Ajker Patrika

নাব্যতা হারাচ্ছে কপোতাক্ষ

আবুল কাসেম, সাতক্ষীরা
আপডেট : ২৫ ফেব্রুয়ারি ২০২২, ১০: ১১
নাব্যতা হারাচ্ছে কপোতাক্ষ

খননের মাত্র চার বছরের মধ্যে নাব্যতা হারাতে বসেছে কপোতাক্ষ নদ। নদের পাড় দখল করে সবজি ও ধান চাষ ছাড়াও নানা স্থাপনা নির্মাণ করা হচ্ছে। নেট-পাটা দিয়ে মাছ ধরাসহ দখলদারত্বের কারণে স্রোত কমতে শুরু করেছে এ নদে। এ ছাড়া পলিতে ভরাট হয়ে যাচ্ছে নদের তলদেশ। ফলে আবারও নদতীরবর্তী এলাকা জলাবদ্ধ হয়ে পড়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে।

দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের তিন জেলার প্রায় ৫০ লাখ মানুষের জীবন-জীবিকা কপোতাক্ষ নদের ওপর নির্ভরশীল। একসময়ের প্রমত্ত এ নদ ২০০০ সালের পর স্রোতহীন হয়ে পড়ে। ফলে স্থায়ী জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয় যশোর জেলার মনিরামপুর, কেশবপুর, সাতক্ষীরার তালা ও পাইকগাছা এবং খুলনার কয়রা উপজেলায়।

এতে সীমাহীন দুর্ভোগে পড়ে এসব উপজেলার ৬ লক্ষাধিক মানুষ। এরপর কপোতাক্ষ অববাহিকার মানুষের দীর্ঘদিনের আন্দোলন-সংগ্রামের পর ২০১১ সালে কপোতাক্ষ নদে খনন শুরু হয়।

২০১১ সালের জুলাই মাসে একনেকের বৈঠকে কপোতাক্ষ নদ খননের জন্য ২৬১ কোটি ৫৪ লাখ ৮৩ হাজার টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়। চার বছর মেয়াদি এই প্রকল্পের মেয়াদ ২০১৫ সালের জুন পর্যন্ত হলেও খননকাজ শেষ হয় ২০১৮ সালের জুনে। কিন্তু খননের মাত্র চার বছরের মধ্যে কপোতাক্ষ আবারও তার আগের অবস্থায় ফিরতে শুরু করেছে।

 স্থানীয়দের অভিযোগ, কপোতাক্ষের দুই তীর এখন ভূমিদস্যুদের দখলে। কেউ সবজি ও বোরো ধান চাষ করছেন, কেউবা স্থাপনা তৈরি করছেন। আবার কেউবা নেট-পাটা দিয়ে মাছ ধরার কারণে পলি জমে ভরাট হয়ে যাচ্ছে কপোতাক্ষ নদ।

নদের তীরে সবজি চাষ করছেন তালা উপজেলার চরগ্রাম গ্রামের তারাপদ দাস। নদের তীরে সবজি চাষ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘এটা আমাগির বাপুতি জমি। ভাঙতি ভাঙতি একিন আইছে। নিজেগের জমি, তাই চাষবাস করি।’

সেখানে নেট-পাটা দিয়ে মাছ ধরেন চরগ্রামের অলোক দাস। এ বিষয়ে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি বলেন, ‘সব সময় ধরিনি। কাজকাম যহন কম থাকে, সেই টাইমে আসি। খাবার জন্যি কডা মাছ হলিই চলে।’

নদের নাব্যতা কমে যাওয়া প্রসঙ্গে জেলা পানি কমিটির সাধারণ সম্পাদক অধ্যক্ষ আশেক-ই-এলাহী জানান, কপোতাক্ষ নদ খননের সময় এর সীমানা নির্ধারণ করা হয়নি। সে জন্য কপোতাক্ষের পাশের জমির মালিকেরা তা দখল করে নিচ্ছেন। সরকারের উচিত সীমানা নির্ধারণ করা। তাহলে নদী দখল হবে না। পাশাপাশি পলি জমে যাতে নদের তলদেশ ভরাট না হয়, সে জন্য তিনি টিআরএমের (টাইডাল রিভারাইন ম্যানেজমেন্ট) ওপর জোর দেন।

এ ব্যাপারে সাতক্ষীরা পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী আবুল খায়ের বলেন, সমীক্ষা করে ড্রেজিংয়ের জন্য প্রকল্প প্রস্তুত করে মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হবে। অনুমোদিত হলে সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

এ বিষয়ে সাতক্ষীরার জেলা প্রশাসক হুমায়ুন কবির বলেন, কপোতাক্ষ মাইকেল মধুসূদন দত্তের স্মৃতিবিজড়িত নদ। নদ দখলের যে অভিযোগ উঠেছে, তা খতিয়ে দেখে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এ সময় নদের পাড়ের দখলদারদের উচ্ছেদে অভিযান চালানোর আশ্বাস দেন তিনি।

পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্রে জানা যায়, যশোরের চৌগাছার ভৈরব নদ থেকে কপোতাক্ষ নদের উৎপত্তি। ১৮০ কিলোমিটার দীর্ঘ নদটি সাতক্ষীরার কলারোয়া ও তালা উপজেলা হয়ে খুলনার কয়রার মধ্য দিয়ে আবারও সাতক্ষীরার খোলপেটুয়া নদীতে মিশেছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত