Ajker Patrika

ভেজাল দুধ যাচ্ছে ঢাকার বেকারিতে

অরূপ রায়, সাভার
আপডেট : ০৭ আগস্ট ২০২২, ১২: ১৩
ভেজাল দুধ যাচ্ছে  ঢাকার বেকারিতে

মানিকগঞ্জের সাটুরিয়া ও ঢাকার ধামরাইয়ের বিভিন্ন বাজার থেকে সংগ্রহ করে রাজধানীর বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে সরবরাহ করা দুধের অধিকাংশই ভেজাল। ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের সম্প্রতি এক অভিযানের পর এসব তথ্য বেরিয়ে এসেছে।

মানিকগঞ্জ জেলা ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা গত মঙ্গলবার সাটুরিয়া উপজেলার হরগজ বাজারের অভিযান চালিয়ে ভেজাল দুধসহ আতাউর রহমান নামের এক ব্যবসায়ীকে আটক করেন। আতাউর রহমান ও তাঁর ভাই জিয়াউর রহমান দীর্ঘদিন ধরে বিভিন্ন কেমিক্যাল বা পাউডার মিশ্রিত দুধ রাজধানীর বিভিন্ন বেকারি ও মিষ্টির দোকানে সরবরাহ করে আসছিলেন।

ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরসহ সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সাটুরিয়ার হরগজ, ফুকুরহাটি, দরগ্রাম, সাটুরিয়া বাজারসহ পাশের ধামরাই উপজেলার কাউয়ালিপাড়া বাজারের অর্ধশতাধিক ব্যবসায়ী ভেজাল দুধের কারবার করে থাকেন। এসব বাজার থেকে প্রতিদিন প্রায় ১০০ মণ দুধ রাজধানীর বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে যায়, যার প্রায় অর্ধেকই ভেজাল।

জানা যায়, ১০ কেজি পানির সঙ্গে বিশেষ ধরনের ১ কেজি কেমিক্যাল বা পাউডার মেশালেই তৈরি হয়ে যায় ১০ কেজি নকল দুধ। প্রতিদিন ভোরে সেই নকল দুধ ড্রামে ভরে তা বাজারে নিয়ে যাওয়া হয়। এরপর বাজারে আসা কৃষকদের কাছ থেকে আসল দুধ কিনে ওই সব ড্রামে ভরা হয়। এভাবে ১০ কেজি নকল দুধের সঙ্গে ৩০ কেজি আসল দুধ মেশালেই হয়ে যায় ৪০ কেজি ভেজাল দুধ। এরপর তা রাজধানীর বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে সরবরাহ করা হয়।

ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, স্থানীয় বাজারে কেজি প্রতি (লিটারে বিক্রি হয় না) দুধের দাম ৪০ থেকে ৮০ টাকার মধ্যে ওঠানামা করে। তবে রাজধানীর যেসব বেকারি বা মিষ্টির দোকানে তাঁরা দুধ সরবরাহ করে থাকেন, সেসব প্রতিষ্ঠান থেকে প্রতি কেজি দুধের দাম দেওয়া হয় ৫৫ থেকে ৬০ টাকা। এতে তাঁদের কোনো লাভ থাকে না। এ কারণে স্থানীয় বাজারে দুধের দাম ও ঢাকার চাহিদা বেড়ে গেলে ক্ষতি পুষিয়ে নেওয়ার জন্য তাঁরা আসল দুধের সঙ্গে নকল দুধ মিশিয়ে বিক্রি করে থাকেন।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক ব্যবসায়ী জানান, তাঁকে রাজধানীর মোহাম্মদপুরের একটি বেকারিতে প্রতিদিন ৮০০ থেকে ১ হাজার কেজি দুধ সরবরাহ করতে হয়। স্থানীয় বাজার থেকে তিনি প্রতিদিন ওই পরিমাণ দুধ সংগ্রহ করে থাকেন। ঢাকায় পৌঁছানোর পর তাঁকে প্রতি কেজি ৫৫ টাকা দাম দেওয়া হলে শ্রমিকের পাওনা এবং গাড়িভাড়া মিটিয়ে কোনো লাভ থাকে না। এ কারণে ব্যবসায়ীরা আসল দুধের সঙ্গে নকল দুধ মেশাতে বাধ্য হন।

ঢাকার প্রতিষ্ঠানের মালিকেরা জেনেশুনে ভেজাল দুধ কেনেন কি না জানতে চাইলে ওই ব্যবসায়ী বলেন, ‘প্রতিষ্ঠানের মালিকেরা কিছুই জানেন না। কর্মচারীদের ম্যানেজ করে আমরা এসব করে থাকি।’

মানিকগঞ্জ জেলা ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক আসাদুজ্জামান বলেন, ‘সাটুরিয়ার বিভিন্ন হাটবাজার থেকে ভেজাল দুধ রাজধানীতে যায়, এ রকম তথ্য আমাদের কাছে রয়েছে। সুনির্দিষ্ট তথ্যের ভিত্তিতে তাঁদের একজনকে আটক করে এক মাসের সাজা দেওয়া হয়েছে। বাকিদেরও আইনের আওতায় আনা হবে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত