এ কে এম শামসুদ্দিন

আমরা বাল্যকাল থেকেই শুনে এসেছি, শিক্ষক হলেন জাতির আলোকবর্তিকাবাহী এবং মানবজাতির ভবিষ্যৎ রূপকার। ঘুণে ধরা সমাজব্যবস্থা ভেঙে শিক্ষকেরাই পারেন নতুন সমাজ গড়তে। শিক্ষকদের বলা হয় জীবনের চরিত্র গঠনের প্রথম গুরু, মানুষ গড়ার শ্রেষ্ঠ কারিগর। তাঁদের অসাধারণ পাণ্ডিত্য, চারিত্রিক মাধুর্য ও স্নেহময় মধুর ব্যবহারের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের কাছে হয়ে ওঠেন আদর্শের প্রতীক। শিক্ষকেরাই জাতির বিবেক বলে বিবেচিত হন। কিন্তু কয়েক বছর ধরে বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে কিছু শিক্ষকের চরিত্র স্খলনের যে কিচ্ছা-কাহিনি শোনা যাচ্ছে, তা গোটা শিক্ষকসমাজের জন্য লজ্জার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। এসব ঘটনা এত দিনের চেনা শিক্ষকদের আদর্শগত চরিত্রের ওপর কলঙ্কের কালিমা লেপন করে দিচ্ছে। দেশের সর্বোচ্চ বিদ্যাপীঠ—বিশ্ববিদ্যালয়গুলোয় একের পর এক যে ঘটনা ঘটছে, তাতে শুধু নারী শিক্ষার্থীরাই নন, কখনো কখনো নারী শিক্ষকেরাও যৌন হয়রানির শিকার হচ্ছেন। গত দুই বছরে দেশের শীর্ষ ৫ বিশ্ববিদ্যালয়ে ২৭টি যৌন হয়রানির ঘটনার খবর পাওয়া গেছে। কিন্তু এমন অনেক ঘটনা আছে, যা সবার দৃষ্টির আড়ালেই থেকে যায়। হয়রানি কিংবা কলঙ্কের হাত থেকে বাঁচার জন্য ভুক্তভোগীরা অনেক ঘটনাই গোপন রাখেন। আবার অনেক ক্ষেত্রে দেখা গেছে, অভিযোগ করার পরও বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন তা আড়াল করে রাখে। সম্প্রতি জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ফাইরুজ সাদাফ অবন্তিকার আত্মহত্যা ও কাজী ফারজানা মীমের ধারাবাহিক হয়রানির ঘটনা উদাহরণ হিসেবে উল্লেখ করা যায়।
অবন্তিকা ও মীম দুজনই বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে অভিযোগ করে বিচার পাওয়া থেকে বঞ্চিত হয়েছেন। ফলে অবন্তিকা আত্মহত্যার পথ বেছে নিয়েছেন এবং মীম জীবনের নিরাপত্তা চেয়ে ডিবির আশ্রয় চেয়েছেন। অবন্তিকার অভিযোগ, তাঁর যৌন হেনস্তাকারী সহপাঠী এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন সহকারী প্রক্টরের বিরুদ্ধে। ওদিকে মীমের অভিযোগ, তাঁর শিক্ষক তাঁকে যৌন হয়রানি করেছেন। অভিযোগ দেওয়ায় তিনি নানাভাবে হেনস্তার শিকার হয়েছেন। ভীতসন্ত্রস্ত এই শিক্ষার্থী বলেন, অভিযোগ দেওয়ার পর তাঁকে অন্যায়ভাবে মৌখিক পরীক্ষায় অকৃতকার্য করা হয়েছে। তিনি অভিযোগ দেওয়ার পর বিভাগীয় প্রধান যৌন নিপীড়কের পক্ষে অবস্থান নিয়েছেন এবং তিনি মীমকে সেই অভিযোগ তুলে নিতে নানাভাবে চাপ দিতে থাকেন। তাতে রাজি না হওয়ায়, বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বহিষ্কার করা হবে বলে ভয় দেখানো হয়। শুধু তা-ই নয়, তাঁর জীবনহানির হুমকিও দেওয়া হয়েছে বলে মীমের অভিযোগ।
অবন্তিকার আত্মহত্যার ঘটনার মাধ্যমে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অফিসে শিক্ষার্থীদের বিভিন্ন হয়রানির গুরুত্বপূর্ণ তথ্য বেরিয়ে এসেছে। এসব তথ্য ধারাবাহিকভাবেই পত্রপত্রিকায় প্রতিবেদন আকারে প্রকাশিত হয়েছে। প্রতিবেদনে প্রক্টর অফিসের বিরুদ্ধে শিক্ষার্থীদের শারীরিক ও মানসিক হয়রানির বিস্তর অভিযোগের কথা উল্লেখ আছে। এই চিত্র শুধু জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের নয়, দেশের বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষকদের বিরুদ্ধে এমন আরও অনেক অভিযোগ আছে। দেখা গেছে, শিক্ষক নামের এসব দুশ্চরিত্রের ব্যক্তি প্রথমে পছন্দের নারী শিক্ষার্থীদের টার্গেট করে অনৈতিক প্রস্তাব দেন। প্রথমে বিভিন্ন ছলচাতুরীর মাধ্যমে ওই শিক্ষার্থীকে তাঁর প্রস্তাবে রাজি করানোর চেষ্টা করেন। রাজি না হলে ভয়ভীতি দেখান, পরীক্ষার খাতায় কম নম্বর দেন। তারপরও রাজি না হলে ফেল করে দেওয়া হয়। এমন পরিস্থিতিতে কোনো কোনো শিক্ষার্থী বাধ্য হন শিক্ষকের অনৈতিক প্রস্তাবে আত্মসমর্পণ করতে। অনেকে সে পথে পা না বাড়িয়ে প্রতিবাদী হন, তারপরও কর্তৃপক্ষের সহযোগিতা না পেলে অনেকে আত্মহত্যার পথ বেছে নেন।
শিক্ষক ও শিক্ষার্থী সম্পর্ক হবে বন্ধুর মতো। শিক্ষার্থীর প্রতি শিক্ষকের সহমর্মিতার মনোভাব থাকবে। তাঁদের মধ্যে একধরনের আত্মিক বন্ধন থাকতে হবে। শিক্ষককে হতে হবে সুব্যক্তিত্বের অধিকারী। শিক্ষার্থীর সঙ্গে তাঁর আচরণ হবে প্রীতি ও সৌহার্দ্যপূর্ণ। শিক্ষকও শিক্ষার্থীর সঙ্গে স্বাভাবিকভাবে মেলামেশা করবেন। তাঁর ব্যক্তিত্বের মাধুর্যে যেন শিক্ষার্থী সহজেই আকৃষ্ট হন। তিনি হবেন সুবিবেচক, বিচক্ষণ ও পথপ্রদর্শক। একজন শিক্ষক শিক্ষার্থীর কাছে প্রথমেই শিক্ষক হবেন এবং শেষেও তিনি শিক্ষকই থাকবেন। এ দেশের সমাজ সব সময়ই একজন শিক্ষককে শিক্ষার্থীর সহায়কের ভূমিকায় দেখতে চায়, নিপীড়কের ভূমিকায় নয়। শিক্ষক সম্পর্কে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বলেছিলেন, ‘উত্তম শিক্ষক হবেন উত্তম ছাত্র, শিক্ষকের ছাত্রত্ব গ্রহণে তার মনের তারুণ্য নষ্ট হতে পারে না; বরং তিনি সব সময় ছাত্রের সুবিধা-অসুবিধা ভালোভাবে বুঝতে সক্ষম হবেন।’
২০০৯ সালে উচ্চ আদালত যৌন হয়রানি প্রতিরোধে সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসহ অন্যান্য সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে নারীকে অশালীন মন্তব্য, অঙ্গভঙ্গি, সাংকেতিক চিহ্ন প্রদর্শনসহ ইন্টারনেট ও মোবাইলে হয়রানিকে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনের ১০ (ক) ধারায় যৌন হয়রানির সংজ্ঞার আওতাভুক্ত করেন। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানকে ৬০ কর্মদিবসের মধ্যে যৌন হয়রানির বিচার শেষ করতে বলা হয়েছে। ব্যর্থ হলে প্রচলিত আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়ার কথাও বলা আছে। উচ্চ আদালত যৌন হয়রানি প্রতিরোধে অভিযোগ কমিটি গঠনের নির্দেশও দিয়েছিলেন। দেশের ৫৫ পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে ৪৫টি এবং ১১৪ বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে ৯৭টিতে এই কমিটি গঠন করা হয়েছে, যা সেল নামেও পরিচিত। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোয় এই সেল থাকা সত্ত্বেও ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীরা সুষ্ঠু বিচার পাওয়া থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। বিচার চাইতে গিয়েও নারী শিক্ষার্থীরা নিজ শিক্ষকদের কাছ থেকেই হয়রানির শিকার হচ্ছেন। দেখা যায়, যৌন হয়রানির বিচার যাঁরা করবেন, তাঁরাই অনেক সময় পক্ষপাতমূলক আচরণ করে থাকেন। এই সব শিক্ষক সহকর্মীদের রক্ষা করতে গিয়ে বিচারের নামে প্রহসন করে থাকেন। যখন এসব নিয়ে মিডিয়ায় হইচই পড়ে যায়, তখন কর্তৃপক্ষ কিছুটা নড়েচড়ে বসে। কিন্তু এ ধরনের কয়টি ঘটনা মিডিয়ায় আসে। ফলে অধিকাংশ ঘটনারই কোনো বিচার হয় না। তাৎক্ষণিক কিছু পদক্ষেপ নেওয়া হলেও ভুক্তভোগীরা অধিকাংশ সময়েই যৌন হয়রানির প্রত্যাশিত বিচার পান না। বিচারহীনতা যৌন হয়রানি বন্ধ না হওয়ার অন্যতম কারণ। আমাদের দেশে আইন থাকলেও এর প্রয়োগের অভাবে যৌন হয়রানি দিন দিন বেড়েই চলেছে।
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্তমান উপাচার্য অধ্যাপক সাদেকা হালিম এর আগে এই বিশ্ববিদ্যালয়ের যৌন নির্যাতন প্রতিরোধ কমিটির সদস্য ছিলেন। তিনিই একসময় বলেছিলেন, ‘স্কুল-কলেজ বা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে যৌন নির্যাতন নতুন কিছু নয়। আমরা এখনো যেসব পুরুষ সহকর্মীর সঙ্গে কাজ করছি বা যেসব পুরুষ শিক্ষক ছাত্রীদের পড়াচ্ছেন, তাঁদের অনেকেই ছাত্রীকে ছাত্রী হিসেবে দেখেন না। ফলে তাঁদের হাতে ছাত্রীরা যৌন নির্যাতনের শিকার হচ্ছেন।’ অথচ একজন শিক্ষককে হতে হবে উচ্চ নৈতিক মানসম্পন্ন। তাঁকে এ ধরনের মনোভাব পরিত্যাগ করতে হবে। তিনি থাকবেন সব প্রলোভনের ঊর্ধ্বে। এ জন্যই তিনি শিক্ষক। একসময় এ দেশের মুক্তি ও স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলন-সংগ্রামে শিক্ষার্থীরা যখন রাজপথে বেরিয়ে আসতেন, শিক্ষক সমাজ তখন শিক্ষার্থীদের পাশেই থাকতেন। এসব আন্দোলনে শিক্ষার্থীদের মুখে তখন তীব্র প্রতিবাদের স্লোগান শোনা গেছে। বর্তমানে ছাত্র-শিক্ষকের সম্পর্ক এত তলানিতে গিয়ে ঠেকেছে যে সেই শিক্ষার্থীরাই এখন শিক্ষকদের নামে কখনো ধর্ষক, কখনো নিপীড়ক, কখনো দালাল বলে স্লোগান দিচ্ছেন। অথচ ছাত্র ও শিক্ষকের সম্পর্ক এমন হওয়ার কথা ছিল না।
যৌন হয়রানির বিষয়ে সচেতনতামূলক কার্যকরী পদক্ষেপের অংশ হিসেবে বিশ্বের অন্যান্য দেশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোয় প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা থাকলেও আমাদের দেশে তা নেই। যৌন হয়রানির সংজ্ঞায়ন, তদন্তপদ্ধতি, শাস্তি এবং নারী নির্যাতন দমন আইন নিয়ে প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা ও প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা নেই। যৌন হয়রানি প্রতিরোধে জনসচেতনতা বৃদ্ধির জন্য কার্যকর কোনো উদ্যোগ কিংবা প্রচারণাও নেই। আমাদের দেশে সরকারি ও বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের চিত্র প্রায় একই। এ ব্যাপারে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের দায়িত্বও কম নয়। উচ্চ আদালতের বেঁধে দেওয়া নির্দেশনা বাস্তবায়নে ব্যর্থ হলে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে জবাবদিহির আওতায় আনতে হবে। যৌন হয়রানির শিকার শিক্ষার্থী যাতে অতি সহজেই কর্তৃপক্ষের কাছে নির্ভয়ে অভিযোগ করতে পারেন, সেই পরিবেশ সৃষ্টি করতে হবে। এ বিষয়ে ভুক্তভোগীর প্রতি অসহযোগিতার মনোভাব পরিলক্ষিত হলেও যথাযথ আইনানুগ ব্যবস্থা নিতে হবে। মনে রাখতে হবে, কতিপয় যৌন নিপীড়কের জন্য গোটা শিক্ষক সমাজকে কলঙ্কিত করার অধিকার কারও নেই। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের পবিত্রতা রক্ষা করার দায়িত্ব সবারই। তবে এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের দায়িত্ব আরও বেশি।
লেখক: অবসরপ্রাপ্ত ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ও কলাম লেখক

আমরা বাল্যকাল থেকেই শুনে এসেছি, শিক্ষক হলেন জাতির আলোকবর্তিকাবাহী এবং মানবজাতির ভবিষ্যৎ রূপকার। ঘুণে ধরা সমাজব্যবস্থা ভেঙে শিক্ষকেরাই পারেন নতুন সমাজ গড়তে। শিক্ষকদের বলা হয় জীবনের চরিত্র গঠনের প্রথম গুরু, মানুষ গড়ার শ্রেষ্ঠ কারিগর। তাঁদের অসাধারণ পাণ্ডিত্য, চারিত্রিক মাধুর্য ও স্নেহময় মধুর ব্যবহারের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের কাছে হয়ে ওঠেন আদর্শের প্রতীক। শিক্ষকেরাই জাতির বিবেক বলে বিবেচিত হন। কিন্তু কয়েক বছর ধরে বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে কিছু শিক্ষকের চরিত্র স্খলনের যে কিচ্ছা-কাহিনি শোনা যাচ্ছে, তা গোটা শিক্ষকসমাজের জন্য লজ্জার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। এসব ঘটনা এত দিনের চেনা শিক্ষকদের আদর্শগত চরিত্রের ওপর কলঙ্কের কালিমা লেপন করে দিচ্ছে। দেশের সর্বোচ্চ বিদ্যাপীঠ—বিশ্ববিদ্যালয়গুলোয় একের পর এক যে ঘটনা ঘটছে, তাতে শুধু নারী শিক্ষার্থীরাই নন, কখনো কখনো নারী শিক্ষকেরাও যৌন হয়রানির শিকার হচ্ছেন। গত দুই বছরে দেশের শীর্ষ ৫ বিশ্ববিদ্যালয়ে ২৭টি যৌন হয়রানির ঘটনার খবর পাওয়া গেছে। কিন্তু এমন অনেক ঘটনা আছে, যা সবার দৃষ্টির আড়ালেই থেকে যায়। হয়রানি কিংবা কলঙ্কের হাত থেকে বাঁচার জন্য ভুক্তভোগীরা অনেক ঘটনাই গোপন রাখেন। আবার অনেক ক্ষেত্রে দেখা গেছে, অভিযোগ করার পরও বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন তা আড়াল করে রাখে। সম্প্রতি জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ফাইরুজ সাদাফ অবন্তিকার আত্মহত্যা ও কাজী ফারজানা মীমের ধারাবাহিক হয়রানির ঘটনা উদাহরণ হিসেবে উল্লেখ করা যায়।
অবন্তিকা ও মীম দুজনই বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে অভিযোগ করে বিচার পাওয়া থেকে বঞ্চিত হয়েছেন। ফলে অবন্তিকা আত্মহত্যার পথ বেছে নিয়েছেন এবং মীম জীবনের নিরাপত্তা চেয়ে ডিবির আশ্রয় চেয়েছেন। অবন্তিকার অভিযোগ, তাঁর যৌন হেনস্তাকারী সহপাঠী এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন সহকারী প্রক্টরের বিরুদ্ধে। ওদিকে মীমের অভিযোগ, তাঁর শিক্ষক তাঁকে যৌন হয়রানি করেছেন। অভিযোগ দেওয়ায় তিনি নানাভাবে হেনস্তার শিকার হয়েছেন। ভীতসন্ত্রস্ত এই শিক্ষার্থী বলেন, অভিযোগ দেওয়ার পর তাঁকে অন্যায়ভাবে মৌখিক পরীক্ষায় অকৃতকার্য করা হয়েছে। তিনি অভিযোগ দেওয়ার পর বিভাগীয় প্রধান যৌন নিপীড়কের পক্ষে অবস্থান নিয়েছেন এবং তিনি মীমকে সেই অভিযোগ তুলে নিতে নানাভাবে চাপ দিতে থাকেন। তাতে রাজি না হওয়ায়, বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বহিষ্কার করা হবে বলে ভয় দেখানো হয়। শুধু তা-ই নয়, তাঁর জীবনহানির হুমকিও দেওয়া হয়েছে বলে মীমের অভিযোগ।
অবন্তিকার আত্মহত্যার ঘটনার মাধ্যমে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অফিসে শিক্ষার্থীদের বিভিন্ন হয়রানির গুরুত্বপূর্ণ তথ্য বেরিয়ে এসেছে। এসব তথ্য ধারাবাহিকভাবেই পত্রপত্রিকায় প্রতিবেদন আকারে প্রকাশিত হয়েছে। প্রতিবেদনে প্রক্টর অফিসের বিরুদ্ধে শিক্ষার্থীদের শারীরিক ও মানসিক হয়রানির বিস্তর অভিযোগের কথা উল্লেখ আছে। এই চিত্র শুধু জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের নয়, দেশের বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষকদের বিরুদ্ধে এমন আরও অনেক অভিযোগ আছে। দেখা গেছে, শিক্ষক নামের এসব দুশ্চরিত্রের ব্যক্তি প্রথমে পছন্দের নারী শিক্ষার্থীদের টার্গেট করে অনৈতিক প্রস্তাব দেন। প্রথমে বিভিন্ন ছলচাতুরীর মাধ্যমে ওই শিক্ষার্থীকে তাঁর প্রস্তাবে রাজি করানোর চেষ্টা করেন। রাজি না হলে ভয়ভীতি দেখান, পরীক্ষার খাতায় কম নম্বর দেন। তারপরও রাজি না হলে ফেল করে দেওয়া হয়। এমন পরিস্থিতিতে কোনো কোনো শিক্ষার্থী বাধ্য হন শিক্ষকের অনৈতিক প্রস্তাবে আত্মসমর্পণ করতে। অনেকে সে পথে পা না বাড়িয়ে প্রতিবাদী হন, তারপরও কর্তৃপক্ষের সহযোগিতা না পেলে অনেকে আত্মহত্যার পথ বেছে নেন।
শিক্ষক ও শিক্ষার্থী সম্পর্ক হবে বন্ধুর মতো। শিক্ষার্থীর প্রতি শিক্ষকের সহমর্মিতার মনোভাব থাকবে। তাঁদের মধ্যে একধরনের আত্মিক বন্ধন থাকতে হবে। শিক্ষককে হতে হবে সুব্যক্তিত্বের অধিকারী। শিক্ষার্থীর সঙ্গে তাঁর আচরণ হবে প্রীতি ও সৌহার্দ্যপূর্ণ। শিক্ষকও শিক্ষার্থীর সঙ্গে স্বাভাবিকভাবে মেলামেশা করবেন। তাঁর ব্যক্তিত্বের মাধুর্যে যেন শিক্ষার্থী সহজেই আকৃষ্ট হন। তিনি হবেন সুবিবেচক, বিচক্ষণ ও পথপ্রদর্শক। একজন শিক্ষক শিক্ষার্থীর কাছে প্রথমেই শিক্ষক হবেন এবং শেষেও তিনি শিক্ষকই থাকবেন। এ দেশের সমাজ সব সময়ই একজন শিক্ষককে শিক্ষার্থীর সহায়কের ভূমিকায় দেখতে চায়, নিপীড়কের ভূমিকায় নয়। শিক্ষক সম্পর্কে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বলেছিলেন, ‘উত্তম শিক্ষক হবেন উত্তম ছাত্র, শিক্ষকের ছাত্রত্ব গ্রহণে তার মনের তারুণ্য নষ্ট হতে পারে না; বরং তিনি সব সময় ছাত্রের সুবিধা-অসুবিধা ভালোভাবে বুঝতে সক্ষম হবেন।’
২০০৯ সালে উচ্চ আদালত যৌন হয়রানি প্রতিরোধে সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসহ অন্যান্য সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে নারীকে অশালীন মন্তব্য, অঙ্গভঙ্গি, সাংকেতিক চিহ্ন প্রদর্শনসহ ইন্টারনেট ও মোবাইলে হয়রানিকে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনের ১০ (ক) ধারায় যৌন হয়রানির সংজ্ঞার আওতাভুক্ত করেন। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানকে ৬০ কর্মদিবসের মধ্যে যৌন হয়রানির বিচার শেষ করতে বলা হয়েছে। ব্যর্থ হলে প্রচলিত আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়ার কথাও বলা আছে। উচ্চ আদালত যৌন হয়রানি প্রতিরোধে অভিযোগ কমিটি গঠনের নির্দেশও দিয়েছিলেন। দেশের ৫৫ পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে ৪৫টি এবং ১১৪ বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে ৯৭টিতে এই কমিটি গঠন করা হয়েছে, যা সেল নামেও পরিচিত। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোয় এই সেল থাকা সত্ত্বেও ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীরা সুষ্ঠু বিচার পাওয়া থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। বিচার চাইতে গিয়েও নারী শিক্ষার্থীরা নিজ শিক্ষকদের কাছ থেকেই হয়রানির শিকার হচ্ছেন। দেখা যায়, যৌন হয়রানির বিচার যাঁরা করবেন, তাঁরাই অনেক সময় পক্ষপাতমূলক আচরণ করে থাকেন। এই সব শিক্ষক সহকর্মীদের রক্ষা করতে গিয়ে বিচারের নামে প্রহসন করে থাকেন। যখন এসব নিয়ে মিডিয়ায় হইচই পড়ে যায়, তখন কর্তৃপক্ষ কিছুটা নড়েচড়ে বসে। কিন্তু এ ধরনের কয়টি ঘটনা মিডিয়ায় আসে। ফলে অধিকাংশ ঘটনারই কোনো বিচার হয় না। তাৎক্ষণিক কিছু পদক্ষেপ নেওয়া হলেও ভুক্তভোগীরা অধিকাংশ সময়েই যৌন হয়রানির প্রত্যাশিত বিচার পান না। বিচারহীনতা যৌন হয়রানি বন্ধ না হওয়ার অন্যতম কারণ। আমাদের দেশে আইন থাকলেও এর প্রয়োগের অভাবে যৌন হয়রানি দিন দিন বেড়েই চলেছে।
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্তমান উপাচার্য অধ্যাপক সাদেকা হালিম এর আগে এই বিশ্ববিদ্যালয়ের যৌন নির্যাতন প্রতিরোধ কমিটির সদস্য ছিলেন। তিনিই একসময় বলেছিলেন, ‘স্কুল-কলেজ বা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে যৌন নির্যাতন নতুন কিছু নয়। আমরা এখনো যেসব পুরুষ সহকর্মীর সঙ্গে কাজ করছি বা যেসব পুরুষ শিক্ষক ছাত্রীদের পড়াচ্ছেন, তাঁদের অনেকেই ছাত্রীকে ছাত্রী হিসেবে দেখেন না। ফলে তাঁদের হাতে ছাত্রীরা যৌন নির্যাতনের শিকার হচ্ছেন।’ অথচ একজন শিক্ষককে হতে হবে উচ্চ নৈতিক মানসম্পন্ন। তাঁকে এ ধরনের মনোভাব পরিত্যাগ করতে হবে। তিনি থাকবেন সব প্রলোভনের ঊর্ধ্বে। এ জন্যই তিনি শিক্ষক। একসময় এ দেশের মুক্তি ও স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলন-সংগ্রামে শিক্ষার্থীরা যখন রাজপথে বেরিয়ে আসতেন, শিক্ষক সমাজ তখন শিক্ষার্থীদের পাশেই থাকতেন। এসব আন্দোলনে শিক্ষার্থীদের মুখে তখন তীব্র প্রতিবাদের স্লোগান শোনা গেছে। বর্তমানে ছাত্র-শিক্ষকের সম্পর্ক এত তলানিতে গিয়ে ঠেকেছে যে সেই শিক্ষার্থীরাই এখন শিক্ষকদের নামে কখনো ধর্ষক, কখনো নিপীড়ক, কখনো দালাল বলে স্লোগান দিচ্ছেন। অথচ ছাত্র ও শিক্ষকের সম্পর্ক এমন হওয়ার কথা ছিল না।
যৌন হয়রানির বিষয়ে সচেতনতামূলক কার্যকরী পদক্ষেপের অংশ হিসেবে বিশ্বের অন্যান্য দেশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোয় প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা থাকলেও আমাদের দেশে তা নেই। যৌন হয়রানির সংজ্ঞায়ন, তদন্তপদ্ধতি, শাস্তি এবং নারী নির্যাতন দমন আইন নিয়ে প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা ও প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা নেই। যৌন হয়রানি প্রতিরোধে জনসচেতনতা বৃদ্ধির জন্য কার্যকর কোনো উদ্যোগ কিংবা প্রচারণাও নেই। আমাদের দেশে সরকারি ও বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের চিত্র প্রায় একই। এ ব্যাপারে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের দায়িত্বও কম নয়। উচ্চ আদালতের বেঁধে দেওয়া নির্দেশনা বাস্তবায়নে ব্যর্থ হলে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে জবাবদিহির আওতায় আনতে হবে। যৌন হয়রানির শিকার শিক্ষার্থী যাতে অতি সহজেই কর্তৃপক্ষের কাছে নির্ভয়ে অভিযোগ করতে পারেন, সেই পরিবেশ সৃষ্টি করতে হবে। এ বিষয়ে ভুক্তভোগীর প্রতি অসহযোগিতার মনোভাব পরিলক্ষিত হলেও যথাযথ আইনানুগ ব্যবস্থা নিতে হবে। মনে রাখতে হবে, কতিপয় যৌন নিপীড়কের জন্য গোটা শিক্ষক সমাজকে কলঙ্কিত করার অধিকার কারও নেই। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের পবিত্রতা রক্ষা করার দায়িত্ব সবারই। তবে এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের দায়িত্ব আরও বেশি।
লেখক: অবসরপ্রাপ্ত ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ও কলাম লেখক
এ কে এম শামসুদ্দিন

আমরা বাল্যকাল থেকেই শুনে এসেছি, শিক্ষক হলেন জাতির আলোকবর্তিকাবাহী এবং মানবজাতির ভবিষ্যৎ রূপকার। ঘুণে ধরা সমাজব্যবস্থা ভেঙে শিক্ষকেরাই পারেন নতুন সমাজ গড়তে। শিক্ষকদের বলা হয় জীবনের চরিত্র গঠনের প্রথম গুরু, মানুষ গড়ার শ্রেষ্ঠ কারিগর। তাঁদের অসাধারণ পাণ্ডিত্য, চারিত্রিক মাধুর্য ও স্নেহময় মধুর ব্যবহারের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের কাছে হয়ে ওঠেন আদর্শের প্রতীক। শিক্ষকেরাই জাতির বিবেক বলে বিবেচিত হন। কিন্তু কয়েক বছর ধরে বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে কিছু শিক্ষকের চরিত্র স্খলনের যে কিচ্ছা-কাহিনি শোনা যাচ্ছে, তা গোটা শিক্ষকসমাজের জন্য লজ্জার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। এসব ঘটনা এত দিনের চেনা শিক্ষকদের আদর্শগত চরিত্রের ওপর কলঙ্কের কালিমা লেপন করে দিচ্ছে। দেশের সর্বোচ্চ বিদ্যাপীঠ—বিশ্ববিদ্যালয়গুলোয় একের পর এক যে ঘটনা ঘটছে, তাতে শুধু নারী শিক্ষার্থীরাই নন, কখনো কখনো নারী শিক্ষকেরাও যৌন হয়রানির শিকার হচ্ছেন। গত দুই বছরে দেশের শীর্ষ ৫ বিশ্ববিদ্যালয়ে ২৭টি যৌন হয়রানির ঘটনার খবর পাওয়া গেছে। কিন্তু এমন অনেক ঘটনা আছে, যা সবার দৃষ্টির আড়ালেই থেকে যায়। হয়রানি কিংবা কলঙ্কের হাত থেকে বাঁচার জন্য ভুক্তভোগীরা অনেক ঘটনাই গোপন রাখেন। আবার অনেক ক্ষেত্রে দেখা গেছে, অভিযোগ করার পরও বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন তা আড়াল করে রাখে। সম্প্রতি জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ফাইরুজ সাদাফ অবন্তিকার আত্মহত্যা ও কাজী ফারজানা মীমের ধারাবাহিক হয়রানির ঘটনা উদাহরণ হিসেবে উল্লেখ করা যায়।
অবন্তিকা ও মীম দুজনই বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে অভিযোগ করে বিচার পাওয়া থেকে বঞ্চিত হয়েছেন। ফলে অবন্তিকা আত্মহত্যার পথ বেছে নিয়েছেন এবং মীম জীবনের নিরাপত্তা চেয়ে ডিবির আশ্রয় চেয়েছেন। অবন্তিকার অভিযোগ, তাঁর যৌন হেনস্তাকারী সহপাঠী এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন সহকারী প্রক্টরের বিরুদ্ধে। ওদিকে মীমের অভিযোগ, তাঁর শিক্ষক তাঁকে যৌন হয়রানি করেছেন। অভিযোগ দেওয়ায় তিনি নানাভাবে হেনস্তার শিকার হয়েছেন। ভীতসন্ত্রস্ত এই শিক্ষার্থী বলেন, অভিযোগ দেওয়ার পর তাঁকে অন্যায়ভাবে মৌখিক পরীক্ষায় অকৃতকার্য করা হয়েছে। তিনি অভিযোগ দেওয়ার পর বিভাগীয় প্রধান যৌন নিপীড়কের পক্ষে অবস্থান নিয়েছেন এবং তিনি মীমকে সেই অভিযোগ তুলে নিতে নানাভাবে চাপ দিতে থাকেন। তাতে রাজি না হওয়ায়, বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বহিষ্কার করা হবে বলে ভয় দেখানো হয়। শুধু তা-ই নয়, তাঁর জীবনহানির হুমকিও দেওয়া হয়েছে বলে মীমের অভিযোগ।
অবন্তিকার আত্মহত্যার ঘটনার মাধ্যমে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অফিসে শিক্ষার্থীদের বিভিন্ন হয়রানির গুরুত্বপূর্ণ তথ্য বেরিয়ে এসেছে। এসব তথ্য ধারাবাহিকভাবেই পত্রপত্রিকায় প্রতিবেদন আকারে প্রকাশিত হয়েছে। প্রতিবেদনে প্রক্টর অফিসের বিরুদ্ধে শিক্ষার্থীদের শারীরিক ও মানসিক হয়রানির বিস্তর অভিযোগের কথা উল্লেখ আছে। এই চিত্র শুধু জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের নয়, দেশের বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষকদের বিরুদ্ধে এমন আরও অনেক অভিযোগ আছে। দেখা গেছে, শিক্ষক নামের এসব দুশ্চরিত্রের ব্যক্তি প্রথমে পছন্দের নারী শিক্ষার্থীদের টার্গেট করে অনৈতিক প্রস্তাব দেন। প্রথমে বিভিন্ন ছলচাতুরীর মাধ্যমে ওই শিক্ষার্থীকে তাঁর প্রস্তাবে রাজি করানোর চেষ্টা করেন। রাজি না হলে ভয়ভীতি দেখান, পরীক্ষার খাতায় কম নম্বর দেন। তারপরও রাজি না হলে ফেল করে দেওয়া হয়। এমন পরিস্থিতিতে কোনো কোনো শিক্ষার্থী বাধ্য হন শিক্ষকের অনৈতিক প্রস্তাবে আত্মসমর্পণ করতে। অনেকে সে পথে পা না বাড়িয়ে প্রতিবাদী হন, তারপরও কর্তৃপক্ষের সহযোগিতা না পেলে অনেকে আত্মহত্যার পথ বেছে নেন।
শিক্ষক ও শিক্ষার্থী সম্পর্ক হবে বন্ধুর মতো। শিক্ষার্থীর প্রতি শিক্ষকের সহমর্মিতার মনোভাব থাকবে। তাঁদের মধ্যে একধরনের আত্মিক বন্ধন থাকতে হবে। শিক্ষককে হতে হবে সুব্যক্তিত্বের অধিকারী। শিক্ষার্থীর সঙ্গে তাঁর আচরণ হবে প্রীতি ও সৌহার্দ্যপূর্ণ। শিক্ষকও শিক্ষার্থীর সঙ্গে স্বাভাবিকভাবে মেলামেশা করবেন। তাঁর ব্যক্তিত্বের মাধুর্যে যেন শিক্ষার্থী সহজেই আকৃষ্ট হন। তিনি হবেন সুবিবেচক, বিচক্ষণ ও পথপ্রদর্শক। একজন শিক্ষক শিক্ষার্থীর কাছে প্রথমেই শিক্ষক হবেন এবং শেষেও তিনি শিক্ষকই থাকবেন। এ দেশের সমাজ সব সময়ই একজন শিক্ষককে শিক্ষার্থীর সহায়কের ভূমিকায় দেখতে চায়, নিপীড়কের ভূমিকায় নয়। শিক্ষক সম্পর্কে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বলেছিলেন, ‘উত্তম শিক্ষক হবেন উত্তম ছাত্র, শিক্ষকের ছাত্রত্ব গ্রহণে তার মনের তারুণ্য নষ্ট হতে পারে না; বরং তিনি সব সময় ছাত্রের সুবিধা-অসুবিধা ভালোভাবে বুঝতে সক্ষম হবেন।’
২০০৯ সালে উচ্চ আদালত যৌন হয়রানি প্রতিরোধে সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসহ অন্যান্য সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে নারীকে অশালীন মন্তব্য, অঙ্গভঙ্গি, সাংকেতিক চিহ্ন প্রদর্শনসহ ইন্টারনেট ও মোবাইলে হয়রানিকে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনের ১০ (ক) ধারায় যৌন হয়রানির সংজ্ঞার আওতাভুক্ত করেন। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানকে ৬০ কর্মদিবসের মধ্যে যৌন হয়রানির বিচার শেষ করতে বলা হয়েছে। ব্যর্থ হলে প্রচলিত আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়ার কথাও বলা আছে। উচ্চ আদালত যৌন হয়রানি প্রতিরোধে অভিযোগ কমিটি গঠনের নির্দেশও দিয়েছিলেন। দেশের ৫৫ পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে ৪৫টি এবং ১১৪ বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে ৯৭টিতে এই কমিটি গঠন করা হয়েছে, যা সেল নামেও পরিচিত। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোয় এই সেল থাকা সত্ত্বেও ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীরা সুষ্ঠু বিচার পাওয়া থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। বিচার চাইতে গিয়েও নারী শিক্ষার্থীরা নিজ শিক্ষকদের কাছ থেকেই হয়রানির শিকার হচ্ছেন। দেখা যায়, যৌন হয়রানির বিচার যাঁরা করবেন, তাঁরাই অনেক সময় পক্ষপাতমূলক আচরণ করে থাকেন। এই সব শিক্ষক সহকর্মীদের রক্ষা করতে গিয়ে বিচারের নামে প্রহসন করে থাকেন। যখন এসব নিয়ে মিডিয়ায় হইচই পড়ে যায়, তখন কর্তৃপক্ষ কিছুটা নড়েচড়ে বসে। কিন্তু এ ধরনের কয়টি ঘটনা মিডিয়ায় আসে। ফলে অধিকাংশ ঘটনারই কোনো বিচার হয় না। তাৎক্ষণিক কিছু পদক্ষেপ নেওয়া হলেও ভুক্তভোগীরা অধিকাংশ সময়েই যৌন হয়রানির প্রত্যাশিত বিচার পান না। বিচারহীনতা যৌন হয়রানি বন্ধ না হওয়ার অন্যতম কারণ। আমাদের দেশে আইন থাকলেও এর প্রয়োগের অভাবে যৌন হয়রানি দিন দিন বেড়েই চলেছে।
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্তমান উপাচার্য অধ্যাপক সাদেকা হালিম এর আগে এই বিশ্ববিদ্যালয়ের যৌন নির্যাতন প্রতিরোধ কমিটির সদস্য ছিলেন। তিনিই একসময় বলেছিলেন, ‘স্কুল-কলেজ বা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে যৌন নির্যাতন নতুন কিছু নয়। আমরা এখনো যেসব পুরুষ সহকর্মীর সঙ্গে কাজ করছি বা যেসব পুরুষ শিক্ষক ছাত্রীদের পড়াচ্ছেন, তাঁদের অনেকেই ছাত্রীকে ছাত্রী হিসেবে দেখেন না। ফলে তাঁদের হাতে ছাত্রীরা যৌন নির্যাতনের শিকার হচ্ছেন।’ অথচ একজন শিক্ষককে হতে হবে উচ্চ নৈতিক মানসম্পন্ন। তাঁকে এ ধরনের মনোভাব পরিত্যাগ করতে হবে। তিনি থাকবেন সব প্রলোভনের ঊর্ধ্বে। এ জন্যই তিনি শিক্ষক। একসময় এ দেশের মুক্তি ও স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলন-সংগ্রামে শিক্ষার্থীরা যখন রাজপথে বেরিয়ে আসতেন, শিক্ষক সমাজ তখন শিক্ষার্থীদের পাশেই থাকতেন। এসব আন্দোলনে শিক্ষার্থীদের মুখে তখন তীব্র প্রতিবাদের স্লোগান শোনা গেছে। বর্তমানে ছাত্র-শিক্ষকের সম্পর্ক এত তলানিতে গিয়ে ঠেকেছে যে সেই শিক্ষার্থীরাই এখন শিক্ষকদের নামে কখনো ধর্ষক, কখনো নিপীড়ক, কখনো দালাল বলে স্লোগান দিচ্ছেন। অথচ ছাত্র ও শিক্ষকের সম্পর্ক এমন হওয়ার কথা ছিল না।
যৌন হয়রানির বিষয়ে সচেতনতামূলক কার্যকরী পদক্ষেপের অংশ হিসেবে বিশ্বের অন্যান্য দেশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোয় প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা থাকলেও আমাদের দেশে তা নেই। যৌন হয়রানির সংজ্ঞায়ন, তদন্তপদ্ধতি, শাস্তি এবং নারী নির্যাতন দমন আইন নিয়ে প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা ও প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা নেই। যৌন হয়রানি প্রতিরোধে জনসচেতনতা বৃদ্ধির জন্য কার্যকর কোনো উদ্যোগ কিংবা প্রচারণাও নেই। আমাদের দেশে সরকারি ও বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের চিত্র প্রায় একই। এ ব্যাপারে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের দায়িত্বও কম নয়। উচ্চ আদালতের বেঁধে দেওয়া নির্দেশনা বাস্তবায়নে ব্যর্থ হলে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে জবাবদিহির আওতায় আনতে হবে। যৌন হয়রানির শিকার শিক্ষার্থী যাতে অতি সহজেই কর্তৃপক্ষের কাছে নির্ভয়ে অভিযোগ করতে পারেন, সেই পরিবেশ সৃষ্টি করতে হবে। এ বিষয়ে ভুক্তভোগীর প্রতি অসহযোগিতার মনোভাব পরিলক্ষিত হলেও যথাযথ আইনানুগ ব্যবস্থা নিতে হবে। মনে রাখতে হবে, কতিপয় যৌন নিপীড়কের জন্য গোটা শিক্ষক সমাজকে কলঙ্কিত করার অধিকার কারও নেই। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের পবিত্রতা রক্ষা করার দায়িত্ব সবারই। তবে এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের দায়িত্ব আরও বেশি।
লেখক: অবসরপ্রাপ্ত ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ও কলাম লেখক

আমরা বাল্যকাল থেকেই শুনে এসেছি, শিক্ষক হলেন জাতির আলোকবর্তিকাবাহী এবং মানবজাতির ভবিষ্যৎ রূপকার। ঘুণে ধরা সমাজব্যবস্থা ভেঙে শিক্ষকেরাই পারেন নতুন সমাজ গড়তে। শিক্ষকদের বলা হয় জীবনের চরিত্র গঠনের প্রথম গুরু, মানুষ গড়ার শ্রেষ্ঠ কারিগর। তাঁদের অসাধারণ পাণ্ডিত্য, চারিত্রিক মাধুর্য ও স্নেহময় মধুর ব্যবহারের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের কাছে হয়ে ওঠেন আদর্শের প্রতীক। শিক্ষকেরাই জাতির বিবেক বলে বিবেচিত হন। কিন্তু কয়েক বছর ধরে বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে কিছু শিক্ষকের চরিত্র স্খলনের যে কিচ্ছা-কাহিনি শোনা যাচ্ছে, তা গোটা শিক্ষকসমাজের জন্য লজ্জার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। এসব ঘটনা এত দিনের চেনা শিক্ষকদের আদর্শগত চরিত্রের ওপর কলঙ্কের কালিমা লেপন করে দিচ্ছে। দেশের সর্বোচ্চ বিদ্যাপীঠ—বিশ্ববিদ্যালয়গুলোয় একের পর এক যে ঘটনা ঘটছে, তাতে শুধু নারী শিক্ষার্থীরাই নন, কখনো কখনো নারী শিক্ষকেরাও যৌন হয়রানির শিকার হচ্ছেন। গত দুই বছরে দেশের শীর্ষ ৫ বিশ্ববিদ্যালয়ে ২৭টি যৌন হয়রানির ঘটনার খবর পাওয়া গেছে। কিন্তু এমন অনেক ঘটনা আছে, যা সবার দৃষ্টির আড়ালেই থেকে যায়। হয়রানি কিংবা কলঙ্কের হাত থেকে বাঁচার জন্য ভুক্তভোগীরা অনেক ঘটনাই গোপন রাখেন। আবার অনেক ক্ষেত্রে দেখা গেছে, অভিযোগ করার পরও বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন তা আড়াল করে রাখে। সম্প্রতি জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ফাইরুজ সাদাফ অবন্তিকার আত্মহত্যা ও কাজী ফারজানা মীমের ধারাবাহিক হয়রানির ঘটনা উদাহরণ হিসেবে উল্লেখ করা যায়।
অবন্তিকা ও মীম দুজনই বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে অভিযোগ করে বিচার পাওয়া থেকে বঞ্চিত হয়েছেন। ফলে অবন্তিকা আত্মহত্যার পথ বেছে নিয়েছেন এবং মীম জীবনের নিরাপত্তা চেয়ে ডিবির আশ্রয় চেয়েছেন। অবন্তিকার অভিযোগ, তাঁর যৌন হেনস্তাকারী সহপাঠী এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন সহকারী প্রক্টরের বিরুদ্ধে। ওদিকে মীমের অভিযোগ, তাঁর শিক্ষক তাঁকে যৌন হয়রানি করেছেন। অভিযোগ দেওয়ায় তিনি নানাভাবে হেনস্তার শিকার হয়েছেন। ভীতসন্ত্রস্ত এই শিক্ষার্থী বলেন, অভিযোগ দেওয়ার পর তাঁকে অন্যায়ভাবে মৌখিক পরীক্ষায় অকৃতকার্য করা হয়েছে। তিনি অভিযোগ দেওয়ার পর বিভাগীয় প্রধান যৌন নিপীড়কের পক্ষে অবস্থান নিয়েছেন এবং তিনি মীমকে সেই অভিযোগ তুলে নিতে নানাভাবে চাপ দিতে থাকেন। তাতে রাজি না হওয়ায়, বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বহিষ্কার করা হবে বলে ভয় দেখানো হয়। শুধু তা-ই নয়, তাঁর জীবনহানির হুমকিও দেওয়া হয়েছে বলে মীমের অভিযোগ।
অবন্তিকার আত্মহত্যার ঘটনার মাধ্যমে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অফিসে শিক্ষার্থীদের বিভিন্ন হয়রানির গুরুত্বপূর্ণ তথ্য বেরিয়ে এসেছে। এসব তথ্য ধারাবাহিকভাবেই পত্রপত্রিকায় প্রতিবেদন আকারে প্রকাশিত হয়েছে। প্রতিবেদনে প্রক্টর অফিসের বিরুদ্ধে শিক্ষার্থীদের শারীরিক ও মানসিক হয়রানির বিস্তর অভিযোগের কথা উল্লেখ আছে। এই চিত্র শুধু জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের নয়, দেশের বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষকদের বিরুদ্ধে এমন আরও অনেক অভিযোগ আছে। দেখা গেছে, শিক্ষক নামের এসব দুশ্চরিত্রের ব্যক্তি প্রথমে পছন্দের নারী শিক্ষার্থীদের টার্গেট করে অনৈতিক প্রস্তাব দেন। প্রথমে বিভিন্ন ছলচাতুরীর মাধ্যমে ওই শিক্ষার্থীকে তাঁর প্রস্তাবে রাজি করানোর চেষ্টা করেন। রাজি না হলে ভয়ভীতি দেখান, পরীক্ষার খাতায় কম নম্বর দেন। তারপরও রাজি না হলে ফেল করে দেওয়া হয়। এমন পরিস্থিতিতে কোনো কোনো শিক্ষার্থী বাধ্য হন শিক্ষকের অনৈতিক প্রস্তাবে আত্মসমর্পণ করতে। অনেকে সে পথে পা না বাড়িয়ে প্রতিবাদী হন, তারপরও কর্তৃপক্ষের সহযোগিতা না পেলে অনেকে আত্মহত্যার পথ বেছে নেন।
শিক্ষক ও শিক্ষার্থী সম্পর্ক হবে বন্ধুর মতো। শিক্ষার্থীর প্রতি শিক্ষকের সহমর্মিতার মনোভাব থাকবে। তাঁদের মধ্যে একধরনের আত্মিক বন্ধন থাকতে হবে। শিক্ষককে হতে হবে সুব্যক্তিত্বের অধিকারী। শিক্ষার্থীর সঙ্গে তাঁর আচরণ হবে প্রীতি ও সৌহার্দ্যপূর্ণ। শিক্ষকও শিক্ষার্থীর সঙ্গে স্বাভাবিকভাবে মেলামেশা করবেন। তাঁর ব্যক্তিত্বের মাধুর্যে যেন শিক্ষার্থী সহজেই আকৃষ্ট হন। তিনি হবেন সুবিবেচক, বিচক্ষণ ও পথপ্রদর্শক। একজন শিক্ষক শিক্ষার্থীর কাছে প্রথমেই শিক্ষক হবেন এবং শেষেও তিনি শিক্ষকই থাকবেন। এ দেশের সমাজ সব সময়ই একজন শিক্ষককে শিক্ষার্থীর সহায়কের ভূমিকায় দেখতে চায়, নিপীড়কের ভূমিকায় নয়। শিক্ষক সম্পর্কে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বলেছিলেন, ‘উত্তম শিক্ষক হবেন উত্তম ছাত্র, শিক্ষকের ছাত্রত্ব গ্রহণে তার মনের তারুণ্য নষ্ট হতে পারে না; বরং তিনি সব সময় ছাত্রের সুবিধা-অসুবিধা ভালোভাবে বুঝতে সক্ষম হবেন।’
২০০৯ সালে উচ্চ আদালত যৌন হয়রানি প্রতিরোধে সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসহ অন্যান্য সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে নারীকে অশালীন মন্তব্য, অঙ্গভঙ্গি, সাংকেতিক চিহ্ন প্রদর্শনসহ ইন্টারনেট ও মোবাইলে হয়রানিকে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনের ১০ (ক) ধারায় যৌন হয়রানির সংজ্ঞার আওতাভুক্ত করেন। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানকে ৬০ কর্মদিবসের মধ্যে যৌন হয়রানির বিচার শেষ করতে বলা হয়েছে। ব্যর্থ হলে প্রচলিত আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়ার কথাও বলা আছে। উচ্চ আদালত যৌন হয়রানি প্রতিরোধে অভিযোগ কমিটি গঠনের নির্দেশও দিয়েছিলেন। দেশের ৫৫ পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে ৪৫টি এবং ১১৪ বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে ৯৭টিতে এই কমিটি গঠন করা হয়েছে, যা সেল নামেও পরিচিত। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোয় এই সেল থাকা সত্ত্বেও ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীরা সুষ্ঠু বিচার পাওয়া থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। বিচার চাইতে গিয়েও নারী শিক্ষার্থীরা নিজ শিক্ষকদের কাছ থেকেই হয়রানির শিকার হচ্ছেন। দেখা যায়, যৌন হয়রানির বিচার যাঁরা করবেন, তাঁরাই অনেক সময় পক্ষপাতমূলক আচরণ করে থাকেন। এই সব শিক্ষক সহকর্মীদের রক্ষা করতে গিয়ে বিচারের নামে প্রহসন করে থাকেন। যখন এসব নিয়ে মিডিয়ায় হইচই পড়ে যায়, তখন কর্তৃপক্ষ কিছুটা নড়েচড়ে বসে। কিন্তু এ ধরনের কয়টি ঘটনা মিডিয়ায় আসে। ফলে অধিকাংশ ঘটনারই কোনো বিচার হয় না। তাৎক্ষণিক কিছু পদক্ষেপ নেওয়া হলেও ভুক্তভোগীরা অধিকাংশ সময়েই যৌন হয়রানির প্রত্যাশিত বিচার পান না। বিচারহীনতা যৌন হয়রানি বন্ধ না হওয়ার অন্যতম কারণ। আমাদের দেশে আইন থাকলেও এর প্রয়োগের অভাবে যৌন হয়রানি দিন দিন বেড়েই চলেছে।
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্তমান উপাচার্য অধ্যাপক সাদেকা হালিম এর আগে এই বিশ্ববিদ্যালয়ের যৌন নির্যাতন প্রতিরোধ কমিটির সদস্য ছিলেন। তিনিই একসময় বলেছিলেন, ‘স্কুল-কলেজ বা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে যৌন নির্যাতন নতুন কিছু নয়। আমরা এখনো যেসব পুরুষ সহকর্মীর সঙ্গে কাজ করছি বা যেসব পুরুষ শিক্ষক ছাত্রীদের পড়াচ্ছেন, তাঁদের অনেকেই ছাত্রীকে ছাত্রী হিসেবে দেখেন না। ফলে তাঁদের হাতে ছাত্রীরা যৌন নির্যাতনের শিকার হচ্ছেন।’ অথচ একজন শিক্ষককে হতে হবে উচ্চ নৈতিক মানসম্পন্ন। তাঁকে এ ধরনের মনোভাব পরিত্যাগ করতে হবে। তিনি থাকবেন সব প্রলোভনের ঊর্ধ্বে। এ জন্যই তিনি শিক্ষক। একসময় এ দেশের মুক্তি ও স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলন-সংগ্রামে শিক্ষার্থীরা যখন রাজপথে বেরিয়ে আসতেন, শিক্ষক সমাজ তখন শিক্ষার্থীদের পাশেই থাকতেন। এসব আন্দোলনে শিক্ষার্থীদের মুখে তখন তীব্র প্রতিবাদের স্লোগান শোনা গেছে। বর্তমানে ছাত্র-শিক্ষকের সম্পর্ক এত তলানিতে গিয়ে ঠেকেছে যে সেই শিক্ষার্থীরাই এখন শিক্ষকদের নামে কখনো ধর্ষক, কখনো নিপীড়ক, কখনো দালাল বলে স্লোগান দিচ্ছেন। অথচ ছাত্র ও শিক্ষকের সম্পর্ক এমন হওয়ার কথা ছিল না।
যৌন হয়রানির বিষয়ে সচেতনতামূলক কার্যকরী পদক্ষেপের অংশ হিসেবে বিশ্বের অন্যান্য দেশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোয় প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা থাকলেও আমাদের দেশে তা নেই। যৌন হয়রানির সংজ্ঞায়ন, তদন্তপদ্ধতি, শাস্তি এবং নারী নির্যাতন দমন আইন নিয়ে প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা ও প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা নেই। যৌন হয়রানি প্রতিরোধে জনসচেতনতা বৃদ্ধির জন্য কার্যকর কোনো উদ্যোগ কিংবা প্রচারণাও নেই। আমাদের দেশে সরকারি ও বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের চিত্র প্রায় একই। এ ব্যাপারে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের দায়িত্বও কম নয়। উচ্চ আদালতের বেঁধে দেওয়া নির্দেশনা বাস্তবায়নে ব্যর্থ হলে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে জবাবদিহির আওতায় আনতে হবে। যৌন হয়রানির শিকার শিক্ষার্থী যাতে অতি সহজেই কর্তৃপক্ষের কাছে নির্ভয়ে অভিযোগ করতে পারেন, সেই পরিবেশ সৃষ্টি করতে হবে। এ বিষয়ে ভুক্তভোগীর প্রতি অসহযোগিতার মনোভাব পরিলক্ষিত হলেও যথাযথ আইনানুগ ব্যবস্থা নিতে হবে। মনে রাখতে হবে, কতিপয় যৌন নিপীড়কের জন্য গোটা শিক্ষক সমাজকে কলঙ্কিত করার অধিকার কারও নেই। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের পবিত্রতা রক্ষা করার দায়িত্ব সবারই। তবে এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের দায়িত্ব আরও বেশি।
লেখক: অবসরপ্রাপ্ত ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ও কলাম লেখক

গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।
২২ দিন আগে
‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর...
১২ জুন ২০২৫
ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।
১৯ মে ২০২৫
আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
০৮ মে ২০২৫বাসস, ঢাকা

গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।
আজ সোমবার বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের ট্রাইব্যুনাল-১-এ মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা (আইও) মো. আলমগীরের জেরা শুরু করেন রাষ্ট্র নিযুক্ত আইনজীবী আমীর হোসেন। আইনজীবী আমীর হোসেন পলাতক আসামি শেখ হাসিনা ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের পক্ষে শুনানি করছেন। এর আগে গত মঙ্গলবার তদন্তকারী কর্মকর্তা মো. আলমগীরের সাক্ষ্য গ্রহণ সম্পন্ন হয়।
এই মামলার শুনানিতে এর আগে গণ-অভ্যুত্থানের অন্যতম প্রতীক শহীদ আবু সাঈদের বাবাসহ স্বজনহারা পরিবারের একাধিক সদস্য সাক্ষ্য দিয়েছেন। এ ছাড়া মামলার গুরুত্বপূর্ণ ‘স্টার উইটনেস’ হিসেবে সাক্ষ্য দেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক এবং জুলাই আন্দোলনের অন্যতম নেতৃত্বদানকারী নাহিদ ইসলাম এবং দৈনিক আমার দেশ পত্রিকার সম্পাদক ড. মাহমুদুর রহমান।
গত বছরের জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার আন্দোলন দমনে আওয়ামী লীগ সরকার, তাদের দলীয় ক্যাডার ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর একটি অংশ গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটিত করে বলে অভিযোগ ওঠে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে শেখ হাসিনা, তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল এবং তৎকালীন আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের বিরুদ্ধে গত ১০ জুলাই অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দেন ট্রাইব্যুনাল-১।
পরবর্তীকালে, এই মামলার অন্যতম আসামি সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন দোষ স্বীকার করে ঘটনার সত্যতা উদ্ঘাটনে রাজসাক্ষী (অ্যাপ্রোভার) হওয়ার জন্য ট্রাইব্যুনালে আবেদন করেন। ট্রাইব্যুনাল তাঁর আবেদন মঞ্জুর করলে তিনি রাজসাক্ষী হিসেবে এই মামলায় সাক্ষ্য দেন।
মামলার প্রসিকিউশন পক্ষে শুনানি করছেন চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম, প্রসিকিউটর মিজানুল ইসলাম এবং গাজী এসএইচ তামিম। শুনানিতে তাঁদের সঙ্গে অপর প্রসিকিউটররাও উপস্থিত ছিলেন।
অন্যদিকে, এই মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে রাজসাক্ষী হওয়া সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের পক্ষে আছেন আইনজীবী যায়েদ বিন আমজাদ।
মানবতাবিরোধী অপরাধের এই মামলা ছাড়াও ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে আরও দুটি মামলা বিচারাধীন। এর মধ্যে একটি মামলায় আওয়ামী লীগের সাড়ে ১৫ বছরের শাসনামলে সংঘটিত গুম-খুনের ঘটনায় তাঁকে আসামি করা হয়েছে। অন্য মামলাটি হলো রাজধানীর মতিঝিলের শাপলা চত্বরে হেফাজতে ইসলামের সমাবেশে হত্যাকাণ্ড নিয়ে। এই তিনটি মামলার বিচারকাজই বর্তমানে দুটি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে চলমান।

গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।
আজ সোমবার বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের ট্রাইব্যুনাল-১-এ মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা (আইও) মো. আলমগীরের জেরা শুরু করেন রাষ্ট্র নিযুক্ত আইনজীবী আমীর হোসেন। আইনজীবী আমীর হোসেন পলাতক আসামি শেখ হাসিনা ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের পক্ষে শুনানি করছেন। এর আগে গত মঙ্গলবার তদন্তকারী কর্মকর্তা মো. আলমগীরের সাক্ষ্য গ্রহণ সম্পন্ন হয়।
এই মামলার শুনানিতে এর আগে গণ-অভ্যুত্থানের অন্যতম প্রতীক শহীদ আবু সাঈদের বাবাসহ স্বজনহারা পরিবারের একাধিক সদস্য সাক্ষ্য দিয়েছেন। এ ছাড়া মামলার গুরুত্বপূর্ণ ‘স্টার উইটনেস’ হিসেবে সাক্ষ্য দেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক এবং জুলাই আন্দোলনের অন্যতম নেতৃত্বদানকারী নাহিদ ইসলাম এবং দৈনিক আমার দেশ পত্রিকার সম্পাদক ড. মাহমুদুর রহমান।
গত বছরের জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার আন্দোলন দমনে আওয়ামী লীগ সরকার, তাদের দলীয় ক্যাডার ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর একটি অংশ গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটিত করে বলে অভিযোগ ওঠে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে শেখ হাসিনা, তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল এবং তৎকালীন আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের বিরুদ্ধে গত ১০ জুলাই অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দেন ট্রাইব্যুনাল-১।
পরবর্তীকালে, এই মামলার অন্যতম আসামি সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন দোষ স্বীকার করে ঘটনার সত্যতা উদ্ঘাটনে রাজসাক্ষী (অ্যাপ্রোভার) হওয়ার জন্য ট্রাইব্যুনালে আবেদন করেন। ট্রাইব্যুনাল তাঁর আবেদন মঞ্জুর করলে তিনি রাজসাক্ষী হিসেবে এই মামলায় সাক্ষ্য দেন।
মামলার প্রসিকিউশন পক্ষে শুনানি করছেন চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম, প্রসিকিউটর মিজানুল ইসলাম এবং গাজী এসএইচ তামিম। শুনানিতে তাঁদের সঙ্গে অপর প্রসিকিউটররাও উপস্থিত ছিলেন।
অন্যদিকে, এই মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে রাজসাক্ষী হওয়া সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের পক্ষে আছেন আইনজীবী যায়েদ বিন আমজাদ।
মানবতাবিরোধী অপরাধের এই মামলা ছাড়াও ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে আরও দুটি মামলা বিচারাধীন। এর মধ্যে একটি মামলায় আওয়ামী লীগের সাড়ে ১৫ বছরের শাসনামলে সংঘটিত গুম-খুনের ঘটনায় তাঁকে আসামি করা হয়েছে। অন্য মামলাটি হলো রাজধানীর মতিঝিলের শাপলা চত্বরে হেফাজতে ইসলামের সমাবেশে হত্যাকাণ্ড নিয়ে। এই তিনটি মামলার বিচারকাজই বর্তমানে দুটি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে চলমান।

আমরা বাল্যকাল থেকেই শুনে এসেছি, শিক্ষক হলেন জাতির আলোকবর্তিকাবাহী এবং মানবজাতির ভবিষ্যৎ রূপকার। ঘুণে ধরা সমাজব্যবস্থা ভেঙে শিক্ষকেরাই পারেন নতুন সমাজ গড়তে। শিক্ষকদের বলা হয় জীবনের চরিত্র গঠনের প্রথম গুরু, মানুষ গড়ার শ্রেষ্ঠ কারিগর। তাঁদের অসাধারণ পাণ্ডিত্য, চারিত্রিক মাধুর্য ও স্নেহময় মধুর ব্যবহারের
৩০ মার্চ ২০২৪
‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর...
১২ জুন ২০২৫
ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।
১৯ মে ২০২৫
আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
০৮ মে ২০২৫
‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর সঙ্গে।
মাছের সুষ্ঠু প্রজনন, উৎপাদন, মৎস্যসম্পদ সংরক্ষণ ও টেকসই মৎস্য আহরণের জন্য সমুদ্রে সব ধরনের মাছ শিকার ৫৮ দিনের নিষেধাজ্ঞা গতকাল বুধবার দিবাগত মধ্যরাতে শেষ হয়েছে। তাই গতকাল দিনভর ছিল উপকূলের জেলেপল্লিগুলোতে ব্যস্ততা। অনেকে দেখে নিচ্ছিলেন ট্রলার ঠিকঠাক আছে কি না, কেউ জালের ছেঁড়া অংশ সেলাই করছিলেন, কেউ আবার প্রয়োজনীয় খাদ্যসামগ্রীসহ অন্য সরঞ্জাম গুছিয়ে নিচ্ছিলেন।
বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র এবং ফকিরহাট উপ-মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের ঘাটে গতকাল শত শত ট্রলার নোঙর করে রাখা ছিল। জেলেদের উপস্থিতিতে ঘাট এলাকা সরগরম হয়ে ওঠে। ফকিরহাটের মুদি-মনিহারি দোকানগুলোতে জেলেরা কেনাকাটা করতে ভিড় জমান। ফকিরহাট এলাকার বিসমিল্লাহ ট্রলারের মাঝি রহিম মিয়া বলেন, ‘সাগরে মাছ শিকারে যেতে সকল প্রস্তুতি নিয়েছি। নিষেধাজ্ঞার সময় শেষ হওয়ামাত্রই সাগরে নামব।’
জেলে নুরসাইদ ও ফোরকান মিয়া বলেন, ‘নিষেধাজ্ঞার সময় পরিবার-পরিজন নিয়ে বেশ কষ্টে কেটেছে। ওই সময়ে বেশ টাকা ঋণ করেছি। এখন সাগরে যাব। দেখি আল্লাহ ঋণ পরিশোধ করতে দেন কি না।’
নোয়াখালীর হাতিয়ার সূর্যমুখী, বাংলাবাজার, কাজিরবাজার, পাইতান মার্কেট চেয়ারম্যান ঘাটসহ বেশ কয়েকটি ঘাটে গতকাল জেলেদের ব্যস্ত সময় পার করতে দেখা গেছে। অনেকে নৌকায় জাল তুলছিলেন, আবার অনেকে জ্বালানি তেল মজুতসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্রী ট্রলারে নিয়ে যান। সূর্যমুখী ঘাটের এমভি মায়ের দোয়া ট্রলারের মাঝি জাফর উল্যা বলেন, ‘সাগরে ৮-১০ দিন থাকার প্রস্তুতি নিচ্ছি। সন্ধ্যায় সাগরের উদ্দেশে রওনা দেব।’
সূর্যমুখী ঘাট জেলে সমিতির সভাপতি জবিয়ল হক বলেন, ‘সাগরে নামতে প্রস্তুত নোয়াখালীর হাতিয়ার ২০টি ঘাটের লক্ষাধিক জেলে। এসব ঘাটে প্রায় ১০ হাজার ছোট-বড় ফিশিং ট্রলার রয়েছে। প্রতি ট্রলারে ১০ জন হলেও লক্ষাধিক জেলে এই মাছ ধরার সঙ্গে জড়িত। তাঁদের সবাই গত ৫৮ দিন তীরে বেকার ছিলেন।’
পিরোজপুরের ইন্দুরকানি উপজেলার পাড়েরহাট মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের পার্শ্ববর্তী এলাকার জেলেরা গতকাল দিনভর সাগরে যাওয়ার প্রস্তুতি নেন। এ ছাড়া মঠবাড়িয়া উপজেলার সাপলেজা, খেতাচিড়া, বড়মাছুয়া, ছোটমাছুয়া, ভান্ডারিয়া উপজেলার চরখালী, হেতালিয়া, কাউখালী উপজেলার সোনাকুর এলাকার জেলেরা, সদর উপজেলা এবং নেছারাবাদ উপজেলার বিভিন্ন এলাকার জেলেরা প্রস্তুতি শেষে গত রাতে বঙ্গোপসাগরে রওনা হন।
কয়েক দিন ধরে কক্সবাজার উপকূলের জেলেপল্লিগুলোতে নৌকা, জাল মেরামতসহ বিভিন্ন প্রস্তুতি সেরেছেন জেলেরা। গতকাল মেরিন ড্রাইভের টেকনাফের খুরেরমুখ, সাবরাং ও বাহারছড়া এলাকায় দেখা গেছে, সড়কে দাঁড় করিয়ে রাখা সারি সারি ট্রলারে জাল ও রসদ তোলেন জেলেরা।
একটি ট্রলারের মাঝি আবু তাহের জানান, এবার ভারতের সঙ্গে মিল রেখে নিষেধাজ্ঞা দেওয়ায় কেউ সাগরে মাছ শিকারে নামেনি। এতে উপকূলের কাছাকাছি সাগরে জাল ফেললেই ইলিশসহ অন্য মাছ পাওয়া যাবে বলে আশাবাদী তিনি।
কক্সবাজার শহরের ফিশারি ঘাটের মৎস্য ব্যবসায়ী সমিতির পরিচালক জুলফিকার আলী জানান, কক্সবাজার উপকূলে ছোট-বড় ৭ হাজারের মতো যান্ত্রিক ট্রলার রয়েছে। এসব ট্রলারে প্রায় এক লাখ জেলে ও শ্রমিক নিয়োজিত রয়েছেন। অধিকাংশ ট্রলার নিষেধাজ্ঞা ওঠার সঙ্গে সঙ্গে সাগরে রওনা হবে।
[প্রতিবেদন তৈরিতে তথ্য দিয়ে সহায়তা করেছেন বরগুনা ও আমতলী, পিরোজপুর, কক্সবাজার এবং হাতিয়া প্রতিনিধি]

‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর সঙ্গে।
মাছের সুষ্ঠু প্রজনন, উৎপাদন, মৎস্যসম্পদ সংরক্ষণ ও টেকসই মৎস্য আহরণের জন্য সমুদ্রে সব ধরনের মাছ শিকার ৫৮ দিনের নিষেধাজ্ঞা গতকাল বুধবার দিবাগত মধ্যরাতে শেষ হয়েছে। তাই গতকাল দিনভর ছিল উপকূলের জেলেপল্লিগুলোতে ব্যস্ততা। অনেকে দেখে নিচ্ছিলেন ট্রলার ঠিকঠাক আছে কি না, কেউ জালের ছেঁড়া অংশ সেলাই করছিলেন, কেউ আবার প্রয়োজনীয় খাদ্যসামগ্রীসহ অন্য সরঞ্জাম গুছিয়ে নিচ্ছিলেন।
বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র এবং ফকিরহাট উপ-মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের ঘাটে গতকাল শত শত ট্রলার নোঙর করে রাখা ছিল। জেলেদের উপস্থিতিতে ঘাট এলাকা সরগরম হয়ে ওঠে। ফকিরহাটের মুদি-মনিহারি দোকানগুলোতে জেলেরা কেনাকাটা করতে ভিড় জমান। ফকিরহাট এলাকার বিসমিল্লাহ ট্রলারের মাঝি রহিম মিয়া বলেন, ‘সাগরে মাছ শিকারে যেতে সকল প্রস্তুতি নিয়েছি। নিষেধাজ্ঞার সময় শেষ হওয়ামাত্রই সাগরে নামব।’
জেলে নুরসাইদ ও ফোরকান মিয়া বলেন, ‘নিষেধাজ্ঞার সময় পরিবার-পরিজন নিয়ে বেশ কষ্টে কেটেছে। ওই সময়ে বেশ টাকা ঋণ করেছি। এখন সাগরে যাব। দেখি আল্লাহ ঋণ পরিশোধ করতে দেন কি না।’
নোয়াখালীর হাতিয়ার সূর্যমুখী, বাংলাবাজার, কাজিরবাজার, পাইতান মার্কেট চেয়ারম্যান ঘাটসহ বেশ কয়েকটি ঘাটে গতকাল জেলেদের ব্যস্ত সময় পার করতে দেখা গেছে। অনেকে নৌকায় জাল তুলছিলেন, আবার অনেকে জ্বালানি তেল মজুতসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্রী ট্রলারে নিয়ে যান। সূর্যমুখী ঘাটের এমভি মায়ের দোয়া ট্রলারের মাঝি জাফর উল্যা বলেন, ‘সাগরে ৮-১০ দিন থাকার প্রস্তুতি নিচ্ছি। সন্ধ্যায় সাগরের উদ্দেশে রওনা দেব।’
সূর্যমুখী ঘাট জেলে সমিতির সভাপতি জবিয়ল হক বলেন, ‘সাগরে নামতে প্রস্তুত নোয়াখালীর হাতিয়ার ২০টি ঘাটের লক্ষাধিক জেলে। এসব ঘাটে প্রায় ১০ হাজার ছোট-বড় ফিশিং ট্রলার রয়েছে। প্রতি ট্রলারে ১০ জন হলেও লক্ষাধিক জেলে এই মাছ ধরার সঙ্গে জড়িত। তাঁদের সবাই গত ৫৮ দিন তীরে বেকার ছিলেন।’
পিরোজপুরের ইন্দুরকানি উপজেলার পাড়েরহাট মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের পার্শ্ববর্তী এলাকার জেলেরা গতকাল দিনভর সাগরে যাওয়ার প্রস্তুতি নেন। এ ছাড়া মঠবাড়িয়া উপজেলার সাপলেজা, খেতাচিড়া, বড়মাছুয়া, ছোটমাছুয়া, ভান্ডারিয়া উপজেলার চরখালী, হেতালিয়া, কাউখালী উপজেলার সোনাকুর এলাকার জেলেরা, সদর উপজেলা এবং নেছারাবাদ উপজেলার বিভিন্ন এলাকার জেলেরা প্রস্তুতি শেষে গত রাতে বঙ্গোপসাগরে রওনা হন।
কয়েক দিন ধরে কক্সবাজার উপকূলের জেলেপল্লিগুলোতে নৌকা, জাল মেরামতসহ বিভিন্ন প্রস্তুতি সেরেছেন জেলেরা। গতকাল মেরিন ড্রাইভের টেকনাফের খুরেরমুখ, সাবরাং ও বাহারছড়া এলাকায় দেখা গেছে, সড়কে দাঁড় করিয়ে রাখা সারি সারি ট্রলারে জাল ও রসদ তোলেন জেলেরা।
একটি ট্রলারের মাঝি আবু তাহের জানান, এবার ভারতের সঙ্গে মিল রেখে নিষেধাজ্ঞা দেওয়ায় কেউ সাগরে মাছ শিকারে নামেনি। এতে উপকূলের কাছাকাছি সাগরে জাল ফেললেই ইলিশসহ অন্য মাছ পাওয়া যাবে বলে আশাবাদী তিনি।
কক্সবাজার শহরের ফিশারি ঘাটের মৎস্য ব্যবসায়ী সমিতির পরিচালক জুলফিকার আলী জানান, কক্সবাজার উপকূলে ছোট-বড় ৭ হাজারের মতো যান্ত্রিক ট্রলার রয়েছে। এসব ট্রলারে প্রায় এক লাখ জেলে ও শ্রমিক নিয়োজিত রয়েছেন। অধিকাংশ ট্রলার নিষেধাজ্ঞা ওঠার সঙ্গে সঙ্গে সাগরে রওনা হবে।
[প্রতিবেদন তৈরিতে তথ্য দিয়ে সহায়তা করেছেন বরগুনা ও আমতলী, পিরোজপুর, কক্সবাজার এবং হাতিয়া প্রতিনিধি]

আমরা বাল্যকাল থেকেই শুনে এসেছি, শিক্ষক হলেন জাতির আলোকবর্তিকাবাহী এবং মানবজাতির ভবিষ্যৎ রূপকার। ঘুণে ধরা সমাজব্যবস্থা ভেঙে শিক্ষকেরাই পারেন নতুন সমাজ গড়তে। শিক্ষকদের বলা হয় জীবনের চরিত্র গঠনের প্রথম গুরু, মানুষ গড়ার শ্রেষ্ঠ কারিগর। তাঁদের অসাধারণ পাণ্ডিত্য, চারিত্রিক মাধুর্য ও স্নেহময় মধুর ব্যবহারের
৩০ মার্চ ২০২৪
গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।
২২ দিন আগে
ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।
১৯ মে ২০২৫
আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
০৮ মে ২০২৫নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা

ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।
ভারতের নিষেধাজ্ঞার এক দিন পরই গত রোববার লালমনিরহাটের বুড়িমারী ও যশোরের বেনাপোল স্থলবন্দরসহ বিভিন্ন বন্দরে পণ্যের ট্রাক আটকে দেয় ভারত। সংশ্লিষ্টদের সূত্রে জানা যায়, রোববার ভারতের আমদানি বিধিনিষেধের কারণে বুড়িমারী সীমান্তে প্রাণের ১৭ ট্রাক খাদ্যপণ্য আটকে যায়। এ ছাড়া বেনাপোলে ৩৬টি পোশাক বোঝাই ট্রাকসহ অন্যান্য পণ্যের শতাধিক ট্রাক ঢুকতে পারেনি।
গতকাল সোমবার পর্যন্ত বুড়িমারী থেকে প্রাণের পণ্যবোঝাই ট্রাকগুলোর অর্ধেকের বেশি ফেরত নিয়ে আসে প্রতিষ্ঠানটি। এ ছাড়া বেনাপোলে পোর্টের ভেতরে ২৪টি ট্রাক ছাড়া বাকিগুলো ফেরত চলে যায়।
বেনাপোল বন্দর সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট স্টাফ অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মো. সাজেদুর রহমান গতকাল সোমবার আজকের পত্রিকাকে বলেন, গতকাল পোর্টের ভেতর ও বাইরে শতাধিক ট্রাক দাঁড়িয়ে ছিল। আজ পোর্টের ভেতরের ২৪টি ছাড়া বাকিগুলো ফেরত নিয়ে গেছেন মালিকেরা। এখন পর্যন্ত মনে হচ্ছে, পোর্টের ভেতরের ট্রাকগুলোও ফেরত নিতে হবে।
জানতে চাইলে প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের পরিচালক (বিপণন) কামরুজ্জামান কামাল আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমাদের হাতে ৬ মিলিয়ন ডলারের ক্রয় আদেশ রয়েছে। তার মধ্য থেকে রোববার বুড়িমারী দিয়ে ১৭ ট্রাকবোঝাই পণ্য পাঠিয়েছিলাম। কিন্তু সেগুলো ঢুকতে পারেনি। ট্রাকগুলো ফেরত আনা হচ্ছে। নতুন করে কাগজপত্র তৈরি করে অন্য পথ দিয়ে পণ্য পাঠাতে হবে।’
বেনাপোল স্থলবন্দর সূত্রে জানা যায়, ওই ২৪টি ট্রাক পোর্টের ভেতরে থাকায় এখনো তারা ভারতে প্রবেশের অপেক্ষায় রয়েছে। তাদের আশা, যেহেতু নিষেধাজ্ঞার আগে এই পণ্যগুলোর এলসি করা হয়েছিল, তাই এগুলো প্রবেশে অনুমতি পাবে। তবে এটি নির্ভর করবে বাংলাদেশ সরকারের আলোচনার ওপর।
এমন পরিস্থিতিতে সরকারের সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় রয়েছেন ব্যবসায়ীরা। ইতিমধ্যে অনেক রপ্তানিকারক রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) সঙ্গে আলোচনা করে সরকারের সহযোগিতা চেয়েছে।
স্থলবন্দরের মাধ্যমে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জসমূহ এবং আশু করণীয় নির্ধারণে বাণিজ্যসচিবের সভাপতিত্বে আজ মঙ্গলবার আন্তমন্ত্রণালয়ের সভা ডেকেছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, স্থলবন্দরের মাধ্যমে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জসমূহ এবং আশু করণীয় নির্ধারণে বাণিজ্যসচিবের সভাপতিত্বে বিকেল ৪টায় আন্তমন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে এই সভা অনুষ্ঠিত হবে।
সভায় নৌপরিবহন ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশন, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড, বাংলাদেশ স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষ, রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো, জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের প্রতিনিধিদের উপস্থিত থাকতে বলা হয়েছে। এ ছাড়া ব্যবসায়ী প্রতিনিধি হিসেবে এফবিসিসিআই, বিজিএমইএ, ভারত-বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির প্রতিনিধিদের উপস্থিতির জন্য আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে।
ভারতের শিল্প ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয় গত শনিবার হঠাৎ এক বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে স্থলবন্দর দিয়ে বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক আমদানি নিষিদ্ধ করে। শুধু ভারতের নবসেবা ও কলকাতা সমুদ্রবন্দর ব্যবহার করে দেশটির আমদানিকারকেরা বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক আমদানি করতে পারবেন বলে ওই বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়। এ ছাড়া বাংলাদেশ থেকে ভারতের আসাম, মেঘালয়, ত্রিপুরা ও মিজোরাম, পশ্চিমবঙ্গের চ্যাংড়াবান্দা ও ফুলবাড়ী শুল্ক স্টেশন দিয়ে ফল, ফলের স্বাদযুক্ত পানীয়, কোমল পানীয়, প্রক্রিয়াজাত খাদ্য, প্লাস্টিক পণ্য, সুতা, সুতার উপজাত, আসবাব রপ্তানিও নিষিদ্ধ করা হয় ওই বিজ্ঞপ্তিতে।
আমদানি ও রপ্তানিসংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা জানান, দেশের ২৪টি বন্দরের মধ্যে ১৬টি বন্দর দিয়ে ভারতের সঙ্গে আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য হয়ে থাকে। তবে যোগাযোগব্যবস্থা সহজ হওয়ায় বেনাপোল ও ভারতের পেট্রাপোল বন্দর দিয়ে সবচেয়ে বেশি আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য হয়। এর পরিমাণ ৮০ শতাংশ। বেনাপোল বন্দর দিয়ে প্রতিদিন ভারতে ২৫০ থেকে ৩০০ ট্রাকে বিভিন্ন ধরনের পণ্য রপ্তানি হয়। এর মধ্যে শতাধিক ট্রাক পণ্য থাকে তৈরি পোশাক।
এর আগে গত ৮ এপ্রিল বাংলাদেশের জন্য ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা বাতিল করে ভারত। ফলে ভারতের বিমানবন্দর ব্যবহার করে তৃতীয় কোনো দেশে তৈরি পোশাক রপ্তানি করতে পারছে না বাংলাদেশ। অন্যদিকে প্রায় এক মাস আগে ভারত থেকে বেনাপোল, ভোমরা, সোনামসজিদ, বাংলাবান্ধা, বুড়িমারী স্থলবন্দর দিয়ে সুতা আমদানির সুযোগ বন্ধ করে দেয় বাংলাদেশের জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)।
সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) বিশেষ ফেলো মোস্তাফিজুর রহমানের মতে, এই পাল্টাপাল্টি পদক্ষেপে তুলনামূলকভাবে বেশি নেতিবাচক প্রভাব পড়বে বাংলাদেশের ওপর। তাই ভারতের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য ঘাটতি কমানোর চেষ্টা অব্যাহত রাখাই সরকারের উচিত বলে মনে করছেন তিনি।
মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, আলোচনার মাধ্যমে বাংলাদেশ এবং ভারতের বিরোধপূর্ণ বিষয়সমূহ মিটিয়ে ফেলতে হবে এবং দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য সম্পর্কের ক্ষেত্রে ভারসাম্য প্রতিষ্ঠা করতে হবে। এটাই হবে উভয় দেশের জন্য কল্যাণকর।

ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।
ভারতের নিষেধাজ্ঞার এক দিন পরই গত রোববার লালমনিরহাটের বুড়িমারী ও যশোরের বেনাপোল স্থলবন্দরসহ বিভিন্ন বন্দরে পণ্যের ট্রাক আটকে দেয় ভারত। সংশ্লিষ্টদের সূত্রে জানা যায়, রোববার ভারতের আমদানি বিধিনিষেধের কারণে বুড়িমারী সীমান্তে প্রাণের ১৭ ট্রাক খাদ্যপণ্য আটকে যায়। এ ছাড়া বেনাপোলে ৩৬টি পোশাক বোঝাই ট্রাকসহ অন্যান্য পণ্যের শতাধিক ট্রাক ঢুকতে পারেনি।
গতকাল সোমবার পর্যন্ত বুড়িমারী থেকে প্রাণের পণ্যবোঝাই ট্রাকগুলোর অর্ধেকের বেশি ফেরত নিয়ে আসে প্রতিষ্ঠানটি। এ ছাড়া বেনাপোলে পোর্টের ভেতরে ২৪টি ট্রাক ছাড়া বাকিগুলো ফেরত চলে যায়।
বেনাপোল বন্দর সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট স্টাফ অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মো. সাজেদুর রহমান গতকাল সোমবার আজকের পত্রিকাকে বলেন, গতকাল পোর্টের ভেতর ও বাইরে শতাধিক ট্রাক দাঁড়িয়ে ছিল। আজ পোর্টের ভেতরের ২৪টি ছাড়া বাকিগুলো ফেরত নিয়ে গেছেন মালিকেরা। এখন পর্যন্ত মনে হচ্ছে, পোর্টের ভেতরের ট্রাকগুলোও ফেরত নিতে হবে।
জানতে চাইলে প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের পরিচালক (বিপণন) কামরুজ্জামান কামাল আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমাদের হাতে ৬ মিলিয়ন ডলারের ক্রয় আদেশ রয়েছে। তার মধ্য থেকে রোববার বুড়িমারী দিয়ে ১৭ ট্রাকবোঝাই পণ্য পাঠিয়েছিলাম। কিন্তু সেগুলো ঢুকতে পারেনি। ট্রাকগুলো ফেরত আনা হচ্ছে। নতুন করে কাগজপত্র তৈরি করে অন্য পথ দিয়ে পণ্য পাঠাতে হবে।’
বেনাপোল স্থলবন্দর সূত্রে জানা যায়, ওই ২৪টি ট্রাক পোর্টের ভেতরে থাকায় এখনো তারা ভারতে প্রবেশের অপেক্ষায় রয়েছে। তাদের আশা, যেহেতু নিষেধাজ্ঞার আগে এই পণ্যগুলোর এলসি করা হয়েছিল, তাই এগুলো প্রবেশে অনুমতি পাবে। তবে এটি নির্ভর করবে বাংলাদেশ সরকারের আলোচনার ওপর।
এমন পরিস্থিতিতে সরকারের সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় রয়েছেন ব্যবসায়ীরা। ইতিমধ্যে অনেক রপ্তানিকারক রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) সঙ্গে আলোচনা করে সরকারের সহযোগিতা চেয়েছে।
স্থলবন্দরের মাধ্যমে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জসমূহ এবং আশু করণীয় নির্ধারণে বাণিজ্যসচিবের সভাপতিত্বে আজ মঙ্গলবার আন্তমন্ত্রণালয়ের সভা ডেকেছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, স্থলবন্দরের মাধ্যমে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জসমূহ এবং আশু করণীয় নির্ধারণে বাণিজ্যসচিবের সভাপতিত্বে বিকেল ৪টায় আন্তমন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে এই সভা অনুষ্ঠিত হবে।
সভায় নৌপরিবহন ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশন, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড, বাংলাদেশ স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষ, রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো, জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের প্রতিনিধিদের উপস্থিত থাকতে বলা হয়েছে। এ ছাড়া ব্যবসায়ী প্রতিনিধি হিসেবে এফবিসিসিআই, বিজিএমইএ, ভারত-বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির প্রতিনিধিদের উপস্থিতির জন্য আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে।
ভারতের শিল্প ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয় গত শনিবার হঠাৎ এক বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে স্থলবন্দর দিয়ে বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক আমদানি নিষিদ্ধ করে। শুধু ভারতের নবসেবা ও কলকাতা সমুদ্রবন্দর ব্যবহার করে দেশটির আমদানিকারকেরা বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক আমদানি করতে পারবেন বলে ওই বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়। এ ছাড়া বাংলাদেশ থেকে ভারতের আসাম, মেঘালয়, ত্রিপুরা ও মিজোরাম, পশ্চিমবঙ্গের চ্যাংড়াবান্দা ও ফুলবাড়ী শুল্ক স্টেশন দিয়ে ফল, ফলের স্বাদযুক্ত পানীয়, কোমল পানীয়, প্রক্রিয়াজাত খাদ্য, প্লাস্টিক পণ্য, সুতা, সুতার উপজাত, আসবাব রপ্তানিও নিষিদ্ধ করা হয় ওই বিজ্ঞপ্তিতে।
আমদানি ও রপ্তানিসংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা জানান, দেশের ২৪টি বন্দরের মধ্যে ১৬টি বন্দর দিয়ে ভারতের সঙ্গে আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য হয়ে থাকে। তবে যোগাযোগব্যবস্থা সহজ হওয়ায় বেনাপোল ও ভারতের পেট্রাপোল বন্দর দিয়ে সবচেয়ে বেশি আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য হয়। এর পরিমাণ ৮০ শতাংশ। বেনাপোল বন্দর দিয়ে প্রতিদিন ভারতে ২৫০ থেকে ৩০০ ট্রাকে বিভিন্ন ধরনের পণ্য রপ্তানি হয়। এর মধ্যে শতাধিক ট্রাক পণ্য থাকে তৈরি পোশাক।
এর আগে গত ৮ এপ্রিল বাংলাদেশের জন্য ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা বাতিল করে ভারত। ফলে ভারতের বিমানবন্দর ব্যবহার করে তৃতীয় কোনো দেশে তৈরি পোশাক রপ্তানি করতে পারছে না বাংলাদেশ। অন্যদিকে প্রায় এক মাস আগে ভারত থেকে বেনাপোল, ভোমরা, সোনামসজিদ, বাংলাবান্ধা, বুড়িমারী স্থলবন্দর দিয়ে সুতা আমদানির সুযোগ বন্ধ করে দেয় বাংলাদেশের জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)।
সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) বিশেষ ফেলো মোস্তাফিজুর রহমানের মতে, এই পাল্টাপাল্টি পদক্ষেপে তুলনামূলকভাবে বেশি নেতিবাচক প্রভাব পড়বে বাংলাদেশের ওপর। তাই ভারতের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য ঘাটতি কমানোর চেষ্টা অব্যাহত রাখাই সরকারের উচিত বলে মনে করছেন তিনি।
মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, আলোচনার মাধ্যমে বাংলাদেশ এবং ভারতের বিরোধপূর্ণ বিষয়সমূহ মিটিয়ে ফেলতে হবে এবং দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য সম্পর্কের ক্ষেত্রে ভারসাম্য প্রতিষ্ঠা করতে হবে। এটাই হবে উভয় দেশের জন্য কল্যাণকর।

আমরা বাল্যকাল থেকেই শুনে এসেছি, শিক্ষক হলেন জাতির আলোকবর্তিকাবাহী এবং মানবজাতির ভবিষ্যৎ রূপকার। ঘুণে ধরা সমাজব্যবস্থা ভেঙে শিক্ষকেরাই পারেন নতুন সমাজ গড়তে। শিক্ষকদের বলা হয় জীবনের চরিত্র গঠনের প্রথম গুরু, মানুষ গড়ার শ্রেষ্ঠ কারিগর। তাঁদের অসাধারণ পাণ্ডিত্য, চারিত্রিক মাধুর্য ও স্নেহময় মধুর ব্যবহারের
৩০ মার্চ ২০২৪
গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।
২২ দিন আগে
‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর...
১২ জুন ২০২৫
আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
০৮ মে ২০২৫
আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
১৮৯৮ সালে ভারতের উত্তর প্রদেশের একটি ধূলিধূসর টিলা খুঁড়ে পাওয়া মূল্যবান এই রত্নগুলো এক শতাব্দীর বেশি সময় ধরে একটি বেসরকারি ব্রিটিশ সংগ্রহাগারে প্রায় দৃষ্টিচক্ষুর আড়ালে ছিল। এখন যেহেতু রত্নগুলোর হাতবদলের সময় এসেছে, তাই নতুন সংগ্রাহকেরা আগ্রহ নিয়ে এগুলো সংগ্রহের জন্য অপেক্ষা করছেন। কিন্তু এখানে একটা অস্বস্তিও তৈরি হয়েছে।
গৌতম বুদ্ধের জন্মস্থান লুম্বিনীর কাছাকাছি, বর্তমানে ভারতের উত্তর প্রদেশে একটি ইটের ঘরের ভেতর থেকে প্রায় ১ হাজার ৮০০টি মুক্তা, রুবি, টোপাজ, নীলা ও নকশা করা সোনার পাত সংগ্রহ করা হয়েছিল। তবে এই রত্নগুলোর সঙ্গে সঙ্গে একটি খোদাই করা পাত্রে হাড়ের টুকরাও পাওয়া যায়, যেগুলোকে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষ বলে শনাক্ত করা হয়। এই আবিষ্কার তখন প্রত্নতত্ত্বের জগতে ব্যাপক আলোড়ন তোলে।
সাদাবি’স এশিয়ার চেয়ারম্যান নিকোলাস চাউ মনে করেন, স্মরণকালের বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর মাঝে এই রত্নসম্ভার অন্যতম। তবে এগুলো নিলামে তোলার কারণে একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন তৈরি হয়েছে। আর তা হচ্ছে—ভারতের ইতিহাসের সঙ্গে গভীরভাবে জড়িয়ে থাকা এবং বৌদ্ধদের কাছে পবিত্র এই সম্পদ বিক্রি করা কি নৈতিকভাবে গ্রহণযোগ্য?
১৮৯৮ সালে ব্রিটিশ এস্টেট ম্যানেজার উইলিয়াম ক্ল্যাক্সটন পেপ্পে লুম্বিনির ঠিক দক্ষিণে পিপ্রাওয়ায় অবস্থিত একটি ঢিবি খনন করেন। সেখান থেকেই প্রায় ২ হাজার বছর আগের ওই নির্দশনগুলো খুঁজে পাওয়া যায়।
ইতিহাসবিদদের মতে, প্রাপ্ত রত্নসম্ভার ও দেহাবশেষ, যা তখনো পর্যন্ত অক্ষত ছিল, সেগুলো গৌতম বুদ্ধের শাক্য বংশের এবং বিশ্বব্যাপী বৌদ্ধদের ঐতিহ্য। হাড়ের নিদর্শনগুলো থাইল্যান্ড, শ্রীলঙ্কা ও মিয়ানমারের মতো দেশগুলোতে বিতরণ করা হয়েছে। এসব দেশে এখনো সেগুলোর পূজা করা হয়।

আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
১৮৯৮ সালে ভারতের উত্তর প্রদেশের একটি ধূলিধূসর টিলা খুঁড়ে পাওয়া মূল্যবান এই রত্নগুলো এক শতাব্দীর বেশি সময় ধরে একটি বেসরকারি ব্রিটিশ সংগ্রহাগারে প্রায় দৃষ্টিচক্ষুর আড়ালে ছিল। এখন যেহেতু রত্নগুলোর হাতবদলের সময় এসেছে, তাই নতুন সংগ্রাহকেরা আগ্রহ নিয়ে এগুলো সংগ্রহের জন্য অপেক্ষা করছেন। কিন্তু এখানে একটা অস্বস্তিও তৈরি হয়েছে।
গৌতম বুদ্ধের জন্মস্থান লুম্বিনীর কাছাকাছি, বর্তমানে ভারতের উত্তর প্রদেশে একটি ইটের ঘরের ভেতর থেকে প্রায় ১ হাজার ৮০০টি মুক্তা, রুবি, টোপাজ, নীলা ও নকশা করা সোনার পাত সংগ্রহ করা হয়েছিল। তবে এই রত্নগুলোর সঙ্গে সঙ্গে একটি খোদাই করা পাত্রে হাড়ের টুকরাও পাওয়া যায়, যেগুলোকে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষ বলে শনাক্ত করা হয়। এই আবিষ্কার তখন প্রত্নতত্ত্বের জগতে ব্যাপক আলোড়ন তোলে।
সাদাবি’স এশিয়ার চেয়ারম্যান নিকোলাস চাউ মনে করেন, স্মরণকালের বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর মাঝে এই রত্নসম্ভার অন্যতম। তবে এগুলো নিলামে তোলার কারণে একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন তৈরি হয়েছে। আর তা হচ্ছে—ভারতের ইতিহাসের সঙ্গে গভীরভাবে জড়িয়ে থাকা এবং বৌদ্ধদের কাছে পবিত্র এই সম্পদ বিক্রি করা কি নৈতিকভাবে গ্রহণযোগ্য?
১৮৯৮ সালে ব্রিটিশ এস্টেট ম্যানেজার উইলিয়াম ক্ল্যাক্সটন পেপ্পে লুম্বিনির ঠিক দক্ষিণে পিপ্রাওয়ায় অবস্থিত একটি ঢিবি খনন করেন। সেখান থেকেই প্রায় ২ হাজার বছর আগের ওই নির্দশনগুলো খুঁজে পাওয়া যায়।
ইতিহাসবিদদের মতে, প্রাপ্ত রত্নসম্ভার ও দেহাবশেষ, যা তখনো পর্যন্ত অক্ষত ছিল, সেগুলো গৌতম বুদ্ধের শাক্য বংশের এবং বিশ্বব্যাপী বৌদ্ধদের ঐতিহ্য। হাড়ের নিদর্শনগুলো থাইল্যান্ড, শ্রীলঙ্কা ও মিয়ানমারের মতো দেশগুলোতে বিতরণ করা হয়েছে। এসব দেশে এখনো সেগুলোর পূজা করা হয়।

আমরা বাল্যকাল থেকেই শুনে এসেছি, শিক্ষক হলেন জাতির আলোকবর্তিকাবাহী এবং মানবজাতির ভবিষ্যৎ রূপকার। ঘুণে ধরা সমাজব্যবস্থা ভেঙে শিক্ষকেরাই পারেন নতুন সমাজ গড়তে। শিক্ষকদের বলা হয় জীবনের চরিত্র গঠনের প্রথম গুরু, মানুষ গড়ার শ্রেষ্ঠ কারিগর। তাঁদের অসাধারণ পাণ্ডিত্য, চারিত্রিক মাধুর্য ও স্নেহময় মধুর ব্যবহারের
৩০ মার্চ ২০২৪
গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।
২২ দিন আগে
‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর...
১২ জুন ২০২৫
ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।
১৯ মে ২০২৫