Ajker Patrika

শব্দদূষণে বাড়ছে ভোগান্তি, স্বাস্থ্যঝুঁকি

মাহমুদ সোহেল, ঢাকা
আপডেট : ২৯ অক্টোবর ২০২১, ১৯: ১৬
শব্দদূষণে বাড়ছে ভোগান্তি, স্বাস্থ্যঝুঁকি

দেখে মনে হয়, একটা প্রতিযোগিতা চলছে। চালকেরা কে কত বেশি জোরে হর্ন বাজাতে পারেন সেই প্রতিযোগিতা। এমন পরিস্থিতির মধ্যেই রাস্তায় সিগন্যালের দায়িত্ব পালন করছেন পুলিশের সার্জেন্ট। তীব্র রোদের মধ্যে চোখে-মুখে তাঁর বিরক্তির ছাপ। তবু কর্তব্য পালনে অনড় এই সার্জেন্ট।

গতকাল বৃহস্পতিবার রাজধানীর ফকিরাপুল মোড়ের চিত্র এটি। তীব্র শব্দদূষণের কারণে নিজের ভোগান্তির কথা জানালেন সেখানকার দায়িত্বরত সার্জেন্ট মেহেদী হাসান (৩৩)। আজকের পত্রিকাকে মেহেদী জানান, ১০ বছর ধরে সার্জেন্ট হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। বর্তমানে মতিঝিল ট্রাফিক বিভাগে আছেন। রাস্তায় এমন শব্দদূষণের ফলে ইতিমধ্যেই তাঁর শ্রবণশক্তি কমে গেছে। রাতভর মাথাব্যথায় ভালো ঘুম হয় না।

মেহেদী বলেন, ‘কানে কম শোনার কারণে আমি বাসায় গিয়ে স্বাভাবিক কথাও অনেক জোরে বলতে হয়। এতে অনেক সময় ঝগড়া ভেবে আমার স্ত্রী রেগে যায়। ছোটখাটো বিষয়ে তৈরি হয় পারিবারিক অশান্তিও। আর আমার মানসিক অবস্থাও খারাপ থাকে।’

মতিঝিলের মতো রাজধানীর বেশির ভাগ এলাকাতেই শব্দদূষণের কারণে ভুগতে হচ্ছে রাস্তায় চলাচলকারীদের। সম্প্রতি ঢাকার ১০টি স্থানে গবেষণা চালিয়ে সহনীয় মাত্রার চেয়ে বেশি শব্দ পেয়েছে স্টামফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের বায়ুমণ্ডলীয় দূষণ অধ্যয়ন কেন্দ্র (ক্যাপস)। গত এপ্রিল, মে, জুন ও জুলাই-৪ মাস এই গবেষণা কার্যক্রম চলে।

গবেষণার তথ্য বলছে, ১০টি স্থানের মধ্যে পরিবেশ মন্ত্রণালয় ঘোষিত তিনটি নীরব এলাকাও রয়েছে। সেগুলো হলো সংসদ ভবন এলাকা, শাহবাগ ও আহসান মঞ্জিল। এই তিন এলাকাতেই দিনের ৯৯ দশমিক ৪৫ শতাংশ সময়ে শব্দদূষণ মানমাত্রার চেয়ে বেশি থাকে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার নির্দেশনা অনুযায়ী আবাসিক এলাকায় শব্দের সহনীয় মাত্রা দিনের বেলা ৫৫ ডেসিবেল হলেও ধানমন্ডি ৩২ ও গুলশান ২-এ দিনের ৯৮.৩১ ভাগ সময়েই এই মাত্রার বেশি শব্দ হয়।

গবেষণায় আরও বলা হয়, বাণিজ্যিক এলাকায় দিনে ৬৫ ডেসিবেল সহনীয় মাত্রা হলেও রাজধানীর মতিঝিলে দিনের ৬৫ দশমিক ৪৩ ভাগ সময়ই এই মাত্রার বেশি শব্দ হয়। এ ছাড়া তেজগাঁও শিল্প এলাকায় দিনের ১৮ দশমিক ৪৫ ভাগ সময়, মিশ্র এলাকা আগারগাঁও, মিরপুর ১০ এবং উত্তরার আবদুল্লাহপুরে দিনের প্রায় ৮৭ ভাগ সময়ই মানমাত্রার বেশি শব্দ হয়।

গবেষণায় নেতৃত্ব দেন স্টামফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশবিজ্ঞান বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ও ক্যাপসের পরিচালক ড. আহমেদ কামরুজ্জামান মজুমদার। আজকের পত্রিকাকে তিনি বলেন, ‘ঢাকা বিশ্বের সেরা শব্দদূষণ শহরের একটি। এখানে আইন আছে শুধু কাগজে-কলমে। ঢাকার শব্দদূষণের প্রধানত দুই কারণ। গাড়ির হর্ন এবং ভবন ভাঙা-গড়া। রাজউকের কিছু বিধিনিষেধের কারণে ভবন নির্মাণে শব্দ কম হলেও গাড়ির হর্ন শব্দদূষণ বাড়াচ্ছে।’

এক গবেষণার বরাত দিয়ে নাক, কান ও গলা বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ডা. মণিলাল আইচ লিটু বলেন, ‘ঢাকার ৩৫ শতাংশ মানুষ কানে কম শোনে। ১৪ শতাংশ মানুষের কানে অসুখ আছে। এদের অনেকেই শব্দ দূষণের ভোগান্তির শিকার। কারও কারও হৃদ্‌রোগ হচ্ছে। মেজাজ খিটখিটে হয়ে যাচ্ছে। বাড়ছে বধিরতাও।’

শব্দদূষণ বন্ধে হাইকোর্টে রিট আবেদনকারী অ্যাডভোকেট মনজিল মোরসেদ আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘অ্যাম্বুলেন্স ও পুলিশের গাড়িতে হাইড্রোলিক হর্ন ব্যবহারের অনুমতি আছে। অথচ বাস, ট্রাক এগুলো ব্যবহার করছে। শব্দদূষণ নিয়ে জনসচেতনতার অভাবের সঙ্গে সঙ্গে আইন বাস্তবায়নের অভাব রয়েছে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

‘আমরা মরে গেলাম ঋণের দায়ে আর খাওয়ার অভাবে’, চিরকুটে লেখা

যুক্তরাষ্ট্রে পা রাখামাত্র পুতিনকে গ্রেপ্তারের আহ্বান

জ্যেষ্ঠ সেনা কর্মকর্তার বিরুদ্ধে অভিযোগ তদন্তে উচ্চপদস্থ বোর্ড গঠন: আইএসপিআর

ফেসবুকে ছাত্রলীগ নেতার ‘হুমকি’, রাবিতে ১৫ আগস্টের কনসার্টে যাচ্ছে না আর্টসেল

পাবনায় প্রবাসীর স্ত্রীকে নিয়ে এএসআই উধাও, থানায় শ্বশুরের জিডি

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত