Ajker Patrika

অ্যাপ দিয়ে মুশকিল আসান

সাইফুল মাসুম, ঢাকা
আপডেট : ১৬ জানুয়ারি ২০২২, ১৩: ৫৩
অ্যাপ দিয়ে মুশকিল আসান

মিরপুরের পূরবী এলাকার বাসিন্দা আফজাল হোসেন। মশার যন্ত্রণায় অতিষ্ঠ হয়ে স্থানীয় ওয়ার্ড কাউন্সিলরের কাছে বারবার অভিযোগ দিয়েও সমাধান পাননি। কিন্তু পশ্চিম রামপুরার বাসিন্দা হাবিবুর রহমান তিতাস রোডে ম্যানহোলের ঢাকনা না থাকার বিষয়ে অভিযোগ দেওয়ার কয়েক দিনের মধ্যেই ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) কর্মীরা এসে ম্যানহোলগুলোতে ঢাকনা লাগিয়ে দিয়েছেন। হাবিব অবশ্য অভিযোগ নিয়ে কাউন্সিলরের কাছে ধরনা দেননি, তিনি নিজের সমস্যা ডিএনসিসিকে জানিয়েছেন ‘সবার ঢাকা’ অ্যাপের মাধ্যমে। এই অ্যাপে সমস্যা ও অভিযোগ জানিয়ে দ্রুত সমাধান পাচ্ছেন হাবিবের মতো অনেকে।

গত বছরের ১০ জানুয়ারি ঢাকা উত্তরের বাসিন্দাদের জন্য অ্যাপটি আনুষ্ঠানিকভাবে উন্মুক্ত করা হয়। গত এক বছরে গুগল প্লেস্টোর থেকে অ্যাপটি ডাউনলোড হয়েছে ২৫ হাজার ৯২৭ বার। অভিযোগ জমা পড়েছে ১২ হাজার ১৫৩টি। এগুলোর মধ্যে ১০ হাজার ৯৬৭টি নিষ্পত্তি হয়েছে। নিষ্পত্তির অপেক্ষায় রয়েছে ১ হাজার ১৮৬টি। পরিসংখ্যান অনুযায়ী অভিযোগ নিষ্পত্তির হার ৯১ শতাংশ।

সংশ্লিষ্টরা জানান, দ্রুততম সময়ে ভোগান্তি ছাড়া সেবা পৌঁছে দিতে সবার ঢাকা অ্যাপ তৈরির উদ্যোগ নেয় ডিএনসিসি। অ্যাপের মাধ্যমে নাগরিকেরা রাস্তা, মশা, সড়কবাতি, আবর্জনা, জলাবদ্ধতা, পাবলিক টয়লেট, নর্দমা ও অবৈধ স্থাপনার কথা সিটি করপোরেশনকে জানাতে পারেন। অভিযোগের সঙ্গে ঘটনাস্থল থেকে মোবাইল ফোনে তোলা ছবিও জমা দেওয়ার সুযোগ রয়েছে।

ব্যবহারকারীর লোকেশন অনুযায়ী অ্যাপের মাধ্যমে স্বয়ংক্রিয়ভাবে সংশ্লিষ্ট অঞ্চলে দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা এবং স্থানীয় কাউন্সিলরের কাছে অভিযোগটি পৌঁছে যায়। পরবর্তী ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে সুরাহা না হলে অভিযোগটি অ্যাপের মাধ্যমে অবহিত করা হয় ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের। অ্যাপের অ্যাডমিন হিসেবে ডিএনসিসির মেয়র, প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) এবং অন্যান্য বিভাগীয় প্রধানেরা সব অভিযোগ দেখতে পান।

অভিযোগ সমাধানের পর অভিযোগকারীর অভিমতও সংগ্রহ করা হয় ডিএনসিসির পক্ষ থেকে। কোনো অভিযোগের নিষ্পত্তি করা না গেলে এর কারণও অভিযোগকারীকে অবগত করা হয়।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, সবার ঢাকা অ্যাপে আট ক্যাটাগরিতে অভিযোগ জানানোর সুযোগ রয়েছে। এর মধ্যে গত এক বছরে সবচেয়ে বেশি অভিযোগ পড়েছে মশা নিয়ে, ৩ হাজার ৩০৪টি। এগুলোর মধ্যে ৯৯ শতাংশ অর্থাৎ ৩ হাজার ২৮৪টি অভিযোগ নিষ্পত্তি হয়েছে বলে দাবি ডিএনসিসির। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ৩ হাজার ৯৮টি অভিযোগ সড়কবাতি নিয়ে, নিষ্পত্তি হয়েছে ২ হাজার ২৩২টির। রাস্তা নিয়ে ২ হাজার ৭৮৯টির মধ্যে ২ হাজার ৭৫১টির সমাধান হয়েছে। বর্জ্য সমস্যার ১ হাজার ২৭৬টি অভিযোগের মধ্যে ১ হাজার ২৬৭টিই নিষ্পত্তি হয়েছে। অবৈধ স্থাপনা নিয়ে ৮৫১টির মধ্যে ৬৩২টি নিষ্পত্তি হয়েছে। নর্দমার সমস্যা নিয়ে অভিযোগ এসেছে ৪৯২টি, সমাধান হয়েছে ৪৮২টি। জলাবদ্ধতা নিয়ে ৩০৩টি অভিযোগের মধ্যে শতভাগই সমাধান হয়েছে বলে দাবি সংশ্লিষ্টদের। সবচেয়ে কম ৪০টি অভিযোগ পাওয়া গেছে পাবলিক টয়লেট নিয়ে।

প্লেস্টোরে অ্যাপ নিয়ে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা গেছে। সমস্যার সমাধান পেয়েছেন যাঁরা, তাঁরা সন্তুষ্টি প্রকাশ করলেও যাঁদের সুরাহা হয়নি, তাঁরা অসন্তোষ জানিয়েছেন। এ ছাড়া অ্যাপে আরও নানা অপশন এবং সুবিধা যুক্ত করার দাবিও জানিয়েছেন অনেকে।

এই অ্যাপ তৈরির উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়ে বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব প্ল্যানার্সের (বিআইপি) সাধারণ সম্পাদক নগর-পরিকল্পনাবিদ ড. আদিল মোহাম্মদ খান বলেন, ‘ডিএনসিসির ৮০ লাখ বাসিন্দার মধ্যে মাত্র ২৫ হাজার মানুষ অ্যাপটি ডাউনলোড করেছেন। অভিযোগ জানিয়েছেন, তাঁদের মধ্যে অর্ধেক মানুষ। কিন্তু বাস্তবে সংকট আরও বেশি। তা ছাড়া নিম্ন আয়ের যেসব মানুষ স্মার্টফোন বা ইন্টারনেট ব্যবহার করেন না, তাঁরা কিন্তু অ্যাপটির সুফল থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। তাই অ্যাপের পাশাপাশি অভিযোগ জানানোর বিকল্প উপায়ও থাকতে হবে।’

এ প্রসঙ্গে ডিএনসিসির সিইও সেলিম রেজা বলেন, ‘সব সমস্যা তো অ্যাপের মাধ্যমে জানা যাবে না। তবু চেষ্টা করছি আরও অনেক মানুষকে অ্যাপে যুক্ত করতে। এরই মধ্যে অ্যাপটি ডিজিটাল বাংলাদেশ অ্যাওয়ার্ড পেয়েছে।’ স্মার্টফোনের অভাবে যাঁরা অ্যাপ ব্যবহার করতে পারেন না, তাঁদের জন্য বিকল্প ব্যবস্থা চালুর কথা ভাবা হচ্ছে বলেও জানান এই কর্মকর্তা।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

টেলিগ্রামে সংগঠিত হচ্ছে আ.লীগ, হাসিনার সঙ্গে কথা বলতে টাকা নিচ্ছেন ওবায়দুল কাদের

আগামী ১১ দিন নৈরাজ্যের আশঙ্কা, ঠেকাতে এসপিদের এসবির চিঠি

প্রাথমিকে পাঠদান: বাইরের ২০ কাজের চাপে শিক্ষক

প্রেস কাউন্সিলের সদস্য হলেন মাহফুজ আনাম, নূরুল কবীরসহ ১২ জন

‘মামলা করি কী হইবে, পুলিশ থাকিয়াও হামার জীবনে নিরাপত্তা নাই’

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত