Ajker Patrika

অনাবৃষ্টিতে জমি চৌচির আমন নিয়ে দুশ্চিন্তা

জুবাইদুল ইসলাম শেরপুর ও আনোয়ার সাদাৎ ইমরান, মধুপুর (টাঙ্গাইল) 
অনাবৃষ্টিতে জমি চৌচির আমন নিয়ে দুশ্চিন্তা

চলতি বছরের বর্ষায় হয়নি কাঙ্ক্ষিত বৃষ্টি। ভাদ্রেও বইছে দাবদাহ। পানির অভাবে শুকিয়ে গেছে জমি। ঘন ঘন লোডশেডিং ও জ্বালানি তেলের দাম বাড়ায় জমিতে সেচ দিতে পারছেন না কৃষকেরা। আমনের বীজতলা তৈরি থাকলেও জমিতে রোপণ করতে না পেরে দুশ্চিন্তায় শেরপুর ও টাঙ্গাইলের মধুপুরের কৃষকেরা। শেরপুরে এবার বৃষ্টিপাত তুলনামূলক কম হওয়ায় ব্যাহত হচ্ছে আমন চাষাবাদ। অনাবৃষ্টির কারণে ডিজেল ও বিদ্যুচ্চালিত মেশিনে সেচ দিয়ে আমন ধান আবাদ করায় কৃষকের খরচ বেড়েছে। ফলন ও ধানের মূল্য নিয়ে শঙ্কার মধ্যেই জেলায় ইতিমধ্যে ৯৫ শতাংশ জমিতে ধান রোপণ শেষ হয়েছে।

শেরপুর জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, চলতি মৌসুমে জেলায় ৯১ হাজার ৮২ হেক্টর জমিতে রোপা আমন ধান আবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। সোমবার পর্যন্ত জেলায় ৮৬ হাজার ৫০০ হেক্টর জমিতে কৃষকেরা ধানের চারা রোপণ করেছেন। এবার বৃষ্টিপাত তুলনামূলক কম হয়েছে। ফলে কৃষকেরা ডিজেলচালিত শ্যালো মেশিন আর বৈদ্যুতিক পানির মোটর দিয়ে সেচ দিয়ে জমি তৈরি করে চারা রোপণ করেছেন।

তবে কৃষি বিভাগ বলছে, প্রাকৃতিক প্রতিকূলতায় এবারের আমন আবাদে কিছুটা খরচ বাড়লেও কৃষকেরা বাড়তি ফলন ও দামের কারণে সেটি পুষিয়ে নেবেন। কৃষকেরা বলছেন, সার ও ডিজেলের দাম বেড়েছে। এবার ভরা বর্ষায়ও পর্যাপ্ত বৃষ্টি না হওয়ায় সেচের ওপর পুরোপুরি নির্ভর করতে হচ্ছে। এতে উৎপাদন খরচ বেড়েছে দেড় গুণ। বৃষ্টি না হলে এবং দাবদাহ অব্যাহত থাকলে আমন আবাদে ক্ষতি হওয়ার আশঙ্কাও রয়েছে।

সদর উপজেলার লছমনপুর এলাকায় গিয়ে দেখা গেছে, অতিরিক্ত তাপমাত্রায় ও পানির অভাবে সদ্য রোপণ করা আমন ধানের খেত ফেটে চৌচির হয়ে গেছে। আবার দু-একটি খেতে গভীর নলকূপ দিয়ে সেচ দেওয়া হচ্ছে। নামাশেরী গ্রামের কৃষক মো. হানিফ মিয়া ও মো. বাবু মিয়া জানান, এবার তেলের দাম বেড়েছে, সারের দামও বেড়েছে। এর ওপর বৃষ্টি নেই। খেত ফেটে চৌচির। মেশিন দিয়ে সেচ দিয়েও কুলিয়ে উঠতে পারছেন না তাঁরা। তাঁদের প্রশ্ন, এত খরচ কইরা আবাদের পর ভালো দাম না পেলে কোথায় যাবেন? একই কথা জানান কৃষক মো. জহুরুল ইসলাম, মো. আব্দুল কাদিরসহ অনেকেই।

শেরপুর জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক ড. সুকল্প দাস বলেন, পর্যাপ্ত বৃষ্টি না হওয়ায় আমন রোপণে খানিকটা ব্যাহত হয়েছে। কৃষকেরা নিজস্ব উদ্যোগে বিদ্যুৎ ও তেলচালিত সেচযন্ত্রগুলো পুরোদমে চালু করেছে। এখন বিদ্যুতের সংকটটাও আগের চেয়ে কমেছে। এতে উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রায় তেমন প্রভাব পড়বে না। আমনের 
জন্য যে পানি প্রয়োজন, তা সেচের মাধ্যমে দেওয়া হচ্ছে। সুতরাং উৎপাদন খরচ বাড়লেও কৃষকেরা তাঁদের ন্যায্যমূল্য পাবেন।

চলতি বর্ষায় বৃষ্টি না হওয়ায় সেচের মাধ্যমেই ধান চাষ করতে হচ্ছে টাঙ্গাইলের মধুপুরের কৃষকদের। এরই মধ্যে সার, ডিজেলের মূল্য বৃদ্ধি পাওয়ায় তাঁরা বিপাকে পড়েছেন। এদিকে মধুপুরের বিভিন্ন এলাকার গভীর ও অগভীর নলকূপের বিল বকেয়ার অভিযোগে পল্লী বিদ্যুৎ কর্তৃপক্ষ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করায় হতাশার মধ্যে পড়েছেন কৃষকেরা। 
পৌর শহরের চাড়ালজানি গ্রামে বিএডিসির গভীর নলকূপের বিদ্যুৎ-সংযোগ বিচ্ছিন্ন করায় ইতিমধ্যেই ৩০-৪০ বিঘা ধানের জমি ফেটে চৌচির হয়ে গেছে। এই জটিলতা সমাধানের জন্য উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বরাবর স্মারকলিপি দিয়েছেন এলাকাবাসী। দ্রুত এর সমাধান না হলে অথবা বৃষ্টি না হলে প্রায় ১৫০ বিঘা জমির ফসল নষ্ট হওয়ার আশঙ্কা করছেন আবুল কালাম, মজিবর রহমান, ইউছুব আলী, আব্দুস সাত্তারসহ ত্রিশের অধিক কৃষক।

এদিকে টাঙ্গাইল কৃষি কার্যালয় সূত্র জানায়, চলতি মৌসুমে ১২ হাজার ৫৫০ হেক্টর জমিতে আমন ধান রোপণের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে। মাঠপর্যায়ের তথ্য বলছে, এখন পর্যন্ত ১০ হাজার ৬৮০ হেক্টর জমিতে ধান রোপণ সম্ভব হয়েছে, যা শতকরা ৮০ ভাগ।উপজেলার ব্রাহ্মণবাড়ি গ্রামের কৃষক আব্দুস সাত্তার বলেন, জমির ফসল পানির অভাবে বিবর্ণ হয়ে গেছে।

কৃষক আব্দুল বাছেদ জানান, বেশি দামে সার ও ডিজেল কিনে সেচ দেওয়ার পরও খেত ফেটে যাচ্ছে। মধুপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আল মামুন রাসেল বলেন, ‘চলতি আমন মৌসুমে বৃষ্টি হয়নি। ফলে আমন আবাদ পিছিয়ে গেছে। আমন আবাদে কৃষকদের পানি সেচে ব্যয় হতো না। এ বছর চাষাবাদে খরচ বেড়েছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

প্রশিক্ষণ ছাড়াই মাঠে ৪২৬ সহায়ক পুলিশ কর্মকর্তা

গ্রাহকের ২,৬৩৫ কোটি টাকা দিচ্ছে না ৪৬ বিমা কোম্পানি

‘এই টাকা দিয়ে কী হয়, আমি এত চাপ নিচ্ছি, লাখ পাঁচেক দিতে বলো’, ওসির অডিও ফাঁস

১০০ বছর পর জানা গেল ‘অপ্রয়োজনীয়’ প্রত্যঙ্গটি নারীর প্রজননের জন্য গুরুত্বপূর্ণ

বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়: তিন দফা দাবিতে সোমবার মাঠে নামছেন শিক্ষার্থীরা

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত