Ajker Patrika

মালিক-শ্রমিকদের মনে কারখানা বন্ধের ভয়

সাবিত আল হাসান, নারায়ণগঞ্জ
মালিক-শ্রমিকদের মনে কারখানা বন্ধের ভয়

‘সারা দিন কারখানায় গ্যাসের চাপ থাকে না। কারেন্ট চলে গেলে মেশিনের ভেতর কাপড়গুলো নষ্ট হয়ে যায়। বারবার জেনারেটর চালু করে কাজ করতে হয়। আমরাই বুঝি কারখানার অবস্থা ভালো না। যদিও মালিক এখনো আমাদের কিছু বলে নাই, টাইমমতো বেতন দিতাছে। কিন্তু যখন নিজেই বুঝতাছি, আমার কাজ কমতাছে, তখন চাকরি হারানোর টেনশন তো থাকেই। মালিকের আয় না হইলে আমাগো দিব কইথিকা?’

কথাগুলো বলছিলেন নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লার ইউরোটেক্স নিটিং নিটওয়্যারের ডাইং সেকশনের শ্রমিক সোহাগ। কলকারখানায় গ্যাস ও বিদ্যুৎ-সংকটের কারণে মালিকদের যে দৌড়ঝাঁপ শুরু হয়েছে, সেটা ভালোভাবেই বুঝতে পারছেন শ্রমিকেরা। বড় প্রতিষ্ঠানগুলো শ্রমিক ছাঁটাই শুরু না করলেও ছোট প্রতিষ্ঠানগুলোয় চলছে ছাঁটাই। পোশাক কারখানার এমন চিত্র মালিক-শ্রমিক উভয়ের জন্যই আশঙ্কাজনক বলে মনে করছেন গার্মেন্টস মালিকদের সংগঠন বাংলাদেশ নিটওয়্যার ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিকেএমইএ) নেতারা।

জানা গেছে, নারায়ণগঞ্জে পোশাক উৎপাদন ও রপ্তানির সঙ্গে জড়িত কারখানা রয়েছে প্রায় সাড়ে তিন হাজার। এর মধ্যে কলকারখানা অধিদপ্তরে নিবন্ধিত রয়েছে ২ হাজার ২০০টি।  প্রায় ৩০ লাখ মানুষ তাঁদের আয় রোজগারে কারখানার ওপর নির্ভরশীল। বিকেএমইএর তথ্য অনুযায়ী, ছোট বড় সব প্রতিষ্ঠানই তিন মাস ধরে টানা বাড়তি খরচের মুখে পড়েছে। এর পেছনে রয়েছে লোডশেডিং, গ্যাসের সরবরাহ না থাকা এবং জ্বালানির বাড়তি খরচ।

নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লায় ইউরোটেক্স নিটওয়্যার এবং আইএফএস টেক্সওয়্যার ঘুরে দেখা যায়, সুইং, নিটিং, প্যাকেজিং, ডাইংসহ বেশ কয়েকটি সেকশনের একাধিক লাইন বন্ধ হয়ে গেছে। বন্ধ মেশিনগুলো কাপড় দিয়ে ঢেকে রাখা হয়েছে।

ইউরোটেক্স কারখানার শ্রমিকেরা বলছেন, মাত্র দুই মাসের ব্যবধানে সুইং সেকশনের লাইন ১২৫ থেকে নেমে ৮৫-তে এসে ঠেকেছে। যেসব শ্রমিক কাজ ছেড়ে চলে যাচ্ছেন, তাঁদের স্থান পূরণেও নতুন লোক নিচ্ছে না প্রতিষ্ঠান।

একই চিত্র ছিল আইএফএস টেক্সওয়্যারে। প্রায় ২২ টন ধারণক্ষমতাসম্পন্ন ডাইংয়ে বর্তমানে কাজ চলছে সাত-আট টন কাপড়ের। প্রতিদিন অন্তত দুই লাখ টাকার  ডিজেলই কিনতে হচ্ছে প্রতিষ্ঠান চালু রাখার জন্য। এভাবে কত দিন কারখানা চালু রাখা যাবে, তা নিয়ে দুশ্চিন্তায় রয়েছেন মালিকপক্ষ ও শ্রমিকেরা। 
ইউরোটেক্স টেক্সওয়্যারের সিও শামীম ইসলাম বলেন, ‘প্রতিদিন ১০ থেকে ১১ লাখ টাকার ডিজেল কিনতে হচ্ছে, পাশাপাশি বিপুল পরিমাণ শ্রমিককে বেকার বসিয়ে রাখতে হচ্ছে। উৎপাদন নেই, কিন্তু পেমেন্ট করতে হচ্ছে।’

আইএফএস টেক্সওয়্যারের মোতাহার হোসেন ভূঁইয়া বলেন, দিনে ছয়-সাত ঘণ্টা বিদ্যুৎ না থাকায় অনেক সেকশন বন্ধ রাখতে হচ্ছে। প্রায় ৭০ ভাগ অর্ডার কমে গেছে।

বিকেএমইএর নির্বাহী সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম বলেন, ‘বিদ্যুৎ ও গ্যাস-সংকটের কারণে ডিজেলের খরচ বেড়েছে। আগে যে গ্যাসে খরচ হতো ১৬ টাকা ইউনিট, সিএনজি থেকে কিনতে এখন ইউনিট প্রতি খরচ হচ্ছে ৪২ টাকা। টোটাল গার্মেন্টস সেক্টর এখন বিপদের মুখে। এমন অবস্থায় আমরা দাবি তুলেছি, রিজার্ভ থেকে টাকা নিয়ে আমাদের গ্যাস সরবরাহ নিশ্চিত করা হোক। তা না হলে অনেক কারখানা বন্ধ হয়ে যাবে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত