Ajker Patrika

জনবসতি এলাকায় ২০ ইটভাটা

ডুমুরিয়া প্রতিনিধি
আপডেট : ০৫ ফেব্রুয়ারি ২০২২, ১৩: ৩৮
Thumbnail image

ডুমুরিয়ার ধামালিয়া ইউনিয়নের চেঁচুড়ি কেবি মাধ্যমিক বিদ্যালয় ও চেঁচুড়ি কেবি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ঘেঁষে ও পাড়া-মহল্লার মধ্যে গড়ে তোলা হয়েছে ২০টি অবৈধ মিনি ইটভাটা ও কয়লার কারখানা। এসব ভাটা ও কয়লার কারখানার নেই কোনো লাইসেন্স ও পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র।

এসব ইটভাটার কালো ধোঁয়ায় দুই বিদ্যালয়ের প্রায় ৬০০ শিক্ষার্থী, শিক্ষক কর্মচারীসহ সাধারণ মানুষেরা সর্দি-কাশি, হাঁপানি ও শ্বাসকষ্টসহ নানা রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন। ফলে সাধারণ মানুষেরা প্রায় মৃত্যুঝুঁকি নিয়ে বসবাস করছেন। স্থানীয়দের দাবি এসব কয়লা কারখানা ও ভাটা দ্রুত উচ্ছেদ করা হোক।

সরেজমিনে জানা গেছে, ডুমুরিয়া, অভয়নগর ও মনিরামপুর উপজেলার বিভিন্ন এলাকা থেকে সংগ্রহ করা হয় নারকেল-খেজুর গাছের গুঁড়ি ও বিভিন্ন বনজ বৃক্ষের কাঠ। বন উজাড় করে অসাধু এসব ব্যবসায়ীরা রমরমাভাবে অব্যাহত রেখেছেন অবৈধ ইটভাটার কার্যক্রম। এর ফলে একদিকে যেমন উজাড় হচ্ছে বন। অপরদিকে হুমকির মুখে পড়ছে জীববৈচিত্র্য।

সরেজমিনে আরও জানা গেছে, ফুলতলা উপজেলার সিদ্দিপাশা আমতলা এলাকার বাসিন্দা জনৈক তছলিম মিয়া ও বাগেরহাটের মোংলা থানাধীন আবুল কালাম ডুমুরিয়া উপজেলার ধামালিয়া ইউনিয়নের চেঁচুড়ি গ্রামের নির্জন বাগানের মধ্যে জমি লিজ নিয়ে অবৈধভাবে কয়লার কারখানা তৈরি করেছেন। সেখানে কাঠ পুড়িয়ে কয়লা তৈরি করা হচ্ছে। আর কয়লা তৈরিতে ব্যবহার করা হচ্ছে বিপুল পরিমাণ কাঠ। বৈধ কোনো কাগজপত্র ছাড়াই চলছে তাঁদের কারখানা।

অপরদিকে পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র ও সংশ্লিষ্ট দপ্তরের অনুমতি ব্যতিরেকে ২০টির অধিক অবৈধ মিনি ইটভাটা স্থাপন করা হয়েছে। স্থানীয়ভাবে যাকে বলা হয় ইটের পাঁজা। এসব ভাটায় বিপুল পরিমাণ কাঠ পুড়িয়ে তৈরি করা হচ্ছে ইট। ডুমুরিয়া ধামালিয়া ইউনিয়নের চেঁচুড়ি এলাকার অসাধু ব্যবসায়ীরা অধিক মুনাফা লাভের আশায় বসত ঘরবাড়ি ও একটি প্রাইমারি স্কুল এবং একটি হাইস্কুলসহ দুইটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের নিকটে পাল্লা দিয়ে ইট তৈরি ও পোড়ানোর কাজ চলিয়ে যাচ্ছেন।

কয়লার বিপরীতে ইট পোড়াতে ব্যবহার করা হচ্ছে নারকেল ও খেজুর কাঠসহ নানা শ্রেণির বনজ বৃক্ষের কাঠ। আর কাঠ পোড়ানোর কালো ধোঁয়ায় জনবসতি ওই এলাকার পরিবেশ রয়েছে মারাত্মক হুমকির মুখে।

চেঁচুড়ি এলাকার মিলন পাল, শুভংকর পাল, নকুল পাল, অসিত পাল, বাসুদেব পাল, মোহন পাল, শেখর চন্দ্র পাল, সরুকোদা পাল, ভোলা পাল, অসিম পাল, সুবল পাল, ভাস্কার পাল, তাপস পাল, শশধর পাল, গৌতম পাল, পঙ্কজ পাল, সন্তোষ পাল ও সুবোল পালসহ ২০ জনের অধিক অবৈধভাবে ইট ভাটা গড়ে তুলেছেন।

ভুক্তভোগী এলাকাবাসী বলেন, বেআইনিভাবে ফুলতলা এলাকার জনৈক তছমিল মিয়া অবৈধ কয়লার কারখানা গড়ে তুলেছেন। দুই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রধান শিক্ষকসহ এলাকাবাসী জানান। দীর্ঘদিন ধরে এসব ব্যক্তি কাঠ পুড়িয়ে ইটভাটা ও কয়লার কারখানা পরিচালনা করে আসছে। ফলে কাঠ পোড়ানোর কালো ধোঁয়ায় লোকালয়ের সাধারণ মানুষ রয়েছে স্বাস্থ্যঝুঁকিতে। পরিবেশ দূষণমুক্ত রাখতে এলাকাবাসী প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে ধামালিয়া ইউনিয়ন পরিষদ সচিব আবদুল হালিম শিকদার বলেন, ‘এসব ভাটার মালিকেরা কোনোদিনও ইউনিয়ন পরিষদ থেকে কোনো ট্রেড লাইসেন্স বা ছাড়পত্র নেননি।’

অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে ইটভাটা মালিক নকুল পাল ও মহাদেব পাল বলেন, ‘পূর্ব পুরুষ হাঁড়ি, কলসি, পাতিলসহ অন্যান্য তৈজসপত্র তৈরি করত। দিন বদল হয়েছে তাই এখন ইট পোড়ানোর কাজ করছি।’

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে ডুমুরিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. আবদুল ওয়াদুদ বলেন, ‘ইটভাটা ও কয়লার কারখানায় কাঠ পোড়ানো সম্পূর্ণ বেআইনি। অবৈধভাবে পরিচালিত ইটভাটা ও কয়লার কারখানায় দ্রুতই ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করা হবে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত