মামুনুর রশীদ

আমাদের আবদুল গাফ্ফার চৌধুরী গত হয়েছেন এক বছর আগে ১৯ মে ২০২২। তিনি গত হয়েছেন বটে, কিন্তু বিগত হননি। যত দিন বাংলাদেশ থাকবে, বাংলা ভাষা থাকবে, তত দিন তিনি একুশের গানে বেঁচে থাকবেন। কাজেই তাঁর বিগত হওয়ার আশঙ্কা নেই। ভাষা আন্দোলনের সময় তাঁর বয়স ১৮ বছর। কবিতা লিখতেন, ছোটগল্প লিখতেন এবং সাহিত্যের বিভিন্ন শাখার মধ্যে তাঁর ছিল চলাচল। ভাষা আন্দোলনের সময় তিনি ছাত্র এবং লড়াকু ছাত্র। ভাষার প্রতি প্রবল আবেগ থেকেই তিনি রচনা করেছিলেন একুশে ফেব্রুয়ারির সেই অমর গান—আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি...।
তাঁর সঙ্গে আমার প্রথম পরিচয় মুক্তিযুদ্ধের সময় কলকাতায়। তিনি তখন জয়বাংলা পত্রিকা সম্পাদনার কাজে নিয়োজিত। আমরা তখন তাঁর চলাচল দেখতাম, উত্তেজিত বাক্যালাপ শুনতাম আবার অত্যন্ত কোমল স্বরে তরুণদের সঙ্গে কথা বলতেও দেখতাম। জয়বাংলা পত্রিকায় ডিসেম্বরের প্রথম সপ্তাহেই প্রকাশ হলো ঢাকায় বাংলাদেশের পতাকা উড়বে। এক ছাত্র নেতা এসে চ্যালেঞ্জ করলেন। গাফ্ফার চৌধুরী শুধু বললেন, ‘আমি যতটুকু জানি, ততটুকুই লিখেছি।’ ছাত্র নেতা এবার ক্ষিপ্ত হয়ে বললেন, ‘আপনি বেশি বাড়াবাড়ি করছেন, আই উইল সি ইউ।’
গাফ্ফার চৌধুরী ততোধিক উচ্চ কণ্ঠে বললেন, ‘ওকে, ইউ মাইন্ড ইউর বিজনেস।’
এরপর শুনেছি সম্পাদকীয় বিভাগটিকে তিনি আরও স্বাধীন করে দিয়েছেন। যদিও বাংলাদেশে এসে ওই পত্রিকার সঙ্গে তিনি আর যুক্ত থাকেননি।
আজ থেকে ৫০ বছর আগে বাংলাদেশ টেলিভিশনে গল্প থেকে নাটক হতো। বেশ কিছুদিন আমি কিছু বাছাই করা গল্পের নাট্যরূপ দিয়েছি। নাট্যরূপের সঙ্গে একটু উপস্থাপনাও থাকত। গাফ্ফার ভাইয়ের বহু পুরোনো একটি গল্প খুঁজে বের করলাম। হিংসা এবং লোভের চমৎকার একটি গল্প। সেখানে একটি ছোট্ট সাক্ষাৎকার নিয়েছিলাম। নাটকটিও বেশ সাড়া জাগিয়েছিল। এর বহুদিন পর যখন লন্ডনে দেখা হয়, তখন বাঙালিদের দেওয়া এক সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে তিনি বললেন, ‘মামুন আমাকে নাট্যকার বানিয়েছে।’ আমি এত অভিভূত হয়েছিলাম যে আজ অবধি সেটি আমার স্মৃতির পর্দায় রয়ে গেছে। এরপর তিনি ঢাকায় এসেছেন, দেখা হয়েছে, নানান কথাবার্তার মধ্যে তাঁর গল্প নিয়ে তৈরি নাটকের কথা তিনি ভুলতে পারেননি। ২০১২ সালে তাঁর সঙ্গে শেষ দেখা লন্ডনে তিনি নাটক দেখতে এসেছিলেন রবীন্দ্রনাথ ও শেক্সপিয়ারের মধ্যে একটি কাল্পনিক সংলাপ ইংরেজি ভাষায়। স্কটল্যান্ডের এডিনবরায় নাটকটি নিয়ে আমরা ফ্রেঞ্জ ফেস্টিভ্যালে গিয়েছিলাম, ফেরার পথে বাঙালি বন্ধুদের উদ্যোগে ব্রাডি সেন্টারে নাটকটি অভিনীত হয়। নাটক শেষে দর্শকেরা দাঁড়িয়ে সম্মান দেখিয়েছে। এর মধ্যে দেখতে পেলাম গাফ্ফার ভাই বসে আছেন। তাঁর কাছে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই প্রথমে বললেন, ‘দুঃখিত মামুন, আমি দাঁড়াতে পারি না। দাঁড়িয়ে তোমাকে সম্মান দেখাতে পারলাম না।’ প্রত্যুত্তরে আমি বলি, ‘আপনি যে নাটকটি দেখতে এসেছেন, এটাই আমার কাছে পরম সম্মানের।’
পরে বাংলাদেশে এসেছেন, নানা কারণেই আর দেখা হয়নি। তাঁর কলামের একনিষ্ঠ পাঠক ছিলাম আমি। বেশ কটি পত্রিকায় লিখতেন। তাঁর লেখার ভক্ত হওয়ার কারণ বহু ঐতিহাসিক তথ্য থাকত তাতে। যদিও দুর্জনেরা বলত, গাফ্ফার সাহেবের তথ্যের সাক্ষী হচ্ছে মৃত ব্যক্তিরা। কাজেই ওটা চ্যালেঞ্জ করা যাবে না। কিছু কিছু লেখায় অবশ্য বিষয়টি আছে। গাফ্ফার ভাই গণতন্ত্র এবং ডানপন্থায় বিশ্বাস করতেন। ডানপন্থার কথাটি তাঁর লেখায় তেমন একটা আসত না; তবে গণতন্ত্রের বিষয়টি ছিল খুবই উচ্চকিত। জীবনের একটা দীর্ঘ সময় তিনি লন্ডনে কাটিয়েছেন। প্রথম কারণ স্ত্রীর অসুস্থতা, যার চিকিৎসা এ দেশে অসম্ভব ছিল। তিনি চলে যান এবং ফেরার আকাঙ্ক্ষা থাকলেও দীর্ঘ ১৫ বছরের সামরিক শাসনের সময় তাঁর দেশে ফেরার কোনো উপায় ছিল না। যখনই দেখেছেন তাঁর ফেরার অনুকূল পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছে, তখনই তিনি চলে এসেছেন। একবার শুনেছিলাম তাঁর জন্মভূমি নদীবেষ্টিত মনোরম গ্রাম বরিশালের উলানিয়ায় যাবেন, যেখানে তাঁর পূর্বপুরুষদের শত শত বর্ষের স্মৃতি আছে। শেষ পর্যন্ত গিয়েছিলেন।
লন্ডনপ্রবাসী সাংবাদিক-লেখকদের দুটো সুবিধা আছে—একটি বিশাল তথ্যভান্ডার সযত্নে রক্ষিত আছে; দ্বিতীয়ত, স্বাধীনভাবে লেখার সুযোগ। লন্ডনে বসে এত সব কলাম তিনি লিখেছেন, এত সব সাহসী উচ্চারণ তিনি করেছেন, যা স্বদেশে থাকলে হয়তো তিনি করতে পারতেন না। দুহাত ভরে তিনি এই সুযোগ নিয়েছেন। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের পত্রপত্রিকা পাওয়াও সেখানে খুবই সহজ ছিল। আর এর সঙ্গে চলছিল তাঁর স্ত্রীর দুরারোগ্য ব্যাধির চিকিৎসা। জীবিকার তাগিদে তাঁকে প্রতিদিনই লিখতে হতো। এত তথ্য, শব্দের ভান্ডার এবং বাংলাদেশের সঙ্গে তাঁর প্রাত্যহিক যোগাযোগ—সবটা মিলিয়ে তাঁর লেখার মালমসলার কোনো অসুবিধা হতো না। ভিন্নমতাবলম্বীদের প্রতি শ্রদ্ধাজ্ঞাপন করাও তাঁর লেখার একটি বৈশিষ্ট্য ছিল। একটা সময়ে বদরউদ্দিন উমরের সঙ্গে তাঁর কলাম-যুদ্ধ চলত। দুজনেরই কলাম-যুদ্ধ থেকে আমরা প্রচুর শিখতাম। দুজনের কলাম থেকে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নিয়ে আমিও লিখেছি। পৃথিবীর সব দেশেই দেখেছি লেখকেরা নিজের দেশে থাকতে পারেন না। তার নানাবিধ কারণ থাকে। প্রধান কারণ রাজনৈতিক। যাঁরা ক্ষমতায় থাকেন, তাঁদের পছন্দসই লিখতে না পারলে বা বিরোধিতা করলে, সেই লেখকের আর নিজের দেশে থাকা হয় না। নিজ দেশে এই লেখকেরা অনেক নির্যাতন সহ্য করেছেন। জেল খেটে, পুলিশের নিপীড়ন সহ্য করে অনেকেই স্বদেশে থেকে মৃত্যুবরণ করেছেন। আবার কেউ কেউ সুযোগ বুঝে দেশত্যাগ করেছেন। গাফ্ফার ভাইয়ের সৌভাগ্য যে তিনি পঁচাত্তরের আগেই এ দেশ থেকে চলে যেতে পেরেছিলেন। পঁচাত্তরের পরে তাঁর চলে যাওয়া কঠিন হতো। দেশে থাকলে তাঁকে শাসকগোষ্ঠীর অনুগত হয়ে থাকতে হতো। যাঁদের প্রবাসে যাওয়ার সুযোগ নেই, তাঁরা হয় নিপীড়ন সহ্য করে থেকেছেন, না হয় লেখা ছেড়ে দিয়েছেন। ভারতে কোনো না কোনোভাবে লেখকেরা আমাদের চেয়ে বেশি স্বাধীনতা ভোগ করেন। কারণ সেখানে ১৯৪৭ সালের পর একটা গণতান্ত্রিক আবহ সৃষ্টি হয়েছে। সেখানকার লেখকেরা মামলার সম্মুখীন হন, কিন্তু বিচার বিভাগের স্বচ্ছতা ও স্বাধীনতার ফলে তাঁরা বেরিয়ে আসেন। হয়তো আবারও মামলার সম্মুখীন হন। গাফ্ফার ভাই অনেক কাগজে কাজ করেছেন। প্রধানত সম্পাদকীয় বিভাগে এবং সেই সঙ্গে লেখা কলাম। তাঁদের যৌবনে অনেক সমমনা সাংবাদিক, লেখক ও কবি পেয়েছিলেন, তাঁরা সবাই অকুতোভয় এবং মুক্তহস্তে লিখতেন। একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের সময় আলবদর বাহিনী তাঁদের অনেককে ধরে নিয়ে নৃশংসভাবে হত্যা করে। সে যাত্রায় তিনি বেঁচে গিয়েছিলেন প্রবাসে থাকার কারণে। অবশ্য প্রবাসে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে তিনি প্রচুর কাজ করতে পেরেছিলেন। তবে আগেই বলেছি, তাঁর কার্যক্ষেত্র বারবার পরিবর্তন হয়েছে। এই পরিবর্তনের কারণ বৈষয়িক নয়, মতপার্থক্য এবং মতপার্থক্যে তাঁর অবিচল থাকার ফলে।
আমার খুব বিস্ময় হয়, তিনি এত লেখালেখির পরেও পড়ার সময় পেতেন কীভাবে? তাঁর বহু কলামে রবীন্দ্রনাথ, নজরুল, জীবনানন্দসহ অনেক দেশি ও বিদেশি কবির কবিতার উল্লেখ থাকত। তাঁর লেখায় একটা বড় বৈশিষ্ট্য ছিল একধরনের আশাবাদ। তিনি বারবার শুভবুদ্ধির জয়ের আশা করতেন। যদিও সে আশা অনেকাংশেই নিরাশায় পরিণত হয়েছে। পৃথিবী ক্রমাগত জটিল হয়ে পড়ছে। এই পৃথিবীকে ব্যাখ্যা করার জন্য শক্তিশালী লেখক ও চিন্তাবিদের প্রয়োজন। সেই সঙ্গে আন্তর্জাতিক একটা দৃষ্টিভঙ্গিরও প্রয়োজন আছে। গণতন্ত্রের মাতৃভূমি খোদ ইংল্যান্ডে বসে তিনি গণতন্ত্রের সর্বনাশ যেমন দেখেছেন, তেমনি পুঁজিবাদের কুৎসিত চেহারাটাও দেখেছেন। সেসব নিয়ে ছোটখাটো আলোচনা প্রায়ই করতেন। কিন্তু আমরা আশা করতাম যে তিনি একটা বিপুল সম্ভার নিয়ে কখনো আমাদের সামনে হাজির হবেন। আবার উপন্যাস, ছোটগল্প, কবিতা লিখবেন। কিন্তু একদিকে জীবনের প্রাত্যহিকতা, অন্যদিকে জীবিকার প্রচণ্ড তাগিদ—এই দুটো মিলিয়ে তিনি স্থিত হতে পারেননি। আসলে মানুষের জীবনটাই একটি অসমাপ্ত নাটকের মতো। হয়তো অনেক কথা বলার থাকে, অনেক দৃশ্যের অবতারণার কথা থাকে, কিন্তু জীবনের সীমাবদ্ধতায় সেসব হয়ে ওঠে না। যতটুকু তিনি দিয়েছেন তা নিয়েই আমরা সন্তুষ্ট থাকি, সেখানে থেকেই আলো ছড়াক। যে আলো তিনি দীর্ঘ ৬০-৭০ বছরে ছড়িয়েছেন তার দীপ্তি বহুকাল চলবে।
লেখক: নাট্যব্যক্তিত্ব

আমাদের আবদুল গাফ্ফার চৌধুরী গত হয়েছেন এক বছর আগে ১৯ মে ২০২২। তিনি গত হয়েছেন বটে, কিন্তু বিগত হননি। যত দিন বাংলাদেশ থাকবে, বাংলা ভাষা থাকবে, তত দিন তিনি একুশের গানে বেঁচে থাকবেন। কাজেই তাঁর বিগত হওয়ার আশঙ্কা নেই। ভাষা আন্দোলনের সময় তাঁর বয়স ১৮ বছর। কবিতা লিখতেন, ছোটগল্প লিখতেন এবং সাহিত্যের বিভিন্ন শাখার মধ্যে তাঁর ছিল চলাচল। ভাষা আন্দোলনের সময় তিনি ছাত্র এবং লড়াকু ছাত্র। ভাষার প্রতি প্রবল আবেগ থেকেই তিনি রচনা করেছিলেন একুশে ফেব্রুয়ারির সেই অমর গান—আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি...।
তাঁর সঙ্গে আমার প্রথম পরিচয় মুক্তিযুদ্ধের সময় কলকাতায়। তিনি তখন জয়বাংলা পত্রিকা সম্পাদনার কাজে নিয়োজিত। আমরা তখন তাঁর চলাচল দেখতাম, উত্তেজিত বাক্যালাপ শুনতাম আবার অত্যন্ত কোমল স্বরে তরুণদের সঙ্গে কথা বলতেও দেখতাম। জয়বাংলা পত্রিকায় ডিসেম্বরের প্রথম সপ্তাহেই প্রকাশ হলো ঢাকায় বাংলাদেশের পতাকা উড়বে। এক ছাত্র নেতা এসে চ্যালেঞ্জ করলেন। গাফ্ফার চৌধুরী শুধু বললেন, ‘আমি যতটুকু জানি, ততটুকুই লিখেছি।’ ছাত্র নেতা এবার ক্ষিপ্ত হয়ে বললেন, ‘আপনি বেশি বাড়াবাড়ি করছেন, আই উইল সি ইউ।’
গাফ্ফার চৌধুরী ততোধিক উচ্চ কণ্ঠে বললেন, ‘ওকে, ইউ মাইন্ড ইউর বিজনেস।’
এরপর শুনেছি সম্পাদকীয় বিভাগটিকে তিনি আরও স্বাধীন করে দিয়েছেন। যদিও বাংলাদেশে এসে ওই পত্রিকার সঙ্গে তিনি আর যুক্ত থাকেননি।
আজ থেকে ৫০ বছর আগে বাংলাদেশ টেলিভিশনে গল্প থেকে নাটক হতো। বেশ কিছুদিন আমি কিছু বাছাই করা গল্পের নাট্যরূপ দিয়েছি। নাট্যরূপের সঙ্গে একটু উপস্থাপনাও থাকত। গাফ্ফার ভাইয়ের বহু পুরোনো একটি গল্প খুঁজে বের করলাম। হিংসা এবং লোভের চমৎকার একটি গল্প। সেখানে একটি ছোট্ট সাক্ষাৎকার নিয়েছিলাম। নাটকটিও বেশ সাড়া জাগিয়েছিল। এর বহুদিন পর যখন লন্ডনে দেখা হয়, তখন বাঙালিদের দেওয়া এক সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে তিনি বললেন, ‘মামুন আমাকে নাট্যকার বানিয়েছে।’ আমি এত অভিভূত হয়েছিলাম যে আজ অবধি সেটি আমার স্মৃতির পর্দায় রয়ে গেছে। এরপর তিনি ঢাকায় এসেছেন, দেখা হয়েছে, নানান কথাবার্তার মধ্যে তাঁর গল্প নিয়ে তৈরি নাটকের কথা তিনি ভুলতে পারেননি। ২০১২ সালে তাঁর সঙ্গে শেষ দেখা লন্ডনে তিনি নাটক দেখতে এসেছিলেন রবীন্দ্রনাথ ও শেক্সপিয়ারের মধ্যে একটি কাল্পনিক সংলাপ ইংরেজি ভাষায়। স্কটল্যান্ডের এডিনবরায় নাটকটি নিয়ে আমরা ফ্রেঞ্জ ফেস্টিভ্যালে গিয়েছিলাম, ফেরার পথে বাঙালি বন্ধুদের উদ্যোগে ব্রাডি সেন্টারে নাটকটি অভিনীত হয়। নাটক শেষে দর্শকেরা দাঁড়িয়ে সম্মান দেখিয়েছে। এর মধ্যে দেখতে পেলাম গাফ্ফার ভাই বসে আছেন। তাঁর কাছে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই প্রথমে বললেন, ‘দুঃখিত মামুন, আমি দাঁড়াতে পারি না। দাঁড়িয়ে তোমাকে সম্মান দেখাতে পারলাম না।’ প্রত্যুত্তরে আমি বলি, ‘আপনি যে নাটকটি দেখতে এসেছেন, এটাই আমার কাছে পরম সম্মানের।’
পরে বাংলাদেশে এসেছেন, নানা কারণেই আর দেখা হয়নি। তাঁর কলামের একনিষ্ঠ পাঠক ছিলাম আমি। বেশ কটি পত্রিকায় লিখতেন। তাঁর লেখার ভক্ত হওয়ার কারণ বহু ঐতিহাসিক তথ্য থাকত তাতে। যদিও দুর্জনেরা বলত, গাফ্ফার সাহেবের তথ্যের সাক্ষী হচ্ছে মৃত ব্যক্তিরা। কাজেই ওটা চ্যালেঞ্জ করা যাবে না। কিছু কিছু লেখায় অবশ্য বিষয়টি আছে। গাফ্ফার ভাই গণতন্ত্র এবং ডানপন্থায় বিশ্বাস করতেন। ডানপন্থার কথাটি তাঁর লেখায় তেমন একটা আসত না; তবে গণতন্ত্রের বিষয়টি ছিল খুবই উচ্চকিত। জীবনের একটা দীর্ঘ সময় তিনি লন্ডনে কাটিয়েছেন। প্রথম কারণ স্ত্রীর অসুস্থতা, যার চিকিৎসা এ দেশে অসম্ভব ছিল। তিনি চলে যান এবং ফেরার আকাঙ্ক্ষা থাকলেও দীর্ঘ ১৫ বছরের সামরিক শাসনের সময় তাঁর দেশে ফেরার কোনো উপায় ছিল না। যখনই দেখেছেন তাঁর ফেরার অনুকূল পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছে, তখনই তিনি চলে এসেছেন। একবার শুনেছিলাম তাঁর জন্মভূমি নদীবেষ্টিত মনোরম গ্রাম বরিশালের উলানিয়ায় যাবেন, যেখানে তাঁর পূর্বপুরুষদের শত শত বর্ষের স্মৃতি আছে। শেষ পর্যন্ত গিয়েছিলেন।
লন্ডনপ্রবাসী সাংবাদিক-লেখকদের দুটো সুবিধা আছে—একটি বিশাল তথ্যভান্ডার সযত্নে রক্ষিত আছে; দ্বিতীয়ত, স্বাধীনভাবে লেখার সুযোগ। লন্ডনে বসে এত সব কলাম তিনি লিখেছেন, এত সব সাহসী উচ্চারণ তিনি করেছেন, যা স্বদেশে থাকলে হয়তো তিনি করতে পারতেন না। দুহাত ভরে তিনি এই সুযোগ নিয়েছেন। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের পত্রপত্রিকা পাওয়াও সেখানে খুবই সহজ ছিল। আর এর সঙ্গে চলছিল তাঁর স্ত্রীর দুরারোগ্য ব্যাধির চিকিৎসা। জীবিকার তাগিদে তাঁকে প্রতিদিনই লিখতে হতো। এত তথ্য, শব্দের ভান্ডার এবং বাংলাদেশের সঙ্গে তাঁর প্রাত্যহিক যোগাযোগ—সবটা মিলিয়ে তাঁর লেখার মালমসলার কোনো অসুবিধা হতো না। ভিন্নমতাবলম্বীদের প্রতি শ্রদ্ধাজ্ঞাপন করাও তাঁর লেখার একটি বৈশিষ্ট্য ছিল। একটা সময়ে বদরউদ্দিন উমরের সঙ্গে তাঁর কলাম-যুদ্ধ চলত। দুজনেরই কলাম-যুদ্ধ থেকে আমরা প্রচুর শিখতাম। দুজনের কলাম থেকে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নিয়ে আমিও লিখেছি। পৃথিবীর সব দেশেই দেখেছি লেখকেরা নিজের দেশে থাকতে পারেন না। তার নানাবিধ কারণ থাকে। প্রধান কারণ রাজনৈতিক। যাঁরা ক্ষমতায় থাকেন, তাঁদের পছন্দসই লিখতে না পারলে বা বিরোধিতা করলে, সেই লেখকের আর নিজের দেশে থাকা হয় না। নিজ দেশে এই লেখকেরা অনেক নির্যাতন সহ্য করেছেন। জেল খেটে, পুলিশের নিপীড়ন সহ্য করে অনেকেই স্বদেশে থেকে মৃত্যুবরণ করেছেন। আবার কেউ কেউ সুযোগ বুঝে দেশত্যাগ করেছেন। গাফ্ফার ভাইয়ের সৌভাগ্য যে তিনি পঁচাত্তরের আগেই এ দেশ থেকে চলে যেতে পেরেছিলেন। পঁচাত্তরের পরে তাঁর চলে যাওয়া কঠিন হতো। দেশে থাকলে তাঁকে শাসকগোষ্ঠীর অনুগত হয়ে থাকতে হতো। যাঁদের প্রবাসে যাওয়ার সুযোগ নেই, তাঁরা হয় নিপীড়ন সহ্য করে থেকেছেন, না হয় লেখা ছেড়ে দিয়েছেন। ভারতে কোনো না কোনোভাবে লেখকেরা আমাদের চেয়ে বেশি স্বাধীনতা ভোগ করেন। কারণ সেখানে ১৯৪৭ সালের পর একটা গণতান্ত্রিক আবহ সৃষ্টি হয়েছে। সেখানকার লেখকেরা মামলার সম্মুখীন হন, কিন্তু বিচার বিভাগের স্বচ্ছতা ও স্বাধীনতার ফলে তাঁরা বেরিয়ে আসেন। হয়তো আবারও মামলার সম্মুখীন হন। গাফ্ফার ভাই অনেক কাগজে কাজ করেছেন। প্রধানত সম্পাদকীয় বিভাগে এবং সেই সঙ্গে লেখা কলাম। তাঁদের যৌবনে অনেক সমমনা সাংবাদিক, লেখক ও কবি পেয়েছিলেন, তাঁরা সবাই অকুতোভয় এবং মুক্তহস্তে লিখতেন। একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের সময় আলবদর বাহিনী তাঁদের অনেককে ধরে নিয়ে নৃশংসভাবে হত্যা করে। সে যাত্রায় তিনি বেঁচে গিয়েছিলেন প্রবাসে থাকার কারণে। অবশ্য প্রবাসে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে তিনি প্রচুর কাজ করতে পেরেছিলেন। তবে আগেই বলেছি, তাঁর কার্যক্ষেত্র বারবার পরিবর্তন হয়েছে। এই পরিবর্তনের কারণ বৈষয়িক নয়, মতপার্থক্য এবং মতপার্থক্যে তাঁর অবিচল থাকার ফলে।
আমার খুব বিস্ময় হয়, তিনি এত লেখালেখির পরেও পড়ার সময় পেতেন কীভাবে? তাঁর বহু কলামে রবীন্দ্রনাথ, নজরুল, জীবনানন্দসহ অনেক দেশি ও বিদেশি কবির কবিতার উল্লেখ থাকত। তাঁর লেখায় একটা বড় বৈশিষ্ট্য ছিল একধরনের আশাবাদ। তিনি বারবার শুভবুদ্ধির জয়ের আশা করতেন। যদিও সে আশা অনেকাংশেই নিরাশায় পরিণত হয়েছে। পৃথিবী ক্রমাগত জটিল হয়ে পড়ছে। এই পৃথিবীকে ব্যাখ্যা করার জন্য শক্তিশালী লেখক ও চিন্তাবিদের প্রয়োজন। সেই সঙ্গে আন্তর্জাতিক একটা দৃষ্টিভঙ্গিরও প্রয়োজন আছে। গণতন্ত্রের মাতৃভূমি খোদ ইংল্যান্ডে বসে তিনি গণতন্ত্রের সর্বনাশ যেমন দেখেছেন, তেমনি পুঁজিবাদের কুৎসিত চেহারাটাও দেখেছেন। সেসব নিয়ে ছোটখাটো আলোচনা প্রায়ই করতেন। কিন্তু আমরা আশা করতাম যে তিনি একটা বিপুল সম্ভার নিয়ে কখনো আমাদের সামনে হাজির হবেন। আবার উপন্যাস, ছোটগল্প, কবিতা লিখবেন। কিন্তু একদিকে জীবনের প্রাত্যহিকতা, অন্যদিকে জীবিকার প্রচণ্ড তাগিদ—এই দুটো মিলিয়ে তিনি স্থিত হতে পারেননি। আসলে মানুষের জীবনটাই একটি অসমাপ্ত নাটকের মতো। হয়তো অনেক কথা বলার থাকে, অনেক দৃশ্যের অবতারণার কথা থাকে, কিন্তু জীবনের সীমাবদ্ধতায় সেসব হয়ে ওঠে না। যতটুকু তিনি দিয়েছেন তা নিয়েই আমরা সন্তুষ্ট থাকি, সেখানে থেকেই আলো ছড়াক। যে আলো তিনি দীর্ঘ ৬০-৭০ বছরে ছড়িয়েছেন তার দীপ্তি বহুকাল চলবে।
লেখক: নাট্যব্যক্তিত্ব
মামুনুর রশীদ

আমাদের আবদুল গাফ্ফার চৌধুরী গত হয়েছেন এক বছর আগে ১৯ মে ২০২২। তিনি গত হয়েছেন বটে, কিন্তু বিগত হননি। যত দিন বাংলাদেশ থাকবে, বাংলা ভাষা থাকবে, তত দিন তিনি একুশের গানে বেঁচে থাকবেন। কাজেই তাঁর বিগত হওয়ার আশঙ্কা নেই। ভাষা আন্দোলনের সময় তাঁর বয়স ১৮ বছর। কবিতা লিখতেন, ছোটগল্প লিখতেন এবং সাহিত্যের বিভিন্ন শাখার মধ্যে তাঁর ছিল চলাচল। ভাষা আন্দোলনের সময় তিনি ছাত্র এবং লড়াকু ছাত্র। ভাষার প্রতি প্রবল আবেগ থেকেই তিনি রচনা করেছিলেন একুশে ফেব্রুয়ারির সেই অমর গান—আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি...।
তাঁর সঙ্গে আমার প্রথম পরিচয় মুক্তিযুদ্ধের সময় কলকাতায়। তিনি তখন জয়বাংলা পত্রিকা সম্পাদনার কাজে নিয়োজিত। আমরা তখন তাঁর চলাচল দেখতাম, উত্তেজিত বাক্যালাপ শুনতাম আবার অত্যন্ত কোমল স্বরে তরুণদের সঙ্গে কথা বলতেও দেখতাম। জয়বাংলা পত্রিকায় ডিসেম্বরের প্রথম সপ্তাহেই প্রকাশ হলো ঢাকায় বাংলাদেশের পতাকা উড়বে। এক ছাত্র নেতা এসে চ্যালেঞ্জ করলেন। গাফ্ফার চৌধুরী শুধু বললেন, ‘আমি যতটুকু জানি, ততটুকুই লিখেছি।’ ছাত্র নেতা এবার ক্ষিপ্ত হয়ে বললেন, ‘আপনি বেশি বাড়াবাড়ি করছেন, আই উইল সি ইউ।’
গাফ্ফার চৌধুরী ততোধিক উচ্চ কণ্ঠে বললেন, ‘ওকে, ইউ মাইন্ড ইউর বিজনেস।’
এরপর শুনেছি সম্পাদকীয় বিভাগটিকে তিনি আরও স্বাধীন করে দিয়েছেন। যদিও বাংলাদেশে এসে ওই পত্রিকার সঙ্গে তিনি আর যুক্ত থাকেননি।
আজ থেকে ৫০ বছর আগে বাংলাদেশ টেলিভিশনে গল্প থেকে নাটক হতো। বেশ কিছুদিন আমি কিছু বাছাই করা গল্পের নাট্যরূপ দিয়েছি। নাট্যরূপের সঙ্গে একটু উপস্থাপনাও থাকত। গাফ্ফার ভাইয়ের বহু পুরোনো একটি গল্প খুঁজে বের করলাম। হিংসা এবং লোভের চমৎকার একটি গল্প। সেখানে একটি ছোট্ট সাক্ষাৎকার নিয়েছিলাম। নাটকটিও বেশ সাড়া জাগিয়েছিল। এর বহুদিন পর যখন লন্ডনে দেখা হয়, তখন বাঙালিদের দেওয়া এক সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে তিনি বললেন, ‘মামুন আমাকে নাট্যকার বানিয়েছে।’ আমি এত অভিভূত হয়েছিলাম যে আজ অবধি সেটি আমার স্মৃতির পর্দায় রয়ে গেছে। এরপর তিনি ঢাকায় এসেছেন, দেখা হয়েছে, নানান কথাবার্তার মধ্যে তাঁর গল্প নিয়ে তৈরি নাটকের কথা তিনি ভুলতে পারেননি। ২০১২ সালে তাঁর সঙ্গে শেষ দেখা লন্ডনে তিনি নাটক দেখতে এসেছিলেন রবীন্দ্রনাথ ও শেক্সপিয়ারের মধ্যে একটি কাল্পনিক সংলাপ ইংরেজি ভাষায়। স্কটল্যান্ডের এডিনবরায় নাটকটি নিয়ে আমরা ফ্রেঞ্জ ফেস্টিভ্যালে গিয়েছিলাম, ফেরার পথে বাঙালি বন্ধুদের উদ্যোগে ব্রাডি সেন্টারে নাটকটি অভিনীত হয়। নাটক শেষে দর্শকেরা দাঁড়িয়ে সম্মান দেখিয়েছে। এর মধ্যে দেখতে পেলাম গাফ্ফার ভাই বসে আছেন। তাঁর কাছে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই প্রথমে বললেন, ‘দুঃখিত মামুন, আমি দাঁড়াতে পারি না। দাঁড়িয়ে তোমাকে সম্মান দেখাতে পারলাম না।’ প্রত্যুত্তরে আমি বলি, ‘আপনি যে নাটকটি দেখতে এসেছেন, এটাই আমার কাছে পরম সম্মানের।’
পরে বাংলাদেশে এসেছেন, নানা কারণেই আর দেখা হয়নি। তাঁর কলামের একনিষ্ঠ পাঠক ছিলাম আমি। বেশ কটি পত্রিকায় লিখতেন। তাঁর লেখার ভক্ত হওয়ার কারণ বহু ঐতিহাসিক তথ্য থাকত তাতে। যদিও দুর্জনেরা বলত, গাফ্ফার সাহেবের তথ্যের সাক্ষী হচ্ছে মৃত ব্যক্তিরা। কাজেই ওটা চ্যালেঞ্জ করা যাবে না। কিছু কিছু লেখায় অবশ্য বিষয়টি আছে। গাফ্ফার ভাই গণতন্ত্র এবং ডানপন্থায় বিশ্বাস করতেন। ডানপন্থার কথাটি তাঁর লেখায় তেমন একটা আসত না; তবে গণতন্ত্রের বিষয়টি ছিল খুবই উচ্চকিত। জীবনের একটা দীর্ঘ সময় তিনি লন্ডনে কাটিয়েছেন। প্রথম কারণ স্ত্রীর অসুস্থতা, যার চিকিৎসা এ দেশে অসম্ভব ছিল। তিনি চলে যান এবং ফেরার আকাঙ্ক্ষা থাকলেও দীর্ঘ ১৫ বছরের সামরিক শাসনের সময় তাঁর দেশে ফেরার কোনো উপায় ছিল না। যখনই দেখেছেন তাঁর ফেরার অনুকূল পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছে, তখনই তিনি চলে এসেছেন। একবার শুনেছিলাম তাঁর জন্মভূমি নদীবেষ্টিত মনোরম গ্রাম বরিশালের উলানিয়ায় যাবেন, যেখানে তাঁর পূর্বপুরুষদের শত শত বর্ষের স্মৃতি আছে। শেষ পর্যন্ত গিয়েছিলেন।
লন্ডনপ্রবাসী সাংবাদিক-লেখকদের দুটো সুবিধা আছে—একটি বিশাল তথ্যভান্ডার সযত্নে রক্ষিত আছে; দ্বিতীয়ত, স্বাধীনভাবে লেখার সুযোগ। লন্ডনে বসে এত সব কলাম তিনি লিখেছেন, এত সব সাহসী উচ্চারণ তিনি করেছেন, যা স্বদেশে থাকলে হয়তো তিনি করতে পারতেন না। দুহাত ভরে তিনি এই সুযোগ নিয়েছেন। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের পত্রপত্রিকা পাওয়াও সেখানে খুবই সহজ ছিল। আর এর সঙ্গে চলছিল তাঁর স্ত্রীর দুরারোগ্য ব্যাধির চিকিৎসা। জীবিকার তাগিদে তাঁকে প্রতিদিনই লিখতে হতো। এত তথ্য, শব্দের ভান্ডার এবং বাংলাদেশের সঙ্গে তাঁর প্রাত্যহিক যোগাযোগ—সবটা মিলিয়ে তাঁর লেখার মালমসলার কোনো অসুবিধা হতো না। ভিন্নমতাবলম্বীদের প্রতি শ্রদ্ধাজ্ঞাপন করাও তাঁর লেখার একটি বৈশিষ্ট্য ছিল। একটা সময়ে বদরউদ্দিন উমরের সঙ্গে তাঁর কলাম-যুদ্ধ চলত। দুজনেরই কলাম-যুদ্ধ থেকে আমরা প্রচুর শিখতাম। দুজনের কলাম থেকে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নিয়ে আমিও লিখেছি। পৃথিবীর সব দেশেই দেখেছি লেখকেরা নিজের দেশে থাকতে পারেন না। তার নানাবিধ কারণ থাকে। প্রধান কারণ রাজনৈতিক। যাঁরা ক্ষমতায় থাকেন, তাঁদের পছন্দসই লিখতে না পারলে বা বিরোধিতা করলে, সেই লেখকের আর নিজের দেশে থাকা হয় না। নিজ দেশে এই লেখকেরা অনেক নির্যাতন সহ্য করেছেন। জেল খেটে, পুলিশের নিপীড়ন সহ্য করে অনেকেই স্বদেশে থেকে মৃত্যুবরণ করেছেন। আবার কেউ কেউ সুযোগ বুঝে দেশত্যাগ করেছেন। গাফ্ফার ভাইয়ের সৌভাগ্য যে তিনি পঁচাত্তরের আগেই এ দেশ থেকে চলে যেতে পেরেছিলেন। পঁচাত্তরের পরে তাঁর চলে যাওয়া কঠিন হতো। দেশে থাকলে তাঁকে শাসকগোষ্ঠীর অনুগত হয়ে থাকতে হতো। যাঁদের প্রবাসে যাওয়ার সুযোগ নেই, তাঁরা হয় নিপীড়ন সহ্য করে থেকেছেন, না হয় লেখা ছেড়ে দিয়েছেন। ভারতে কোনো না কোনোভাবে লেখকেরা আমাদের চেয়ে বেশি স্বাধীনতা ভোগ করেন। কারণ সেখানে ১৯৪৭ সালের পর একটা গণতান্ত্রিক আবহ সৃষ্টি হয়েছে। সেখানকার লেখকেরা মামলার সম্মুখীন হন, কিন্তু বিচার বিভাগের স্বচ্ছতা ও স্বাধীনতার ফলে তাঁরা বেরিয়ে আসেন। হয়তো আবারও মামলার সম্মুখীন হন। গাফ্ফার ভাই অনেক কাগজে কাজ করেছেন। প্রধানত সম্পাদকীয় বিভাগে এবং সেই সঙ্গে লেখা কলাম। তাঁদের যৌবনে অনেক সমমনা সাংবাদিক, লেখক ও কবি পেয়েছিলেন, তাঁরা সবাই অকুতোভয় এবং মুক্তহস্তে লিখতেন। একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের সময় আলবদর বাহিনী তাঁদের অনেককে ধরে নিয়ে নৃশংসভাবে হত্যা করে। সে যাত্রায় তিনি বেঁচে গিয়েছিলেন প্রবাসে থাকার কারণে। অবশ্য প্রবাসে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে তিনি প্রচুর কাজ করতে পেরেছিলেন। তবে আগেই বলেছি, তাঁর কার্যক্ষেত্র বারবার পরিবর্তন হয়েছে। এই পরিবর্তনের কারণ বৈষয়িক নয়, মতপার্থক্য এবং মতপার্থক্যে তাঁর অবিচল থাকার ফলে।
আমার খুব বিস্ময় হয়, তিনি এত লেখালেখির পরেও পড়ার সময় পেতেন কীভাবে? তাঁর বহু কলামে রবীন্দ্রনাথ, নজরুল, জীবনানন্দসহ অনেক দেশি ও বিদেশি কবির কবিতার উল্লেখ থাকত। তাঁর লেখায় একটা বড় বৈশিষ্ট্য ছিল একধরনের আশাবাদ। তিনি বারবার শুভবুদ্ধির জয়ের আশা করতেন। যদিও সে আশা অনেকাংশেই নিরাশায় পরিণত হয়েছে। পৃথিবী ক্রমাগত জটিল হয়ে পড়ছে। এই পৃথিবীকে ব্যাখ্যা করার জন্য শক্তিশালী লেখক ও চিন্তাবিদের প্রয়োজন। সেই সঙ্গে আন্তর্জাতিক একটা দৃষ্টিভঙ্গিরও প্রয়োজন আছে। গণতন্ত্রের মাতৃভূমি খোদ ইংল্যান্ডে বসে তিনি গণতন্ত্রের সর্বনাশ যেমন দেখেছেন, তেমনি পুঁজিবাদের কুৎসিত চেহারাটাও দেখেছেন। সেসব নিয়ে ছোটখাটো আলোচনা প্রায়ই করতেন। কিন্তু আমরা আশা করতাম যে তিনি একটা বিপুল সম্ভার নিয়ে কখনো আমাদের সামনে হাজির হবেন। আবার উপন্যাস, ছোটগল্প, কবিতা লিখবেন। কিন্তু একদিকে জীবনের প্রাত্যহিকতা, অন্যদিকে জীবিকার প্রচণ্ড তাগিদ—এই দুটো মিলিয়ে তিনি স্থিত হতে পারেননি। আসলে মানুষের জীবনটাই একটি অসমাপ্ত নাটকের মতো। হয়তো অনেক কথা বলার থাকে, অনেক দৃশ্যের অবতারণার কথা থাকে, কিন্তু জীবনের সীমাবদ্ধতায় সেসব হয়ে ওঠে না। যতটুকু তিনি দিয়েছেন তা নিয়েই আমরা সন্তুষ্ট থাকি, সেখানে থেকেই আলো ছড়াক। যে আলো তিনি দীর্ঘ ৬০-৭০ বছরে ছড়িয়েছেন তার দীপ্তি বহুকাল চলবে।
লেখক: নাট্যব্যক্তিত্ব

আমাদের আবদুল গাফ্ফার চৌধুরী গত হয়েছেন এক বছর আগে ১৯ মে ২০২২। তিনি গত হয়েছেন বটে, কিন্তু বিগত হননি। যত দিন বাংলাদেশ থাকবে, বাংলা ভাষা থাকবে, তত দিন তিনি একুশের গানে বেঁচে থাকবেন। কাজেই তাঁর বিগত হওয়ার আশঙ্কা নেই। ভাষা আন্দোলনের সময় তাঁর বয়স ১৮ বছর। কবিতা লিখতেন, ছোটগল্প লিখতেন এবং সাহিত্যের বিভিন্ন শাখার মধ্যে তাঁর ছিল চলাচল। ভাষা আন্দোলনের সময় তিনি ছাত্র এবং লড়াকু ছাত্র। ভাষার প্রতি প্রবল আবেগ থেকেই তিনি রচনা করেছিলেন একুশে ফেব্রুয়ারির সেই অমর গান—আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি...।
তাঁর সঙ্গে আমার প্রথম পরিচয় মুক্তিযুদ্ধের সময় কলকাতায়। তিনি তখন জয়বাংলা পত্রিকা সম্পাদনার কাজে নিয়োজিত। আমরা তখন তাঁর চলাচল দেখতাম, উত্তেজিত বাক্যালাপ শুনতাম আবার অত্যন্ত কোমল স্বরে তরুণদের সঙ্গে কথা বলতেও দেখতাম। জয়বাংলা পত্রিকায় ডিসেম্বরের প্রথম সপ্তাহেই প্রকাশ হলো ঢাকায় বাংলাদেশের পতাকা উড়বে। এক ছাত্র নেতা এসে চ্যালেঞ্জ করলেন। গাফ্ফার চৌধুরী শুধু বললেন, ‘আমি যতটুকু জানি, ততটুকুই লিখেছি।’ ছাত্র নেতা এবার ক্ষিপ্ত হয়ে বললেন, ‘আপনি বেশি বাড়াবাড়ি করছেন, আই উইল সি ইউ।’
গাফ্ফার চৌধুরী ততোধিক উচ্চ কণ্ঠে বললেন, ‘ওকে, ইউ মাইন্ড ইউর বিজনেস।’
এরপর শুনেছি সম্পাদকীয় বিভাগটিকে তিনি আরও স্বাধীন করে দিয়েছেন। যদিও বাংলাদেশে এসে ওই পত্রিকার সঙ্গে তিনি আর যুক্ত থাকেননি।
আজ থেকে ৫০ বছর আগে বাংলাদেশ টেলিভিশনে গল্প থেকে নাটক হতো। বেশ কিছুদিন আমি কিছু বাছাই করা গল্পের নাট্যরূপ দিয়েছি। নাট্যরূপের সঙ্গে একটু উপস্থাপনাও থাকত। গাফ্ফার ভাইয়ের বহু পুরোনো একটি গল্প খুঁজে বের করলাম। হিংসা এবং লোভের চমৎকার একটি গল্প। সেখানে একটি ছোট্ট সাক্ষাৎকার নিয়েছিলাম। নাটকটিও বেশ সাড়া জাগিয়েছিল। এর বহুদিন পর যখন লন্ডনে দেখা হয়, তখন বাঙালিদের দেওয়া এক সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে তিনি বললেন, ‘মামুন আমাকে নাট্যকার বানিয়েছে।’ আমি এত অভিভূত হয়েছিলাম যে আজ অবধি সেটি আমার স্মৃতির পর্দায় রয়ে গেছে। এরপর তিনি ঢাকায় এসেছেন, দেখা হয়েছে, নানান কথাবার্তার মধ্যে তাঁর গল্প নিয়ে তৈরি নাটকের কথা তিনি ভুলতে পারেননি। ২০১২ সালে তাঁর সঙ্গে শেষ দেখা লন্ডনে তিনি নাটক দেখতে এসেছিলেন রবীন্দ্রনাথ ও শেক্সপিয়ারের মধ্যে একটি কাল্পনিক সংলাপ ইংরেজি ভাষায়। স্কটল্যান্ডের এডিনবরায় নাটকটি নিয়ে আমরা ফ্রেঞ্জ ফেস্টিভ্যালে গিয়েছিলাম, ফেরার পথে বাঙালি বন্ধুদের উদ্যোগে ব্রাডি সেন্টারে নাটকটি অভিনীত হয়। নাটক শেষে দর্শকেরা দাঁড়িয়ে সম্মান দেখিয়েছে। এর মধ্যে দেখতে পেলাম গাফ্ফার ভাই বসে আছেন। তাঁর কাছে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই প্রথমে বললেন, ‘দুঃখিত মামুন, আমি দাঁড়াতে পারি না। দাঁড়িয়ে তোমাকে সম্মান দেখাতে পারলাম না।’ প্রত্যুত্তরে আমি বলি, ‘আপনি যে নাটকটি দেখতে এসেছেন, এটাই আমার কাছে পরম সম্মানের।’
পরে বাংলাদেশে এসেছেন, নানা কারণেই আর দেখা হয়নি। তাঁর কলামের একনিষ্ঠ পাঠক ছিলাম আমি। বেশ কটি পত্রিকায় লিখতেন। তাঁর লেখার ভক্ত হওয়ার কারণ বহু ঐতিহাসিক তথ্য থাকত তাতে। যদিও দুর্জনেরা বলত, গাফ্ফার সাহেবের তথ্যের সাক্ষী হচ্ছে মৃত ব্যক্তিরা। কাজেই ওটা চ্যালেঞ্জ করা যাবে না। কিছু কিছু লেখায় অবশ্য বিষয়টি আছে। গাফ্ফার ভাই গণতন্ত্র এবং ডানপন্থায় বিশ্বাস করতেন। ডানপন্থার কথাটি তাঁর লেখায় তেমন একটা আসত না; তবে গণতন্ত্রের বিষয়টি ছিল খুবই উচ্চকিত। জীবনের একটা দীর্ঘ সময় তিনি লন্ডনে কাটিয়েছেন। প্রথম কারণ স্ত্রীর অসুস্থতা, যার চিকিৎসা এ দেশে অসম্ভব ছিল। তিনি চলে যান এবং ফেরার আকাঙ্ক্ষা থাকলেও দীর্ঘ ১৫ বছরের সামরিক শাসনের সময় তাঁর দেশে ফেরার কোনো উপায় ছিল না। যখনই দেখেছেন তাঁর ফেরার অনুকূল পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছে, তখনই তিনি চলে এসেছেন। একবার শুনেছিলাম তাঁর জন্মভূমি নদীবেষ্টিত মনোরম গ্রাম বরিশালের উলানিয়ায় যাবেন, যেখানে তাঁর পূর্বপুরুষদের শত শত বর্ষের স্মৃতি আছে। শেষ পর্যন্ত গিয়েছিলেন।
লন্ডনপ্রবাসী সাংবাদিক-লেখকদের দুটো সুবিধা আছে—একটি বিশাল তথ্যভান্ডার সযত্নে রক্ষিত আছে; দ্বিতীয়ত, স্বাধীনভাবে লেখার সুযোগ। লন্ডনে বসে এত সব কলাম তিনি লিখেছেন, এত সব সাহসী উচ্চারণ তিনি করেছেন, যা স্বদেশে থাকলে হয়তো তিনি করতে পারতেন না। দুহাত ভরে তিনি এই সুযোগ নিয়েছেন। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের পত্রপত্রিকা পাওয়াও সেখানে খুবই সহজ ছিল। আর এর সঙ্গে চলছিল তাঁর স্ত্রীর দুরারোগ্য ব্যাধির চিকিৎসা। জীবিকার তাগিদে তাঁকে প্রতিদিনই লিখতে হতো। এত তথ্য, শব্দের ভান্ডার এবং বাংলাদেশের সঙ্গে তাঁর প্রাত্যহিক যোগাযোগ—সবটা মিলিয়ে তাঁর লেখার মালমসলার কোনো অসুবিধা হতো না। ভিন্নমতাবলম্বীদের প্রতি শ্রদ্ধাজ্ঞাপন করাও তাঁর লেখার একটি বৈশিষ্ট্য ছিল। একটা সময়ে বদরউদ্দিন উমরের সঙ্গে তাঁর কলাম-যুদ্ধ চলত। দুজনেরই কলাম-যুদ্ধ থেকে আমরা প্রচুর শিখতাম। দুজনের কলাম থেকে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নিয়ে আমিও লিখেছি। পৃথিবীর সব দেশেই দেখেছি লেখকেরা নিজের দেশে থাকতে পারেন না। তার নানাবিধ কারণ থাকে। প্রধান কারণ রাজনৈতিক। যাঁরা ক্ষমতায় থাকেন, তাঁদের পছন্দসই লিখতে না পারলে বা বিরোধিতা করলে, সেই লেখকের আর নিজের দেশে থাকা হয় না। নিজ দেশে এই লেখকেরা অনেক নির্যাতন সহ্য করেছেন। জেল খেটে, পুলিশের নিপীড়ন সহ্য করে অনেকেই স্বদেশে থেকে মৃত্যুবরণ করেছেন। আবার কেউ কেউ সুযোগ বুঝে দেশত্যাগ করেছেন। গাফ্ফার ভাইয়ের সৌভাগ্য যে তিনি পঁচাত্তরের আগেই এ দেশ থেকে চলে যেতে পেরেছিলেন। পঁচাত্তরের পরে তাঁর চলে যাওয়া কঠিন হতো। দেশে থাকলে তাঁকে শাসকগোষ্ঠীর অনুগত হয়ে থাকতে হতো। যাঁদের প্রবাসে যাওয়ার সুযোগ নেই, তাঁরা হয় নিপীড়ন সহ্য করে থেকেছেন, না হয় লেখা ছেড়ে দিয়েছেন। ভারতে কোনো না কোনোভাবে লেখকেরা আমাদের চেয়ে বেশি স্বাধীনতা ভোগ করেন। কারণ সেখানে ১৯৪৭ সালের পর একটা গণতান্ত্রিক আবহ সৃষ্টি হয়েছে। সেখানকার লেখকেরা মামলার সম্মুখীন হন, কিন্তু বিচার বিভাগের স্বচ্ছতা ও স্বাধীনতার ফলে তাঁরা বেরিয়ে আসেন। হয়তো আবারও মামলার সম্মুখীন হন। গাফ্ফার ভাই অনেক কাগজে কাজ করেছেন। প্রধানত সম্পাদকীয় বিভাগে এবং সেই সঙ্গে লেখা কলাম। তাঁদের যৌবনে অনেক সমমনা সাংবাদিক, লেখক ও কবি পেয়েছিলেন, তাঁরা সবাই অকুতোভয় এবং মুক্তহস্তে লিখতেন। একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের সময় আলবদর বাহিনী তাঁদের অনেককে ধরে নিয়ে নৃশংসভাবে হত্যা করে। সে যাত্রায় তিনি বেঁচে গিয়েছিলেন প্রবাসে থাকার কারণে। অবশ্য প্রবাসে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে তিনি প্রচুর কাজ করতে পেরেছিলেন। তবে আগেই বলেছি, তাঁর কার্যক্ষেত্র বারবার পরিবর্তন হয়েছে। এই পরিবর্তনের কারণ বৈষয়িক নয়, মতপার্থক্য এবং মতপার্থক্যে তাঁর অবিচল থাকার ফলে।
আমার খুব বিস্ময় হয়, তিনি এত লেখালেখির পরেও পড়ার সময় পেতেন কীভাবে? তাঁর বহু কলামে রবীন্দ্রনাথ, নজরুল, জীবনানন্দসহ অনেক দেশি ও বিদেশি কবির কবিতার উল্লেখ থাকত। তাঁর লেখায় একটা বড় বৈশিষ্ট্য ছিল একধরনের আশাবাদ। তিনি বারবার শুভবুদ্ধির জয়ের আশা করতেন। যদিও সে আশা অনেকাংশেই নিরাশায় পরিণত হয়েছে। পৃথিবী ক্রমাগত জটিল হয়ে পড়ছে। এই পৃথিবীকে ব্যাখ্যা করার জন্য শক্তিশালী লেখক ও চিন্তাবিদের প্রয়োজন। সেই সঙ্গে আন্তর্জাতিক একটা দৃষ্টিভঙ্গিরও প্রয়োজন আছে। গণতন্ত্রের মাতৃভূমি খোদ ইংল্যান্ডে বসে তিনি গণতন্ত্রের সর্বনাশ যেমন দেখেছেন, তেমনি পুঁজিবাদের কুৎসিত চেহারাটাও দেখেছেন। সেসব নিয়ে ছোটখাটো আলোচনা প্রায়ই করতেন। কিন্তু আমরা আশা করতাম যে তিনি একটা বিপুল সম্ভার নিয়ে কখনো আমাদের সামনে হাজির হবেন। আবার উপন্যাস, ছোটগল্প, কবিতা লিখবেন। কিন্তু একদিকে জীবনের প্রাত্যহিকতা, অন্যদিকে জীবিকার প্রচণ্ড তাগিদ—এই দুটো মিলিয়ে তিনি স্থিত হতে পারেননি। আসলে মানুষের জীবনটাই একটি অসমাপ্ত নাটকের মতো। হয়তো অনেক কথা বলার থাকে, অনেক দৃশ্যের অবতারণার কথা থাকে, কিন্তু জীবনের সীমাবদ্ধতায় সেসব হয়ে ওঠে না। যতটুকু তিনি দিয়েছেন তা নিয়েই আমরা সন্তুষ্ট থাকি, সেখানে থেকেই আলো ছড়াক। যে আলো তিনি দীর্ঘ ৬০-৭০ বছরে ছড়িয়েছেন তার দীপ্তি বহুকাল চলবে।
লেখক: নাট্যব্যক্তিত্ব

গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।
২০ দিন আগে
‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর...
১২ জুন ২০২৫
ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।
১৯ মে ২০২৫
আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
০৮ মে ২০২৫বাসস, ঢাকা

গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।
আজ সোমবার বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের ট্রাইব্যুনাল-১-এ মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা (আইও) মো. আলমগীরের জেরা শুরু করেন রাষ্ট্র নিযুক্ত আইনজীবী আমীর হোসেন। আইনজীবী আমীর হোসেন পলাতক আসামি শেখ হাসিনা ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের পক্ষে শুনানি করছেন। এর আগে গত মঙ্গলবার তদন্তকারী কর্মকর্তা মো. আলমগীরের সাক্ষ্য গ্রহণ সম্পন্ন হয়।
এই মামলার শুনানিতে এর আগে গণ-অভ্যুত্থানের অন্যতম প্রতীক শহীদ আবু সাঈদের বাবাসহ স্বজনহারা পরিবারের একাধিক সদস্য সাক্ষ্য দিয়েছেন। এ ছাড়া মামলার গুরুত্বপূর্ণ ‘স্টার উইটনেস’ হিসেবে সাক্ষ্য দেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক এবং জুলাই আন্দোলনের অন্যতম নেতৃত্বদানকারী নাহিদ ইসলাম এবং দৈনিক আমার দেশ পত্রিকার সম্পাদক ড. মাহমুদুর রহমান।
গত বছরের জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার আন্দোলন দমনে আওয়ামী লীগ সরকার, তাদের দলীয় ক্যাডার ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর একটি অংশ গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটিত করে বলে অভিযোগ ওঠে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে শেখ হাসিনা, তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল এবং তৎকালীন আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের বিরুদ্ধে গত ১০ জুলাই অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দেন ট্রাইব্যুনাল-১।
পরবর্তীকালে, এই মামলার অন্যতম আসামি সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন দোষ স্বীকার করে ঘটনার সত্যতা উদ্ঘাটনে রাজসাক্ষী (অ্যাপ্রোভার) হওয়ার জন্য ট্রাইব্যুনালে আবেদন করেন। ট্রাইব্যুনাল তাঁর আবেদন মঞ্জুর করলে তিনি রাজসাক্ষী হিসেবে এই মামলায় সাক্ষ্য দেন।
মামলার প্রসিকিউশন পক্ষে শুনানি করছেন চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম, প্রসিকিউটর মিজানুল ইসলাম এবং গাজী এসএইচ তামিম। শুনানিতে তাঁদের সঙ্গে অপর প্রসিকিউটররাও উপস্থিত ছিলেন।
অন্যদিকে, এই মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে রাজসাক্ষী হওয়া সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের পক্ষে আছেন আইনজীবী যায়েদ বিন আমজাদ।
মানবতাবিরোধী অপরাধের এই মামলা ছাড়াও ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে আরও দুটি মামলা বিচারাধীন। এর মধ্যে একটি মামলায় আওয়ামী লীগের সাড়ে ১৫ বছরের শাসনামলে সংঘটিত গুম-খুনের ঘটনায় তাঁকে আসামি করা হয়েছে। অন্য মামলাটি হলো রাজধানীর মতিঝিলের শাপলা চত্বরে হেফাজতে ইসলামের সমাবেশে হত্যাকাণ্ড নিয়ে। এই তিনটি মামলার বিচারকাজই বর্তমানে দুটি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে চলমান।

গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।
আজ সোমবার বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের ট্রাইব্যুনাল-১-এ মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা (আইও) মো. আলমগীরের জেরা শুরু করেন রাষ্ট্র নিযুক্ত আইনজীবী আমীর হোসেন। আইনজীবী আমীর হোসেন পলাতক আসামি শেখ হাসিনা ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের পক্ষে শুনানি করছেন। এর আগে গত মঙ্গলবার তদন্তকারী কর্মকর্তা মো. আলমগীরের সাক্ষ্য গ্রহণ সম্পন্ন হয়।
এই মামলার শুনানিতে এর আগে গণ-অভ্যুত্থানের অন্যতম প্রতীক শহীদ আবু সাঈদের বাবাসহ স্বজনহারা পরিবারের একাধিক সদস্য সাক্ষ্য দিয়েছেন। এ ছাড়া মামলার গুরুত্বপূর্ণ ‘স্টার উইটনেস’ হিসেবে সাক্ষ্য দেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক এবং জুলাই আন্দোলনের অন্যতম নেতৃত্বদানকারী নাহিদ ইসলাম এবং দৈনিক আমার দেশ পত্রিকার সম্পাদক ড. মাহমুদুর রহমান।
গত বছরের জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার আন্দোলন দমনে আওয়ামী লীগ সরকার, তাদের দলীয় ক্যাডার ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর একটি অংশ গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটিত করে বলে অভিযোগ ওঠে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে শেখ হাসিনা, তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল এবং তৎকালীন আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের বিরুদ্ধে গত ১০ জুলাই অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দেন ট্রাইব্যুনাল-১।
পরবর্তীকালে, এই মামলার অন্যতম আসামি সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন দোষ স্বীকার করে ঘটনার সত্যতা উদ্ঘাটনে রাজসাক্ষী (অ্যাপ্রোভার) হওয়ার জন্য ট্রাইব্যুনালে আবেদন করেন। ট্রাইব্যুনাল তাঁর আবেদন মঞ্জুর করলে তিনি রাজসাক্ষী হিসেবে এই মামলায় সাক্ষ্য দেন।
মামলার প্রসিকিউশন পক্ষে শুনানি করছেন চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম, প্রসিকিউটর মিজানুল ইসলাম এবং গাজী এসএইচ তামিম। শুনানিতে তাঁদের সঙ্গে অপর প্রসিকিউটররাও উপস্থিত ছিলেন।
অন্যদিকে, এই মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে রাজসাক্ষী হওয়া সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের পক্ষে আছেন আইনজীবী যায়েদ বিন আমজাদ।
মানবতাবিরোধী অপরাধের এই মামলা ছাড়াও ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে আরও দুটি মামলা বিচারাধীন। এর মধ্যে একটি মামলায় আওয়ামী লীগের সাড়ে ১৫ বছরের শাসনামলে সংঘটিত গুম-খুনের ঘটনায় তাঁকে আসামি করা হয়েছে। অন্য মামলাটি হলো রাজধানীর মতিঝিলের শাপলা চত্বরে হেফাজতে ইসলামের সমাবেশে হত্যাকাণ্ড নিয়ে। এই তিনটি মামলার বিচারকাজই বর্তমানে দুটি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে চলমান।

আমাদের আবদুল গাফ্ফার চৌধুরী গত হয়েছেন এক বছর আগে ১৯ মে ২০২২। তিনি গত হয়েছেন বটে, কিন্তু বিগত হননি। যত দিন বাংলাদেশ থাকবে, বাংলা ভাষা থাকবে, তত দিন তিনি একুশের গানে বেঁচে থাকবেন। কাজেই তাঁর বিগত হওয়ার আশঙ্কা নেই। ভাষা আন্দোলনের সময় তাঁর বয়স ১৮ বছর।
১৮ মে ২০২৩
‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর...
১২ জুন ২০২৫
ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।
১৯ মে ২০২৫
আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
০৮ মে ২০২৫
‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর সঙ্গে।
মাছের সুষ্ঠু প্রজনন, উৎপাদন, মৎস্যসম্পদ সংরক্ষণ ও টেকসই মৎস্য আহরণের জন্য সমুদ্রে সব ধরনের মাছ শিকার ৫৮ দিনের নিষেধাজ্ঞা গতকাল বুধবার দিবাগত মধ্যরাতে শেষ হয়েছে। তাই গতকাল দিনভর ছিল উপকূলের জেলেপল্লিগুলোতে ব্যস্ততা। অনেকে দেখে নিচ্ছিলেন ট্রলার ঠিকঠাক আছে কি না, কেউ জালের ছেঁড়া অংশ সেলাই করছিলেন, কেউ আবার প্রয়োজনীয় খাদ্যসামগ্রীসহ অন্য সরঞ্জাম গুছিয়ে নিচ্ছিলেন।
বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র এবং ফকিরহাট উপ-মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের ঘাটে গতকাল শত শত ট্রলার নোঙর করে রাখা ছিল। জেলেদের উপস্থিতিতে ঘাট এলাকা সরগরম হয়ে ওঠে। ফকিরহাটের মুদি-মনিহারি দোকানগুলোতে জেলেরা কেনাকাটা করতে ভিড় জমান। ফকিরহাট এলাকার বিসমিল্লাহ ট্রলারের মাঝি রহিম মিয়া বলেন, ‘সাগরে মাছ শিকারে যেতে সকল প্রস্তুতি নিয়েছি। নিষেধাজ্ঞার সময় শেষ হওয়ামাত্রই সাগরে নামব।’
জেলে নুরসাইদ ও ফোরকান মিয়া বলেন, ‘নিষেধাজ্ঞার সময় পরিবার-পরিজন নিয়ে বেশ কষ্টে কেটেছে। ওই সময়ে বেশ টাকা ঋণ করেছি। এখন সাগরে যাব। দেখি আল্লাহ ঋণ পরিশোধ করতে দেন কি না।’
নোয়াখালীর হাতিয়ার সূর্যমুখী, বাংলাবাজার, কাজিরবাজার, পাইতান মার্কেট চেয়ারম্যান ঘাটসহ বেশ কয়েকটি ঘাটে গতকাল জেলেদের ব্যস্ত সময় পার করতে দেখা গেছে। অনেকে নৌকায় জাল তুলছিলেন, আবার অনেকে জ্বালানি তেল মজুতসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্রী ট্রলারে নিয়ে যান। সূর্যমুখী ঘাটের এমভি মায়ের দোয়া ট্রলারের মাঝি জাফর উল্যা বলেন, ‘সাগরে ৮-১০ দিন থাকার প্রস্তুতি নিচ্ছি। সন্ধ্যায় সাগরের উদ্দেশে রওনা দেব।’
সূর্যমুখী ঘাট জেলে সমিতির সভাপতি জবিয়ল হক বলেন, ‘সাগরে নামতে প্রস্তুত নোয়াখালীর হাতিয়ার ২০টি ঘাটের লক্ষাধিক জেলে। এসব ঘাটে প্রায় ১০ হাজার ছোট-বড় ফিশিং ট্রলার রয়েছে। প্রতি ট্রলারে ১০ জন হলেও লক্ষাধিক জেলে এই মাছ ধরার সঙ্গে জড়িত। তাঁদের সবাই গত ৫৮ দিন তীরে বেকার ছিলেন।’
পিরোজপুরের ইন্দুরকানি উপজেলার পাড়েরহাট মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের পার্শ্ববর্তী এলাকার জেলেরা গতকাল দিনভর সাগরে যাওয়ার প্রস্তুতি নেন। এ ছাড়া মঠবাড়িয়া উপজেলার সাপলেজা, খেতাচিড়া, বড়মাছুয়া, ছোটমাছুয়া, ভান্ডারিয়া উপজেলার চরখালী, হেতালিয়া, কাউখালী উপজেলার সোনাকুর এলাকার জেলেরা, সদর উপজেলা এবং নেছারাবাদ উপজেলার বিভিন্ন এলাকার জেলেরা প্রস্তুতি শেষে গত রাতে বঙ্গোপসাগরে রওনা হন।
কয়েক দিন ধরে কক্সবাজার উপকূলের জেলেপল্লিগুলোতে নৌকা, জাল মেরামতসহ বিভিন্ন প্রস্তুতি সেরেছেন জেলেরা। গতকাল মেরিন ড্রাইভের টেকনাফের খুরেরমুখ, সাবরাং ও বাহারছড়া এলাকায় দেখা গেছে, সড়কে দাঁড় করিয়ে রাখা সারি সারি ট্রলারে জাল ও রসদ তোলেন জেলেরা।
একটি ট্রলারের মাঝি আবু তাহের জানান, এবার ভারতের সঙ্গে মিল রেখে নিষেধাজ্ঞা দেওয়ায় কেউ সাগরে মাছ শিকারে নামেনি। এতে উপকূলের কাছাকাছি সাগরে জাল ফেললেই ইলিশসহ অন্য মাছ পাওয়া যাবে বলে আশাবাদী তিনি।
কক্সবাজার শহরের ফিশারি ঘাটের মৎস্য ব্যবসায়ী সমিতির পরিচালক জুলফিকার আলী জানান, কক্সবাজার উপকূলে ছোট-বড় ৭ হাজারের মতো যান্ত্রিক ট্রলার রয়েছে। এসব ট্রলারে প্রায় এক লাখ জেলে ও শ্রমিক নিয়োজিত রয়েছেন। অধিকাংশ ট্রলার নিষেধাজ্ঞা ওঠার সঙ্গে সঙ্গে সাগরে রওনা হবে।
[প্রতিবেদন তৈরিতে তথ্য দিয়ে সহায়তা করেছেন বরগুনা ও আমতলী, পিরোজপুর, কক্সবাজার এবং হাতিয়া প্রতিনিধি]

‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর সঙ্গে।
মাছের সুষ্ঠু প্রজনন, উৎপাদন, মৎস্যসম্পদ সংরক্ষণ ও টেকসই মৎস্য আহরণের জন্য সমুদ্রে সব ধরনের মাছ শিকার ৫৮ দিনের নিষেধাজ্ঞা গতকাল বুধবার দিবাগত মধ্যরাতে শেষ হয়েছে। তাই গতকাল দিনভর ছিল উপকূলের জেলেপল্লিগুলোতে ব্যস্ততা। অনেকে দেখে নিচ্ছিলেন ট্রলার ঠিকঠাক আছে কি না, কেউ জালের ছেঁড়া অংশ সেলাই করছিলেন, কেউ আবার প্রয়োজনীয় খাদ্যসামগ্রীসহ অন্য সরঞ্জাম গুছিয়ে নিচ্ছিলেন।
বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র এবং ফকিরহাট উপ-মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের ঘাটে গতকাল শত শত ট্রলার নোঙর করে রাখা ছিল। জেলেদের উপস্থিতিতে ঘাট এলাকা সরগরম হয়ে ওঠে। ফকিরহাটের মুদি-মনিহারি দোকানগুলোতে জেলেরা কেনাকাটা করতে ভিড় জমান। ফকিরহাট এলাকার বিসমিল্লাহ ট্রলারের মাঝি রহিম মিয়া বলেন, ‘সাগরে মাছ শিকারে যেতে সকল প্রস্তুতি নিয়েছি। নিষেধাজ্ঞার সময় শেষ হওয়ামাত্রই সাগরে নামব।’
জেলে নুরসাইদ ও ফোরকান মিয়া বলেন, ‘নিষেধাজ্ঞার সময় পরিবার-পরিজন নিয়ে বেশ কষ্টে কেটেছে। ওই সময়ে বেশ টাকা ঋণ করেছি। এখন সাগরে যাব। দেখি আল্লাহ ঋণ পরিশোধ করতে দেন কি না।’
নোয়াখালীর হাতিয়ার সূর্যমুখী, বাংলাবাজার, কাজিরবাজার, পাইতান মার্কেট চেয়ারম্যান ঘাটসহ বেশ কয়েকটি ঘাটে গতকাল জেলেদের ব্যস্ত সময় পার করতে দেখা গেছে। অনেকে নৌকায় জাল তুলছিলেন, আবার অনেকে জ্বালানি তেল মজুতসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্রী ট্রলারে নিয়ে যান। সূর্যমুখী ঘাটের এমভি মায়ের দোয়া ট্রলারের মাঝি জাফর উল্যা বলেন, ‘সাগরে ৮-১০ দিন থাকার প্রস্তুতি নিচ্ছি। সন্ধ্যায় সাগরের উদ্দেশে রওনা দেব।’
সূর্যমুখী ঘাট জেলে সমিতির সভাপতি জবিয়ল হক বলেন, ‘সাগরে নামতে প্রস্তুত নোয়াখালীর হাতিয়ার ২০টি ঘাটের লক্ষাধিক জেলে। এসব ঘাটে প্রায় ১০ হাজার ছোট-বড় ফিশিং ট্রলার রয়েছে। প্রতি ট্রলারে ১০ জন হলেও লক্ষাধিক জেলে এই মাছ ধরার সঙ্গে জড়িত। তাঁদের সবাই গত ৫৮ দিন তীরে বেকার ছিলেন।’
পিরোজপুরের ইন্দুরকানি উপজেলার পাড়েরহাট মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের পার্শ্ববর্তী এলাকার জেলেরা গতকাল দিনভর সাগরে যাওয়ার প্রস্তুতি নেন। এ ছাড়া মঠবাড়িয়া উপজেলার সাপলেজা, খেতাচিড়া, বড়মাছুয়া, ছোটমাছুয়া, ভান্ডারিয়া উপজেলার চরখালী, হেতালিয়া, কাউখালী উপজেলার সোনাকুর এলাকার জেলেরা, সদর উপজেলা এবং নেছারাবাদ উপজেলার বিভিন্ন এলাকার জেলেরা প্রস্তুতি শেষে গত রাতে বঙ্গোপসাগরে রওনা হন।
কয়েক দিন ধরে কক্সবাজার উপকূলের জেলেপল্লিগুলোতে নৌকা, জাল মেরামতসহ বিভিন্ন প্রস্তুতি সেরেছেন জেলেরা। গতকাল মেরিন ড্রাইভের টেকনাফের খুরেরমুখ, সাবরাং ও বাহারছড়া এলাকায় দেখা গেছে, সড়কে দাঁড় করিয়ে রাখা সারি সারি ট্রলারে জাল ও রসদ তোলেন জেলেরা।
একটি ট্রলারের মাঝি আবু তাহের জানান, এবার ভারতের সঙ্গে মিল রেখে নিষেধাজ্ঞা দেওয়ায় কেউ সাগরে মাছ শিকারে নামেনি। এতে উপকূলের কাছাকাছি সাগরে জাল ফেললেই ইলিশসহ অন্য মাছ পাওয়া যাবে বলে আশাবাদী তিনি।
কক্সবাজার শহরের ফিশারি ঘাটের মৎস্য ব্যবসায়ী সমিতির পরিচালক জুলফিকার আলী জানান, কক্সবাজার উপকূলে ছোট-বড় ৭ হাজারের মতো যান্ত্রিক ট্রলার রয়েছে। এসব ট্রলারে প্রায় এক লাখ জেলে ও শ্রমিক নিয়োজিত রয়েছেন। অধিকাংশ ট্রলার নিষেধাজ্ঞা ওঠার সঙ্গে সঙ্গে সাগরে রওনা হবে।
[প্রতিবেদন তৈরিতে তথ্য দিয়ে সহায়তা করেছেন বরগুনা ও আমতলী, পিরোজপুর, কক্সবাজার এবং হাতিয়া প্রতিনিধি]

আমাদের আবদুল গাফ্ফার চৌধুরী গত হয়েছেন এক বছর আগে ১৯ মে ২০২২। তিনি গত হয়েছেন বটে, কিন্তু বিগত হননি। যত দিন বাংলাদেশ থাকবে, বাংলা ভাষা থাকবে, তত দিন তিনি একুশের গানে বেঁচে থাকবেন। কাজেই তাঁর বিগত হওয়ার আশঙ্কা নেই। ভাষা আন্দোলনের সময় তাঁর বয়স ১৮ বছর।
১৮ মে ২০২৩
গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।
২০ দিন আগে
ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।
১৯ মে ২০২৫
আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
০৮ মে ২০২৫নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা

ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।
ভারতের নিষেধাজ্ঞার এক দিন পরই গত রোববার লালমনিরহাটের বুড়িমারী ও যশোরের বেনাপোল স্থলবন্দরসহ বিভিন্ন বন্দরে পণ্যের ট্রাক আটকে দেয় ভারত। সংশ্লিষ্টদের সূত্রে জানা যায়, রোববার ভারতের আমদানি বিধিনিষেধের কারণে বুড়িমারী সীমান্তে প্রাণের ১৭ ট্রাক খাদ্যপণ্য আটকে যায়। এ ছাড়া বেনাপোলে ৩৬টি পোশাক বোঝাই ট্রাকসহ অন্যান্য পণ্যের শতাধিক ট্রাক ঢুকতে পারেনি।
গতকাল সোমবার পর্যন্ত বুড়িমারী থেকে প্রাণের পণ্যবোঝাই ট্রাকগুলোর অর্ধেকের বেশি ফেরত নিয়ে আসে প্রতিষ্ঠানটি। এ ছাড়া বেনাপোলে পোর্টের ভেতরে ২৪টি ট্রাক ছাড়া বাকিগুলো ফেরত চলে যায়।
বেনাপোল বন্দর সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট স্টাফ অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মো. সাজেদুর রহমান গতকাল সোমবার আজকের পত্রিকাকে বলেন, গতকাল পোর্টের ভেতর ও বাইরে শতাধিক ট্রাক দাঁড়িয়ে ছিল। আজ পোর্টের ভেতরের ২৪টি ছাড়া বাকিগুলো ফেরত নিয়ে গেছেন মালিকেরা। এখন পর্যন্ত মনে হচ্ছে, পোর্টের ভেতরের ট্রাকগুলোও ফেরত নিতে হবে।
জানতে চাইলে প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের পরিচালক (বিপণন) কামরুজ্জামান কামাল আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমাদের হাতে ৬ মিলিয়ন ডলারের ক্রয় আদেশ রয়েছে। তার মধ্য থেকে রোববার বুড়িমারী দিয়ে ১৭ ট্রাকবোঝাই পণ্য পাঠিয়েছিলাম। কিন্তু সেগুলো ঢুকতে পারেনি। ট্রাকগুলো ফেরত আনা হচ্ছে। নতুন করে কাগজপত্র তৈরি করে অন্য পথ দিয়ে পণ্য পাঠাতে হবে।’
বেনাপোল স্থলবন্দর সূত্রে জানা যায়, ওই ২৪টি ট্রাক পোর্টের ভেতরে থাকায় এখনো তারা ভারতে প্রবেশের অপেক্ষায় রয়েছে। তাদের আশা, যেহেতু নিষেধাজ্ঞার আগে এই পণ্যগুলোর এলসি করা হয়েছিল, তাই এগুলো প্রবেশে অনুমতি পাবে। তবে এটি নির্ভর করবে বাংলাদেশ সরকারের আলোচনার ওপর।
এমন পরিস্থিতিতে সরকারের সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় রয়েছেন ব্যবসায়ীরা। ইতিমধ্যে অনেক রপ্তানিকারক রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) সঙ্গে আলোচনা করে সরকারের সহযোগিতা চেয়েছে।
স্থলবন্দরের মাধ্যমে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জসমূহ এবং আশু করণীয় নির্ধারণে বাণিজ্যসচিবের সভাপতিত্বে আজ মঙ্গলবার আন্তমন্ত্রণালয়ের সভা ডেকেছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, স্থলবন্দরের মাধ্যমে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জসমূহ এবং আশু করণীয় নির্ধারণে বাণিজ্যসচিবের সভাপতিত্বে বিকেল ৪টায় আন্তমন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে এই সভা অনুষ্ঠিত হবে।
সভায় নৌপরিবহন ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশন, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড, বাংলাদেশ স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষ, রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো, জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের প্রতিনিধিদের উপস্থিত থাকতে বলা হয়েছে। এ ছাড়া ব্যবসায়ী প্রতিনিধি হিসেবে এফবিসিসিআই, বিজিএমইএ, ভারত-বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির প্রতিনিধিদের উপস্থিতির জন্য আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে।
ভারতের শিল্প ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয় গত শনিবার হঠাৎ এক বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে স্থলবন্দর দিয়ে বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক আমদানি নিষিদ্ধ করে। শুধু ভারতের নবসেবা ও কলকাতা সমুদ্রবন্দর ব্যবহার করে দেশটির আমদানিকারকেরা বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক আমদানি করতে পারবেন বলে ওই বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়। এ ছাড়া বাংলাদেশ থেকে ভারতের আসাম, মেঘালয়, ত্রিপুরা ও মিজোরাম, পশ্চিমবঙ্গের চ্যাংড়াবান্দা ও ফুলবাড়ী শুল্ক স্টেশন দিয়ে ফল, ফলের স্বাদযুক্ত পানীয়, কোমল পানীয়, প্রক্রিয়াজাত খাদ্য, প্লাস্টিক পণ্য, সুতা, সুতার উপজাত, আসবাব রপ্তানিও নিষিদ্ধ করা হয় ওই বিজ্ঞপ্তিতে।
আমদানি ও রপ্তানিসংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা জানান, দেশের ২৪টি বন্দরের মধ্যে ১৬টি বন্দর দিয়ে ভারতের সঙ্গে আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য হয়ে থাকে। তবে যোগাযোগব্যবস্থা সহজ হওয়ায় বেনাপোল ও ভারতের পেট্রাপোল বন্দর দিয়ে সবচেয়ে বেশি আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য হয়। এর পরিমাণ ৮০ শতাংশ। বেনাপোল বন্দর দিয়ে প্রতিদিন ভারতে ২৫০ থেকে ৩০০ ট্রাকে বিভিন্ন ধরনের পণ্য রপ্তানি হয়। এর মধ্যে শতাধিক ট্রাক পণ্য থাকে তৈরি পোশাক।
এর আগে গত ৮ এপ্রিল বাংলাদেশের জন্য ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা বাতিল করে ভারত। ফলে ভারতের বিমানবন্দর ব্যবহার করে তৃতীয় কোনো দেশে তৈরি পোশাক রপ্তানি করতে পারছে না বাংলাদেশ। অন্যদিকে প্রায় এক মাস আগে ভারত থেকে বেনাপোল, ভোমরা, সোনামসজিদ, বাংলাবান্ধা, বুড়িমারী স্থলবন্দর দিয়ে সুতা আমদানির সুযোগ বন্ধ করে দেয় বাংলাদেশের জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)।
সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) বিশেষ ফেলো মোস্তাফিজুর রহমানের মতে, এই পাল্টাপাল্টি পদক্ষেপে তুলনামূলকভাবে বেশি নেতিবাচক প্রভাব পড়বে বাংলাদেশের ওপর। তাই ভারতের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য ঘাটতি কমানোর চেষ্টা অব্যাহত রাখাই সরকারের উচিত বলে মনে করছেন তিনি।
মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, আলোচনার মাধ্যমে বাংলাদেশ এবং ভারতের বিরোধপূর্ণ বিষয়সমূহ মিটিয়ে ফেলতে হবে এবং দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য সম্পর্কের ক্ষেত্রে ভারসাম্য প্রতিষ্ঠা করতে হবে। এটাই হবে উভয় দেশের জন্য কল্যাণকর।

ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।
ভারতের নিষেধাজ্ঞার এক দিন পরই গত রোববার লালমনিরহাটের বুড়িমারী ও যশোরের বেনাপোল স্থলবন্দরসহ বিভিন্ন বন্দরে পণ্যের ট্রাক আটকে দেয় ভারত। সংশ্লিষ্টদের সূত্রে জানা যায়, রোববার ভারতের আমদানি বিধিনিষেধের কারণে বুড়িমারী সীমান্তে প্রাণের ১৭ ট্রাক খাদ্যপণ্য আটকে যায়। এ ছাড়া বেনাপোলে ৩৬টি পোশাক বোঝাই ট্রাকসহ অন্যান্য পণ্যের শতাধিক ট্রাক ঢুকতে পারেনি।
গতকাল সোমবার পর্যন্ত বুড়িমারী থেকে প্রাণের পণ্যবোঝাই ট্রাকগুলোর অর্ধেকের বেশি ফেরত নিয়ে আসে প্রতিষ্ঠানটি। এ ছাড়া বেনাপোলে পোর্টের ভেতরে ২৪টি ট্রাক ছাড়া বাকিগুলো ফেরত চলে যায়।
বেনাপোল বন্দর সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট স্টাফ অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মো. সাজেদুর রহমান গতকাল সোমবার আজকের পত্রিকাকে বলেন, গতকাল পোর্টের ভেতর ও বাইরে শতাধিক ট্রাক দাঁড়িয়ে ছিল। আজ পোর্টের ভেতরের ২৪টি ছাড়া বাকিগুলো ফেরত নিয়ে গেছেন মালিকেরা। এখন পর্যন্ত মনে হচ্ছে, পোর্টের ভেতরের ট্রাকগুলোও ফেরত নিতে হবে।
জানতে চাইলে প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের পরিচালক (বিপণন) কামরুজ্জামান কামাল আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমাদের হাতে ৬ মিলিয়ন ডলারের ক্রয় আদেশ রয়েছে। তার মধ্য থেকে রোববার বুড়িমারী দিয়ে ১৭ ট্রাকবোঝাই পণ্য পাঠিয়েছিলাম। কিন্তু সেগুলো ঢুকতে পারেনি। ট্রাকগুলো ফেরত আনা হচ্ছে। নতুন করে কাগজপত্র তৈরি করে অন্য পথ দিয়ে পণ্য পাঠাতে হবে।’
বেনাপোল স্থলবন্দর সূত্রে জানা যায়, ওই ২৪টি ট্রাক পোর্টের ভেতরে থাকায় এখনো তারা ভারতে প্রবেশের অপেক্ষায় রয়েছে। তাদের আশা, যেহেতু নিষেধাজ্ঞার আগে এই পণ্যগুলোর এলসি করা হয়েছিল, তাই এগুলো প্রবেশে অনুমতি পাবে। তবে এটি নির্ভর করবে বাংলাদেশ সরকারের আলোচনার ওপর।
এমন পরিস্থিতিতে সরকারের সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় রয়েছেন ব্যবসায়ীরা। ইতিমধ্যে অনেক রপ্তানিকারক রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) সঙ্গে আলোচনা করে সরকারের সহযোগিতা চেয়েছে।
স্থলবন্দরের মাধ্যমে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জসমূহ এবং আশু করণীয় নির্ধারণে বাণিজ্যসচিবের সভাপতিত্বে আজ মঙ্গলবার আন্তমন্ত্রণালয়ের সভা ডেকেছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, স্থলবন্দরের মাধ্যমে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জসমূহ এবং আশু করণীয় নির্ধারণে বাণিজ্যসচিবের সভাপতিত্বে বিকেল ৪টায় আন্তমন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে এই সভা অনুষ্ঠিত হবে।
সভায় নৌপরিবহন ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশন, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড, বাংলাদেশ স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষ, রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো, জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের প্রতিনিধিদের উপস্থিত থাকতে বলা হয়েছে। এ ছাড়া ব্যবসায়ী প্রতিনিধি হিসেবে এফবিসিসিআই, বিজিএমইএ, ভারত-বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির প্রতিনিধিদের উপস্থিতির জন্য আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে।
ভারতের শিল্প ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয় গত শনিবার হঠাৎ এক বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে স্থলবন্দর দিয়ে বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক আমদানি নিষিদ্ধ করে। শুধু ভারতের নবসেবা ও কলকাতা সমুদ্রবন্দর ব্যবহার করে দেশটির আমদানিকারকেরা বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক আমদানি করতে পারবেন বলে ওই বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়। এ ছাড়া বাংলাদেশ থেকে ভারতের আসাম, মেঘালয়, ত্রিপুরা ও মিজোরাম, পশ্চিমবঙ্গের চ্যাংড়াবান্দা ও ফুলবাড়ী শুল্ক স্টেশন দিয়ে ফল, ফলের স্বাদযুক্ত পানীয়, কোমল পানীয়, প্রক্রিয়াজাত খাদ্য, প্লাস্টিক পণ্য, সুতা, সুতার উপজাত, আসবাব রপ্তানিও নিষিদ্ধ করা হয় ওই বিজ্ঞপ্তিতে।
আমদানি ও রপ্তানিসংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা জানান, দেশের ২৪টি বন্দরের মধ্যে ১৬টি বন্দর দিয়ে ভারতের সঙ্গে আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য হয়ে থাকে। তবে যোগাযোগব্যবস্থা সহজ হওয়ায় বেনাপোল ও ভারতের পেট্রাপোল বন্দর দিয়ে সবচেয়ে বেশি আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য হয়। এর পরিমাণ ৮০ শতাংশ। বেনাপোল বন্দর দিয়ে প্রতিদিন ভারতে ২৫০ থেকে ৩০০ ট্রাকে বিভিন্ন ধরনের পণ্য রপ্তানি হয়। এর মধ্যে শতাধিক ট্রাক পণ্য থাকে তৈরি পোশাক।
এর আগে গত ৮ এপ্রিল বাংলাদেশের জন্য ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা বাতিল করে ভারত। ফলে ভারতের বিমানবন্দর ব্যবহার করে তৃতীয় কোনো দেশে তৈরি পোশাক রপ্তানি করতে পারছে না বাংলাদেশ। অন্যদিকে প্রায় এক মাস আগে ভারত থেকে বেনাপোল, ভোমরা, সোনামসজিদ, বাংলাবান্ধা, বুড়িমারী স্থলবন্দর দিয়ে সুতা আমদানির সুযোগ বন্ধ করে দেয় বাংলাদেশের জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)।
সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) বিশেষ ফেলো মোস্তাফিজুর রহমানের মতে, এই পাল্টাপাল্টি পদক্ষেপে তুলনামূলকভাবে বেশি নেতিবাচক প্রভাব পড়বে বাংলাদেশের ওপর। তাই ভারতের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য ঘাটতি কমানোর চেষ্টা অব্যাহত রাখাই সরকারের উচিত বলে মনে করছেন তিনি।
মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, আলোচনার মাধ্যমে বাংলাদেশ এবং ভারতের বিরোধপূর্ণ বিষয়সমূহ মিটিয়ে ফেলতে হবে এবং দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য সম্পর্কের ক্ষেত্রে ভারসাম্য প্রতিষ্ঠা করতে হবে। এটাই হবে উভয় দেশের জন্য কল্যাণকর।

আমাদের আবদুল গাফ্ফার চৌধুরী গত হয়েছেন এক বছর আগে ১৯ মে ২০২২। তিনি গত হয়েছেন বটে, কিন্তু বিগত হননি। যত দিন বাংলাদেশ থাকবে, বাংলা ভাষা থাকবে, তত দিন তিনি একুশের গানে বেঁচে থাকবেন। কাজেই তাঁর বিগত হওয়ার আশঙ্কা নেই। ভাষা আন্দোলনের সময় তাঁর বয়স ১৮ বছর।
১৮ মে ২০২৩
গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।
২০ দিন আগে
‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর...
১২ জুন ২০২৫
আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
০৮ মে ২০২৫
আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
১৮৯৮ সালে ভারতের উত্তর প্রদেশের একটি ধূলিধূসর টিলা খুঁড়ে পাওয়া মূল্যবান এই রত্নগুলো এক শতাব্দীর বেশি সময় ধরে একটি বেসরকারি ব্রিটিশ সংগ্রহাগারে প্রায় দৃষ্টিচক্ষুর আড়ালে ছিল। এখন যেহেতু রত্নগুলোর হাতবদলের সময় এসেছে, তাই নতুন সংগ্রাহকেরা আগ্রহ নিয়ে এগুলো সংগ্রহের জন্য অপেক্ষা করছেন। কিন্তু এখানে একটা অস্বস্তিও তৈরি হয়েছে।
গৌতম বুদ্ধের জন্মস্থান লুম্বিনীর কাছাকাছি, বর্তমানে ভারতের উত্তর প্রদেশে একটি ইটের ঘরের ভেতর থেকে প্রায় ১ হাজার ৮০০টি মুক্তা, রুবি, টোপাজ, নীলা ও নকশা করা সোনার পাত সংগ্রহ করা হয়েছিল। তবে এই রত্নগুলোর সঙ্গে সঙ্গে একটি খোদাই করা পাত্রে হাড়ের টুকরাও পাওয়া যায়, যেগুলোকে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষ বলে শনাক্ত করা হয়। এই আবিষ্কার তখন প্রত্নতত্ত্বের জগতে ব্যাপক আলোড়ন তোলে।
সাদাবি’স এশিয়ার চেয়ারম্যান নিকোলাস চাউ মনে করেন, স্মরণকালের বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর মাঝে এই রত্নসম্ভার অন্যতম। তবে এগুলো নিলামে তোলার কারণে একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন তৈরি হয়েছে। আর তা হচ্ছে—ভারতের ইতিহাসের সঙ্গে গভীরভাবে জড়িয়ে থাকা এবং বৌদ্ধদের কাছে পবিত্র এই সম্পদ বিক্রি করা কি নৈতিকভাবে গ্রহণযোগ্য?
১৮৯৮ সালে ব্রিটিশ এস্টেট ম্যানেজার উইলিয়াম ক্ল্যাক্সটন পেপ্পে লুম্বিনির ঠিক দক্ষিণে পিপ্রাওয়ায় অবস্থিত একটি ঢিবি খনন করেন। সেখান থেকেই প্রায় ২ হাজার বছর আগের ওই নির্দশনগুলো খুঁজে পাওয়া যায়।
ইতিহাসবিদদের মতে, প্রাপ্ত রত্নসম্ভার ও দেহাবশেষ, যা তখনো পর্যন্ত অক্ষত ছিল, সেগুলো গৌতম বুদ্ধের শাক্য বংশের এবং বিশ্বব্যাপী বৌদ্ধদের ঐতিহ্য। হাড়ের নিদর্শনগুলো থাইল্যান্ড, শ্রীলঙ্কা ও মিয়ানমারের মতো দেশগুলোতে বিতরণ করা হয়েছে। এসব দেশে এখনো সেগুলোর পূজা করা হয়।

আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
১৮৯৮ সালে ভারতের উত্তর প্রদেশের একটি ধূলিধূসর টিলা খুঁড়ে পাওয়া মূল্যবান এই রত্নগুলো এক শতাব্দীর বেশি সময় ধরে একটি বেসরকারি ব্রিটিশ সংগ্রহাগারে প্রায় দৃষ্টিচক্ষুর আড়ালে ছিল। এখন যেহেতু রত্নগুলোর হাতবদলের সময় এসেছে, তাই নতুন সংগ্রাহকেরা আগ্রহ নিয়ে এগুলো সংগ্রহের জন্য অপেক্ষা করছেন। কিন্তু এখানে একটা অস্বস্তিও তৈরি হয়েছে।
গৌতম বুদ্ধের জন্মস্থান লুম্বিনীর কাছাকাছি, বর্তমানে ভারতের উত্তর প্রদেশে একটি ইটের ঘরের ভেতর থেকে প্রায় ১ হাজার ৮০০টি মুক্তা, রুবি, টোপাজ, নীলা ও নকশা করা সোনার পাত সংগ্রহ করা হয়েছিল। তবে এই রত্নগুলোর সঙ্গে সঙ্গে একটি খোদাই করা পাত্রে হাড়ের টুকরাও পাওয়া যায়, যেগুলোকে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষ বলে শনাক্ত করা হয়। এই আবিষ্কার তখন প্রত্নতত্ত্বের জগতে ব্যাপক আলোড়ন তোলে।
সাদাবি’স এশিয়ার চেয়ারম্যান নিকোলাস চাউ মনে করেন, স্মরণকালের বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর মাঝে এই রত্নসম্ভার অন্যতম। তবে এগুলো নিলামে তোলার কারণে একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন তৈরি হয়েছে। আর তা হচ্ছে—ভারতের ইতিহাসের সঙ্গে গভীরভাবে জড়িয়ে থাকা এবং বৌদ্ধদের কাছে পবিত্র এই সম্পদ বিক্রি করা কি নৈতিকভাবে গ্রহণযোগ্য?
১৮৯৮ সালে ব্রিটিশ এস্টেট ম্যানেজার উইলিয়াম ক্ল্যাক্সটন পেপ্পে লুম্বিনির ঠিক দক্ষিণে পিপ্রাওয়ায় অবস্থিত একটি ঢিবি খনন করেন। সেখান থেকেই প্রায় ২ হাজার বছর আগের ওই নির্দশনগুলো খুঁজে পাওয়া যায়।
ইতিহাসবিদদের মতে, প্রাপ্ত রত্নসম্ভার ও দেহাবশেষ, যা তখনো পর্যন্ত অক্ষত ছিল, সেগুলো গৌতম বুদ্ধের শাক্য বংশের এবং বিশ্বব্যাপী বৌদ্ধদের ঐতিহ্য। হাড়ের নিদর্শনগুলো থাইল্যান্ড, শ্রীলঙ্কা ও মিয়ানমারের মতো দেশগুলোতে বিতরণ করা হয়েছে। এসব দেশে এখনো সেগুলোর পূজা করা হয়।

আমাদের আবদুল গাফ্ফার চৌধুরী গত হয়েছেন এক বছর আগে ১৯ মে ২০২২। তিনি গত হয়েছেন বটে, কিন্তু বিগত হননি। যত দিন বাংলাদেশ থাকবে, বাংলা ভাষা থাকবে, তত দিন তিনি একুশের গানে বেঁচে থাকবেন। কাজেই তাঁর বিগত হওয়ার আশঙ্কা নেই। ভাষা আন্দোলনের সময় তাঁর বয়স ১৮ বছর।
১৮ মে ২০২৩
গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।
২০ দিন আগে
‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর...
১২ জুন ২০২৫
ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।
১৯ মে ২০২৫