Ajker Patrika

মশারিতে সুরক্ষা জীবিকার

মো. হাবিবুল্লাহ, নেছারাবাদ (পিরোজপুর)
আপডেট : ০৮ জানুয়ারি ২০২২, ১৩: ২২
মশারিতে সুরক্ষা জীবিকার

নেছারাবাদ উপজেলার সুটিয়াকাঠি ইউনিয়নে মশারি শিল্পে স্বপ্ন দেখছে একটি মহল্লা। ওই গ্রামের নামও সুটিয়াকাঠি। এখানকার বেশির ভাগ নারী-পুরুষ জীবিকা নির্বাহ করছেন বৈদ্যুতিক ও পায়ে চালিত সেলাই মেশিন দিয়ে মশারি বুনে। ঘরেই মশারি তৈরির কারখানা খুলে বসেছেন তাঁরা।

রাজধানীর গাউসিয়া থেকে গজ হিসেবে নেট কাপড় কিনে এনে মশারি তৈরি করেন সুটিয়াকাঠির মানুষ। এই মহল্লার মানুষেরা ৫০ বছরের বেশি সময় ধরে বংশানুক্রমে এভাবে মশারি বানিয়ে যাচ্ছেন। ওই গ্রামের প্রতিটি পরিবারেই নারী-পুরুষেরা এ পেশার সঙ্গে জড়িত। কোনো কোনো পরিবারের শিক্ষার্থীরাও লেখাপড়ার ফাঁকে মশারি সেলাই করে। ঘরগুলোর ভেতরে না ঢুকলে কেউ বিশ্বাসই করতে চাইবেন না যে, গ্রামের ছায়াঘেরা বাড়িগুলোয় এত মশারি তৈরি হচ্ছে, কী কর্মযজ্ঞ চলছে সেখানে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, উপজেলার কেবল সুটিয়াকাঠি ইউনিয়নের ওই একটি মহল্লাই নয়, আশপাশের কৌরিখাড়া, নান্দুহার, ইন্দেরহাট, মিয়ারহাট, সোহাগদল, বিন্না, জিলবাড়ি, চামি, ডুবি, উড়িবুনিয়া ও বলদিয়া ইউনিয়নের পঞ্চবেকিসহ নেছারাবাদ উপজেলার ২০টি গ্রামের বাড়িগুলোতে প্রায় ২০০টি মশারি তৈরির ছোট-বড় কারখানা রয়েছে। প্রতিদিন এসব গ্রাম থেকে হাজার-হাজার মশারি স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে পাঠানো হয় ঢাকাসহ বাংলাদেশের বিভিন্ন জায়গায়। তবে সুটিয়াকাঠির ৯ নম্বর ওয়ার্ডের মহল্লার লোকেরা কেবল এই পেশার ওপর নির্ভরশীল। ওই ওয়ার্ডের প্রতিটি ঘরেই তৈরি হয় মশারি।

সরকারিভাবে সহজ শর্তে ঋণের অভাবে গ্রামের মানুষেরা স্থানীয় এনজিও থেকে চড়া সুদে ঋণ এনে ব্যবসা চালাচ্ছেন। সুটিয়াকাঠি ইউনিয়নের বৃদ্ধ নজরুল ইসলাম (৮৫) বলেন, স্বাধীনতার আগে থেকে এ গ্রামের লোকেরা মশারি তৈরি করে স্বাবলম্বী হয়েছেন। তবে গ্রামের বেশির ভাগ লোক অভাবী হওয়ায় পুঁজির অভাবে মজুরির বিনিময়ে অন্যের ঘরে মশারি বানিয়ে সংসার চালাচ্ছেন কোনোমতে।

মশারি কারিগর লিটন (৩৭) জানান, শীতের মৌসুমে তাঁদের হাতে তৈরি নেট মশারির চাহিদা একটু কম থাকে। এ সময় ব্যবসা মন্দ থাকে। একটি ২০০ টাকার মশারিতে ৫০ টাকা এবং ৫০০ টাকার মশারিতে ১২০ টাকা লাভ হয়। একজন প্রতিদিন দশটি মশারি বানিয়ে বিক্রি করতে পারলে মাসে ২০-২৫ হাজার টাকা লাভ হয়।

দৈনিক মজুরি বিনিময়ে মশারি কারিগর শিল্পি বেগম (৩৩) বলেন, ‘আমাদের ঘরে মোট পাঁচজন সদস্য। ঘরের ভেতরে আমরা দুজনে মশারি বানিয়ে যা পাই, ছেলে-মেয়ে লেখাপড়া করিয়ে সুন্দরভাবে সংসার চলে। তবে অফ সিজনে কাজ কম থাকে, তখন এনজিও থেকে ঋণ নিয়ে সংসার চালাই। তখন কিছুটা কষ্ট হয়। এনজিও দিয়ে চড়া সুদের ঋণে এ ব্যবসা চালানো কষ্টকর।’

নেছারাবাদ উপজেলা সদর থেকে সন্ধ্যা নদীর পশ্চিম পাড় সুটিয়াকাঠি গ্রাম। এ গ্রামের মহল্লায় মহল্লায় গড়ে তোলা হয়েছে মশারি তৈরির কারখানা। কারখানাগুলোয় বৈদ্যুতিক আর প্যাডেল সেলাই মেশিনের ঠক ঠক শব্দে ভোর থেকেই গভীর রাত পর্যন্ত চলে কর্মজজ্ঞ। আর এই শব্দ জানিয়ে দেয়, এই মহল্লার নাম মশারিপট্টি। এখানকার দরিদ্র মানুষের হাতে এই শিল্পের গোড়াপত্তন হলেও ভাগ্য বদলায়নি তাদের। দাদন ব্যবসায়ী আর চড়া সুদে এনজিও থেকে ঋণ নিয়ে কোনোভাবে তিন বেলা দু’মুঠো খেয়ে বাপ দাদার আদি ব্যবসা টিকিয়ে রেখেছেন।

নেছারাবাদ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. মোশারেফ হোসেন বলেন, ‘মশারি শিল্পে যাঁরা জড়িত, তাঁরা যদি কোনো সরকারি সহযোগিতা চান, তাহলে সহজ শর্তে ব্যবসার জন্য ঋণ পেতে পারেন। সে লক্ষ্যে উপজেলা প্রশাসন তাদের জন্য যতটুকু সম্ভব সহযোগিতা করবে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

প্রশিক্ষণ ছাড়াই মাঠে ৪২৬ সহায়ক পুলিশ কর্মকর্তা

গ্রাহকের ২,৬৩৫ কোটি টাকা দিচ্ছে না ৪৬ বিমা কোম্পানি

১০০ বছর পর জানা গেল ‘অপ্রয়োজনীয়’ প্রত্যঙ্গটি নারীর প্রজননের জন্য গুরুত্বপূর্ণ

‘এই টাকা দিয়ে কী হয়, আমি এত চাপ নিচ্ছি, লাখ পাঁচেক দিতে বলো’, ওসির অডিও ফাঁস

কিশোরগঞ্জে আওয়ামী লীগের ঝটিকা মিছিল, যুবলীগ নেতা গ্রেপ্তার

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত