Ajker Patrika

মধ্যপ্রাচ্য থেকে কেন এত মানুষ পালাচ্ছে

আজকের পত্রিকা ডেস্ক
আপডেট : ১৪ ডিসেম্বর ২০২১, ১১: ৫৩
মধ্যপ্রাচ্য থেকে কেন এত মানুষ পালাচ্ছে

সম্প্রতি পোলিশ-বেলারুশ সীমান্তের একটি অস্থায়ী অভিবাসী কেন্দ্রে স্থানান্তরিত হয়েছে চার বছর বয়সী আজি। তীব্র শীতের মধ্যে মায়ের হাত ধরে থাকা শিশুটি সাবধানে নিজের পা টেনে নিচ্ছিল সহায়তা হিসেবে পাওয়া কম্বলের নিচে। পায়ে স্প্লিন্ট লাগানো চওড়া চোখের হাস্যোজ্জ্বল আজিকে দেখে বোঝা মুশকিল যে মাত্র কয়েক দিন আগেও তাঁর পরিবার মৃত্যুর মুখোমুখি হয়েছিল।

আজির মা ২৮ বছর বয়সী সোহান হুসেইন সংবাদমাদ্যম সিএনএনকে বলেন, ‘আমরা জার্মানিতে যেতে চাই, যাতে আজির পায়ের অপারেশন করাতে পারি। চিকিৎসকেরা বলেছেন, তার (আজি) বয়স পাঁচ বছর হওয়ার আগেই এই অপারেশন করা প্রয়োজন।’

ইউরোপে আশ্রয় পাওয়ার আশায় সম্প্রতি বেলারুশ থেকে পোল্যান্ডে পাড়ি জমিয়েছেন এমন শত শত অভিবাসী। এর মধ্যে যাত্রাপথেই খাবার সংকটসহ নানা কারণে মারা গেছেন অনেকে এবং এখনো অমানবিক পরিস্থিতির মধ্যে রয়েছে হাজারো মানুষ। তবে ভাগ্যক্রমে অক্ষত অবস্থায় প্রাণে বেঁচেছেন আজি ও তাঁর বাবা-মা, ফিরে গেছেন নিজ শহর ইরাকের ইব্রিলে।

দুর্দশার চক্র ভাঙা

মধ্যপ্রাচ্য এবং উত্তর আফ্রিকাজুড়ে দেশত্যাগের হিড়িক পড়েছে। সিরিয়া, লিবিয়া, ইয়েমেন এবং ইরাক, সহিংসতা এসব দেশকে নিয়ে গেছে অর্থনৈতিক ধ্বংসের পথে। পরবর্তীতে যা ছাড়িয়ে গেছে সীমান্তের গণ্ডিও। করোনা মহামারি, শরণার্থীদের চাপ এবং রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতার সম্মিলিত প্রভাব পড়েছে আঞ্চলিক অর্থনীতিতে।

সাম্প্রতিক এক সমীক্ষায় দেখা গেছে, ২০ কোটি আরব যুবকের প্রতি তিনজনের একজন দেশত্যাগের বিষয়টি বিবেচনা করছেন। এ সমস্যা সবচেয়ে বেশি সংঘাত-পরবর্তী অঞ্চলগুলোতে, যেখানে অর্থনৈতিক মন্দা দেখা দেওয়ার পাশপাশি দুর্নীতিও বেড়েছে।

জাতিসংঘের উন্নয়ন কর্মসূচি বলছে, সিরিয়ায় দারিদ্র্যের হার এখন প্রায় ৯০ শতাংশ, যা ২০১৯ সালে ছিল ৫০-৬০ শতাংশ। এ ছাড়া ২০১৯ সালে দেশটিতে খাদ্য অনিরাপত্তায় ছিলেন ৭৯ লাখ মানুষ। ২০২০ সালে যা ১ কোটি ২০ লাখ ছাড়িয়েছে।

সিরিয়ায় ইউএনডিপির আবাসিক প্রতিনিধি রামলা খালিদি সিএনএনকে বলেন, ‘সংঘাত, রাজনৈতিক অস্থিরতা, কর্মসংস্থানের অভাবসহ নানা কারণে পরিস্থিতির শিকার হয়ে সিরিয়ার অনেক দক্ষ কর্মীকে দেশ ছাড়তে হয়েছে। এর ফলে অর্থনৈতিক দুর্দশা আরও গভীর হচ্ছে।’

একই পরিস্থিতি পার্শ্ববর্তী ইরাকেও। জঙ্গি গোষ্ঠী আইএসের সঙ্গে সরকারি বাহিনীর যুদ্ধ দেশটিকে একরকম অর্থনৈতিকভাবে পঙ্গু করে দিয়েছে। মিডল ইস্ট ইনস্টিটিউটের অনাবাসিক শিক্ষক হাফসা হালাওয়া ইরাকের আধা-স্বায়ত্তশাসিত কুর্দিস্তান অঞ্চলের প্রসঙ্গ টেনে বলেন, ‘বাস্তবতা হলো, এখানে (ইরাক) সরকারি পরিষেবাগুলো ভেঙে পড়েছে, সুযোগ শূন্যের কোঠায়। আর দুর্নীতি, স্বজনপ্রীতি ও সহিংসতা চলমান এবং নিয়মিত। এ অবস্থায় ২১-২২ বছর বয়সী কেউ যদি বলে আমি আমার বাবা-মায়ের মতো এখানে থাকতে পারব না, আমাকে চক্র ভাঙতে হবে বা ভবিষ্যতের জন্য আমাকে কিছু পরিবর্তন করতে হবে; তাহলে ভুল কোথায়?’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত