডিয়াম মার্কেটের তখনকার সভাপতি মহিউদ্দিন ভাই, যিনি একসময় বঙ্গবন্ধুর বডিগার্ড ছিলেন, তাঁকে বিষয়টি জানালাম। তিনি বললেন, ‘আপনি বাজিয়ে যান, কে কী করে আমি দেখব।’ তখন সবাই জানতেন, জিয়া কিংবা এরশাদের আমলে বঙ্গবন্ধু বা স্বাধীনতার সপক্ষীয় কোনো কাজ করা মানে বিপদ। যা হোক, সাহস নিয়ে মুক্তিযুদ্ধের সপক্ষীয় কাজ তখনো করেছি, এখনো করে যাচ্ছি, কোনো রাষ্ট্রীয় পুরস্কারের আশায় নয়। কৈশোর, যৌবনে বঙ্গবন্ধুর যে আশীর্বাদ পেয়েছি, সেই থেকে তাঁর প্রতি ভালোবাসা আর দেশের সংগীতের ভান্ডার সমৃদ্ধ করতে, টিকিয়ে রাখতেই আমার এই নিরলস শ্রম। আর এখানেই আমার তৃপ্তি, আনন্দ। এ কারণেই দেশের গানগুলো শুদ্ধ সুরে স্বরলিপি করে রেখে যেতে পারলাম। এমনও গানের স্বরলিপি বা বাজনা আছে, যা বাংলাদেশ বেতার বা টেলিভিশন, এমনকি জাতীয় আর্কাইভেও নেই। আমি গর্ব করে বলতে পারি, আমার একেকটি স্বরলিপির বই একেকটি আর্কাইভ। আরো উল্লেখ করতে চাই, যখনই যে গানটি স্টেডিয়ামে বাজাতাম, সেই ক্যাসেটটি কেনার জন্য শ্রোতারা দোকানের সামনে ভিড় করত। দেদার বিক্রি হতো 'জয় বাংলা' গানের সুরের ক্যাসেট। আজ সব ইতিহাস।
জন্ম ও বেড়ে ওঠা
এনামুল কবিরের জন্ম ১৯৪২ সালের ৫ জুলাই নড়াইল জেলার নড়াগাতী থানার ডুমুরিয়া গ্রামে। জ্ঞান হওয়ার পর থেকেই বাড়িতে কলের গান বাজতে শুনেছেন। ছোটবেলা থেকেই গানের প্রতি বিশেষ আকর্ষণ তৈরি হয়ে যায়। বাবার সরকারি চাকরির সুবাধে চলে যেতে হয় কলকাতায়। শৈশব কেটেছে কলকাতায়। ১৯৪২ থেকে ৫০ সাল পর্যন্ত কলকাতায় ছিলেন। দেশভাগের সময় খালি হাতেই কলকাতা থেকে বাংলাদেশে এলেন।
পরিবার
এক ছেলে এক মেয়ে। ছেলে এনায়েত কবির চঞ্চল ২০১৫ সালে মারা যান। স্ত্রী মারা গেছেন ২০১৫ সালের ফেব্রুয়ারিতে, এপ্রিলে ছেলে। মেয়ে নাহিদ কবির কাকলী কানাডায় আছেন অনেক বছর ধরে। ওখানে ব্যাংকে চাকরি করেন রবীন্দ্রসংগীত শিল্পীও কাকলী। অনেকগুলো গানের অ্যালবামও বের হয়েছে। ছেলের ঘরে তিন নাতি। মেয়ে কাকলীর এক কন্যাসন্তান আছে।
সময় কীভাবে কাটে
গত দুই বছর তো করোনায় ঘরবন্দি সময় গেল। সময় তো কাটতেই চায় না। এনামুল কবির বলেন, ‘মঙ্গলবার আমার বাসায় একটা গানের আসর বসে। আমার গানের বন্ধুরা আসে, আড্ডা হয়, গান গাওয়া হয়। এখনো স্বরলিপি করি, গিটার বাজাই। করোনাকালীন অনলাইনে প্রচুর প্রোগ্রাম করতাম আমরা। শুধু গিটারে গান বাজানোই আমার শেষ নয়, আমি নিজে যা শিখেছি, তা ছড়িয়ে দেওয়ার ইচ্ছেতেই ছাত্রছাত্রীদের শেখানো শুরু করি। ১ হাজারেরও বেশি ছাত্রছাত্রীকে আমি হাওয়াইন গিটার শিখিয়েছি।’
সংগীতের আর্কাইভ এনামুল কবির
এনামুল কবির সম্পর্কে তাঁর আত্মজীবনী ‘আমার সঙ্গীত আমার জীবন‘ পড়ে কিংবা বাসার প্রতিটি রুম স্বচক্ষে দেখে, তাঁর সাথে দীর্ঘ আলাপচারিতায় এতটুকুই প্রমাণ মেলে যে, ‘এনামুল কবির সত্যিই এ দেশের সংগীত ভুবনের আর্কাইভ’, ‘দেশের সংগীতের আলোকবর্তিকা’। যিনি তাঁর সংগীতজীবনের ৬৫টি বছর রাত-দিন এত কাজ করেছেন, যা আর দশজন সংগীতজ্ঞের ক্ষেত্রে পাওয়া দুষ্কর। একাধারে তিনি হাওয়াইয়ান গিটারশিল্পী, সুরকার, স্বরলিপিকার, গায়ক, দেশের অপসংস্কৃতির বিরুদ্ধে সম্মুখ সারির যোদ্ধা। তাহলে দেশকে ভালোবেসে, দেশের সংগীতকে ভালোবেসে, বঙ্গবন্ধু, মুক্তিযুদ্ধকে ভালোবেসে আর কত কাজ করলে রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি মিলবে তা আমাদের জানা নেই।

বাংলাদেশে হাওয়াইয়ান গিটার জনপ্রিয় করার নেপথ্য সৈনিক শিল্পী এনামুল কবির। বয়স এখন ৮০। কৈশোর-যৌবনে পেয়েছেন বঙ্গবন্ধুর স্নেহ, সান্নিধ্য। স্বাধীনতার গান, মুক্তিযুদ্ধের গান, বঙ্গবন্ধুর গান, দেশাত্মবোধক গান, লোকজ গানে তাঁর অবদান উল্লেখ করার মতো। জনপ্রিয়তা, সম্মান, পুরস্কার—সবই মিলেছে, মেলেনি আজ অবধি কোনো রাষ্ট্রীয় সম্মাননা। তাঁকে নিয়ে লিখেছেন মীর রাকিব হাসান।
ঘরজুড়ে স্মৃতিকাহন
বাসায় ঢুকলেই চারপাশে সংগীতের আবহ। কোথাও গিটার, কোথাও নিজের সম্পাদিত স্বরলিপির বই কিংবা গান আর নিজ বাদনের গিটারের ক্যাসেট, সিডি। আলাপে আলাপে এনামুল কবির আমন্ত্রণ জানালেন বাসা ঘুরে দেখার। বললেন, ‘আমার প্রায় ৬৫ বছরের সংগীতজীবনের সংগ্রহশালা।’ তাঁর নিজস্ব রেকর্ডিং স্টুডিও, আনুষঙ্গিক বিভিন্ন বাদ্যযন্ত্র, বই, সিডি, ক্যাসেট। দেয়ালে ঝুলছে স্বনামধন্য ব্যক্তিদের সঙ্গে ঘরোয়া আড্ডার কিছু স্থিরচিত্র, যেখানে রয়েছে বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদসহ অনেকর সঙ্গে তোলা ছবি। এনামুল কবির জানালেন, ছেলে এনায়েত কবির চঞ্চল ছিলেন ঢাকা কলেজের ছাত্রলীগের একসময়ের ভিপি। বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যখন ১৯৮১ সালে দেশে ফেরেন, সেই সময় যাঁরা তাঁকে নিরাপত্তা দিতে বুক পেতে সামনে থাকতেন, তাঁদের একজন ছিলেন চঞ্চল। পরে যুবলীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য হন চঞ্চল। শেখ হাসিনার যেমন ছিলেন আস্থাভাজন, ছিলেন স্নেহভাজনও। তাই ঘরোয়া অনুষ্ঠানাদিতে শেখ হাসিনা বাসায় আসতেন।
নেই রাষ্ট্রীয় সম্মাননা
ঘরজুড়ে রয়েছে দেশের বিভিন্ন সংগঠন থেকে প্রাপ্ত অসংখ্য সম্মাননা—পদক, পুরস্কার। আন্তর্জাতিক অঙ্গন থেকেও এসেছে সম্মাননা। কিন্তু নেই কোনো রাষ্ট্রীয় সম্মাননা-পদক। কৌতূহলী হয়ে প্রশ্ন করলাম, রাষ্ট্রীয় কোনো সম্মাননা পাননি? এনামুল কবির হাসিমুখে বললেন, ‘সেজন্য আক্ষেপ নেই। আমি হয়তো এখনো সেই সম্মানের যোগ্য হইনি। তবে মেয়েকে বলে রেখেছি, আমার মৃত্যুর পর যেন কোনো রাষ্ট্রীয় সম্মাননা গ্রহণ করা না হয়। আমি আমার শ্রোতা ও দেশের মানুষের যে ভালোবাসা পেয়েছি, সৃষ্টিকর্তার অশেষ রহমতে এখনো দেশের সংগীতের জন্য কাজ করে যাচ্ছি, এর ওপরে আর কী সম্মান হতে পারে! বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশ দিয়েছেন, আমি বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে সুরে গানে স্বরলিপিতে কিছু করতে পেরেছি, আন্তর্জাতিক অঙ্গনে তাঁকে তুলে ধরার চেষ্টা করেছি—এটাই তো বড় প্রাপ্তি। আমার চাওয়া হলো, রাষ্ট্রীয় পদকের যেন অবমাননা না হয়।’
আক্ষেপ তো আছেই
বেশ কিছু বিষয়ে আক্ষেপ রয়েছ এনামুল কবিরের। বললেন, ‘সংসদ টেলিভিশনে সারাক্ষণ যে ব্যাকগ্রাউন্ড মিউজিক বাজে, তা আমার বাজানো হাওয়াইয়ান গিটারের সুর। অথচ এর জন্য কর্তৃপক্ষ আমার অনুমতি দূরের কথা, রয়্যালটি পর্যন্ত দেয় না, কোনো দিন ধন্যবাদ পর্যন্ত দেয়নি। আর বড় আক্ষেপের বিষয়, আমার নামটা পর্যন্ত তারা কখনো উল্লেখ করে না।’ আরেকটি বিষয় নিয়ে আক্ষেপ আছে। বঙ্গবন্ধুর ১১০টি ভাষণের ২৭টি সিডি তৎকালীন তথ্যপ্রতিমন্ত্রী অধ্যাপক আব্দুল্লাহ আবু সায়ীদের তত্ত্বাবধানে প্রকাশিত হয়। এনামুল করিম বললেন, ‘একদিন অধ্যাপক সায়ীদ ফোন করে বললেন, কবির ভাই, বঙ্গবন্ধুকে এই দেশে মুছে ফেলার পাঁয়তারা চলছে। আমরা বঙ্গবন্ধুর যেখানে যে ভাষণ আছে, তা সংরক্ষণ করে সিডি আকারে প্রকাশ করব এবং বঙ্গবন্ধুর প্রতিটি ভাষণের আগে আপনার বাজানো হাওয়াইয়ান গিটারের সুর সংযোজন করব। মুক্তিযুদ্ধের গানের ওপর আপনার বাজানো সিডিগুলো যদি দেন, উপকৃত হব। আমি আনন্দের সাথে আমার সব সিডি দিলাম। বঙ্গবন্ধুর প্রতিটি ভাষণের আগে আমার বাজানো সুর সংযোজিত হলো। যথাসময়ে ২৭টি সিডি প্রকাশিত হলো। বিচারপতি হবিবুর রহমান ঘটা করে উদ্বোধন করলেন। আমি গর্বের সঙ্গে সেই অনুষ্ঠানে পরিবারসহ গেলাম। সৌজন্য কপি দেওয়া তো দূরের কথা, কোথাও আমার নামটি পর্যন্ত উচ্চারিত হলো না। পরবর্তী সময়ে সিডিগুলো কিনলাম, কিন্তু সেখানেও আমার নামটি পর্যন্ত দেওয়া হয়নি। অধ্যাপক সায়ীদকে অনুযোগ করলাম, তিনি দুঃখ প্রকাশ করে পরবর্তী সংস্করণে নাম সংযোজনের প্রতিশ্রুতি দিলেন। কিন্তু আজও নাম সংযোজিত হয়নি। আক্ষেপ যেমন থেকে গেছে, আনন্দও তো কম না। বঙ্গবন্ধুর ভাষণের আগে আমার বাজানো হাওয়াইয়ান গিটারের সুর সংযোজিত হয়েছে, আমি গর্বিত।’
বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে প্রথম দেখা
১৯৫৭ সালে এনামুল কবিরকে তাঁর আশরাফ চাচা ঢাকার গেন্ডারিয়ার এক বাসায় নিয়ে গেলেন। এনামুল কবির বলেন, ‘আমি তখন হাফপ্যান্ট পরি। বিশাল এক রুম, সাদা চাদর বিছানো। কতকগুলো কোলবালিশ রাখা। একসময় দেখলাম, এক ভদ্রলোক পাইপ টানতে টানতে সাথে বেশ কজনকে নিয়ে ঘরে ঢুকছেন। আমি জানতাম না উনি কে। আমি সেখানে কাউকেই চিনি না। শুধু চিনলাম মানিক মিয়াকে, দৈনিক ইত্তেফাকের সুবাদে। ইত্তেফাকে তাঁর ছবি ছাপা হতো বলে। এর মধ্যে লোকে ঘর ভরে গেছে। কথাবার্তা চলছে, আর এক কোনায় আমি ঝিমুচ্ছি। চাচা বললেন, চল তোকে বাসায় দিয়ে আসি। চলে যাব, এমন সময় বঙ্গবন্ধু বললেন, এই আশরাফ, ওই ছ্যামরাডা কেডা? চাচা বললেন, ভাইয়ের ছেলে। বঙ্গবন্ধু আমাকে কাছে ডেকে নিয়ে মাথায় হাত দিয়ে চুলগুলো নাড়াচাড়া করতে করতে বললেন, তোর চুলগুলান তো ভারী সুন্দর! বাইরে এসে চাচা বললেন, ‘তোর মাথায় যিনি হাত বোলালেন, কথা বললেন, উনি শেখ সাব। আমাদের অনেক বড় নেতা।’
বঙ্গবন্ধুর উৎসাহ
বঙ্গবন্ধুর ঘনিষ্ঠ সহচর ছিলেন নারায়ণগঞ্জের আওয়ামী লীগ নেতা এ কে এম শামসুজ্জোহা। তাঁর স্ত্রী নাগিনা জ্বোহা এনামুল কবিরের কাছে হাওয়াইয়ান গিটার শিখতেন। সত্তরের নির্বাচনে আওয়ামী লীগ নিরঙ্কুশ জয় পেলে একটি নৌবিহারের আয়োজন করা হয়। পশ্চিম পাকিস্তান থেকে বেশ কয়েকজন ডেলিগেট এলেন। এ কে এম শামসুজ্জোহা দাওয়াত করলেন এনামুল কবিরকে। বললেন, ‘কবির ভাই, বঙ্গবন্ধু নৌবিহারে যাবেন। সেখানে পাকিস্তানি অতিথিদের বাংলা গান শোনাতে হবে। সাথে আরো কিছু শিল্পী নিয়ে আপনি আমাদের সাথে যাবেন।’ উস্তাদ নিতাই রায়, সরদার আলাউদ্দীনসহ বেশ কয়েকজন শিল্পী ও যন্ত্রী নিয়ে মেরি এন্ডারসন জাহাজে উঠলেন এনামুল কবির। পাগলা থেকে চাঁদপুর পর্যন্ত ছিল নৌবিহার। যাওয়া-আসার পথে প্রচুর গান হলো। গিটারে গানের সুর তোলা হলো। বাজানো শেষ হলে বঙ্গবন্ধু বললেন, ‘তুই তো আমার পছন্দের গান বাজায়ছস। তোর বাড়ি কোহানে? এনামুল বললেন, ‘যশোরের কালিয়া থানায়।’ ‘কালিয়ার কোন গ্রাম? বাপের নাম কী?’ এনামুল উত্তর দিলেন ‘শেখ সরোয়ার।’ বঙ্গবন্ধু বললেন, ‘ও! সরোয়ার মিঞা ভাই! গোপালগঞ্জে স্কুলে আমার এক বছরের সিনিয়র ছিল। তুই তার ছাওয়াল?’ নিজের পাশে বসিয়ে বঙ্গবন্ধু বললেন, ‘তুই তো ভালো গিটার বাজাস। চালায়া যা। একদিন বড় শিল্পী হবি, দেশের মুখ উজ্জ্বল করবি।’
মুক্তিযুদ্ধে গান সংগ্রহ
মুক্তিযুদ্ধ যখন শুরু হয়ে গেল, এনামুল কবির তখন ঢাকায়। জানালেন সে সময়ের স্মৃতি, ‘গোপনে স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র শুনতাম আর মুক্তিযুদ্ধের উদ্দীপনামূলক গানগুলো রেকর্ড করে রাখতাম। পরে দরজা-জানালা বন্ধ করে সেসব গানের স্বরলিপি করে সংগ্রহে রাখতাম। বিশ্বাস করতাম, দেশ একদিন স্বাধীন হবেই। তখন এসব স্বরলিপি, গান কাজে লাগবে। পরবর্তী সময়ে ঠিকই কাজে লাগিয়েছি। সেসব গানের স্বরলিপি বই আকারে প্রকাশ করেছি, গিটার বাদন ক্যাসেট-সিডি আকরে প্রকাশ করেছি। প্রতিটি গানের মূল শিল্পী, গীতিকার, সুরকারসহ বিভিন্ন তথ্য সংযোজনের চেষ্টা করেছি, ফলে এসব গান টিকে থাকবে যুগের পর যুগ। শুধু তাই নয়, স্বরলিপির পাশাপাশি স্টাফ নোটেশন করে গানগুলো ভিনদেশি ভাষাভাষীদের জন্য তুলে ধরেছি। দেশের মুক্তিযুদ্ধ সম্পর্কে, বঙ্গবন্ধু সম্পর্কে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে সুরে গানে জানার একটা সুযোগ সৃষ্টি করে দিয়েছি।’
বাঁশি ছেড়ে গিটার
কৈশোরে শেখ কাওসার নামের এক চাচার বাজানো সুর শুনে প্রথম বাঁশির প্রেমে পড়েন এনামুল কবির। চাচার পেছনে ঘুরে ঘুরে একসময় শিখে ফেলন বাঁশি বাজানো। এরপর পড়াশোনার জন্য চলে আসেন ঢাকায়। হঠাৎ বাতজ্বরে আক্রান্ত হলে ডাক্তারের পরামর্শে ছাড়তে হয় শখের বাঁশি। বিশ্রামের জন্য বছরখানেক গ্রামে গিয়ে থাকতে বললেন চিকিৎসক। ঢাকা ছাড়ার আগে মনে হলো সংগীত ছাড়া বাঁচতে পারবেন না। হাতে তুলে নিলেন গিটার। সেটা ১৯৫৯ সালের দিকের কথা। ঘরে বসে কলকাতা, শিলং রেডিওতে প্রচারিত গিটার বাজনা শুনতেন। গান শুনে শুনেই হারিকেনের আলোয় সন্ধ্যার পর গিটার নিয়ে ঘণ্টার পর ঘণ্টা চর্চা করতেন।
১৯৬৪ সালে বেতারে হাওয়াইয়ান গিটারশিল্পী হিসেবে তালিকাবুক্ত হন। টেলিভিশনে প্রথম সুযোগ পান ১৯৬৯ সালে। অনেক চলচ্চিত্রের ব্যাকগ্রাউন্ড মিউজিক বাজিয়েছেন। একসময় সুর করা শুরু করেন এবং খ্যাতি অর্জন করেন।
গিটারের শিক্ষক হয়ে ওঠা
গ্রাজুয়েট স্কুল শেষ করে তৎকালীন জিন্নাহ কলেজে ভর্তি হলেন এনামুল কবির। এদিকে গিটারে প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা বলতে বুলবুল ললিতকলা একাডেমিতে (বাফা) মাত্র ছয় মাসের শিক্ষা। অনিবার্য কারণে চার বছরের সার্টিফিকেট কোর্স শেষ করা হয়নি। এরপর নিজের অদম্য চেষ্টায় হয়ে ওঠেন দেশে-বিদেশে হাওয়াইয়ান গিটারের এক দিকপাল। যেকোনো অনুষ্ঠানেই ডাক পড়ত। অনেকই আবদার করতেন গিটার শেখানোর জন্য। সেই আবদার মেটাতে মেটাতেই একসময় হয়ে ওঠেন ‘গিটারের স্যার’। এনামুল কবির বলেন, ‘আমি তখন নারিন্দায় থাকি। পাশেই থাকতেন বর্তমান সময়ের মন্ত্রী বীর মুক্তিযোদ্ধা গাজী গোলাম দস্তগীর। আমার কাছে গিটার শেখা শুরু করলেন। অসংখ্য ছেলেমেয়ে, যুবক-যুবতী, ছাত্রছাত্রী, গৃহবধূ, ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ারকে গিটার শিখিয়েছি। বলতে দ্বিধা নেই, সাবেক রাষ্ট্রপতি, তৎকালীন রাজনৈতিক নেতা ও খ্যাতিমান ডাক্তার এ কিউ এম বদরুদ্দোজা চৌধুরীর স্ত্রীকেও শিখিয়েছি।’ ১৯৬৪ সালেই এনামুল কবির বেতারে হাওয়াইয়ান গিটারশিল্পী হিসেবে তালিকাভুক্ত হন। টেলিভিশনে প্রথম সুযোগ পান ১৯৬৯ সালে। অনেক চলচ্চিত্রের ব্যাকগ্রাউন্ড মিউজিক বাজিয়েছেন, এর মধ্যে ‘অনন্ত প্রেম’ উল্লেখযোগ্য। এরপর সুরকার হিসেবেও খ্যাতি অর্জন করেন। তাঁর সুরারোপিত গানে হৈমন্তী শুক্লা, সুবীর নন্দীসহ দেশের বিশিষ্ট শিল্পীরা কণ্ঠ দেন। গীতিকার কে জি মুস্তাফার অসংখ্য গানে তিনি সুর দিয়েছেন। আর স্বরলিপিতে সিদ্ধহস্ত এপার-ওপারে তাঁর মতো গুণী খুঁজতে হবে।
ইলেকট্রনিকস দোকানে গিটারের চর্চা
১৯৬৫ সালে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হলেন। স্ত্রী মমতাজ জাহান একসময় বললেন, ‘সারা জীবন গিটার বাজিয়ে সংসার চলবে না। এর পাশাপাশি কিছু একটা করা উচিত।’ তখন স্টেডিয়ামে একটা ইলেকট্রনিকসের দোকান করলেন এনামুল কবির ‘মিতা ইলেকট্রনিক্স’ নামে। দোকান করার পর সংগীতের চর্চা আর হাওয়াইয়ান গিটারের প্রসার আরো বেড়ে গেল। দোকানে তাঁর বাজানো হাওয়াইয়ান গিটারের ক্যাসেট দেদার বিক্রি হতে শুরু করল, আয় বাড়ল, উৎসাহ বাড়ল। শুরু হলো একের পর এক হাওয়াইয়ান গিটার বাদনের ক্যাসেট প্রকাশনা। ১৯৬৯ সালে প্রথম ছোট পরিসরে একটি স্বরলিপির বই প্রকাশ করলেন। এরপর ১৯৮৪ সালে মুক্তিযুদ্ধের সময়ের বেশ কিছু জনপ্রিয় গান নিয়ে প্রকাশিত হলো ‘জন্মভূমির গান’ শিরোনামে দ্বিতীয় স্বরলিপির বই। এরপর তো তিনি থেমে থাকেননি। এক এক করে বিভিন্ন ধরনের গান নিয়ে বিভিন্ন শিরোনামে আজ অবধি প্রকাশ করেছেন প্রায় ২৬টি স্বরলিপির বই, যেখানে স্থান পেয়েছে মুক্তিযুদ্ধের গান, বঙ্গবন্ধুর গান, দেশাত্মবোধক গান, বাংলা আধুনিক ও চলচ্চিত্রের গান, লালন, হাসন, রবীন্দ্র, নজরুলের গান, হিন্দি, উর্দু—এমন কোনো জনপ্রিয় গান নেই, যার স্বরলিপি তিনি করেননি। শুধু তাই নয়, সেসব গান আবার হাওয়াইয়ান গিটারে বাজিয়ে ক্যাসেট, সিডি, ভিসিডি করেছেন; যার সংখ্যা হবে প্রায় ৬০। এসব স্বরলিপি বই ও সিডিতে কম-বেশি প্রায় দেড় হাজার গান স্থান পেয়েছে।
পঁচাত্তরের পর নীরবে চলেছে প্রতিবাদ
স্টেডিয়াম মার্কেটে নিজের ইলেকট্রনিকসের দোকানে বসে লাউড স্পিকারে উচ্চ ভলিয়মে বাজাতেন হাওয়াইয়ান গিটারে নিজের বাজানো যত সব মুক্তিযুদ্ধের গানের সুর। এর জন্য কম ঝামেলা পোহাতে হয়নি তাঁকে, হুমকিও এসেছে। এনামুল কবির বলেন, ‘জিয়াউর রহমান বা এরশাদ সরকারের আমল বলো, সব সময়ই আমি মুক্তিযুদ্ধের সময়কালীন গানগুলোই বাজাতাম। যেমন—‘জয় বাংলা’, ‘শোনো একটি মুজিবুরের থেকে’, ‘তীর হারা এই ঢেউয়ের সাগর’ ইত্যাদি। প্রতিবেশী দোকানের মালিকরা বলতেন, ‘আপনি যে বঙ্গবন্ধুর গান, জয় বাংলার গান বাজান, তাতে আপনার তো বিপদ হবে, সঙ্গে আমাদেরও ক্ষতি হয়ে যাবে।’ স্টেডিয়াম মার্কেটের তখনকার সভাপতি মহিউদ্দিন ভাই, যিনি একসময় বঙ্গবন্ধুর বডিগার্ড ছিলেন, তাঁকে বিষয়টি জানালাম। তিনি বললেন, ‘আপনি বাজিয়ে যান, কে কী করে আমি দেখব।’ তখন সবাই জানতেন, জিয়া কিংবা এরশাদের আমলে বঙ্গবন্ধু বা স্বাধীনতার সপক্ষীয় কোনো কাজ করা মানে বিপদ। যা হোক, সাহস নিয়ে মুক্তিযুদ্ধের সপক্ষীয় কাজ তখনো করেছি, এখনো করে যাচ্ছি, কোনো রাষ্ট্রীয় পুরস্কারের আশায় নয়। কৈশোর, যৌবনে বঙ্গবন্ধুর যে আশীর্বাদ পেয়েছি, সেই থেকে তাঁর প্রতি ভালোবাসা আর দেশের সংগীতের ভান্ডার সমৃদ্ধ করতে, টিকিয়ে রাখতেই আমার এই নিরলস শ্রম। আর এখানেই আমার তৃপ্তি, আনন্দ। এ কারণেই দেশের গানগুলো শুদ্ধ সুরে স্বরলিপি করে রেখে যেতে পারলাম। এমনও গানের স্বরলিপি বা বাজনা আছে, যা বাংলাদেশ বেতার বা টেলিভিশন, এমনকি জাতীয় আর্কাইভেও নেই। আমি গর্ব করে বলতে পারি, আমার একেকটি স্বরলিপির বই একেকটি আর্কাইভ। আরো উল্লেখ করতে চাই, যখনই যে গানটি স্টেডিয়ামে বাজাতাম, সেই ক্যাসেটটি কেনার জন্য শ্রোতারা দোকানের সামনে ভিড় করত। দেদার বিক্রি হতো 'জয় বাংলা' গানের সুরের ক্যাসেট। আজ সব ইতিহাস।
জন্ম ও বেড়ে ওঠা
এনামুল কবিরের জন্ম ১৯৪২ সালের ৫ জুলাই নড়াইল জেলার নড়াগাতী থানার ডুমুরিয়া গ্রামে। জ্ঞান হওয়ার পর থেকেই বাড়িতে কলের গান বাজতে শুনেছেন। ছোটবেলা থেকেই গানের প্রতি বিশেষ আকর্ষণ তৈরি হয়ে যায়। বাবার সরকারি চাকরির সুবাধে চলে যেতে হয় কলকাতায়। শৈশব কেটেছে কলকাতায়। ১৯৪২ থেকে ৫০ সাল পর্যন্ত কলকাতায় ছিলেন। দেশভাগের সময় খালি হাতেই কলকাতা থেকে বাংলাদেশে এলেন।
পরিবার
এক ছেলে এক মেয়ে। ছেলে এনায়েত কবির চঞ্চল ২০১৫ সালে মারা যান। স্ত্রী মারা গেছেন ২০১৫ সালের ফেব্রুয়ারিতে, এপ্রিলে ছেলে। মেয়ে নাহিদ কবির কাকলী কানাডায় আছেন অনেক বছর ধরে। ওখানে ব্যাংকে চাকরি করেন রবীন্দ্রসংগীত শিল্পীও কাকলী। অনেকগুলো গানের অ্যালবামও বের হয়েছে। ছেলের ঘরে তিন নাতি। মেয়ে কাকলীর এক কন্যাসন্তান আছে।
সময় কীভাবে কাটে
গত দুই বছর তো করোনায় ঘরবন্দি সময় গেল। সময় তো কাটতেই চায় না। এনামুল কবির বলেন, ‘মঙ্গলবার আমার বাসায় একটা গানের আসর বসে। আমার গানের বন্ধুরা আসে, আড্ডা হয়, গান গাওয়া হয়। এখনো স্বরলিপি করি, গিটার বাজাই। করোনাকালীন অনলাইনে প্রচুর প্রোগ্রাম করতাম আমরা। শুধু গিটারে গান বাজানোই আমার শেষ নয়, আমি নিজে যা শিখেছি, তা ছড়িয়ে দেওয়ার ইচ্ছেতেই ছাত্রছাত্রীদের শেখানো শুরু করি। ১ হাজারেরও বেশি ছাত্রছাত্রীকে আমি হাওয়াইন গিটার শিখিয়েছি।’
সংগীতের আর্কাইভ এনামুল কবির
এনামুল কবির সম্পর্কে তাঁর আত্মজীবনী ‘আমার সঙ্গীত আমার জীবন‘ পড়ে কিংবা বাসার প্রতিটি রুম স্বচক্ষে দেখে, তাঁর সাথে দীর্ঘ আলাপচারিতায় এতটুকুই প্রমাণ মেলে যে, ‘এনামুল কবির সত্যিই এ দেশের সংগীত ভুবনের আর্কাইভ’, ‘দেশের সংগীতের আলোকবর্তিকা’। যিনি তাঁর সংগীতজীবনের ৬৫টি বছর রাত-দিন এত কাজ করেছেন, যা আর দশজন সংগীতজ্ঞের ক্ষেত্রে পাওয়া দুষ্কর। একাধারে তিনি হাওয়াইয়ান গিটারশিল্পী, সুরকার, স্বরলিপিকার, গায়ক, দেশের অপসংস্কৃতির বিরুদ্ধে সম্মুখ সারির যোদ্ধা। তাহলে দেশকে ভালোবেসে, দেশের সংগীতকে ভালোবেসে, বঙ্গবন্ধু, মুক্তিযুদ্ধকে ভালোবেসে আর কত কাজ করলে রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি মিলবে তা আমাদের জানা নেই।

গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।
০৬ অক্টোবর ২০২৫
‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর...
১২ জুন ২০২৫
ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।
১৯ মে ২০২৫
আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
০৮ মে ২০২৫বাসস, ঢাকা

গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।
আজ সোমবার বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের ট্রাইব্যুনাল-১-এ মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা (আইও) মো. আলমগীরের জেরা শুরু করেন রাষ্ট্র নিযুক্ত আইনজীবী আমীর হোসেন। আইনজীবী আমীর হোসেন পলাতক আসামি শেখ হাসিনা ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের পক্ষে শুনানি করছেন। এর আগে গত মঙ্গলবার তদন্তকারী কর্মকর্তা মো. আলমগীরের সাক্ষ্য গ্রহণ সম্পন্ন হয়।
এই মামলার শুনানিতে এর আগে গণ-অভ্যুত্থানের অন্যতম প্রতীক শহীদ আবু সাঈদের বাবাসহ স্বজনহারা পরিবারের একাধিক সদস্য সাক্ষ্য দিয়েছেন। এ ছাড়া মামলার গুরুত্বপূর্ণ ‘স্টার উইটনেস’ হিসেবে সাক্ষ্য দেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক এবং জুলাই আন্দোলনের অন্যতম নেতৃত্বদানকারী নাহিদ ইসলাম এবং দৈনিক আমার দেশ পত্রিকার সম্পাদক ড. মাহমুদুর রহমান।
গত বছরের জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার আন্দোলন দমনে আওয়ামী লীগ সরকার, তাদের দলীয় ক্যাডার ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর একটি অংশ গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটিত করে বলে অভিযোগ ওঠে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে শেখ হাসিনা, তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল এবং তৎকালীন আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের বিরুদ্ধে গত ১০ জুলাই অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দেন ট্রাইব্যুনাল-১।
পরবর্তীকালে, এই মামলার অন্যতম আসামি সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন দোষ স্বীকার করে ঘটনার সত্যতা উদ্ঘাটনে রাজসাক্ষী (অ্যাপ্রোভার) হওয়ার জন্য ট্রাইব্যুনালে আবেদন করেন। ট্রাইব্যুনাল তাঁর আবেদন মঞ্জুর করলে তিনি রাজসাক্ষী হিসেবে এই মামলায় সাক্ষ্য দেন।
মামলার প্রসিকিউশন পক্ষে শুনানি করছেন চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম, প্রসিকিউটর মিজানুল ইসলাম এবং গাজী এসএইচ তামিম। শুনানিতে তাঁদের সঙ্গে অপর প্রসিকিউটররাও উপস্থিত ছিলেন।
অন্যদিকে, এই মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে রাজসাক্ষী হওয়া সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের পক্ষে আছেন আইনজীবী যায়েদ বিন আমজাদ।
মানবতাবিরোধী অপরাধের এই মামলা ছাড়াও ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে আরও দুটি মামলা বিচারাধীন। এর মধ্যে একটি মামলায় আওয়ামী লীগের সাড়ে ১৫ বছরের শাসনামলে সংঘটিত গুম-খুনের ঘটনায় তাঁকে আসামি করা হয়েছে। অন্য মামলাটি হলো রাজধানীর মতিঝিলের শাপলা চত্বরে হেফাজতে ইসলামের সমাবেশে হত্যাকাণ্ড নিয়ে। এই তিনটি মামলার বিচারকাজই বর্তমানে দুটি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে চলমান।

গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।
আজ সোমবার বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের ট্রাইব্যুনাল-১-এ মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা (আইও) মো. আলমগীরের জেরা শুরু করেন রাষ্ট্র নিযুক্ত আইনজীবী আমীর হোসেন। আইনজীবী আমীর হোসেন পলাতক আসামি শেখ হাসিনা ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের পক্ষে শুনানি করছেন। এর আগে গত মঙ্গলবার তদন্তকারী কর্মকর্তা মো. আলমগীরের সাক্ষ্য গ্রহণ সম্পন্ন হয়।
এই মামলার শুনানিতে এর আগে গণ-অভ্যুত্থানের অন্যতম প্রতীক শহীদ আবু সাঈদের বাবাসহ স্বজনহারা পরিবারের একাধিক সদস্য সাক্ষ্য দিয়েছেন। এ ছাড়া মামলার গুরুত্বপূর্ণ ‘স্টার উইটনেস’ হিসেবে সাক্ষ্য দেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক এবং জুলাই আন্দোলনের অন্যতম নেতৃত্বদানকারী নাহিদ ইসলাম এবং দৈনিক আমার দেশ পত্রিকার সম্পাদক ড. মাহমুদুর রহমান।
গত বছরের জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার আন্দোলন দমনে আওয়ামী লীগ সরকার, তাদের দলীয় ক্যাডার ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর একটি অংশ গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটিত করে বলে অভিযোগ ওঠে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে শেখ হাসিনা, তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল এবং তৎকালীন আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের বিরুদ্ধে গত ১০ জুলাই অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দেন ট্রাইব্যুনাল-১।
পরবর্তীকালে, এই মামলার অন্যতম আসামি সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন দোষ স্বীকার করে ঘটনার সত্যতা উদ্ঘাটনে রাজসাক্ষী (অ্যাপ্রোভার) হওয়ার জন্য ট্রাইব্যুনালে আবেদন করেন। ট্রাইব্যুনাল তাঁর আবেদন মঞ্জুর করলে তিনি রাজসাক্ষী হিসেবে এই মামলায় সাক্ষ্য দেন।
মামলার প্রসিকিউশন পক্ষে শুনানি করছেন চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম, প্রসিকিউটর মিজানুল ইসলাম এবং গাজী এসএইচ তামিম। শুনানিতে তাঁদের সঙ্গে অপর প্রসিকিউটররাও উপস্থিত ছিলেন।
অন্যদিকে, এই মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে রাজসাক্ষী হওয়া সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের পক্ষে আছেন আইনজীবী যায়েদ বিন আমজাদ।
মানবতাবিরোধী অপরাধের এই মামলা ছাড়াও ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে আরও দুটি মামলা বিচারাধীন। এর মধ্যে একটি মামলায় আওয়ামী লীগের সাড়ে ১৫ বছরের শাসনামলে সংঘটিত গুম-খুনের ঘটনায় তাঁকে আসামি করা হয়েছে। অন্য মামলাটি হলো রাজধানীর মতিঝিলের শাপলা চত্বরে হেফাজতে ইসলামের সমাবেশে হত্যাকাণ্ড নিয়ে। এই তিনটি মামলার বিচারকাজই বর্তমানে দুটি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে চলমান।

বাংলাদেশে হাওয়াইয়ান গিটার জনপ্রিয় করার নেপথ্য সৈনিক শিল্পী এনামুল কবির। বয়স এখন ৮০। কৈশোর-যৌবনে পেয়েছেন বঙ্গবন্ধুর স্নেহ, সান্নিধ্য। স্বাধীনতার গান, মুক্তিযুদ্ধের গান, বঙ্গবন্ধুর গান, দেশাত্মবোধক গান, লোকজ গানে তাঁর অবদান উল্লেখ করার মতো।
০৯ এপ্রিল ২০২২
‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর...
১২ জুন ২০২৫
ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।
১৯ মে ২০২৫
আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
০৮ মে ২০২৫
‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর সঙ্গে।
মাছের সুষ্ঠু প্রজনন, উৎপাদন, মৎস্যসম্পদ সংরক্ষণ ও টেকসই মৎস্য আহরণের জন্য সমুদ্রে সব ধরনের মাছ শিকার ৫৮ দিনের নিষেধাজ্ঞা গতকাল বুধবার দিবাগত মধ্যরাতে শেষ হয়েছে। তাই গতকাল দিনভর ছিল উপকূলের জেলেপল্লিগুলোতে ব্যস্ততা। অনেকে দেখে নিচ্ছিলেন ট্রলার ঠিকঠাক আছে কি না, কেউ জালের ছেঁড়া অংশ সেলাই করছিলেন, কেউ আবার প্রয়োজনীয় খাদ্যসামগ্রীসহ অন্য সরঞ্জাম গুছিয়ে নিচ্ছিলেন।
বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র এবং ফকিরহাট উপ-মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের ঘাটে গতকাল শত শত ট্রলার নোঙর করে রাখা ছিল। জেলেদের উপস্থিতিতে ঘাট এলাকা সরগরম হয়ে ওঠে। ফকিরহাটের মুদি-মনিহারি দোকানগুলোতে জেলেরা কেনাকাটা করতে ভিড় জমান। ফকিরহাট এলাকার বিসমিল্লাহ ট্রলারের মাঝি রহিম মিয়া বলেন, ‘সাগরে মাছ শিকারে যেতে সকল প্রস্তুতি নিয়েছি। নিষেধাজ্ঞার সময় শেষ হওয়ামাত্রই সাগরে নামব।’
জেলে নুরসাইদ ও ফোরকান মিয়া বলেন, ‘নিষেধাজ্ঞার সময় পরিবার-পরিজন নিয়ে বেশ কষ্টে কেটেছে। ওই সময়ে বেশ টাকা ঋণ করেছি। এখন সাগরে যাব। দেখি আল্লাহ ঋণ পরিশোধ করতে দেন কি না।’
নোয়াখালীর হাতিয়ার সূর্যমুখী, বাংলাবাজার, কাজিরবাজার, পাইতান মার্কেট চেয়ারম্যান ঘাটসহ বেশ কয়েকটি ঘাটে গতকাল জেলেদের ব্যস্ত সময় পার করতে দেখা গেছে। অনেকে নৌকায় জাল তুলছিলেন, আবার অনেকে জ্বালানি তেল মজুতসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্রী ট্রলারে নিয়ে যান। সূর্যমুখী ঘাটের এমভি মায়ের দোয়া ট্রলারের মাঝি জাফর উল্যা বলেন, ‘সাগরে ৮-১০ দিন থাকার প্রস্তুতি নিচ্ছি। সন্ধ্যায় সাগরের উদ্দেশে রওনা দেব।’
সূর্যমুখী ঘাট জেলে সমিতির সভাপতি জবিয়ল হক বলেন, ‘সাগরে নামতে প্রস্তুত নোয়াখালীর হাতিয়ার ২০টি ঘাটের লক্ষাধিক জেলে। এসব ঘাটে প্রায় ১০ হাজার ছোট-বড় ফিশিং ট্রলার রয়েছে। প্রতি ট্রলারে ১০ জন হলেও লক্ষাধিক জেলে এই মাছ ধরার সঙ্গে জড়িত। তাঁদের সবাই গত ৫৮ দিন তীরে বেকার ছিলেন।’
পিরোজপুরের ইন্দুরকানি উপজেলার পাড়েরহাট মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের পার্শ্ববর্তী এলাকার জেলেরা গতকাল দিনভর সাগরে যাওয়ার প্রস্তুতি নেন। এ ছাড়া মঠবাড়িয়া উপজেলার সাপলেজা, খেতাচিড়া, বড়মাছুয়া, ছোটমাছুয়া, ভান্ডারিয়া উপজেলার চরখালী, হেতালিয়া, কাউখালী উপজেলার সোনাকুর এলাকার জেলেরা, সদর উপজেলা এবং নেছারাবাদ উপজেলার বিভিন্ন এলাকার জেলেরা প্রস্তুতি শেষে গত রাতে বঙ্গোপসাগরে রওনা হন।
কয়েক দিন ধরে কক্সবাজার উপকূলের জেলেপল্লিগুলোতে নৌকা, জাল মেরামতসহ বিভিন্ন প্রস্তুতি সেরেছেন জেলেরা। গতকাল মেরিন ড্রাইভের টেকনাফের খুরেরমুখ, সাবরাং ও বাহারছড়া এলাকায় দেখা গেছে, সড়কে দাঁড় করিয়ে রাখা সারি সারি ট্রলারে জাল ও রসদ তোলেন জেলেরা।
একটি ট্রলারের মাঝি আবু তাহের জানান, এবার ভারতের সঙ্গে মিল রেখে নিষেধাজ্ঞা দেওয়ায় কেউ সাগরে মাছ শিকারে নামেনি। এতে উপকূলের কাছাকাছি সাগরে জাল ফেললেই ইলিশসহ অন্য মাছ পাওয়া যাবে বলে আশাবাদী তিনি।
কক্সবাজার শহরের ফিশারি ঘাটের মৎস্য ব্যবসায়ী সমিতির পরিচালক জুলফিকার আলী জানান, কক্সবাজার উপকূলে ছোট-বড় ৭ হাজারের মতো যান্ত্রিক ট্রলার রয়েছে। এসব ট্রলারে প্রায় এক লাখ জেলে ও শ্রমিক নিয়োজিত রয়েছেন। অধিকাংশ ট্রলার নিষেধাজ্ঞা ওঠার সঙ্গে সঙ্গে সাগরে রওনা হবে।
[প্রতিবেদন তৈরিতে তথ্য দিয়ে সহায়তা করেছেন বরগুনা ও আমতলী, পিরোজপুর, কক্সবাজার এবং হাতিয়া প্রতিনিধি]

‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর সঙ্গে।
মাছের সুষ্ঠু প্রজনন, উৎপাদন, মৎস্যসম্পদ সংরক্ষণ ও টেকসই মৎস্য আহরণের জন্য সমুদ্রে সব ধরনের মাছ শিকার ৫৮ দিনের নিষেধাজ্ঞা গতকাল বুধবার দিবাগত মধ্যরাতে শেষ হয়েছে। তাই গতকাল দিনভর ছিল উপকূলের জেলেপল্লিগুলোতে ব্যস্ততা। অনেকে দেখে নিচ্ছিলেন ট্রলার ঠিকঠাক আছে কি না, কেউ জালের ছেঁড়া অংশ সেলাই করছিলেন, কেউ আবার প্রয়োজনীয় খাদ্যসামগ্রীসহ অন্য সরঞ্জাম গুছিয়ে নিচ্ছিলেন।
বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র এবং ফকিরহাট উপ-মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের ঘাটে গতকাল শত শত ট্রলার নোঙর করে রাখা ছিল। জেলেদের উপস্থিতিতে ঘাট এলাকা সরগরম হয়ে ওঠে। ফকিরহাটের মুদি-মনিহারি দোকানগুলোতে জেলেরা কেনাকাটা করতে ভিড় জমান। ফকিরহাট এলাকার বিসমিল্লাহ ট্রলারের মাঝি রহিম মিয়া বলেন, ‘সাগরে মাছ শিকারে যেতে সকল প্রস্তুতি নিয়েছি। নিষেধাজ্ঞার সময় শেষ হওয়ামাত্রই সাগরে নামব।’
জেলে নুরসাইদ ও ফোরকান মিয়া বলেন, ‘নিষেধাজ্ঞার সময় পরিবার-পরিজন নিয়ে বেশ কষ্টে কেটেছে। ওই সময়ে বেশ টাকা ঋণ করেছি। এখন সাগরে যাব। দেখি আল্লাহ ঋণ পরিশোধ করতে দেন কি না।’
নোয়াখালীর হাতিয়ার সূর্যমুখী, বাংলাবাজার, কাজিরবাজার, পাইতান মার্কেট চেয়ারম্যান ঘাটসহ বেশ কয়েকটি ঘাটে গতকাল জেলেদের ব্যস্ত সময় পার করতে দেখা গেছে। অনেকে নৌকায় জাল তুলছিলেন, আবার অনেকে জ্বালানি তেল মজুতসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্রী ট্রলারে নিয়ে যান। সূর্যমুখী ঘাটের এমভি মায়ের দোয়া ট্রলারের মাঝি জাফর উল্যা বলেন, ‘সাগরে ৮-১০ দিন থাকার প্রস্তুতি নিচ্ছি। সন্ধ্যায় সাগরের উদ্দেশে রওনা দেব।’
সূর্যমুখী ঘাট জেলে সমিতির সভাপতি জবিয়ল হক বলেন, ‘সাগরে নামতে প্রস্তুত নোয়াখালীর হাতিয়ার ২০টি ঘাটের লক্ষাধিক জেলে। এসব ঘাটে প্রায় ১০ হাজার ছোট-বড় ফিশিং ট্রলার রয়েছে। প্রতি ট্রলারে ১০ জন হলেও লক্ষাধিক জেলে এই মাছ ধরার সঙ্গে জড়িত। তাঁদের সবাই গত ৫৮ দিন তীরে বেকার ছিলেন।’
পিরোজপুরের ইন্দুরকানি উপজেলার পাড়েরহাট মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের পার্শ্ববর্তী এলাকার জেলেরা গতকাল দিনভর সাগরে যাওয়ার প্রস্তুতি নেন। এ ছাড়া মঠবাড়িয়া উপজেলার সাপলেজা, খেতাচিড়া, বড়মাছুয়া, ছোটমাছুয়া, ভান্ডারিয়া উপজেলার চরখালী, হেতালিয়া, কাউখালী উপজেলার সোনাকুর এলাকার জেলেরা, সদর উপজেলা এবং নেছারাবাদ উপজেলার বিভিন্ন এলাকার জেলেরা প্রস্তুতি শেষে গত রাতে বঙ্গোপসাগরে রওনা হন।
কয়েক দিন ধরে কক্সবাজার উপকূলের জেলেপল্লিগুলোতে নৌকা, জাল মেরামতসহ বিভিন্ন প্রস্তুতি সেরেছেন জেলেরা। গতকাল মেরিন ড্রাইভের টেকনাফের খুরেরমুখ, সাবরাং ও বাহারছড়া এলাকায় দেখা গেছে, সড়কে দাঁড় করিয়ে রাখা সারি সারি ট্রলারে জাল ও রসদ তোলেন জেলেরা।
একটি ট্রলারের মাঝি আবু তাহের জানান, এবার ভারতের সঙ্গে মিল রেখে নিষেধাজ্ঞা দেওয়ায় কেউ সাগরে মাছ শিকারে নামেনি। এতে উপকূলের কাছাকাছি সাগরে জাল ফেললেই ইলিশসহ অন্য মাছ পাওয়া যাবে বলে আশাবাদী তিনি।
কক্সবাজার শহরের ফিশারি ঘাটের মৎস্য ব্যবসায়ী সমিতির পরিচালক জুলফিকার আলী জানান, কক্সবাজার উপকূলে ছোট-বড় ৭ হাজারের মতো যান্ত্রিক ট্রলার রয়েছে। এসব ট্রলারে প্রায় এক লাখ জেলে ও শ্রমিক নিয়োজিত রয়েছেন। অধিকাংশ ট্রলার নিষেধাজ্ঞা ওঠার সঙ্গে সঙ্গে সাগরে রওনা হবে।
[প্রতিবেদন তৈরিতে তথ্য দিয়ে সহায়তা করেছেন বরগুনা ও আমতলী, পিরোজপুর, কক্সবাজার এবং হাতিয়া প্রতিনিধি]

বাংলাদেশে হাওয়াইয়ান গিটার জনপ্রিয় করার নেপথ্য সৈনিক শিল্পী এনামুল কবির। বয়স এখন ৮০। কৈশোর-যৌবনে পেয়েছেন বঙ্গবন্ধুর স্নেহ, সান্নিধ্য। স্বাধীনতার গান, মুক্তিযুদ্ধের গান, বঙ্গবন্ধুর গান, দেশাত্মবোধক গান, লোকজ গানে তাঁর অবদান উল্লেখ করার মতো।
০৯ এপ্রিল ২০২২
গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।
০৬ অক্টোবর ২০২৫
ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।
১৯ মে ২০২৫
আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
০৮ মে ২০২৫নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা

ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।
ভারতের নিষেধাজ্ঞার এক দিন পরই গত রোববার লালমনিরহাটের বুড়িমারী ও যশোরের বেনাপোল স্থলবন্দরসহ বিভিন্ন বন্দরে পণ্যের ট্রাক আটকে দেয় ভারত। সংশ্লিষ্টদের সূত্রে জানা যায়, রোববার ভারতের আমদানি বিধিনিষেধের কারণে বুড়িমারী সীমান্তে প্রাণের ১৭ ট্রাক খাদ্যপণ্য আটকে যায়। এ ছাড়া বেনাপোলে ৩৬টি পোশাক বোঝাই ট্রাকসহ অন্যান্য পণ্যের শতাধিক ট্রাক ঢুকতে পারেনি।
গতকাল সোমবার পর্যন্ত বুড়িমারী থেকে প্রাণের পণ্যবোঝাই ট্রাকগুলোর অর্ধেকের বেশি ফেরত নিয়ে আসে প্রতিষ্ঠানটি। এ ছাড়া বেনাপোলে পোর্টের ভেতরে ২৪টি ট্রাক ছাড়া বাকিগুলো ফেরত চলে যায়।
বেনাপোল বন্দর সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট স্টাফ অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মো. সাজেদুর রহমান গতকাল সোমবার আজকের পত্রিকাকে বলেন, গতকাল পোর্টের ভেতর ও বাইরে শতাধিক ট্রাক দাঁড়িয়ে ছিল। আজ পোর্টের ভেতরের ২৪টি ছাড়া বাকিগুলো ফেরত নিয়ে গেছেন মালিকেরা। এখন পর্যন্ত মনে হচ্ছে, পোর্টের ভেতরের ট্রাকগুলোও ফেরত নিতে হবে।
জানতে চাইলে প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের পরিচালক (বিপণন) কামরুজ্জামান কামাল আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমাদের হাতে ৬ মিলিয়ন ডলারের ক্রয় আদেশ রয়েছে। তার মধ্য থেকে রোববার বুড়িমারী দিয়ে ১৭ ট্রাকবোঝাই পণ্য পাঠিয়েছিলাম। কিন্তু সেগুলো ঢুকতে পারেনি। ট্রাকগুলো ফেরত আনা হচ্ছে। নতুন করে কাগজপত্র তৈরি করে অন্য পথ দিয়ে পণ্য পাঠাতে হবে।’
বেনাপোল স্থলবন্দর সূত্রে জানা যায়, ওই ২৪টি ট্রাক পোর্টের ভেতরে থাকায় এখনো তারা ভারতে প্রবেশের অপেক্ষায় রয়েছে। তাদের আশা, যেহেতু নিষেধাজ্ঞার আগে এই পণ্যগুলোর এলসি করা হয়েছিল, তাই এগুলো প্রবেশে অনুমতি পাবে। তবে এটি নির্ভর করবে বাংলাদেশ সরকারের আলোচনার ওপর।
এমন পরিস্থিতিতে সরকারের সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় রয়েছেন ব্যবসায়ীরা। ইতিমধ্যে অনেক রপ্তানিকারক রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) সঙ্গে আলোচনা করে সরকারের সহযোগিতা চেয়েছে।
স্থলবন্দরের মাধ্যমে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জসমূহ এবং আশু করণীয় নির্ধারণে বাণিজ্যসচিবের সভাপতিত্বে আজ মঙ্গলবার আন্তমন্ত্রণালয়ের সভা ডেকেছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, স্থলবন্দরের মাধ্যমে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জসমূহ এবং আশু করণীয় নির্ধারণে বাণিজ্যসচিবের সভাপতিত্বে বিকেল ৪টায় আন্তমন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে এই সভা অনুষ্ঠিত হবে।
সভায় নৌপরিবহন ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশন, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড, বাংলাদেশ স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষ, রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো, জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের প্রতিনিধিদের উপস্থিত থাকতে বলা হয়েছে। এ ছাড়া ব্যবসায়ী প্রতিনিধি হিসেবে এফবিসিসিআই, বিজিএমইএ, ভারত-বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির প্রতিনিধিদের উপস্থিতির জন্য আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে।
ভারতের শিল্প ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয় গত শনিবার হঠাৎ এক বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে স্থলবন্দর দিয়ে বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক আমদানি নিষিদ্ধ করে। শুধু ভারতের নবসেবা ও কলকাতা সমুদ্রবন্দর ব্যবহার করে দেশটির আমদানিকারকেরা বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক আমদানি করতে পারবেন বলে ওই বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়। এ ছাড়া বাংলাদেশ থেকে ভারতের আসাম, মেঘালয়, ত্রিপুরা ও মিজোরাম, পশ্চিমবঙ্গের চ্যাংড়াবান্দা ও ফুলবাড়ী শুল্ক স্টেশন দিয়ে ফল, ফলের স্বাদযুক্ত পানীয়, কোমল পানীয়, প্রক্রিয়াজাত খাদ্য, প্লাস্টিক পণ্য, সুতা, সুতার উপজাত, আসবাব রপ্তানিও নিষিদ্ধ করা হয় ওই বিজ্ঞপ্তিতে।
আমদানি ও রপ্তানিসংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা জানান, দেশের ২৪টি বন্দরের মধ্যে ১৬টি বন্দর দিয়ে ভারতের সঙ্গে আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য হয়ে থাকে। তবে যোগাযোগব্যবস্থা সহজ হওয়ায় বেনাপোল ও ভারতের পেট্রাপোল বন্দর দিয়ে সবচেয়ে বেশি আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য হয়। এর পরিমাণ ৮০ শতাংশ। বেনাপোল বন্দর দিয়ে প্রতিদিন ভারতে ২৫০ থেকে ৩০০ ট্রাকে বিভিন্ন ধরনের পণ্য রপ্তানি হয়। এর মধ্যে শতাধিক ট্রাক পণ্য থাকে তৈরি পোশাক।
এর আগে গত ৮ এপ্রিল বাংলাদেশের জন্য ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা বাতিল করে ভারত। ফলে ভারতের বিমানবন্দর ব্যবহার করে তৃতীয় কোনো দেশে তৈরি পোশাক রপ্তানি করতে পারছে না বাংলাদেশ। অন্যদিকে প্রায় এক মাস আগে ভারত থেকে বেনাপোল, ভোমরা, সোনামসজিদ, বাংলাবান্ধা, বুড়িমারী স্থলবন্দর দিয়ে সুতা আমদানির সুযোগ বন্ধ করে দেয় বাংলাদেশের জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)।
সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) বিশেষ ফেলো মোস্তাফিজুর রহমানের মতে, এই পাল্টাপাল্টি পদক্ষেপে তুলনামূলকভাবে বেশি নেতিবাচক প্রভাব পড়বে বাংলাদেশের ওপর। তাই ভারতের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য ঘাটতি কমানোর চেষ্টা অব্যাহত রাখাই সরকারের উচিত বলে মনে করছেন তিনি।
মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, আলোচনার মাধ্যমে বাংলাদেশ এবং ভারতের বিরোধপূর্ণ বিষয়সমূহ মিটিয়ে ফেলতে হবে এবং দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য সম্পর্কের ক্ষেত্রে ভারসাম্য প্রতিষ্ঠা করতে হবে। এটাই হবে উভয় দেশের জন্য কল্যাণকর।

ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।
ভারতের নিষেধাজ্ঞার এক দিন পরই গত রোববার লালমনিরহাটের বুড়িমারী ও যশোরের বেনাপোল স্থলবন্দরসহ বিভিন্ন বন্দরে পণ্যের ট্রাক আটকে দেয় ভারত। সংশ্লিষ্টদের সূত্রে জানা যায়, রোববার ভারতের আমদানি বিধিনিষেধের কারণে বুড়িমারী সীমান্তে প্রাণের ১৭ ট্রাক খাদ্যপণ্য আটকে যায়। এ ছাড়া বেনাপোলে ৩৬টি পোশাক বোঝাই ট্রাকসহ অন্যান্য পণ্যের শতাধিক ট্রাক ঢুকতে পারেনি।
গতকাল সোমবার পর্যন্ত বুড়িমারী থেকে প্রাণের পণ্যবোঝাই ট্রাকগুলোর অর্ধেকের বেশি ফেরত নিয়ে আসে প্রতিষ্ঠানটি। এ ছাড়া বেনাপোলে পোর্টের ভেতরে ২৪টি ট্রাক ছাড়া বাকিগুলো ফেরত চলে যায়।
বেনাপোল বন্দর সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট স্টাফ অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মো. সাজেদুর রহমান গতকাল সোমবার আজকের পত্রিকাকে বলেন, গতকাল পোর্টের ভেতর ও বাইরে শতাধিক ট্রাক দাঁড়িয়ে ছিল। আজ পোর্টের ভেতরের ২৪টি ছাড়া বাকিগুলো ফেরত নিয়ে গেছেন মালিকেরা। এখন পর্যন্ত মনে হচ্ছে, পোর্টের ভেতরের ট্রাকগুলোও ফেরত নিতে হবে।
জানতে চাইলে প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের পরিচালক (বিপণন) কামরুজ্জামান কামাল আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমাদের হাতে ৬ মিলিয়ন ডলারের ক্রয় আদেশ রয়েছে। তার মধ্য থেকে রোববার বুড়িমারী দিয়ে ১৭ ট্রাকবোঝাই পণ্য পাঠিয়েছিলাম। কিন্তু সেগুলো ঢুকতে পারেনি। ট্রাকগুলো ফেরত আনা হচ্ছে। নতুন করে কাগজপত্র তৈরি করে অন্য পথ দিয়ে পণ্য পাঠাতে হবে।’
বেনাপোল স্থলবন্দর সূত্রে জানা যায়, ওই ২৪টি ট্রাক পোর্টের ভেতরে থাকায় এখনো তারা ভারতে প্রবেশের অপেক্ষায় রয়েছে। তাদের আশা, যেহেতু নিষেধাজ্ঞার আগে এই পণ্যগুলোর এলসি করা হয়েছিল, তাই এগুলো প্রবেশে অনুমতি পাবে। তবে এটি নির্ভর করবে বাংলাদেশ সরকারের আলোচনার ওপর।
এমন পরিস্থিতিতে সরকারের সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় রয়েছেন ব্যবসায়ীরা। ইতিমধ্যে অনেক রপ্তানিকারক রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) সঙ্গে আলোচনা করে সরকারের সহযোগিতা চেয়েছে।
স্থলবন্দরের মাধ্যমে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জসমূহ এবং আশু করণীয় নির্ধারণে বাণিজ্যসচিবের সভাপতিত্বে আজ মঙ্গলবার আন্তমন্ত্রণালয়ের সভা ডেকেছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, স্থলবন্দরের মাধ্যমে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জসমূহ এবং আশু করণীয় নির্ধারণে বাণিজ্যসচিবের সভাপতিত্বে বিকেল ৪টায় আন্তমন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে এই সভা অনুষ্ঠিত হবে।
সভায় নৌপরিবহন ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশন, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড, বাংলাদেশ স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষ, রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো, জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের প্রতিনিধিদের উপস্থিত থাকতে বলা হয়েছে। এ ছাড়া ব্যবসায়ী প্রতিনিধি হিসেবে এফবিসিসিআই, বিজিএমইএ, ভারত-বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির প্রতিনিধিদের উপস্থিতির জন্য আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে।
ভারতের শিল্প ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয় গত শনিবার হঠাৎ এক বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে স্থলবন্দর দিয়ে বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক আমদানি নিষিদ্ধ করে। শুধু ভারতের নবসেবা ও কলকাতা সমুদ্রবন্দর ব্যবহার করে দেশটির আমদানিকারকেরা বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক আমদানি করতে পারবেন বলে ওই বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়। এ ছাড়া বাংলাদেশ থেকে ভারতের আসাম, মেঘালয়, ত্রিপুরা ও মিজোরাম, পশ্চিমবঙ্গের চ্যাংড়াবান্দা ও ফুলবাড়ী শুল্ক স্টেশন দিয়ে ফল, ফলের স্বাদযুক্ত পানীয়, কোমল পানীয়, প্রক্রিয়াজাত খাদ্য, প্লাস্টিক পণ্য, সুতা, সুতার উপজাত, আসবাব রপ্তানিও নিষিদ্ধ করা হয় ওই বিজ্ঞপ্তিতে।
আমদানি ও রপ্তানিসংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা জানান, দেশের ২৪টি বন্দরের মধ্যে ১৬টি বন্দর দিয়ে ভারতের সঙ্গে আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য হয়ে থাকে। তবে যোগাযোগব্যবস্থা সহজ হওয়ায় বেনাপোল ও ভারতের পেট্রাপোল বন্দর দিয়ে সবচেয়ে বেশি আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য হয়। এর পরিমাণ ৮০ শতাংশ। বেনাপোল বন্দর দিয়ে প্রতিদিন ভারতে ২৫০ থেকে ৩০০ ট্রাকে বিভিন্ন ধরনের পণ্য রপ্তানি হয়। এর মধ্যে শতাধিক ট্রাক পণ্য থাকে তৈরি পোশাক।
এর আগে গত ৮ এপ্রিল বাংলাদেশের জন্য ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা বাতিল করে ভারত। ফলে ভারতের বিমানবন্দর ব্যবহার করে তৃতীয় কোনো দেশে তৈরি পোশাক রপ্তানি করতে পারছে না বাংলাদেশ। অন্যদিকে প্রায় এক মাস আগে ভারত থেকে বেনাপোল, ভোমরা, সোনামসজিদ, বাংলাবান্ধা, বুড়িমারী স্থলবন্দর দিয়ে সুতা আমদানির সুযোগ বন্ধ করে দেয় বাংলাদেশের জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)।
সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) বিশেষ ফেলো মোস্তাফিজুর রহমানের মতে, এই পাল্টাপাল্টি পদক্ষেপে তুলনামূলকভাবে বেশি নেতিবাচক প্রভাব পড়বে বাংলাদেশের ওপর। তাই ভারতের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য ঘাটতি কমানোর চেষ্টা অব্যাহত রাখাই সরকারের উচিত বলে মনে করছেন তিনি।
মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, আলোচনার মাধ্যমে বাংলাদেশ এবং ভারতের বিরোধপূর্ণ বিষয়সমূহ মিটিয়ে ফেলতে হবে এবং দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য সম্পর্কের ক্ষেত্রে ভারসাম্য প্রতিষ্ঠা করতে হবে। এটাই হবে উভয় দেশের জন্য কল্যাণকর।

বাংলাদেশে হাওয়াইয়ান গিটার জনপ্রিয় করার নেপথ্য সৈনিক শিল্পী এনামুল কবির। বয়স এখন ৮০। কৈশোর-যৌবনে পেয়েছেন বঙ্গবন্ধুর স্নেহ, সান্নিধ্য। স্বাধীনতার গান, মুক্তিযুদ্ধের গান, বঙ্গবন্ধুর গান, দেশাত্মবোধক গান, লোকজ গানে তাঁর অবদান উল্লেখ করার মতো।
০৯ এপ্রিল ২০২২
গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।
০৬ অক্টোবর ২০২৫
‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর...
১২ জুন ২০২৫
আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
০৮ মে ২০২৫
আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
১৮৯৮ সালে ভারতের উত্তর প্রদেশের একটি ধূলিধূসর টিলা খুঁড়ে পাওয়া মূল্যবান এই রত্নগুলো এক শতাব্দীর বেশি সময় ধরে একটি বেসরকারি ব্রিটিশ সংগ্রহাগারে প্রায় দৃষ্টিচক্ষুর আড়ালে ছিল। এখন যেহেতু রত্নগুলোর হাতবদলের সময় এসেছে, তাই নতুন সংগ্রাহকেরা আগ্রহ নিয়ে এগুলো সংগ্রহের জন্য অপেক্ষা করছেন। কিন্তু এখানে একটা অস্বস্তিও তৈরি হয়েছে।
গৌতম বুদ্ধের জন্মস্থান লুম্বিনীর কাছাকাছি, বর্তমানে ভারতের উত্তর প্রদেশে একটি ইটের ঘরের ভেতর থেকে প্রায় ১ হাজার ৮০০টি মুক্তা, রুবি, টোপাজ, নীলা ও নকশা করা সোনার পাত সংগ্রহ করা হয়েছিল। তবে এই রত্নগুলোর সঙ্গে সঙ্গে একটি খোদাই করা পাত্রে হাড়ের টুকরাও পাওয়া যায়, যেগুলোকে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষ বলে শনাক্ত করা হয়। এই আবিষ্কার তখন প্রত্নতত্ত্বের জগতে ব্যাপক আলোড়ন তোলে।
সাদাবি’স এশিয়ার চেয়ারম্যান নিকোলাস চাউ মনে করেন, স্মরণকালের বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর মাঝে এই রত্নসম্ভার অন্যতম। তবে এগুলো নিলামে তোলার কারণে একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন তৈরি হয়েছে। আর তা হচ্ছে—ভারতের ইতিহাসের সঙ্গে গভীরভাবে জড়িয়ে থাকা এবং বৌদ্ধদের কাছে পবিত্র এই সম্পদ বিক্রি করা কি নৈতিকভাবে গ্রহণযোগ্য?
১৮৯৮ সালে ব্রিটিশ এস্টেট ম্যানেজার উইলিয়াম ক্ল্যাক্সটন পেপ্পে লুম্বিনির ঠিক দক্ষিণে পিপ্রাওয়ায় অবস্থিত একটি ঢিবি খনন করেন। সেখান থেকেই প্রায় ২ হাজার বছর আগের ওই নির্দশনগুলো খুঁজে পাওয়া যায়।
ইতিহাসবিদদের মতে, প্রাপ্ত রত্নসম্ভার ও দেহাবশেষ, যা তখনো পর্যন্ত অক্ষত ছিল, সেগুলো গৌতম বুদ্ধের শাক্য বংশের এবং বিশ্বব্যাপী বৌদ্ধদের ঐতিহ্য। হাড়ের নিদর্শনগুলো থাইল্যান্ড, শ্রীলঙ্কা ও মিয়ানমারের মতো দেশগুলোতে বিতরণ করা হয়েছে। এসব দেশে এখনো সেগুলোর পূজা করা হয়।

আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
১৮৯৮ সালে ভারতের উত্তর প্রদেশের একটি ধূলিধূসর টিলা খুঁড়ে পাওয়া মূল্যবান এই রত্নগুলো এক শতাব্দীর বেশি সময় ধরে একটি বেসরকারি ব্রিটিশ সংগ্রহাগারে প্রায় দৃষ্টিচক্ষুর আড়ালে ছিল। এখন যেহেতু রত্নগুলোর হাতবদলের সময় এসেছে, তাই নতুন সংগ্রাহকেরা আগ্রহ নিয়ে এগুলো সংগ্রহের জন্য অপেক্ষা করছেন। কিন্তু এখানে একটা অস্বস্তিও তৈরি হয়েছে।
গৌতম বুদ্ধের জন্মস্থান লুম্বিনীর কাছাকাছি, বর্তমানে ভারতের উত্তর প্রদেশে একটি ইটের ঘরের ভেতর থেকে প্রায় ১ হাজার ৮০০টি মুক্তা, রুবি, টোপাজ, নীলা ও নকশা করা সোনার পাত সংগ্রহ করা হয়েছিল। তবে এই রত্নগুলোর সঙ্গে সঙ্গে একটি খোদাই করা পাত্রে হাড়ের টুকরাও পাওয়া যায়, যেগুলোকে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষ বলে শনাক্ত করা হয়। এই আবিষ্কার তখন প্রত্নতত্ত্বের জগতে ব্যাপক আলোড়ন তোলে।
সাদাবি’স এশিয়ার চেয়ারম্যান নিকোলাস চাউ মনে করেন, স্মরণকালের বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর মাঝে এই রত্নসম্ভার অন্যতম। তবে এগুলো নিলামে তোলার কারণে একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন তৈরি হয়েছে। আর তা হচ্ছে—ভারতের ইতিহাসের সঙ্গে গভীরভাবে জড়িয়ে থাকা এবং বৌদ্ধদের কাছে পবিত্র এই সম্পদ বিক্রি করা কি নৈতিকভাবে গ্রহণযোগ্য?
১৮৯৮ সালে ব্রিটিশ এস্টেট ম্যানেজার উইলিয়াম ক্ল্যাক্সটন পেপ্পে লুম্বিনির ঠিক দক্ষিণে পিপ্রাওয়ায় অবস্থিত একটি ঢিবি খনন করেন। সেখান থেকেই প্রায় ২ হাজার বছর আগের ওই নির্দশনগুলো খুঁজে পাওয়া যায়।
ইতিহাসবিদদের মতে, প্রাপ্ত রত্নসম্ভার ও দেহাবশেষ, যা তখনো পর্যন্ত অক্ষত ছিল, সেগুলো গৌতম বুদ্ধের শাক্য বংশের এবং বিশ্বব্যাপী বৌদ্ধদের ঐতিহ্য। হাড়ের নিদর্শনগুলো থাইল্যান্ড, শ্রীলঙ্কা ও মিয়ানমারের মতো দেশগুলোতে বিতরণ করা হয়েছে। এসব দেশে এখনো সেগুলোর পূজা করা হয়।

বাংলাদেশে হাওয়াইয়ান গিটার জনপ্রিয় করার নেপথ্য সৈনিক শিল্পী এনামুল কবির। বয়স এখন ৮০। কৈশোর-যৌবনে পেয়েছেন বঙ্গবন্ধুর স্নেহ, সান্নিধ্য। স্বাধীনতার গান, মুক্তিযুদ্ধের গান, বঙ্গবন্ধুর গান, দেশাত্মবোধক গান, লোকজ গানে তাঁর অবদান উল্লেখ করার মতো।
০৯ এপ্রিল ২০২২
গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।
০৬ অক্টোবর ২০২৫
‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর...
১২ জুন ২০২৫
ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।
১৯ মে ২০২৫