Ajker Patrika

হিন্দি সিনেমার মুক্তি নিয়ে জটিলতা

আপডেট : ০৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ১০: ২৪
হিন্দি সিনেমার মুক্তি নিয়ে জটিলতা

চলচ্চিত্রের ১৯ সংগঠনের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে গত বছরের ১১ এপ্রিল দেশের প্রেক্ষাগৃহে উপমহাদেশীয় সিনেমা প্রদর্শনের অনুমতি দেয় তথ্য মন্ত্রণালয়। তবে জুড়ে দেওয়া হয় পাঁচটি শর্ত। যার মধ্যে ছিল দুই ঈদ ও দুর্গাপূজায় মুক্তি দেওয়া যাবে না আমদানি করা হিন্দি ভাষার সিনেমা। দু্ই বছরে ২০টি সিনেমা আমদানির অনুমতি দেওয়া হলেও বছর পূরণ না হতেই দেশের হলে উপমহাদেশীয় সিনেমা মুক্তি নিয়ে তৈরি হয়েছে জটিলতা। 

গত বছরের ১২ মে শাহরুখ খানের ‘পাঠান’ দিয়ে দেশের হলে উপমহাদেশীয় সিনেমা প্রদর্শনীর আনুষ্ঠানিক যাত্রা শুরু হয়। এখন পর্যন্ত আমদানি করা ছয়টি সিনেমা মুক্তি পেয়েছে। তবে গত মাসের শেষ সপ্তাহে বলিউডের ‘ফাইটার’ মুক্তির আগে হঠাৎ করেই সম্মিলিত পরিষদ চিঠির মাধ্যমে আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান অ্যাকশন কাট এন্টারটেইনমেন্টকে জানায়, ভাষার মাসে অর্থাৎ ফেব্রুয়ারি মাসে ফাইটার সিনেমা প্রদর্শন না করতে। এই চিঠির পরিপ্রেক্ষিতে তথ্য মন্ত্রণালয়ের অনুমতি পাওয়া সত্ত্বেও ফাইটার মুক্তির সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসতে হয় অ্যাকশন কাটকে। তবে সম্মিলিত পরিষদের এমন সিদ্ধান্তে খুশি হতে পারেনি প্রতিষ্ঠানটি।

সবকিছুর পেছনে একটি চক্রের ষড়যন্ত্র রয়েছে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেন অ্যাকশন কাটের কর্ণধার অনন্য মামুন। শঙ্কা প্রকাশ করে মামুন বলেন, ‘হঠাৎ করেই জানানো হলো, ভাষার মাসে হিন্দি ভাষার সিনেমা মুক্তি দেওয়া যাবে না। এখন হয়তো মার্চে বলা হবে, স্বাধীনতার মাসে হিন্দি সিনেমা দেখানো যাবে না কিংবা শোকের মাস আগস্ট ও বিজয়ের মাস ডিসেম্বরেও সিনেমা আমদানি করা যাবে না। তাহলে হিন্দি সিনেমা মুক্তির সময় কোথায়? সব কার্যক্রম দেখে মনে হচ্ছে বিরাট ষড়যন্ত্র হচ্ছে। কোনো একটা চক্র হিন্দি সিনেমা আমদানির প্রক্রিয়া বন্ধ করার জন্য এমনটা করছে।’ এর পর থেকেই দেশের হলে হিন্দি সিনেমার আমদানি নিয়ে তৈরি হয়েছে শঙ্কা।

‘কিসি কা ভাই কিসি কি জান’ সিনেমার আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান এন ইউ আহমেদ ট্রেডার্সের কর্ণধার কিবরিয়া লিপু বলেন, ‘এ রকম বাধাবিঘ্নের কারণে হিন্দি সিনেমার আমদানি প্রক্রিয়া জটিল হবে। সরকার একটা নীতিমালা করেই ভারতীয় সিনেমা আমদানির অনুমতি দিয়েছে। সেই নীতিমালার বাইরে যদি নতুন নীতিমালা হয়, সে ক্ষেত্রে সমস্যা দেখা দেবে, এটাই স্বাভাবিক। নিয়মের বাইরে যদি আরও বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়, তাহলে হলমালিকেরা অসন্তুষ্ট হবেন, অর্থনৈতিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবেন। তাই, ভাষার মাসে হিন্দি সিনেমা মুক্তি দেওয়া যাবে না—হঠাৎ করে এমনটা বলে দেওয়া যায় না। সামনেই রোজার মাস, সে সময় সিনেমা রিলিজ হয় না, এরপর দুই ঈদ।

এই সময়ে হিন্দি সিনেমা রিলিজ দেওয়ার নিয়ম নেই। তাই লম্বা একটা গ্যাপ সৃষ্টি হবে। অন্যদিকে, দেশের সিনেমাও ধারাবাহিকভাবে রিলিজ হচ্ছে না। হলগুলো কী দিয়ে চলবে? সম্প্রতি কিছু নতুন হল চালু হয়েছে। সেই হলগুলোও টিকিয়ে রাখা কঠিন হয়ে যাবে।’
অনন্য মামুন বলেন, ‘সরকার উপমহাদেশীয় সিনেমা আমদানির অনুমতি দিয়েছে। তাই এটা নিয়ে জটিলতা তৈরির কিছু নেই। সমস্যা হলো সবাই মিলে যে নিয়ম করেছে, হঠাৎ করে সেই নিয়মের পরিবর্তন করা। একটা চক্র ইচ্ছা করেই হয়তো এমনটা করার চেষ্টা করছে। কিন্তু আমি দমে যাওয়ার মানুষ নই। আমি চাই সরকার যে নিয়ম করেছে, সেই নিয়ম অনুযায়ী হিন্দি সিনেমা মুক্তি পাক। হলগুলো চালাতে হলে ধারাবাহিকভাবে কনটেন্ট লাগবে। হলমালিকেরা ব্যবসা করতে না পারলে সিনেমা ইন্ডাস্ট্রি টিকিয়ে রাখা মুশকিল হবে।’

এ বিষয়ে সম্মিলিত চলচ্চিত্র পরিষদের সদস্যসচিব পরিচালক শাহ্‌আলম কিরণ বলেন, ‘আমদানির ক্ষেত্রে ঈদ ও পূজার বিষয়টি যেমন সম্মিলিত পরিষদের সবাই মিলে সিদ্ধান্ত নিয়েছে। তেমনি ভাষার মাসে হিন্দি সিনেমা আমদানি না করার সিদ্ধান্তও এই সংগঠন থেকে নেওয়া হয়েছে। এটা কারও একক সিদ্ধান্ত নয়। এখানে ১৯টি সংগঠনের প্রতিনিধিরা সম্মত হলেই কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। অনেকে আবেগের জায়গা থেকে বলেছে ভাষার মাসে হিন্দি সিনেমা মুক্তি না দিতে। তাই এমন সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। যেহেতু বিষয়টি সাংঘর্ষিক হয়ে গেছে, তাই নতুন করে ভাবতে হবে। আগামী সপ্তাহে সম্মিলিত পরিষদের সব সংগঠনকে ডাকা হয়েছে। সবার মতামত নিয়ে নতুন সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। আমরা চাই না কারও ক্ষতি হোক। নিয়ম হয়ে আছে দুই বছরে ২০টি সিনেমা মুক্তি পাবে। এই চুক্তিটা আমরা শেষ করতে চাই।’

দেশের হলে মুক্তি পাওয়া সর্বশেষ হিন্দি সিনেমা ‘ডানকি’র দৃশ্যথেমে নেই হিন্দি সিনেমার প্রদর্শনী
ভাষার মাসের দোহাই দিয়ে হিন্দি সিনেমা ফাইটার মুক্তি না দিলেও দেশের হলে ঠিকই চলছে আগে আমদানি করা হিন্দি ভাষার সিনেমা। স্টার সিনেপ্লেক্সে চলছে শাহরুখ খানের ‘ডানকি’র প্রদর্শনী। সিনেপ্লেক্সের পাঁচটি শাখায় ১০টি শো প্রদর্শিত হচ্ছে। এ ছাড়া কেরানীগঞ্জের লায়ন সিনেমাস ও যমুনা ব্লকবাস্টারে ডানকির পাশাপাশি চলেছে রণবীর কাপুর অভিনীত ‘অ্যানিমেল’। এ ছাড়া ইংলিশ সিনেমার প্রদর্শনীও চলছে নিয়মিতই।

এ বিষয়ে হলমালিকদের সঙ্গে যোগাযোগ করলে তাঁরা জানান, হিন্দি সিনেমার প্রদর্শনী বন্ধের বিষয়ে তাঁদের কিছু জানানো হয়নি। বিদেশি ভাষার সিনেমা ফাইটার অনুমতি না পেলেও কেন দেশের হলে হিন্দি বা বিদেশি ভাষার সিনেমার প্রদর্শনী চলছে, এই প্রশ্নের সঠিক উত্তর দিতে পারেননি সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা।

অনন্য মামুন, নির্মাতা ও আমদানিকারকসরকার উপমহাদেশীয় সিনেমা আমদানির অনুমতি দিয়েছে। তাই এটা নিয়ে জটিলতা তৈরির কিছু নেই। সমস্যা হলো সবাই মিলে যে নিয়ম করেছে, হঠাৎ করে সেই নিয়মের পরিবর্তন করা। একটা চক্র ইচ্ছা করেই হয়তো এমনটা করার চেষ্টা করছে। কিন্তু আমি দমে যাওয়ার মানুষ নই। আমি চাই সরকার যে নিয়ম করেছে, সেই নিয়ম অনুযায়ী হিন্দি সিনেমা মুক্তি পাক।
অনন্য মামুন, নির্মাতা ও আমদানিকারক

শাহ্‌ আলম কিরণ, সদস্যসচিব, সম্মিলিত চলচ্চিত্র পরিষদঅনেকে আবেগের জায়গা থেকে বলেছে ভাষার মাসে হিন্দি সিনেমা মুক্তি না দিতে। তাই এমন সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। যেহেতু বিষয়টি সাংঘর্ষিক হয়ে গেছে, তাই নতুন করে ভাবতে হবে। আগামী সপ্তাহে সম্মিলিত পরিষদের সব সংগঠনকে ডাকা হয়েছে। আমরা চাই না কারও ক্ষতি হোক। নিয়ম হয়ে আছে দুই বছরে ২০টি সিনেমা মুক্তি পাবে। এই চুক্তিটা আমরা শেষ করতে চাই।’
শাহ্‌ আলম কিরণ, সদস্যসচিব, সম্মিলিত চলচ্চিত্র পরিষদ

কিবরিয়া লিপু, প্রযোজক ও আমদানিকারকসরকার একটা নীতিমালা করেই ভারতীয় সিনেমা আমদানির অনুমতি দিয়েছে। সেই নীতিমালার বাইরে যদি নতুন নীতিমালা হয়, সে ক্ষেত্রে সমস্যা দেখা দেবে, এটাই স্বাভাবিক। নিয়মের বাইরে যদি আরও বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়, তাহলে হলমালিকেরা অসন্তুষ্ট হবেন, অর্থনৈতিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবেন। তাই, ভাষার মাসে হিন্দি সিনেমা মুক্তি দেওয়া যাবে না—হঠাৎ করে এমনটা বলে দেওয়া যায় না।
কিবরিয়া লিপু, প্রযোজক ও আমদানিকারক

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত