ফারুক মেহেদী, ঢাকা
বিশ্ব অর্থনীতিতে অস্থিরতা ছড়িয়ে রাজত্ব করছে ডলার। দিন দিনই বাড়ছে এর দাপট। ইউরোকে হারিয়ে পরাক্রমশালী এ ডলার দেশে দেশে উসকে দিচ্ছে রাজনৈতিক অস্থিরতাও। অন্য সব দেশের মতো বাংলাদেশের অর্থনীতির ভিতও নাড়িয়ে দিচ্ছে ডলার। মার্কিন এ মুদ্রায় ভর করে গড়ে ওঠা বাংলাদেশের অব্যাহত রেকর্ড রিজার্ভের তকমা ছুটে গেছে বেশ আগেই। বাংলাদেশ ব্যাংকের একের পর এক কঠোর পদক্ষেপ সত্ত্বেও উচ্চ চাহিদার কারণে বাড়ছে ডলারের দাম।
বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ বর্তমানে ৩৯ বিলিয়ন ডলারের নিচে নেমে এসেছে। ডলারের লাগামহীন দামের কারণে বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রায় প্রতিদিনই নতুন নতুন নির্দেশনা জারি করে ডলারের সুরক্ষাবলয় তৈরির চেষ্টা করছে। নজরদারি বাড়ানোয় বড় অঙ্কের ঋণপত্র খোলায় আগ্রহ দেখাচ্ছে না ব্যাংকগুলো। এমনকি অর্থনীতির প্রাণ জ্বালানি তেল আমদানিতেও প্রতিবন্ধকতা তৈরি হচ্ছে। বিপিসির অনুরোধেও ঋণপত্র খুলতে গড়িমসি করছে ব্যাংকগুলো। এতে সরকারি-বেসরকারি খাতের বাণিজ্য ও বিনিয়োগের গতি শ্লথ হওয়ার ঝুঁকি তৈরি হচ্ছে।
সব মিলিয়ে অর্থনীতিবিদ, ব্যাংকার ও বিশ্লেষকেরা মনে করেন, এভাবে ডলার তেজি হতে থাকলে তা পুরো অর্থনীতিকে বেসামাল করে দিতে পারে। কারণ এই ডলারের মজুত যত কমবে, বিপরীতে আমদানি ব্যয় বাড়তে থাকলে, বিদ্যমান পরিস্থিতিতে বিদেশি ঋণ পরিশোধ করতে হলে সার্বিক অর্থনীতির ওপর যে চাপ তৈরি হবে, তা সহনীয় রাখতে সরকারকে বেগ পেতে হতে পারে। রিজার্ভ ক্ষতিগ্রস্ত হলে পুরো উৎপাদন ব্যবস্থা ভেঙে যেতে পারে।
কিছুদিন ধরে দেশের ব্যবসায়ী, অর্থনীতিবিদ ও বিশ্লেষকদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, করোনা সহনীয় হওয়ার পর বিশ্বব্যাপী সরবরাহ ব্যবস্থায় যেভাবে টান পড়েছে, তার ফলে ডলারের দাম বাড়তে থাকার পরও বাংলাদেশ ব্যাংক ডলারের রেট নির্ধারণে গড়িমসি করে। পরে যখন এর দাম নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায়, তখন তা চাহিদা-সরবরাহ বিবেচনায় ব্যাংকের মাধ্যমে নির্ধারণের কথা বলা হয়। এতে যে রেট পাওয়া যায়, তাও খোলাবাজারের চেয়ে কম। ফলে প্রবাসীরা বৈধ পথে রেমিট্যান্স পাঠানো কমিয়ে দেন। যার প্রভাব দেখা যায় বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভে। সেখানে রেমিট্যান্সের অংশ কমেছে প্রায় ১৫ শতাংশ।
জানা যায়, গতকালও কার্ব মার্কেট বা খোলা বাজারে প্রতি ডলারের দর ১০০ টাকা ছাড়িয়ে গেছে। এর আগে গত ১৭ মে খোলাবাজারে ডলারের দর ১০৪ টাকা ছিল। ব্যবসায়ী ও বাজারসংশ্লিষ্টরা জানান, ব্যাংকগুলো যে দামে ডলার কিনছে তার চেয়ে অন্তত ৭-৮ টাকা বেশি দরে তা বিক্রি করছে রপ্তানিকারকদের কাছে। তাঁদের অভিযোগ, তাঁরা যখন ডলার বিক্রি করছেন তখন কম দাম পাচ্ছেন। আবার যখন কাঁচামাল আমদানির জন্য ডলার চাচ্ছেন, তখন দাম বেড়ে যাচ্ছে।
রাষ্ট্রায়ত্ত সোনালী, জনতা ও অগ্রণী ব্যাংক গতকাল রোববার ৯৬ টাকা ৫০ পয়সায় নগদ ডলার বিক্রি করেছে। বেসরকারি অনেক ব্যাংকও বেশি দরে ডলার বিক্রি করছে বলে অভিযোগ রয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য বলছে, গত দেড় মাসে ডলারের বিপরীতে টাকার মান কমেছে ৫ শতাংশের বেশি। আর এক বছরের ব্যবধানে কমেছে তা ১০ দশমিক ৮০ শতাংশ।
বেশি লাভের আশায়, ব্যাংকগুলো এখন সরকারি প্রতিষ্ঠান বিপিসির জ্বালানি তেল আমদানির ঋণপত্রও ঠিকমতো খুলছে না বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। কারণ তারা সরকারি রেটে ঋণপত্র খুলে যে লাভ করবে, তার চেয়ে ডলার অন্যভাবে বিক্রি করলে বেশি লাভ। যদিও জ্বালানি তেল ঠিকমতো আমদানি করতে না পারলে তা পুরো অর্থনীতির শৃঙ্খলার ওপর প্রভাব ফেলার আশঙ্কা রয়েছে।
এ প্রসঙ্গে বিপিসির চেয়ারম্যান এ বি এম আজাদ বলেন, ডলার সংকটের কারণে বিপিসি জ্বালানি তেলের ক্রেতাদের কাছে ঠিক সময়ে পাওনা পরিশোধ করতে পারছে না। তেলের দাম পরিশোধ এবং তেল আমদানির জন্য ব্যাংকে এলসি খুলতে গেলে ডলার সংকটের কারণ দেখিয়ে গড়িমসি করছে। ঠিকমতো টাকা পরিশোধে ব্যর্থ হলে জ্বালানি তেল সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানগুলো যদি তেল সরবরাহ বন্ধ দেয় তাহলে জ্বালানি নিরাপত্তা হুমকির মুখে পড়বে বলেও আশঙ্কা প্রকাশ করেন তিনি।
বিশ্লেষকেরা মনে করেন, বেলা শেষে ডলারই অর্থনীতির চালিকা শক্তি হয়ে উঠবে। তখন এর সংকট তীব্র হলে, তা সামলানো কঠিন হবে। বিশেষ করে, আমদানিনির্ভর বাংলাদেশকে জ্বালানি আমদানি না করে কোনো উপায় নেই। তাই ডলারের মজুত রাখতে হবে। এ ছাড়া অনেক নিত্যপণ্য আনতে হয়। শিল্পের কাঁচামাল ও যন্ত্রপাতি আমদানি করতে হয়। বিশেষ করে পোশাক শিল্পের কাঁচামাল আমদানি ব্যাহত হলে, এ শিল্পের রপ্তানিতে নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে। ফলে তার পরিণামও খারাপ হতে বাধ্য। শুধু রপ্তানি খাত নয়; দেশীয় বাজারের জন্য যে উৎপাদন ব্যবস্থা গড়ে উঠেছে, সেটিও বাধাগ্রস্ত হবে যদি ডলার সংকটে ঠিকমতো জিনিসপত্র আমদানি না হয়।
এ বিষয়ে বিশ্বব্যাংক ঢাকা কার্যালয়ের সাবেক মুখ্য অর্থনীতিবিদ ড. জাহিদ হোসেন বলেন, ‘আমি মনে করি, ডলারের ঘাটতি মেটানো সবচেয়ে বড় অগ্রাধিকার হওয়া উচিত। ডলার না থাকলে তো পুরো উৎপাদন ব্যবস্থা ভেঙে পড়বে। আমাদের এমন একটা পরিস্থিতিতে যাওয়া ঠিক হবে না যখন এ চাপটাও থাকবে, আবার হাতে রিজার্ভও থাকবে না।’ তিনি বলেন, ‘রিজার্ভ নিয়ে এখন প্রশ্ন তুলেছে আইএমএফ। তারা বলছে, সরকার যেভাবে হিসাব করে রিজার্ভ ৩৯ বিলিয়ন ডলার আছে বলে জানাচ্ছে, আসলে এর পুরোটা রিজার্ভ নয়। তারা বলছে, এটা ৩১-৩২ বিলিয়ন ডলার হতে পারে। যদি তাই হয়, তবে এটাই ভয়ের কারণ। সরকারের উচিত সত্যিকার অর্থে রিজার্ভ কত তা জানানো।’
ডলার সংকটের কারণে বেসরকারি খাতের ঋণপত্র খোলাও এখন বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। অনেক ব্যাংক বড় অঙ্কের ঋণপত্র খুলতে রাজি হচ্ছে না বলে জানা গেছে। এ ক্ষেত্রে বাংলাদেশ ব্যাংকেরও কড়াকড়ি রয়েছে। এ ব্যাপারে রাষ্ট্রায়ত্ত সোনালী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. আতাউর রহমান প্রধান বলেন, ‘আমাদের নিজেদের ডলার ব্যবস্থাপনা এখনো ভালো। পাশাপাশি বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে ডলার কেনার সুযোগ রয়েছে। তবুও আমাদের ডলারের টান আছে। যদিও এলসিতে কোনো সমস্যা হচ্ছে না।’
রূপালী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. ওবায়েদ উল্লাহ আল মাসুদ বলেন, ‘আমদানি ব্যয় বেড়েছে। আর সেই তুলনায় রেমিট্যান্স ও রপ্তানি আয় বাড়ছে না। এতে ডলারের ওপর চাপ সৃষ্টি হয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংক ডলারের ব্যয়ে যে নির্দেশনা দিয়েছে সেই অনুযায়ী নতুন করে এলসি বিল পে করা হচ্ছে।’
একটি বেসরকারি ব্যাংকের সিইও জানান, ‘ডলারের ব্যাপক টান রয়েছে। এটি রোধ করতে বাংলাদেশ ব্যাংক তৎপর। বড় এলসি পেমেন্ট করতে বাংলাদেশ ব্যাংকে অবহিত করতে নির্দেশনা দিয়েছে। কিন্তু বড় ও ছোট এলসির সার্ভিস চার্জ সমান হওয়ায় অধিকাংশ ব্যবসায়ী বড় এলসি খুলতে মরিয়া হয়ে পড়েছেন। কিন্তু বড় এলসির জন্য কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নির্দেশনা থাকায় তা সম্পন্ন করতে সময় লাগছে।’
এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র মো. সিরাজুল ইসলাম বলেন, ডলারের কারণে এলসি খোলা বন্ধ রয়েছে এমন তথ্য কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কাছে নেই। তবে ব্যাংকগুলো যে দামে ডলার কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে কিনছে সেই দামে বিক্রি করছে না—এমন তথ্য পাওয়া গেছে। কোনো কোনো ব্যাংক একটু বেশি দরে আমদানিকারকদের কাছে ডলার বিক্রি করছে।
ডলার সংকটের এই মুহূর্তে গতকাল বাংলাদেশ ব্যাংক নতুন করে আরেকটি নির্দেশনা দিয়েছে। তাতে বলা হয়েছে, অনাবাসী বাংলাদেশি ও বাংলাদেশের বংশোদ্ভূত ব্যক্তিরা এখন থেকে রেফারেন্স ছাড়াই অনাবাসিক বৈদেশিক মুদ্রা সঞ্চয় (এনএফসিডি) সুদের হিসাব খুলতে পারবেন। এই ধরনের হিসাবধারী ব্যক্তিরা যত দিন ইচ্ছা তত দিন তাদের হিসাব পরিচালনা করতে পারবেন এবং বাংলাদেশে ফেরত আসার পর যেকোনো সময় এ রকম হিসাব খোলার অনুমতি পাবেন। বাংলাদেশ ব্যাংক মনে করে এতে ডলারের প্রবাহ বাড়বে। এভাবে গত কয়েক মাস ধরে কেন্দ্রীয় ব্যাংক মরিয়া হয়ে ডলারের মজুত বাড়াতে চেষ্টা করছে। কিন্তু রিজার্ভ না বেড়ে বরং কমছে।
বিশ্ব অর্থনীতিতে অস্থিরতা ছড়িয়ে রাজত্ব করছে ডলার। দিন দিনই বাড়ছে এর দাপট। ইউরোকে হারিয়ে পরাক্রমশালী এ ডলার দেশে দেশে উসকে দিচ্ছে রাজনৈতিক অস্থিরতাও। অন্য সব দেশের মতো বাংলাদেশের অর্থনীতির ভিতও নাড়িয়ে দিচ্ছে ডলার। মার্কিন এ মুদ্রায় ভর করে গড়ে ওঠা বাংলাদেশের অব্যাহত রেকর্ড রিজার্ভের তকমা ছুটে গেছে বেশ আগেই। বাংলাদেশ ব্যাংকের একের পর এক কঠোর পদক্ষেপ সত্ত্বেও উচ্চ চাহিদার কারণে বাড়ছে ডলারের দাম।
বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ বর্তমানে ৩৯ বিলিয়ন ডলারের নিচে নেমে এসেছে। ডলারের লাগামহীন দামের কারণে বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রায় প্রতিদিনই নতুন নতুন নির্দেশনা জারি করে ডলারের সুরক্ষাবলয় তৈরির চেষ্টা করছে। নজরদারি বাড়ানোয় বড় অঙ্কের ঋণপত্র খোলায় আগ্রহ দেখাচ্ছে না ব্যাংকগুলো। এমনকি অর্থনীতির প্রাণ জ্বালানি তেল আমদানিতেও প্রতিবন্ধকতা তৈরি হচ্ছে। বিপিসির অনুরোধেও ঋণপত্র খুলতে গড়িমসি করছে ব্যাংকগুলো। এতে সরকারি-বেসরকারি খাতের বাণিজ্য ও বিনিয়োগের গতি শ্লথ হওয়ার ঝুঁকি তৈরি হচ্ছে।
সব মিলিয়ে অর্থনীতিবিদ, ব্যাংকার ও বিশ্লেষকেরা মনে করেন, এভাবে ডলার তেজি হতে থাকলে তা পুরো অর্থনীতিকে বেসামাল করে দিতে পারে। কারণ এই ডলারের মজুত যত কমবে, বিপরীতে আমদানি ব্যয় বাড়তে থাকলে, বিদ্যমান পরিস্থিতিতে বিদেশি ঋণ পরিশোধ করতে হলে সার্বিক অর্থনীতির ওপর যে চাপ তৈরি হবে, তা সহনীয় রাখতে সরকারকে বেগ পেতে হতে পারে। রিজার্ভ ক্ষতিগ্রস্ত হলে পুরো উৎপাদন ব্যবস্থা ভেঙে যেতে পারে।
কিছুদিন ধরে দেশের ব্যবসায়ী, অর্থনীতিবিদ ও বিশ্লেষকদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, করোনা সহনীয় হওয়ার পর বিশ্বব্যাপী সরবরাহ ব্যবস্থায় যেভাবে টান পড়েছে, তার ফলে ডলারের দাম বাড়তে থাকার পরও বাংলাদেশ ব্যাংক ডলারের রেট নির্ধারণে গড়িমসি করে। পরে যখন এর দাম নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায়, তখন তা চাহিদা-সরবরাহ বিবেচনায় ব্যাংকের মাধ্যমে নির্ধারণের কথা বলা হয়। এতে যে রেট পাওয়া যায়, তাও খোলাবাজারের চেয়ে কম। ফলে প্রবাসীরা বৈধ পথে রেমিট্যান্স পাঠানো কমিয়ে দেন। যার প্রভাব দেখা যায় বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভে। সেখানে রেমিট্যান্সের অংশ কমেছে প্রায় ১৫ শতাংশ।
জানা যায়, গতকালও কার্ব মার্কেট বা খোলা বাজারে প্রতি ডলারের দর ১০০ টাকা ছাড়িয়ে গেছে। এর আগে গত ১৭ মে খোলাবাজারে ডলারের দর ১০৪ টাকা ছিল। ব্যবসায়ী ও বাজারসংশ্লিষ্টরা জানান, ব্যাংকগুলো যে দামে ডলার কিনছে তার চেয়ে অন্তত ৭-৮ টাকা বেশি দরে তা বিক্রি করছে রপ্তানিকারকদের কাছে। তাঁদের অভিযোগ, তাঁরা যখন ডলার বিক্রি করছেন তখন কম দাম পাচ্ছেন। আবার যখন কাঁচামাল আমদানির জন্য ডলার চাচ্ছেন, তখন দাম বেড়ে যাচ্ছে।
রাষ্ট্রায়ত্ত সোনালী, জনতা ও অগ্রণী ব্যাংক গতকাল রোববার ৯৬ টাকা ৫০ পয়সায় নগদ ডলার বিক্রি করেছে। বেসরকারি অনেক ব্যাংকও বেশি দরে ডলার বিক্রি করছে বলে অভিযোগ রয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য বলছে, গত দেড় মাসে ডলারের বিপরীতে টাকার মান কমেছে ৫ শতাংশের বেশি। আর এক বছরের ব্যবধানে কমেছে তা ১০ দশমিক ৮০ শতাংশ।
বেশি লাভের আশায়, ব্যাংকগুলো এখন সরকারি প্রতিষ্ঠান বিপিসির জ্বালানি তেল আমদানির ঋণপত্রও ঠিকমতো খুলছে না বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। কারণ তারা সরকারি রেটে ঋণপত্র খুলে যে লাভ করবে, তার চেয়ে ডলার অন্যভাবে বিক্রি করলে বেশি লাভ। যদিও জ্বালানি তেল ঠিকমতো আমদানি করতে না পারলে তা পুরো অর্থনীতির শৃঙ্খলার ওপর প্রভাব ফেলার আশঙ্কা রয়েছে।
এ প্রসঙ্গে বিপিসির চেয়ারম্যান এ বি এম আজাদ বলেন, ডলার সংকটের কারণে বিপিসি জ্বালানি তেলের ক্রেতাদের কাছে ঠিক সময়ে পাওনা পরিশোধ করতে পারছে না। তেলের দাম পরিশোধ এবং তেল আমদানির জন্য ব্যাংকে এলসি খুলতে গেলে ডলার সংকটের কারণ দেখিয়ে গড়িমসি করছে। ঠিকমতো টাকা পরিশোধে ব্যর্থ হলে জ্বালানি তেল সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানগুলো যদি তেল সরবরাহ বন্ধ দেয় তাহলে জ্বালানি নিরাপত্তা হুমকির মুখে পড়বে বলেও আশঙ্কা প্রকাশ করেন তিনি।
বিশ্লেষকেরা মনে করেন, বেলা শেষে ডলারই অর্থনীতির চালিকা শক্তি হয়ে উঠবে। তখন এর সংকট তীব্র হলে, তা সামলানো কঠিন হবে। বিশেষ করে, আমদানিনির্ভর বাংলাদেশকে জ্বালানি আমদানি না করে কোনো উপায় নেই। তাই ডলারের মজুত রাখতে হবে। এ ছাড়া অনেক নিত্যপণ্য আনতে হয়। শিল্পের কাঁচামাল ও যন্ত্রপাতি আমদানি করতে হয়। বিশেষ করে পোশাক শিল্পের কাঁচামাল আমদানি ব্যাহত হলে, এ শিল্পের রপ্তানিতে নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে। ফলে তার পরিণামও খারাপ হতে বাধ্য। শুধু রপ্তানি খাত নয়; দেশীয় বাজারের জন্য যে উৎপাদন ব্যবস্থা গড়ে উঠেছে, সেটিও বাধাগ্রস্ত হবে যদি ডলার সংকটে ঠিকমতো জিনিসপত্র আমদানি না হয়।
এ বিষয়ে বিশ্বব্যাংক ঢাকা কার্যালয়ের সাবেক মুখ্য অর্থনীতিবিদ ড. জাহিদ হোসেন বলেন, ‘আমি মনে করি, ডলারের ঘাটতি মেটানো সবচেয়ে বড় অগ্রাধিকার হওয়া উচিত। ডলার না থাকলে তো পুরো উৎপাদন ব্যবস্থা ভেঙে পড়বে। আমাদের এমন একটা পরিস্থিতিতে যাওয়া ঠিক হবে না যখন এ চাপটাও থাকবে, আবার হাতে রিজার্ভও থাকবে না।’ তিনি বলেন, ‘রিজার্ভ নিয়ে এখন প্রশ্ন তুলেছে আইএমএফ। তারা বলছে, সরকার যেভাবে হিসাব করে রিজার্ভ ৩৯ বিলিয়ন ডলার আছে বলে জানাচ্ছে, আসলে এর পুরোটা রিজার্ভ নয়। তারা বলছে, এটা ৩১-৩২ বিলিয়ন ডলার হতে পারে। যদি তাই হয়, তবে এটাই ভয়ের কারণ। সরকারের উচিত সত্যিকার অর্থে রিজার্ভ কত তা জানানো।’
ডলার সংকটের কারণে বেসরকারি খাতের ঋণপত্র খোলাও এখন বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। অনেক ব্যাংক বড় অঙ্কের ঋণপত্র খুলতে রাজি হচ্ছে না বলে জানা গেছে। এ ক্ষেত্রে বাংলাদেশ ব্যাংকেরও কড়াকড়ি রয়েছে। এ ব্যাপারে রাষ্ট্রায়ত্ত সোনালী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. আতাউর রহমান প্রধান বলেন, ‘আমাদের নিজেদের ডলার ব্যবস্থাপনা এখনো ভালো। পাশাপাশি বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে ডলার কেনার সুযোগ রয়েছে। তবুও আমাদের ডলারের টান আছে। যদিও এলসিতে কোনো সমস্যা হচ্ছে না।’
রূপালী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. ওবায়েদ উল্লাহ আল মাসুদ বলেন, ‘আমদানি ব্যয় বেড়েছে। আর সেই তুলনায় রেমিট্যান্স ও রপ্তানি আয় বাড়ছে না। এতে ডলারের ওপর চাপ সৃষ্টি হয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংক ডলারের ব্যয়ে যে নির্দেশনা দিয়েছে সেই অনুযায়ী নতুন করে এলসি বিল পে করা হচ্ছে।’
একটি বেসরকারি ব্যাংকের সিইও জানান, ‘ডলারের ব্যাপক টান রয়েছে। এটি রোধ করতে বাংলাদেশ ব্যাংক তৎপর। বড় এলসি পেমেন্ট করতে বাংলাদেশ ব্যাংকে অবহিত করতে নির্দেশনা দিয়েছে। কিন্তু বড় ও ছোট এলসির সার্ভিস চার্জ সমান হওয়ায় অধিকাংশ ব্যবসায়ী বড় এলসি খুলতে মরিয়া হয়ে পড়েছেন। কিন্তু বড় এলসির জন্য কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নির্দেশনা থাকায় তা সম্পন্ন করতে সময় লাগছে।’
এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র মো. সিরাজুল ইসলাম বলেন, ডলারের কারণে এলসি খোলা বন্ধ রয়েছে এমন তথ্য কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কাছে নেই। তবে ব্যাংকগুলো যে দামে ডলার কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে কিনছে সেই দামে বিক্রি করছে না—এমন তথ্য পাওয়া গেছে। কোনো কোনো ব্যাংক একটু বেশি দরে আমদানিকারকদের কাছে ডলার বিক্রি করছে।
ডলার সংকটের এই মুহূর্তে গতকাল বাংলাদেশ ব্যাংক নতুন করে আরেকটি নির্দেশনা দিয়েছে। তাতে বলা হয়েছে, অনাবাসী বাংলাদেশি ও বাংলাদেশের বংশোদ্ভূত ব্যক্তিরা এখন থেকে রেফারেন্স ছাড়াই অনাবাসিক বৈদেশিক মুদ্রা সঞ্চয় (এনএফসিডি) সুদের হিসাব খুলতে পারবেন। এই ধরনের হিসাবধারী ব্যক্তিরা যত দিন ইচ্ছা তত দিন তাদের হিসাব পরিচালনা করতে পারবেন এবং বাংলাদেশে ফেরত আসার পর যেকোনো সময় এ রকম হিসাব খোলার অনুমতি পাবেন। বাংলাদেশ ব্যাংক মনে করে এতে ডলারের প্রবাহ বাড়বে। এভাবে গত কয়েক মাস ধরে কেন্দ্রীয় ব্যাংক মরিয়া হয়ে ডলারের মজুত বাড়াতে চেষ্টা করছে। কিন্তু রিজার্ভ না বেড়ে বরং কমছে।
ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের কুমিল্লা এলাকায় যাত্রীবাহী বাসে ডাকাতি বেড়েই চলছে। এ কারণে চালক ও যাত্রীদের কাছে আতঙ্কের নাম হয়ে উঠছে এই সড়ক। ডাকাতির শিকার বেশি হচ্ছেন প্রবাসফেরত লোকজন। ডাকাতেরা অস্ত্র ঠেকিয়ে লুট করে নিচ্ছে সর্বস্ব। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পরিচয়েও ঘটছে ডাকাতির ঘটনা।
৫ দিন আগেবিআরটিসির বাস দিয়ে চালু করা বিশেষায়িত বাস র্যাপিড ট্রানজিট (বিআরটি) লেনে অনুমতি না নিয়েই চলছে বেসরকারি কোম্পানির কিছু বাস। ঢুকে পড়ছে সিএনজিচালিত অটোরিকশা, ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা। উল্টো পথে চলছে মোটরসাইকেল। অন্যদিকে বিআরটিসির মাত্র ১০টি বাস চলাচল করায় সোয়া চার হাজার কোটি টাকার এই প্রকল্প থেকে...
১৬ জানুয়ারি ২০২৫গাজীপুর মহানগরের বোর্ডবাজার এলাকার ইসলামিক ইউনিভার্সিটি অব টেকনোলজির (আইইউটি) মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের শিক্ষার্থীরা পিকনিকে যাচ্ছিলেন শ্রীপুরের মাটির মায়া ইকো রিসোর্টে। ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক থেকে বাসগুলো গ্রামের সরু সড়কে ঢোকার পর বিদ্যুতের তারে জড়িয়ে যায় বিআরটিসির একটি দোতলা বাস...
২৪ নভেম্বর ২০২৪ঝড়-জলোচ্ছ্বাস থেকে রক্ষায় সন্দ্বীপের ব্লক বেড়িবাঁধসহ একাধিক প্রকল্প হাতে নিয়েছে সরকার। এ লক্ষ্যে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে ৫৬২ কোটি টাকা। এ জন্য টেন্ডারও হয়েছে। প্রায় এক বছর পেরিয়ে গেলেও ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানগুলো কাজ শুরু করছে না। পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) তাগাদায়ও কোনো কাজ হচ্ছে না বলে জানিয়েছেন...
২০ নভেম্বর ২০২৪