বিভুরঞ্জন সরকার

আমাদের দেশের রাজনীতি নিয়ে যাঁরা ভাবেন, কথা বলেন, দুটি বড় দলের বিরোধ ও অনৈক্য নিয়ে যাঁরা বিভিন্ন সময় মন্তব্য করেন, তাঁরা অধিকাংশ সময় গড়পড়তা কথা বলেন। দেশে বিভেদ ও অনৈক্যের যে রাজনীতি চলছে, তার জন্য প্রধান বড় দুই দলকেই যাঁরা সমানভাবে দায়ী করেন, তাঁরাও আসলে এই বিভেদ জিইয়ে রাখার পক্ষে। ক্ষত নিরাময়ের ক্ষেত্র না খুঁজে এর দোষ, ওর দোষ—এমন দায়সারা কথা বলে কার্যত মানুষের মধ্যে বিভ্রান্তি তৈরি করা হয়।
যেমন ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট রাজধানীর বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ে আওয়ামী লীগের সমাবেশে নৃশংস গ্রেনেড হামলার ঘটনায় কি দুই দলকেই অভিযুক্ত করা যায়? এখানে আওয়ামী লীগ আক্রান্ত আর বিএনপি সরাসরি আক্রমণকারী না হলেও আক্রমণকারীদের সঙ্গে বিএনপির সম্পৃক্ততার বিশ্বাসযোগ্য প্রমাণ আছে।
প্রশ্ন হতে পারে, ওই গ্রেনেড হামলায় বিএনপির কী লাভ? ওই হামলার উদ্দেশ্য সফল হলে বিএনপির রাজনীতির পথের কাঁটা দূর হতো। এটা নিয়ে বিতর্ক অর্থহীন যে মূলত আওয়ামী লীগ সভাপতি ও বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে হত্যার জন্যই ওই গ্রেনেড হামলা চালানো হয়েছিল, তিনি ছিলেন প্রধান টার্গেট। সৌভাগ্যক্রমে তিনি প্রাণে বেঁচে গেছেন, যেমনটা হয়েছিল ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট। সেই রাতে বঙ্গবন্ধুর দুই কন্যা বিদেশে ছিলেন বলেই প্রাণে বেঁচে গেছেন।
১৯৮১ সালে আওয়ামী লীগের সভাপতি হিসেবে ছয় বছরের নির্বাসন জীবন শেষে দেশে ফেরার পর শেখ হাসিনাকে একাধিকবার হত্যার চেষ্টা হয়েছে। প্রতিবারই তিনি সৌভাগ্যক্রমে বেঁচে গেছেন। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট তিনি ও তাঁর ছোট বোন শেখ রেহানা দেশের বাইরে না থাকলে তাঁদের ভাগ্যেও পরিবারের অন্য সদস্যদের পরিণতিই ছিল। ১৫ আগস্ট হত্যা করা হয়েছিল জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানসহ পরিবারের অন্য সব সদস্যকে। শিশু রাসেল ও নববিবাহিত দুই পুত্রবধূর প্রাণও রক্ষা পায়নি।
একুশে আগস্টের বিভীষিকাময় বিকেলের গ্রেনেড হামলার বিষয়টিও নিছক একটি সন্ত্রাসী ঘটনা ছিল না। এটা ছিল আওয়ামী লীগকে নেতৃত্বশূন্য করার একটি সুদূরপ্রসারী পরিকল্পনার অংশ। পনেরো আগস্ট বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যা করে যেমন বাংলাদেশের রাজনীতির পশ্চাৎযাত্রা শুরু হয়েছিল, তার ধারাবাহিকতায়ই একুশে আগস্ট ঘটানো হয়েছিল আওয়ামী লীগকে দুর্বল করার জন্য, ক্ষমতার রাজনীতিতে দলটিকে অকার্যকর করার জন্য। কিন্তু এ কাজে যে জঙ্গিগোষ্ঠীকে ‘ভাড়া’ করা হয়েছিল, তারা সম্ভবত তাড়াহুড়া করতে গিয়ে টার্গেট পূরণ করতে পারেনি। তবে শেখ হাসিনাসহ দলের শীর্ষ নেতাদের জীবন রক্ষা পেলেও আওয়ামী লীগ নেত্রী আইভি রহমানসহ কমপক্ষে ২৩ জন নেতা-কর্মী নিহত হন। শেখ হাসিনাসহ তিন শতাধিক নেতা-কর্মী গুরুতর আহত হন। তাঁদের অনেকেই সারা জীবনের জন্য পঙ্গুত্ব বরণ করেছেন। কেউ কেউ এখনো শরীরে অসংখ্য স্প্লিন্টার নিয়ে দুঃসহ জীবনযাপন করছেন।
একুশে আগস্টের বীভৎস হত্যাকাণ্ড বাংলাদেশের রাজনীতির ইতিহাসে একটি কলঙ্কময় অধ্যায় হিসেবেই চিহ্নিত থাকবে। আওয়ামী লীগ ও বিএনপির মধ্যে বিরোধের পেছনে অন্যতম দুটি কারণের একটি পনেরো আগস্ট, অন্যটি একুশে আগস্ট। প্রশ্ন হতে পারে দুটি বিশেষ তারিখে কেন রাজনীতির পথ আটকে থাকবে? রাজনীতি তো কোনো স্থবির প্রক্রিয়া নয়, এটা গতিময় ও চলমান। ঠিকই, কিন্তু ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট ও ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট—আগস্টের অভিশপ্ত দুটি তারিখে বাংলাদেশের রাজনীতিকে স্থবির কিংবা বলা যায় গতিমুখ পরিবর্তনের সুদূরপ্রসারী লক্ষ্য ও পরিকল্পনা নিয়েই বড় ধরনের দুটি রাজনৈতিক অপরাধ সংঘটিত হয়েছিল। রাজনীতিতে বিরোধ, ভিন্নমত, মতপার্থক্য স্বাভাবিক হলেও হত্যা কিংবা হত্যার ষড়যন্ত্র নিয়মতান্ত্রিক রাজনীতির বড় অন্তরায়।
১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধুকে নৃশংসভাবে হত্যার সময় বিএনপি ছিল না। কিন্তু বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমান ছিলেন। বঙ্গবন্ধুর হত্যাকাণ্ডের বড় বেনিফিশিয়ারি জিয়াউর রহমান। সরাসরি হত্যা মিশনে জড়িতরা জিয়ার সমর্থন, সহযোগিতা ও পৃষ্ঠপোষকতা পেয়েছেন। বঙ্গবন্ধু হত্যার দায় জিয়া কোনোভাবেই এড়াতে পারেন না।

একুশে আগস্ট গ্রেনেড হামলার ঘটনার সঙ্গে বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের সংশ্লিষ্টতা নিয়ে বিতর্ক করা অর্থহীন। গ্রেনেড হামলার ঘটনায় করা দুটি মামলায় যাদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে, তাদের দেওয়া তথ্য থেকেই জানা যায়, হামলাকারীদের সঙ্গে তৎকালীন সরকারের একাধিক মন্ত্রী এবং গুরুত্বপূর্ণ নেতাদের যোগাযোগ ছিল। সে সময়ে ক্ষমতার বিকল্প কেন্দ্র হিসেবে পরিচিত ‘হাওয়া ভবনে’ তারেক রহমান এবং স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবরের উপস্থিতিতে হামলায় প্রত্যক্ষ অংশগ্রহণকারীদের সঙ্গে বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছিল বলেও তথ্য পাওয়া গেছে। কিন্তু এটাও আমাদের জানা আছে যে তখন সরকার জজ মিয়া নামের একজন ছিঁচকে অপরাধীকে গ্রেপ্তার করে দেশের মানুষকে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করেছিল। সরকার তখন শৈবাল সাহা পার্থ নামের একজনকে গ্রেপ্তার করেও নাটকীয়তার জন্ম দিয়েছিল।কোনো ঘটনা ঘটলেই তার দায় বিরোধী দলের ওপর চাপানো ছিল জোট সরকারের একটি বদভ্যাস। একুশে আগস্টের ঘটনার ক্ষেত্রেও তার ব্যতিক্রম হয়নি। ২২ আগস্ট, ২০০৪ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রদলের এক সমাবেশে সংগঠনের তৎকালীন সাধারণ সম্পাদক আজিজুল বারী হেলাল বলেছিলেন, ‘শেখ হাসিনা এবং সাবের হোসেন চৌধুরীকে রিমান্ডে নিলেই প্রকৃত রহস্য উদ্ঘাটিত হবে!’ এ ধরনের বালখিল্য মন্তব্যের জন্য বিএনপির নেতারা ছাত্রদল নেতাকে তিরস্কৃত তো করেনইনি, উল্টো নিজেরাও ওই ধারায় গলাবাজি করেছেন। ২০০৪ সালের ৩০ আগস্ট বিএনপি আয়োজিত প্রতিবাদ সমাবেশে দলের তৎকালীন মহাসচিব আবদুল মান্নান ভূঁইয়াসহ কয়েকজন মন্ত্রী একুশে আগস্ট গ্রেনেড হামলার জন্য আওয়ামী লীগকেই দায়ী করেন।
আর ২০০৪ সালের ২১ আগস্টের গ্রেনেড হামলার সময় তো ক্ষমতায়ই ছিল বিএনপি-জামায়াত জোট সরকার। দেশে কোনো অপরাধ সংঘটিত হলে প্রাথমিকভাবে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা সরকারের দায়িত্ব। অত্যন্ত দুঃখজনক হলেও সত্য, একুশে আগস্টের গ্রেনেড হামলার মতো এত বড় অপরাধ যারা করেছিল, তাদের চিহ্নিত করা, গ্রেপ্তার করা এবং আইনের হাতে সোপর্দ করার জরুরি কর্তব্যটি তৎকালীন সরকার সম্পাদনে কেবল চরমভাবে ব্যর্থতারই পরিচয় দেয়নি; বরং ঘটনাপ্রবাহ অন্য খাতে প্রবাহিত করার অপচেষ্টা চালিয়েছে।
তৎকালীন শ্রম ও কর্মসংস্থান প্রতিমন্ত্রী আমানউল্লাহ আমান ওই সমাবেশে বলেছিলেন, ‘আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা আন্তর্জাতিক তদন্ত চাচ্ছেন। আমরা সব ধরনের তদন্ত করব। খুব তাড়াতাড়িই তদন্ত রিপোর্ট দেব। ওই রিপোর্টে গ্রেনেড হামলার জন্য আবদুস সামাদ আজাদ, মোহাম্মদ নাসিম, সাবের হোসেন চৌধুরী, তোফায়েল আহমেদ ও মতিয়া চৌধুরীকে দায়ী করা হবে।’
একুশে আগস্ট গ্রেনেড হামলা নিয়ে বিএনপি যে কত ভয়ংকর পরিকল্পনা ফেঁদেছিল, সেটা আমানউল্লাহ আমানের বক্তব্য থেকেই বোঝা যায়। তদন্ত না হতেই তদন্ত রিপোর্টে কী থাকবে, সেটা একজন প্রতিমন্ত্রী বলার পর ওই তদন্ত রিপোর্ট সম্পর্কে মানুষের মনে কী ধারণা হতে পারে, সেটা বোঝার ক্ষমতাও জোট সরকারের মন্ত্রীদের ছিল না।
খালেদা জিয়া নিজেও গ্রেনেড হামলার কথা বলতে গিয়ে খুব দায়িত্বশীলতার পরিচয় দিতে পেরেছিলেন, সেটাও বলা যায় না। ২০০৪ সালের ২ ডিসেম্বর বিএনপির প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত এক সমাবেশে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া গ্রেনেড হামলার ঘটনাকে ‘ষড়যন্ত্র’ হিসেবে অভিহিত করে বলেছিলেন, ‘সরকারের সাফল্যকে আড়াল করতে “বোমা” হামলার ঘটনা ঘটানো হয়েছে।’ খালেদা জিয়ার এ বক্তব্য দেশের মানুষকে হতবাক করেছিল। শেখ হাসিনাকে হত্যার চেষ্টা এবং আওয়ামী লীগের অসংখ্য নেতা-কর্মীকে হত্যা করা হয়েছিল সরকারের সাফল্যকে আড়াল করতে—এমন বক্তব্য সরকারপ্রধানের মুখ থেকে বের হওয়ার পর একুশে আগস্টের ঘটনার সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ তদন্ত যে হবে না, সেটা তখন সবার কাছেই স্পষ্ট হয়েছিল। বাস্তবে ঘটেছিলও তাই। জোট সরকার ক্ষমতায় থাকতে তদন্তকাজ অগ্রসর হয়নি; বরং প্রকৃত অপরাধীদের আড়াল করার জন্য, সবকিছু ধামাচাপা দেওয়ার কসরতই চালানো হয়েছিল।
এখন বিএনপি সরকারে নেই, বিরোধী দল হিসেবে সরকারের যেকোনো ভুলত্রুটির সমালোচনা করার অধিকার বিএনপির আছে। কিন্তু ঢালাওভাবে সরকারের সমালোচনা করার সময় বিএনপির নেতারা কি আয়নায় নিজেদের মুখ দেখেন? তাঁদের শাসনামলে দেশ কেমন চলছিল, সেসব কি তাঁদের মনে আছে? তাঁরা কি একবার ২০০১ থেকে ২০০৬ সালের সংবাদপত্রগুলোর পাতায় চোখ বুলিয়ে দেখবেন? একুশে আগস্টের গ্রেনেড হামলা, সাবেক অর্থমন্ত্রী শাহ এ এম এস কিবরিয়াসহ আওয়ামী লীগের জনপ্রিয় নেতাদের হত্যাসহ অসংখ্য বোমা হামলার ঘটনা এবং দেশজুড়ে জঙ্গিগোষ্ঠীর উত্থানের ঘটনাগুলোর কথা মনে পড়লে তো তাঁদের বর্তমান সরকারের লাগামহীন সমালোচনা করার কথা নয়।
রাজনীতিতে মতভিন্নতা থাকাটাই স্বাভাবিক। সব শিয়ালের এক রা-এর মতো সব রাজনৈতিক দলের এক রা হওয়ার কোনো সুযোগ নেই। নানা মতের, নানা পথের মানুষ একসঙ্গে বসবাস করবে—এটাই গণতন্ত্রের রীতি। কিন্তু মত ও পথের ভিন্নতার জন্য সম্প্রীতি ও সৌহার্দ্যের পরিবেশ নষ্ট হওয়াটা কোনোভাবেই কাম্য নয়। অথচ বিএনপি একদিকে রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে রাজনৈতিকভাবে মোকাবিলা না করে, হত্যার মাধ্যমে নির্মূল করার পথ অনুসরণ করে, অন্যদিকে তারা দিব্যি গণতন্ত্রের জন্য ‘লড়াই’য়ের কথাও বলছে। বিএনপি ক্ষমতার বাইরে আছে দেড় দশক হয়ে গেল। গণতন্ত্রের জন্য এখন হাহাকার করলেও ক্ষমতায় থাকতে আওয়ামী লীগের জন্য বিএনপি কোনো গণতান্ত্রিক স্পেস না দিয়ে নির্মূল করার নীতি নিয়েছিল। একুশে আগস্ট গ্রেনেড হামলার ঘটনা তার বড় প্রমাণ। বিএনপি বর্তমানে রাজনৈতিক ও সাংগঠনিকভাবে বিপর্যস্ত অবস্থায় আছে। অথচ অতীতের ভুল রাজনৈতিক কৌশল নিয়ে দলটির মধ্যে কোনো আত্মসমালোচনা নেই। ভবিষ্যতে বিএনপি তার সঙ্গী-সাথিদের নিয়ে ক্ষমতায় গেলে দেশে প্রতিহিংসা ও প্রতিশোধের রাজনীতির চর্চা বন্ধ করবে কি না, সে কথা স্পষ্ট করে বলা হয় না। সুযোগ পেলেই বিএনপির নেতারা যেভাবে হুমকি-ধমকি দিয়ে থাকেন, তা থেকে তো মনে হয় ক্ষমতায় গেলে দেশে আবার বিরোধী রাজনীতি দমনের নামে নিষ্ঠুরতার পথই অনুসরণ করা হবে। সন্ত্রাস-জঙ্গিবাদ মোকাবিলায় বিএনপি একদিকে বৃহত্তর ঐক্যের ডাক দেয়, অন্যদিকে দলের কেন্দ্রীয় কমিটিতে এমন কিছু ব্যক্তিকে জায়গা করে দেওয়া হয়েছে, যাঁদের বিরুদ্ধে সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদের সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগ আছে।
বিএনপিকে ঘুরে দাঁড়াতে হলে আসলেই তাদের রাজনীতিতে পরিবর্তন আনতে হবে। হত্যা-ষড়যন্ত্রের রাজনীতির ধারা থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। অতীত ভুলের জন্য দেশবাসীর কাছে ক্ষমা চাইতে হবে। একুশে আগস্টের বিয়োগান্ত ঘটনার দায় অস্বীকার করে বিএনপি সুবিধা করতে পারবে না। গ্রেনেড হামলা মামলার রায় প্রত্যাখ্যান করে কিংবা রায়কে ‘রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপূর্ণ’ বলে বিএনপি হাত মুছতে চাইলেও তা সম্ভব হবে না। পনেরো আগস্ট কেক কাটা পরিহার করলেও খালেদা জিয়া ভুয়া জন্মদিন পালন বাদ দেননি। একুশে আগস্টের দায় স্বীকার না করে রাজনীতিতে নতুন অবস্থান তৈরি করা বিএনপির জন্য সহজ হবে বলে মনে হয় না।
লেখক: সহকারী সম্পাদক, আজকের পত্রিকা

আমাদের দেশের রাজনীতি নিয়ে যাঁরা ভাবেন, কথা বলেন, দুটি বড় দলের বিরোধ ও অনৈক্য নিয়ে যাঁরা বিভিন্ন সময় মন্তব্য করেন, তাঁরা অধিকাংশ সময় গড়পড়তা কথা বলেন। দেশে বিভেদ ও অনৈক্যের যে রাজনীতি চলছে, তার জন্য প্রধান বড় দুই দলকেই যাঁরা সমানভাবে দায়ী করেন, তাঁরাও আসলে এই বিভেদ জিইয়ে রাখার পক্ষে। ক্ষত নিরাময়ের ক্ষেত্র না খুঁজে এর দোষ, ওর দোষ—এমন দায়সারা কথা বলে কার্যত মানুষের মধ্যে বিভ্রান্তি তৈরি করা হয়।
যেমন ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট রাজধানীর বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ে আওয়ামী লীগের সমাবেশে নৃশংস গ্রেনেড হামলার ঘটনায় কি দুই দলকেই অভিযুক্ত করা যায়? এখানে আওয়ামী লীগ আক্রান্ত আর বিএনপি সরাসরি আক্রমণকারী না হলেও আক্রমণকারীদের সঙ্গে বিএনপির সম্পৃক্ততার বিশ্বাসযোগ্য প্রমাণ আছে।
প্রশ্ন হতে পারে, ওই গ্রেনেড হামলায় বিএনপির কী লাভ? ওই হামলার উদ্দেশ্য সফল হলে বিএনপির রাজনীতির পথের কাঁটা দূর হতো। এটা নিয়ে বিতর্ক অর্থহীন যে মূলত আওয়ামী লীগ সভাপতি ও বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে হত্যার জন্যই ওই গ্রেনেড হামলা চালানো হয়েছিল, তিনি ছিলেন প্রধান টার্গেট। সৌভাগ্যক্রমে তিনি প্রাণে বেঁচে গেছেন, যেমনটা হয়েছিল ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট। সেই রাতে বঙ্গবন্ধুর দুই কন্যা বিদেশে ছিলেন বলেই প্রাণে বেঁচে গেছেন।
১৯৮১ সালে আওয়ামী লীগের সভাপতি হিসেবে ছয় বছরের নির্বাসন জীবন শেষে দেশে ফেরার পর শেখ হাসিনাকে একাধিকবার হত্যার চেষ্টা হয়েছে। প্রতিবারই তিনি সৌভাগ্যক্রমে বেঁচে গেছেন। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট তিনি ও তাঁর ছোট বোন শেখ রেহানা দেশের বাইরে না থাকলে তাঁদের ভাগ্যেও পরিবারের অন্য সদস্যদের পরিণতিই ছিল। ১৫ আগস্ট হত্যা করা হয়েছিল জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানসহ পরিবারের অন্য সব সদস্যকে। শিশু রাসেল ও নববিবাহিত দুই পুত্রবধূর প্রাণও রক্ষা পায়নি।
একুশে আগস্টের বিভীষিকাময় বিকেলের গ্রেনেড হামলার বিষয়টিও নিছক একটি সন্ত্রাসী ঘটনা ছিল না। এটা ছিল আওয়ামী লীগকে নেতৃত্বশূন্য করার একটি সুদূরপ্রসারী পরিকল্পনার অংশ। পনেরো আগস্ট বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যা করে যেমন বাংলাদেশের রাজনীতির পশ্চাৎযাত্রা শুরু হয়েছিল, তার ধারাবাহিকতায়ই একুশে আগস্ট ঘটানো হয়েছিল আওয়ামী লীগকে দুর্বল করার জন্য, ক্ষমতার রাজনীতিতে দলটিকে অকার্যকর করার জন্য। কিন্তু এ কাজে যে জঙ্গিগোষ্ঠীকে ‘ভাড়া’ করা হয়েছিল, তারা সম্ভবত তাড়াহুড়া করতে গিয়ে টার্গেট পূরণ করতে পারেনি। তবে শেখ হাসিনাসহ দলের শীর্ষ নেতাদের জীবন রক্ষা পেলেও আওয়ামী লীগ নেত্রী আইভি রহমানসহ কমপক্ষে ২৩ জন নেতা-কর্মী নিহত হন। শেখ হাসিনাসহ তিন শতাধিক নেতা-কর্মী গুরুতর আহত হন। তাঁদের অনেকেই সারা জীবনের জন্য পঙ্গুত্ব বরণ করেছেন। কেউ কেউ এখনো শরীরে অসংখ্য স্প্লিন্টার নিয়ে দুঃসহ জীবনযাপন করছেন।
একুশে আগস্টের বীভৎস হত্যাকাণ্ড বাংলাদেশের রাজনীতির ইতিহাসে একটি কলঙ্কময় অধ্যায় হিসেবেই চিহ্নিত থাকবে। আওয়ামী লীগ ও বিএনপির মধ্যে বিরোধের পেছনে অন্যতম দুটি কারণের একটি পনেরো আগস্ট, অন্যটি একুশে আগস্ট। প্রশ্ন হতে পারে দুটি বিশেষ তারিখে কেন রাজনীতির পথ আটকে থাকবে? রাজনীতি তো কোনো স্থবির প্রক্রিয়া নয়, এটা গতিময় ও চলমান। ঠিকই, কিন্তু ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট ও ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট—আগস্টের অভিশপ্ত দুটি তারিখে বাংলাদেশের রাজনীতিকে স্থবির কিংবা বলা যায় গতিমুখ পরিবর্তনের সুদূরপ্রসারী লক্ষ্য ও পরিকল্পনা নিয়েই বড় ধরনের দুটি রাজনৈতিক অপরাধ সংঘটিত হয়েছিল। রাজনীতিতে বিরোধ, ভিন্নমত, মতপার্থক্য স্বাভাবিক হলেও হত্যা কিংবা হত্যার ষড়যন্ত্র নিয়মতান্ত্রিক রাজনীতির বড় অন্তরায়।
১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধুকে নৃশংসভাবে হত্যার সময় বিএনপি ছিল না। কিন্তু বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমান ছিলেন। বঙ্গবন্ধুর হত্যাকাণ্ডের বড় বেনিফিশিয়ারি জিয়াউর রহমান। সরাসরি হত্যা মিশনে জড়িতরা জিয়ার সমর্থন, সহযোগিতা ও পৃষ্ঠপোষকতা পেয়েছেন। বঙ্গবন্ধু হত্যার দায় জিয়া কোনোভাবেই এড়াতে পারেন না।

একুশে আগস্ট গ্রেনেড হামলার ঘটনার সঙ্গে বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের সংশ্লিষ্টতা নিয়ে বিতর্ক করা অর্থহীন। গ্রেনেড হামলার ঘটনায় করা দুটি মামলায় যাদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে, তাদের দেওয়া তথ্য থেকেই জানা যায়, হামলাকারীদের সঙ্গে তৎকালীন সরকারের একাধিক মন্ত্রী এবং গুরুত্বপূর্ণ নেতাদের যোগাযোগ ছিল। সে সময়ে ক্ষমতার বিকল্প কেন্দ্র হিসেবে পরিচিত ‘হাওয়া ভবনে’ তারেক রহমান এবং স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবরের উপস্থিতিতে হামলায় প্রত্যক্ষ অংশগ্রহণকারীদের সঙ্গে বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছিল বলেও তথ্য পাওয়া গেছে। কিন্তু এটাও আমাদের জানা আছে যে তখন সরকার জজ মিয়া নামের একজন ছিঁচকে অপরাধীকে গ্রেপ্তার করে দেশের মানুষকে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করেছিল। সরকার তখন শৈবাল সাহা পার্থ নামের একজনকে গ্রেপ্তার করেও নাটকীয়তার জন্ম দিয়েছিল।কোনো ঘটনা ঘটলেই তার দায় বিরোধী দলের ওপর চাপানো ছিল জোট সরকারের একটি বদভ্যাস। একুশে আগস্টের ঘটনার ক্ষেত্রেও তার ব্যতিক্রম হয়নি। ২২ আগস্ট, ২০০৪ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রদলের এক সমাবেশে সংগঠনের তৎকালীন সাধারণ সম্পাদক আজিজুল বারী হেলাল বলেছিলেন, ‘শেখ হাসিনা এবং সাবের হোসেন চৌধুরীকে রিমান্ডে নিলেই প্রকৃত রহস্য উদ্ঘাটিত হবে!’ এ ধরনের বালখিল্য মন্তব্যের জন্য বিএনপির নেতারা ছাত্রদল নেতাকে তিরস্কৃত তো করেনইনি, উল্টো নিজেরাও ওই ধারায় গলাবাজি করেছেন। ২০০৪ সালের ৩০ আগস্ট বিএনপি আয়োজিত প্রতিবাদ সমাবেশে দলের তৎকালীন মহাসচিব আবদুল মান্নান ভূঁইয়াসহ কয়েকজন মন্ত্রী একুশে আগস্ট গ্রেনেড হামলার জন্য আওয়ামী লীগকেই দায়ী করেন।
আর ২০০৪ সালের ২১ আগস্টের গ্রেনেড হামলার সময় তো ক্ষমতায়ই ছিল বিএনপি-জামায়াত জোট সরকার। দেশে কোনো অপরাধ সংঘটিত হলে প্রাথমিকভাবে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা সরকারের দায়িত্ব। অত্যন্ত দুঃখজনক হলেও সত্য, একুশে আগস্টের গ্রেনেড হামলার মতো এত বড় অপরাধ যারা করেছিল, তাদের চিহ্নিত করা, গ্রেপ্তার করা এবং আইনের হাতে সোপর্দ করার জরুরি কর্তব্যটি তৎকালীন সরকার সম্পাদনে কেবল চরমভাবে ব্যর্থতারই পরিচয় দেয়নি; বরং ঘটনাপ্রবাহ অন্য খাতে প্রবাহিত করার অপচেষ্টা চালিয়েছে।
তৎকালীন শ্রম ও কর্মসংস্থান প্রতিমন্ত্রী আমানউল্লাহ আমান ওই সমাবেশে বলেছিলেন, ‘আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা আন্তর্জাতিক তদন্ত চাচ্ছেন। আমরা সব ধরনের তদন্ত করব। খুব তাড়াতাড়িই তদন্ত রিপোর্ট দেব। ওই রিপোর্টে গ্রেনেড হামলার জন্য আবদুস সামাদ আজাদ, মোহাম্মদ নাসিম, সাবের হোসেন চৌধুরী, তোফায়েল আহমেদ ও মতিয়া চৌধুরীকে দায়ী করা হবে।’
একুশে আগস্ট গ্রেনেড হামলা নিয়ে বিএনপি যে কত ভয়ংকর পরিকল্পনা ফেঁদেছিল, সেটা আমানউল্লাহ আমানের বক্তব্য থেকেই বোঝা যায়। তদন্ত না হতেই তদন্ত রিপোর্টে কী থাকবে, সেটা একজন প্রতিমন্ত্রী বলার পর ওই তদন্ত রিপোর্ট সম্পর্কে মানুষের মনে কী ধারণা হতে পারে, সেটা বোঝার ক্ষমতাও জোট সরকারের মন্ত্রীদের ছিল না।
খালেদা জিয়া নিজেও গ্রেনেড হামলার কথা বলতে গিয়ে খুব দায়িত্বশীলতার পরিচয় দিতে পেরেছিলেন, সেটাও বলা যায় না। ২০০৪ সালের ২ ডিসেম্বর বিএনপির প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত এক সমাবেশে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া গ্রেনেড হামলার ঘটনাকে ‘ষড়যন্ত্র’ হিসেবে অভিহিত করে বলেছিলেন, ‘সরকারের সাফল্যকে আড়াল করতে “বোমা” হামলার ঘটনা ঘটানো হয়েছে।’ খালেদা জিয়ার এ বক্তব্য দেশের মানুষকে হতবাক করেছিল। শেখ হাসিনাকে হত্যার চেষ্টা এবং আওয়ামী লীগের অসংখ্য নেতা-কর্মীকে হত্যা করা হয়েছিল সরকারের সাফল্যকে আড়াল করতে—এমন বক্তব্য সরকারপ্রধানের মুখ থেকে বের হওয়ার পর একুশে আগস্টের ঘটনার সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ তদন্ত যে হবে না, সেটা তখন সবার কাছেই স্পষ্ট হয়েছিল। বাস্তবে ঘটেছিলও তাই। জোট সরকার ক্ষমতায় থাকতে তদন্তকাজ অগ্রসর হয়নি; বরং প্রকৃত অপরাধীদের আড়াল করার জন্য, সবকিছু ধামাচাপা দেওয়ার কসরতই চালানো হয়েছিল।
এখন বিএনপি সরকারে নেই, বিরোধী দল হিসেবে সরকারের যেকোনো ভুলত্রুটির সমালোচনা করার অধিকার বিএনপির আছে। কিন্তু ঢালাওভাবে সরকারের সমালোচনা করার সময় বিএনপির নেতারা কি আয়নায় নিজেদের মুখ দেখেন? তাঁদের শাসনামলে দেশ কেমন চলছিল, সেসব কি তাঁদের মনে আছে? তাঁরা কি একবার ২০০১ থেকে ২০০৬ সালের সংবাদপত্রগুলোর পাতায় চোখ বুলিয়ে দেখবেন? একুশে আগস্টের গ্রেনেড হামলা, সাবেক অর্থমন্ত্রী শাহ এ এম এস কিবরিয়াসহ আওয়ামী লীগের জনপ্রিয় নেতাদের হত্যাসহ অসংখ্য বোমা হামলার ঘটনা এবং দেশজুড়ে জঙ্গিগোষ্ঠীর উত্থানের ঘটনাগুলোর কথা মনে পড়লে তো তাঁদের বর্তমান সরকারের লাগামহীন সমালোচনা করার কথা নয়।
রাজনীতিতে মতভিন্নতা থাকাটাই স্বাভাবিক। সব শিয়ালের এক রা-এর মতো সব রাজনৈতিক দলের এক রা হওয়ার কোনো সুযোগ নেই। নানা মতের, নানা পথের মানুষ একসঙ্গে বসবাস করবে—এটাই গণতন্ত্রের রীতি। কিন্তু মত ও পথের ভিন্নতার জন্য সম্প্রীতি ও সৌহার্দ্যের পরিবেশ নষ্ট হওয়াটা কোনোভাবেই কাম্য নয়। অথচ বিএনপি একদিকে রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে রাজনৈতিকভাবে মোকাবিলা না করে, হত্যার মাধ্যমে নির্মূল করার পথ অনুসরণ করে, অন্যদিকে তারা দিব্যি গণতন্ত্রের জন্য ‘লড়াই’য়ের কথাও বলছে। বিএনপি ক্ষমতার বাইরে আছে দেড় দশক হয়ে গেল। গণতন্ত্রের জন্য এখন হাহাকার করলেও ক্ষমতায় থাকতে আওয়ামী লীগের জন্য বিএনপি কোনো গণতান্ত্রিক স্পেস না দিয়ে নির্মূল করার নীতি নিয়েছিল। একুশে আগস্ট গ্রেনেড হামলার ঘটনা তার বড় প্রমাণ। বিএনপি বর্তমানে রাজনৈতিক ও সাংগঠনিকভাবে বিপর্যস্ত অবস্থায় আছে। অথচ অতীতের ভুল রাজনৈতিক কৌশল নিয়ে দলটির মধ্যে কোনো আত্মসমালোচনা নেই। ভবিষ্যতে বিএনপি তার সঙ্গী-সাথিদের নিয়ে ক্ষমতায় গেলে দেশে প্রতিহিংসা ও প্রতিশোধের রাজনীতির চর্চা বন্ধ করবে কি না, সে কথা স্পষ্ট করে বলা হয় না। সুযোগ পেলেই বিএনপির নেতারা যেভাবে হুমকি-ধমকি দিয়ে থাকেন, তা থেকে তো মনে হয় ক্ষমতায় গেলে দেশে আবার বিরোধী রাজনীতি দমনের নামে নিষ্ঠুরতার পথই অনুসরণ করা হবে। সন্ত্রাস-জঙ্গিবাদ মোকাবিলায় বিএনপি একদিকে বৃহত্তর ঐক্যের ডাক দেয়, অন্যদিকে দলের কেন্দ্রীয় কমিটিতে এমন কিছু ব্যক্তিকে জায়গা করে দেওয়া হয়েছে, যাঁদের বিরুদ্ধে সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদের সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগ আছে।
বিএনপিকে ঘুরে দাঁড়াতে হলে আসলেই তাদের রাজনীতিতে পরিবর্তন আনতে হবে। হত্যা-ষড়যন্ত্রের রাজনীতির ধারা থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। অতীত ভুলের জন্য দেশবাসীর কাছে ক্ষমা চাইতে হবে। একুশে আগস্টের বিয়োগান্ত ঘটনার দায় অস্বীকার করে বিএনপি সুবিধা করতে পারবে না। গ্রেনেড হামলা মামলার রায় প্রত্যাখ্যান করে কিংবা রায়কে ‘রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপূর্ণ’ বলে বিএনপি হাত মুছতে চাইলেও তা সম্ভব হবে না। পনেরো আগস্ট কেক কাটা পরিহার করলেও খালেদা জিয়া ভুয়া জন্মদিন পালন বাদ দেননি। একুশে আগস্টের দায় স্বীকার না করে রাজনীতিতে নতুন অবস্থান তৈরি করা বিএনপির জন্য সহজ হবে বলে মনে হয় না।
লেখক: সহকারী সম্পাদক, আজকের পত্রিকা
বিভুরঞ্জন সরকার

আমাদের দেশের রাজনীতি নিয়ে যাঁরা ভাবেন, কথা বলেন, দুটি বড় দলের বিরোধ ও অনৈক্য নিয়ে যাঁরা বিভিন্ন সময় মন্তব্য করেন, তাঁরা অধিকাংশ সময় গড়পড়তা কথা বলেন। দেশে বিভেদ ও অনৈক্যের যে রাজনীতি চলছে, তার জন্য প্রধান বড় দুই দলকেই যাঁরা সমানভাবে দায়ী করেন, তাঁরাও আসলে এই বিভেদ জিইয়ে রাখার পক্ষে। ক্ষত নিরাময়ের ক্ষেত্র না খুঁজে এর দোষ, ওর দোষ—এমন দায়সারা কথা বলে কার্যত মানুষের মধ্যে বিভ্রান্তি তৈরি করা হয়।
যেমন ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট রাজধানীর বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ে আওয়ামী লীগের সমাবেশে নৃশংস গ্রেনেড হামলার ঘটনায় কি দুই দলকেই অভিযুক্ত করা যায়? এখানে আওয়ামী লীগ আক্রান্ত আর বিএনপি সরাসরি আক্রমণকারী না হলেও আক্রমণকারীদের সঙ্গে বিএনপির সম্পৃক্ততার বিশ্বাসযোগ্য প্রমাণ আছে।
প্রশ্ন হতে পারে, ওই গ্রেনেড হামলায় বিএনপির কী লাভ? ওই হামলার উদ্দেশ্য সফল হলে বিএনপির রাজনীতির পথের কাঁটা দূর হতো। এটা নিয়ে বিতর্ক অর্থহীন যে মূলত আওয়ামী লীগ সভাপতি ও বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে হত্যার জন্যই ওই গ্রেনেড হামলা চালানো হয়েছিল, তিনি ছিলেন প্রধান টার্গেট। সৌভাগ্যক্রমে তিনি প্রাণে বেঁচে গেছেন, যেমনটা হয়েছিল ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট। সেই রাতে বঙ্গবন্ধুর দুই কন্যা বিদেশে ছিলেন বলেই প্রাণে বেঁচে গেছেন।
১৯৮১ সালে আওয়ামী লীগের সভাপতি হিসেবে ছয় বছরের নির্বাসন জীবন শেষে দেশে ফেরার পর শেখ হাসিনাকে একাধিকবার হত্যার চেষ্টা হয়েছে। প্রতিবারই তিনি সৌভাগ্যক্রমে বেঁচে গেছেন। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট তিনি ও তাঁর ছোট বোন শেখ রেহানা দেশের বাইরে না থাকলে তাঁদের ভাগ্যেও পরিবারের অন্য সদস্যদের পরিণতিই ছিল। ১৫ আগস্ট হত্যা করা হয়েছিল জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানসহ পরিবারের অন্য সব সদস্যকে। শিশু রাসেল ও নববিবাহিত দুই পুত্রবধূর প্রাণও রক্ষা পায়নি।
একুশে আগস্টের বিভীষিকাময় বিকেলের গ্রেনেড হামলার বিষয়টিও নিছক একটি সন্ত্রাসী ঘটনা ছিল না। এটা ছিল আওয়ামী লীগকে নেতৃত্বশূন্য করার একটি সুদূরপ্রসারী পরিকল্পনার অংশ। পনেরো আগস্ট বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যা করে যেমন বাংলাদেশের রাজনীতির পশ্চাৎযাত্রা শুরু হয়েছিল, তার ধারাবাহিকতায়ই একুশে আগস্ট ঘটানো হয়েছিল আওয়ামী লীগকে দুর্বল করার জন্য, ক্ষমতার রাজনীতিতে দলটিকে অকার্যকর করার জন্য। কিন্তু এ কাজে যে জঙ্গিগোষ্ঠীকে ‘ভাড়া’ করা হয়েছিল, তারা সম্ভবত তাড়াহুড়া করতে গিয়ে টার্গেট পূরণ করতে পারেনি। তবে শেখ হাসিনাসহ দলের শীর্ষ নেতাদের জীবন রক্ষা পেলেও আওয়ামী লীগ নেত্রী আইভি রহমানসহ কমপক্ষে ২৩ জন নেতা-কর্মী নিহত হন। শেখ হাসিনাসহ তিন শতাধিক নেতা-কর্মী গুরুতর আহত হন। তাঁদের অনেকেই সারা জীবনের জন্য পঙ্গুত্ব বরণ করেছেন। কেউ কেউ এখনো শরীরে অসংখ্য স্প্লিন্টার নিয়ে দুঃসহ জীবনযাপন করছেন।
একুশে আগস্টের বীভৎস হত্যাকাণ্ড বাংলাদেশের রাজনীতির ইতিহাসে একটি কলঙ্কময় অধ্যায় হিসেবেই চিহ্নিত থাকবে। আওয়ামী লীগ ও বিএনপির মধ্যে বিরোধের পেছনে অন্যতম দুটি কারণের একটি পনেরো আগস্ট, অন্যটি একুশে আগস্ট। প্রশ্ন হতে পারে দুটি বিশেষ তারিখে কেন রাজনীতির পথ আটকে থাকবে? রাজনীতি তো কোনো স্থবির প্রক্রিয়া নয়, এটা গতিময় ও চলমান। ঠিকই, কিন্তু ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট ও ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট—আগস্টের অভিশপ্ত দুটি তারিখে বাংলাদেশের রাজনীতিকে স্থবির কিংবা বলা যায় গতিমুখ পরিবর্তনের সুদূরপ্রসারী লক্ষ্য ও পরিকল্পনা নিয়েই বড় ধরনের দুটি রাজনৈতিক অপরাধ সংঘটিত হয়েছিল। রাজনীতিতে বিরোধ, ভিন্নমত, মতপার্থক্য স্বাভাবিক হলেও হত্যা কিংবা হত্যার ষড়যন্ত্র নিয়মতান্ত্রিক রাজনীতির বড় অন্তরায়।
১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধুকে নৃশংসভাবে হত্যার সময় বিএনপি ছিল না। কিন্তু বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমান ছিলেন। বঙ্গবন্ধুর হত্যাকাণ্ডের বড় বেনিফিশিয়ারি জিয়াউর রহমান। সরাসরি হত্যা মিশনে জড়িতরা জিয়ার সমর্থন, সহযোগিতা ও পৃষ্ঠপোষকতা পেয়েছেন। বঙ্গবন্ধু হত্যার দায় জিয়া কোনোভাবেই এড়াতে পারেন না।

একুশে আগস্ট গ্রেনেড হামলার ঘটনার সঙ্গে বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের সংশ্লিষ্টতা নিয়ে বিতর্ক করা অর্থহীন। গ্রেনেড হামলার ঘটনায় করা দুটি মামলায় যাদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে, তাদের দেওয়া তথ্য থেকেই জানা যায়, হামলাকারীদের সঙ্গে তৎকালীন সরকারের একাধিক মন্ত্রী এবং গুরুত্বপূর্ণ নেতাদের যোগাযোগ ছিল। সে সময়ে ক্ষমতার বিকল্প কেন্দ্র হিসেবে পরিচিত ‘হাওয়া ভবনে’ তারেক রহমান এবং স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবরের উপস্থিতিতে হামলায় প্রত্যক্ষ অংশগ্রহণকারীদের সঙ্গে বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছিল বলেও তথ্য পাওয়া গেছে। কিন্তু এটাও আমাদের জানা আছে যে তখন সরকার জজ মিয়া নামের একজন ছিঁচকে অপরাধীকে গ্রেপ্তার করে দেশের মানুষকে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করেছিল। সরকার তখন শৈবাল সাহা পার্থ নামের একজনকে গ্রেপ্তার করেও নাটকীয়তার জন্ম দিয়েছিল।কোনো ঘটনা ঘটলেই তার দায় বিরোধী দলের ওপর চাপানো ছিল জোট সরকারের একটি বদভ্যাস। একুশে আগস্টের ঘটনার ক্ষেত্রেও তার ব্যতিক্রম হয়নি। ২২ আগস্ট, ২০০৪ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রদলের এক সমাবেশে সংগঠনের তৎকালীন সাধারণ সম্পাদক আজিজুল বারী হেলাল বলেছিলেন, ‘শেখ হাসিনা এবং সাবের হোসেন চৌধুরীকে রিমান্ডে নিলেই প্রকৃত রহস্য উদ্ঘাটিত হবে!’ এ ধরনের বালখিল্য মন্তব্যের জন্য বিএনপির নেতারা ছাত্রদল নেতাকে তিরস্কৃত তো করেনইনি, উল্টো নিজেরাও ওই ধারায় গলাবাজি করেছেন। ২০০৪ সালের ৩০ আগস্ট বিএনপি আয়োজিত প্রতিবাদ সমাবেশে দলের তৎকালীন মহাসচিব আবদুল মান্নান ভূঁইয়াসহ কয়েকজন মন্ত্রী একুশে আগস্ট গ্রেনেড হামলার জন্য আওয়ামী লীগকেই দায়ী করেন।
আর ২০০৪ সালের ২১ আগস্টের গ্রেনেড হামলার সময় তো ক্ষমতায়ই ছিল বিএনপি-জামায়াত জোট সরকার। দেশে কোনো অপরাধ সংঘটিত হলে প্রাথমিকভাবে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা সরকারের দায়িত্ব। অত্যন্ত দুঃখজনক হলেও সত্য, একুশে আগস্টের গ্রেনেড হামলার মতো এত বড় অপরাধ যারা করেছিল, তাদের চিহ্নিত করা, গ্রেপ্তার করা এবং আইনের হাতে সোপর্দ করার জরুরি কর্তব্যটি তৎকালীন সরকার সম্পাদনে কেবল চরমভাবে ব্যর্থতারই পরিচয় দেয়নি; বরং ঘটনাপ্রবাহ অন্য খাতে প্রবাহিত করার অপচেষ্টা চালিয়েছে।
তৎকালীন শ্রম ও কর্মসংস্থান প্রতিমন্ত্রী আমানউল্লাহ আমান ওই সমাবেশে বলেছিলেন, ‘আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা আন্তর্জাতিক তদন্ত চাচ্ছেন। আমরা সব ধরনের তদন্ত করব। খুব তাড়াতাড়িই তদন্ত রিপোর্ট দেব। ওই রিপোর্টে গ্রেনেড হামলার জন্য আবদুস সামাদ আজাদ, মোহাম্মদ নাসিম, সাবের হোসেন চৌধুরী, তোফায়েল আহমেদ ও মতিয়া চৌধুরীকে দায়ী করা হবে।’
একুশে আগস্ট গ্রেনেড হামলা নিয়ে বিএনপি যে কত ভয়ংকর পরিকল্পনা ফেঁদেছিল, সেটা আমানউল্লাহ আমানের বক্তব্য থেকেই বোঝা যায়। তদন্ত না হতেই তদন্ত রিপোর্টে কী থাকবে, সেটা একজন প্রতিমন্ত্রী বলার পর ওই তদন্ত রিপোর্ট সম্পর্কে মানুষের মনে কী ধারণা হতে পারে, সেটা বোঝার ক্ষমতাও জোট সরকারের মন্ত্রীদের ছিল না।
খালেদা জিয়া নিজেও গ্রেনেড হামলার কথা বলতে গিয়ে খুব দায়িত্বশীলতার পরিচয় দিতে পেরেছিলেন, সেটাও বলা যায় না। ২০০৪ সালের ২ ডিসেম্বর বিএনপির প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত এক সমাবেশে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া গ্রেনেড হামলার ঘটনাকে ‘ষড়যন্ত্র’ হিসেবে অভিহিত করে বলেছিলেন, ‘সরকারের সাফল্যকে আড়াল করতে “বোমা” হামলার ঘটনা ঘটানো হয়েছে।’ খালেদা জিয়ার এ বক্তব্য দেশের মানুষকে হতবাক করেছিল। শেখ হাসিনাকে হত্যার চেষ্টা এবং আওয়ামী লীগের অসংখ্য নেতা-কর্মীকে হত্যা করা হয়েছিল সরকারের সাফল্যকে আড়াল করতে—এমন বক্তব্য সরকারপ্রধানের মুখ থেকে বের হওয়ার পর একুশে আগস্টের ঘটনার সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ তদন্ত যে হবে না, সেটা তখন সবার কাছেই স্পষ্ট হয়েছিল। বাস্তবে ঘটেছিলও তাই। জোট সরকার ক্ষমতায় থাকতে তদন্তকাজ অগ্রসর হয়নি; বরং প্রকৃত অপরাধীদের আড়াল করার জন্য, সবকিছু ধামাচাপা দেওয়ার কসরতই চালানো হয়েছিল।
এখন বিএনপি সরকারে নেই, বিরোধী দল হিসেবে সরকারের যেকোনো ভুলত্রুটির সমালোচনা করার অধিকার বিএনপির আছে। কিন্তু ঢালাওভাবে সরকারের সমালোচনা করার সময় বিএনপির নেতারা কি আয়নায় নিজেদের মুখ দেখেন? তাঁদের শাসনামলে দেশ কেমন চলছিল, সেসব কি তাঁদের মনে আছে? তাঁরা কি একবার ২০০১ থেকে ২০০৬ সালের সংবাদপত্রগুলোর পাতায় চোখ বুলিয়ে দেখবেন? একুশে আগস্টের গ্রেনেড হামলা, সাবেক অর্থমন্ত্রী শাহ এ এম এস কিবরিয়াসহ আওয়ামী লীগের জনপ্রিয় নেতাদের হত্যাসহ অসংখ্য বোমা হামলার ঘটনা এবং দেশজুড়ে জঙ্গিগোষ্ঠীর উত্থানের ঘটনাগুলোর কথা মনে পড়লে তো তাঁদের বর্তমান সরকারের লাগামহীন সমালোচনা করার কথা নয়।
রাজনীতিতে মতভিন্নতা থাকাটাই স্বাভাবিক। সব শিয়ালের এক রা-এর মতো সব রাজনৈতিক দলের এক রা হওয়ার কোনো সুযোগ নেই। নানা মতের, নানা পথের মানুষ একসঙ্গে বসবাস করবে—এটাই গণতন্ত্রের রীতি। কিন্তু মত ও পথের ভিন্নতার জন্য সম্প্রীতি ও সৌহার্দ্যের পরিবেশ নষ্ট হওয়াটা কোনোভাবেই কাম্য নয়। অথচ বিএনপি একদিকে রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে রাজনৈতিকভাবে মোকাবিলা না করে, হত্যার মাধ্যমে নির্মূল করার পথ অনুসরণ করে, অন্যদিকে তারা দিব্যি গণতন্ত্রের জন্য ‘লড়াই’য়ের কথাও বলছে। বিএনপি ক্ষমতার বাইরে আছে দেড় দশক হয়ে গেল। গণতন্ত্রের জন্য এখন হাহাকার করলেও ক্ষমতায় থাকতে আওয়ামী লীগের জন্য বিএনপি কোনো গণতান্ত্রিক স্পেস না দিয়ে নির্মূল করার নীতি নিয়েছিল। একুশে আগস্ট গ্রেনেড হামলার ঘটনা তার বড় প্রমাণ। বিএনপি বর্তমানে রাজনৈতিক ও সাংগঠনিকভাবে বিপর্যস্ত অবস্থায় আছে। অথচ অতীতের ভুল রাজনৈতিক কৌশল নিয়ে দলটির মধ্যে কোনো আত্মসমালোচনা নেই। ভবিষ্যতে বিএনপি তার সঙ্গী-সাথিদের নিয়ে ক্ষমতায় গেলে দেশে প্রতিহিংসা ও প্রতিশোধের রাজনীতির চর্চা বন্ধ করবে কি না, সে কথা স্পষ্ট করে বলা হয় না। সুযোগ পেলেই বিএনপির নেতারা যেভাবে হুমকি-ধমকি দিয়ে থাকেন, তা থেকে তো মনে হয় ক্ষমতায় গেলে দেশে আবার বিরোধী রাজনীতি দমনের নামে নিষ্ঠুরতার পথই অনুসরণ করা হবে। সন্ত্রাস-জঙ্গিবাদ মোকাবিলায় বিএনপি একদিকে বৃহত্তর ঐক্যের ডাক দেয়, অন্যদিকে দলের কেন্দ্রীয় কমিটিতে এমন কিছু ব্যক্তিকে জায়গা করে দেওয়া হয়েছে, যাঁদের বিরুদ্ধে সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদের সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগ আছে।
বিএনপিকে ঘুরে দাঁড়াতে হলে আসলেই তাদের রাজনীতিতে পরিবর্তন আনতে হবে। হত্যা-ষড়যন্ত্রের রাজনীতির ধারা থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। অতীত ভুলের জন্য দেশবাসীর কাছে ক্ষমা চাইতে হবে। একুশে আগস্টের বিয়োগান্ত ঘটনার দায় অস্বীকার করে বিএনপি সুবিধা করতে পারবে না। গ্রেনেড হামলা মামলার রায় প্রত্যাখ্যান করে কিংবা রায়কে ‘রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপূর্ণ’ বলে বিএনপি হাত মুছতে চাইলেও তা সম্ভব হবে না। পনেরো আগস্ট কেক কাটা পরিহার করলেও খালেদা জিয়া ভুয়া জন্মদিন পালন বাদ দেননি। একুশে আগস্টের দায় স্বীকার না করে রাজনীতিতে নতুন অবস্থান তৈরি করা বিএনপির জন্য সহজ হবে বলে মনে হয় না।
লেখক: সহকারী সম্পাদক, আজকের পত্রিকা

আমাদের দেশের রাজনীতি নিয়ে যাঁরা ভাবেন, কথা বলেন, দুটি বড় দলের বিরোধ ও অনৈক্য নিয়ে যাঁরা বিভিন্ন সময় মন্তব্য করেন, তাঁরা অধিকাংশ সময় গড়পড়তা কথা বলেন। দেশে বিভেদ ও অনৈক্যের যে রাজনীতি চলছে, তার জন্য প্রধান বড় দুই দলকেই যাঁরা সমানভাবে দায়ী করেন, তাঁরাও আসলে এই বিভেদ জিইয়ে রাখার পক্ষে। ক্ষত নিরাময়ের ক্ষেত্র না খুঁজে এর দোষ, ওর দোষ—এমন দায়সারা কথা বলে কার্যত মানুষের মধ্যে বিভ্রান্তি তৈরি করা হয়।
যেমন ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট রাজধানীর বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ে আওয়ামী লীগের সমাবেশে নৃশংস গ্রেনেড হামলার ঘটনায় কি দুই দলকেই অভিযুক্ত করা যায়? এখানে আওয়ামী লীগ আক্রান্ত আর বিএনপি সরাসরি আক্রমণকারী না হলেও আক্রমণকারীদের সঙ্গে বিএনপির সম্পৃক্ততার বিশ্বাসযোগ্য প্রমাণ আছে।
প্রশ্ন হতে পারে, ওই গ্রেনেড হামলায় বিএনপির কী লাভ? ওই হামলার উদ্দেশ্য সফল হলে বিএনপির রাজনীতির পথের কাঁটা দূর হতো। এটা নিয়ে বিতর্ক অর্থহীন যে মূলত আওয়ামী লীগ সভাপতি ও বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে হত্যার জন্যই ওই গ্রেনেড হামলা চালানো হয়েছিল, তিনি ছিলেন প্রধান টার্গেট। সৌভাগ্যক্রমে তিনি প্রাণে বেঁচে গেছেন, যেমনটা হয়েছিল ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট। সেই রাতে বঙ্গবন্ধুর দুই কন্যা বিদেশে ছিলেন বলেই প্রাণে বেঁচে গেছেন।
১৯৮১ সালে আওয়ামী লীগের সভাপতি হিসেবে ছয় বছরের নির্বাসন জীবন শেষে দেশে ফেরার পর শেখ হাসিনাকে একাধিকবার হত্যার চেষ্টা হয়েছে। প্রতিবারই তিনি সৌভাগ্যক্রমে বেঁচে গেছেন। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট তিনি ও তাঁর ছোট বোন শেখ রেহানা দেশের বাইরে না থাকলে তাঁদের ভাগ্যেও পরিবারের অন্য সদস্যদের পরিণতিই ছিল। ১৫ আগস্ট হত্যা করা হয়েছিল জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানসহ পরিবারের অন্য সব সদস্যকে। শিশু রাসেল ও নববিবাহিত দুই পুত্রবধূর প্রাণও রক্ষা পায়নি।
একুশে আগস্টের বিভীষিকাময় বিকেলের গ্রেনেড হামলার বিষয়টিও নিছক একটি সন্ত্রাসী ঘটনা ছিল না। এটা ছিল আওয়ামী লীগকে নেতৃত্বশূন্য করার একটি সুদূরপ্রসারী পরিকল্পনার অংশ। পনেরো আগস্ট বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যা করে যেমন বাংলাদেশের রাজনীতির পশ্চাৎযাত্রা শুরু হয়েছিল, তার ধারাবাহিকতায়ই একুশে আগস্ট ঘটানো হয়েছিল আওয়ামী লীগকে দুর্বল করার জন্য, ক্ষমতার রাজনীতিতে দলটিকে অকার্যকর করার জন্য। কিন্তু এ কাজে যে জঙ্গিগোষ্ঠীকে ‘ভাড়া’ করা হয়েছিল, তারা সম্ভবত তাড়াহুড়া করতে গিয়ে টার্গেট পূরণ করতে পারেনি। তবে শেখ হাসিনাসহ দলের শীর্ষ নেতাদের জীবন রক্ষা পেলেও আওয়ামী লীগ নেত্রী আইভি রহমানসহ কমপক্ষে ২৩ জন নেতা-কর্মী নিহত হন। শেখ হাসিনাসহ তিন শতাধিক নেতা-কর্মী গুরুতর আহত হন। তাঁদের অনেকেই সারা জীবনের জন্য পঙ্গুত্ব বরণ করেছেন। কেউ কেউ এখনো শরীরে অসংখ্য স্প্লিন্টার নিয়ে দুঃসহ জীবনযাপন করছেন।
একুশে আগস্টের বীভৎস হত্যাকাণ্ড বাংলাদেশের রাজনীতির ইতিহাসে একটি কলঙ্কময় অধ্যায় হিসেবেই চিহ্নিত থাকবে। আওয়ামী লীগ ও বিএনপির মধ্যে বিরোধের পেছনে অন্যতম দুটি কারণের একটি পনেরো আগস্ট, অন্যটি একুশে আগস্ট। প্রশ্ন হতে পারে দুটি বিশেষ তারিখে কেন রাজনীতির পথ আটকে থাকবে? রাজনীতি তো কোনো স্থবির প্রক্রিয়া নয়, এটা গতিময় ও চলমান। ঠিকই, কিন্তু ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট ও ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট—আগস্টের অভিশপ্ত দুটি তারিখে বাংলাদেশের রাজনীতিকে স্থবির কিংবা বলা যায় গতিমুখ পরিবর্তনের সুদূরপ্রসারী লক্ষ্য ও পরিকল্পনা নিয়েই বড় ধরনের দুটি রাজনৈতিক অপরাধ সংঘটিত হয়েছিল। রাজনীতিতে বিরোধ, ভিন্নমত, মতপার্থক্য স্বাভাবিক হলেও হত্যা কিংবা হত্যার ষড়যন্ত্র নিয়মতান্ত্রিক রাজনীতির বড় অন্তরায়।
১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধুকে নৃশংসভাবে হত্যার সময় বিএনপি ছিল না। কিন্তু বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমান ছিলেন। বঙ্গবন্ধুর হত্যাকাণ্ডের বড় বেনিফিশিয়ারি জিয়াউর রহমান। সরাসরি হত্যা মিশনে জড়িতরা জিয়ার সমর্থন, সহযোগিতা ও পৃষ্ঠপোষকতা পেয়েছেন। বঙ্গবন্ধু হত্যার দায় জিয়া কোনোভাবেই এড়াতে পারেন না।

একুশে আগস্ট গ্রেনেড হামলার ঘটনার সঙ্গে বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের সংশ্লিষ্টতা নিয়ে বিতর্ক করা অর্থহীন। গ্রেনেড হামলার ঘটনায় করা দুটি মামলায় যাদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে, তাদের দেওয়া তথ্য থেকেই জানা যায়, হামলাকারীদের সঙ্গে তৎকালীন সরকারের একাধিক মন্ত্রী এবং গুরুত্বপূর্ণ নেতাদের যোগাযোগ ছিল। সে সময়ে ক্ষমতার বিকল্প কেন্দ্র হিসেবে পরিচিত ‘হাওয়া ভবনে’ তারেক রহমান এবং স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবরের উপস্থিতিতে হামলায় প্রত্যক্ষ অংশগ্রহণকারীদের সঙ্গে বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছিল বলেও তথ্য পাওয়া গেছে। কিন্তু এটাও আমাদের জানা আছে যে তখন সরকার জজ মিয়া নামের একজন ছিঁচকে অপরাধীকে গ্রেপ্তার করে দেশের মানুষকে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করেছিল। সরকার তখন শৈবাল সাহা পার্থ নামের একজনকে গ্রেপ্তার করেও নাটকীয়তার জন্ম দিয়েছিল।কোনো ঘটনা ঘটলেই তার দায় বিরোধী দলের ওপর চাপানো ছিল জোট সরকারের একটি বদভ্যাস। একুশে আগস্টের ঘটনার ক্ষেত্রেও তার ব্যতিক্রম হয়নি। ২২ আগস্ট, ২০০৪ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রদলের এক সমাবেশে সংগঠনের তৎকালীন সাধারণ সম্পাদক আজিজুল বারী হেলাল বলেছিলেন, ‘শেখ হাসিনা এবং সাবের হোসেন চৌধুরীকে রিমান্ডে নিলেই প্রকৃত রহস্য উদ্ঘাটিত হবে!’ এ ধরনের বালখিল্য মন্তব্যের জন্য বিএনপির নেতারা ছাত্রদল নেতাকে তিরস্কৃত তো করেনইনি, উল্টো নিজেরাও ওই ধারায় গলাবাজি করেছেন। ২০০৪ সালের ৩০ আগস্ট বিএনপি আয়োজিত প্রতিবাদ সমাবেশে দলের তৎকালীন মহাসচিব আবদুল মান্নান ভূঁইয়াসহ কয়েকজন মন্ত্রী একুশে আগস্ট গ্রেনেড হামলার জন্য আওয়ামী লীগকেই দায়ী করেন।
আর ২০০৪ সালের ২১ আগস্টের গ্রেনেড হামলার সময় তো ক্ষমতায়ই ছিল বিএনপি-জামায়াত জোট সরকার। দেশে কোনো অপরাধ সংঘটিত হলে প্রাথমিকভাবে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা সরকারের দায়িত্ব। অত্যন্ত দুঃখজনক হলেও সত্য, একুশে আগস্টের গ্রেনেড হামলার মতো এত বড় অপরাধ যারা করেছিল, তাদের চিহ্নিত করা, গ্রেপ্তার করা এবং আইনের হাতে সোপর্দ করার জরুরি কর্তব্যটি তৎকালীন সরকার সম্পাদনে কেবল চরমভাবে ব্যর্থতারই পরিচয় দেয়নি; বরং ঘটনাপ্রবাহ অন্য খাতে প্রবাহিত করার অপচেষ্টা চালিয়েছে।
তৎকালীন শ্রম ও কর্মসংস্থান প্রতিমন্ত্রী আমানউল্লাহ আমান ওই সমাবেশে বলেছিলেন, ‘আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা আন্তর্জাতিক তদন্ত চাচ্ছেন। আমরা সব ধরনের তদন্ত করব। খুব তাড়াতাড়িই তদন্ত রিপোর্ট দেব। ওই রিপোর্টে গ্রেনেড হামলার জন্য আবদুস সামাদ আজাদ, মোহাম্মদ নাসিম, সাবের হোসেন চৌধুরী, তোফায়েল আহমেদ ও মতিয়া চৌধুরীকে দায়ী করা হবে।’
একুশে আগস্ট গ্রেনেড হামলা নিয়ে বিএনপি যে কত ভয়ংকর পরিকল্পনা ফেঁদেছিল, সেটা আমানউল্লাহ আমানের বক্তব্য থেকেই বোঝা যায়। তদন্ত না হতেই তদন্ত রিপোর্টে কী থাকবে, সেটা একজন প্রতিমন্ত্রী বলার পর ওই তদন্ত রিপোর্ট সম্পর্কে মানুষের মনে কী ধারণা হতে পারে, সেটা বোঝার ক্ষমতাও জোট সরকারের মন্ত্রীদের ছিল না।
খালেদা জিয়া নিজেও গ্রেনেড হামলার কথা বলতে গিয়ে খুব দায়িত্বশীলতার পরিচয় দিতে পেরেছিলেন, সেটাও বলা যায় না। ২০০৪ সালের ২ ডিসেম্বর বিএনপির প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত এক সমাবেশে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া গ্রেনেড হামলার ঘটনাকে ‘ষড়যন্ত্র’ হিসেবে অভিহিত করে বলেছিলেন, ‘সরকারের সাফল্যকে আড়াল করতে “বোমা” হামলার ঘটনা ঘটানো হয়েছে।’ খালেদা জিয়ার এ বক্তব্য দেশের মানুষকে হতবাক করেছিল। শেখ হাসিনাকে হত্যার চেষ্টা এবং আওয়ামী লীগের অসংখ্য নেতা-কর্মীকে হত্যা করা হয়েছিল সরকারের সাফল্যকে আড়াল করতে—এমন বক্তব্য সরকারপ্রধানের মুখ থেকে বের হওয়ার পর একুশে আগস্টের ঘটনার সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ তদন্ত যে হবে না, সেটা তখন সবার কাছেই স্পষ্ট হয়েছিল। বাস্তবে ঘটেছিলও তাই। জোট সরকার ক্ষমতায় থাকতে তদন্তকাজ অগ্রসর হয়নি; বরং প্রকৃত অপরাধীদের আড়াল করার জন্য, সবকিছু ধামাচাপা দেওয়ার কসরতই চালানো হয়েছিল।
এখন বিএনপি সরকারে নেই, বিরোধী দল হিসেবে সরকারের যেকোনো ভুলত্রুটির সমালোচনা করার অধিকার বিএনপির আছে। কিন্তু ঢালাওভাবে সরকারের সমালোচনা করার সময় বিএনপির নেতারা কি আয়নায় নিজেদের মুখ দেখেন? তাঁদের শাসনামলে দেশ কেমন চলছিল, সেসব কি তাঁদের মনে আছে? তাঁরা কি একবার ২০০১ থেকে ২০০৬ সালের সংবাদপত্রগুলোর পাতায় চোখ বুলিয়ে দেখবেন? একুশে আগস্টের গ্রেনেড হামলা, সাবেক অর্থমন্ত্রী শাহ এ এম এস কিবরিয়াসহ আওয়ামী লীগের জনপ্রিয় নেতাদের হত্যাসহ অসংখ্য বোমা হামলার ঘটনা এবং দেশজুড়ে জঙ্গিগোষ্ঠীর উত্থানের ঘটনাগুলোর কথা মনে পড়লে তো তাঁদের বর্তমান সরকারের লাগামহীন সমালোচনা করার কথা নয়।
রাজনীতিতে মতভিন্নতা থাকাটাই স্বাভাবিক। সব শিয়ালের এক রা-এর মতো সব রাজনৈতিক দলের এক রা হওয়ার কোনো সুযোগ নেই। নানা মতের, নানা পথের মানুষ একসঙ্গে বসবাস করবে—এটাই গণতন্ত্রের রীতি। কিন্তু মত ও পথের ভিন্নতার জন্য সম্প্রীতি ও সৌহার্দ্যের পরিবেশ নষ্ট হওয়াটা কোনোভাবেই কাম্য নয়। অথচ বিএনপি একদিকে রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে রাজনৈতিকভাবে মোকাবিলা না করে, হত্যার মাধ্যমে নির্মূল করার পথ অনুসরণ করে, অন্যদিকে তারা দিব্যি গণতন্ত্রের জন্য ‘লড়াই’য়ের কথাও বলছে। বিএনপি ক্ষমতার বাইরে আছে দেড় দশক হয়ে গেল। গণতন্ত্রের জন্য এখন হাহাকার করলেও ক্ষমতায় থাকতে আওয়ামী লীগের জন্য বিএনপি কোনো গণতান্ত্রিক স্পেস না দিয়ে নির্মূল করার নীতি নিয়েছিল। একুশে আগস্ট গ্রেনেড হামলার ঘটনা তার বড় প্রমাণ। বিএনপি বর্তমানে রাজনৈতিক ও সাংগঠনিকভাবে বিপর্যস্ত অবস্থায় আছে। অথচ অতীতের ভুল রাজনৈতিক কৌশল নিয়ে দলটির মধ্যে কোনো আত্মসমালোচনা নেই। ভবিষ্যতে বিএনপি তার সঙ্গী-সাথিদের নিয়ে ক্ষমতায় গেলে দেশে প্রতিহিংসা ও প্রতিশোধের রাজনীতির চর্চা বন্ধ করবে কি না, সে কথা স্পষ্ট করে বলা হয় না। সুযোগ পেলেই বিএনপির নেতারা যেভাবে হুমকি-ধমকি দিয়ে থাকেন, তা থেকে তো মনে হয় ক্ষমতায় গেলে দেশে আবার বিরোধী রাজনীতি দমনের নামে নিষ্ঠুরতার পথই অনুসরণ করা হবে। সন্ত্রাস-জঙ্গিবাদ মোকাবিলায় বিএনপি একদিকে বৃহত্তর ঐক্যের ডাক দেয়, অন্যদিকে দলের কেন্দ্রীয় কমিটিতে এমন কিছু ব্যক্তিকে জায়গা করে দেওয়া হয়েছে, যাঁদের বিরুদ্ধে সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদের সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগ আছে।
বিএনপিকে ঘুরে দাঁড়াতে হলে আসলেই তাদের রাজনীতিতে পরিবর্তন আনতে হবে। হত্যা-ষড়যন্ত্রের রাজনীতির ধারা থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। অতীত ভুলের জন্য দেশবাসীর কাছে ক্ষমা চাইতে হবে। একুশে আগস্টের বিয়োগান্ত ঘটনার দায় অস্বীকার করে বিএনপি সুবিধা করতে পারবে না। গ্রেনেড হামলা মামলার রায় প্রত্যাখ্যান করে কিংবা রায়কে ‘রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপূর্ণ’ বলে বিএনপি হাত মুছতে চাইলেও তা সম্ভব হবে না। পনেরো আগস্ট কেক কাটা পরিহার করলেও খালেদা জিয়া ভুয়া জন্মদিন পালন বাদ দেননি। একুশে আগস্টের দায় স্বীকার না করে রাজনীতিতে নতুন অবস্থান তৈরি করা বিএনপির জন্য সহজ হবে বলে মনে হয় না।
লেখক: সহকারী সম্পাদক, আজকের পত্রিকা

গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।
২২ দিন আগে
‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর...
১২ জুন ২০২৫
ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।
১৯ মে ২০২৫
আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
০৮ মে ২০২৫বাসস, ঢাকা

গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।
আজ সোমবার বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের ট্রাইব্যুনাল-১-এ মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা (আইও) মো. আলমগীরের জেরা শুরু করেন রাষ্ট্র নিযুক্ত আইনজীবী আমীর হোসেন। আইনজীবী আমীর হোসেন পলাতক আসামি শেখ হাসিনা ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের পক্ষে শুনানি করছেন। এর আগে গত মঙ্গলবার তদন্তকারী কর্মকর্তা মো. আলমগীরের সাক্ষ্য গ্রহণ সম্পন্ন হয়।
এই মামলার শুনানিতে এর আগে গণ-অভ্যুত্থানের অন্যতম প্রতীক শহীদ আবু সাঈদের বাবাসহ স্বজনহারা পরিবারের একাধিক সদস্য সাক্ষ্য দিয়েছেন। এ ছাড়া মামলার গুরুত্বপূর্ণ ‘স্টার উইটনেস’ হিসেবে সাক্ষ্য দেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক এবং জুলাই আন্দোলনের অন্যতম নেতৃত্বদানকারী নাহিদ ইসলাম এবং দৈনিক আমার দেশ পত্রিকার সম্পাদক ড. মাহমুদুর রহমান।
গত বছরের জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার আন্দোলন দমনে আওয়ামী লীগ সরকার, তাদের দলীয় ক্যাডার ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর একটি অংশ গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটিত করে বলে অভিযোগ ওঠে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে শেখ হাসিনা, তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল এবং তৎকালীন আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের বিরুদ্ধে গত ১০ জুলাই অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দেন ট্রাইব্যুনাল-১।
পরবর্তীকালে, এই মামলার অন্যতম আসামি সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন দোষ স্বীকার করে ঘটনার সত্যতা উদ্ঘাটনে রাজসাক্ষী (অ্যাপ্রোভার) হওয়ার জন্য ট্রাইব্যুনালে আবেদন করেন। ট্রাইব্যুনাল তাঁর আবেদন মঞ্জুর করলে তিনি রাজসাক্ষী হিসেবে এই মামলায় সাক্ষ্য দেন।
মামলার প্রসিকিউশন পক্ষে শুনানি করছেন চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম, প্রসিকিউটর মিজানুল ইসলাম এবং গাজী এসএইচ তামিম। শুনানিতে তাঁদের সঙ্গে অপর প্রসিকিউটররাও উপস্থিত ছিলেন।
অন্যদিকে, এই মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে রাজসাক্ষী হওয়া সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের পক্ষে আছেন আইনজীবী যায়েদ বিন আমজাদ।
মানবতাবিরোধী অপরাধের এই মামলা ছাড়াও ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে আরও দুটি মামলা বিচারাধীন। এর মধ্যে একটি মামলায় আওয়ামী লীগের সাড়ে ১৫ বছরের শাসনামলে সংঘটিত গুম-খুনের ঘটনায় তাঁকে আসামি করা হয়েছে। অন্য মামলাটি হলো রাজধানীর মতিঝিলের শাপলা চত্বরে হেফাজতে ইসলামের সমাবেশে হত্যাকাণ্ড নিয়ে। এই তিনটি মামলার বিচারকাজই বর্তমানে দুটি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে চলমান।

গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।
আজ সোমবার বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের ট্রাইব্যুনাল-১-এ মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা (আইও) মো. আলমগীরের জেরা শুরু করেন রাষ্ট্র নিযুক্ত আইনজীবী আমীর হোসেন। আইনজীবী আমীর হোসেন পলাতক আসামি শেখ হাসিনা ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের পক্ষে শুনানি করছেন। এর আগে গত মঙ্গলবার তদন্তকারী কর্মকর্তা মো. আলমগীরের সাক্ষ্য গ্রহণ সম্পন্ন হয়।
এই মামলার শুনানিতে এর আগে গণ-অভ্যুত্থানের অন্যতম প্রতীক শহীদ আবু সাঈদের বাবাসহ স্বজনহারা পরিবারের একাধিক সদস্য সাক্ষ্য দিয়েছেন। এ ছাড়া মামলার গুরুত্বপূর্ণ ‘স্টার উইটনেস’ হিসেবে সাক্ষ্য দেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক এবং জুলাই আন্দোলনের অন্যতম নেতৃত্বদানকারী নাহিদ ইসলাম এবং দৈনিক আমার দেশ পত্রিকার সম্পাদক ড. মাহমুদুর রহমান।
গত বছরের জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার আন্দোলন দমনে আওয়ামী লীগ সরকার, তাদের দলীয় ক্যাডার ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর একটি অংশ গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটিত করে বলে অভিযোগ ওঠে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে শেখ হাসিনা, তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল এবং তৎকালীন আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের বিরুদ্ধে গত ১০ জুলাই অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দেন ট্রাইব্যুনাল-১।
পরবর্তীকালে, এই মামলার অন্যতম আসামি সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন দোষ স্বীকার করে ঘটনার সত্যতা উদ্ঘাটনে রাজসাক্ষী (অ্যাপ্রোভার) হওয়ার জন্য ট্রাইব্যুনালে আবেদন করেন। ট্রাইব্যুনাল তাঁর আবেদন মঞ্জুর করলে তিনি রাজসাক্ষী হিসেবে এই মামলায় সাক্ষ্য দেন।
মামলার প্রসিকিউশন পক্ষে শুনানি করছেন চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম, প্রসিকিউটর মিজানুল ইসলাম এবং গাজী এসএইচ তামিম। শুনানিতে তাঁদের সঙ্গে অপর প্রসিকিউটররাও উপস্থিত ছিলেন।
অন্যদিকে, এই মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে রাজসাক্ষী হওয়া সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের পক্ষে আছেন আইনজীবী যায়েদ বিন আমজাদ।
মানবতাবিরোধী অপরাধের এই মামলা ছাড়াও ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে আরও দুটি মামলা বিচারাধীন। এর মধ্যে একটি মামলায় আওয়ামী লীগের সাড়ে ১৫ বছরের শাসনামলে সংঘটিত গুম-খুনের ঘটনায় তাঁকে আসামি করা হয়েছে। অন্য মামলাটি হলো রাজধানীর মতিঝিলের শাপলা চত্বরে হেফাজতে ইসলামের সমাবেশে হত্যাকাণ্ড নিয়ে। এই তিনটি মামলার বিচারকাজই বর্তমানে দুটি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে চলমান।

আমাদের দেশের রাজনীতি নিয়ে যাঁরা ভাবেন, কথা বলেন, দুটি বড় দলের বিরোধ ও অনৈক্য নিয়ে যাঁরা বিভিন্ন সময় মন্তব্য করেন, তাঁরা অধিকাংশ সময় গড়পড়তা কথা বলেন। দেশে বিভেদ ও অনৈক্যের যে রাজনীতি চলছে, তার জন্য প্রধান বড় দুই দলকেই যাঁরা সমানভাবে দায়ী করেন, তাঁরাও আসলে এই বিভেদ জিইয়ে রাখার পক্ষে। ক্ষত নিরাময়ের ক্ষ
২১ আগস্ট ২০২২
‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর...
১২ জুন ২০২৫
ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।
১৯ মে ২০২৫
আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
০৮ মে ২০২৫
‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর সঙ্গে।
মাছের সুষ্ঠু প্রজনন, উৎপাদন, মৎস্যসম্পদ সংরক্ষণ ও টেকসই মৎস্য আহরণের জন্য সমুদ্রে সব ধরনের মাছ শিকার ৫৮ দিনের নিষেধাজ্ঞা গতকাল বুধবার দিবাগত মধ্যরাতে শেষ হয়েছে। তাই গতকাল দিনভর ছিল উপকূলের জেলেপল্লিগুলোতে ব্যস্ততা। অনেকে দেখে নিচ্ছিলেন ট্রলার ঠিকঠাক আছে কি না, কেউ জালের ছেঁড়া অংশ সেলাই করছিলেন, কেউ আবার প্রয়োজনীয় খাদ্যসামগ্রীসহ অন্য সরঞ্জাম গুছিয়ে নিচ্ছিলেন।
বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র এবং ফকিরহাট উপ-মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের ঘাটে গতকাল শত শত ট্রলার নোঙর করে রাখা ছিল। জেলেদের উপস্থিতিতে ঘাট এলাকা সরগরম হয়ে ওঠে। ফকিরহাটের মুদি-মনিহারি দোকানগুলোতে জেলেরা কেনাকাটা করতে ভিড় জমান। ফকিরহাট এলাকার বিসমিল্লাহ ট্রলারের মাঝি রহিম মিয়া বলেন, ‘সাগরে মাছ শিকারে যেতে সকল প্রস্তুতি নিয়েছি। নিষেধাজ্ঞার সময় শেষ হওয়ামাত্রই সাগরে নামব।’
জেলে নুরসাইদ ও ফোরকান মিয়া বলেন, ‘নিষেধাজ্ঞার সময় পরিবার-পরিজন নিয়ে বেশ কষ্টে কেটেছে। ওই সময়ে বেশ টাকা ঋণ করেছি। এখন সাগরে যাব। দেখি আল্লাহ ঋণ পরিশোধ করতে দেন কি না।’
নোয়াখালীর হাতিয়ার সূর্যমুখী, বাংলাবাজার, কাজিরবাজার, পাইতান মার্কেট চেয়ারম্যান ঘাটসহ বেশ কয়েকটি ঘাটে গতকাল জেলেদের ব্যস্ত সময় পার করতে দেখা গেছে। অনেকে নৌকায় জাল তুলছিলেন, আবার অনেকে জ্বালানি তেল মজুতসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্রী ট্রলারে নিয়ে যান। সূর্যমুখী ঘাটের এমভি মায়ের দোয়া ট্রলারের মাঝি জাফর উল্যা বলেন, ‘সাগরে ৮-১০ দিন থাকার প্রস্তুতি নিচ্ছি। সন্ধ্যায় সাগরের উদ্দেশে রওনা দেব।’
সূর্যমুখী ঘাট জেলে সমিতির সভাপতি জবিয়ল হক বলেন, ‘সাগরে নামতে প্রস্তুত নোয়াখালীর হাতিয়ার ২০টি ঘাটের লক্ষাধিক জেলে। এসব ঘাটে প্রায় ১০ হাজার ছোট-বড় ফিশিং ট্রলার রয়েছে। প্রতি ট্রলারে ১০ জন হলেও লক্ষাধিক জেলে এই মাছ ধরার সঙ্গে জড়িত। তাঁদের সবাই গত ৫৮ দিন তীরে বেকার ছিলেন।’
পিরোজপুরের ইন্দুরকানি উপজেলার পাড়েরহাট মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের পার্শ্ববর্তী এলাকার জেলেরা গতকাল দিনভর সাগরে যাওয়ার প্রস্তুতি নেন। এ ছাড়া মঠবাড়িয়া উপজেলার সাপলেজা, খেতাচিড়া, বড়মাছুয়া, ছোটমাছুয়া, ভান্ডারিয়া উপজেলার চরখালী, হেতালিয়া, কাউখালী উপজেলার সোনাকুর এলাকার জেলেরা, সদর উপজেলা এবং নেছারাবাদ উপজেলার বিভিন্ন এলাকার জেলেরা প্রস্তুতি শেষে গত রাতে বঙ্গোপসাগরে রওনা হন।
কয়েক দিন ধরে কক্সবাজার উপকূলের জেলেপল্লিগুলোতে নৌকা, জাল মেরামতসহ বিভিন্ন প্রস্তুতি সেরেছেন জেলেরা। গতকাল মেরিন ড্রাইভের টেকনাফের খুরেরমুখ, সাবরাং ও বাহারছড়া এলাকায় দেখা গেছে, সড়কে দাঁড় করিয়ে রাখা সারি সারি ট্রলারে জাল ও রসদ তোলেন জেলেরা।
একটি ট্রলারের মাঝি আবু তাহের জানান, এবার ভারতের সঙ্গে মিল রেখে নিষেধাজ্ঞা দেওয়ায় কেউ সাগরে মাছ শিকারে নামেনি। এতে উপকূলের কাছাকাছি সাগরে জাল ফেললেই ইলিশসহ অন্য মাছ পাওয়া যাবে বলে আশাবাদী তিনি।
কক্সবাজার শহরের ফিশারি ঘাটের মৎস্য ব্যবসায়ী সমিতির পরিচালক জুলফিকার আলী জানান, কক্সবাজার উপকূলে ছোট-বড় ৭ হাজারের মতো যান্ত্রিক ট্রলার রয়েছে। এসব ট্রলারে প্রায় এক লাখ জেলে ও শ্রমিক নিয়োজিত রয়েছেন। অধিকাংশ ট্রলার নিষেধাজ্ঞা ওঠার সঙ্গে সঙ্গে সাগরে রওনা হবে।
[প্রতিবেদন তৈরিতে তথ্য দিয়ে সহায়তা করেছেন বরগুনা ও আমতলী, পিরোজপুর, কক্সবাজার এবং হাতিয়া প্রতিনিধি]

‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর সঙ্গে।
মাছের সুষ্ঠু প্রজনন, উৎপাদন, মৎস্যসম্পদ সংরক্ষণ ও টেকসই মৎস্য আহরণের জন্য সমুদ্রে সব ধরনের মাছ শিকার ৫৮ দিনের নিষেধাজ্ঞা গতকাল বুধবার দিবাগত মধ্যরাতে শেষ হয়েছে। তাই গতকাল দিনভর ছিল উপকূলের জেলেপল্লিগুলোতে ব্যস্ততা। অনেকে দেখে নিচ্ছিলেন ট্রলার ঠিকঠাক আছে কি না, কেউ জালের ছেঁড়া অংশ সেলাই করছিলেন, কেউ আবার প্রয়োজনীয় খাদ্যসামগ্রীসহ অন্য সরঞ্জাম গুছিয়ে নিচ্ছিলেন।
বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র এবং ফকিরহাট উপ-মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের ঘাটে গতকাল শত শত ট্রলার নোঙর করে রাখা ছিল। জেলেদের উপস্থিতিতে ঘাট এলাকা সরগরম হয়ে ওঠে। ফকিরহাটের মুদি-মনিহারি দোকানগুলোতে জেলেরা কেনাকাটা করতে ভিড় জমান। ফকিরহাট এলাকার বিসমিল্লাহ ট্রলারের মাঝি রহিম মিয়া বলেন, ‘সাগরে মাছ শিকারে যেতে সকল প্রস্তুতি নিয়েছি। নিষেধাজ্ঞার সময় শেষ হওয়ামাত্রই সাগরে নামব।’
জেলে নুরসাইদ ও ফোরকান মিয়া বলেন, ‘নিষেধাজ্ঞার সময় পরিবার-পরিজন নিয়ে বেশ কষ্টে কেটেছে। ওই সময়ে বেশ টাকা ঋণ করেছি। এখন সাগরে যাব। দেখি আল্লাহ ঋণ পরিশোধ করতে দেন কি না।’
নোয়াখালীর হাতিয়ার সূর্যমুখী, বাংলাবাজার, কাজিরবাজার, পাইতান মার্কেট চেয়ারম্যান ঘাটসহ বেশ কয়েকটি ঘাটে গতকাল জেলেদের ব্যস্ত সময় পার করতে দেখা গেছে। অনেকে নৌকায় জাল তুলছিলেন, আবার অনেকে জ্বালানি তেল মজুতসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্রী ট্রলারে নিয়ে যান। সূর্যমুখী ঘাটের এমভি মায়ের দোয়া ট্রলারের মাঝি জাফর উল্যা বলেন, ‘সাগরে ৮-১০ দিন থাকার প্রস্তুতি নিচ্ছি। সন্ধ্যায় সাগরের উদ্দেশে রওনা দেব।’
সূর্যমুখী ঘাট জেলে সমিতির সভাপতি জবিয়ল হক বলেন, ‘সাগরে নামতে প্রস্তুত নোয়াখালীর হাতিয়ার ২০টি ঘাটের লক্ষাধিক জেলে। এসব ঘাটে প্রায় ১০ হাজার ছোট-বড় ফিশিং ট্রলার রয়েছে। প্রতি ট্রলারে ১০ জন হলেও লক্ষাধিক জেলে এই মাছ ধরার সঙ্গে জড়িত। তাঁদের সবাই গত ৫৮ দিন তীরে বেকার ছিলেন।’
পিরোজপুরের ইন্দুরকানি উপজেলার পাড়েরহাট মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের পার্শ্ববর্তী এলাকার জেলেরা গতকাল দিনভর সাগরে যাওয়ার প্রস্তুতি নেন। এ ছাড়া মঠবাড়িয়া উপজেলার সাপলেজা, খেতাচিড়া, বড়মাছুয়া, ছোটমাছুয়া, ভান্ডারিয়া উপজেলার চরখালী, হেতালিয়া, কাউখালী উপজেলার সোনাকুর এলাকার জেলেরা, সদর উপজেলা এবং নেছারাবাদ উপজেলার বিভিন্ন এলাকার জেলেরা প্রস্তুতি শেষে গত রাতে বঙ্গোপসাগরে রওনা হন।
কয়েক দিন ধরে কক্সবাজার উপকূলের জেলেপল্লিগুলোতে নৌকা, জাল মেরামতসহ বিভিন্ন প্রস্তুতি সেরেছেন জেলেরা। গতকাল মেরিন ড্রাইভের টেকনাফের খুরেরমুখ, সাবরাং ও বাহারছড়া এলাকায় দেখা গেছে, সড়কে দাঁড় করিয়ে রাখা সারি সারি ট্রলারে জাল ও রসদ তোলেন জেলেরা।
একটি ট্রলারের মাঝি আবু তাহের জানান, এবার ভারতের সঙ্গে মিল রেখে নিষেধাজ্ঞা দেওয়ায় কেউ সাগরে মাছ শিকারে নামেনি। এতে উপকূলের কাছাকাছি সাগরে জাল ফেললেই ইলিশসহ অন্য মাছ পাওয়া যাবে বলে আশাবাদী তিনি।
কক্সবাজার শহরের ফিশারি ঘাটের মৎস্য ব্যবসায়ী সমিতির পরিচালক জুলফিকার আলী জানান, কক্সবাজার উপকূলে ছোট-বড় ৭ হাজারের মতো যান্ত্রিক ট্রলার রয়েছে। এসব ট্রলারে প্রায় এক লাখ জেলে ও শ্রমিক নিয়োজিত রয়েছেন। অধিকাংশ ট্রলার নিষেধাজ্ঞা ওঠার সঙ্গে সঙ্গে সাগরে রওনা হবে।
[প্রতিবেদন তৈরিতে তথ্য দিয়ে সহায়তা করেছেন বরগুনা ও আমতলী, পিরোজপুর, কক্সবাজার এবং হাতিয়া প্রতিনিধি]

আমাদের দেশের রাজনীতি নিয়ে যাঁরা ভাবেন, কথা বলেন, দুটি বড় দলের বিরোধ ও অনৈক্য নিয়ে যাঁরা বিভিন্ন সময় মন্তব্য করেন, তাঁরা অধিকাংশ সময় গড়পড়তা কথা বলেন। দেশে বিভেদ ও অনৈক্যের যে রাজনীতি চলছে, তার জন্য প্রধান বড় দুই দলকেই যাঁরা সমানভাবে দায়ী করেন, তাঁরাও আসলে এই বিভেদ জিইয়ে রাখার পক্ষে। ক্ষত নিরাময়ের ক্ষ
২১ আগস্ট ২০২২
গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।
২২ দিন আগে
ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।
১৯ মে ২০২৫
আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
০৮ মে ২০২৫নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা

ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।
ভারতের নিষেধাজ্ঞার এক দিন পরই গত রোববার লালমনিরহাটের বুড়িমারী ও যশোরের বেনাপোল স্থলবন্দরসহ বিভিন্ন বন্দরে পণ্যের ট্রাক আটকে দেয় ভারত। সংশ্লিষ্টদের সূত্রে জানা যায়, রোববার ভারতের আমদানি বিধিনিষেধের কারণে বুড়িমারী সীমান্তে প্রাণের ১৭ ট্রাক খাদ্যপণ্য আটকে যায়। এ ছাড়া বেনাপোলে ৩৬টি পোশাক বোঝাই ট্রাকসহ অন্যান্য পণ্যের শতাধিক ট্রাক ঢুকতে পারেনি।
গতকাল সোমবার পর্যন্ত বুড়িমারী থেকে প্রাণের পণ্যবোঝাই ট্রাকগুলোর অর্ধেকের বেশি ফেরত নিয়ে আসে প্রতিষ্ঠানটি। এ ছাড়া বেনাপোলে পোর্টের ভেতরে ২৪টি ট্রাক ছাড়া বাকিগুলো ফেরত চলে যায়।
বেনাপোল বন্দর সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট স্টাফ অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মো. সাজেদুর রহমান গতকাল সোমবার আজকের পত্রিকাকে বলেন, গতকাল পোর্টের ভেতর ও বাইরে শতাধিক ট্রাক দাঁড়িয়ে ছিল। আজ পোর্টের ভেতরের ২৪টি ছাড়া বাকিগুলো ফেরত নিয়ে গেছেন মালিকেরা। এখন পর্যন্ত মনে হচ্ছে, পোর্টের ভেতরের ট্রাকগুলোও ফেরত নিতে হবে।
জানতে চাইলে প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের পরিচালক (বিপণন) কামরুজ্জামান কামাল আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমাদের হাতে ৬ মিলিয়ন ডলারের ক্রয় আদেশ রয়েছে। তার মধ্য থেকে রোববার বুড়িমারী দিয়ে ১৭ ট্রাকবোঝাই পণ্য পাঠিয়েছিলাম। কিন্তু সেগুলো ঢুকতে পারেনি। ট্রাকগুলো ফেরত আনা হচ্ছে। নতুন করে কাগজপত্র তৈরি করে অন্য পথ দিয়ে পণ্য পাঠাতে হবে।’
বেনাপোল স্থলবন্দর সূত্রে জানা যায়, ওই ২৪টি ট্রাক পোর্টের ভেতরে থাকায় এখনো তারা ভারতে প্রবেশের অপেক্ষায় রয়েছে। তাদের আশা, যেহেতু নিষেধাজ্ঞার আগে এই পণ্যগুলোর এলসি করা হয়েছিল, তাই এগুলো প্রবেশে অনুমতি পাবে। তবে এটি নির্ভর করবে বাংলাদেশ সরকারের আলোচনার ওপর।
এমন পরিস্থিতিতে সরকারের সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় রয়েছেন ব্যবসায়ীরা। ইতিমধ্যে অনেক রপ্তানিকারক রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) সঙ্গে আলোচনা করে সরকারের সহযোগিতা চেয়েছে।
স্থলবন্দরের মাধ্যমে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জসমূহ এবং আশু করণীয় নির্ধারণে বাণিজ্যসচিবের সভাপতিত্বে আজ মঙ্গলবার আন্তমন্ত্রণালয়ের সভা ডেকেছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, স্থলবন্দরের মাধ্যমে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জসমূহ এবং আশু করণীয় নির্ধারণে বাণিজ্যসচিবের সভাপতিত্বে বিকেল ৪টায় আন্তমন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে এই সভা অনুষ্ঠিত হবে।
সভায় নৌপরিবহন ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশন, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড, বাংলাদেশ স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষ, রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো, জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের প্রতিনিধিদের উপস্থিত থাকতে বলা হয়েছে। এ ছাড়া ব্যবসায়ী প্রতিনিধি হিসেবে এফবিসিসিআই, বিজিএমইএ, ভারত-বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির প্রতিনিধিদের উপস্থিতির জন্য আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে।
ভারতের শিল্প ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয় গত শনিবার হঠাৎ এক বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে স্থলবন্দর দিয়ে বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক আমদানি নিষিদ্ধ করে। শুধু ভারতের নবসেবা ও কলকাতা সমুদ্রবন্দর ব্যবহার করে দেশটির আমদানিকারকেরা বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক আমদানি করতে পারবেন বলে ওই বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়। এ ছাড়া বাংলাদেশ থেকে ভারতের আসাম, মেঘালয়, ত্রিপুরা ও মিজোরাম, পশ্চিমবঙ্গের চ্যাংড়াবান্দা ও ফুলবাড়ী শুল্ক স্টেশন দিয়ে ফল, ফলের স্বাদযুক্ত পানীয়, কোমল পানীয়, প্রক্রিয়াজাত খাদ্য, প্লাস্টিক পণ্য, সুতা, সুতার উপজাত, আসবাব রপ্তানিও নিষিদ্ধ করা হয় ওই বিজ্ঞপ্তিতে।
আমদানি ও রপ্তানিসংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা জানান, দেশের ২৪টি বন্দরের মধ্যে ১৬টি বন্দর দিয়ে ভারতের সঙ্গে আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য হয়ে থাকে। তবে যোগাযোগব্যবস্থা সহজ হওয়ায় বেনাপোল ও ভারতের পেট্রাপোল বন্দর দিয়ে সবচেয়ে বেশি আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য হয়। এর পরিমাণ ৮০ শতাংশ। বেনাপোল বন্দর দিয়ে প্রতিদিন ভারতে ২৫০ থেকে ৩০০ ট্রাকে বিভিন্ন ধরনের পণ্য রপ্তানি হয়। এর মধ্যে শতাধিক ট্রাক পণ্য থাকে তৈরি পোশাক।
এর আগে গত ৮ এপ্রিল বাংলাদেশের জন্য ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা বাতিল করে ভারত। ফলে ভারতের বিমানবন্দর ব্যবহার করে তৃতীয় কোনো দেশে তৈরি পোশাক রপ্তানি করতে পারছে না বাংলাদেশ। অন্যদিকে প্রায় এক মাস আগে ভারত থেকে বেনাপোল, ভোমরা, সোনামসজিদ, বাংলাবান্ধা, বুড়িমারী স্থলবন্দর দিয়ে সুতা আমদানির সুযোগ বন্ধ করে দেয় বাংলাদেশের জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)।
সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) বিশেষ ফেলো মোস্তাফিজুর রহমানের মতে, এই পাল্টাপাল্টি পদক্ষেপে তুলনামূলকভাবে বেশি নেতিবাচক প্রভাব পড়বে বাংলাদেশের ওপর। তাই ভারতের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য ঘাটতি কমানোর চেষ্টা অব্যাহত রাখাই সরকারের উচিত বলে মনে করছেন তিনি।
মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, আলোচনার মাধ্যমে বাংলাদেশ এবং ভারতের বিরোধপূর্ণ বিষয়সমূহ মিটিয়ে ফেলতে হবে এবং দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য সম্পর্কের ক্ষেত্রে ভারসাম্য প্রতিষ্ঠা করতে হবে। এটাই হবে উভয় দেশের জন্য কল্যাণকর।

ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।
ভারতের নিষেধাজ্ঞার এক দিন পরই গত রোববার লালমনিরহাটের বুড়িমারী ও যশোরের বেনাপোল স্থলবন্দরসহ বিভিন্ন বন্দরে পণ্যের ট্রাক আটকে দেয় ভারত। সংশ্লিষ্টদের সূত্রে জানা যায়, রোববার ভারতের আমদানি বিধিনিষেধের কারণে বুড়িমারী সীমান্তে প্রাণের ১৭ ট্রাক খাদ্যপণ্য আটকে যায়। এ ছাড়া বেনাপোলে ৩৬টি পোশাক বোঝাই ট্রাকসহ অন্যান্য পণ্যের শতাধিক ট্রাক ঢুকতে পারেনি।
গতকাল সোমবার পর্যন্ত বুড়িমারী থেকে প্রাণের পণ্যবোঝাই ট্রাকগুলোর অর্ধেকের বেশি ফেরত নিয়ে আসে প্রতিষ্ঠানটি। এ ছাড়া বেনাপোলে পোর্টের ভেতরে ২৪টি ট্রাক ছাড়া বাকিগুলো ফেরত চলে যায়।
বেনাপোল বন্দর সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট স্টাফ অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মো. সাজেদুর রহমান গতকাল সোমবার আজকের পত্রিকাকে বলেন, গতকাল পোর্টের ভেতর ও বাইরে শতাধিক ট্রাক দাঁড়িয়ে ছিল। আজ পোর্টের ভেতরের ২৪টি ছাড়া বাকিগুলো ফেরত নিয়ে গেছেন মালিকেরা। এখন পর্যন্ত মনে হচ্ছে, পোর্টের ভেতরের ট্রাকগুলোও ফেরত নিতে হবে।
জানতে চাইলে প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের পরিচালক (বিপণন) কামরুজ্জামান কামাল আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমাদের হাতে ৬ মিলিয়ন ডলারের ক্রয় আদেশ রয়েছে। তার মধ্য থেকে রোববার বুড়িমারী দিয়ে ১৭ ট্রাকবোঝাই পণ্য পাঠিয়েছিলাম। কিন্তু সেগুলো ঢুকতে পারেনি। ট্রাকগুলো ফেরত আনা হচ্ছে। নতুন করে কাগজপত্র তৈরি করে অন্য পথ দিয়ে পণ্য পাঠাতে হবে।’
বেনাপোল স্থলবন্দর সূত্রে জানা যায়, ওই ২৪টি ট্রাক পোর্টের ভেতরে থাকায় এখনো তারা ভারতে প্রবেশের অপেক্ষায় রয়েছে। তাদের আশা, যেহেতু নিষেধাজ্ঞার আগে এই পণ্যগুলোর এলসি করা হয়েছিল, তাই এগুলো প্রবেশে অনুমতি পাবে। তবে এটি নির্ভর করবে বাংলাদেশ সরকারের আলোচনার ওপর।
এমন পরিস্থিতিতে সরকারের সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় রয়েছেন ব্যবসায়ীরা। ইতিমধ্যে অনেক রপ্তানিকারক রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) সঙ্গে আলোচনা করে সরকারের সহযোগিতা চেয়েছে।
স্থলবন্দরের মাধ্যমে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জসমূহ এবং আশু করণীয় নির্ধারণে বাণিজ্যসচিবের সভাপতিত্বে আজ মঙ্গলবার আন্তমন্ত্রণালয়ের সভা ডেকেছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, স্থলবন্দরের মাধ্যমে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জসমূহ এবং আশু করণীয় নির্ধারণে বাণিজ্যসচিবের সভাপতিত্বে বিকেল ৪টায় আন্তমন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে এই সভা অনুষ্ঠিত হবে।
সভায় নৌপরিবহন ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশন, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড, বাংলাদেশ স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষ, রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো, জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের প্রতিনিধিদের উপস্থিত থাকতে বলা হয়েছে। এ ছাড়া ব্যবসায়ী প্রতিনিধি হিসেবে এফবিসিসিআই, বিজিএমইএ, ভারত-বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির প্রতিনিধিদের উপস্থিতির জন্য আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে।
ভারতের শিল্প ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয় গত শনিবার হঠাৎ এক বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে স্থলবন্দর দিয়ে বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক আমদানি নিষিদ্ধ করে। শুধু ভারতের নবসেবা ও কলকাতা সমুদ্রবন্দর ব্যবহার করে দেশটির আমদানিকারকেরা বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক আমদানি করতে পারবেন বলে ওই বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়। এ ছাড়া বাংলাদেশ থেকে ভারতের আসাম, মেঘালয়, ত্রিপুরা ও মিজোরাম, পশ্চিমবঙ্গের চ্যাংড়াবান্দা ও ফুলবাড়ী শুল্ক স্টেশন দিয়ে ফল, ফলের স্বাদযুক্ত পানীয়, কোমল পানীয়, প্রক্রিয়াজাত খাদ্য, প্লাস্টিক পণ্য, সুতা, সুতার উপজাত, আসবাব রপ্তানিও নিষিদ্ধ করা হয় ওই বিজ্ঞপ্তিতে।
আমদানি ও রপ্তানিসংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা জানান, দেশের ২৪টি বন্দরের মধ্যে ১৬টি বন্দর দিয়ে ভারতের সঙ্গে আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য হয়ে থাকে। তবে যোগাযোগব্যবস্থা সহজ হওয়ায় বেনাপোল ও ভারতের পেট্রাপোল বন্দর দিয়ে সবচেয়ে বেশি আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য হয়। এর পরিমাণ ৮০ শতাংশ। বেনাপোল বন্দর দিয়ে প্রতিদিন ভারতে ২৫০ থেকে ৩০০ ট্রাকে বিভিন্ন ধরনের পণ্য রপ্তানি হয়। এর মধ্যে শতাধিক ট্রাক পণ্য থাকে তৈরি পোশাক।
এর আগে গত ৮ এপ্রিল বাংলাদেশের জন্য ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা বাতিল করে ভারত। ফলে ভারতের বিমানবন্দর ব্যবহার করে তৃতীয় কোনো দেশে তৈরি পোশাক রপ্তানি করতে পারছে না বাংলাদেশ। অন্যদিকে প্রায় এক মাস আগে ভারত থেকে বেনাপোল, ভোমরা, সোনামসজিদ, বাংলাবান্ধা, বুড়িমারী স্থলবন্দর দিয়ে সুতা আমদানির সুযোগ বন্ধ করে দেয় বাংলাদেশের জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)।
সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) বিশেষ ফেলো মোস্তাফিজুর রহমানের মতে, এই পাল্টাপাল্টি পদক্ষেপে তুলনামূলকভাবে বেশি নেতিবাচক প্রভাব পড়বে বাংলাদেশের ওপর। তাই ভারতের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য ঘাটতি কমানোর চেষ্টা অব্যাহত রাখাই সরকারের উচিত বলে মনে করছেন তিনি।
মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, আলোচনার মাধ্যমে বাংলাদেশ এবং ভারতের বিরোধপূর্ণ বিষয়সমূহ মিটিয়ে ফেলতে হবে এবং দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য সম্পর্কের ক্ষেত্রে ভারসাম্য প্রতিষ্ঠা করতে হবে। এটাই হবে উভয় দেশের জন্য কল্যাণকর।

আমাদের দেশের রাজনীতি নিয়ে যাঁরা ভাবেন, কথা বলেন, দুটি বড় দলের বিরোধ ও অনৈক্য নিয়ে যাঁরা বিভিন্ন সময় মন্তব্য করেন, তাঁরা অধিকাংশ সময় গড়পড়তা কথা বলেন। দেশে বিভেদ ও অনৈক্যের যে রাজনীতি চলছে, তার জন্য প্রধান বড় দুই দলকেই যাঁরা সমানভাবে দায়ী করেন, তাঁরাও আসলে এই বিভেদ জিইয়ে রাখার পক্ষে। ক্ষত নিরাময়ের ক্ষ
২১ আগস্ট ২০২২
গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।
২২ দিন আগে
‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর...
১২ জুন ২০২৫
আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
০৮ মে ২০২৫
আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
১৮৯৮ সালে ভারতের উত্তর প্রদেশের একটি ধূলিধূসর টিলা খুঁড়ে পাওয়া মূল্যবান এই রত্নগুলো এক শতাব্দীর বেশি সময় ধরে একটি বেসরকারি ব্রিটিশ সংগ্রহাগারে প্রায় দৃষ্টিচক্ষুর আড়ালে ছিল। এখন যেহেতু রত্নগুলোর হাতবদলের সময় এসেছে, তাই নতুন সংগ্রাহকেরা আগ্রহ নিয়ে এগুলো সংগ্রহের জন্য অপেক্ষা করছেন। কিন্তু এখানে একটা অস্বস্তিও তৈরি হয়েছে।
গৌতম বুদ্ধের জন্মস্থান লুম্বিনীর কাছাকাছি, বর্তমানে ভারতের উত্তর প্রদেশে একটি ইটের ঘরের ভেতর থেকে প্রায় ১ হাজার ৮০০টি মুক্তা, রুবি, টোপাজ, নীলা ও নকশা করা সোনার পাত সংগ্রহ করা হয়েছিল। তবে এই রত্নগুলোর সঙ্গে সঙ্গে একটি খোদাই করা পাত্রে হাড়ের টুকরাও পাওয়া যায়, যেগুলোকে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষ বলে শনাক্ত করা হয়। এই আবিষ্কার তখন প্রত্নতত্ত্বের জগতে ব্যাপক আলোড়ন তোলে।
সাদাবি’স এশিয়ার চেয়ারম্যান নিকোলাস চাউ মনে করেন, স্মরণকালের বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর মাঝে এই রত্নসম্ভার অন্যতম। তবে এগুলো নিলামে তোলার কারণে একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন তৈরি হয়েছে। আর তা হচ্ছে—ভারতের ইতিহাসের সঙ্গে গভীরভাবে জড়িয়ে থাকা এবং বৌদ্ধদের কাছে পবিত্র এই সম্পদ বিক্রি করা কি নৈতিকভাবে গ্রহণযোগ্য?
১৮৯৮ সালে ব্রিটিশ এস্টেট ম্যানেজার উইলিয়াম ক্ল্যাক্সটন পেপ্পে লুম্বিনির ঠিক দক্ষিণে পিপ্রাওয়ায় অবস্থিত একটি ঢিবি খনন করেন। সেখান থেকেই প্রায় ২ হাজার বছর আগের ওই নির্দশনগুলো খুঁজে পাওয়া যায়।
ইতিহাসবিদদের মতে, প্রাপ্ত রত্নসম্ভার ও দেহাবশেষ, যা তখনো পর্যন্ত অক্ষত ছিল, সেগুলো গৌতম বুদ্ধের শাক্য বংশের এবং বিশ্বব্যাপী বৌদ্ধদের ঐতিহ্য। হাড়ের নিদর্শনগুলো থাইল্যান্ড, শ্রীলঙ্কা ও মিয়ানমারের মতো দেশগুলোতে বিতরণ করা হয়েছে। এসব দেশে এখনো সেগুলোর পূজা করা হয়।

আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
১৮৯৮ সালে ভারতের উত্তর প্রদেশের একটি ধূলিধূসর টিলা খুঁড়ে পাওয়া মূল্যবান এই রত্নগুলো এক শতাব্দীর বেশি সময় ধরে একটি বেসরকারি ব্রিটিশ সংগ্রহাগারে প্রায় দৃষ্টিচক্ষুর আড়ালে ছিল। এখন যেহেতু রত্নগুলোর হাতবদলের সময় এসেছে, তাই নতুন সংগ্রাহকেরা আগ্রহ নিয়ে এগুলো সংগ্রহের জন্য অপেক্ষা করছেন। কিন্তু এখানে একটা অস্বস্তিও তৈরি হয়েছে।
গৌতম বুদ্ধের জন্মস্থান লুম্বিনীর কাছাকাছি, বর্তমানে ভারতের উত্তর প্রদেশে একটি ইটের ঘরের ভেতর থেকে প্রায় ১ হাজার ৮০০টি মুক্তা, রুবি, টোপাজ, নীলা ও নকশা করা সোনার পাত সংগ্রহ করা হয়েছিল। তবে এই রত্নগুলোর সঙ্গে সঙ্গে একটি খোদাই করা পাত্রে হাড়ের টুকরাও পাওয়া যায়, যেগুলোকে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষ বলে শনাক্ত করা হয়। এই আবিষ্কার তখন প্রত্নতত্ত্বের জগতে ব্যাপক আলোড়ন তোলে।
সাদাবি’স এশিয়ার চেয়ারম্যান নিকোলাস চাউ মনে করেন, স্মরণকালের বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর মাঝে এই রত্নসম্ভার অন্যতম। তবে এগুলো নিলামে তোলার কারণে একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন তৈরি হয়েছে। আর তা হচ্ছে—ভারতের ইতিহাসের সঙ্গে গভীরভাবে জড়িয়ে থাকা এবং বৌদ্ধদের কাছে পবিত্র এই সম্পদ বিক্রি করা কি নৈতিকভাবে গ্রহণযোগ্য?
১৮৯৮ সালে ব্রিটিশ এস্টেট ম্যানেজার উইলিয়াম ক্ল্যাক্সটন পেপ্পে লুম্বিনির ঠিক দক্ষিণে পিপ্রাওয়ায় অবস্থিত একটি ঢিবি খনন করেন। সেখান থেকেই প্রায় ২ হাজার বছর আগের ওই নির্দশনগুলো খুঁজে পাওয়া যায়।
ইতিহাসবিদদের মতে, প্রাপ্ত রত্নসম্ভার ও দেহাবশেষ, যা তখনো পর্যন্ত অক্ষত ছিল, সেগুলো গৌতম বুদ্ধের শাক্য বংশের এবং বিশ্বব্যাপী বৌদ্ধদের ঐতিহ্য। হাড়ের নিদর্শনগুলো থাইল্যান্ড, শ্রীলঙ্কা ও মিয়ানমারের মতো দেশগুলোতে বিতরণ করা হয়েছে। এসব দেশে এখনো সেগুলোর পূজা করা হয়।

আমাদের দেশের রাজনীতি নিয়ে যাঁরা ভাবেন, কথা বলেন, দুটি বড় দলের বিরোধ ও অনৈক্য নিয়ে যাঁরা বিভিন্ন সময় মন্তব্য করেন, তাঁরা অধিকাংশ সময় গড়পড়তা কথা বলেন। দেশে বিভেদ ও অনৈক্যের যে রাজনীতি চলছে, তার জন্য প্রধান বড় দুই দলকেই যাঁরা সমানভাবে দায়ী করেন, তাঁরাও আসলে এই বিভেদ জিইয়ে রাখার পক্ষে। ক্ষত নিরাময়ের ক্ষ
২১ আগস্ট ২০২২
গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।
২২ দিন আগে
‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর...
১২ জুন ২০২৫
ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।
১৯ মে ২০২৫