মামুনুর রশীদ

আজ ১১ জ্যৈষ্ঠ। এই দিনে ১৩০৬ বঙ্গাব্দে আসানসোলের চুরুলিয়া গ্রামে জন্মেছিলেন কাজী নজরুল ইসলাম। ইংরেজি ১৮৯৯ সালে জন্মে মাত্র কুড়ি বছর বয়সেই সাহিত্যে তাঁর আগমনের বার্তা ধ্বনিত হয়েছিল। এর দুই বছর পরেই ‘বিদ্রোহী’ কবিতা রচনার মাধ্যমে বাংলা সাহিত্যে তাঁর দিগ্বিজয় ঘোষিত হয়েছিল। বিদ্রোহী কবিতায় তাঁর জ্ঞানের পরিধি পরিমাপ করতে গিয়ে তখনকার পাঠক-সমালোচকেরা অবাক বিস্ময়ে এক অলৌকিক প্রতিভার সন্ধান পান।
কালক্রমে চুরুলিয়ার সেই লেটো গানের দলের শিশু নজরুল গোটা বাংলা সাহিত্যে এক বিশাল আবহের সৃষ্টি করেছেন। তিনি কাব্যে, উপন্যাসে, ছোটগল্পে, প্রবন্ধে, অনুবাদে এবং সর্বোপরি সংগীতের এক অনন্য প্রতিভা হিসেবে আবির্ভূত হয়েছিলেন। যখন ‘ওমর খৈয়াম’ অনুবাদ করেন, তখন প্রশ্ন উঠেছিল নজরুল কতটা ফারসি জানেন। সৈয়দ মুজতবা আলী এর একটা জবাবও দিয়েছিলেন। যখন কোনো কবি অন্য কবির কবিতা অনুবাদ করেন, ভিন্ন ভাষী হওয়া সত্ত্বেও তিনি তা বুঝতে পারেন। বিদ্রোহী কবিতা রচনার আগে ওই বয়সে এতগুলো ধর্মগ্রন্থ, এতগুলো মিথ তিনি কী করে জানলেন, এটাও একটা বিস্ময়ের ব্যাপার।
সাহিত্য সাধনা এবং সংগীতেই তিনি শুধু থেমে থাকেননি। পরাধীন ভারতবর্ষে লুটেরা ব্রিটিশদের এ দেশ থেকে তাড়াতে সক্রিয় রাজনীতিতেও অংশগ্রহণ করেছিলেন। সেখানে তিনি খুব সফল না হলেও আন্তরিকভাবে সেই রাজনৈতিক প্রক্রিয়ার সঙ্গে যুক্ত হয়েছিলেন। পত্রিকা সম্পাদনার কাজ তিনি বারবার গ্রহণ করেছেন। কিন্তু শেষ জীবনে এসে তাঁর প্রধান কর্মক্ষেত্র হয়ে দাঁড়িয়েছিল সংগীত। এটাও বিস্ময়ের ব্যাপার যে ওই বয়সে তিনি ভারতীয় উচ্চাঙ্গসংগীতের সঙ্গে কীভাবে এত গভীরভাবে মিশে গেলেন এবং তা আত্মস্থ করলেন! তাঁর অসংখ্য রাগাশ্রয়ী গান প্রমাণ করে যে তিনি সংগীতের নানা দিক গভীরভাবে বুঝতেন, চর্চা করতেন এবং লেখা ও সুর সৃষ্টিতেও আত্মনিয়োগ করতেন। তিনিই প্রথম পঞ্চগীতি কবিদের মধ্যে সংগীতের একাধিপত্যে বিশ্বাস করতেন না। তাঁর গান অন্য সুরকারেরাও সুর দিতেন। সেই গানগুলো প্রায় প্রতিটি ক্ষেত্রে জনপ্রিয় হয়েছে এবং শ্রোতার হৃদয়ের গভীরে তা স্পর্শ করেছে।
অনেকেই বলেন, বিশেষ করে অধ্যাপক ও গবেষকেরা নিম্নবর্গের মানুষদের শিল্পের অধিকার নিয়ে কথা বলেন। তাঁরা বর্তমানের কোনো অর্ধশিক্ষিত এবং অশ্লীল শিল্পচর্চাকে নিম্নবর্গের শিল্পীদের অধিকার বলে মনে করেন। কিন্তু কাজী নজরুল ইসলামের কথা তাঁরা সহসাই ভুলে যান, ভুলে যান লালন সাঁইজির কথাও। কাজী নজরুল ইসলাম কি সোনার চামচ মুখে নিয়ে জন্ম গ্রহণ করেছিলেন? তাঁর জন্য স্কুল-কলেজের দ্বার উন্মুক্ত ছিল না, মক্তবে পড়া অবস্থাতেই তাঁকে যেতে হয়েছিল লেটো গানের দলে। শিক্ষার প্রতি এক দুর্নিবার আগ্রহে তিনি শহর থেকে শহরে ঘুরেছেন। তারপরও প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা তাঁর ভাগ্যে তেমন জোটেনি। সম্ভবত এটাই তাঁর সৌভাগ্য। যেমন রবীন্দ্রনাথও প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার দিকে কখনো যাননি। তিনি যে কতটা অধ্যয়ন করেছেন এবং নিজেকে তৈরি করার জন্য বিশ্বের তাবৎ সাহিত্যের কাছে যেতে চাইতেন। এটা ভাবতে সত্যিই অবাক লাগে! অনেক ধর্মগ্রন্থ এবং পাশাপাশি মহাভারত, রামায়ণ এবং উপনিষদও তিনি পড়েছেন গভীর অভিনিবেশের সঙ্গে।
তাঁর জীবনে রয়েছে অনেক বঞ্চনা, অনেক গ্লানি এবং সেই সঙ্গে অবহেলা। একদিকে ভারতবর্ষের নিরন্ন অনাহারী মানুষ, অন্যদিকে বিশাল কাব্যসম্ভার সংগীতের মহাসমুদ্রে নিপতিত ভারতবর্ষ। দারিদ্র্যকে সঙ্গী করে তিনি শিল্পের অকূল সমুদ্রে ঝাঁপ দিয়েছিলেন। মাত্র বাইশ বছরের সৃজনশীল জীবনে সাহিত্যের এতগুলো ক্ষেত্রে তাঁর পদচারণ এবং সেই সঙ্গে সংগীতের এক নতুন দিগন্ত আবিষ্কার করা কেবল নজরুলের পক্ষেই সম্ভব হয়েছিল।
১৯২৯ সালে কলকাতার আলবার্ট হলে তাঁর সংবর্ধনার আয়োজন করা হয়েছিল যখন, তাঁর বয়স তখন মাত্র একত্রিশ। সেই সভায় বাঙালির অনেক বড় বড় নেতা, কবি এবং সুধীজনের উপস্থিত থাকার কথা ছিল। অনেকই আসেননি। তারপরও সেখানে উপস্থিত ছিলেন নেতাজি সুভাস চন্দ্র বসু। নেতাজি তাঁর বক্তৃতায় বলেছিলেন, ‘আমাদের রণসংগীত ছিল না, নজরুল আমাদের রণসংগীত দিয়েছেন। আমরা যখন যুদ্ধে যাব, নজরুলের গান গাইতে গাইতে যাব। নজরুল আমাদের কারাগারের গান দিয়েছেন। আমরা যখন কারাগারে থাকব, তখন নজরুলের গান গাইতে গাইতে আমরা স্বাধীনতার স্বপ্ন দেখব।’ গণসংগীত শব্দটি বলার সঙ্গে সঙ্গে যে মুখটি ভেসে ওঠে, সেটি কিন্তু নজরুলের।
নজরুল মুক্তির গান খুঁজতে গিয়ে আন্তর্জাতিক সংগীতের অনুবাদও করেছেন। তাহলে বোঝা যায় যে নজরুল আন্তর্জাতিক বিপ্লবের একটা কালের কেন্দ্রে অবস্থান করতেন। তাই তো করাচিতে বসেই তিনি রাশিয়ার বলশেভিক পার্টি ও আন্দোলনের কথা, বিজয়ের কথা জেনেছিলেন। মানুষের মুক্তির প্রতি যে আকাঙ্ক্ষা দেখা যাচ্ছে, সতেরো-আঠারো বছর বয়সেই সেটা তাঁর মধ্যে স্থান পেয়েছিল। তিনি তাঁর সাহিত্যচর্চার শুরুতে নামের সঙ্গে হাবিলদার যুক্ত করেছিলেন। জীবনাচরণের ক্ষেত্রেও তিনি একজন সৈনিকের আচারকে গ্রহণ করেছিলেন। সেই সময়ে অনুষ্ঠিত কংগ্রেসের একটি সম্মেলনে তিনি স্বেচ্ছাসেবকের দায়িত্বে ছিলেন। এই দায়িত্ব পালনকালে তিনি ফিল্ড মার্শালের পোশাক পরেছিলেন।
নজরুলের গানের যে বিচিত্র বিস্তার তা আজ পর্যন্ত অন্য গীতিকবিদের মধ্যে দেখা যায়নি। বিষয়বস্তুর দিক থেকেও তিনি বহুগামী। প্রকৃতি, প্রেম, ধর্মীয় সংগীত সেই সঙ্গে দুই ধর্মের সংগীত, উদ্দীপনামূলক গণসংগীত, রণসংগীত, আবার বাংলার আবহমান কালের সুরও তিনি ধারণ করেছিলেন। আপাদমস্তক এবং রক্তের প্রতিটি কণায় তিনি অসাম্প্রদায়িক চেতনাকে ধারণ করতেন। এতে কোনো কোনো সমাজ ক্ষুব্ধ হতো, তীব্র সমালোচনা ও কুৎসা তাঁকে বিদ্ধ করেছে। কিন্তু একমুহূর্তের জন্যও তিনি আদর্শচ্যুত হননি।
তাঁর জীবনটা ছিল আবেগে ভরা মানবিক। বসন্ত রোগে বুলবুল যখন মারা যায়, তখন তিনি প্রায় কপর্দকহীন। বুলবুল গাড়িতে চড়তে ভালোবাসত, তাই তার মরদেহ গোরস্থানে গাড়িতে করেই নিয়ে যেতে হবে। কিন্তু বসন্ত রোগীকে কেউ তখন গাড়িতে তুলতে রাজি হয়নি। তখন তাঁর এক পরিচিত স্বজন এসে সহায় হন। শেষে এক সদাশয় চালক বুলবুলের মৃতদেহটি গোরস্থানে নিয়ে আসেন। তারপর খুব অল্প লোকের সাহায্যে বুলবুলকে সমাধিস্থ করা হয়। এমনি দারিদ্র্যের মধ্যে তিনি জীবনের দীর্ঘ সময় কাটিয়েছেন। স্ত্রী প্রমীলা অসুস্থ, ঘরে খাবার নেই, নজরুল কলকাতার বাইরে থেকে জ্বর নিয়ে ফিরেছেন। গৃহের এই অবস্থায় তিনি একটি ট্যাক্সি করে গ্রামোফোন কোম্পানিতে চলে আসেন। গান রচনা করেন, সুর করেন এবং কোম্পানির কাছ থেকে টাকা নিয়ে ভাড়া পরিশোধ করে সামান্য কিছু টাকা নিয়ে ঘরে ফেরেন। সেই গান অবশ্য পরবর্তীকালে খুবই জনপ্রিয় হয়েছিল। তাঁর অসুস্থতা নিয়েও নানা বিভ্রান্তি চারদিকে ছড়িয়েছে কিন্তু প্রখ্যাত চিকিৎসক বিধান চন্দ্র রায় প্রথমেই বলেছিলেন এটি সিফিলিস নয়, কোনো ধরনের স্নায়বিক রোগ। তাঁর এক ভক্ত, অস্ট্রিয়াপ্রবাসী বাঙালি ডাক্তার নজরুলকে ভিয়েনায় নিয়ে যান। সেখানে এবং পরবর্তীকালে ইংল্যান্ডে প্রমাণিত হলো এটি মস্তিষ্কের রোগ নয়, সিফিলিসও নয়—এটি একটি জটিল স্নায়বিক ব্যাধি, যার চিকিৎসা তখনো বের হয়নি।
তবে নজরুলের প্রতি অবহেলারও শেষ ছিল না। পাকিস্তান সরকার তাঁর জন্য নানা রকম উদ্যোগ দেখিয়েছে এবং সেই সঙ্গে তাঁর চিকিৎসার প্রতিশ্রুতিও দিয়েছিল। তাঁর পুত্র কাজী সব্যসাচী বেশ কয়েকবার তদানীন্তন ক্ষমতাসীনদের কাছে দেনদরবারও করেছেন। কিন্তু কিছুই মেলেনি। পশ্চিমবঙ্গেও সরকারের পক্ষ থেকে তাঁর জন্য নানা রকম প্রতিশ্রুতি এসেছে। কিন্তু এর ছোট্ট একটি অংশই তাঁর ভাগ্যে জুটেছে।
বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর ঢাকায় তাঁর আগমন, অবস্থান—সবকিছুই যত্নের সঙ্গে পালন করার চেষ্টা হয়েছে। দুই দেশেই নজরুলের নামে ইনস্টিটিউট স্থাপিত হয়েছে। কিন্তু নজরুলচর্চা বা নজরুলের প্রতি মানুষের ভালোবাসাকে যথার্থ গুরুত্ব দেওয়া হয়নি। নজরুলের যৌবনে বাংলার শ্রেষ্ঠ গায়ক-গায়িকারা তাঁর গান গেয়েছেন, সুরকারেরা সুর দিয়েছেন, নজরুল তখন জীবন্ত হয়ে উঠেছিলেন। আজ জীবন্ত নজরুলকে আমরা দেখতে পাই না—না তাঁর গানে, না তাঁর সাহিত্যে। দায়সারা গোছের নজরুলজয়ন্তী উদ্যাপন, রেডিও-টেলিভিশনে কিছু গান অথবা তাঁর গল্পের নাট্যরূপ আমরা দেখতে পাই বটে, কিন্তু নজরুল আমাদের জীবনচর্চায় একটা স্থান দখল করতে পারতেন, যা আংশিকভাবেও হয়ে ওঠেনি।
মোল্লাদের প্রতি সেই সময়ে নজরুলের প্রবল ক্ষোভ ছিল, তাঁর সাহিত্যে এর স্পষ্ট প্রতিফলন আছে। আজ ধর্মকে রাজনৈতিকভাবে ব্যবহার করার বিরুদ্ধে নজরুল দাঁড়াতে পারতেন। এ কথাটাও আমরা প্রায় বিস্মৃত হতে চলেছি। তবুও নজরুল তাঁর সাহিত্যে, গানে চির অমর হয়ে থাকবেন। তাঁর সৃষ্টি সুধা পান করে বাঙালি এখনো একটা নবজীবন পেতে পারে।
লেখক: নাট্যব্যক্তিত্ব

আজ ১১ জ্যৈষ্ঠ। এই দিনে ১৩০৬ বঙ্গাব্দে আসানসোলের চুরুলিয়া গ্রামে জন্মেছিলেন কাজী নজরুল ইসলাম। ইংরেজি ১৮৯৯ সালে জন্মে মাত্র কুড়ি বছর বয়সেই সাহিত্যে তাঁর আগমনের বার্তা ধ্বনিত হয়েছিল। এর দুই বছর পরেই ‘বিদ্রোহী’ কবিতা রচনার মাধ্যমে বাংলা সাহিত্যে তাঁর দিগ্বিজয় ঘোষিত হয়েছিল। বিদ্রোহী কবিতায় তাঁর জ্ঞানের পরিধি পরিমাপ করতে গিয়ে তখনকার পাঠক-সমালোচকেরা অবাক বিস্ময়ে এক অলৌকিক প্রতিভার সন্ধান পান।
কালক্রমে চুরুলিয়ার সেই লেটো গানের দলের শিশু নজরুল গোটা বাংলা সাহিত্যে এক বিশাল আবহের সৃষ্টি করেছেন। তিনি কাব্যে, উপন্যাসে, ছোটগল্পে, প্রবন্ধে, অনুবাদে এবং সর্বোপরি সংগীতের এক অনন্য প্রতিভা হিসেবে আবির্ভূত হয়েছিলেন। যখন ‘ওমর খৈয়াম’ অনুবাদ করেন, তখন প্রশ্ন উঠেছিল নজরুল কতটা ফারসি জানেন। সৈয়দ মুজতবা আলী এর একটা জবাবও দিয়েছিলেন। যখন কোনো কবি অন্য কবির কবিতা অনুবাদ করেন, ভিন্ন ভাষী হওয়া সত্ত্বেও তিনি তা বুঝতে পারেন। বিদ্রোহী কবিতা রচনার আগে ওই বয়সে এতগুলো ধর্মগ্রন্থ, এতগুলো মিথ তিনি কী করে জানলেন, এটাও একটা বিস্ময়ের ব্যাপার।
সাহিত্য সাধনা এবং সংগীতেই তিনি শুধু থেমে থাকেননি। পরাধীন ভারতবর্ষে লুটেরা ব্রিটিশদের এ দেশ থেকে তাড়াতে সক্রিয় রাজনীতিতেও অংশগ্রহণ করেছিলেন। সেখানে তিনি খুব সফল না হলেও আন্তরিকভাবে সেই রাজনৈতিক প্রক্রিয়ার সঙ্গে যুক্ত হয়েছিলেন। পত্রিকা সম্পাদনার কাজ তিনি বারবার গ্রহণ করেছেন। কিন্তু শেষ জীবনে এসে তাঁর প্রধান কর্মক্ষেত্র হয়ে দাঁড়িয়েছিল সংগীত। এটাও বিস্ময়ের ব্যাপার যে ওই বয়সে তিনি ভারতীয় উচ্চাঙ্গসংগীতের সঙ্গে কীভাবে এত গভীরভাবে মিশে গেলেন এবং তা আত্মস্থ করলেন! তাঁর অসংখ্য রাগাশ্রয়ী গান প্রমাণ করে যে তিনি সংগীতের নানা দিক গভীরভাবে বুঝতেন, চর্চা করতেন এবং লেখা ও সুর সৃষ্টিতেও আত্মনিয়োগ করতেন। তিনিই প্রথম পঞ্চগীতি কবিদের মধ্যে সংগীতের একাধিপত্যে বিশ্বাস করতেন না। তাঁর গান অন্য সুরকারেরাও সুর দিতেন। সেই গানগুলো প্রায় প্রতিটি ক্ষেত্রে জনপ্রিয় হয়েছে এবং শ্রোতার হৃদয়ের গভীরে তা স্পর্শ করেছে।
অনেকেই বলেন, বিশেষ করে অধ্যাপক ও গবেষকেরা নিম্নবর্গের মানুষদের শিল্পের অধিকার নিয়ে কথা বলেন। তাঁরা বর্তমানের কোনো অর্ধশিক্ষিত এবং অশ্লীল শিল্পচর্চাকে নিম্নবর্গের শিল্পীদের অধিকার বলে মনে করেন। কিন্তু কাজী নজরুল ইসলামের কথা তাঁরা সহসাই ভুলে যান, ভুলে যান লালন সাঁইজির কথাও। কাজী নজরুল ইসলাম কি সোনার চামচ মুখে নিয়ে জন্ম গ্রহণ করেছিলেন? তাঁর জন্য স্কুল-কলেজের দ্বার উন্মুক্ত ছিল না, মক্তবে পড়া অবস্থাতেই তাঁকে যেতে হয়েছিল লেটো গানের দলে। শিক্ষার প্রতি এক দুর্নিবার আগ্রহে তিনি শহর থেকে শহরে ঘুরেছেন। তারপরও প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা তাঁর ভাগ্যে তেমন জোটেনি। সম্ভবত এটাই তাঁর সৌভাগ্য। যেমন রবীন্দ্রনাথও প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার দিকে কখনো যাননি। তিনি যে কতটা অধ্যয়ন করেছেন এবং নিজেকে তৈরি করার জন্য বিশ্বের তাবৎ সাহিত্যের কাছে যেতে চাইতেন। এটা ভাবতে সত্যিই অবাক লাগে! অনেক ধর্মগ্রন্থ এবং পাশাপাশি মহাভারত, রামায়ণ এবং উপনিষদও তিনি পড়েছেন গভীর অভিনিবেশের সঙ্গে।
তাঁর জীবনে রয়েছে অনেক বঞ্চনা, অনেক গ্লানি এবং সেই সঙ্গে অবহেলা। একদিকে ভারতবর্ষের নিরন্ন অনাহারী মানুষ, অন্যদিকে বিশাল কাব্যসম্ভার সংগীতের মহাসমুদ্রে নিপতিত ভারতবর্ষ। দারিদ্র্যকে সঙ্গী করে তিনি শিল্পের অকূল সমুদ্রে ঝাঁপ দিয়েছিলেন। মাত্র বাইশ বছরের সৃজনশীল জীবনে সাহিত্যের এতগুলো ক্ষেত্রে তাঁর পদচারণ এবং সেই সঙ্গে সংগীতের এক নতুন দিগন্ত আবিষ্কার করা কেবল নজরুলের পক্ষেই সম্ভব হয়েছিল।
১৯২৯ সালে কলকাতার আলবার্ট হলে তাঁর সংবর্ধনার আয়োজন করা হয়েছিল যখন, তাঁর বয়স তখন মাত্র একত্রিশ। সেই সভায় বাঙালির অনেক বড় বড় নেতা, কবি এবং সুধীজনের উপস্থিত থাকার কথা ছিল। অনেকই আসেননি। তারপরও সেখানে উপস্থিত ছিলেন নেতাজি সুভাস চন্দ্র বসু। নেতাজি তাঁর বক্তৃতায় বলেছিলেন, ‘আমাদের রণসংগীত ছিল না, নজরুল আমাদের রণসংগীত দিয়েছেন। আমরা যখন যুদ্ধে যাব, নজরুলের গান গাইতে গাইতে যাব। নজরুল আমাদের কারাগারের গান দিয়েছেন। আমরা যখন কারাগারে থাকব, তখন নজরুলের গান গাইতে গাইতে আমরা স্বাধীনতার স্বপ্ন দেখব।’ গণসংগীত শব্দটি বলার সঙ্গে সঙ্গে যে মুখটি ভেসে ওঠে, সেটি কিন্তু নজরুলের।
নজরুল মুক্তির গান খুঁজতে গিয়ে আন্তর্জাতিক সংগীতের অনুবাদও করেছেন। তাহলে বোঝা যায় যে নজরুল আন্তর্জাতিক বিপ্লবের একটা কালের কেন্দ্রে অবস্থান করতেন। তাই তো করাচিতে বসেই তিনি রাশিয়ার বলশেভিক পার্টি ও আন্দোলনের কথা, বিজয়ের কথা জেনেছিলেন। মানুষের মুক্তির প্রতি যে আকাঙ্ক্ষা দেখা যাচ্ছে, সতেরো-আঠারো বছর বয়সেই সেটা তাঁর মধ্যে স্থান পেয়েছিল। তিনি তাঁর সাহিত্যচর্চার শুরুতে নামের সঙ্গে হাবিলদার যুক্ত করেছিলেন। জীবনাচরণের ক্ষেত্রেও তিনি একজন সৈনিকের আচারকে গ্রহণ করেছিলেন। সেই সময়ে অনুষ্ঠিত কংগ্রেসের একটি সম্মেলনে তিনি স্বেচ্ছাসেবকের দায়িত্বে ছিলেন। এই দায়িত্ব পালনকালে তিনি ফিল্ড মার্শালের পোশাক পরেছিলেন।
নজরুলের গানের যে বিচিত্র বিস্তার তা আজ পর্যন্ত অন্য গীতিকবিদের মধ্যে দেখা যায়নি। বিষয়বস্তুর দিক থেকেও তিনি বহুগামী। প্রকৃতি, প্রেম, ধর্মীয় সংগীত সেই সঙ্গে দুই ধর্মের সংগীত, উদ্দীপনামূলক গণসংগীত, রণসংগীত, আবার বাংলার আবহমান কালের সুরও তিনি ধারণ করেছিলেন। আপাদমস্তক এবং রক্তের প্রতিটি কণায় তিনি অসাম্প্রদায়িক চেতনাকে ধারণ করতেন। এতে কোনো কোনো সমাজ ক্ষুব্ধ হতো, তীব্র সমালোচনা ও কুৎসা তাঁকে বিদ্ধ করেছে। কিন্তু একমুহূর্তের জন্যও তিনি আদর্শচ্যুত হননি।
তাঁর জীবনটা ছিল আবেগে ভরা মানবিক। বসন্ত রোগে বুলবুল যখন মারা যায়, তখন তিনি প্রায় কপর্দকহীন। বুলবুল গাড়িতে চড়তে ভালোবাসত, তাই তার মরদেহ গোরস্থানে গাড়িতে করেই নিয়ে যেতে হবে। কিন্তু বসন্ত রোগীকে কেউ তখন গাড়িতে তুলতে রাজি হয়নি। তখন তাঁর এক পরিচিত স্বজন এসে সহায় হন। শেষে এক সদাশয় চালক বুলবুলের মৃতদেহটি গোরস্থানে নিয়ে আসেন। তারপর খুব অল্প লোকের সাহায্যে বুলবুলকে সমাধিস্থ করা হয়। এমনি দারিদ্র্যের মধ্যে তিনি জীবনের দীর্ঘ সময় কাটিয়েছেন। স্ত্রী প্রমীলা অসুস্থ, ঘরে খাবার নেই, নজরুল কলকাতার বাইরে থেকে জ্বর নিয়ে ফিরেছেন। গৃহের এই অবস্থায় তিনি একটি ট্যাক্সি করে গ্রামোফোন কোম্পানিতে চলে আসেন। গান রচনা করেন, সুর করেন এবং কোম্পানির কাছ থেকে টাকা নিয়ে ভাড়া পরিশোধ করে সামান্য কিছু টাকা নিয়ে ঘরে ফেরেন। সেই গান অবশ্য পরবর্তীকালে খুবই জনপ্রিয় হয়েছিল। তাঁর অসুস্থতা নিয়েও নানা বিভ্রান্তি চারদিকে ছড়িয়েছে কিন্তু প্রখ্যাত চিকিৎসক বিধান চন্দ্র রায় প্রথমেই বলেছিলেন এটি সিফিলিস নয়, কোনো ধরনের স্নায়বিক রোগ। তাঁর এক ভক্ত, অস্ট্রিয়াপ্রবাসী বাঙালি ডাক্তার নজরুলকে ভিয়েনায় নিয়ে যান। সেখানে এবং পরবর্তীকালে ইংল্যান্ডে প্রমাণিত হলো এটি মস্তিষ্কের রোগ নয়, সিফিলিসও নয়—এটি একটি জটিল স্নায়বিক ব্যাধি, যার চিকিৎসা তখনো বের হয়নি।
তবে নজরুলের প্রতি অবহেলারও শেষ ছিল না। পাকিস্তান সরকার তাঁর জন্য নানা রকম উদ্যোগ দেখিয়েছে এবং সেই সঙ্গে তাঁর চিকিৎসার প্রতিশ্রুতিও দিয়েছিল। তাঁর পুত্র কাজী সব্যসাচী বেশ কয়েকবার তদানীন্তন ক্ষমতাসীনদের কাছে দেনদরবারও করেছেন। কিন্তু কিছুই মেলেনি। পশ্চিমবঙ্গেও সরকারের পক্ষ থেকে তাঁর জন্য নানা রকম প্রতিশ্রুতি এসেছে। কিন্তু এর ছোট্ট একটি অংশই তাঁর ভাগ্যে জুটেছে।
বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর ঢাকায় তাঁর আগমন, অবস্থান—সবকিছুই যত্নের সঙ্গে পালন করার চেষ্টা হয়েছে। দুই দেশেই নজরুলের নামে ইনস্টিটিউট স্থাপিত হয়েছে। কিন্তু নজরুলচর্চা বা নজরুলের প্রতি মানুষের ভালোবাসাকে যথার্থ গুরুত্ব দেওয়া হয়নি। নজরুলের যৌবনে বাংলার শ্রেষ্ঠ গায়ক-গায়িকারা তাঁর গান গেয়েছেন, সুরকারেরা সুর দিয়েছেন, নজরুল তখন জীবন্ত হয়ে উঠেছিলেন। আজ জীবন্ত নজরুলকে আমরা দেখতে পাই না—না তাঁর গানে, না তাঁর সাহিত্যে। দায়সারা গোছের নজরুলজয়ন্তী উদ্যাপন, রেডিও-টেলিভিশনে কিছু গান অথবা তাঁর গল্পের নাট্যরূপ আমরা দেখতে পাই বটে, কিন্তু নজরুল আমাদের জীবনচর্চায় একটা স্থান দখল করতে পারতেন, যা আংশিকভাবেও হয়ে ওঠেনি।
মোল্লাদের প্রতি সেই সময়ে নজরুলের প্রবল ক্ষোভ ছিল, তাঁর সাহিত্যে এর স্পষ্ট প্রতিফলন আছে। আজ ধর্মকে রাজনৈতিকভাবে ব্যবহার করার বিরুদ্ধে নজরুল দাঁড়াতে পারতেন। এ কথাটাও আমরা প্রায় বিস্মৃত হতে চলেছি। তবুও নজরুল তাঁর সাহিত্যে, গানে চির অমর হয়ে থাকবেন। তাঁর সৃষ্টি সুধা পান করে বাঙালি এখনো একটা নবজীবন পেতে পারে।
লেখক: নাট্যব্যক্তিত্ব
মামুনুর রশীদ

আজ ১১ জ্যৈষ্ঠ। এই দিনে ১৩০৬ বঙ্গাব্দে আসানসোলের চুরুলিয়া গ্রামে জন্মেছিলেন কাজী নজরুল ইসলাম। ইংরেজি ১৮৯৯ সালে জন্মে মাত্র কুড়ি বছর বয়সেই সাহিত্যে তাঁর আগমনের বার্তা ধ্বনিত হয়েছিল। এর দুই বছর পরেই ‘বিদ্রোহী’ কবিতা রচনার মাধ্যমে বাংলা সাহিত্যে তাঁর দিগ্বিজয় ঘোষিত হয়েছিল। বিদ্রোহী কবিতায় তাঁর জ্ঞানের পরিধি পরিমাপ করতে গিয়ে তখনকার পাঠক-সমালোচকেরা অবাক বিস্ময়ে এক অলৌকিক প্রতিভার সন্ধান পান।
কালক্রমে চুরুলিয়ার সেই লেটো গানের দলের শিশু নজরুল গোটা বাংলা সাহিত্যে এক বিশাল আবহের সৃষ্টি করেছেন। তিনি কাব্যে, উপন্যাসে, ছোটগল্পে, প্রবন্ধে, অনুবাদে এবং সর্বোপরি সংগীতের এক অনন্য প্রতিভা হিসেবে আবির্ভূত হয়েছিলেন। যখন ‘ওমর খৈয়াম’ অনুবাদ করেন, তখন প্রশ্ন উঠেছিল নজরুল কতটা ফারসি জানেন। সৈয়দ মুজতবা আলী এর একটা জবাবও দিয়েছিলেন। যখন কোনো কবি অন্য কবির কবিতা অনুবাদ করেন, ভিন্ন ভাষী হওয়া সত্ত্বেও তিনি তা বুঝতে পারেন। বিদ্রোহী কবিতা রচনার আগে ওই বয়সে এতগুলো ধর্মগ্রন্থ, এতগুলো মিথ তিনি কী করে জানলেন, এটাও একটা বিস্ময়ের ব্যাপার।
সাহিত্য সাধনা এবং সংগীতেই তিনি শুধু থেমে থাকেননি। পরাধীন ভারতবর্ষে লুটেরা ব্রিটিশদের এ দেশ থেকে তাড়াতে সক্রিয় রাজনীতিতেও অংশগ্রহণ করেছিলেন। সেখানে তিনি খুব সফল না হলেও আন্তরিকভাবে সেই রাজনৈতিক প্রক্রিয়ার সঙ্গে যুক্ত হয়েছিলেন। পত্রিকা সম্পাদনার কাজ তিনি বারবার গ্রহণ করেছেন। কিন্তু শেষ জীবনে এসে তাঁর প্রধান কর্মক্ষেত্র হয়ে দাঁড়িয়েছিল সংগীত। এটাও বিস্ময়ের ব্যাপার যে ওই বয়সে তিনি ভারতীয় উচ্চাঙ্গসংগীতের সঙ্গে কীভাবে এত গভীরভাবে মিশে গেলেন এবং তা আত্মস্থ করলেন! তাঁর অসংখ্য রাগাশ্রয়ী গান প্রমাণ করে যে তিনি সংগীতের নানা দিক গভীরভাবে বুঝতেন, চর্চা করতেন এবং লেখা ও সুর সৃষ্টিতেও আত্মনিয়োগ করতেন। তিনিই প্রথম পঞ্চগীতি কবিদের মধ্যে সংগীতের একাধিপত্যে বিশ্বাস করতেন না। তাঁর গান অন্য সুরকারেরাও সুর দিতেন। সেই গানগুলো প্রায় প্রতিটি ক্ষেত্রে জনপ্রিয় হয়েছে এবং শ্রোতার হৃদয়ের গভীরে তা স্পর্শ করেছে।
অনেকেই বলেন, বিশেষ করে অধ্যাপক ও গবেষকেরা নিম্নবর্গের মানুষদের শিল্পের অধিকার নিয়ে কথা বলেন। তাঁরা বর্তমানের কোনো অর্ধশিক্ষিত এবং অশ্লীল শিল্পচর্চাকে নিম্নবর্গের শিল্পীদের অধিকার বলে মনে করেন। কিন্তু কাজী নজরুল ইসলামের কথা তাঁরা সহসাই ভুলে যান, ভুলে যান লালন সাঁইজির কথাও। কাজী নজরুল ইসলাম কি সোনার চামচ মুখে নিয়ে জন্ম গ্রহণ করেছিলেন? তাঁর জন্য স্কুল-কলেজের দ্বার উন্মুক্ত ছিল না, মক্তবে পড়া অবস্থাতেই তাঁকে যেতে হয়েছিল লেটো গানের দলে। শিক্ষার প্রতি এক দুর্নিবার আগ্রহে তিনি শহর থেকে শহরে ঘুরেছেন। তারপরও প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা তাঁর ভাগ্যে তেমন জোটেনি। সম্ভবত এটাই তাঁর সৌভাগ্য। যেমন রবীন্দ্রনাথও প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার দিকে কখনো যাননি। তিনি যে কতটা অধ্যয়ন করেছেন এবং নিজেকে তৈরি করার জন্য বিশ্বের তাবৎ সাহিত্যের কাছে যেতে চাইতেন। এটা ভাবতে সত্যিই অবাক লাগে! অনেক ধর্মগ্রন্থ এবং পাশাপাশি মহাভারত, রামায়ণ এবং উপনিষদও তিনি পড়েছেন গভীর অভিনিবেশের সঙ্গে।
তাঁর জীবনে রয়েছে অনেক বঞ্চনা, অনেক গ্লানি এবং সেই সঙ্গে অবহেলা। একদিকে ভারতবর্ষের নিরন্ন অনাহারী মানুষ, অন্যদিকে বিশাল কাব্যসম্ভার সংগীতের মহাসমুদ্রে নিপতিত ভারতবর্ষ। দারিদ্র্যকে সঙ্গী করে তিনি শিল্পের অকূল সমুদ্রে ঝাঁপ দিয়েছিলেন। মাত্র বাইশ বছরের সৃজনশীল জীবনে সাহিত্যের এতগুলো ক্ষেত্রে তাঁর পদচারণ এবং সেই সঙ্গে সংগীতের এক নতুন দিগন্ত আবিষ্কার করা কেবল নজরুলের পক্ষেই সম্ভব হয়েছিল।
১৯২৯ সালে কলকাতার আলবার্ট হলে তাঁর সংবর্ধনার আয়োজন করা হয়েছিল যখন, তাঁর বয়স তখন মাত্র একত্রিশ। সেই সভায় বাঙালির অনেক বড় বড় নেতা, কবি এবং সুধীজনের উপস্থিত থাকার কথা ছিল। অনেকই আসেননি। তারপরও সেখানে উপস্থিত ছিলেন নেতাজি সুভাস চন্দ্র বসু। নেতাজি তাঁর বক্তৃতায় বলেছিলেন, ‘আমাদের রণসংগীত ছিল না, নজরুল আমাদের রণসংগীত দিয়েছেন। আমরা যখন যুদ্ধে যাব, নজরুলের গান গাইতে গাইতে যাব। নজরুল আমাদের কারাগারের গান দিয়েছেন। আমরা যখন কারাগারে থাকব, তখন নজরুলের গান গাইতে গাইতে আমরা স্বাধীনতার স্বপ্ন দেখব।’ গণসংগীত শব্দটি বলার সঙ্গে সঙ্গে যে মুখটি ভেসে ওঠে, সেটি কিন্তু নজরুলের।
নজরুল মুক্তির গান খুঁজতে গিয়ে আন্তর্জাতিক সংগীতের অনুবাদও করেছেন। তাহলে বোঝা যায় যে নজরুল আন্তর্জাতিক বিপ্লবের একটা কালের কেন্দ্রে অবস্থান করতেন। তাই তো করাচিতে বসেই তিনি রাশিয়ার বলশেভিক পার্টি ও আন্দোলনের কথা, বিজয়ের কথা জেনেছিলেন। মানুষের মুক্তির প্রতি যে আকাঙ্ক্ষা দেখা যাচ্ছে, সতেরো-আঠারো বছর বয়সেই সেটা তাঁর মধ্যে স্থান পেয়েছিল। তিনি তাঁর সাহিত্যচর্চার শুরুতে নামের সঙ্গে হাবিলদার যুক্ত করেছিলেন। জীবনাচরণের ক্ষেত্রেও তিনি একজন সৈনিকের আচারকে গ্রহণ করেছিলেন। সেই সময়ে অনুষ্ঠিত কংগ্রেসের একটি সম্মেলনে তিনি স্বেচ্ছাসেবকের দায়িত্বে ছিলেন। এই দায়িত্ব পালনকালে তিনি ফিল্ড মার্শালের পোশাক পরেছিলেন।
নজরুলের গানের যে বিচিত্র বিস্তার তা আজ পর্যন্ত অন্য গীতিকবিদের মধ্যে দেখা যায়নি। বিষয়বস্তুর দিক থেকেও তিনি বহুগামী। প্রকৃতি, প্রেম, ধর্মীয় সংগীত সেই সঙ্গে দুই ধর্মের সংগীত, উদ্দীপনামূলক গণসংগীত, রণসংগীত, আবার বাংলার আবহমান কালের সুরও তিনি ধারণ করেছিলেন। আপাদমস্তক এবং রক্তের প্রতিটি কণায় তিনি অসাম্প্রদায়িক চেতনাকে ধারণ করতেন। এতে কোনো কোনো সমাজ ক্ষুব্ধ হতো, তীব্র সমালোচনা ও কুৎসা তাঁকে বিদ্ধ করেছে। কিন্তু একমুহূর্তের জন্যও তিনি আদর্শচ্যুত হননি।
তাঁর জীবনটা ছিল আবেগে ভরা মানবিক। বসন্ত রোগে বুলবুল যখন মারা যায়, তখন তিনি প্রায় কপর্দকহীন। বুলবুল গাড়িতে চড়তে ভালোবাসত, তাই তার মরদেহ গোরস্থানে গাড়িতে করেই নিয়ে যেতে হবে। কিন্তু বসন্ত রোগীকে কেউ তখন গাড়িতে তুলতে রাজি হয়নি। তখন তাঁর এক পরিচিত স্বজন এসে সহায় হন। শেষে এক সদাশয় চালক বুলবুলের মৃতদেহটি গোরস্থানে নিয়ে আসেন। তারপর খুব অল্প লোকের সাহায্যে বুলবুলকে সমাধিস্থ করা হয়। এমনি দারিদ্র্যের মধ্যে তিনি জীবনের দীর্ঘ সময় কাটিয়েছেন। স্ত্রী প্রমীলা অসুস্থ, ঘরে খাবার নেই, নজরুল কলকাতার বাইরে থেকে জ্বর নিয়ে ফিরেছেন। গৃহের এই অবস্থায় তিনি একটি ট্যাক্সি করে গ্রামোফোন কোম্পানিতে চলে আসেন। গান রচনা করেন, সুর করেন এবং কোম্পানির কাছ থেকে টাকা নিয়ে ভাড়া পরিশোধ করে সামান্য কিছু টাকা নিয়ে ঘরে ফেরেন। সেই গান অবশ্য পরবর্তীকালে খুবই জনপ্রিয় হয়েছিল। তাঁর অসুস্থতা নিয়েও নানা বিভ্রান্তি চারদিকে ছড়িয়েছে কিন্তু প্রখ্যাত চিকিৎসক বিধান চন্দ্র রায় প্রথমেই বলেছিলেন এটি সিফিলিস নয়, কোনো ধরনের স্নায়বিক রোগ। তাঁর এক ভক্ত, অস্ট্রিয়াপ্রবাসী বাঙালি ডাক্তার নজরুলকে ভিয়েনায় নিয়ে যান। সেখানে এবং পরবর্তীকালে ইংল্যান্ডে প্রমাণিত হলো এটি মস্তিষ্কের রোগ নয়, সিফিলিসও নয়—এটি একটি জটিল স্নায়বিক ব্যাধি, যার চিকিৎসা তখনো বের হয়নি।
তবে নজরুলের প্রতি অবহেলারও শেষ ছিল না। পাকিস্তান সরকার তাঁর জন্য নানা রকম উদ্যোগ দেখিয়েছে এবং সেই সঙ্গে তাঁর চিকিৎসার প্রতিশ্রুতিও দিয়েছিল। তাঁর পুত্র কাজী সব্যসাচী বেশ কয়েকবার তদানীন্তন ক্ষমতাসীনদের কাছে দেনদরবারও করেছেন। কিন্তু কিছুই মেলেনি। পশ্চিমবঙ্গেও সরকারের পক্ষ থেকে তাঁর জন্য নানা রকম প্রতিশ্রুতি এসেছে। কিন্তু এর ছোট্ট একটি অংশই তাঁর ভাগ্যে জুটেছে।
বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর ঢাকায় তাঁর আগমন, অবস্থান—সবকিছুই যত্নের সঙ্গে পালন করার চেষ্টা হয়েছে। দুই দেশেই নজরুলের নামে ইনস্টিটিউট স্থাপিত হয়েছে। কিন্তু নজরুলচর্চা বা নজরুলের প্রতি মানুষের ভালোবাসাকে যথার্থ গুরুত্ব দেওয়া হয়নি। নজরুলের যৌবনে বাংলার শ্রেষ্ঠ গায়ক-গায়িকারা তাঁর গান গেয়েছেন, সুরকারেরা সুর দিয়েছেন, নজরুল তখন জীবন্ত হয়ে উঠেছিলেন। আজ জীবন্ত নজরুলকে আমরা দেখতে পাই না—না তাঁর গানে, না তাঁর সাহিত্যে। দায়সারা গোছের নজরুলজয়ন্তী উদ্যাপন, রেডিও-টেলিভিশনে কিছু গান অথবা তাঁর গল্পের নাট্যরূপ আমরা দেখতে পাই বটে, কিন্তু নজরুল আমাদের জীবনচর্চায় একটা স্থান দখল করতে পারতেন, যা আংশিকভাবেও হয়ে ওঠেনি।
মোল্লাদের প্রতি সেই সময়ে নজরুলের প্রবল ক্ষোভ ছিল, তাঁর সাহিত্যে এর স্পষ্ট প্রতিফলন আছে। আজ ধর্মকে রাজনৈতিকভাবে ব্যবহার করার বিরুদ্ধে নজরুল দাঁড়াতে পারতেন। এ কথাটাও আমরা প্রায় বিস্মৃত হতে চলেছি। তবুও নজরুল তাঁর সাহিত্যে, গানে চির অমর হয়ে থাকবেন। তাঁর সৃষ্টি সুধা পান করে বাঙালি এখনো একটা নবজীবন পেতে পারে।
লেখক: নাট্যব্যক্তিত্ব

আজ ১১ জ্যৈষ্ঠ। এই দিনে ১৩০৬ বঙ্গাব্দে আসানসোলের চুরুলিয়া গ্রামে জন্মেছিলেন কাজী নজরুল ইসলাম। ইংরেজি ১৮৯৯ সালে জন্মে মাত্র কুড়ি বছর বয়সেই সাহিত্যে তাঁর আগমনের বার্তা ধ্বনিত হয়েছিল। এর দুই বছর পরেই ‘বিদ্রোহী’ কবিতা রচনার মাধ্যমে বাংলা সাহিত্যে তাঁর দিগ্বিজয় ঘোষিত হয়েছিল। বিদ্রোহী কবিতায় তাঁর জ্ঞানের পরিধি পরিমাপ করতে গিয়ে তখনকার পাঠক-সমালোচকেরা অবাক বিস্ময়ে এক অলৌকিক প্রতিভার সন্ধান পান।
কালক্রমে চুরুলিয়ার সেই লেটো গানের দলের শিশু নজরুল গোটা বাংলা সাহিত্যে এক বিশাল আবহের সৃষ্টি করেছেন। তিনি কাব্যে, উপন্যাসে, ছোটগল্পে, প্রবন্ধে, অনুবাদে এবং সর্বোপরি সংগীতের এক অনন্য প্রতিভা হিসেবে আবির্ভূত হয়েছিলেন। যখন ‘ওমর খৈয়াম’ অনুবাদ করেন, তখন প্রশ্ন উঠেছিল নজরুল কতটা ফারসি জানেন। সৈয়দ মুজতবা আলী এর একটা জবাবও দিয়েছিলেন। যখন কোনো কবি অন্য কবির কবিতা অনুবাদ করেন, ভিন্ন ভাষী হওয়া সত্ত্বেও তিনি তা বুঝতে পারেন। বিদ্রোহী কবিতা রচনার আগে ওই বয়সে এতগুলো ধর্মগ্রন্থ, এতগুলো মিথ তিনি কী করে জানলেন, এটাও একটা বিস্ময়ের ব্যাপার।
সাহিত্য সাধনা এবং সংগীতেই তিনি শুধু থেমে থাকেননি। পরাধীন ভারতবর্ষে লুটেরা ব্রিটিশদের এ দেশ থেকে তাড়াতে সক্রিয় রাজনীতিতেও অংশগ্রহণ করেছিলেন। সেখানে তিনি খুব সফল না হলেও আন্তরিকভাবে সেই রাজনৈতিক প্রক্রিয়ার সঙ্গে যুক্ত হয়েছিলেন। পত্রিকা সম্পাদনার কাজ তিনি বারবার গ্রহণ করেছেন। কিন্তু শেষ জীবনে এসে তাঁর প্রধান কর্মক্ষেত্র হয়ে দাঁড়িয়েছিল সংগীত। এটাও বিস্ময়ের ব্যাপার যে ওই বয়সে তিনি ভারতীয় উচ্চাঙ্গসংগীতের সঙ্গে কীভাবে এত গভীরভাবে মিশে গেলেন এবং তা আত্মস্থ করলেন! তাঁর অসংখ্য রাগাশ্রয়ী গান প্রমাণ করে যে তিনি সংগীতের নানা দিক গভীরভাবে বুঝতেন, চর্চা করতেন এবং লেখা ও সুর সৃষ্টিতেও আত্মনিয়োগ করতেন। তিনিই প্রথম পঞ্চগীতি কবিদের মধ্যে সংগীতের একাধিপত্যে বিশ্বাস করতেন না। তাঁর গান অন্য সুরকারেরাও সুর দিতেন। সেই গানগুলো প্রায় প্রতিটি ক্ষেত্রে জনপ্রিয় হয়েছে এবং শ্রোতার হৃদয়ের গভীরে তা স্পর্শ করেছে।
অনেকেই বলেন, বিশেষ করে অধ্যাপক ও গবেষকেরা নিম্নবর্গের মানুষদের শিল্পের অধিকার নিয়ে কথা বলেন। তাঁরা বর্তমানের কোনো অর্ধশিক্ষিত এবং অশ্লীল শিল্পচর্চাকে নিম্নবর্গের শিল্পীদের অধিকার বলে মনে করেন। কিন্তু কাজী নজরুল ইসলামের কথা তাঁরা সহসাই ভুলে যান, ভুলে যান লালন সাঁইজির কথাও। কাজী নজরুল ইসলাম কি সোনার চামচ মুখে নিয়ে জন্ম গ্রহণ করেছিলেন? তাঁর জন্য স্কুল-কলেজের দ্বার উন্মুক্ত ছিল না, মক্তবে পড়া অবস্থাতেই তাঁকে যেতে হয়েছিল লেটো গানের দলে। শিক্ষার প্রতি এক দুর্নিবার আগ্রহে তিনি শহর থেকে শহরে ঘুরেছেন। তারপরও প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা তাঁর ভাগ্যে তেমন জোটেনি। সম্ভবত এটাই তাঁর সৌভাগ্য। যেমন রবীন্দ্রনাথও প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার দিকে কখনো যাননি। তিনি যে কতটা অধ্যয়ন করেছেন এবং নিজেকে তৈরি করার জন্য বিশ্বের তাবৎ সাহিত্যের কাছে যেতে চাইতেন। এটা ভাবতে সত্যিই অবাক লাগে! অনেক ধর্মগ্রন্থ এবং পাশাপাশি মহাভারত, রামায়ণ এবং উপনিষদও তিনি পড়েছেন গভীর অভিনিবেশের সঙ্গে।
তাঁর জীবনে রয়েছে অনেক বঞ্চনা, অনেক গ্লানি এবং সেই সঙ্গে অবহেলা। একদিকে ভারতবর্ষের নিরন্ন অনাহারী মানুষ, অন্যদিকে বিশাল কাব্যসম্ভার সংগীতের মহাসমুদ্রে নিপতিত ভারতবর্ষ। দারিদ্র্যকে সঙ্গী করে তিনি শিল্পের অকূল সমুদ্রে ঝাঁপ দিয়েছিলেন। মাত্র বাইশ বছরের সৃজনশীল জীবনে সাহিত্যের এতগুলো ক্ষেত্রে তাঁর পদচারণ এবং সেই সঙ্গে সংগীতের এক নতুন দিগন্ত আবিষ্কার করা কেবল নজরুলের পক্ষেই সম্ভব হয়েছিল।
১৯২৯ সালে কলকাতার আলবার্ট হলে তাঁর সংবর্ধনার আয়োজন করা হয়েছিল যখন, তাঁর বয়স তখন মাত্র একত্রিশ। সেই সভায় বাঙালির অনেক বড় বড় নেতা, কবি এবং সুধীজনের উপস্থিত থাকার কথা ছিল। অনেকই আসেননি। তারপরও সেখানে উপস্থিত ছিলেন নেতাজি সুভাস চন্দ্র বসু। নেতাজি তাঁর বক্তৃতায় বলেছিলেন, ‘আমাদের রণসংগীত ছিল না, নজরুল আমাদের রণসংগীত দিয়েছেন। আমরা যখন যুদ্ধে যাব, নজরুলের গান গাইতে গাইতে যাব। নজরুল আমাদের কারাগারের গান দিয়েছেন। আমরা যখন কারাগারে থাকব, তখন নজরুলের গান গাইতে গাইতে আমরা স্বাধীনতার স্বপ্ন দেখব।’ গণসংগীত শব্দটি বলার সঙ্গে সঙ্গে যে মুখটি ভেসে ওঠে, সেটি কিন্তু নজরুলের।
নজরুল মুক্তির গান খুঁজতে গিয়ে আন্তর্জাতিক সংগীতের অনুবাদও করেছেন। তাহলে বোঝা যায় যে নজরুল আন্তর্জাতিক বিপ্লবের একটা কালের কেন্দ্রে অবস্থান করতেন। তাই তো করাচিতে বসেই তিনি রাশিয়ার বলশেভিক পার্টি ও আন্দোলনের কথা, বিজয়ের কথা জেনেছিলেন। মানুষের মুক্তির প্রতি যে আকাঙ্ক্ষা দেখা যাচ্ছে, সতেরো-আঠারো বছর বয়সেই সেটা তাঁর মধ্যে স্থান পেয়েছিল। তিনি তাঁর সাহিত্যচর্চার শুরুতে নামের সঙ্গে হাবিলদার যুক্ত করেছিলেন। জীবনাচরণের ক্ষেত্রেও তিনি একজন সৈনিকের আচারকে গ্রহণ করেছিলেন। সেই সময়ে অনুষ্ঠিত কংগ্রেসের একটি সম্মেলনে তিনি স্বেচ্ছাসেবকের দায়িত্বে ছিলেন। এই দায়িত্ব পালনকালে তিনি ফিল্ড মার্শালের পোশাক পরেছিলেন।
নজরুলের গানের যে বিচিত্র বিস্তার তা আজ পর্যন্ত অন্য গীতিকবিদের মধ্যে দেখা যায়নি। বিষয়বস্তুর দিক থেকেও তিনি বহুগামী। প্রকৃতি, প্রেম, ধর্মীয় সংগীত সেই সঙ্গে দুই ধর্মের সংগীত, উদ্দীপনামূলক গণসংগীত, রণসংগীত, আবার বাংলার আবহমান কালের সুরও তিনি ধারণ করেছিলেন। আপাদমস্তক এবং রক্তের প্রতিটি কণায় তিনি অসাম্প্রদায়িক চেতনাকে ধারণ করতেন। এতে কোনো কোনো সমাজ ক্ষুব্ধ হতো, তীব্র সমালোচনা ও কুৎসা তাঁকে বিদ্ধ করেছে। কিন্তু একমুহূর্তের জন্যও তিনি আদর্শচ্যুত হননি।
তাঁর জীবনটা ছিল আবেগে ভরা মানবিক। বসন্ত রোগে বুলবুল যখন মারা যায়, তখন তিনি প্রায় কপর্দকহীন। বুলবুল গাড়িতে চড়তে ভালোবাসত, তাই তার মরদেহ গোরস্থানে গাড়িতে করেই নিয়ে যেতে হবে। কিন্তু বসন্ত রোগীকে কেউ তখন গাড়িতে তুলতে রাজি হয়নি। তখন তাঁর এক পরিচিত স্বজন এসে সহায় হন। শেষে এক সদাশয় চালক বুলবুলের মৃতদেহটি গোরস্থানে নিয়ে আসেন। তারপর খুব অল্প লোকের সাহায্যে বুলবুলকে সমাধিস্থ করা হয়। এমনি দারিদ্র্যের মধ্যে তিনি জীবনের দীর্ঘ সময় কাটিয়েছেন। স্ত্রী প্রমীলা অসুস্থ, ঘরে খাবার নেই, নজরুল কলকাতার বাইরে থেকে জ্বর নিয়ে ফিরেছেন। গৃহের এই অবস্থায় তিনি একটি ট্যাক্সি করে গ্রামোফোন কোম্পানিতে চলে আসেন। গান রচনা করেন, সুর করেন এবং কোম্পানির কাছ থেকে টাকা নিয়ে ভাড়া পরিশোধ করে সামান্য কিছু টাকা নিয়ে ঘরে ফেরেন। সেই গান অবশ্য পরবর্তীকালে খুবই জনপ্রিয় হয়েছিল। তাঁর অসুস্থতা নিয়েও নানা বিভ্রান্তি চারদিকে ছড়িয়েছে কিন্তু প্রখ্যাত চিকিৎসক বিধান চন্দ্র রায় প্রথমেই বলেছিলেন এটি সিফিলিস নয়, কোনো ধরনের স্নায়বিক রোগ। তাঁর এক ভক্ত, অস্ট্রিয়াপ্রবাসী বাঙালি ডাক্তার নজরুলকে ভিয়েনায় নিয়ে যান। সেখানে এবং পরবর্তীকালে ইংল্যান্ডে প্রমাণিত হলো এটি মস্তিষ্কের রোগ নয়, সিফিলিসও নয়—এটি একটি জটিল স্নায়বিক ব্যাধি, যার চিকিৎসা তখনো বের হয়নি।
তবে নজরুলের প্রতি অবহেলারও শেষ ছিল না। পাকিস্তান সরকার তাঁর জন্য নানা রকম উদ্যোগ দেখিয়েছে এবং সেই সঙ্গে তাঁর চিকিৎসার প্রতিশ্রুতিও দিয়েছিল। তাঁর পুত্র কাজী সব্যসাচী বেশ কয়েকবার তদানীন্তন ক্ষমতাসীনদের কাছে দেনদরবারও করেছেন। কিন্তু কিছুই মেলেনি। পশ্চিমবঙ্গেও সরকারের পক্ষ থেকে তাঁর জন্য নানা রকম প্রতিশ্রুতি এসেছে। কিন্তু এর ছোট্ট একটি অংশই তাঁর ভাগ্যে জুটেছে।
বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর ঢাকায় তাঁর আগমন, অবস্থান—সবকিছুই যত্নের সঙ্গে পালন করার চেষ্টা হয়েছে। দুই দেশেই নজরুলের নামে ইনস্টিটিউট স্থাপিত হয়েছে। কিন্তু নজরুলচর্চা বা নজরুলের প্রতি মানুষের ভালোবাসাকে যথার্থ গুরুত্ব দেওয়া হয়নি। নজরুলের যৌবনে বাংলার শ্রেষ্ঠ গায়ক-গায়িকারা তাঁর গান গেয়েছেন, সুরকারেরা সুর দিয়েছেন, নজরুল তখন জীবন্ত হয়ে উঠেছিলেন। আজ জীবন্ত নজরুলকে আমরা দেখতে পাই না—না তাঁর গানে, না তাঁর সাহিত্যে। দায়সারা গোছের নজরুলজয়ন্তী উদ্যাপন, রেডিও-টেলিভিশনে কিছু গান অথবা তাঁর গল্পের নাট্যরূপ আমরা দেখতে পাই বটে, কিন্তু নজরুল আমাদের জীবনচর্চায় একটা স্থান দখল করতে পারতেন, যা আংশিকভাবেও হয়ে ওঠেনি।
মোল্লাদের প্রতি সেই সময়ে নজরুলের প্রবল ক্ষোভ ছিল, তাঁর সাহিত্যে এর স্পষ্ট প্রতিফলন আছে। আজ ধর্মকে রাজনৈতিকভাবে ব্যবহার করার বিরুদ্ধে নজরুল দাঁড়াতে পারতেন। এ কথাটাও আমরা প্রায় বিস্মৃত হতে চলেছি। তবুও নজরুল তাঁর সাহিত্যে, গানে চির অমর হয়ে থাকবেন। তাঁর সৃষ্টি সুধা পান করে বাঙালি এখনো একটা নবজীবন পেতে পারে।
লেখক: নাট্যব্যক্তিত্ব

গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।
১৯ দিন আগে
‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর...
১২ জুন ২০২৫
ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।
১৯ মে ২০২৫
আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
০৮ মে ২০২৫বাসস, ঢাকা

গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।
আজ সোমবার বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের ট্রাইব্যুনাল-১-এ মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা (আইও) মো. আলমগীরের জেরা শুরু করেন রাষ্ট্র নিযুক্ত আইনজীবী আমীর হোসেন। আইনজীবী আমীর হোসেন পলাতক আসামি শেখ হাসিনা ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের পক্ষে শুনানি করছেন। এর আগে গত মঙ্গলবার তদন্তকারী কর্মকর্তা মো. আলমগীরের সাক্ষ্য গ্রহণ সম্পন্ন হয়।
এই মামলার শুনানিতে এর আগে গণ-অভ্যুত্থানের অন্যতম প্রতীক শহীদ আবু সাঈদের বাবাসহ স্বজনহারা পরিবারের একাধিক সদস্য সাক্ষ্য দিয়েছেন। এ ছাড়া মামলার গুরুত্বপূর্ণ ‘স্টার উইটনেস’ হিসেবে সাক্ষ্য দেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক এবং জুলাই আন্দোলনের অন্যতম নেতৃত্বদানকারী নাহিদ ইসলাম এবং দৈনিক আমার দেশ পত্রিকার সম্পাদক ড. মাহমুদুর রহমান।
গত বছরের জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার আন্দোলন দমনে আওয়ামী লীগ সরকার, তাদের দলীয় ক্যাডার ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর একটি অংশ গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটিত করে বলে অভিযোগ ওঠে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে শেখ হাসিনা, তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল এবং তৎকালীন আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের বিরুদ্ধে গত ১০ জুলাই অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দেন ট্রাইব্যুনাল-১।
পরবর্তীকালে, এই মামলার অন্যতম আসামি সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন দোষ স্বীকার করে ঘটনার সত্যতা উদ্ঘাটনে রাজসাক্ষী (অ্যাপ্রোভার) হওয়ার জন্য ট্রাইব্যুনালে আবেদন করেন। ট্রাইব্যুনাল তাঁর আবেদন মঞ্জুর করলে তিনি রাজসাক্ষী হিসেবে এই মামলায় সাক্ষ্য দেন।
মামলার প্রসিকিউশন পক্ষে শুনানি করছেন চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম, প্রসিকিউটর মিজানুল ইসলাম এবং গাজী এসএইচ তামিম। শুনানিতে তাঁদের সঙ্গে অপর প্রসিকিউটররাও উপস্থিত ছিলেন।
অন্যদিকে, এই মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে রাজসাক্ষী হওয়া সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের পক্ষে আছেন আইনজীবী যায়েদ বিন আমজাদ।
মানবতাবিরোধী অপরাধের এই মামলা ছাড়াও ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে আরও দুটি মামলা বিচারাধীন। এর মধ্যে একটি মামলায় আওয়ামী লীগের সাড়ে ১৫ বছরের শাসনামলে সংঘটিত গুম-খুনের ঘটনায় তাঁকে আসামি করা হয়েছে। অন্য মামলাটি হলো রাজধানীর মতিঝিলের শাপলা চত্বরে হেফাজতে ইসলামের সমাবেশে হত্যাকাণ্ড নিয়ে। এই তিনটি মামলার বিচারকাজই বর্তমানে দুটি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে চলমান।

গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।
আজ সোমবার বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের ট্রাইব্যুনাল-১-এ মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা (আইও) মো. আলমগীরের জেরা শুরু করেন রাষ্ট্র নিযুক্ত আইনজীবী আমীর হোসেন। আইনজীবী আমীর হোসেন পলাতক আসামি শেখ হাসিনা ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের পক্ষে শুনানি করছেন। এর আগে গত মঙ্গলবার তদন্তকারী কর্মকর্তা মো. আলমগীরের সাক্ষ্য গ্রহণ সম্পন্ন হয়।
এই মামলার শুনানিতে এর আগে গণ-অভ্যুত্থানের অন্যতম প্রতীক শহীদ আবু সাঈদের বাবাসহ স্বজনহারা পরিবারের একাধিক সদস্য সাক্ষ্য দিয়েছেন। এ ছাড়া মামলার গুরুত্বপূর্ণ ‘স্টার উইটনেস’ হিসেবে সাক্ষ্য দেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক এবং জুলাই আন্দোলনের অন্যতম নেতৃত্বদানকারী নাহিদ ইসলাম এবং দৈনিক আমার দেশ পত্রিকার সম্পাদক ড. মাহমুদুর রহমান।
গত বছরের জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার আন্দোলন দমনে আওয়ামী লীগ সরকার, তাদের দলীয় ক্যাডার ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর একটি অংশ গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটিত করে বলে অভিযোগ ওঠে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে শেখ হাসিনা, তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল এবং তৎকালীন আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের বিরুদ্ধে গত ১০ জুলাই অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দেন ট্রাইব্যুনাল-১।
পরবর্তীকালে, এই মামলার অন্যতম আসামি সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন দোষ স্বীকার করে ঘটনার সত্যতা উদ্ঘাটনে রাজসাক্ষী (অ্যাপ্রোভার) হওয়ার জন্য ট্রাইব্যুনালে আবেদন করেন। ট্রাইব্যুনাল তাঁর আবেদন মঞ্জুর করলে তিনি রাজসাক্ষী হিসেবে এই মামলায় সাক্ষ্য দেন।
মামলার প্রসিকিউশন পক্ষে শুনানি করছেন চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম, প্রসিকিউটর মিজানুল ইসলাম এবং গাজী এসএইচ তামিম। শুনানিতে তাঁদের সঙ্গে অপর প্রসিকিউটররাও উপস্থিত ছিলেন।
অন্যদিকে, এই মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে রাজসাক্ষী হওয়া সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের পক্ষে আছেন আইনজীবী যায়েদ বিন আমজাদ।
মানবতাবিরোধী অপরাধের এই মামলা ছাড়াও ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে আরও দুটি মামলা বিচারাধীন। এর মধ্যে একটি মামলায় আওয়ামী লীগের সাড়ে ১৫ বছরের শাসনামলে সংঘটিত গুম-খুনের ঘটনায় তাঁকে আসামি করা হয়েছে। অন্য মামলাটি হলো রাজধানীর মতিঝিলের শাপলা চত্বরে হেফাজতে ইসলামের সমাবেশে হত্যাকাণ্ড নিয়ে। এই তিনটি মামলার বিচারকাজই বর্তমানে দুটি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে চলমান।

আজ ১১ জ্যৈষ্ঠ। এই দিনে ১৩০৬ বঙ্গাব্দে আসানসোলের চুরুলিয়া গ্রামে জন্মেছিলেন কাজী নজরুল ইসলাম। ইংরেজি ১৮৯৯ সালে জন্মে মাত্র কুড়ি বছর বয়সেই সাহিত্যে তাঁর আগমনের বার্তা ধ্বনিত হয়েছিল। এর দুই বছর পরেই ‘বিদ্রোহী’ কবিতা রচনার মাধ্যমে বাংলা
২৫ মে ২০২৩
‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর...
১২ জুন ২০২৫
ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।
১৯ মে ২০২৫
আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
০৮ মে ২০২৫
‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর সঙ্গে।
মাছের সুষ্ঠু প্রজনন, উৎপাদন, মৎস্যসম্পদ সংরক্ষণ ও টেকসই মৎস্য আহরণের জন্য সমুদ্রে সব ধরনের মাছ শিকার ৫৮ দিনের নিষেধাজ্ঞা গতকাল বুধবার দিবাগত মধ্যরাতে শেষ হয়েছে। তাই গতকাল দিনভর ছিল উপকূলের জেলেপল্লিগুলোতে ব্যস্ততা। অনেকে দেখে নিচ্ছিলেন ট্রলার ঠিকঠাক আছে কি না, কেউ জালের ছেঁড়া অংশ সেলাই করছিলেন, কেউ আবার প্রয়োজনীয় খাদ্যসামগ্রীসহ অন্য সরঞ্জাম গুছিয়ে নিচ্ছিলেন।
বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র এবং ফকিরহাট উপ-মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের ঘাটে গতকাল শত শত ট্রলার নোঙর করে রাখা ছিল। জেলেদের উপস্থিতিতে ঘাট এলাকা সরগরম হয়ে ওঠে। ফকিরহাটের মুদি-মনিহারি দোকানগুলোতে জেলেরা কেনাকাটা করতে ভিড় জমান। ফকিরহাট এলাকার বিসমিল্লাহ ট্রলারের মাঝি রহিম মিয়া বলেন, ‘সাগরে মাছ শিকারে যেতে সকল প্রস্তুতি নিয়েছি। নিষেধাজ্ঞার সময় শেষ হওয়ামাত্রই সাগরে নামব।’
জেলে নুরসাইদ ও ফোরকান মিয়া বলেন, ‘নিষেধাজ্ঞার সময় পরিবার-পরিজন নিয়ে বেশ কষ্টে কেটেছে। ওই সময়ে বেশ টাকা ঋণ করেছি। এখন সাগরে যাব। দেখি আল্লাহ ঋণ পরিশোধ করতে দেন কি না।’
নোয়াখালীর হাতিয়ার সূর্যমুখী, বাংলাবাজার, কাজিরবাজার, পাইতান মার্কেট চেয়ারম্যান ঘাটসহ বেশ কয়েকটি ঘাটে গতকাল জেলেদের ব্যস্ত সময় পার করতে দেখা গেছে। অনেকে নৌকায় জাল তুলছিলেন, আবার অনেকে জ্বালানি তেল মজুতসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্রী ট্রলারে নিয়ে যান। সূর্যমুখী ঘাটের এমভি মায়ের দোয়া ট্রলারের মাঝি জাফর উল্যা বলেন, ‘সাগরে ৮-১০ দিন থাকার প্রস্তুতি নিচ্ছি। সন্ধ্যায় সাগরের উদ্দেশে রওনা দেব।’
সূর্যমুখী ঘাট জেলে সমিতির সভাপতি জবিয়ল হক বলেন, ‘সাগরে নামতে প্রস্তুত নোয়াখালীর হাতিয়ার ২০টি ঘাটের লক্ষাধিক জেলে। এসব ঘাটে প্রায় ১০ হাজার ছোট-বড় ফিশিং ট্রলার রয়েছে। প্রতি ট্রলারে ১০ জন হলেও লক্ষাধিক জেলে এই মাছ ধরার সঙ্গে জড়িত। তাঁদের সবাই গত ৫৮ দিন তীরে বেকার ছিলেন।’
পিরোজপুরের ইন্দুরকানি উপজেলার পাড়েরহাট মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের পার্শ্ববর্তী এলাকার জেলেরা গতকাল দিনভর সাগরে যাওয়ার প্রস্তুতি নেন। এ ছাড়া মঠবাড়িয়া উপজেলার সাপলেজা, খেতাচিড়া, বড়মাছুয়া, ছোটমাছুয়া, ভান্ডারিয়া উপজেলার চরখালী, হেতালিয়া, কাউখালী উপজেলার সোনাকুর এলাকার জেলেরা, সদর উপজেলা এবং নেছারাবাদ উপজেলার বিভিন্ন এলাকার জেলেরা প্রস্তুতি শেষে গত রাতে বঙ্গোপসাগরে রওনা হন।
কয়েক দিন ধরে কক্সবাজার উপকূলের জেলেপল্লিগুলোতে নৌকা, জাল মেরামতসহ বিভিন্ন প্রস্তুতি সেরেছেন জেলেরা। গতকাল মেরিন ড্রাইভের টেকনাফের খুরেরমুখ, সাবরাং ও বাহারছড়া এলাকায় দেখা গেছে, সড়কে দাঁড় করিয়ে রাখা সারি সারি ট্রলারে জাল ও রসদ তোলেন জেলেরা।
একটি ট্রলারের মাঝি আবু তাহের জানান, এবার ভারতের সঙ্গে মিল রেখে নিষেধাজ্ঞা দেওয়ায় কেউ সাগরে মাছ শিকারে নামেনি। এতে উপকূলের কাছাকাছি সাগরে জাল ফেললেই ইলিশসহ অন্য মাছ পাওয়া যাবে বলে আশাবাদী তিনি।
কক্সবাজার শহরের ফিশারি ঘাটের মৎস্য ব্যবসায়ী সমিতির পরিচালক জুলফিকার আলী জানান, কক্সবাজার উপকূলে ছোট-বড় ৭ হাজারের মতো যান্ত্রিক ট্রলার রয়েছে। এসব ট্রলারে প্রায় এক লাখ জেলে ও শ্রমিক নিয়োজিত রয়েছেন। অধিকাংশ ট্রলার নিষেধাজ্ঞা ওঠার সঙ্গে সঙ্গে সাগরে রওনা হবে।
[প্রতিবেদন তৈরিতে তথ্য দিয়ে সহায়তা করেছেন বরগুনা ও আমতলী, পিরোজপুর, কক্সবাজার এবং হাতিয়া প্রতিনিধি]

‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর সঙ্গে।
মাছের সুষ্ঠু প্রজনন, উৎপাদন, মৎস্যসম্পদ সংরক্ষণ ও টেকসই মৎস্য আহরণের জন্য সমুদ্রে সব ধরনের মাছ শিকার ৫৮ দিনের নিষেধাজ্ঞা গতকাল বুধবার দিবাগত মধ্যরাতে শেষ হয়েছে। তাই গতকাল দিনভর ছিল উপকূলের জেলেপল্লিগুলোতে ব্যস্ততা। অনেকে দেখে নিচ্ছিলেন ট্রলার ঠিকঠাক আছে কি না, কেউ জালের ছেঁড়া অংশ সেলাই করছিলেন, কেউ আবার প্রয়োজনীয় খাদ্যসামগ্রীসহ অন্য সরঞ্জাম গুছিয়ে নিচ্ছিলেন।
বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র এবং ফকিরহাট উপ-মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের ঘাটে গতকাল শত শত ট্রলার নোঙর করে রাখা ছিল। জেলেদের উপস্থিতিতে ঘাট এলাকা সরগরম হয়ে ওঠে। ফকিরহাটের মুদি-মনিহারি দোকানগুলোতে জেলেরা কেনাকাটা করতে ভিড় জমান। ফকিরহাট এলাকার বিসমিল্লাহ ট্রলারের মাঝি রহিম মিয়া বলেন, ‘সাগরে মাছ শিকারে যেতে সকল প্রস্তুতি নিয়েছি। নিষেধাজ্ঞার সময় শেষ হওয়ামাত্রই সাগরে নামব।’
জেলে নুরসাইদ ও ফোরকান মিয়া বলেন, ‘নিষেধাজ্ঞার সময় পরিবার-পরিজন নিয়ে বেশ কষ্টে কেটেছে। ওই সময়ে বেশ টাকা ঋণ করেছি। এখন সাগরে যাব। দেখি আল্লাহ ঋণ পরিশোধ করতে দেন কি না।’
নোয়াখালীর হাতিয়ার সূর্যমুখী, বাংলাবাজার, কাজিরবাজার, পাইতান মার্কেট চেয়ারম্যান ঘাটসহ বেশ কয়েকটি ঘাটে গতকাল জেলেদের ব্যস্ত সময় পার করতে দেখা গেছে। অনেকে নৌকায় জাল তুলছিলেন, আবার অনেকে জ্বালানি তেল মজুতসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্রী ট্রলারে নিয়ে যান। সূর্যমুখী ঘাটের এমভি মায়ের দোয়া ট্রলারের মাঝি জাফর উল্যা বলেন, ‘সাগরে ৮-১০ দিন থাকার প্রস্তুতি নিচ্ছি। সন্ধ্যায় সাগরের উদ্দেশে রওনা দেব।’
সূর্যমুখী ঘাট জেলে সমিতির সভাপতি জবিয়ল হক বলেন, ‘সাগরে নামতে প্রস্তুত নোয়াখালীর হাতিয়ার ২০টি ঘাটের লক্ষাধিক জেলে। এসব ঘাটে প্রায় ১০ হাজার ছোট-বড় ফিশিং ট্রলার রয়েছে। প্রতি ট্রলারে ১০ জন হলেও লক্ষাধিক জেলে এই মাছ ধরার সঙ্গে জড়িত। তাঁদের সবাই গত ৫৮ দিন তীরে বেকার ছিলেন।’
পিরোজপুরের ইন্দুরকানি উপজেলার পাড়েরহাট মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের পার্শ্ববর্তী এলাকার জেলেরা গতকাল দিনভর সাগরে যাওয়ার প্রস্তুতি নেন। এ ছাড়া মঠবাড়িয়া উপজেলার সাপলেজা, খেতাচিড়া, বড়মাছুয়া, ছোটমাছুয়া, ভান্ডারিয়া উপজেলার চরখালী, হেতালিয়া, কাউখালী উপজেলার সোনাকুর এলাকার জেলেরা, সদর উপজেলা এবং নেছারাবাদ উপজেলার বিভিন্ন এলাকার জেলেরা প্রস্তুতি শেষে গত রাতে বঙ্গোপসাগরে রওনা হন।
কয়েক দিন ধরে কক্সবাজার উপকূলের জেলেপল্লিগুলোতে নৌকা, জাল মেরামতসহ বিভিন্ন প্রস্তুতি সেরেছেন জেলেরা। গতকাল মেরিন ড্রাইভের টেকনাফের খুরেরমুখ, সাবরাং ও বাহারছড়া এলাকায় দেখা গেছে, সড়কে দাঁড় করিয়ে রাখা সারি সারি ট্রলারে জাল ও রসদ তোলেন জেলেরা।
একটি ট্রলারের মাঝি আবু তাহের জানান, এবার ভারতের সঙ্গে মিল রেখে নিষেধাজ্ঞা দেওয়ায় কেউ সাগরে মাছ শিকারে নামেনি। এতে উপকূলের কাছাকাছি সাগরে জাল ফেললেই ইলিশসহ অন্য মাছ পাওয়া যাবে বলে আশাবাদী তিনি।
কক্সবাজার শহরের ফিশারি ঘাটের মৎস্য ব্যবসায়ী সমিতির পরিচালক জুলফিকার আলী জানান, কক্সবাজার উপকূলে ছোট-বড় ৭ হাজারের মতো যান্ত্রিক ট্রলার রয়েছে। এসব ট্রলারে প্রায় এক লাখ জেলে ও শ্রমিক নিয়োজিত রয়েছেন। অধিকাংশ ট্রলার নিষেধাজ্ঞা ওঠার সঙ্গে সঙ্গে সাগরে রওনা হবে।
[প্রতিবেদন তৈরিতে তথ্য দিয়ে সহায়তা করেছেন বরগুনা ও আমতলী, পিরোজপুর, কক্সবাজার এবং হাতিয়া প্রতিনিধি]

আজ ১১ জ্যৈষ্ঠ। এই দিনে ১৩০৬ বঙ্গাব্দে আসানসোলের চুরুলিয়া গ্রামে জন্মেছিলেন কাজী নজরুল ইসলাম। ইংরেজি ১৮৯৯ সালে জন্মে মাত্র কুড়ি বছর বয়সেই সাহিত্যে তাঁর আগমনের বার্তা ধ্বনিত হয়েছিল। এর দুই বছর পরেই ‘বিদ্রোহী’ কবিতা রচনার মাধ্যমে বাংলা
২৫ মে ২০২৩
গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।
১৯ দিন আগে
ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।
১৯ মে ২০২৫
আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
০৮ মে ২০২৫নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা

ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।
ভারতের নিষেধাজ্ঞার এক দিন পরই গত রোববার লালমনিরহাটের বুড়িমারী ও যশোরের বেনাপোল স্থলবন্দরসহ বিভিন্ন বন্দরে পণ্যের ট্রাক আটকে দেয় ভারত। সংশ্লিষ্টদের সূত্রে জানা যায়, রোববার ভারতের আমদানি বিধিনিষেধের কারণে বুড়িমারী সীমান্তে প্রাণের ১৭ ট্রাক খাদ্যপণ্য আটকে যায়। এ ছাড়া বেনাপোলে ৩৬টি পোশাক বোঝাই ট্রাকসহ অন্যান্য পণ্যের শতাধিক ট্রাক ঢুকতে পারেনি।
গতকাল সোমবার পর্যন্ত বুড়িমারী থেকে প্রাণের পণ্যবোঝাই ট্রাকগুলোর অর্ধেকের বেশি ফেরত নিয়ে আসে প্রতিষ্ঠানটি। এ ছাড়া বেনাপোলে পোর্টের ভেতরে ২৪টি ট্রাক ছাড়া বাকিগুলো ফেরত চলে যায়।
বেনাপোল বন্দর সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট স্টাফ অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মো. সাজেদুর রহমান গতকাল সোমবার আজকের পত্রিকাকে বলেন, গতকাল পোর্টের ভেতর ও বাইরে শতাধিক ট্রাক দাঁড়িয়ে ছিল। আজ পোর্টের ভেতরের ২৪টি ছাড়া বাকিগুলো ফেরত নিয়ে গেছেন মালিকেরা। এখন পর্যন্ত মনে হচ্ছে, পোর্টের ভেতরের ট্রাকগুলোও ফেরত নিতে হবে।
জানতে চাইলে প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের পরিচালক (বিপণন) কামরুজ্জামান কামাল আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমাদের হাতে ৬ মিলিয়ন ডলারের ক্রয় আদেশ রয়েছে। তার মধ্য থেকে রোববার বুড়িমারী দিয়ে ১৭ ট্রাকবোঝাই পণ্য পাঠিয়েছিলাম। কিন্তু সেগুলো ঢুকতে পারেনি। ট্রাকগুলো ফেরত আনা হচ্ছে। নতুন করে কাগজপত্র তৈরি করে অন্য পথ দিয়ে পণ্য পাঠাতে হবে।’
বেনাপোল স্থলবন্দর সূত্রে জানা যায়, ওই ২৪টি ট্রাক পোর্টের ভেতরে থাকায় এখনো তারা ভারতে প্রবেশের অপেক্ষায় রয়েছে। তাদের আশা, যেহেতু নিষেধাজ্ঞার আগে এই পণ্যগুলোর এলসি করা হয়েছিল, তাই এগুলো প্রবেশে অনুমতি পাবে। তবে এটি নির্ভর করবে বাংলাদেশ সরকারের আলোচনার ওপর।
এমন পরিস্থিতিতে সরকারের সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় রয়েছেন ব্যবসায়ীরা। ইতিমধ্যে অনেক রপ্তানিকারক রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) সঙ্গে আলোচনা করে সরকারের সহযোগিতা চেয়েছে।
স্থলবন্দরের মাধ্যমে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জসমূহ এবং আশু করণীয় নির্ধারণে বাণিজ্যসচিবের সভাপতিত্বে আজ মঙ্গলবার আন্তমন্ত্রণালয়ের সভা ডেকেছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, স্থলবন্দরের মাধ্যমে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জসমূহ এবং আশু করণীয় নির্ধারণে বাণিজ্যসচিবের সভাপতিত্বে বিকেল ৪টায় আন্তমন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে এই সভা অনুষ্ঠিত হবে।
সভায় নৌপরিবহন ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশন, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড, বাংলাদেশ স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষ, রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো, জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের প্রতিনিধিদের উপস্থিত থাকতে বলা হয়েছে। এ ছাড়া ব্যবসায়ী প্রতিনিধি হিসেবে এফবিসিসিআই, বিজিএমইএ, ভারত-বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির প্রতিনিধিদের উপস্থিতির জন্য আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে।
ভারতের শিল্প ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয় গত শনিবার হঠাৎ এক বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে স্থলবন্দর দিয়ে বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক আমদানি নিষিদ্ধ করে। শুধু ভারতের নবসেবা ও কলকাতা সমুদ্রবন্দর ব্যবহার করে দেশটির আমদানিকারকেরা বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক আমদানি করতে পারবেন বলে ওই বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়। এ ছাড়া বাংলাদেশ থেকে ভারতের আসাম, মেঘালয়, ত্রিপুরা ও মিজোরাম, পশ্চিমবঙ্গের চ্যাংড়াবান্দা ও ফুলবাড়ী শুল্ক স্টেশন দিয়ে ফল, ফলের স্বাদযুক্ত পানীয়, কোমল পানীয়, প্রক্রিয়াজাত খাদ্য, প্লাস্টিক পণ্য, সুতা, সুতার উপজাত, আসবাব রপ্তানিও নিষিদ্ধ করা হয় ওই বিজ্ঞপ্তিতে।
আমদানি ও রপ্তানিসংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা জানান, দেশের ২৪টি বন্দরের মধ্যে ১৬টি বন্দর দিয়ে ভারতের সঙ্গে আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য হয়ে থাকে। তবে যোগাযোগব্যবস্থা সহজ হওয়ায় বেনাপোল ও ভারতের পেট্রাপোল বন্দর দিয়ে সবচেয়ে বেশি আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য হয়। এর পরিমাণ ৮০ শতাংশ। বেনাপোল বন্দর দিয়ে প্রতিদিন ভারতে ২৫০ থেকে ৩০০ ট্রাকে বিভিন্ন ধরনের পণ্য রপ্তানি হয়। এর মধ্যে শতাধিক ট্রাক পণ্য থাকে তৈরি পোশাক।
এর আগে গত ৮ এপ্রিল বাংলাদেশের জন্য ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা বাতিল করে ভারত। ফলে ভারতের বিমানবন্দর ব্যবহার করে তৃতীয় কোনো দেশে তৈরি পোশাক রপ্তানি করতে পারছে না বাংলাদেশ। অন্যদিকে প্রায় এক মাস আগে ভারত থেকে বেনাপোল, ভোমরা, সোনামসজিদ, বাংলাবান্ধা, বুড়িমারী স্থলবন্দর দিয়ে সুতা আমদানির সুযোগ বন্ধ করে দেয় বাংলাদেশের জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)।
সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) বিশেষ ফেলো মোস্তাফিজুর রহমানের মতে, এই পাল্টাপাল্টি পদক্ষেপে তুলনামূলকভাবে বেশি নেতিবাচক প্রভাব পড়বে বাংলাদেশের ওপর। তাই ভারতের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য ঘাটতি কমানোর চেষ্টা অব্যাহত রাখাই সরকারের উচিত বলে মনে করছেন তিনি।
মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, আলোচনার মাধ্যমে বাংলাদেশ এবং ভারতের বিরোধপূর্ণ বিষয়সমূহ মিটিয়ে ফেলতে হবে এবং দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য সম্পর্কের ক্ষেত্রে ভারসাম্য প্রতিষ্ঠা করতে হবে। এটাই হবে উভয় দেশের জন্য কল্যাণকর।

ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।
ভারতের নিষেধাজ্ঞার এক দিন পরই গত রোববার লালমনিরহাটের বুড়িমারী ও যশোরের বেনাপোল স্থলবন্দরসহ বিভিন্ন বন্দরে পণ্যের ট্রাক আটকে দেয় ভারত। সংশ্লিষ্টদের সূত্রে জানা যায়, রোববার ভারতের আমদানি বিধিনিষেধের কারণে বুড়িমারী সীমান্তে প্রাণের ১৭ ট্রাক খাদ্যপণ্য আটকে যায়। এ ছাড়া বেনাপোলে ৩৬টি পোশাক বোঝাই ট্রাকসহ অন্যান্য পণ্যের শতাধিক ট্রাক ঢুকতে পারেনি।
গতকাল সোমবার পর্যন্ত বুড়িমারী থেকে প্রাণের পণ্যবোঝাই ট্রাকগুলোর অর্ধেকের বেশি ফেরত নিয়ে আসে প্রতিষ্ঠানটি। এ ছাড়া বেনাপোলে পোর্টের ভেতরে ২৪টি ট্রাক ছাড়া বাকিগুলো ফেরত চলে যায়।
বেনাপোল বন্দর সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট স্টাফ অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মো. সাজেদুর রহমান গতকাল সোমবার আজকের পত্রিকাকে বলেন, গতকাল পোর্টের ভেতর ও বাইরে শতাধিক ট্রাক দাঁড়িয়ে ছিল। আজ পোর্টের ভেতরের ২৪টি ছাড়া বাকিগুলো ফেরত নিয়ে গেছেন মালিকেরা। এখন পর্যন্ত মনে হচ্ছে, পোর্টের ভেতরের ট্রাকগুলোও ফেরত নিতে হবে।
জানতে চাইলে প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের পরিচালক (বিপণন) কামরুজ্জামান কামাল আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমাদের হাতে ৬ মিলিয়ন ডলারের ক্রয় আদেশ রয়েছে। তার মধ্য থেকে রোববার বুড়িমারী দিয়ে ১৭ ট্রাকবোঝাই পণ্য পাঠিয়েছিলাম। কিন্তু সেগুলো ঢুকতে পারেনি। ট্রাকগুলো ফেরত আনা হচ্ছে। নতুন করে কাগজপত্র তৈরি করে অন্য পথ দিয়ে পণ্য পাঠাতে হবে।’
বেনাপোল স্থলবন্দর সূত্রে জানা যায়, ওই ২৪টি ট্রাক পোর্টের ভেতরে থাকায় এখনো তারা ভারতে প্রবেশের অপেক্ষায় রয়েছে। তাদের আশা, যেহেতু নিষেধাজ্ঞার আগে এই পণ্যগুলোর এলসি করা হয়েছিল, তাই এগুলো প্রবেশে অনুমতি পাবে। তবে এটি নির্ভর করবে বাংলাদেশ সরকারের আলোচনার ওপর।
এমন পরিস্থিতিতে সরকারের সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় রয়েছেন ব্যবসায়ীরা। ইতিমধ্যে অনেক রপ্তানিকারক রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) সঙ্গে আলোচনা করে সরকারের সহযোগিতা চেয়েছে।
স্থলবন্দরের মাধ্যমে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জসমূহ এবং আশু করণীয় নির্ধারণে বাণিজ্যসচিবের সভাপতিত্বে আজ মঙ্গলবার আন্তমন্ত্রণালয়ের সভা ডেকেছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, স্থলবন্দরের মাধ্যমে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জসমূহ এবং আশু করণীয় নির্ধারণে বাণিজ্যসচিবের সভাপতিত্বে বিকেল ৪টায় আন্তমন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে এই সভা অনুষ্ঠিত হবে।
সভায় নৌপরিবহন ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশন, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড, বাংলাদেশ স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষ, রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো, জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের প্রতিনিধিদের উপস্থিত থাকতে বলা হয়েছে। এ ছাড়া ব্যবসায়ী প্রতিনিধি হিসেবে এফবিসিসিআই, বিজিএমইএ, ভারত-বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির প্রতিনিধিদের উপস্থিতির জন্য আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে।
ভারতের শিল্প ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয় গত শনিবার হঠাৎ এক বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে স্থলবন্দর দিয়ে বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক আমদানি নিষিদ্ধ করে। শুধু ভারতের নবসেবা ও কলকাতা সমুদ্রবন্দর ব্যবহার করে দেশটির আমদানিকারকেরা বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক আমদানি করতে পারবেন বলে ওই বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়। এ ছাড়া বাংলাদেশ থেকে ভারতের আসাম, মেঘালয়, ত্রিপুরা ও মিজোরাম, পশ্চিমবঙ্গের চ্যাংড়াবান্দা ও ফুলবাড়ী শুল্ক স্টেশন দিয়ে ফল, ফলের স্বাদযুক্ত পানীয়, কোমল পানীয়, প্রক্রিয়াজাত খাদ্য, প্লাস্টিক পণ্য, সুতা, সুতার উপজাত, আসবাব রপ্তানিও নিষিদ্ধ করা হয় ওই বিজ্ঞপ্তিতে।
আমদানি ও রপ্তানিসংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা জানান, দেশের ২৪টি বন্দরের মধ্যে ১৬টি বন্দর দিয়ে ভারতের সঙ্গে আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য হয়ে থাকে। তবে যোগাযোগব্যবস্থা সহজ হওয়ায় বেনাপোল ও ভারতের পেট্রাপোল বন্দর দিয়ে সবচেয়ে বেশি আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য হয়। এর পরিমাণ ৮০ শতাংশ। বেনাপোল বন্দর দিয়ে প্রতিদিন ভারতে ২৫০ থেকে ৩০০ ট্রাকে বিভিন্ন ধরনের পণ্য রপ্তানি হয়। এর মধ্যে শতাধিক ট্রাক পণ্য থাকে তৈরি পোশাক।
এর আগে গত ৮ এপ্রিল বাংলাদেশের জন্য ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা বাতিল করে ভারত। ফলে ভারতের বিমানবন্দর ব্যবহার করে তৃতীয় কোনো দেশে তৈরি পোশাক রপ্তানি করতে পারছে না বাংলাদেশ। অন্যদিকে প্রায় এক মাস আগে ভারত থেকে বেনাপোল, ভোমরা, সোনামসজিদ, বাংলাবান্ধা, বুড়িমারী স্থলবন্দর দিয়ে সুতা আমদানির সুযোগ বন্ধ করে দেয় বাংলাদেশের জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)।
সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) বিশেষ ফেলো মোস্তাফিজুর রহমানের মতে, এই পাল্টাপাল্টি পদক্ষেপে তুলনামূলকভাবে বেশি নেতিবাচক প্রভাব পড়বে বাংলাদেশের ওপর। তাই ভারতের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য ঘাটতি কমানোর চেষ্টা অব্যাহত রাখাই সরকারের উচিত বলে মনে করছেন তিনি।
মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, আলোচনার মাধ্যমে বাংলাদেশ এবং ভারতের বিরোধপূর্ণ বিষয়সমূহ মিটিয়ে ফেলতে হবে এবং দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য সম্পর্কের ক্ষেত্রে ভারসাম্য প্রতিষ্ঠা করতে হবে। এটাই হবে উভয় দেশের জন্য কল্যাণকর।

আজ ১১ জ্যৈষ্ঠ। এই দিনে ১৩০৬ বঙ্গাব্দে আসানসোলের চুরুলিয়া গ্রামে জন্মেছিলেন কাজী নজরুল ইসলাম। ইংরেজি ১৮৯৯ সালে জন্মে মাত্র কুড়ি বছর বয়সেই সাহিত্যে তাঁর আগমনের বার্তা ধ্বনিত হয়েছিল। এর দুই বছর পরেই ‘বিদ্রোহী’ কবিতা রচনার মাধ্যমে বাংলা
২৫ মে ২০২৩
গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।
১৯ দিন আগে
‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর...
১২ জুন ২০২৫
আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
০৮ মে ২০২৫
আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
১৮৯৮ সালে ভারতের উত্তর প্রদেশের একটি ধূলিধূসর টিলা খুঁড়ে পাওয়া মূল্যবান এই রত্নগুলো এক শতাব্দীর বেশি সময় ধরে একটি বেসরকারি ব্রিটিশ সংগ্রহাগারে প্রায় দৃষ্টিচক্ষুর আড়ালে ছিল। এখন যেহেতু রত্নগুলোর হাতবদলের সময় এসেছে, তাই নতুন সংগ্রাহকেরা আগ্রহ নিয়ে এগুলো সংগ্রহের জন্য অপেক্ষা করছেন। কিন্তু এখানে একটা অস্বস্তিও তৈরি হয়েছে।
গৌতম বুদ্ধের জন্মস্থান লুম্বিনীর কাছাকাছি, বর্তমানে ভারতের উত্তর প্রদেশে একটি ইটের ঘরের ভেতর থেকে প্রায় ১ হাজার ৮০০টি মুক্তা, রুবি, টোপাজ, নীলা ও নকশা করা সোনার পাত সংগ্রহ করা হয়েছিল। তবে এই রত্নগুলোর সঙ্গে সঙ্গে একটি খোদাই করা পাত্রে হাড়ের টুকরাও পাওয়া যায়, যেগুলোকে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষ বলে শনাক্ত করা হয়। এই আবিষ্কার তখন প্রত্নতত্ত্বের জগতে ব্যাপক আলোড়ন তোলে।
সাদাবি’স এশিয়ার চেয়ারম্যান নিকোলাস চাউ মনে করেন, স্মরণকালের বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর মাঝে এই রত্নসম্ভার অন্যতম। তবে এগুলো নিলামে তোলার কারণে একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন তৈরি হয়েছে। আর তা হচ্ছে—ভারতের ইতিহাসের সঙ্গে গভীরভাবে জড়িয়ে থাকা এবং বৌদ্ধদের কাছে পবিত্র এই সম্পদ বিক্রি করা কি নৈতিকভাবে গ্রহণযোগ্য?
১৮৯৮ সালে ব্রিটিশ এস্টেট ম্যানেজার উইলিয়াম ক্ল্যাক্সটন পেপ্পে লুম্বিনির ঠিক দক্ষিণে পিপ্রাওয়ায় অবস্থিত একটি ঢিবি খনন করেন। সেখান থেকেই প্রায় ২ হাজার বছর আগের ওই নির্দশনগুলো খুঁজে পাওয়া যায়।
ইতিহাসবিদদের মতে, প্রাপ্ত রত্নসম্ভার ও দেহাবশেষ, যা তখনো পর্যন্ত অক্ষত ছিল, সেগুলো গৌতম বুদ্ধের শাক্য বংশের এবং বিশ্বব্যাপী বৌদ্ধদের ঐতিহ্য। হাড়ের নিদর্শনগুলো থাইল্যান্ড, শ্রীলঙ্কা ও মিয়ানমারের মতো দেশগুলোতে বিতরণ করা হয়েছে। এসব দেশে এখনো সেগুলোর পূজা করা হয়।

আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
১৮৯৮ সালে ভারতের উত্তর প্রদেশের একটি ধূলিধূসর টিলা খুঁড়ে পাওয়া মূল্যবান এই রত্নগুলো এক শতাব্দীর বেশি সময় ধরে একটি বেসরকারি ব্রিটিশ সংগ্রহাগারে প্রায় দৃষ্টিচক্ষুর আড়ালে ছিল। এখন যেহেতু রত্নগুলোর হাতবদলের সময় এসেছে, তাই নতুন সংগ্রাহকেরা আগ্রহ নিয়ে এগুলো সংগ্রহের জন্য অপেক্ষা করছেন। কিন্তু এখানে একটা অস্বস্তিও তৈরি হয়েছে।
গৌতম বুদ্ধের জন্মস্থান লুম্বিনীর কাছাকাছি, বর্তমানে ভারতের উত্তর প্রদেশে একটি ইটের ঘরের ভেতর থেকে প্রায় ১ হাজার ৮০০টি মুক্তা, রুবি, টোপাজ, নীলা ও নকশা করা সোনার পাত সংগ্রহ করা হয়েছিল। তবে এই রত্নগুলোর সঙ্গে সঙ্গে একটি খোদাই করা পাত্রে হাড়ের টুকরাও পাওয়া যায়, যেগুলোকে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষ বলে শনাক্ত করা হয়। এই আবিষ্কার তখন প্রত্নতত্ত্বের জগতে ব্যাপক আলোড়ন তোলে।
সাদাবি’স এশিয়ার চেয়ারম্যান নিকোলাস চাউ মনে করেন, স্মরণকালের বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর মাঝে এই রত্নসম্ভার অন্যতম। তবে এগুলো নিলামে তোলার কারণে একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন তৈরি হয়েছে। আর তা হচ্ছে—ভারতের ইতিহাসের সঙ্গে গভীরভাবে জড়িয়ে থাকা এবং বৌদ্ধদের কাছে পবিত্র এই সম্পদ বিক্রি করা কি নৈতিকভাবে গ্রহণযোগ্য?
১৮৯৮ সালে ব্রিটিশ এস্টেট ম্যানেজার উইলিয়াম ক্ল্যাক্সটন পেপ্পে লুম্বিনির ঠিক দক্ষিণে পিপ্রাওয়ায় অবস্থিত একটি ঢিবি খনন করেন। সেখান থেকেই প্রায় ২ হাজার বছর আগের ওই নির্দশনগুলো খুঁজে পাওয়া যায়।
ইতিহাসবিদদের মতে, প্রাপ্ত রত্নসম্ভার ও দেহাবশেষ, যা তখনো পর্যন্ত অক্ষত ছিল, সেগুলো গৌতম বুদ্ধের শাক্য বংশের এবং বিশ্বব্যাপী বৌদ্ধদের ঐতিহ্য। হাড়ের নিদর্শনগুলো থাইল্যান্ড, শ্রীলঙ্কা ও মিয়ানমারের মতো দেশগুলোতে বিতরণ করা হয়েছে। এসব দেশে এখনো সেগুলোর পূজা করা হয়।

আজ ১১ জ্যৈষ্ঠ। এই দিনে ১৩০৬ বঙ্গাব্দে আসানসোলের চুরুলিয়া গ্রামে জন্মেছিলেন কাজী নজরুল ইসলাম। ইংরেজি ১৮৯৯ সালে জন্মে মাত্র কুড়ি বছর বয়সেই সাহিত্যে তাঁর আগমনের বার্তা ধ্বনিত হয়েছিল। এর দুই বছর পরেই ‘বিদ্রোহী’ কবিতা রচনার মাধ্যমে বাংলা
২৫ মে ২০২৩
গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।
১৯ দিন আগে
‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর...
১২ জুন ২০২৫
ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।
১৯ মে ২০২৫