Ajker Patrika

পশুর হাটের ক্ষত খেলার মাঠে

সাইফুল মাসুম, ঢাকা
আপডেট : ১৬ জুলাই ২০২২, ১৩: ২১
পশুর হাটের ক্ষত খেলার মাঠে

কয়েক দিন আগেও মাঠগুলোতে খেলায় মেতে উঠত এলাকার শিশু-কিশোররা। ঈদের আগে এসব মাঠে বসানো হয়েছিল পশুর হাট। এখন হাট না থাকলেও হাটের ক্ষতচিহ্ন রয়ে গেছে মাঠজুড়ে। প্রায় সব জায়গায় তাঁবু ও গরুর খুঁটির গর্ত। পড়ে আছে ইটের ভাঙা টুকরো আর বাঁশের খুঁটি।

ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন (ডিএনসিসি) ও ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) যেসব মাঠে পশুর হাট বসেছে সেগুলোর চিত্র এমনই।

গতকাল শুক্রবার রাজধানীর শাহজাহানপুর রেলওয়ে খেলার মাঠে গিয়ে দেখা যায়, মাঠের মধ্য দিয়ে শিশু-কিশোররা হেঁটে গেলেও রয়েছে দুর্ঘটনার শঙ্কা।

শাহজাহানপুর আইডিয়াল স্কুলের শিক্ষার্থী নাঈমুল ইসলাম বলে, ‘হাট বসার পর চার-পাঁচ মাস অতিবাহিত হলেও মাঠ ঠিক হয় না। পরে খেলার জন্য মাঠটিকে নিজেদেরই ঠিক করে নিতে হয়।’

মাঠটি ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ১১ নম্বর ওয়ার্ডের আওতায় পড়েছে।

ওয়ার্ড কাউন্সিলর মির্জা আসলাম আসিফ বলেন, ‘কিছু বাঁশ ও খড় রয়ে গেছে। কিছু গর্ত আছে মাঠে। এগুলো আমরা ভরাট করে দেব। কয়েক দিনের মধ্যে মাঠ আগের মতো খেলার উপযোগী হয়ে যাবে।’

তেজগাঁওয়ের পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের খেলার মাঠও এবার পশুর হাটের জন্য ইজারা দিয়েছিল ডিএনসিসি।

গতকাল গিয়ে দেখা যায়, মাঠের একাংশে অনেক পরিত্যক্ত গাড়ি পার্কিং করা রয়েছে। মাঠের উত্তর পাশে দেয়াল ভেঙে করা হয়েছিল পশুর হাটের গেট। সেই দেয়াল এখনো ভাঙা পড়ে আছে। মাঠে ইট, বাঁশ ও পশুবর্জ্য ছড়িয়ে-ছিটিয়ে রয়েছে।

তেজগাঁও পলিটেকনিক পশুর হাটের ইজারাদার মোহাম্মদ হোসেন খান বলেন, ‘সিটি করপোরেশন ইজারা দেওয়ার সময় শর্ত দিয়েছিল হাট শেষে মাঠ যেন আগের অবস্থায় ফিরিয়ে দিই। আমরা মাঠ ঠিক করতে কাজ করছি।’

দুই সিটি করপোরেশনের সূত্র জানিয়েছে, ডিএনসিসির চেয়ে ডিএসসিসিতে খেলার মাঠে পশুর হাটের সংখ্যা বেশি। এবার ঢাকার দুই সিটিতে গাবতলী ও সারুলিয়া এই দুটি স্থায়ী হাট ছাড়াও অস্থায়ী পশুর হাট ছিল ১৯টি। এর মধ্যে ডিএনসিসিতে অস্থায়ী হাটের সংখ্যা ৯টি আর ডিএসসিসিতে ছিল ১০টি।

ডিএনসিসির ৯টি অস্থায়ী পশুর হাটের মধ্যে একটি ছিল খেলার মাঠ। এটি হলো তেজগাঁও পলিটেকনিক মাঠ।

অন্যদিকে ডিএসসিসির ১০টি অস্থায়ী হাটের মধ্যে চারটিই ছিল খেলার মাঠ।

হাটগুলো হলো দনিয়া কলেজ মাঠ, উত্তর শাহজাহানপুর রেলওয়ে কলোনি খেলার মাঠ, লালবাগের রহমতগঞ্জ খেলার মাঠ ও ব্রাদার্স ক্লাব মাঠ।

ডিএনসিসির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) সেলিম রেজা বলেন, ‘মাঠকে যাতে খেলার উপযোগী করে দেয়, এর জন্য ইজারাদারকে নির্দেশ দেব।’

ডিএসসিসির সিইও ফরিদ আহাম্মদ বলেন, ‘অধিকাংশ হাটে ডিএসসিসি নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় ময়লা অপসারণ করেছে। ইজারার শর্ত ছিল হাট শেষে বর্জ্য অপসারণ করা ও মাঠ খেলার উপযোগী করা। ইজারাদারেরা তা করেননি। আমরা তাঁদের জামানত বাজেয়াপ্ত করব। আর মাঠগুলোর পরিস্থিতি দেখে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেব।’

বাণিজ্যিক কারণে খেলার মাঠকে পশুর হাট হিসেবে ব্যবহার করা উচিত নয় বলে মনে করেন নগর পরিকল্পনাবিদ আদিল মোহাম্মদ খান।

আদিল মোহাম্মদ খান বলেন, খেলার মাঠে পশুর হাট বসার আগে ও পরে এলাকাবাসী খেলার মাঠের সুবিধা থেকে বঞ্চিত হয়। এ সময় মাঠের অনেক ক্ষতি হয়। শিশু-কিশোরদের মানসিক বিকাশের জন্য খুবই দরকারি মাঠের ওপর এমন অত্যাচার বন্ধ করতে হবে। মাঠগুলোকে পশুর হাটসহ অন্য বাণিজ্যিক কাজে ব্যবহার থেকে বিরত থাকতে হবে। হাটের জন্য সিটি করপোরেশনকে বিকল্প জায়গা তৈরি করতে হবে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত