মাহমুদুল মাসুদ মুক্তিযোদ্ধা

ফেব্রুয়ারি এলেই বাংলা ভাষা নিয়ে হইচই আর সাদাকালো পোশাক নিয়ে মাতামাতি শুরু হয়ে যায়। তারপর আবার পরের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত নীরবতা। মাঝখানে পয়লা বৈশাখে আবার বাঙালিত্ব জেগে ওঠে। লাল-সাদা পোশাক নিয়ে পান্তা-ইলিশ। এতে দোষের কিছু নেই; বরং সংস্কারমুক্ত দুটো বিষয় বাঙালিদের অল্প সময়ের জন্য হলেও এক ও ধর্মনিরপেক্ষ করে তোলে। আর বাংলা ভাষা থেকেই তো বাংলাদেশের সৃষ্টি। একুশে ফেব্রুয়ারি থেকে ছাব্বিশে মার্চ—এক সুতোয় গাঁথা। আবু হেনা মোস্তফা কামালের অবিস্মরণীয় গানের কথায়, ‘অপমানে তুমি জ্বলে উঠেছিলে সেদিন বর্ণমালা, সেই থেকে শুরু দিনবদলের পালা’।
ভাষা নদীর মতো প্রবহমান। ‘দিবে আর নিবে, মিলাবে মিলিবে’—ভাষার বৈশিষ্ট্য। বাংলা ভাষায় যে কেবল ইংরেজি বা অন্যান্য ভাষার শব্দ ঢুকেছে, তা-ই নয়। ইংরেজিতেও বাংলা শব্দ ঢুকেছে। যেমন পথ, বাংলো, রায়ট, ডিঙ্গি, অবতার, গুরু, পণ্ডিত, মোগল, জঙ্গল, টিপয় (তেপায়া), নার্ড (নারদ), ইয়োগা (যোগ) ইত্যাদি। যদিও সাহেবরা এগুলোকে হিন্দুস্তানি শব্দ বলে অভিধানে উল্লেখ করেছেন। কারণ, কোনো বাঙালি এ নিয়ে মাথা ঘামায়নি এবং প্রতিবাদ করেনি।
পৃথিবীতে একমাত্র বাংলাভাষী রাষ্ট্র হচ্ছে বাংলাদেশ। ভারতে বাংলা ভাষা আছে, অনেক ভাষার মধ্যে প্রাদেশিক বা আঞ্চলিক সংখ্যালঘু ভাষা হিসেবে। সেই হিসেবে বাংলাদেশের দায়িত্ব অনেক। এই ভাষাকে রক্ষা করা এবং সম্মানের সঙ্গে রাখা কঠিন। এটাকে ছেলেখেলা মনে করে হালকাভাবে নেওয়া ঠিক নয়। শুধু মুখে বললেই হবে না যে ‘শহীদের রক্ত বৃথা যেতে দেব না’। ইদানীং অনেক বেসরকারি গণমাধ্যম এই ভাষাকে নিয়ে রীতিমতো ছিনিমিনি খেলছে। কাঁচা পয়সার গরমে ভাষা অতিষ্ঠ। মনে হয় এসব দেখার কেউ নেই।
পশ্চিমবঙ্গ
পশ্চিমবঙ্গে বাংলা ভাষা এখন ‘বিন্দাস’, আর সেখানকার লোকজন এখন ‘ঝাক্কাস’। তারা এখন ‘কান খুলে শুনে’ যা হলো হিন্দি সিনেমার সংলাপ ‘কান খুল কর সুন্ লো’র বঙ্গানুবাদ। কে কত ভালো হিন্দি বলতে পারে এর প্রতিযোগিতা চলে। এমনকি ক্রিকেটার সৌরভ গাঙ্গুলীর মতো তারকারা নিজের নামটা পর্যন্ত বাংলা টেলিভিশনে হিন্দি কায়দায় বলেন, ‘সাঔরাভ’। বেসরকারি বাংলা টেলিভিশন সিরিয়ালে হিন্দি গান বাংলা ভাষাকে জাতে তুলছে। সেই সত্যজিৎ রায়ের বাঙালি আর নেই।
অথচ বাংলা ব্যাকরণে চলতি ভাষার সংজ্ঞা আমাদের স্কুলের বইয়ে পড়েছি—চলতি ভাষা হলো পশ্চিমবঙ্গের কথ্য ভাষা, বিশেষ করে যা নদীয়ার শান্তিপুর অঞ্চলে বলা হয়। যেমন ‘রিসিভড ইংলিশ’ বা মানসম্পন্ন ইংরেজি হলো যা মূলত দক্ষিণ ইংল্যান্ডের অক্সফোর্ডশায়ার এবং কেমব্রিজশায়ারের শিক্ষিত লোকেরা বলে থাকে। অনেকে তাকে ‘কিংস ইংলিশ’ বা ‘বিবিসি ইংলিশ’ও বলে। পশ্চিমবঙ্গেও চব্বিশ পরগনা এবং অন্যান্য জেলার কথার মধ্যে কিছু সূক্ষ্ম পার্থক্য আছে। কলকাতার ক্যালকেশিয়ান, ঢাকাই কুট্টি বা লন্ডনের ককনি স্পষ্টত ভিন্ন ধরনের উচ্চারণে স্থানীয় কথ্য ভাষা।
বাংলাদেশ
আগের পূর্ব বাংলা এখনকার বাংলাদেশ রাষ্ট্র, যেখানে আগের ১৭ জেলার ১৭ রকমের আঞ্চলিক ভাষা, যার একটি বিশাল অভিধান ভাষাবিজ্ঞানী ডক্টর মুহম্মদ শহীদুল্লাহ্র তত্ত্বাবধানে সংকলিত এবং বাংলা একাডেমি থেকে প্রকাশিত হয়। পূর্ববঙ্গের হরেক রকম আঞ্চলিক ভাষার কারণে ব্রিটিশ আমল থেকেই অবিভক্ত বাংলায় মানসম্পন্ন কথ্য ভাষা হিসেবে চলতি ভাষাকে গ্রহণ করা হয়। লেখ্য ভাষা হিসেবে সাধু এবং চলতি—দুটোই চলছিল। বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর সাধু ভাষা প্রায় বিলুপ্তির পথে। কেবল অধ্যাপক ডক্টর সলিমুল্লাহ খান এককভাবে একে রক্ষার আপ্রাণ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। আর চলতি ভাষা বলতে এখন মনে হয় কিছু নেই। চলতি ভাষা বললে তাতে কেমন ভারতীয় গন্ধ বেরোয়। তাই এখন সব প্রমিত ভাষা!
দুঃখের বিষয়, এখন কিছু বাঙালি টাকার জোরে ভাষা নিয়ে যা খুশি তা-ই করছে। টাকার জোরে গণমাধ্যমের মালিক—তাই ধরাকে সরা জ্ঞান করছে। যেমন দক্ষিণ না বলে এখন বলে ‘সাউথ’। উত্তরকে বলে ‘নর্থ’। যথা: সাউথ কোরিয়া, সাউথ আফ্রিকা, নর্থ কোরিয়া ইত্যাদি। যোগব্যায়ামকে বলে ইয়োগা। তারিখকে যা ইচ্ছা তা-ই বলে। যেমন সাত জানুয়ারি, এক ফেব্রুয়ারি, একুশ ফেব্রুয়ারি, সাত মার্চ, সতেরো মার্চ, ছাব্বিশ মার্চ, পনেরো আগস্ট, ষোলো ডিসেম্বর ইত্যাদি। সাতই, পয়লা, একুশে, সতেরোই, ছাব্বিশে, পনেরোই, ষোলোই আর বলে না। ওগুলো নাকি সেকেলে! এ বিষয়ে তথ্য মন্ত্রণালয়ের সুস্পষ্ট নির্দেশ আছে বাংলা একাডেমি প্রকাশিত ভাষাবিদ নরেন বিশ্বাসের উচ্চারণ অভিধান অনুসরণ করার। কিন্তু তারা থোড়াই পরোয়া করে!
আর সাধু-চলতির মিশ্রণ বা গুরুচণ্ডালীর কোনো সীমা-পরিসীমা নেই। এখানে অজ্ঞতাই মুখ্য। অনেকের ধারণা কেবল খাইয়া, যাইয়া, চলিয়া, বসিয়া, পড়িয়া ইত্যাদি সাধু। এদের চলতি রূপ (খেয়ে, যেয়ে, চলে, বসে, পড়ে) করলেই সব ঠিক। আর কিছু করার নেই। শিক্ষকও তো সে রকম পেয়েছে তারা! কিন্তু আরও যে অনেক কিছু আছে, তা শেখাবে কে?
এফএম ব্যান্ডের বেতারে একশ্রেণির অর্বাচীন তরুণ-তরুণীর হাতে পড়ে বাংলা ভাষার ত্রাহি মধুসূদন অবস্থা, যা ভুঁইফোড় সংস্কৃতির প্রকৃষ্ট উদাহরণ। বেসরকারি টেলিভিশনে খবরের মান বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই প্রায় তলানিতে। কায়দা করে এখন বলা হয় সংবাদ উপস্থাপক। পাঠক নয়। উপস্থাপিকা বা পাঠিকাও নয়। যেন নারী-পুরুষ একাকার হয়ে গেছে। এটা নাকি আধুনিক বাংলা! অনেকে খবর পড়েন, নিজের নামটা পর্যন্ত স্পষ্ট উচ্চারণ করতে পারেন না। এখানে যোগ্যতার থেকে মালিকদের এবং কর্তাব্যক্তিদের আত্মীয়স্বজন-পরিচিতদের প্রাধান্য বেশি। অথচ পাকিস্তান আমলেও সংবাদপাঠের মানে পশ্চিমবঙ্গ তথা ভারতের থেকে অনেক ক্ষেত্রে আমরা এগিয়ে ছিলাম।
যাঁদের কথা এখনো মনে পড়ে, তাঁদের মধ্যে কয়েকজনের নাম উল্লেখ করা যেতে পারে। যেমন: নুরুল ইসলাম, নুরুল ইসলাম সরকার, কাফি খান, দাউদ খান মজলিস, সরকার কবিরুদ্দিন, তাজুল ইসলাম, সিরাজুল মজিদ মামুন, রামেন্দু মজুমদার, রোকেয়া হায়দার, মাসুমা খাতুন, দিলারা হাশেম প্রমুখ। বেতারে অনুষ্ঠান ঘোষণায় এনাম চৌধুরী, ফজলুল কবির, আজমেরী জামান (রেশমা)। আকাশবাণী দিল্লি থেকে খবর পড়তেন বিজন বোস, ইভা নাগ, নীলিমা সান্যাল প্রমুখ। আকাশবাণী কলকাতার অনুষ্ঠান ঘোষণায় কাজী সব্যসাচী, দিলীপ ঘোষ, পার্থ ঘোষ, গৌরী ঘোষ, দেবদুলাল বন্দ্যোপাধ্যায়, যার সংবাদ পরিক্রমা বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে বিশেষ ভূমিকা রেখেছিল। কাজেই নিছক তোতা পাখির মতো ভুল উচ্চারণে অস্পষ্টভাবে খবর পড়ে গেলেই হলো না। দর্শক-শ্রোতাদের মনে স্থান করে নেওয়া সহজ নয়।
কিন্তু শুদ্ধ-অশুদ্ধ ভাষা দেখবে কে? তথ্য মন্ত্রণালয়ে অতিরিক্ত সচিবের ওপর একসময় কিছুটা দায়িত্ব ছিল নজরদারি করার। কড়াকড়ি কোনো তদারকি ছিল না। এ জন্য বাংলা একাডেমিতে একটি নজরদারি শাখা বা মনিটরিং সেল করা যেতে পারে। শুধু শাখা থাকলেই হবে না; সেখানে উপযুক্ত লোক থাকতে হবে। উদ্দেশ্য হবে শুধু ভাষার শুদ্ধতা দেখা, কোনো নিয়ন্ত্রণ নয়। বর্তমানে বাংলা একাডেমির প্রধান কাজ হয়ে গেছে বইমেলার আয়োজন করা।
বাংলা ভাষা এক ও অভিন্ন, যে ভাষায় রবীন্দ্রনাথ, নজরুল, সৈয়দ মুজতবা আলী লিখেছেন, বলেছেন। এ ভাষা নিয়ে ছিনিমিনি খেলার অধিকার কারও নেই। সে জন্যই রেডিও-টেলিভিশনের অনুমোদনের সময় তথ্য মন্ত্রণালয়ের দেওয়া অনেক শর্তের মধ্যে একটি শর্ত থাকে, বাংলা ভাষা ও সংস্কৃতির বিকৃতি করা যাবে না। শর্ত না মানলে অনুমোদন বাতিল করা যেতে পারে, অর্থাৎ বন্ধ করে দেওয়া যেতে পারে।
শুধু রাজনৈতিক কারণে নয়, ভাষা ও সংস্কৃতির বিষয়ে কঠোর অবস্থান নিয়ে এ ক্ষেত্রে সাময়িকভাবে হলেও কিছু দৃষ্টান্তমূলক ব্যবস্থা নেওয়া যেতে পারে। যারা এ রকম করে, তারা একে রাজনৈতিক হয়রানি, গণতন্ত্রের ওপর আঘাত, গণমাধ্যমের কণ্ঠরোধ ইত্যাদি নানা রকম রং দেবে এবং দিনের পর দিন নিজেদের ইচ্ছাকৃত অপরাধ কখনো স্বীকার করবে না। তারা তখন বাঙালি থাকে না, বাংলাদেশি হয়ে যায় দলমত-নির্বিশেষে।
বাংলা ভাষা ও বর্ষপঞ্জি বা ক্যালেন্ডার এখন দ্বিখণ্ডিত। নববর্ষ, অর্থাৎ পয়লা বৈশাখ আলাদা, রবীন্দ্রজয়ন্তী আলাদা, নজরুলজয়ন্তী আলাদা। ইউরোপ-আমেরিকায় এত যুদ্ধবিগ্রহ-বিভাজন সত্ত্বেও তারিখ ভাগ হয়নি। পরাধীন বাংলায় পাকিস্তানিরা যা করতে পারেনি, তাদের এদেশীয় প্রেতাত্মারা এখন তা পেরেছে। তাই সময়ের দাবি একটি সাংস্কৃতিক বিপ্লব, যাতে ধুয়ে-মুছে যাবে নব্য পাকবাংলা আগ্রাসন। বাংলা ভাষা ও সংস্কৃতি ফিরে যাবে একাত্তরের অভিন্ন ভাষা-সংস্কৃতিতে। অপমানে সেদিন আবার জ্বলে উঠবে বর্ণমালা, আর সেই থেকে শুরু হবে দিনবদলের পালা।

ফেব্রুয়ারি এলেই বাংলা ভাষা নিয়ে হইচই আর সাদাকালো পোশাক নিয়ে মাতামাতি শুরু হয়ে যায়। তারপর আবার পরের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত নীরবতা। মাঝখানে পয়লা বৈশাখে আবার বাঙালিত্ব জেগে ওঠে। লাল-সাদা পোশাক নিয়ে পান্তা-ইলিশ। এতে দোষের কিছু নেই; বরং সংস্কারমুক্ত দুটো বিষয় বাঙালিদের অল্প সময়ের জন্য হলেও এক ও ধর্মনিরপেক্ষ করে তোলে। আর বাংলা ভাষা থেকেই তো বাংলাদেশের সৃষ্টি। একুশে ফেব্রুয়ারি থেকে ছাব্বিশে মার্চ—এক সুতোয় গাঁথা। আবু হেনা মোস্তফা কামালের অবিস্মরণীয় গানের কথায়, ‘অপমানে তুমি জ্বলে উঠেছিলে সেদিন বর্ণমালা, সেই থেকে শুরু দিনবদলের পালা’।
ভাষা নদীর মতো প্রবহমান। ‘দিবে আর নিবে, মিলাবে মিলিবে’—ভাষার বৈশিষ্ট্য। বাংলা ভাষায় যে কেবল ইংরেজি বা অন্যান্য ভাষার শব্দ ঢুকেছে, তা-ই নয়। ইংরেজিতেও বাংলা শব্দ ঢুকেছে। যেমন পথ, বাংলো, রায়ট, ডিঙ্গি, অবতার, গুরু, পণ্ডিত, মোগল, জঙ্গল, টিপয় (তেপায়া), নার্ড (নারদ), ইয়োগা (যোগ) ইত্যাদি। যদিও সাহেবরা এগুলোকে হিন্দুস্তানি শব্দ বলে অভিধানে উল্লেখ করেছেন। কারণ, কোনো বাঙালি এ নিয়ে মাথা ঘামায়নি এবং প্রতিবাদ করেনি।
পৃথিবীতে একমাত্র বাংলাভাষী রাষ্ট্র হচ্ছে বাংলাদেশ। ভারতে বাংলা ভাষা আছে, অনেক ভাষার মধ্যে প্রাদেশিক বা আঞ্চলিক সংখ্যালঘু ভাষা হিসেবে। সেই হিসেবে বাংলাদেশের দায়িত্ব অনেক। এই ভাষাকে রক্ষা করা এবং সম্মানের সঙ্গে রাখা কঠিন। এটাকে ছেলেখেলা মনে করে হালকাভাবে নেওয়া ঠিক নয়। শুধু মুখে বললেই হবে না যে ‘শহীদের রক্ত বৃথা যেতে দেব না’। ইদানীং অনেক বেসরকারি গণমাধ্যম এই ভাষাকে নিয়ে রীতিমতো ছিনিমিনি খেলছে। কাঁচা পয়সার গরমে ভাষা অতিষ্ঠ। মনে হয় এসব দেখার কেউ নেই।
পশ্চিমবঙ্গ
পশ্চিমবঙ্গে বাংলা ভাষা এখন ‘বিন্দাস’, আর সেখানকার লোকজন এখন ‘ঝাক্কাস’। তারা এখন ‘কান খুলে শুনে’ যা হলো হিন্দি সিনেমার সংলাপ ‘কান খুল কর সুন্ লো’র বঙ্গানুবাদ। কে কত ভালো হিন্দি বলতে পারে এর প্রতিযোগিতা চলে। এমনকি ক্রিকেটার সৌরভ গাঙ্গুলীর মতো তারকারা নিজের নামটা পর্যন্ত বাংলা টেলিভিশনে হিন্দি কায়দায় বলেন, ‘সাঔরাভ’। বেসরকারি বাংলা টেলিভিশন সিরিয়ালে হিন্দি গান বাংলা ভাষাকে জাতে তুলছে। সেই সত্যজিৎ রায়ের বাঙালি আর নেই।
অথচ বাংলা ব্যাকরণে চলতি ভাষার সংজ্ঞা আমাদের স্কুলের বইয়ে পড়েছি—চলতি ভাষা হলো পশ্চিমবঙ্গের কথ্য ভাষা, বিশেষ করে যা নদীয়ার শান্তিপুর অঞ্চলে বলা হয়। যেমন ‘রিসিভড ইংলিশ’ বা মানসম্পন্ন ইংরেজি হলো যা মূলত দক্ষিণ ইংল্যান্ডের অক্সফোর্ডশায়ার এবং কেমব্রিজশায়ারের শিক্ষিত লোকেরা বলে থাকে। অনেকে তাকে ‘কিংস ইংলিশ’ বা ‘বিবিসি ইংলিশ’ও বলে। পশ্চিমবঙ্গেও চব্বিশ পরগনা এবং অন্যান্য জেলার কথার মধ্যে কিছু সূক্ষ্ম পার্থক্য আছে। কলকাতার ক্যালকেশিয়ান, ঢাকাই কুট্টি বা লন্ডনের ককনি স্পষ্টত ভিন্ন ধরনের উচ্চারণে স্থানীয় কথ্য ভাষা।
বাংলাদেশ
আগের পূর্ব বাংলা এখনকার বাংলাদেশ রাষ্ট্র, যেখানে আগের ১৭ জেলার ১৭ রকমের আঞ্চলিক ভাষা, যার একটি বিশাল অভিধান ভাষাবিজ্ঞানী ডক্টর মুহম্মদ শহীদুল্লাহ্র তত্ত্বাবধানে সংকলিত এবং বাংলা একাডেমি থেকে প্রকাশিত হয়। পূর্ববঙ্গের হরেক রকম আঞ্চলিক ভাষার কারণে ব্রিটিশ আমল থেকেই অবিভক্ত বাংলায় মানসম্পন্ন কথ্য ভাষা হিসেবে চলতি ভাষাকে গ্রহণ করা হয়। লেখ্য ভাষা হিসেবে সাধু এবং চলতি—দুটোই চলছিল। বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর সাধু ভাষা প্রায় বিলুপ্তির পথে। কেবল অধ্যাপক ডক্টর সলিমুল্লাহ খান এককভাবে একে রক্ষার আপ্রাণ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। আর চলতি ভাষা বলতে এখন মনে হয় কিছু নেই। চলতি ভাষা বললে তাতে কেমন ভারতীয় গন্ধ বেরোয়। তাই এখন সব প্রমিত ভাষা!
দুঃখের বিষয়, এখন কিছু বাঙালি টাকার জোরে ভাষা নিয়ে যা খুশি তা-ই করছে। টাকার জোরে গণমাধ্যমের মালিক—তাই ধরাকে সরা জ্ঞান করছে। যেমন দক্ষিণ না বলে এখন বলে ‘সাউথ’। উত্তরকে বলে ‘নর্থ’। যথা: সাউথ কোরিয়া, সাউথ আফ্রিকা, নর্থ কোরিয়া ইত্যাদি। যোগব্যায়ামকে বলে ইয়োগা। তারিখকে যা ইচ্ছা তা-ই বলে। যেমন সাত জানুয়ারি, এক ফেব্রুয়ারি, একুশ ফেব্রুয়ারি, সাত মার্চ, সতেরো মার্চ, ছাব্বিশ মার্চ, পনেরো আগস্ট, ষোলো ডিসেম্বর ইত্যাদি। সাতই, পয়লা, একুশে, সতেরোই, ছাব্বিশে, পনেরোই, ষোলোই আর বলে না। ওগুলো নাকি সেকেলে! এ বিষয়ে তথ্য মন্ত্রণালয়ের সুস্পষ্ট নির্দেশ আছে বাংলা একাডেমি প্রকাশিত ভাষাবিদ নরেন বিশ্বাসের উচ্চারণ অভিধান অনুসরণ করার। কিন্তু তারা থোড়াই পরোয়া করে!
আর সাধু-চলতির মিশ্রণ বা গুরুচণ্ডালীর কোনো সীমা-পরিসীমা নেই। এখানে অজ্ঞতাই মুখ্য। অনেকের ধারণা কেবল খাইয়া, যাইয়া, চলিয়া, বসিয়া, পড়িয়া ইত্যাদি সাধু। এদের চলতি রূপ (খেয়ে, যেয়ে, চলে, বসে, পড়ে) করলেই সব ঠিক। আর কিছু করার নেই। শিক্ষকও তো সে রকম পেয়েছে তারা! কিন্তু আরও যে অনেক কিছু আছে, তা শেখাবে কে?
এফএম ব্যান্ডের বেতারে একশ্রেণির অর্বাচীন তরুণ-তরুণীর হাতে পড়ে বাংলা ভাষার ত্রাহি মধুসূদন অবস্থা, যা ভুঁইফোড় সংস্কৃতির প্রকৃষ্ট উদাহরণ। বেসরকারি টেলিভিশনে খবরের মান বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই প্রায় তলানিতে। কায়দা করে এখন বলা হয় সংবাদ উপস্থাপক। পাঠক নয়। উপস্থাপিকা বা পাঠিকাও নয়। যেন নারী-পুরুষ একাকার হয়ে গেছে। এটা নাকি আধুনিক বাংলা! অনেকে খবর পড়েন, নিজের নামটা পর্যন্ত স্পষ্ট উচ্চারণ করতে পারেন না। এখানে যোগ্যতার থেকে মালিকদের এবং কর্তাব্যক্তিদের আত্মীয়স্বজন-পরিচিতদের প্রাধান্য বেশি। অথচ পাকিস্তান আমলেও সংবাদপাঠের মানে পশ্চিমবঙ্গ তথা ভারতের থেকে অনেক ক্ষেত্রে আমরা এগিয়ে ছিলাম।
যাঁদের কথা এখনো মনে পড়ে, তাঁদের মধ্যে কয়েকজনের নাম উল্লেখ করা যেতে পারে। যেমন: নুরুল ইসলাম, নুরুল ইসলাম সরকার, কাফি খান, দাউদ খান মজলিস, সরকার কবিরুদ্দিন, তাজুল ইসলাম, সিরাজুল মজিদ মামুন, রামেন্দু মজুমদার, রোকেয়া হায়দার, মাসুমা খাতুন, দিলারা হাশেম প্রমুখ। বেতারে অনুষ্ঠান ঘোষণায় এনাম চৌধুরী, ফজলুল কবির, আজমেরী জামান (রেশমা)। আকাশবাণী দিল্লি থেকে খবর পড়তেন বিজন বোস, ইভা নাগ, নীলিমা সান্যাল প্রমুখ। আকাশবাণী কলকাতার অনুষ্ঠান ঘোষণায় কাজী সব্যসাচী, দিলীপ ঘোষ, পার্থ ঘোষ, গৌরী ঘোষ, দেবদুলাল বন্দ্যোপাধ্যায়, যার সংবাদ পরিক্রমা বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে বিশেষ ভূমিকা রেখেছিল। কাজেই নিছক তোতা পাখির মতো ভুল উচ্চারণে অস্পষ্টভাবে খবর পড়ে গেলেই হলো না। দর্শক-শ্রোতাদের মনে স্থান করে নেওয়া সহজ নয়।
কিন্তু শুদ্ধ-অশুদ্ধ ভাষা দেখবে কে? তথ্য মন্ত্রণালয়ে অতিরিক্ত সচিবের ওপর একসময় কিছুটা দায়িত্ব ছিল নজরদারি করার। কড়াকড়ি কোনো তদারকি ছিল না। এ জন্য বাংলা একাডেমিতে একটি নজরদারি শাখা বা মনিটরিং সেল করা যেতে পারে। শুধু শাখা থাকলেই হবে না; সেখানে উপযুক্ত লোক থাকতে হবে। উদ্দেশ্য হবে শুধু ভাষার শুদ্ধতা দেখা, কোনো নিয়ন্ত্রণ নয়। বর্তমানে বাংলা একাডেমির প্রধান কাজ হয়ে গেছে বইমেলার আয়োজন করা।
বাংলা ভাষা এক ও অভিন্ন, যে ভাষায় রবীন্দ্রনাথ, নজরুল, সৈয়দ মুজতবা আলী লিখেছেন, বলেছেন। এ ভাষা নিয়ে ছিনিমিনি খেলার অধিকার কারও নেই। সে জন্যই রেডিও-টেলিভিশনের অনুমোদনের সময় তথ্য মন্ত্রণালয়ের দেওয়া অনেক শর্তের মধ্যে একটি শর্ত থাকে, বাংলা ভাষা ও সংস্কৃতির বিকৃতি করা যাবে না। শর্ত না মানলে অনুমোদন বাতিল করা যেতে পারে, অর্থাৎ বন্ধ করে দেওয়া যেতে পারে।
শুধু রাজনৈতিক কারণে নয়, ভাষা ও সংস্কৃতির বিষয়ে কঠোর অবস্থান নিয়ে এ ক্ষেত্রে সাময়িকভাবে হলেও কিছু দৃষ্টান্তমূলক ব্যবস্থা নেওয়া যেতে পারে। যারা এ রকম করে, তারা একে রাজনৈতিক হয়রানি, গণতন্ত্রের ওপর আঘাত, গণমাধ্যমের কণ্ঠরোধ ইত্যাদি নানা রকম রং দেবে এবং দিনের পর দিন নিজেদের ইচ্ছাকৃত অপরাধ কখনো স্বীকার করবে না। তারা তখন বাঙালি থাকে না, বাংলাদেশি হয়ে যায় দলমত-নির্বিশেষে।
বাংলা ভাষা ও বর্ষপঞ্জি বা ক্যালেন্ডার এখন দ্বিখণ্ডিত। নববর্ষ, অর্থাৎ পয়লা বৈশাখ আলাদা, রবীন্দ্রজয়ন্তী আলাদা, নজরুলজয়ন্তী আলাদা। ইউরোপ-আমেরিকায় এত যুদ্ধবিগ্রহ-বিভাজন সত্ত্বেও তারিখ ভাগ হয়নি। পরাধীন বাংলায় পাকিস্তানিরা যা করতে পারেনি, তাদের এদেশীয় প্রেতাত্মারা এখন তা পেরেছে। তাই সময়ের দাবি একটি সাংস্কৃতিক বিপ্লব, যাতে ধুয়ে-মুছে যাবে নব্য পাকবাংলা আগ্রাসন। বাংলা ভাষা ও সংস্কৃতি ফিরে যাবে একাত্তরের অভিন্ন ভাষা-সংস্কৃতিতে। অপমানে সেদিন আবার জ্বলে উঠবে বর্ণমালা, আর সেই থেকে শুরু হবে দিনবদলের পালা।
মাহমুদুল মাসুদ মুক্তিযোদ্ধা

ফেব্রুয়ারি এলেই বাংলা ভাষা নিয়ে হইচই আর সাদাকালো পোশাক নিয়ে মাতামাতি শুরু হয়ে যায়। তারপর আবার পরের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত নীরবতা। মাঝখানে পয়লা বৈশাখে আবার বাঙালিত্ব জেগে ওঠে। লাল-সাদা পোশাক নিয়ে পান্তা-ইলিশ। এতে দোষের কিছু নেই; বরং সংস্কারমুক্ত দুটো বিষয় বাঙালিদের অল্প সময়ের জন্য হলেও এক ও ধর্মনিরপেক্ষ করে তোলে। আর বাংলা ভাষা থেকেই তো বাংলাদেশের সৃষ্টি। একুশে ফেব্রুয়ারি থেকে ছাব্বিশে মার্চ—এক সুতোয় গাঁথা। আবু হেনা মোস্তফা কামালের অবিস্মরণীয় গানের কথায়, ‘অপমানে তুমি জ্বলে উঠেছিলে সেদিন বর্ণমালা, সেই থেকে শুরু দিনবদলের পালা’।
ভাষা নদীর মতো প্রবহমান। ‘দিবে আর নিবে, মিলাবে মিলিবে’—ভাষার বৈশিষ্ট্য। বাংলা ভাষায় যে কেবল ইংরেজি বা অন্যান্য ভাষার শব্দ ঢুকেছে, তা-ই নয়। ইংরেজিতেও বাংলা শব্দ ঢুকেছে। যেমন পথ, বাংলো, রায়ট, ডিঙ্গি, অবতার, গুরু, পণ্ডিত, মোগল, জঙ্গল, টিপয় (তেপায়া), নার্ড (নারদ), ইয়োগা (যোগ) ইত্যাদি। যদিও সাহেবরা এগুলোকে হিন্দুস্তানি শব্দ বলে অভিধানে উল্লেখ করেছেন। কারণ, কোনো বাঙালি এ নিয়ে মাথা ঘামায়নি এবং প্রতিবাদ করেনি।
পৃথিবীতে একমাত্র বাংলাভাষী রাষ্ট্র হচ্ছে বাংলাদেশ। ভারতে বাংলা ভাষা আছে, অনেক ভাষার মধ্যে প্রাদেশিক বা আঞ্চলিক সংখ্যালঘু ভাষা হিসেবে। সেই হিসেবে বাংলাদেশের দায়িত্ব অনেক। এই ভাষাকে রক্ষা করা এবং সম্মানের সঙ্গে রাখা কঠিন। এটাকে ছেলেখেলা মনে করে হালকাভাবে নেওয়া ঠিক নয়। শুধু মুখে বললেই হবে না যে ‘শহীদের রক্ত বৃথা যেতে দেব না’। ইদানীং অনেক বেসরকারি গণমাধ্যম এই ভাষাকে নিয়ে রীতিমতো ছিনিমিনি খেলছে। কাঁচা পয়সার গরমে ভাষা অতিষ্ঠ। মনে হয় এসব দেখার কেউ নেই।
পশ্চিমবঙ্গ
পশ্চিমবঙ্গে বাংলা ভাষা এখন ‘বিন্দাস’, আর সেখানকার লোকজন এখন ‘ঝাক্কাস’। তারা এখন ‘কান খুলে শুনে’ যা হলো হিন্দি সিনেমার সংলাপ ‘কান খুল কর সুন্ লো’র বঙ্গানুবাদ। কে কত ভালো হিন্দি বলতে পারে এর প্রতিযোগিতা চলে। এমনকি ক্রিকেটার সৌরভ গাঙ্গুলীর মতো তারকারা নিজের নামটা পর্যন্ত বাংলা টেলিভিশনে হিন্দি কায়দায় বলেন, ‘সাঔরাভ’। বেসরকারি বাংলা টেলিভিশন সিরিয়ালে হিন্দি গান বাংলা ভাষাকে জাতে তুলছে। সেই সত্যজিৎ রায়ের বাঙালি আর নেই।
অথচ বাংলা ব্যাকরণে চলতি ভাষার সংজ্ঞা আমাদের স্কুলের বইয়ে পড়েছি—চলতি ভাষা হলো পশ্চিমবঙ্গের কথ্য ভাষা, বিশেষ করে যা নদীয়ার শান্তিপুর অঞ্চলে বলা হয়। যেমন ‘রিসিভড ইংলিশ’ বা মানসম্পন্ন ইংরেজি হলো যা মূলত দক্ষিণ ইংল্যান্ডের অক্সফোর্ডশায়ার এবং কেমব্রিজশায়ারের শিক্ষিত লোকেরা বলে থাকে। অনেকে তাকে ‘কিংস ইংলিশ’ বা ‘বিবিসি ইংলিশ’ও বলে। পশ্চিমবঙ্গেও চব্বিশ পরগনা এবং অন্যান্য জেলার কথার মধ্যে কিছু সূক্ষ্ম পার্থক্য আছে। কলকাতার ক্যালকেশিয়ান, ঢাকাই কুট্টি বা লন্ডনের ককনি স্পষ্টত ভিন্ন ধরনের উচ্চারণে স্থানীয় কথ্য ভাষা।
বাংলাদেশ
আগের পূর্ব বাংলা এখনকার বাংলাদেশ রাষ্ট্র, যেখানে আগের ১৭ জেলার ১৭ রকমের আঞ্চলিক ভাষা, যার একটি বিশাল অভিধান ভাষাবিজ্ঞানী ডক্টর মুহম্মদ শহীদুল্লাহ্র তত্ত্বাবধানে সংকলিত এবং বাংলা একাডেমি থেকে প্রকাশিত হয়। পূর্ববঙ্গের হরেক রকম আঞ্চলিক ভাষার কারণে ব্রিটিশ আমল থেকেই অবিভক্ত বাংলায় মানসম্পন্ন কথ্য ভাষা হিসেবে চলতি ভাষাকে গ্রহণ করা হয়। লেখ্য ভাষা হিসেবে সাধু এবং চলতি—দুটোই চলছিল। বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর সাধু ভাষা প্রায় বিলুপ্তির পথে। কেবল অধ্যাপক ডক্টর সলিমুল্লাহ খান এককভাবে একে রক্ষার আপ্রাণ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। আর চলতি ভাষা বলতে এখন মনে হয় কিছু নেই। চলতি ভাষা বললে তাতে কেমন ভারতীয় গন্ধ বেরোয়। তাই এখন সব প্রমিত ভাষা!
দুঃখের বিষয়, এখন কিছু বাঙালি টাকার জোরে ভাষা নিয়ে যা খুশি তা-ই করছে। টাকার জোরে গণমাধ্যমের মালিক—তাই ধরাকে সরা জ্ঞান করছে। যেমন দক্ষিণ না বলে এখন বলে ‘সাউথ’। উত্তরকে বলে ‘নর্থ’। যথা: সাউথ কোরিয়া, সাউথ আফ্রিকা, নর্থ কোরিয়া ইত্যাদি। যোগব্যায়ামকে বলে ইয়োগা। তারিখকে যা ইচ্ছা তা-ই বলে। যেমন সাত জানুয়ারি, এক ফেব্রুয়ারি, একুশ ফেব্রুয়ারি, সাত মার্চ, সতেরো মার্চ, ছাব্বিশ মার্চ, পনেরো আগস্ট, ষোলো ডিসেম্বর ইত্যাদি। সাতই, পয়লা, একুশে, সতেরোই, ছাব্বিশে, পনেরোই, ষোলোই আর বলে না। ওগুলো নাকি সেকেলে! এ বিষয়ে তথ্য মন্ত্রণালয়ের সুস্পষ্ট নির্দেশ আছে বাংলা একাডেমি প্রকাশিত ভাষাবিদ নরেন বিশ্বাসের উচ্চারণ অভিধান অনুসরণ করার। কিন্তু তারা থোড়াই পরোয়া করে!
আর সাধু-চলতির মিশ্রণ বা গুরুচণ্ডালীর কোনো সীমা-পরিসীমা নেই। এখানে অজ্ঞতাই মুখ্য। অনেকের ধারণা কেবল খাইয়া, যাইয়া, চলিয়া, বসিয়া, পড়িয়া ইত্যাদি সাধু। এদের চলতি রূপ (খেয়ে, যেয়ে, চলে, বসে, পড়ে) করলেই সব ঠিক। আর কিছু করার নেই। শিক্ষকও তো সে রকম পেয়েছে তারা! কিন্তু আরও যে অনেক কিছু আছে, তা শেখাবে কে?
এফএম ব্যান্ডের বেতারে একশ্রেণির অর্বাচীন তরুণ-তরুণীর হাতে পড়ে বাংলা ভাষার ত্রাহি মধুসূদন অবস্থা, যা ভুঁইফোড় সংস্কৃতির প্রকৃষ্ট উদাহরণ। বেসরকারি টেলিভিশনে খবরের মান বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই প্রায় তলানিতে। কায়দা করে এখন বলা হয় সংবাদ উপস্থাপক। পাঠক নয়। উপস্থাপিকা বা পাঠিকাও নয়। যেন নারী-পুরুষ একাকার হয়ে গেছে। এটা নাকি আধুনিক বাংলা! অনেকে খবর পড়েন, নিজের নামটা পর্যন্ত স্পষ্ট উচ্চারণ করতে পারেন না। এখানে যোগ্যতার থেকে মালিকদের এবং কর্তাব্যক্তিদের আত্মীয়স্বজন-পরিচিতদের প্রাধান্য বেশি। অথচ পাকিস্তান আমলেও সংবাদপাঠের মানে পশ্চিমবঙ্গ তথা ভারতের থেকে অনেক ক্ষেত্রে আমরা এগিয়ে ছিলাম।
যাঁদের কথা এখনো মনে পড়ে, তাঁদের মধ্যে কয়েকজনের নাম উল্লেখ করা যেতে পারে। যেমন: নুরুল ইসলাম, নুরুল ইসলাম সরকার, কাফি খান, দাউদ খান মজলিস, সরকার কবিরুদ্দিন, তাজুল ইসলাম, সিরাজুল মজিদ মামুন, রামেন্দু মজুমদার, রোকেয়া হায়দার, মাসুমা খাতুন, দিলারা হাশেম প্রমুখ। বেতারে অনুষ্ঠান ঘোষণায় এনাম চৌধুরী, ফজলুল কবির, আজমেরী জামান (রেশমা)। আকাশবাণী দিল্লি থেকে খবর পড়তেন বিজন বোস, ইভা নাগ, নীলিমা সান্যাল প্রমুখ। আকাশবাণী কলকাতার অনুষ্ঠান ঘোষণায় কাজী সব্যসাচী, দিলীপ ঘোষ, পার্থ ঘোষ, গৌরী ঘোষ, দেবদুলাল বন্দ্যোপাধ্যায়, যার সংবাদ পরিক্রমা বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে বিশেষ ভূমিকা রেখেছিল। কাজেই নিছক তোতা পাখির মতো ভুল উচ্চারণে অস্পষ্টভাবে খবর পড়ে গেলেই হলো না। দর্শক-শ্রোতাদের মনে স্থান করে নেওয়া সহজ নয়।
কিন্তু শুদ্ধ-অশুদ্ধ ভাষা দেখবে কে? তথ্য মন্ত্রণালয়ে অতিরিক্ত সচিবের ওপর একসময় কিছুটা দায়িত্ব ছিল নজরদারি করার। কড়াকড়ি কোনো তদারকি ছিল না। এ জন্য বাংলা একাডেমিতে একটি নজরদারি শাখা বা মনিটরিং সেল করা যেতে পারে। শুধু শাখা থাকলেই হবে না; সেখানে উপযুক্ত লোক থাকতে হবে। উদ্দেশ্য হবে শুধু ভাষার শুদ্ধতা দেখা, কোনো নিয়ন্ত্রণ নয়। বর্তমানে বাংলা একাডেমির প্রধান কাজ হয়ে গেছে বইমেলার আয়োজন করা।
বাংলা ভাষা এক ও অভিন্ন, যে ভাষায় রবীন্দ্রনাথ, নজরুল, সৈয়দ মুজতবা আলী লিখেছেন, বলেছেন। এ ভাষা নিয়ে ছিনিমিনি খেলার অধিকার কারও নেই। সে জন্যই রেডিও-টেলিভিশনের অনুমোদনের সময় তথ্য মন্ত্রণালয়ের দেওয়া অনেক শর্তের মধ্যে একটি শর্ত থাকে, বাংলা ভাষা ও সংস্কৃতির বিকৃতি করা যাবে না। শর্ত না মানলে অনুমোদন বাতিল করা যেতে পারে, অর্থাৎ বন্ধ করে দেওয়া যেতে পারে।
শুধু রাজনৈতিক কারণে নয়, ভাষা ও সংস্কৃতির বিষয়ে কঠোর অবস্থান নিয়ে এ ক্ষেত্রে সাময়িকভাবে হলেও কিছু দৃষ্টান্তমূলক ব্যবস্থা নেওয়া যেতে পারে। যারা এ রকম করে, তারা একে রাজনৈতিক হয়রানি, গণতন্ত্রের ওপর আঘাত, গণমাধ্যমের কণ্ঠরোধ ইত্যাদি নানা রকম রং দেবে এবং দিনের পর দিন নিজেদের ইচ্ছাকৃত অপরাধ কখনো স্বীকার করবে না। তারা তখন বাঙালি থাকে না, বাংলাদেশি হয়ে যায় দলমত-নির্বিশেষে।
বাংলা ভাষা ও বর্ষপঞ্জি বা ক্যালেন্ডার এখন দ্বিখণ্ডিত। নববর্ষ, অর্থাৎ পয়লা বৈশাখ আলাদা, রবীন্দ্রজয়ন্তী আলাদা, নজরুলজয়ন্তী আলাদা। ইউরোপ-আমেরিকায় এত যুদ্ধবিগ্রহ-বিভাজন সত্ত্বেও তারিখ ভাগ হয়নি। পরাধীন বাংলায় পাকিস্তানিরা যা করতে পারেনি, তাদের এদেশীয় প্রেতাত্মারা এখন তা পেরেছে। তাই সময়ের দাবি একটি সাংস্কৃতিক বিপ্লব, যাতে ধুয়ে-মুছে যাবে নব্য পাকবাংলা আগ্রাসন। বাংলা ভাষা ও সংস্কৃতি ফিরে যাবে একাত্তরের অভিন্ন ভাষা-সংস্কৃতিতে। অপমানে সেদিন আবার জ্বলে উঠবে বর্ণমালা, আর সেই থেকে শুরু হবে দিনবদলের পালা।

ফেব্রুয়ারি এলেই বাংলা ভাষা নিয়ে হইচই আর সাদাকালো পোশাক নিয়ে মাতামাতি শুরু হয়ে যায়। তারপর আবার পরের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত নীরবতা। মাঝখানে পয়লা বৈশাখে আবার বাঙালিত্ব জেগে ওঠে। লাল-সাদা পোশাক নিয়ে পান্তা-ইলিশ। এতে দোষের কিছু নেই; বরং সংস্কারমুক্ত দুটো বিষয় বাঙালিদের অল্প সময়ের জন্য হলেও এক ও ধর্মনিরপেক্ষ করে তোলে। আর বাংলা ভাষা থেকেই তো বাংলাদেশের সৃষ্টি। একুশে ফেব্রুয়ারি থেকে ছাব্বিশে মার্চ—এক সুতোয় গাঁথা। আবু হেনা মোস্তফা কামালের অবিস্মরণীয় গানের কথায়, ‘অপমানে তুমি জ্বলে উঠেছিলে সেদিন বর্ণমালা, সেই থেকে শুরু দিনবদলের পালা’।
ভাষা নদীর মতো প্রবহমান। ‘দিবে আর নিবে, মিলাবে মিলিবে’—ভাষার বৈশিষ্ট্য। বাংলা ভাষায় যে কেবল ইংরেজি বা অন্যান্য ভাষার শব্দ ঢুকেছে, তা-ই নয়। ইংরেজিতেও বাংলা শব্দ ঢুকেছে। যেমন পথ, বাংলো, রায়ট, ডিঙ্গি, অবতার, গুরু, পণ্ডিত, মোগল, জঙ্গল, টিপয় (তেপায়া), নার্ড (নারদ), ইয়োগা (যোগ) ইত্যাদি। যদিও সাহেবরা এগুলোকে হিন্দুস্তানি শব্দ বলে অভিধানে উল্লেখ করেছেন। কারণ, কোনো বাঙালি এ নিয়ে মাথা ঘামায়নি এবং প্রতিবাদ করেনি।
পৃথিবীতে একমাত্র বাংলাভাষী রাষ্ট্র হচ্ছে বাংলাদেশ। ভারতে বাংলা ভাষা আছে, অনেক ভাষার মধ্যে প্রাদেশিক বা আঞ্চলিক সংখ্যালঘু ভাষা হিসেবে। সেই হিসেবে বাংলাদেশের দায়িত্ব অনেক। এই ভাষাকে রক্ষা করা এবং সম্মানের সঙ্গে রাখা কঠিন। এটাকে ছেলেখেলা মনে করে হালকাভাবে নেওয়া ঠিক নয়। শুধু মুখে বললেই হবে না যে ‘শহীদের রক্ত বৃথা যেতে দেব না’। ইদানীং অনেক বেসরকারি গণমাধ্যম এই ভাষাকে নিয়ে রীতিমতো ছিনিমিনি খেলছে। কাঁচা পয়সার গরমে ভাষা অতিষ্ঠ। মনে হয় এসব দেখার কেউ নেই।
পশ্চিমবঙ্গ
পশ্চিমবঙ্গে বাংলা ভাষা এখন ‘বিন্দাস’, আর সেখানকার লোকজন এখন ‘ঝাক্কাস’। তারা এখন ‘কান খুলে শুনে’ যা হলো হিন্দি সিনেমার সংলাপ ‘কান খুল কর সুন্ লো’র বঙ্গানুবাদ। কে কত ভালো হিন্দি বলতে পারে এর প্রতিযোগিতা চলে। এমনকি ক্রিকেটার সৌরভ গাঙ্গুলীর মতো তারকারা নিজের নামটা পর্যন্ত বাংলা টেলিভিশনে হিন্দি কায়দায় বলেন, ‘সাঔরাভ’। বেসরকারি বাংলা টেলিভিশন সিরিয়ালে হিন্দি গান বাংলা ভাষাকে জাতে তুলছে। সেই সত্যজিৎ রায়ের বাঙালি আর নেই।
অথচ বাংলা ব্যাকরণে চলতি ভাষার সংজ্ঞা আমাদের স্কুলের বইয়ে পড়েছি—চলতি ভাষা হলো পশ্চিমবঙ্গের কথ্য ভাষা, বিশেষ করে যা নদীয়ার শান্তিপুর অঞ্চলে বলা হয়। যেমন ‘রিসিভড ইংলিশ’ বা মানসম্পন্ন ইংরেজি হলো যা মূলত দক্ষিণ ইংল্যান্ডের অক্সফোর্ডশায়ার এবং কেমব্রিজশায়ারের শিক্ষিত লোকেরা বলে থাকে। অনেকে তাকে ‘কিংস ইংলিশ’ বা ‘বিবিসি ইংলিশ’ও বলে। পশ্চিমবঙ্গেও চব্বিশ পরগনা এবং অন্যান্য জেলার কথার মধ্যে কিছু সূক্ষ্ম পার্থক্য আছে। কলকাতার ক্যালকেশিয়ান, ঢাকাই কুট্টি বা লন্ডনের ককনি স্পষ্টত ভিন্ন ধরনের উচ্চারণে স্থানীয় কথ্য ভাষা।
বাংলাদেশ
আগের পূর্ব বাংলা এখনকার বাংলাদেশ রাষ্ট্র, যেখানে আগের ১৭ জেলার ১৭ রকমের আঞ্চলিক ভাষা, যার একটি বিশাল অভিধান ভাষাবিজ্ঞানী ডক্টর মুহম্মদ শহীদুল্লাহ্র তত্ত্বাবধানে সংকলিত এবং বাংলা একাডেমি থেকে প্রকাশিত হয়। পূর্ববঙ্গের হরেক রকম আঞ্চলিক ভাষার কারণে ব্রিটিশ আমল থেকেই অবিভক্ত বাংলায় মানসম্পন্ন কথ্য ভাষা হিসেবে চলতি ভাষাকে গ্রহণ করা হয়। লেখ্য ভাষা হিসেবে সাধু এবং চলতি—দুটোই চলছিল। বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর সাধু ভাষা প্রায় বিলুপ্তির পথে। কেবল অধ্যাপক ডক্টর সলিমুল্লাহ খান এককভাবে একে রক্ষার আপ্রাণ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। আর চলতি ভাষা বলতে এখন মনে হয় কিছু নেই। চলতি ভাষা বললে তাতে কেমন ভারতীয় গন্ধ বেরোয়। তাই এখন সব প্রমিত ভাষা!
দুঃখের বিষয়, এখন কিছু বাঙালি টাকার জোরে ভাষা নিয়ে যা খুশি তা-ই করছে। টাকার জোরে গণমাধ্যমের মালিক—তাই ধরাকে সরা জ্ঞান করছে। যেমন দক্ষিণ না বলে এখন বলে ‘সাউথ’। উত্তরকে বলে ‘নর্থ’। যথা: সাউথ কোরিয়া, সাউথ আফ্রিকা, নর্থ কোরিয়া ইত্যাদি। যোগব্যায়ামকে বলে ইয়োগা। তারিখকে যা ইচ্ছা তা-ই বলে। যেমন সাত জানুয়ারি, এক ফেব্রুয়ারি, একুশ ফেব্রুয়ারি, সাত মার্চ, সতেরো মার্চ, ছাব্বিশ মার্চ, পনেরো আগস্ট, ষোলো ডিসেম্বর ইত্যাদি। সাতই, পয়লা, একুশে, সতেরোই, ছাব্বিশে, পনেরোই, ষোলোই আর বলে না। ওগুলো নাকি সেকেলে! এ বিষয়ে তথ্য মন্ত্রণালয়ের সুস্পষ্ট নির্দেশ আছে বাংলা একাডেমি প্রকাশিত ভাষাবিদ নরেন বিশ্বাসের উচ্চারণ অভিধান অনুসরণ করার। কিন্তু তারা থোড়াই পরোয়া করে!
আর সাধু-চলতির মিশ্রণ বা গুরুচণ্ডালীর কোনো সীমা-পরিসীমা নেই। এখানে অজ্ঞতাই মুখ্য। অনেকের ধারণা কেবল খাইয়া, যাইয়া, চলিয়া, বসিয়া, পড়িয়া ইত্যাদি সাধু। এদের চলতি রূপ (খেয়ে, যেয়ে, চলে, বসে, পড়ে) করলেই সব ঠিক। আর কিছু করার নেই। শিক্ষকও তো সে রকম পেয়েছে তারা! কিন্তু আরও যে অনেক কিছু আছে, তা শেখাবে কে?
এফএম ব্যান্ডের বেতারে একশ্রেণির অর্বাচীন তরুণ-তরুণীর হাতে পড়ে বাংলা ভাষার ত্রাহি মধুসূদন অবস্থা, যা ভুঁইফোড় সংস্কৃতির প্রকৃষ্ট উদাহরণ। বেসরকারি টেলিভিশনে খবরের মান বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই প্রায় তলানিতে। কায়দা করে এখন বলা হয় সংবাদ উপস্থাপক। পাঠক নয়। উপস্থাপিকা বা পাঠিকাও নয়। যেন নারী-পুরুষ একাকার হয়ে গেছে। এটা নাকি আধুনিক বাংলা! অনেকে খবর পড়েন, নিজের নামটা পর্যন্ত স্পষ্ট উচ্চারণ করতে পারেন না। এখানে যোগ্যতার থেকে মালিকদের এবং কর্তাব্যক্তিদের আত্মীয়স্বজন-পরিচিতদের প্রাধান্য বেশি। অথচ পাকিস্তান আমলেও সংবাদপাঠের মানে পশ্চিমবঙ্গ তথা ভারতের থেকে অনেক ক্ষেত্রে আমরা এগিয়ে ছিলাম।
যাঁদের কথা এখনো মনে পড়ে, তাঁদের মধ্যে কয়েকজনের নাম উল্লেখ করা যেতে পারে। যেমন: নুরুল ইসলাম, নুরুল ইসলাম সরকার, কাফি খান, দাউদ খান মজলিস, সরকার কবিরুদ্দিন, তাজুল ইসলাম, সিরাজুল মজিদ মামুন, রামেন্দু মজুমদার, রোকেয়া হায়দার, মাসুমা খাতুন, দিলারা হাশেম প্রমুখ। বেতারে অনুষ্ঠান ঘোষণায় এনাম চৌধুরী, ফজলুল কবির, আজমেরী জামান (রেশমা)। আকাশবাণী দিল্লি থেকে খবর পড়তেন বিজন বোস, ইভা নাগ, নীলিমা সান্যাল প্রমুখ। আকাশবাণী কলকাতার অনুষ্ঠান ঘোষণায় কাজী সব্যসাচী, দিলীপ ঘোষ, পার্থ ঘোষ, গৌরী ঘোষ, দেবদুলাল বন্দ্যোপাধ্যায়, যার সংবাদ পরিক্রমা বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে বিশেষ ভূমিকা রেখেছিল। কাজেই নিছক তোতা পাখির মতো ভুল উচ্চারণে অস্পষ্টভাবে খবর পড়ে গেলেই হলো না। দর্শক-শ্রোতাদের মনে স্থান করে নেওয়া সহজ নয়।
কিন্তু শুদ্ধ-অশুদ্ধ ভাষা দেখবে কে? তথ্য মন্ত্রণালয়ে অতিরিক্ত সচিবের ওপর একসময় কিছুটা দায়িত্ব ছিল নজরদারি করার। কড়াকড়ি কোনো তদারকি ছিল না। এ জন্য বাংলা একাডেমিতে একটি নজরদারি শাখা বা মনিটরিং সেল করা যেতে পারে। শুধু শাখা থাকলেই হবে না; সেখানে উপযুক্ত লোক থাকতে হবে। উদ্দেশ্য হবে শুধু ভাষার শুদ্ধতা দেখা, কোনো নিয়ন্ত্রণ নয়। বর্তমানে বাংলা একাডেমির প্রধান কাজ হয়ে গেছে বইমেলার আয়োজন করা।
বাংলা ভাষা এক ও অভিন্ন, যে ভাষায় রবীন্দ্রনাথ, নজরুল, সৈয়দ মুজতবা আলী লিখেছেন, বলেছেন। এ ভাষা নিয়ে ছিনিমিনি খেলার অধিকার কারও নেই। সে জন্যই রেডিও-টেলিভিশনের অনুমোদনের সময় তথ্য মন্ত্রণালয়ের দেওয়া অনেক শর্তের মধ্যে একটি শর্ত থাকে, বাংলা ভাষা ও সংস্কৃতির বিকৃতি করা যাবে না। শর্ত না মানলে অনুমোদন বাতিল করা যেতে পারে, অর্থাৎ বন্ধ করে দেওয়া যেতে পারে।
শুধু রাজনৈতিক কারণে নয়, ভাষা ও সংস্কৃতির বিষয়ে কঠোর অবস্থান নিয়ে এ ক্ষেত্রে সাময়িকভাবে হলেও কিছু দৃষ্টান্তমূলক ব্যবস্থা নেওয়া যেতে পারে। যারা এ রকম করে, তারা একে রাজনৈতিক হয়রানি, গণতন্ত্রের ওপর আঘাত, গণমাধ্যমের কণ্ঠরোধ ইত্যাদি নানা রকম রং দেবে এবং দিনের পর দিন নিজেদের ইচ্ছাকৃত অপরাধ কখনো স্বীকার করবে না। তারা তখন বাঙালি থাকে না, বাংলাদেশি হয়ে যায় দলমত-নির্বিশেষে।
বাংলা ভাষা ও বর্ষপঞ্জি বা ক্যালেন্ডার এখন দ্বিখণ্ডিত। নববর্ষ, অর্থাৎ পয়লা বৈশাখ আলাদা, রবীন্দ্রজয়ন্তী আলাদা, নজরুলজয়ন্তী আলাদা। ইউরোপ-আমেরিকায় এত যুদ্ধবিগ্রহ-বিভাজন সত্ত্বেও তারিখ ভাগ হয়নি। পরাধীন বাংলায় পাকিস্তানিরা যা করতে পারেনি, তাদের এদেশীয় প্রেতাত্মারা এখন তা পেরেছে। তাই সময়ের দাবি একটি সাংস্কৃতিক বিপ্লব, যাতে ধুয়ে-মুছে যাবে নব্য পাকবাংলা আগ্রাসন। বাংলা ভাষা ও সংস্কৃতি ফিরে যাবে একাত্তরের অভিন্ন ভাষা-সংস্কৃতিতে। অপমানে সেদিন আবার জ্বলে উঠবে বর্ণমালা, আর সেই থেকে শুরু হবে দিনবদলের পালা।

গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।
১৯ দিন আগে
‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর...
১২ জুন ২০২৫
ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।
১৯ মে ২০২৫
আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
০৮ মে ২০২৫বাসস, ঢাকা

গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।
আজ সোমবার বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের ট্রাইব্যুনাল-১-এ মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা (আইও) মো. আলমগীরের জেরা শুরু করেন রাষ্ট্র নিযুক্ত আইনজীবী আমীর হোসেন। আইনজীবী আমীর হোসেন পলাতক আসামি শেখ হাসিনা ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের পক্ষে শুনানি করছেন। এর আগে গত মঙ্গলবার তদন্তকারী কর্মকর্তা মো. আলমগীরের সাক্ষ্য গ্রহণ সম্পন্ন হয়।
এই মামলার শুনানিতে এর আগে গণ-অভ্যুত্থানের অন্যতম প্রতীক শহীদ আবু সাঈদের বাবাসহ স্বজনহারা পরিবারের একাধিক সদস্য সাক্ষ্য দিয়েছেন। এ ছাড়া মামলার গুরুত্বপূর্ণ ‘স্টার উইটনেস’ হিসেবে সাক্ষ্য দেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক এবং জুলাই আন্দোলনের অন্যতম নেতৃত্বদানকারী নাহিদ ইসলাম এবং দৈনিক আমার দেশ পত্রিকার সম্পাদক ড. মাহমুদুর রহমান।
গত বছরের জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার আন্দোলন দমনে আওয়ামী লীগ সরকার, তাদের দলীয় ক্যাডার ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর একটি অংশ গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটিত করে বলে অভিযোগ ওঠে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে শেখ হাসিনা, তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল এবং তৎকালীন আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের বিরুদ্ধে গত ১০ জুলাই অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দেন ট্রাইব্যুনাল-১।
পরবর্তীকালে, এই মামলার অন্যতম আসামি সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন দোষ স্বীকার করে ঘটনার সত্যতা উদ্ঘাটনে রাজসাক্ষী (অ্যাপ্রোভার) হওয়ার জন্য ট্রাইব্যুনালে আবেদন করেন। ট্রাইব্যুনাল তাঁর আবেদন মঞ্জুর করলে তিনি রাজসাক্ষী হিসেবে এই মামলায় সাক্ষ্য দেন।
মামলার প্রসিকিউশন পক্ষে শুনানি করছেন চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম, প্রসিকিউটর মিজানুল ইসলাম এবং গাজী এসএইচ তামিম। শুনানিতে তাঁদের সঙ্গে অপর প্রসিকিউটররাও উপস্থিত ছিলেন।
অন্যদিকে, এই মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে রাজসাক্ষী হওয়া সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের পক্ষে আছেন আইনজীবী যায়েদ বিন আমজাদ।
মানবতাবিরোধী অপরাধের এই মামলা ছাড়াও ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে আরও দুটি মামলা বিচারাধীন। এর মধ্যে একটি মামলায় আওয়ামী লীগের সাড়ে ১৫ বছরের শাসনামলে সংঘটিত গুম-খুনের ঘটনায় তাঁকে আসামি করা হয়েছে। অন্য মামলাটি হলো রাজধানীর মতিঝিলের শাপলা চত্বরে হেফাজতে ইসলামের সমাবেশে হত্যাকাণ্ড নিয়ে। এই তিনটি মামলার বিচারকাজই বর্তমানে দুটি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে চলমান।

গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।
আজ সোমবার বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের ট্রাইব্যুনাল-১-এ মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা (আইও) মো. আলমগীরের জেরা শুরু করেন রাষ্ট্র নিযুক্ত আইনজীবী আমীর হোসেন। আইনজীবী আমীর হোসেন পলাতক আসামি শেখ হাসিনা ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের পক্ষে শুনানি করছেন। এর আগে গত মঙ্গলবার তদন্তকারী কর্মকর্তা মো. আলমগীরের সাক্ষ্য গ্রহণ সম্পন্ন হয়।
এই মামলার শুনানিতে এর আগে গণ-অভ্যুত্থানের অন্যতম প্রতীক শহীদ আবু সাঈদের বাবাসহ স্বজনহারা পরিবারের একাধিক সদস্য সাক্ষ্য দিয়েছেন। এ ছাড়া মামলার গুরুত্বপূর্ণ ‘স্টার উইটনেস’ হিসেবে সাক্ষ্য দেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক এবং জুলাই আন্দোলনের অন্যতম নেতৃত্বদানকারী নাহিদ ইসলাম এবং দৈনিক আমার দেশ পত্রিকার সম্পাদক ড. মাহমুদুর রহমান।
গত বছরের জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার আন্দোলন দমনে আওয়ামী লীগ সরকার, তাদের দলীয় ক্যাডার ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর একটি অংশ গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটিত করে বলে অভিযোগ ওঠে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে শেখ হাসিনা, তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল এবং তৎকালীন আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের বিরুদ্ধে গত ১০ জুলাই অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দেন ট্রাইব্যুনাল-১।
পরবর্তীকালে, এই মামলার অন্যতম আসামি সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন দোষ স্বীকার করে ঘটনার সত্যতা উদ্ঘাটনে রাজসাক্ষী (অ্যাপ্রোভার) হওয়ার জন্য ট্রাইব্যুনালে আবেদন করেন। ট্রাইব্যুনাল তাঁর আবেদন মঞ্জুর করলে তিনি রাজসাক্ষী হিসেবে এই মামলায় সাক্ষ্য দেন।
মামলার প্রসিকিউশন পক্ষে শুনানি করছেন চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম, প্রসিকিউটর মিজানুল ইসলাম এবং গাজী এসএইচ তামিম। শুনানিতে তাঁদের সঙ্গে অপর প্রসিকিউটররাও উপস্থিত ছিলেন।
অন্যদিকে, এই মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে রাজসাক্ষী হওয়া সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের পক্ষে আছেন আইনজীবী যায়েদ বিন আমজাদ।
মানবতাবিরোধী অপরাধের এই মামলা ছাড়াও ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে আরও দুটি মামলা বিচারাধীন। এর মধ্যে একটি মামলায় আওয়ামী লীগের সাড়ে ১৫ বছরের শাসনামলে সংঘটিত গুম-খুনের ঘটনায় তাঁকে আসামি করা হয়েছে। অন্য মামলাটি হলো রাজধানীর মতিঝিলের শাপলা চত্বরে হেফাজতে ইসলামের সমাবেশে হত্যাকাণ্ড নিয়ে। এই তিনটি মামলার বিচারকাজই বর্তমানে দুটি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে চলমান।

ফেব্রুয়ারি এলেই বাংলা ভাষা নিয়ে হইচই আর সাদাকালো পোশাক নিয়ে মাতামাতি শুরু হয়ে যায়। তারপর আবার পরের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত নীরবতা। মাঝখানে পয়লা বৈশাখে আবার বাঙালিত্ব জেগে ওঠে। লাল-সাদা পোশাক নিয়ে পান্তা-ইলিশ। এতে দোষের কিছু নেই; বরং সংস্কারমুক্ত দুটো বিষয় বাঙালিদের অল্প সময়ের জন্য হলেও এক ও ধর্মনিরপেক্ষ
২১ ফেব্রুয়ারি ২০২৪
‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর...
১২ জুন ২০২৫
ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।
১৯ মে ২০২৫
আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
০৮ মে ২০২৫
‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর সঙ্গে।
মাছের সুষ্ঠু প্রজনন, উৎপাদন, মৎস্যসম্পদ সংরক্ষণ ও টেকসই মৎস্য আহরণের জন্য সমুদ্রে সব ধরনের মাছ শিকার ৫৮ দিনের নিষেধাজ্ঞা গতকাল বুধবার দিবাগত মধ্যরাতে শেষ হয়েছে। তাই গতকাল দিনভর ছিল উপকূলের জেলেপল্লিগুলোতে ব্যস্ততা। অনেকে দেখে নিচ্ছিলেন ট্রলার ঠিকঠাক আছে কি না, কেউ জালের ছেঁড়া অংশ সেলাই করছিলেন, কেউ আবার প্রয়োজনীয় খাদ্যসামগ্রীসহ অন্য সরঞ্জাম গুছিয়ে নিচ্ছিলেন।
বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র এবং ফকিরহাট উপ-মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের ঘাটে গতকাল শত শত ট্রলার নোঙর করে রাখা ছিল। জেলেদের উপস্থিতিতে ঘাট এলাকা সরগরম হয়ে ওঠে। ফকিরহাটের মুদি-মনিহারি দোকানগুলোতে জেলেরা কেনাকাটা করতে ভিড় জমান। ফকিরহাট এলাকার বিসমিল্লাহ ট্রলারের মাঝি রহিম মিয়া বলেন, ‘সাগরে মাছ শিকারে যেতে সকল প্রস্তুতি নিয়েছি। নিষেধাজ্ঞার সময় শেষ হওয়ামাত্রই সাগরে নামব।’
জেলে নুরসাইদ ও ফোরকান মিয়া বলেন, ‘নিষেধাজ্ঞার সময় পরিবার-পরিজন নিয়ে বেশ কষ্টে কেটেছে। ওই সময়ে বেশ টাকা ঋণ করেছি। এখন সাগরে যাব। দেখি আল্লাহ ঋণ পরিশোধ করতে দেন কি না।’
নোয়াখালীর হাতিয়ার সূর্যমুখী, বাংলাবাজার, কাজিরবাজার, পাইতান মার্কেট চেয়ারম্যান ঘাটসহ বেশ কয়েকটি ঘাটে গতকাল জেলেদের ব্যস্ত সময় পার করতে দেখা গেছে। অনেকে নৌকায় জাল তুলছিলেন, আবার অনেকে জ্বালানি তেল মজুতসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্রী ট্রলারে নিয়ে যান। সূর্যমুখী ঘাটের এমভি মায়ের দোয়া ট্রলারের মাঝি জাফর উল্যা বলেন, ‘সাগরে ৮-১০ দিন থাকার প্রস্তুতি নিচ্ছি। সন্ধ্যায় সাগরের উদ্দেশে রওনা দেব।’
সূর্যমুখী ঘাট জেলে সমিতির সভাপতি জবিয়ল হক বলেন, ‘সাগরে নামতে প্রস্তুত নোয়াখালীর হাতিয়ার ২০টি ঘাটের লক্ষাধিক জেলে। এসব ঘাটে প্রায় ১০ হাজার ছোট-বড় ফিশিং ট্রলার রয়েছে। প্রতি ট্রলারে ১০ জন হলেও লক্ষাধিক জেলে এই মাছ ধরার সঙ্গে জড়িত। তাঁদের সবাই গত ৫৮ দিন তীরে বেকার ছিলেন।’
পিরোজপুরের ইন্দুরকানি উপজেলার পাড়েরহাট মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের পার্শ্ববর্তী এলাকার জেলেরা গতকাল দিনভর সাগরে যাওয়ার প্রস্তুতি নেন। এ ছাড়া মঠবাড়িয়া উপজেলার সাপলেজা, খেতাচিড়া, বড়মাছুয়া, ছোটমাছুয়া, ভান্ডারিয়া উপজেলার চরখালী, হেতালিয়া, কাউখালী উপজেলার সোনাকুর এলাকার জেলেরা, সদর উপজেলা এবং নেছারাবাদ উপজেলার বিভিন্ন এলাকার জেলেরা প্রস্তুতি শেষে গত রাতে বঙ্গোপসাগরে রওনা হন।
কয়েক দিন ধরে কক্সবাজার উপকূলের জেলেপল্লিগুলোতে নৌকা, জাল মেরামতসহ বিভিন্ন প্রস্তুতি সেরেছেন জেলেরা। গতকাল মেরিন ড্রাইভের টেকনাফের খুরেরমুখ, সাবরাং ও বাহারছড়া এলাকায় দেখা গেছে, সড়কে দাঁড় করিয়ে রাখা সারি সারি ট্রলারে জাল ও রসদ তোলেন জেলেরা।
একটি ট্রলারের মাঝি আবু তাহের জানান, এবার ভারতের সঙ্গে মিল রেখে নিষেধাজ্ঞা দেওয়ায় কেউ সাগরে মাছ শিকারে নামেনি। এতে উপকূলের কাছাকাছি সাগরে জাল ফেললেই ইলিশসহ অন্য মাছ পাওয়া যাবে বলে আশাবাদী তিনি।
কক্সবাজার শহরের ফিশারি ঘাটের মৎস্য ব্যবসায়ী সমিতির পরিচালক জুলফিকার আলী জানান, কক্সবাজার উপকূলে ছোট-বড় ৭ হাজারের মতো যান্ত্রিক ট্রলার রয়েছে। এসব ট্রলারে প্রায় এক লাখ জেলে ও শ্রমিক নিয়োজিত রয়েছেন। অধিকাংশ ট্রলার নিষেধাজ্ঞা ওঠার সঙ্গে সঙ্গে সাগরে রওনা হবে।
[প্রতিবেদন তৈরিতে তথ্য দিয়ে সহায়তা করেছেন বরগুনা ও আমতলী, পিরোজপুর, কক্সবাজার এবং হাতিয়া প্রতিনিধি]

‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর সঙ্গে।
মাছের সুষ্ঠু প্রজনন, উৎপাদন, মৎস্যসম্পদ সংরক্ষণ ও টেকসই মৎস্য আহরণের জন্য সমুদ্রে সব ধরনের মাছ শিকার ৫৮ দিনের নিষেধাজ্ঞা গতকাল বুধবার দিবাগত মধ্যরাতে শেষ হয়েছে। তাই গতকাল দিনভর ছিল উপকূলের জেলেপল্লিগুলোতে ব্যস্ততা। অনেকে দেখে নিচ্ছিলেন ট্রলার ঠিকঠাক আছে কি না, কেউ জালের ছেঁড়া অংশ সেলাই করছিলেন, কেউ আবার প্রয়োজনীয় খাদ্যসামগ্রীসহ অন্য সরঞ্জাম গুছিয়ে নিচ্ছিলেন।
বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র এবং ফকিরহাট উপ-মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের ঘাটে গতকাল শত শত ট্রলার নোঙর করে রাখা ছিল। জেলেদের উপস্থিতিতে ঘাট এলাকা সরগরম হয়ে ওঠে। ফকিরহাটের মুদি-মনিহারি দোকানগুলোতে জেলেরা কেনাকাটা করতে ভিড় জমান। ফকিরহাট এলাকার বিসমিল্লাহ ট্রলারের মাঝি রহিম মিয়া বলেন, ‘সাগরে মাছ শিকারে যেতে সকল প্রস্তুতি নিয়েছি। নিষেধাজ্ঞার সময় শেষ হওয়ামাত্রই সাগরে নামব।’
জেলে নুরসাইদ ও ফোরকান মিয়া বলেন, ‘নিষেধাজ্ঞার সময় পরিবার-পরিজন নিয়ে বেশ কষ্টে কেটেছে। ওই সময়ে বেশ টাকা ঋণ করেছি। এখন সাগরে যাব। দেখি আল্লাহ ঋণ পরিশোধ করতে দেন কি না।’
নোয়াখালীর হাতিয়ার সূর্যমুখী, বাংলাবাজার, কাজিরবাজার, পাইতান মার্কেট চেয়ারম্যান ঘাটসহ বেশ কয়েকটি ঘাটে গতকাল জেলেদের ব্যস্ত সময় পার করতে দেখা গেছে। অনেকে নৌকায় জাল তুলছিলেন, আবার অনেকে জ্বালানি তেল মজুতসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্রী ট্রলারে নিয়ে যান। সূর্যমুখী ঘাটের এমভি মায়ের দোয়া ট্রলারের মাঝি জাফর উল্যা বলেন, ‘সাগরে ৮-১০ দিন থাকার প্রস্তুতি নিচ্ছি। সন্ধ্যায় সাগরের উদ্দেশে রওনা দেব।’
সূর্যমুখী ঘাট জেলে সমিতির সভাপতি জবিয়ল হক বলেন, ‘সাগরে নামতে প্রস্তুত নোয়াখালীর হাতিয়ার ২০টি ঘাটের লক্ষাধিক জেলে। এসব ঘাটে প্রায় ১০ হাজার ছোট-বড় ফিশিং ট্রলার রয়েছে। প্রতি ট্রলারে ১০ জন হলেও লক্ষাধিক জেলে এই মাছ ধরার সঙ্গে জড়িত। তাঁদের সবাই গত ৫৮ দিন তীরে বেকার ছিলেন।’
পিরোজপুরের ইন্দুরকানি উপজেলার পাড়েরহাট মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের পার্শ্ববর্তী এলাকার জেলেরা গতকাল দিনভর সাগরে যাওয়ার প্রস্তুতি নেন। এ ছাড়া মঠবাড়িয়া উপজেলার সাপলেজা, খেতাচিড়া, বড়মাছুয়া, ছোটমাছুয়া, ভান্ডারিয়া উপজেলার চরখালী, হেতালিয়া, কাউখালী উপজেলার সোনাকুর এলাকার জেলেরা, সদর উপজেলা এবং নেছারাবাদ উপজেলার বিভিন্ন এলাকার জেলেরা প্রস্তুতি শেষে গত রাতে বঙ্গোপসাগরে রওনা হন।
কয়েক দিন ধরে কক্সবাজার উপকূলের জেলেপল্লিগুলোতে নৌকা, জাল মেরামতসহ বিভিন্ন প্রস্তুতি সেরেছেন জেলেরা। গতকাল মেরিন ড্রাইভের টেকনাফের খুরেরমুখ, সাবরাং ও বাহারছড়া এলাকায় দেখা গেছে, সড়কে দাঁড় করিয়ে রাখা সারি সারি ট্রলারে জাল ও রসদ তোলেন জেলেরা।
একটি ট্রলারের মাঝি আবু তাহের জানান, এবার ভারতের সঙ্গে মিল রেখে নিষেধাজ্ঞা দেওয়ায় কেউ সাগরে মাছ শিকারে নামেনি। এতে উপকূলের কাছাকাছি সাগরে জাল ফেললেই ইলিশসহ অন্য মাছ পাওয়া যাবে বলে আশাবাদী তিনি।
কক্সবাজার শহরের ফিশারি ঘাটের মৎস্য ব্যবসায়ী সমিতির পরিচালক জুলফিকার আলী জানান, কক্সবাজার উপকূলে ছোট-বড় ৭ হাজারের মতো যান্ত্রিক ট্রলার রয়েছে। এসব ট্রলারে প্রায় এক লাখ জেলে ও শ্রমিক নিয়োজিত রয়েছেন। অধিকাংশ ট্রলার নিষেধাজ্ঞা ওঠার সঙ্গে সঙ্গে সাগরে রওনা হবে।
[প্রতিবেদন তৈরিতে তথ্য দিয়ে সহায়তা করেছেন বরগুনা ও আমতলী, পিরোজপুর, কক্সবাজার এবং হাতিয়া প্রতিনিধি]

ফেব্রুয়ারি এলেই বাংলা ভাষা নিয়ে হইচই আর সাদাকালো পোশাক নিয়ে মাতামাতি শুরু হয়ে যায়। তারপর আবার পরের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত নীরবতা। মাঝখানে পয়লা বৈশাখে আবার বাঙালিত্ব জেগে ওঠে। লাল-সাদা পোশাক নিয়ে পান্তা-ইলিশ। এতে দোষের কিছু নেই; বরং সংস্কারমুক্ত দুটো বিষয় বাঙালিদের অল্প সময়ের জন্য হলেও এক ও ধর্মনিরপেক্ষ
২১ ফেব্রুয়ারি ২০২৪
গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।
১৯ দিন আগে
ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।
১৯ মে ২০২৫
আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
০৮ মে ২০২৫নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা

ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।
ভারতের নিষেধাজ্ঞার এক দিন পরই গত রোববার লালমনিরহাটের বুড়িমারী ও যশোরের বেনাপোল স্থলবন্দরসহ বিভিন্ন বন্দরে পণ্যের ট্রাক আটকে দেয় ভারত। সংশ্লিষ্টদের সূত্রে জানা যায়, রোববার ভারতের আমদানি বিধিনিষেধের কারণে বুড়িমারী সীমান্তে প্রাণের ১৭ ট্রাক খাদ্যপণ্য আটকে যায়। এ ছাড়া বেনাপোলে ৩৬টি পোশাক বোঝাই ট্রাকসহ অন্যান্য পণ্যের শতাধিক ট্রাক ঢুকতে পারেনি।
গতকাল সোমবার পর্যন্ত বুড়িমারী থেকে প্রাণের পণ্যবোঝাই ট্রাকগুলোর অর্ধেকের বেশি ফেরত নিয়ে আসে প্রতিষ্ঠানটি। এ ছাড়া বেনাপোলে পোর্টের ভেতরে ২৪টি ট্রাক ছাড়া বাকিগুলো ফেরত চলে যায়।
বেনাপোল বন্দর সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট স্টাফ অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মো. সাজেদুর রহমান গতকাল সোমবার আজকের পত্রিকাকে বলেন, গতকাল পোর্টের ভেতর ও বাইরে শতাধিক ট্রাক দাঁড়িয়ে ছিল। আজ পোর্টের ভেতরের ২৪টি ছাড়া বাকিগুলো ফেরত নিয়ে গেছেন মালিকেরা। এখন পর্যন্ত মনে হচ্ছে, পোর্টের ভেতরের ট্রাকগুলোও ফেরত নিতে হবে।
জানতে চাইলে প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের পরিচালক (বিপণন) কামরুজ্জামান কামাল আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমাদের হাতে ৬ মিলিয়ন ডলারের ক্রয় আদেশ রয়েছে। তার মধ্য থেকে রোববার বুড়িমারী দিয়ে ১৭ ট্রাকবোঝাই পণ্য পাঠিয়েছিলাম। কিন্তু সেগুলো ঢুকতে পারেনি। ট্রাকগুলো ফেরত আনা হচ্ছে। নতুন করে কাগজপত্র তৈরি করে অন্য পথ দিয়ে পণ্য পাঠাতে হবে।’
বেনাপোল স্থলবন্দর সূত্রে জানা যায়, ওই ২৪টি ট্রাক পোর্টের ভেতরে থাকায় এখনো তারা ভারতে প্রবেশের অপেক্ষায় রয়েছে। তাদের আশা, যেহেতু নিষেধাজ্ঞার আগে এই পণ্যগুলোর এলসি করা হয়েছিল, তাই এগুলো প্রবেশে অনুমতি পাবে। তবে এটি নির্ভর করবে বাংলাদেশ সরকারের আলোচনার ওপর।
এমন পরিস্থিতিতে সরকারের সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় রয়েছেন ব্যবসায়ীরা। ইতিমধ্যে অনেক রপ্তানিকারক রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) সঙ্গে আলোচনা করে সরকারের সহযোগিতা চেয়েছে।
স্থলবন্দরের মাধ্যমে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জসমূহ এবং আশু করণীয় নির্ধারণে বাণিজ্যসচিবের সভাপতিত্বে আজ মঙ্গলবার আন্তমন্ত্রণালয়ের সভা ডেকেছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, স্থলবন্দরের মাধ্যমে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জসমূহ এবং আশু করণীয় নির্ধারণে বাণিজ্যসচিবের সভাপতিত্বে বিকেল ৪টায় আন্তমন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে এই সভা অনুষ্ঠিত হবে।
সভায় নৌপরিবহন ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশন, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড, বাংলাদেশ স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষ, রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো, জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের প্রতিনিধিদের উপস্থিত থাকতে বলা হয়েছে। এ ছাড়া ব্যবসায়ী প্রতিনিধি হিসেবে এফবিসিসিআই, বিজিএমইএ, ভারত-বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির প্রতিনিধিদের উপস্থিতির জন্য আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে।
ভারতের শিল্প ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয় গত শনিবার হঠাৎ এক বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে স্থলবন্দর দিয়ে বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক আমদানি নিষিদ্ধ করে। শুধু ভারতের নবসেবা ও কলকাতা সমুদ্রবন্দর ব্যবহার করে দেশটির আমদানিকারকেরা বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক আমদানি করতে পারবেন বলে ওই বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়। এ ছাড়া বাংলাদেশ থেকে ভারতের আসাম, মেঘালয়, ত্রিপুরা ও মিজোরাম, পশ্চিমবঙ্গের চ্যাংড়াবান্দা ও ফুলবাড়ী শুল্ক স্টেশন দিয়ে ফল, ফলের স্বাদযুক্ত পানীয়, কোমল পানীয়, প্রক্রিয়াজাত খাদ্য, প্লাস্টিক পণ্য, সুতা, সুতার উপজাত, আসবাব রপ্তানিও নিষিদ্ধ করা হয় ওই বিজ্ঞপ্তিতে।
আমদানি ও রপ্তানিসংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা জানান, দেশের ২৪টি বন্দরের মধ্যে ১৬টি বন্দর দিয়ে ভারতের সঙ্গে আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য হয়ে থাকে। তবে যোগাযোগব্যবস্থা সহজ হওয়ায় বেনাপোল ও ভারতের পেট্রাপোল বন্দর দিয়ে সবচেয়ে বেশি আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য হয়। এর পরিমাণ ৮০ শতাংশ। বেনাপোল বন্দর দিয়ে প্রতিদিন ভারতে ২৫০ থেকে ৩০০ ট্রাকে বিভিন্ন ধরনের পণ্য রপ্তানি হয়। এর মধ্যে শতাধিক ট্রাক পণ্য থাকে তৈরি পোশাক।
এর আগে গত ৮ এপ্রিল বাংলাদেশের জন্য ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা বাতিল করে ভারত। ফলে ভারতের বিমানবন্দর ব্যবহার করে তৃতীয় কোনো দেশে তৈরি পোশাক রপ্তানি করতে পারছে না বাংলাদেশ। অন্যদিকে প্রায় এক মাস আগে ভারত থেকে বেনাপোল, ভোমরা, সোনামসজিদ, বাংলাবান্ধা, বুড়িমারী স্থলবন্দর দিয়ে সুতা আমদানির সুযোগ বন্ধ করে দেয় বাংলাদেশের জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)।
সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) বিশেষ ফেলো মোস্তাফিজুর রহমানের মতে, এই পাল্টাপাল্টি পদক্ষেপে তুলনামূলকভাবে বেশি নেতিবাচক প্রভাব পড়বে বাংলাদেশের ওপর। তাই ভারতের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য ঘাটতি কমানোর চেষ্টা অব্যাহত রাখাই সরকারের উচিত বলে মনে করছেন তিনি।
মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, আলোচনার মাধ্যমে বাংলাদেশ এবং ভারতের বিরোধপূর্ণ বিষয়সমূহ মিটিয়ে ফেলতে হবে এবং দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য সম্পর্কের ক্ষেত্রে ভারসাম্য প্রতিষ্ঠা করতে হবে। এটাই হবে উভয় দেশের জন্য কল্যাণকর।

ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।
ভারতের নিষেধাজ্ঞার এক দিন পরই গত রোববার লালমনিরহাটের বুড়িমারী ও যশোরের বেনাপোল স্থলবন্দরসহ বিভিন্ন বন্দরে পণ্যের ট্রাক আটকে দেয় ভারত। সংশ্লিষ্টদের সূত্রে জানা যায়, রোববার ভারতের আমদানি বিধিনিষেধের কারণে বুড়িমারী সীমান্তে প্রাণের ১৭ ট্রাক খাদ্যপণ্য আটকে যায়। এ ছাড়া বেনাপোলে ৩৬টি পোশাক বোঝাই ট্রাকসহ অন্যান্য পণ্যের শতাধিক ট্রাক ঢুকতে পারেনি।
গতকাল সোমবার পর্যন্ত বুড়িমারী থেকে প্রাণের পণ্যবোঝাই ট্রাকগুলোর অর্ধেকের বেশি ফেরত নিয়ে আসে প্রতিষ্ঠানটি। এ ছাড়া বেনাপোলে পোর্টের ভেতরে ২৪টি ট্রাক ছাড়া বাকিগুলো ফেরত চলে যায়।
বেনাপোল বন্দর সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট স্টাফ অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মো. সাজেদুর রহমান গতকাল সোমবার আজকের পত্রিকাকে বলেন, গতকাল পোর্টের ভেতর ও বাইরে শতাধিক ট্রাক দাঁড়িয়ে ছিল। আজ পোর্টের ভেতরের ২৪টি ছাড়া বাকিগুলো ফেরত নিয়ে গেছেন মালিকেরা। এখন পর্যন্ত মনে হচ্ছে, পোর্টের ভেতরের ট্রাকগুলোও ফেরত নিতে হবে।
জানতে চাইলে প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের পরিচালক (বিপণন) কামরুজ্জামান কামাল আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমাদের হাতে ৬ মিলিয়ন ডলারের ক্রয় আদেশ রয়েছে। তার মধ্য থেকে রোববার বুড়িমারী দিয়ে ১৭ ট্রাকবোঝাই পণ্য পাঠিয়েছিলাম। কিন্তু সেগুলো ঢুকতে পারেনি। ট্রাকগুলো ফেরত আনা হচ্ছে। নতুন করে কাগজপত্র তৈরি করে অন্য পথ দিয়ে পণ্য পাঠাতে হবে।’
বেনাপোল স্থলবন্দর সূত্রে জানা যায়, ওই ২৪টি ট্রাক পোর্টের ভেতরে থাকায় এখনো তারা ভারতে প্রবেশের অপেক্ষায় রয়েছে। তাদের আশা, যেহেতু নিষেধাজ্ঞার আগে এই পণ্যগুলোর এলসি করা হয়েছিল, তাই এগুলো প্রবেশে অনুমতি পাবে। তবে এটি নির্ভর করবে বাংলাদেশ সরকারের আলোচনার ওপর।
এমন পরিস্থিতিতে সরকারের সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় রয়েছেন ব্যবসায়ীরা। ইতিমধ্যে অনেক রপ্তানিকারক রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) সঙ্গে আলোচনা করে সরকারের সহযোগিতা চেয়েছে।
স্থলবন্দরের মাধ্যমে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জসমূহ এবং আশু করণীয় নির্ধারণে বাণিজ্যসচিবের সভাপতিত্বে আজ মঙ্গলবার আন্তমন্ত্রণালয়ের সভা ডেকেছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, স্থলবন্দরের মাধ্যমে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জসমূহ এবং আশু করণীয় নির্ধারণে বাণিজ্যসচিবের সভাপতিত্বে বিকেল ৪টায় আন্তমন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে এই সভা অনুষ্ঠিত হবে।
সভায় নৌপরিবহন ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশন, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড, বাংলাদেশ স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষ, রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো, জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের প্রতিনিধিদের উপস্থিত থাকতে বলা হয়েছে। এ ছাড়া ব্যবসায়ী প্রতিনিধি হিসেবে এফবিসিসিআই, বিজিএমইএ, ভারত-বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির প্রতিনিধিদের উপস্থিতির জন্য আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে।
ভারতের শিল্প ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয় গত শনিবার হঠাৎ এক বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে স্থলবন্দর দিয়ে বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক আমদানি নিষিদ্ধ করে। শুধু ভারতের নবসেবা ও কলকাতা সমুদ্রবন্দর ব্যবহার করে দেশটির আমদানিকারকেরা বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক আমদানি করতে পারবেন বলে ওই বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়। এ ছাড়া বাংলাদেশ থেকে ভারতের আসাম, মেঘালয়, ত্রিপুরা ও মিজোরাম, পশ্চিমবঙ্গের চ্যাংড়াবান্দা ও ফুলবাড়ী শুল্ক স্টেশন দিয়ে ফল, ফলের স্বাদযুক্ত পানীয়, কোমল পানীয়, প্রক্রিয়াজাত খাদ্য, প্লাস্টিক পণ্য, সুতা, সুতার উপজাত, আসবাব রপ্তানিও নিষিদ্ধ করা হয় ওই বিজ্ঞপ্তিতে।
আমদানি ও রপ্তানিসংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা জানান, দেশের ২৪টি বন্দরের মধ্যে ১৬টি বন্দর দিয়ে ভারতের সঙ্গে আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য হয়ে থাকে। তবে যোগাযোগব্যবস্থা সহজ হওয়ায় বেনাপোল ও ভারতের পেট্রাপোল বন্দর দিয়ে সবচেয়ে বেশি আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য হয়। এর পরিমাণ ৮০ শতাংশ। বেনাপোল বন্দর দিয়ে প্রতিদিন ভারতে ২৫০ থেকে ৩০০ ট্রাকে বিভিন্ন ধরনের পণ্য রপ্তানি হয়। এর মধ্যে শতাধিক ট্রাক পণ্য থাকে তৈরি পোশাক।
এর আগে গত ৮ এপ্রিল বাংলাদেশের জন্য ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা বাতিল করে ভারত। ফলে ভারতের বিমানবন্দর ব্যবহার করে তৃতীয় কোনো দেশে তৈরি পোশাক রপ্তানি করতে পারছে না বাংলাদেশ। অন্যদিকে প্রায় এক মাস আগে ভারত থেকে বেনাপোল, ভোমরা, সোনামসজিদ, বাংলাবান্ধা, বুড়িমারী স্থলবন্দর দিয়ে সুতা আমদানির সুযোগ বন্ধ করে দেয় বাংলাদেশের জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)।
সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) বিশেষ ফেলো মোস্তাফিজুর রহমানের মতে, এই পাল্টাপাল্টি পদক্ষেপে তুলনামূলকভাবে বেশি নেতিবাচক প্রভাব পড়বে বাংলাদেশের ওপর। তাই ভারতের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য ঘাটতি কমানোর চেষ্টা অব্যাহত রাখাই সরকারের উচিত বলে মনে করছেন তিনি।
মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, আলোচনার মাধ্যমে বাংলাদেশ এবং ভারতের বিরোধপূর্ণ বিষয়সমূহ মিটিয়ে ফেলতে হবে এবং দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য সম্পর্কের ক্ষেত্রে ভারসাম্য প্রতিষ্ঠা করতে হবে। এটাই হবে উভয় দেশের জন্য কল্যাণকর।

ফেব্রুয়ারি এলেই বাংলা ভাষা নিয়ে হইচই আর সাদাকালো পোশাক নিয়ে মাতামাতি শুরু হয়ে যায়। তারপর আবার পরের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত নীরবতা। মাঝখানে পয়লা বৈশাখে আবার বাঙালিত্ব জেগে ওঠে। লাল-সাদা পোশাক নিয়ে পান্তা-ইলিশ। এতে দোষের কিছু নেই; বরং সংস্কারমুক্ত দুটো বিষয় বাঙালিদের অল্প সময়ের জন্য হলেও এক ও ধর্মনিরপেক্ষ
২১ ফেব্রুয়ারি ২০২৪
গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।
১৯ দিন আগে
‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর...
১২ জুন ২০২৫
আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
০৮ মে ২০২৫
আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
১৮৯৮ সালে ভারতের উত্তর প্রদেশের একটি ধূলিধূসর টিলা খুঁড়ে পাওয়া মূল্যবান এই রত্নগুলো এক শতাব্দীর বেশি সময় ধরে একটি বেসরকারি ব্রিটিশ সংগ্রহাগারে প্রায় দৃষ্টিচক্ষুর আড়ালে ছিল। এখন যেহেতু রত্নগুলোর হাতবদলের সময় এসেছে, তাই নতুন সংগ্রাহকেরা আগ্রহ নিয়ে এগুলো সংগ্রহের জন্য অপেক্ষা করছেন। কিন্তু এখানে একটা অস্বস্তিও তৈরি হয়েছে।
গৌতম বুদ্ধের জন্মস্থান লুম্বিনীর কাছাকাছি, বর্তমানে ভারতের উত্তর প্রদেশে একটি ইটের ঘরের ভেতর থেকে প্রায় ১ হাজার ৮০০টি মুক্তা, রুবি, টোপাজ, নীলা ও নকশা করা সোনার পাত সংগ্রহ করা হয়েছিল। তবে এই রত্নগুলোর সঙ্গে সঙ্গে একটি খোদাই করা পাত্রে হাড়ের টুকরাও পাওয়া যায়, যেগুলোকে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষ বলে শনাক্ত করা হয়। এই আবিষ্কার তখন প্রত্নতত্ত্বের জগতে ব্যাপক আলোড়ন তোলে।
সাদাবি’স এশিয়ার চেয়ারম্যান নিকোলাস চাউ মনে করেন, স্মরণকালের বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর মাঝে এই রত্নসম্ভার অন্যতম। তবে এগুলো নিলামে তোলার কারণে একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন তৈরি হয়েছে। আর তা হচ্ছে—ভারতের ইতিহাসের সঙ্গে গভীরভাবে জড়িয়ে থাকা এবং বৌদ্ধদের কাছে পবিত্র এই সম্পদ বিক্রি করা কি নৈতিকভাবে গ্রহণযোগ্য?
১৮৯৮ সালে ব্রিটিশ এস্টেট ম্যানেজার উইলিয়াম ক্ল্যাক্সটন পেপ্পে লুম্বিনির ঠিক দক্ষিণে পিপ্রাওয়ায় অবস্থিত একটি ঢিবি খনন করেন। সেখান থেকেই প্রায় ২ হাজার বছর আগের ওই নির্দশনগুলো খুঁজে পাওয়া যায়।
ইতিহাসবিদদের মতে, প্রাপ্ত রত্নসম্ভার ও দেহাবশেষ, যা তখনো পর্যন্ত অক্ষত ছিল, সেগুলো গৌতম বুদ্ধের শাক্য বংশের এবং বিশ্বব্যাপী বৌদ্ধদের ঐতিহ্য। হাড়ের নিদর্শনগুলো থাইল্যান্ড, শ্রীলঙ্কা ও মিয়ানমারের মতো দেশগুলোতে বিতরণ করা হয়েছে। এসব দেশে এখনো সেগুলোর পূজা করা হয়।

আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
১৮৯৮ সালে ভারতের উত্তর প্রদেশের একটি ধূলিধূসর টিলা খুঁড়ে পাওয়া মূল্যবান এই রত্নগুলো এক শতাব্দীর বেশি সময় ধরে একটি বেসরকারি ব্রিটিশ সংগ্রহাগারে প্রায় দৃষ্টিচক্ষুর আড়ালে ছিল। এখন যেহেতু রত্নগুলোর হাতবদলের সময় এসেছে, তাই নতুন সংগ্রাহকেরা আগ্রহ নিয়ে এগুলো সংগ্রহের জন্য অপেক্ষা করছেন। কিন্তু এখানে একটা অস্বস্তিও তৈরি হয়েছে।
গৌতম বুদ্ধের জন্মস্থান লুম্বিনীর কাছাকাছি, বর্তমানে ভারতের উত্তর প্রদেশে একটি ইটের ঘরের ভেতর থেকে প্রায় ১ হাজার ৮০০টি মুক্তা, রুবি, টোপাজ, নীলা ও নকশা করা সোনার পাত সংগ্রহ করা হয়েছিল। তবে এই রত্নগুলোর সঙ্গে সঙ্গে একটি খোদাই করা পাত্রে হাড়ের টুকরাও পাওয়া যায়, যেগুলোকে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষ বলে শনাক্ত করা হয়। এই আবিষ্কার তখন প্রত্নতত্ত্বের জগতে ব্যাপক আলোড়ন তোলে।
সাদাবি’স এশিয়ার চেয়ারম্যান নিকোলাস চাউ মনে করেন, স্মরণকালের বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর মাঝে এই রত্নসম্ভার অন্যতম। তবে এগুলো নিলামে তোলার কারণে একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন তৈরি হয়েছে। আর তা হচ্ছে—ভারতের ইতিহাসের সঙ্গে গভীরভাবে জড়িয়ে থাকা এবং বৌদ্ধদের কাছে পবিত্র এই সম্পদ বিক্রি করা কি নৈতিকভাবে গ্রহণযোগ্য?
১৮৯৮ সালে ব্রিটিশ এস্টেট ম্যানেজার উইলিয়াম ক্ল্যাক্সটন পেপ্পে লুম্বিনির ঠিক দক্ষিণে পিপ্রাওয়ায় অবস্থিত একটি ঢিবি খনন করেন। সেখান থেকেই প্রায় ২ হাজার বছর আগের ওই নির্দশনগুলো খুঁজে পাওয়া যায়।
ইতিহাসবিদদের মতে, প্রাপ্ত রত্নসম্ভার ও দেহাবশেষ, যা তখনো পর্যন্ত অক্ষত ছিল, সেগুলো গৌতম বুদ্ধের শাক্য বংশের এবং বিশ্বব্যাপী বৌদ্ধদের ঐতিহ্য। হাড়ের নিদর্শনগুলো থাইল্যান্ড, শ্রীলঙ্কা ও মিয়ানমারের মতো দেশগুলোতে বিতরণ করা হয়েছে। এসব দেশে এখনো সেগুলোর পূজা করা হয়।

ফেব্রুয়ারি এলেই বাংলা ভাষা নিয়ে হইচই আর সাদাকালো পোশাক নিয়ে মাতামাতি শুরু হয়ে যায়। তারপর আবার পরের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত নীরবতা। মাঝখানে পয়লা বৈশাখে আবার বাঙালিত্ব জেগে ওঠে। লাল-সাদা পোশাক নিয়ে পান্তা-ইলিশ। এতে দোষের কিছু নেই; বরং সংস্কারমুক্ত দুটো বিষয় বাঙালিদের অল্প সময়ের জন্য হলেও এক ও ধর্মনিরপেক্ষ
২১ ফেব্রুয়ারি ২০২৪
গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।
১৯ দিন আগে
‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর...
১২ জুন ২০২৫
ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।
১৯ মে ২০২৫