Ajker Patrika

এই না হলে অভিনব ইংল্যান্ড

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা
আপডেট : ২৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৩, ১২: ৫৫
এই না হলে অভিনব ইংল্যান্ড

হঠাৎ দৃশ্যটা দেখলে যে কেউ ভাববে, এ কী করছেন মার্ক উড! অনুশীলনে ক্যাচ ধরতে গিয়ে ইংলিশ ফাস্ট বোলার যে জামাকাপড়ই খুলে ফেললেন!
মিরপুরের বিসিবি একাডেমি মাঠে ইংল্যান্ড দলের প্রথম দিনের তিন ঘণ্টার অনুশীলন তখন প্রায় শেষ দিকে। মূল মাঠে তখন উড, পেস বোলিংয়ে উডের সঙ্গী রিচ টপলি আর বাঁহাতি ব্যাটার ডেভিড মালান ক্যাচ অনুশীলন করতে এসেছেন। এমন সময় উডের জামাকাপড় খুলে ক্যাচ অনুশীলনের ঘটনা। উডদের প্রতি নির্দেশনা ছিল এমন, বল আকাশে থাকতে মনোযোগ ধরে রেখে সেটা তালুবন্দী করতে হবে। ছুড়ে দেওয়া বল ধরতে উড তড়িঘড়ি করে প্রথমে ক্যাপ, তারপর রোদচশমা খুললেন। এরপর গায়ে থাকা অনুশীলন জার্সিটা খুলে ওপরের শর্টস ঠিকঠাক খুলতে না খুলতেই ক্যাচ ধরতে ঝাঁপিয়ে পড়লেন। ক্যাচটা উড ঠিকঠাকই ধরেছেন, তবে শর্টস পায়ের সঙ্গে জড়িয়ে থাকল।

ক্রিকেটে নতুন নতুন বিষয় আমদানি করায় ইংলিশরা যে অন্য যেকারও চেয়ে এগিয়ে, সেটাই যেন দেখালেন উড। এই নতুন ইংল্যান্ডের যাত্রা শুরু ২০১৫ বিশ্বকাপের পর থেকে। ওই বিশ্বকাপে ভরাডুবির পর ওয়ানডে ক্রিকেটের কী আমূল পরিবর্তনই না ঘটেছে ইংলিশদের হাত ধরে। ৩০০-৩৫০ রান এখন ‘মামুলি’ হয়ে গেছে তাদের সৌজন্যেই। যে মহাপরিকল্পনার সূত্র ধরে ইংল্যান্ড জিতেছে ২০১৯ বিশ্বকাপ। নিউজিল্যান্ডকে হারিয়ে প্রথমবার শিরোপা ঘরে তোলে ইংলিশরা। পরে তাদের অনুসরণ করতে একপ্রকার বাধ্যই হয়েছে ভারত-অস্ট্রেলিয়ার মতো শীর্ষ দলগুলো। গত কিছু দিনে ইংলিশরা বদলের ছোঁয়া দেখাচ্ছে টেস্ট ক্রিকেটে। ব্রেন্ডন ম্যাককালামের অধীনে টেস্টে ইংলিশদের মারকাটারি ক্রিকেট পরিচিতি পেয়েছে ‘বাজবল’ নামে।

প্রায় সাড়ে ছয় বছর পর বাংলাদেশ সফরে আসা ইংল্যান্ডের প্রথম দিনের অনুশীলনে আরও কিছু অভিনব দৃশ্য চোখে পড়েছে। যেমন—দ্বিতীয় যে কৌশলে ক্যাচ ধরেছেন, তাঁর চোখের সামনে বেল্ট জাতীয় কিছু একটা নাড়িয়ে প্রতিবন্ধকতা তৈরি করা হয়েছে। এ বাধা টপকেই ক্যাচ ধরতে হবে। এখানেও সফল উড। তৃতীয় যে পদ্ধতিতে উডরা ক্যাচ ধরেছেন সেটা হলো, বল যখন আকাশে থাকবে তখন ফিল্ডার তাকিয়ে থাকবেন নিচের দিকে। এরপর ওপরে তাকিয়ে বলের লাইনে গিয়ে ধরতে হবে ক্যাচ। যথারীতি এখানেও সফল মার্ক উড। এ ধরনের ক্যাচ অনুশীলনের অর্থ একটাই, মনোযোগ বাড়ানো।

তিন সংস্করণেই দুর্দান্ত খেলা ইংল্যান্ডের প্রস্তুতিতেও অভিনবত্বের ছোঁয়া। (ডানে) গতির ঝড় তুলে বাংলাদেশের ব্যাটারদের কঠিন পরীক্ষা নিতে প্রস্তুত হচ্ছেন জফরা আর্চার। গতকাল মিরপুরে। ছবি: বিসিবিঅবশ্য এমন অনুশীলনে সহজেই যেকোনো বল আঙুল কিংবা শরীরে আঘাত হানতে পারে। সেটির সমাধান হিসেবে টেনিস বল দিয়ে অনুশীলন করেছেন উডরা। সাদা বলের দুই সংস্করণের বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন এখন ইংল্যান্ড। ব্যাটিং বোলিংয়ের মতো ফিল্ডিংয়েও সেরা তাঁরা। কেন তাঁরা অন্যদের চেয়ে এগিয়ে সেটা প্রমাণ দেয় এ ধরনের অভিনব অনুশীলনে। গত চার বছরে তিন সংস্করণে সর্বোচ্চ ৯৯৭টি ক্যাচ তো আর এমনি এমনি ধরেনি ইংলিশরা।

ইংল্যান্ড এ মুহূর্তে কতটা  ফুরফুরে দল, সেটা স্যাম কারানকে দেখে বোঝা গেল। অনুশীলনজুড়ে এই অলরাউন্ডারের সাউন্ডবক্স থেকে বের হওয়া রক গানের মূর্ছনায় চাঙা হয়েছেন বাটলার-ওকসরা। এরই মধ্যে  অনুশীলনে গতি আর বাউন্সারে ব্যাটারদের মনে ভীতি ছড়ানো জফরা আর্চার ফাস্ট বোলার থেকে বনে গেলেন বাঁহাতি স্পিনারে। উপমহাদেশে এর বাইরের দলগুলোর জন্য স্পিন সব সময়ই বড় পরীক্ষা। নেটে ইংল্যান্ডকে যেসব বোলার দেওয়া হয়েছে, বেশির ভাগই ছিলেন অফ স্পিনার। সাকিব-তাইজুলদের ঘূর্ণি খেলার আগে তাই সতীর্থদের সহায়তায় বাঁহাতি স্পিন করেছেন আর্চার। ইংলিশদের অভিনব প্রস্তুতি দেখে অনেকে মুগ্ধ হলেও প্রতিপক্ষের জন্য সেটি স্বস্তির কিছু নয় নিশ্চয়ই!

এই সফরে ইংলিশদের প্রতিপক্ষ বাংলাদেশ অবশ্য গতকাল অনুশীলন করেনি, হোটেলে চেক-ইন আর বিশ্রামেই কেটেছে তাদের দিনটা। সিরিজ সামনে রেখে আজ দুই দলেরই আছে অনুশীলন। অনুশীলনের ফাঁকে কথা বলবেন দুই দলের অধিনায়ক তামিম ইকবাল ও জস বাটলার।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত