২০ ওভারেও কি ঘুচবে বাংলাদেশের আক্ষেপ

মেঘাচ্ছন্ন আকাশ। নেপিয়ারের নির্জন রাস্তায় চনমনে মেজাজে ঘুরে বেড়াচ্ছেন নাজমুল হোসেন শান্ত-মেহেদী হাসান মিরাজরা। তাঁদের গায়ের হালকা পোশাক ধারণা দেয়, সেখানকার ঠান্ডার তীব্রতা গতকাল একটু কমই ছিল। সিরিজ হারলেও নেপিয়ারে শেষ ওয়ানডেতে ২০৯ বল হাতে রেখে ৯ উইকেটের মধুর জয়—নিঃসন্দেহে স্বস্তির উষ্ণতা শান্তর দলে। 

ম্যাকলিন পার্কে নিউজিল্যান্ডের মাঠে সেটি ছিল বাংলাদেশের প্রথম ওয়ানডে জয়। গতকাল নিউজিল্যান্ডের ক্রিকেটাররা ছিলেন বড়দিনের উৎসবে। তাঁদের বড় উৎসবের দিনে বাংলাদেশ টিম ম্যানেজমেন্টও ক্রিকেটারদের দিয়েছে ছুটি। ছুটির দিনে টিম ম্যানেজমেন্ট ভারতীয় এক রেস্তোরাঁয় বিশেষ নৈশভোজের আয়োজনও করেছিল ক্রিকেটারদের জন্য। 

শুধু ওয়ানডে দলে থাকা মুশফিকুর রহিম, এনামুল হক বিজয়, তানজিদ হাসান তামিম ও রাকিবুল হাসানের গতকাল রাতেই দেশে এসে পৌঁছানোর কথা। শেষটা জয় দিয়ে হলেও ২০২৩ সালে ওয়ানডে সংস্করণে খুব ভালো না গেলেও টি-টোয়েন্টি সংস্করণে দারুণ এক বছরই পার করছে বাংলাদেশ দল।

২০ ওভারের ম্যাচে সব সময়ই পিছিয়ে থাকার ‘অপবাদ’ শোনে বাংলাদেশ দল। তাদের অনেক পরে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অভিষেক হওয়া আফগানিস্তানও অনায়াসে এই ফরম্যাটে বাংলাদেশকে হারিয়ে দেয়। তবে দেড় বছর ধরে টি-টোয়েন্টি সংস্করণে একেবারে ব্যতিক্রম বাংলাদেশ দল। বিদায়ী বছরে ৩টি টি-টোয়েন্টি সিরিজ খেলে সব সিরিজেই জয়। টানা জিতেছে ৪টি সিরিজ। নিজেদের শেষ ১০ টি-টোয়েন্টির মধ্যে ৯টিই জিতেছে বাংলাদেশ দল। এই বছর নিজেদের মাঠে ইংল্যান্ডের কঠিন দলকে ৩-০ ব্যবধানে ধবলধোলাই, আফগানিস্তানকে ২-০ এবং আয়ারল্যান্ডকে ২-১ ব্যবধানে সিরিজ হারিয়েছে তারা। 

আর প্রতিপক্ষের নাম যদি নিউজিল্যান্ড হয়, সেখানেও অনুপ্রেরণাদায়ক পরিসংখ্যান আছে বাংলাদেশের। নিউজিল্যান্ড বাংলাদেশের বিপক্ষে সর্বশেষ টি-টোয়েন্টি সিরিজে হেরেছিল ৩-২ ব্যবধানে। অবশ্য ২০২১ সালের সেই সিরিজ জয় ছিল পুরোই মিরপুরের উইকেটের সহায়তায়। তবে নিউজিল্যান্ডের মাঠে কখনোই টি-টোয়েন্টি ম্যাচ জেতেনি বাংলাদেশ। গত ১৩ বছরে ৯টি টি-টোয়েন্টি খেলে প্রতিটিতেই হার সঙ্গী হয়েছে বাংলাদেশের।  

অবশ্য এখন এসব ‘ডেডলক’ ভাঙার অভ্যাস তো শান্তদের হয়েই গেছে। গত বছর কিউইদের মাঠে প্রথম টেস্ট জয়ের (মাউন্ট মঙ্গানুই টেস্ট) স্বাদ পেয়েছে বাংলাদেশ। এবার নেপিয়ারের ম্যাকলিন পার্কে পেল নিউজিল্যান্ডের মাঠে প্রথম ওয়ানডে জয়। সেটিও কী দাপুটে ক্রিকেট খেলে। গত দুই বছরে নিউজিল্যান্ডেই কেন যেন বাংলাদেশ ক্রিকেটের তরুণোদয় হচ্ছে। সেখানে নতুন দিনের বার্তা মিলছে।

বাংলাদেশের সুযোগ আছে নেপিয়ারের ম্যাকলিন পার্কেই প্রথমবারের মতো টি-টোয়েন্টি জিতে আরেকটি ইতিহাস গড়ার। ২০১৭ ও ২০২১ সালে এ মাঠে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে দুটি টি-টোয়েন্টি খেলে হেরেছে তারা। দ্বিতীয় সারির দল নিয়ে খেললেও ওয়ানডে সিরিজ ঠিকই জিতে নিয়েছে নিউজিল্যান্ড। কিন্তু টি-টোয়েন্টি সিরিজে বেশ কঠিন দল তারা। দলে আছেন টিম সাউদি, ফিন অ্যালেন, গ্লেন ফিলিপস জিমি নিশাম, মিচেল স্যান্টানাররা। ২০ ওভারের ক্রিকেটে আরও কঠিন পরীক্ষা অপেক্ষা করছে বাংলাদেশের সামনে। 

অধিনায়ক শান্ত অবশ্য আগের জয় দলকে অনুপ্রেরণা জোগাবে, এসব তত্ত্বে বিশ্বাসী নন। দলের প্রস্তুতি আর নির্দিষ্ট দিনে ভালো খেলার ওপর আস্থা তাঁর। শেষ ওয়ানডের জেতার পরই এ কথা বলেছিলেন তিনি, ‘মোটিভেশন দিয়ে খুব বেশি ম্যাচ জেতা সম্ভব না। আমরা কত ভালো প্রস্তুতি নিচ্ছি, জিততে চাই কি না, এটাই গুরুত্বপূর্ণ।’

শান্তর মতে, নিউজিল্যান্ডের মাঠে জেতা সম্ভব, তাঁরা সেটি করে দেখিয়েছেন। টি-টোয়েন্টি সিরিজেও দলের সামর্থ্যে বিশ্বাস তাঁর, ‘আমরা এখানে এসেও জিততে পারি, তা নিজের চোখে দেখলাম। যদি এই বিশ্বাসটা নিয়ে টি-টোয়েন্টিতে যাই, প্রস্তুতি নিই, পরিকল্পনা করি, তাহলে এখান থেকেও জেতা সম্ভব। এই দলের সামর্থ্য আছে, ক্ষুধা আছে এখানে এসে ম্যাচ ও সিরিজ জেতার।’