মমতাজউদ্দীন পাটোয়ারী

ইতিহাসে কখনো কোনো ঘটনার হুবহু পুনরাবৃত্তি হয় না, এক দেশের ভালোমন্দের সঙ্গে অন্য দেশের ভালোমন্দের তুলনা করা যায় না। প্রতিটি রাষ্ট্রের নিজস্ব সবলতা ও দুর্বলতা নিজ দেশের রাজনৈতিক ও সরকারের নীতিকৌশলের ওপর নির্ভর করে অনেকটাই। এর সঙ্গে অবশ্য ভূরাজনৈতিক এবং আন্তর্জাতিক শক্তিসমূহের যোগাযোগ, সংযোগ ও বোঝাপড়া নানাভাবে ক্রিয়া করতে পারে। সে সঙ্গে শাসকগোষ্ঠীর দেশ পরিচালনার অভিজ্ঞতা এবং ভবিষ্যৎ দেখতে পারা না-পারার বিষয়গুলোও বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ। এক দেশে গভীর রাজনৈতিক সংকট দেখা দিলে অন্য দেশেও হুবহু তা ঘটার কোনো যথাযথ কারণ নেই।
গত কয়েক মাসে রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সংকট শ্রীলঙ্কাকে হুমকির সম্মুখীন করেছে। অথচ দেশটি একটি উচ্চ মধ্যম আয়ের রাষ্ট্র হিসেবে পরিচিত ছিল। দেশটির সঙ্গে ইউরোপের অনেক দেশের তুলনা করা হতো। যেখানে শতভাগ মানুষ শিক্ষিত। এর ব্যবসা-বাণিজ্য আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলেও যথেষ্ট বিকাশ লাভ করেছিল। কিন্তু সেই দেশটি হঠাৎ করে একটি দেউলিয়া রাষ্ট্রে পরিণত হবে, এটি কেউ ভাবতে পারেনি। একটি রাষ্ট্রে হঠাৎ করে সবকিছু এতটা বিপর্যয়ের মুখে পড়েছে, তা-ও ভাবা ঠিক নয়। অতীতের কোনো না-কোনো সমস্যা সরকার যথাযথভাবে নিরূপণ করতে না পারার কারণে সংকট ভেতরে-ভেতরে তীব্রতর হয়েছে। এর ফলে অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক ও সামাজিক ক্ষেত্রে অস্থিরতা সৃষ্টির ক্ষেত্র তৈরিতে ভূমিকা রেখেছে। শ্রীলঙ্কায় দীর্ঘদিন তামিল এবং লঙ্কানদের মধ্যে জাতিগত বিরোধ এক রক্তক্ষয়ী যুদ্ধে রূপ নিয়েছিল। ২০০৫ সালে শ্রীলঙ্কান ফ্রিডম পার্টির নেতা মাহিন্দা রাজাপক্ষে প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়ার পর এই যুদ্ধের পরিসমাপ্তি টানতে উদ্যোগ নেন। ২০০৯ সালে সামরিক শক্তি প্রয়োগের মাধ্যমেই গৃহযুদ্ধের আপাতসমাপ্তি ঘটে। মাহিন্দা রাজাপক্ষে শ্রীলঙ্কার মানুষের কাছে নায়ক হয়ে ওঠেন। ২০১০ সালের নির্বাচনে তিনি বিপুল ভোটে নির্বাচিত হন।
দ্বিতীয় মেয়াদে প্রেসিডেন্ট থাকাকালে মাহিন্দা তাঁর অবস্থানকে আরও সুসংহত করেন। ২০১৫ সালের নির্বাচনে তাঁরই মন্ত্রিসভার সদস্য মাইথ্রিরিপালা সিরিসেনার কাছে তিনি পরাজিত হন। এরপর ২০১৯ সালের নির্বাচনে তাঁর ছোট ভাই গোতাবায়া প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়ার পর বড় ভাই মাহিন্দাকেই সরকার গঠনে আমন্ত্রণ জানান। প্রেসিডেন্ট ও প্রধানমন্ত্রী পদে দুই ভাই অবস্থানকালে পরিবার এবং নিকটাত্মীয়দের রাষ্ট্রের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদে আসীন করা হয়। এর মধ্যে বাসিল রাজাপক্ষেকে অর্থমন্ত্রী ও চামাল রাজাপক্ষেকে সরকারের গুরুত্বপূর্ণ পদে আসীন করা হয়। নামাল রাজাপক্ষে নামের যাঁকে পরিবারের ভবিষ্যৎ হিসেবে দেখা হয়, তাঁর বিরুদ্ধেও বিদেশে অর্থ পাচার ও দুর্নীতির বিস্তর অভিযোগ আছে। মাহিন্দা রাজাপক্ষে ২০১০ সালে দ্বিতীয়বার নির্বাচিত হওয়ার পর মাত্রাতিরিক্ত বৈদেশিক ঋণ শ্রীলঙ্কায় নানা ধরনের বড় বড় প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য গ্রহণ করেন। মাহিন্দা রাজাপক্ষে ২০০৫ সালে নির্বাচিত হয়ে আসার পর সমুদ্রের দেশ শ্রীলঙ্কাকে সিঙ্গাপুরের মতো সমুদ্রবন্দরবান্ধব করার লক্ষ্যেই চীনের সঙ্গে হাম্বানটোটা বন্দর প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ নেন। প্রথম ধাপে খরচ পড়েছিল ৩৬০ মিলিয়ন ডলার। ২০১২ সালে এটির আয় ১১ দশমিক ৮১ মিলিয়ন ডলার হলেও প্রশাসনিক ব্যয় হয় ১০ মিলিয়ন ডলার। এই বন্দর নির্মাণ সম্পন্ন ও পরিচালনা নিয়ে শ্রীলঙ্কা অর্থনৈতিকভাবে চরম সংকটে পড়ে। শেষ পর্যন্ত চীনা কোম্পানির কাছে তা ৯৯ বছরের লিজ দিতে বাধ্য হয়। অনুরূপভাবে হাম্বানটোটা থেকে ২০ কিলোমিটার দূরে ২০ কোটি ডলারের চীনা ঋণে বানানো হয়েছে রাজাপক্ষে আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর।
তবে বিমানবন্দরটি এখন বিদ্যুৎ বিল পরিশোধ করতে হিমশিম খাচ্ছে। ২০১৯ সালে ইস্টার বোমা হামলায় ২৭০ জনের মতো পর্যটক ও সাধারণ মানুষ নিহত হওয়ায় শ্রীলঙ্কা আন্তর্জাতিকভাবে বিচ্ছিন্ন হয়ে যাওয়ার সংকটে পড়ে। ২০১৯ সালের নির্বাচনে গোতাবায়া কতগুলো অবিবেচনাপ্রসূত প্রতিশ্রুতি দেন, যা দেশের অর্থনীতির ওপর ভয়ানক ক্ষতিকর প্রভাব ফেলে। এর একটি হচ্ছে রাসায়নিক সারের পরিবর্তে জৈব সার ব্যবহার করা। অন্যটি, ভ্যাট-ট্যাক্স কমিয়ে দেওয়া। ফলে দেশে কৃষি উৎপাদন যেমন রাসায়নিক সারের অভাবে কমে যায়, একইভাবে রাষ্ট্রের রাজস্ব আয়ও কমে যায়। অন্যদিকে ২০২০ সাল থেকে দুই বছর করোনার ঢেউ শ্রীলঙ্কার অর্থনীতিতে মারাত্মক প্রভাব ফেলে। দেশটি মূলত পর্যটন ও চা-শিল্পে একসময় সমৃদ্ধ ছিল। সেটি করোনার অভিঘাতে মুখ থুবড়ে পড়ে। জৈব সার প্রয়োগের ফলে ধান, শস্য, শাকসবজি এবং চা-শিল্পের উৎপাদনে বড় ধরনের ধস নামিয়ে দেয়। গোতাবায়ার এসব নীতি ও পরিকল্পনা চাপিয়ে দেওয়ার পরিণতি কত ভয়াবহ হতে পারে, তা তিনি ভেবে দেখেননি। করোনা সংক্রমণ মোকাবিলাতেও সরকার ততটা সাফল্য দেখাতে পারেনি।
রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর দেশের অর্থনীতির ওপর নতুন করে সংকট তৈরি হয়। দেশের অর্থনৈতিক এই সংকট সামাল দিতে গিয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংক কাগজের নোট ছাপায়। মুদ্রাস্ফীতি এখন বেড়ে ২৯ দশমিক ৮ শতাংশে এসে দাঁড়িয়েছে। মার্চ মাসে শ্রীলঙ্কার রিজার্ভ নেমে দাঁড়ায় ১ দশমিক ৭ বিলিয়ন ডলারে। দেশটি এখন বিদেশি ঋণ পরিশোধ করা দূরে থাক, আমদানির সক্ষমতাও হারিয়েছে। শ্রীলঙ্কার দায় এখন ৫ হাজার ১০০ কোটি ডলার, যা দেওয়ার ক্ষমতা দেশটির নেই। বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ থেকে বাংলাদেশ ব্যাংক গত বছরের আগস্ট ও সেপ্টেম্বরে শ্রীলঙ্কাকে ২০ কোটি ডলার ঋণ দিয়েছে। যেটি এখন তারা পরিশোধ করতে পারছে না। শ্রীলঙ্কায় এই মুহূর্তে চরম খাদ্য, ওষুধ ও নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যসামগ্রীর সংকট চলছে, যা বাজারে দুষ্প্রাপ্য। সম্প্রতি বাংলাদেশ ২০ কোটি টাকার ওষুধ শ্রীলঙ্কায় পাঠিয়েছে।
শ্রীলঙ্কার রাজনৈতিক অস্থিরতা অতীতের সব মাত্রা ছাড়িয়ে গেছে। সেখানে দীর্ঘদিন মানুষ রাস্তায় গোতাবায়া এবং মাহিন্দার সরকারের পদত্যাগের দাবিতে আন্দোলন করে আসছে। প্রধানমন্ত্রী মাহিন্দা রাজাপক্ষে পদত্যাগ করার পর সহিংসতা আরও বেড়ে যায়। তাঁর বাসভবনে হামলা হয়। তিনি একটি নৌঘাঁটিতে সেনাবাহিনীর সহযোগিতায় সপরিবার আশ্রয় নেন। একজন সাংসদসহ আট ব্যক্তি সহিংসতায় প্রাণ হারান। আন্দোলনকারীরা ফুঁসে ওঠায় দেশের অভ্যন্তরে সহিংসতার বিস্তার ঘটেছে। সহিংসতা দমনে সেনাবাহিনী ও পুলিশকে গুলি চালানোর ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে। অন্যদিকে আইএমএফ এবং বিশ্বব্যাংক শ্রীলঙ্কায় রাজনৈতিক পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হওয়া পর্যন্ত কোনো ঋণ দেওয়ার সুযোগ নেই বলে জানিয়ে দিয়েছে। শ্রীলঙ্কার পাশে এ মুহূর্তে বড় দেশগুলো নেই বললেই চলে। প্রেসিডেন্ট গোতাবায়া পদত্যাগ করার আগপর্যন্ত বিরোধী দলগুলোর সরকারের কোনো দায়িত্ব নেওয়ার সম্ভাবনা দেখা যাচ্ছে না। সংসদের স্পিকার বিরোধী দলকে দায়িত্ব নেওয়ার যে উদ্যোগ নিয়েছেন, তা যত দ্রুত বাস্তবায়িত হবে ততই মঙ্গল। দ্রুত রাজনৈতিক সমঝোতা না হলে দেশটির
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নর পদত্যাগ করবেন বলে জানিয়েছেন।
শ্রীলঙ্কার অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক ও সামাজিক পরিস্থিতি এমন জটিল আকার ধারণ করার পেছনে প্রেসিডেন্ট গোতাবায়ার পরিবার এবং প্রধানমন্ত্রী মাহিন্দার সরকারের নানা অনিয়ম, দুর্নীতি, স্বজনপ্রীতি এবং অপরিণামদর্শী নীতিকৌশল যেমন দায়ী, তেমনি এর পেছনে আন্তর্জাতিক শক্তিসমূহের কারও কারও ভূমিকা ও ইন্ধনও থাকতে পারে। এ অবস্থায় শ্রীলঙ্কা যত দ্রুত সংকট মোকাবিলায় কার্যকর ভূমিকা নিতে পারবে এবং আন্তর্জাতিক সাহায্যদাতা সংস্থাগুলোর আস্থা অর্জন করতে পারবে, তার ওপর অনেক কিছু নির্ভর করছে। শ্রীলঙ্কার এই জটিল পরিস্থিতির সঙ্গে বাংলাদেশের পরিস্থিতির মিল কেউ কেউ খুঁজে দেখার চেষ্টা করেন। কিন্তু সেই মিল-অমিলের বিষয়গুলো রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। শ্রীলঙ্কার উত্তাল পরিস্থিতি থেকে বাংলাদেশের প্রধান বিরোধী দল যেভাবে উল্লাস প্রকাশ করছে এবং বাংলাদেশেও এমন পরিস্থিতি সৃষ্টি হবে বলে দাবি করছে, তাতে তাদের বগল বাজানোর মানসিকতারই প্রকাশ ঘটেছে। এখনই তারা সরকারের বঙ্গোপসাগরে নিক্ষিপ্ত হওয়ার কল্পনা করছে। কিন্তু শ্রীলঙ্কার মানুষ বর্তমানে যে অর্থনৈতিক এবং জীবনযাত্রার সংকটে পড়ছে, তাতে জনজীবনের কষ্টের দিকটি কত অমানবিক, সেটি যাঁরা বুঝতে চান না, তাঁরাই বাংলাদেশকে শ্রীলঙ্কার সঙ্গে গুলিয়ে ফেলছেন।
বাংলাদেশের রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক বাস্তবতা মোটেও শ্রীলঙ্কার মতো নয়। কোভিড-উত্তরকালে বিশ্ব অর্থনীতির সংকটের কারণে আমাদের দেশেও বেশ কিছু নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য উচ্চমূল্যে আমদানি করতে হচ্ছে। ভোজ্যতেল, আটা, ময়দাসহ বেশ কিছু আমদানি করা পণ্য মানুষের ক্রয়ক্ষমতার নাগালের বাইরে চলে যাচ্ছে। কিন্তু দেশে ধান, খাদ্যশস্য, শাকসবজিসহ অন্যান্য পণ্যসামগ্রী যথেষ্ট উৎপন্ন হয়েছে, বাজারে সেসবের কোনো ঘাটতি নেই। তা ছাড়া, আমাদের দেশে যেসব মেগা প্রকল্প চলছে সেগুলোর নির্মাণ এখন শেষ পর্যায়ে, কোনো কোনোটি শিগগিরই উদ্বোধন হতে যাচ্ছে। দেশের রিজার্ভও এখন ৪১ বিলিয়ন ডলারের ওপরে রয়েছে। উচ্চমূল্যে বেশ কিছু পণ্য আমদানি করতে হয়।
এ কারণে রিজার্ভে কিছু চাপ পড়লেও বাংলাদেশের রেমিট্যান্সপ্রবাহ এখনো স্বাভাবিক গতিতে চলছে। আমাদের রপ্তানি ব্যয় আমদানির চেয়ে কিছুটা কমে গেছে। কিন্তু এর জন্য দুশ্চিন্তা করার পরিস্থিতি তৈরি হয়নি। গত দুটি জাতীয় সংসদ নির্বাচনের স্বচ্ছতা নিয়ে প্রশ্ন থাকলেও বাংলাদেশে পরিবারতন্ত্র ও কর্তৃত্ববাদী শাসন জেঁকে বসেছে, তেমন অভিযোগ সরকারবিরোধী মহল ছাড়া প্রবল নয়। কোভিড-উত্তর পরিস্থিতি কোনো দেশেই স্বাভাবিক নয়। তারপরও বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের গতি আন্তর্জাতিক বিভিন্ন সংস্থার জরিপে দক্ষিণ এশিয়ায় সবচেয়ে ভালো এবং অন্যান্য দেশের মধ্যেও বেশ সন্তোষজনক বলে অভিহিত করা হয়েছে। সরকারের উচিত হবে সব ধরনের অপচয়, দুর্নীতি এবং দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি কমিয়ে আনা, দেশকে বর্তমান বিশ্ব পরিস্থিতির কোনো প্রতিদ্বন্দ্বিতায় যুক্ত না হয়ে দেশের শান্তি ও শৃঙ্খলা বজায় রাখা এবং জনগণের দুর্ভোগ বাড়তে না দেওয়া।

ইতিহাসে কখনো কোনো ঘটনার হুবহু পুনরাবৃত্তি হয় না, এক দেশের ভালোমন্দের সঙ্গে অন্য দেশের ভালোমন্দের তুলনা করা যায় না। প্রতিটি রাষ্ট্রের নিজস্ব সবলতা ও দুর্বলতা নিজ দেশের রাজনৈতিক ও সরকারের নীতিকৌশলের ওপর নির্ভর করে অনেকটাই। এর সঙ্গে অবশ্য ভূরাজনৈতিক এবং আন্তর্জাতিক শক্তিসমূহের যোগাযোগ, সংযোগ ও বোঝাপড়া নানাভাবে ক্রিয়া করতে পারে। সে সঙ্গে শাসকগোষ্ঠীর দেশ পরিচালনার অভিজ্ঞতা এবং ভবিষ্যৎ দেখতে পারা না-পারার বিষয়গুলোও বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ। এক দেশে গভীর রাজনৈতিক সংকট দেখা দিলে অন্য দেশেও হুবহু তা ঘটার কোনো যথাযথ কারণ নেই।
গত কয়েক মাসে রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সংকট শ্রীলঙ্কাকে হুমকির সম্মুখীন করেছে। অথচ দেশটি একটি উচ্চ মধ্যম আয়ের রাষ্ট্র হিসেবে পরিচিত ছিল। দেশটির সঙ্গে ইউরোপের অনেক দেশের তুলনা করা হতো। যেখানে শতভাগ মানুষ শিক্ষিত। এর ব্যবসা-বাণিজ্য আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলেও যথেষ্ট বিকাশ লাভ করেছিল। কিন্তু সেই দেশটি হঠাৎ করে একটি দেউলিয়া রাষ্ট্রে পরিণত হবে, এটি কেউ ভাবতে পারেনি। একটি রাষ্ট্রে হঠাৎ করে সবকিছু এতটা বিপর্যয়ের মুখে পড়েছে, তা-ও ভাবা ঠিক নয়। অতীতের কোনো না-কোনো সমস্যা সরকার যথাযথভাবে নিরূপণ করতে না পারার কারণে সংকট ভেতরে-ভেতরে তীব্রতর হয়েছে। এর ফলে অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক ও সামাজিক ক্ষেত্রে অস্থিরতা সৃষ্টির ক্ষেত্র তৈরিতে ভূমিকা রেখেছে। শ্রীলঙ্কায় দীর্ঘদিন তামিল এবং লঙ্কানদের মধ্যে জাতিগত বিরোধ এক রক্তক্ষয়ী যুদ্ধে রূপ নিয়েছিল। ২০০৫ সালে শ্রীলঙ্কান ফ্রিডম পার্টির নেতা মাহিন্দা রাজাপক্ষে প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়ার পর এই যুদ্ধের পরিসমাপ্তি টানতে উদ্যোগ নেন। ২০০৯ সালে সামরিক শক্তি প্রয়োগের মাধ্যমেই গৃহযুদ্ধের আপাতসমাপ্তি ঘটে। মাহিন্দা রাজাপক্ষে শ্রীলঙ্কার মানুষের কাছে নায়ক হয়ে ওঠেন। ২০১০ সালের নির্বাচনে তিনি বিপুল ভোটে নির্বাচিত হন।
দ্বিতীয় মেয়াদে প্রেসিডেন্ট থাকাকালে মাহিন্দা তাঁর অবস্থানকে আরও সুসংহত করেন। ২০১৫ সালের নির্বাচনে তাঁরই মন্ত্রিসভার সদস্য মাইথ্রিরিপালা সিরিসেনার কাছে তিনি পরাজিত হন। এরপর ২০১৯ সালের নির্বাচনে তাঁর ছোট ভাই গোতাবায়া প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়ার পর বড় ভাই মাহিন্দাকেই সরকার গঠনে আমন্ত্রণ জানান। প্রেসিডেন্ট ও প্রধানমন্ত্রী পদে দুই ভাই অবস্থানকালে পরিবার এবং নিকটাত্মীয়দের রাষ্ট্রের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদে আসীন করা হয়। এর মধ্যে বাসিল রাজাপক্ষেকে অর্থমন্ত্রী ও চামাল রাজাপক্ষেকে সরকারের গুরুত্বপূর্ণ পদে আসীন করা হয়। নামাল রাজাপক্ষে নামের যাঁকে পরিবারের ভবিষ্যৎ হিসেবে দেখা হয়, তাঁর বিরুদ্ধেও বিদেশে অর্থ পাচার ও দুর্নীতির বিস্তর অভিযোগ আছে। মাহিন্দা রাজাপক্ষে ২০১০ সালে দ্বিতীয়বার নির্বাচিত হওয়ার পর মাত্রাতিরিক্ত বৈদেশিক ঋণ শ্রীলঙ্কায় নানা ধরনের বড় বড় প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য গ্রহণ করেন। মাহিন্দা রাজাপক্ষে ২০০৫ সালে নির্বাচিত হয়ে আসার পর সমুদ্রের দেশ শ্রীলঙ্কাকে সিঙ্গাপুরের মতো সমুদ্রবন্দরবান্ধব করার লক্ষ্যেই চীনের সঙ্গে হাম্বানটোটা বন্দর প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ নেন। প্রথম ধাপে খরচ পড়েছিল ৩৬০ মিলিয়ন ডলার। ২০১২ সালে এটির আয় ১১ দশমিক ৮১ মিলিয়ন ডলার হলেও প্রশাসনিক ব্যয় হয় ১০ মিলিয়ন ডলার। এই বন্দর নির্মাণ সম্পন্ন ও পরিচালনা নিয়ে শ্রীলঙ্কা অর্থনৈতিকভাবে চরম সংকটে পড়ে। শেষ পর্যন্ত চীনা কোম্পানির কাছে তা ৯৯ বছরের লিজ দিতে বাধ্য হয়। অনুরূপভাবে হাম্বানটোটা থেকে ২০ কিলোমিটার দূরে ২০ কোটি ডলারের চীনা ঋণে বানানো হয়েছে রাজাপক্ষে আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর।
তবে বিমানবন্দরটি এখন বিদ্যুৎ বিল পরিশোধ করতে হিমশিম খাচ্ছে। ২০১৯ সালে ইস্টার বোমা হামলায় ২৭০ জনের মতো পর্যটক ও সাধারণ মানুষ নিহত হওয়ায় শ্রীলঙ্কা আন্তর্জাতিকভাবে বিচ্ছিন্ন হয়ে যাওয়ার সংকটে পড়ে। ২০১৯ সালের নির্বাচনে গোতাবায়া কতগুলো অবিবেচনাপ্রসূত প্রতিশ্রুতি দেন, যা দেশের অর্থনীতির ওপর ভয়ানক ক্ষতিকর প্রভাব ফেলে। এর একটি হচ্ছে রাসায়নিক সারের পরিবর্তে জৈব সার ব্যবহার করা। অন্যটি, ভ্যাট-ট্যাক্স কমিয়ে দেওয়া। ফলে দেশে কৃষি উৎপাদন যেমন রাসায়নিক সারের অভাবে কমে যায়, একইভাবে রাষ্ট্রের রাজস্ব আয়ও কমে যায়। অন্যদিকে ২০২০ সাল থেকে দুই বছর করোনার ঢেউ শ্রীলঙ্কার অর্থনীতিতে মারাত্মক প্রভাব ফেলে। দেশটি মূলত পর্যটন ও চা-শিল্পে একসময় সমৃদ্ধ ছিল। সেটি করোনার অভিঘাতে মুখ থুবড়ে পড়ে। জৈব সার প্রয়োগের ফলে ধান, শস্য, শাকসবজি এবং চা-শিল্পের উৎপাদনে বড় ধরনের ধস নামিয়ে দেয়। গোতাবায়ার এসব নীতি ও পরিকল্পনা চাপিয়ে দেওয়ার পরিণতি কত ভয়াবহ হতে পারে, তা তিনি ভেবে দেখেননি। করোনা সংক্রমণ মোকাবিলাতেও সরকার ততটা সাফল্য দেখাতে পারেনি।
রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর দেশের অর্থনীতির ওপর নতুন করে সংকট তৈরি হয়। দেশের অর্থনৈতিক এই সংকট সামাল দিতে গিয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংক কাগজের নোট ছাপায়। মুদ্রাস্ফীতি এখন বেড়ে ২৯ দশমিক ৮ শতাংশে এসে দাঁড়িয়েছে। মার্চ মাসে শ্রীলঙ্কার রিজার্ভ নেমে দাঁড়ায় ১ দশমিক ৭ বিলিয়ন ডলারে। দেশটি এখন বিদেশি ঋণ পরিশোধ করা দূরে থাক, আমদানির সক্ষমতাও হারিয়েছে। শ্রীলঙ্কার দায় এখন ৫ হাজার ১০০ কোটি ডলার, যা দেওয়ার ক্ষমতা দেশটির নেই। বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ থেকে বাংলাদেশ ব্যাংক গত বছরের আগস্ট ও সেপ্টেম্বরে শ্রীলঙ্কাকে ২০ কোটি ডলার ঋণ দিয়েছে। যেটি এখন তারা পরিশোধ করতে পারছে না। শ্রীলঙ্কায় এই মুহূর্তে চরম খাদ্য, ওষুধ ও নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যসামগ্রীর সংকট চলছে, যা বাজারে দুষ্প্রাপ্য। সম্প্রতি বাংলাদেশ ২০ কোটি টাকার ওষুধ শ্রীলঙ্কায় পাঠিয়েছে।
শ্রীলঙ্কার রাজনৈতিক অস্থিরতা অতীতের সব মাত্রা ছাড়িয়ে গেছে। সেখানে দীর্ঘদিন মানুষ রাস্তায় গোতাবায়া এবং মাহিন্দার সরকারের পদত্যাগের দাবিতে আন্দোলন করে আসছে। প্রধানমন্ত্রী মাহিন্দা রাজাপক্ষে পদত্যাগ করার পর সহিংসতা আরও বেড়ে যায়। তাঁর বাসভবনে হামলা হয়। তিনি একটি নৌঘাঁটিতে সেনাবাহিনীর সহযোগিতায় সপরিবার আশ্রয় নেন। একজন সাংসদসহ আট ব্যক্তি সহিংসতায় প্রাণ হারান। আন্দোলনকারীরা ফুঁসে ওঠায় দেশের অভ্যন্তরে সহিংসতার বিস্তার ঘটেছে। সহিংসতা দমনে সেনাবাহিনী ও পুলিশকে গুলি চালানোর ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে। অন্যদিকে আইএমএফ এবং বিশ্বব্যাংক শ্রীলঙ্কায় রাজনৈতিক পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হওয়া পর্যন্ত কোনো ঋণ দেওয়ার সুযোগ নেই বলে জানিয়ে দিয়েছে। শ্রীলঙ্কার পাশে এ মুহূর্তে বড় দেশগুলো নেই বললেই চলে। প্রেসিডেন্ট গোতাবায়া পদত্যাগ করার আগপর্যন্ত বিরোধী দলগুলোর সরকারের কোনো দায়িত্ব নেওয়ার সম্ভাবনা দেখা যাচ্ছে না। সংসদের স্পিকার বিরোধী দলকে দায়িত্ব নেওয়ার যে উদ্যোগ নিয়েছেন, তা যত দ্রুত বাস্তবায়িত হবে ততই মঙ্গল। দ্রুত রাজনৈতিক সমঝোতা না হলে দেশটির
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নর পদত্যাগ করবেন বলে জানিয়েছেন।
শ্রীলঙ্কার অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক ও সামাজিক পরিস্থিতি এমন জটিল আকার ধারণ করার পেছনে প্রেসিডেন্ট গোতাবায়ার পরিবার এবং প্রধানমন্ত্রী মাহিন্দার সরকারের নানা অনিয়ম, দুর্নীতি, স্বজনপ্রীতি এবং অপরিণামদর্শী নীতিকৌশল যেমন দায়ী, তেমনি এর পেছনে আন্তর্জাতিক শক্তিসমূহের কারও কারও ভূমিকা ও ইন্ধনও থাকতে পারে। এ অবস্থায় শ্রীলঙ্কা যত দ্রুত সংকট মোকাবিলায় কার্যকর ভূমিকা নিতে পারবে এবং আন্তর্জাতিক সাহায্যদাতা সংস্থাগুলোর আস্থা অর্জন করতে পারবে, তার ওপর অনেক কিছু নির্ভর করছে। শ্রীলঙ্কার এই জটিল পরিস্থিতির সঙ্গে বাংলাদেশের পরিস্থিতির মিল কেউ কেউ খুঁজে দেখার চেষ্টা করেন। কিন্তু সেই মিল-অমিলের বিষয়গুলো রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। শ্রীলঙ্কার উত্তাল পরিস্থিতি থেকে বাংলাদেশের প্রধান বিরোধী দল যেভাবে উল্লাস প্রকাশ করছে এবং বাংলাদেশেও এমন পরিস্থিতি সৃষ্টি হবে বলে দাবি করছে, তাতে তাদের বগল বাজানোর মানসিকতারই প্রকাশ ঘটেছে। এখনই তারা সরকারের বঙ্গোপসাগরে নিক্ষিপ্ত হওয়ার কল্পনা করছে। কিন্তু শ্রীলঙ্কার মানুষ বর্তমানে যে অর্থনৈতিক এবং জীবনযাত্রার সংকটে পড়ছে, তাতে জনজীবনের কষ্টের দিকটি কত অমানবিক, সেটি যাঁরা বুঝতে চান না, তাঁরাই বাংলাদেশকে শ্রীলঙ্কার সঙ্গে গুলিয়ে ফেলছেন।
বাংলাদেশের রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক বাস্তবতা মোটেও শ্রীলঙ্কার মতো নয়। কোভিড-উত্তরকালে বিশ্ব অর্থনীতির সংকটের কারণে আমাদের দেশেও বেশ কিছু নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য উচ্চমূল্যে আমদানি করতে হচ্ছে। ভোজ্যতেল, আটা, ময়দাসহ বেশ কিছু আমদানি করা পণ্য মানুষের ক্রয়ক্ষমতার নাগালের বাইরে চলে যাচ্ছে। কিন্তু দেশে ধান, খাদ্যশস্য, শাকসবজিসহ অন্যান্য পণ্যসামগ্রী যথেষ্ট উৎপন্ন হয়েছে, বাজারে সেসবের কোনো ঘাটতি নেই। তা ছাড়া, আমাদের দেশে যেসব মেগা প্রকল্প চলছে সেগুলোর নির্মাণ এখন শেষ পর্যায়ে, কোনো কোনোটি শিগগিরই উদ্বোধন হতে যাচ্ছে। দেশের রিজার্ভও এখন ৪১ বিলিয়ন ডলারের ওপরে রয়েছে। উচ্চমূল্যে বেশ কিছু পণ্য আমদানি করতে হয়।
এ কারণে রিজার্ভে কিছু চাপ পড়লেও বাংলাদেশের রেমিট্যান্সপ্রবাহ এখনো স্বাভাবিক গতিতে চলছে। আমাদের রপ্তানি ব্যয় আমদানির চেয়ে কিছুটা কমে গেছে। কিন্তু এর জন্য দুশ্চিন্তা করার পরিস্থিতি তৈরি হয়নি। গত দুটি জাতীয় সংসদ নির্বাচনের স্বচ্ছতা নিয়ে প্রশ্ন থাকলেও বাংলাদেশে পরিবারতন্ত্র ও কর্তৃত্ববাদী শাসন জেঁকে বসেছে, তেমন অভিযোগ সরকারবিরোধী মহল ছাড়া প্রবল নয়। কোভিড-উত্তর পরিস্থিতি কোনো দেশেই স্বাভাবিক নয়। তারপরও বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের গতি আন্তর্জাতিক বিভিন্ন সংস্থার জরিপে দক্ষিণ এশিয়ায় সবচেয়ে ভালো এবং অন্যান্য দেশের মধ্যেও বেশ সন্তোষজনক বলে অভিহিত করা হয়েছে। সরকারের উচিত হবে সব ধরনের অপচয়, দুর্নীতি এবং দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি কমিয়ে আনা, দেশকে বর্তমান বিশ্ব পরিস্থিতির কোনো প্রতিদ্বন্দ্বিতায় যুক্ত না হয়ে দেশের শান্তি ও শৃঙ্খলা বজায় রাখা এবং জনগণের দুর্ভোগ বাড়তে না দেওয়া।
মমতাজউদ্দীন পাটোয়ারী

ইতিহাসে কখনো কোনো ঘটনার হুবহু পুনরাবৃত্তি হয় না, এক দেশের ভালোমন্দের সঙ্গে অন্য দেশের ভালোমন্দের তুলনা করা যায় না। প্রতিটি রাষ্ট্রের নিজস্ব সবলতা ও দুর্বলতা নিজ দেশের রাজনৈতিক ও সরকারের নীতিকৌশলের ওপর নির্ভর করে অনেকটাই। এর সঙ্গে অবশ্য ভূরাজনৈতিক এবং আন্তর্জাতিক শক্তিসমূহের যোগাযোগ, সংযোগ ও বোঝাপড়া নানাভাবে ক্রিয়া করতে পারে। সে সঙ্গে শাসকগোষ্ঠীর দেশ পরিচালনার অভিজ্ঞতা এবং ভবিষ্যৎ দেখতে পারা না-পারার বিষয়গুলোও বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ। এক দেশে গভীর রাজনৈতিক সংকট দেখা দিলে অন্য দেশেও হুবহু তা ঘটার কোনো যথাযথ কারণ নেই।
গত কয়েক মাসে রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সংকট শ্রীলঙ্কাকে হুমকির সম্মুখীন করেছে। অথচ দেশটি একটি উচ্চ মধ্যম আয়ের রাষ্ট্র হিসেবে পরিচিত ছিল। দেশটির সঙ্গে ইউরোপের অনেক দেশের তুলনা করা হতো। যেখানে শতভাগ মানুষ শিক্ষিত। এর ব্যবসা-বাণিজ্য আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলেও যথেষ্ট বিকাশ লাভ করেছিল। কিন্তু সেই দেশটি হঠাৎ করে একটি দেউলিয়া রাষ্ট্রে পরিণত হবে, এটি কেউ ভাবতে পারেনি। একটি রাষ্ট্রে হঠাৎ করে সবকিছু এতটা বিপর্যয়ের মুখে পড়েছে, তা-ও ভাবা ঠিক নয়। অতীতের কোনো না-কোনো সমস্যা সরকার যথাযথভাবে নিরূপণ করতে না পারার কারণে সংকট ভেতরে-ভেতরে তীব্রতর হয়েছে। এর ফলে অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক ও সামাজিক ক্ষেত্রে অস্থিরতা সৃষ্টির ক্ষেত্র তৈরিতে ভূমিকা রেখেছে। শ্রীলঙ্কায় দীর্ঘদিন তামিল এবং লঙ্কানদের মধ্যে জাতিগত বিরোধ এক রক্তক্ষয়ী যুদ্ধে রূপ নিয়েছিল। ২০০৫ সালে শ্রীলঙ্কান ফ্রিডম পার্টির নেতা মাহিন্দা রাজাপক্ষে প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়ার পর এই যুদ্ধের পরিসমাপ্তি টানতে উদ্যোগ নেন। ২০০৯ সালে সামরিক শক্তি প্রয়োগের মাধ্যমেই গৃহযুদ্ধের আপাতসমাপ্তি ঘটে। মাহিন্দা রাজাপক্ষে শ্রীলঙ্কার মানুষের কাছে নায়ক হয়ে ওঠেন। ২০১০ সালের নির্বাচনে তিনি বিপুল ভোটে নির্বাচিত হন।
দ্বিতীয় মেয়াদে প্রেসিডেন্ট থাকাকালে মাহিন্দা তাঁর অবস্থানকে আরও সুসংহত করেন। ২০১৫ সালের নির্বাচনে তাঁরই মন্ত্রিসভার সদস্য মাইথ্রিরিপালা সিরিসেনার কাছে তিনি পরাজিত হন। এরপর ২০১৯ সালের নির্বাচনে তাঁর ছোট ভাই গোতাবায়া প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়ার পর বড় ভাই মাহিন্দাকেই সরকার গঠনে আমন্ত্রণ জানান। প্রেসিডেন্ট ও প্রধানমন্ত্রী পদে দুই ভাই অবস্থানকালে পরিবার এবং নিকটাত্মীয়দের রাষ্ট্রের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদে আসীন করা হয়। এর মধ্যে বাসিল রাজাপক্ষেকে অর্থমন্ত্রী ও চামাল রাজাপক্ষেকে সরকারের গুরুত্বপূর্ণ পদে আসীন করা হয়। নামাল রাজাপক্ষে নামের যাঁকে পরিবারের ভবিষ্যৎ হিসেবে দেখা হয়, তাঁর বিরুদ্ধেও বিদেশে অর্থ পাচার ও দুর্নীতির বিস্তর অভিযোগ আছে। মাহিন্দা রাজাপক্ষে ২০১০ সালে দ্বিতীয়বার নির্বাচিত হওয়ার পর মাত্রাতিরিক্ত বৈদেশিক ঋণ শ্রীলঙ্কায় নানা ধরনের বড় বড় প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য গ্রহণ করেন। মাহিন্দা রাজাপক্ষে ২০০৫ সালে নির্বাচিত হয়ে আসার পর সমুদ্রের দেশ শ্রীলঙ্কাকে সিঙ্গাপুরের মতো সমুদ্রবন্দরবান্ধব করার লক্ষ্যেই চীনের সঙ্গে হাম্বানটোটা বন্দর প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ নেন। প্রথম ধাপে খরচ পড়েছিল ৩৬০ মিলিয়ন ডলার। ২০১২ সালে এটির আয় ১১ দশমিক ৮১ মিলিয়ন ডলার হলেও প্রশাসনিক ব্যয় হয় ১০ মিলিয়ন ডলার। এই বন্দর নির্মাণ সম্পন্ন ও পরিচালনা নিয়ে শ্রীলঙ্কা অর্থনৈতিকভাবে চরম সংকটে পড়ে। শেষ পর্যন্ত চীনা কোম্পানির কাছে তা ৯৯ বছরের লিজ দিতে বাধ্য হয়। অনুরূপভাবে হাম্বানটোটা থেকে ২০ কিলোমিটার দূরে ২০ কোটি ডলারের চীনা ঋণে বানানো হয়েছে রাজাপক্ষে আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর।
তবে বিমানবন্দরটি এখন বিদ্যুৎ বিল পরিশোধ করতে হিমশিম খাচ্ছে। ২০১৯ সালে ইস্টার বোমা হামলায় ২৭০ জনের মতো পর্যটক ও সাধারণ মানুষ নিহত হওয়ায় শ্রীলঙ্কা আন্তর্জাতিকভাবে বিচ্ছিন্ন হয়ে যাওয়ার সংকটে পড়ে। ২০১৯ সালের নির্বাচনে গোতাবায়া কতগুলো অবিবেচনাপ্রসূত প্রতিশ্রুতি দেন, যা দেশের অর্থনীতির ওপর ভয়ানক ক্ষতিকর প্রভাব ফেলে। এর একটি হচ্ছে রাসায়নিক সারের পরিবর্তে জৈব সার ব্যবহার করা। অন্যটি, ভ্যাট-ট্যাক্স কমিয়ে দেওয়া। ফলে দেশে কৃষি উৎপাদন যেমন রাসায়নিক সারের অভাবে কমে যায়, একইভাবে রাষ্ট্রের রাজস্ব আয়ও কমে যায়। অন্যদিকে ২০২০ সাল থেকে দুই বছর করোনার ঢেউ শ্রীলঙ্কার অর্থনীতিতে মারাত্মক প্রভাব ফেলে। দেশটি মূলত পর্যটন ও চা-শিল্পে একসময় সমৃদ্ধ ছিল। সেটি করোনার অভিঘাতে মুখ থুবড়ে পড়ে। জৈব সার প্রয়োগের ফলে ধান, শস্য, শাকসবজি এবং চা-শিল্পের উৎপাদনে বড় ধরনের ধস নামিয়ে দেয়। গোতাবায়ার এসব নীতি ও পরিকল্পনা চাপিয়ে দেওয়ার পরিণতি কত ভয়াবহ হতে পারে, তা তিনি ভেবে দেখেননি। করোনা সংক্রমণ মোকাবিলাতেও সরকার ততটা সাফল্য দেখাতে পারেনি।
রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর দেশের অর্থনীতির ওপর নতুন করে সংকট তৈরি হয়। দেশের অর্থনৈতিক এই সংকট সামাল দিতে গিয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংক কাগজের নোট ছাপায়। মুদ্রাস্ফীতি এখন বেড়ে ২৯ দশমিক ৮ শতাংশে এসে দাঁড়িয়েছে। মার্চ মাসে শ্রীলঙ্কার রিজার্ভ নেমে দাঁড়ায় ১ দশমিক ৭ বিলিয়ন ডলারে। দেশটি এখন বিদেশি ঋণ পরিশোধ করা দূরে থাক, আমদানির সক্ষমতাও হারিয়েছে। শ্রীলঙ্কার দায় এখন ৫ হাজার ১০০ কোটি ডলার, যা দেওয়ার ক্ষমতা দেশটির নেই। বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ থেকে বাংলাদেশ ব্যাংক গত বছরের আগস্ট ও সেপ্টেম্বরে শ্রীলঙ্কাকে ২০ কোটি ডলার ঋণ দিয়েছে। যেটি এখন তারা পরিশোধ করতে পারছে না। শ্রীলঙ্কায় এই মুহূর্তে চরম খাদ্য, ওষুধ ও নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যসামগ্রীর সংকট চলছে, যা বাজারে দুষ্প্রাপ্য। সম্প্রতি বাংলাদেশ ২০ কোটি টাকার ওষুধ শ্রীলঙ্কায় পাঠিয়েছে।
শ্রীলঙ্কার রাজনৈতিক অস্থিরতা অতীতের সব মাত্রা ছাড়িয়ে গেছে। সেখানে দীর্ঘদিন মানুষ রাস্তায় গোতাবায়া এবং মাহিন্দার সরকারের পদত্যাগের দাবিতে আন্দোলন করে আসছে। প্রধানমন্ত্রী মাহিন্দা রাজাপক্ষে পদত্যাগ করার পর সহিংসতা আরও বেড়ে যায়। তাঁর বাসভবনে হামলা হয়। তিনি একটি নৌঘাঁটিতে সেনাবাহিনীর সহযোগিতায় সপরিবার আশ্রয় নেন। একজন সাংসদসহ আট ব্যক্তি সহিংসতায় প্রাণ হারান। আন্দোলনকারীরা ফুঁসে ওঠায় দেশের অভ্যন্তরে সহিংসতার বিস্তার ঘটেছে। সহিংসতা দমনে সেনাবাহিনী ও পুলিশকে গুলি চালানোর ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে। অন্যদিকে আইএমএফ এবং বিশ্বব্যাংক শ্রীলঙ্কায় রাজনৈতিক পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হওয়া পর্যন্ত কোনো ঋণ দেওয়ার সুযোগ নেই বলে জানিয়ে দিয়েছে। শ্রীলঙ্কার পাশে এ মুহূর্তে বড় দেশগুলো নেই বললেই চলে। প্রেসিডেন্ট গোতাবায়া পদত্যাগ করার আগপর্যন্ত বিরোধী দলগুলোর সরকারের কোনো দায়িত্ব নেওয়ার সম্ভাবনা দেখা যাচ্ছে না। সংসদের স্পিকার বিরোধী দলকে দায়িত্ব নেওয়ার যে উদ্যোগ নিয়েছেন, তা যত দ্রুত বাস্তবায়িত হবে ততই মঙ্গল। দ্রুত রাজনৈতিক সমঝোতা না হলে দেশটির
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নর পদত্যাগ করবেন বলে জানিয়েছেন।
শ্রীলঙ্কার অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক ও সামাজিক পরিস্থিতি এমন জটিল আকার ধারণ করার পেছনে প্রেসিডেন্ট গোতাবায়ার পরিবার এবং প্রধানমন্ত্রী মাহিন্দার সরকারের নানা অনিয়ম, দুর্নীতি, স্বজনপ্রীতি এবং অপরিণামদর্শী নীতিকৌশল যেমন দায়ী, তেমনি এর পেছনে আন্তর্জাতিক শক্তিসমূহের কারও কারও ভূমিকা ও ইন্ধনও থাকতে পারে। এ অবস্থায় শ্রীলঙ্কা যত দ্রুত সংকট মোকাবিলায় কার্যকর ভূমিকা নিতে পারবে এবং আন্তর্জাতিক সাহায্যদাতা সংস্থাগুলোর আস্থা অর্জন করতে পারবে, তার ওপর অনেক কিছু নির্ভর করছে। শ্রীলঙ্কার এই জটিল পরিস্থিতির সঙ্গে বাংলাদেশের পরিস্থিতির মিল কেউ কেউ খুঁজে দেখার চেষ্টা করেন। কিন্তু সেই মিল-অমিলের বিষয়গুলো রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। শ্রীলঙ্কার উত্তাল পরিস্থিতি থেকে বাংলাদেশের প্রধান বিরোধী দল যেভাবে উল্লাস প্রকাশ করছে এবং বাংলাদেশেও এমন পরিস্থিতি সৃষ্টি হবে বলে দাবি করছে, তাতে তাদের বগল বাজানোর মানসিকতারই প্রকাশ ঘটেছে। এখনই তারা সরকারের বঙ্গোপসাগরে নিক্ষিপ্ত হওয়ার কল্পনা করছে। কিন্তু শ্রীলঙ্কার মানুষ বর্তমানে যে অর্থনৈতিক এবং জীবনযাত্রার সংকটে পড়ছে, তাতে জনজীবনের কষ্টের দিকটি কত অমানবিক, সেটি যাঁরা বুঝতে চান না, তাঁরাই বাংলাদেশকে শ্রীলঙ্কার সঙ্গে গুলিয়ে ফেলছেন।
বাংলাদেশের রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক বাস্তবতা মোটেও শ্রীলঙ্কার মতো নয়। কোভিড-উত্তরকালে বিশ্ব অর্থনীতির সংকটের কারণে আমাদের দেশেও বেশ কিছু নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য উচ্চমূল্যে আমদানি করতে হচ্ছে। ভোজ্যতেল, আটা, ময়দাসহ বেশ কিছু আমদানি করা পণ্য মানুষের ক্রয়ক্ষমতার নাগালের বাইরে চলে যাচ্ছে। কিন্তু দেশে ধান, খাদ্যশস্য, শাকসবজিসহ অন্যান্য পণ্যসামগ্রী যথেষ্ট উৎপন্ন হয়েছে, বাজারে সেসবের কোনো ঘাটতি নেই। তা ছাড়া, আমাদের দেশে যেসব মেগা প্রকল্প চলছে সেগুলোর নির্মাণ এখন শেষ পর্যায়ে, কোনো কোনোটি শিগগিরই উদ্বোধন হতে যাচ্ছে। দেশের রিজার্ভও এখন ৪১ বিলিয়ন ডলারের ওপরে রয়েছে। উচ্চমূল্যে বেশ কিছু পণ্য আমদানি করতে হয়।
এ কারণে রিজার্ভে কিছু চাপ পড়লেও বাংলাদেশের রেমিট্যান্সপ্রবাহ এখনো স্বাভাবিক গতিতে চলছে। আমাদের রপ্তানি ব্যয় আমদানির চেয়ে কিছুটা কমে গেছে। কিন্তু এর জন্য দুশ্চিন্তা করার পরিস্থিতি তৈরি হয়নি। গত দুটি জাতীয় সংসদ নির্বাচনের স্বচ্ছতা নিয়ে প্রশ্ন থাকলেও বাংলাদেশে পরিবারতন্ত্র ও কর্তৃত্ববাদী শাসন জেঁকে বসেছে, তেমন অভিযোগ সরকারবিরোধী মহল ছাড়া প্রবল নয়। কোভিড-উত্তর পরিস্থিতি কোনো দেশেই স্বাভাবিক নয়। তারপরও বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের গতি আন্তর্জাতিক বিভিন্ন সংস্থার জরিপে দক্ষিণ এশিয়ায় সবচেয়ে ভালো এবং অন্যান্য দেশের মধ্যেও বেশ সন্তোষজনক বলে অভিহিত করা হয়েছে। সরকারের উচিত হবে সব ধরনের অপচয়, দুর্নীতি এবং দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি কমিয়ে আনা, দেশকে বর্তমান বিশ্ব পরিস্থিতির কোনো প্রতিদ্বন্দ্বিতায় যুক্ত না হয়ে দেশের শান্তি ও শৃঙ্খলা বজায় রাখা এবং জনগণের দুর্ভোগ বাড়তে না দেওয়া।

ইতিহাসে কখনো কোনো ঘটনার হুবহু পুনরাবৃত্তি হয় না, এক দেশের ভালোমন্দের সঙ্গে অন্য দেশের ভালোমন্দের তুলনা করা যায় না। প্রতিটি রাষ্ট্রের নিজস্ব সবলতা ও দুর্বলতা নিজ দেশের রাজনৈতিক ও সরকারের নীতিকৌশলের ওপর নির্ভর করে অনেকটাই। এর সঙ্গে অবশ্য ভূরাজনৈতিক এবং আন্তর্জাতিক শক্তিসমূহের যোগাযোগ, সংযোগ ও বোঝাপড়া নানাভাবে ক্রিয়া করতে পারে। সে সঙ্গে শাসকগোষ্ঠীর দেশ পরিচালনার অভিজ্ঞতা এবং ভবিষ্যৎ দেখতে পারা না-পারার বিষয়গুলোও বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ। এক দেশে গভীর রাজনৈতিক সংকট দেখা দিলে অন্য দেশেও হুবহু তা ঘটার কোনো যথাযথ কারণ নেই।
গত কয়েক মাসে রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সংকট শ্রীলঙ্কাকে হুমকির সম্মুখীন করেছে। অথচ দেশটি একটি উচ্চ মধ্যম আয়ের রাষ্ট্র হিসেবে পরিচিত ছিল। দেশটির সঙ্গে ইউরোপের অনেক দেশের তুলনা করা হতো। যেখানে শতভাগ মানুষ শিক্ষিত। এর ব্যবসা-বাণিজ্য আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলেও যথেষ্ট বিকাশ লাভ করেছিল। কিন্তু সেই দেশটি হঠাৎ করে একটি দেউলিয়া রাষ্ট্রে পরিণত হবে, এটি কেউ ভাবতে পারেনি। একটি রাষ্ট্রে হঠাৎ করে সবকিছু এতটা বিপর্যয়ের মুখে পড়েছে, তা-ও ভাবা ঠিক নয়। অতীতের কোনো না-কোনো সমস্যা সরকার যথাযথভাবে নিরূপণ করতে না পারার কারণে সংকট ভেতরে-ভেতরে তীব্রতর হয়েছে। এর ফলে অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক ও সামাজিক ক্ষেত্রে অস্থিরতা সৃষ্টির ক্ষেত্র তৈরিতে ভূমিকা রেখেছে। শ্রীলঙ্কায় দীর্ঘদিন তামিল এবং লঙ্কানদের মধ্যে জাতিগত বিরোধ এক রক্তক্ষয়ী যুদ্ধে রূপ নিয়েছিল। ২০০৫ সালে শ্রীলঙ্কান ফ্রিডম পার্টির নেতা মাহিন্দা রাজাপক্ষে প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়ার পর এই যুদ্ধের পরিসমাপ্তি টানতে উদ্যোগ নেন। ২০০৯ সালে সামরিক শক্তি প্রয়োগের মাধ্যমেই গৃহযুদ্ধের আপাতসমাপ্তি ঘটে। মাহিন্দা রাজাপক্ষে শ্রীলঙ্কার মানুষের কাছে নায়ক হয়ে ওঠেন। ২০১০ সালের নির্বাচনে তিনি বিপুল ভোটে নির্বাচিত হন।
দ্বিতীয় মেয়াদে প্রেসিডেন্ট থাকাকালে মাহিন্দা তাঁর অবস্থানকে আরও সুসংহত করেন। ২০১৫ সালের নির্বাচনে তাঁরই মন্ত্রিসভার সদস্য মাইথ্রিরিপালা সিরিসেনার কাছে তিনি পরাজিত হন। এরপর ২০১৯ সালের নির্বাচনে তাঁর ছোট ভাই গোতাবায়া প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়ার পর বড় ভাই মাহিন্দাকেই সরকার গঠনে আমন্ত্রণ জানান। প্রেসিডেন্ট ও প্রধানমন্ত্রী পদে দুই ভাই অবস্থানকালে পরিবার এবং নিকটাত্মীয়দের রাষ্ট্রের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদে আসীন করা হয়। এর মধ্যে বাসিল রাজাপক্ষেকে অর্থমন্ত্রী ও চামাল রাজাপক্ষেকে সরকারের গুরুত্বপূর্ণ পদে আসীন করা হয়। নামাল রাজাপক্ষে নামের যাঁকে পরিবারের ভবিষ্যৎ হিসেবে দেখা হয়, তাঁর বিরুদ্ধেও বিদেশে অর্থ পাচার ও দুর্নীতির বিস্তর অভিযোগ আছে। মাহিন্দা রাজাপক্ষে ২০১০ সালে দ্বিতীয়বার নির্বাচিত হওয়ার পর মাত্রাতিরিক্ত বৈদেশিক ঋণ শ্রীলঙ্কায় নানা ধরনের বড় বড় প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য গ্রহণ করেন। মাহিন্দা রাজাপক্ষে ২০০৫ সালে নির্বাচিত হয়ে আসার পর সমুদ্রের দেশ শ্রীলঙ্কাকে সিঙ্গাপুরের মতো সমুদ্রবন্দরবান্ধব করার লক্ষ্যেই চীনের সঙ্গে হাম্বানটোটা বন্দর প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ নেন। প্রথম ধাপে খরচ পড়েছিল ৩৬০ মিলিয়ন ডলার। ২০১২ সালে এটির আয় ১১ দশমিক ৮১ মিলিয়ন ডলার হলেও প্রশাসনিক ব্যয় হয় ১০ মিলিয়ন ডলার। এই বন্দর নির্মাণ সম্পন্ন ও পরিচালনা নিয়ে শ্রীলঙ্কা অর্থনৈতিকভাবে চরম সংকটে পড়ে। শেষ পর্যন্ত চীনা কোম্পানির কাছে তা ৯৯ বছরের লিজ দিতে বাধ্য হয়। অনুরূপভাবে হাম্বানটোটা থেকে ২০ কিলোমিটার দূরে ২০ কোটি ডলারের চীনা ঋণে বানানো হয়েছে রাজাপক্ষে আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর।
তবে বিমানবন্দরটি এখন বিদ্যুৎ বিল পরিশোধ করতে হিমশিম খাচ্ছে। ২০১৯ সালে ইস্টার বোমা হামলায় ২৭০ জনের মতো পর্যটক ও সাধারণ মানুষ নিহত হওয়ায় শ্রীলঙ্কা আন্তর্জাতিকভাবে বিচ্ছিন্ন হয়ে যাওয়ার সংকটে পড়ে। ২০১৯ সালের নির্বাচনে গোতাবায়া কতগুলো অবিবেচনাপ্রসূত প্রতিশ্রুতি দেন, যা দেশের অর্থনীতির ওপর ভয়ানক ক্ষতিকর প্রভাব ফেলে। এর একটি হচ্ছে রাসায়নিক সারের পরিবর্তে জৈব সার ব্যবহার করা। অন্যটি, ভ্যাট-ট্যাক্স কমিয়ে দেওয়া। ফলে দেশে কৃষি উৎপাদন যেমন রাসায়নিক সারের অভাবে কমে যায়, একইভাবে রাষ্ট্রের রাজস্ব আয়ও কমে যায়। অন্যদিকে ২০২০ সাল থেকে দুই বছর করোনার ঢেউ শ্রীলঙ্কার অর্থনীতিতে মারাত্মক প্রভাব ফেলে। দেশটি মূলত পর্যটন ও চা-শিল্পে একসময় সমৃদ্ধ ছিল। সেটি করোনার অভিঘাতে মুখ থুবড়ে পড়ে। জৈব সার প্রয়োগের ফলে ধান, শস্য, শাকসবজি এবং চা-শিল্পের উৎপাদনে বড় ধরনের ধস নামিয়ে দেয়। গোতাবায়ার এসব নীতি ও পরিকল্পনা চাপিয়ে দেওয়ার পরিণতি কত ভয়াবহ হতে পারে, তা তিনি ভেবে দেখেননি। করোনা সংক্রমণ মোকাবিলাতেও সরকার ততটা সাফল্য দেখাতে পারেনি।
রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর দেশের অর্থনীতির ওপর নতুন করে সংকট তৈরি হয়। দেশের অর্থনৈতিক এই সংকট সামাল দিতে গিয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংক কাগজের নোট ছাপায়। মুদ্রাস্ফীতি এখন বেড়ে ২৯ দশমিক ৮ শতাংশে এসে দাঁড়িয়েছে। মার্চ মাসে শ্রীলঙ্কার রিজার্ভ নেমে দাঁড়ায় ১ দশমিক ৭ বিলিয়ন ডলারে। দেশটি এখন বিদেশি ঋণ পরিশোধ করা দূরে থাক, আমদানির সক্ষমতাও হারিয়েছে। শ্রীলঙ্কার দায় এখন ৫ হাজার ১০০ কোটি ডলার, যা দেওয়ার ক্ষমতা দেশটির নেই। বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ থেকে বাংলাদেশ ব্যাংক গত বছরের আগস্ট ও সেপ্টেম্বরে শ্রীলঙ্কাকে ২০ কোটি ডলার ঋণ দিয়েছে। যেটি এখন তারা পরিশোধ করতে পারছে না। শ্রীলঙ্কায় এই মুহূর্তে চরম খাদ্য, ওষুধ ও নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যসামগ্রীর সংকট চলছে, যা বাজারে দুষ্প্রাপ্য। সম্প্রতি বাংলাদেশ ২০ কোটি টাকার ওষুধ শ্রীলঙ্কায় পাঠিয়েছে।
শ্রীলঙ্কার রাজনৈতিক অস্থিরতা অতীতের সব মাত্রা ছাড়িয়ে গেছে। সেখানে দীর্ঘদিন মানুষ রাস্তায় গোতাবায়া এবং মাহিন্দার সরকারের পদত্যাগের দাবিতে আন্দোলন করে আসছে। প্রধানমন্ত্রী মাহিন্দা রাজাপক্ষে পদত্যাগ করার পর সহিংসতা আরও বেড়ে যায়। তাঁর বাসভবনে হামলা হয়। তিনি একটি নৌঘাঁটিতে সেনাবাহিনীর সহযোগিতায় সপরিবার আশ্রয় নেন। একজন সাংসদসহ আট ব্যক্তি সহিংসতায় প্রাণ হারান। আন্দোলনকারীরা ফুঁসে ওঠায় দেশের অভ্যন্তরে সহিংসতার বিস্তার ঘটেছে। সহিংসতা দমনে সেনাবাহিনী ও পুলিশকে গুলি চালানোর ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে। অন্যদিকে আইএমএফ এবং বিশ্বব্যাংক শ্রীলঙ্কায় রাজনৈতিক পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হওয়া পর্যন্ত কোনো ঋণ দেওয়ার সুযোগ নেই বলে জানিয়ে দিয়েছে। শ্রীলঙ্কার পাশে এ মুহূর্তে বড় দেশগুলো নেই বললেই চলে। প্রেসিডেন্ট গোতাবায়া পদত্যাগ করার আগপর্যন্ত বিরোধী দলগুলোর সরকারের কোনো দায়িত্ব নেওয়ার সম্ভাবনা দেখা যাচ্ছে না। সংসদের স্পিকার বিরোধী দলকে দায়িত্ব নেওয়ার যে উদ্যোগ নিয়েছেন, তা যত দ্রুত বাস্তবায়িত হবে ততই মঙ্গল। দ্রুত রাজনৈতিক সমঝোতা না হলে দেশটির
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নর পদত্যাগ করবেন বলে জানিয়েছেন।
শ্রীলঙ্কার অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক ও সামাজিক পরিস্থিতি এমন জটিল আকার ধারণ করার পেছনে প্রেসিডেন্ট গোতাবায়ার পরিবার এবং প্রধানমন্ত্রী মাহিন্দার সরকারের নানা অনিয়ম, দুর্নীতি, স্বজনপ্রীতি এবং অপরিণামদর্শী নীতিকৌশল যেমন দায়ী, তেমনি এর পেছনে আন্তর্জাতিক শক্তিসমূহের কারও কারও ভূমিকা ও ইন্ধনও থাকতে পারে। এ অবস্থায় শ্রীলঙ্কা যত দ্রুত সংকট মোকাবিলায় কার্যকর ভূমিকা নিতে পারবে এবং আন্তর্জাতিক সাহায্যদাতা সংস্থাগুলোর আস্থা অর্জন করতে পারবে, তার ওপর অনেক কিছু নির্ভর করছে। শ্রীলঙ্কার এই জটিল পরিস্থিতির সঙ্গে বাংলাদেশের পরিস্থিতির মিল কেউ কেউ খুঁজে দেখার চেষ্টা করেন। কিন্তু সেই মিল-অমিলের বিষয়গুলো রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। শ্রীলঙ্কার উত্তাল পরিস্থিতি থেকে বাংলাদেশের প্রধান বিরোধী দল যেভাবে উল্লাস প্রকাশ করছে এবং বাংলাদেশেও এমন পরিস্থিতি সৃষ্টি হবে বলে দাবি করছে, তাতে তাদের বগল বাজানোর মানসিকতারই প্রকাশ ঘটেছে। এখনই তারা সরকারের বঙ্গোপসাগরে নিক্ষিপ্ত হওয়ার কল্পনা করছে। কিন্তু শ্রীলঙ্কার মানুষ বর্তমানে যে অর্থনৈতিক এবং জীবনযাত্রার সংকটে পড়ছে, তাতে জনজীবনের কষ্টের দিকটি কত অমানবিক, সেটি যাঁরা বুঝতে চান না, তাঁরাই বাংলাদেশকে শ্রীলঙ্কার সঙ্গে গুলিয়ে ফেলছেন।
বাংলাদেশের রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক বাস্তবতা মোটেও শ্রীলঙ্কার মতো নয়। কোভিড-উত্তরকালে বিশ্ব অর্থনীতির সংকটের কারণে আমাদের দেশেও বেশ কিছু নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য উচ্চমূল্যে আমদানি করতে হচ্ছে। ভোজ্যতেল, আটা, ময়দাসহ বেশ কিছু আমদানি করা পণ্য মানুষের ক্রয়ক্ষমতার নাগালের বাইরে চলে যাচ্ছে। কিন্তু দেশে ধান, খাদ্যশস্য, শাকসবজিসহ অন্যান্য পণ্যসামগ্রী যথেষ্ট উৎপন্ন হয়েছে, বাজারে সেসবের কোনো ঘাটতি নেই। তা ছাড়া, আমাদের দেশে যেসব মেগা প্রকল্প চলছে সেগুলোর নির্মাণ এখন শেষ পর্যায়ে, কোনো কোনোটি শিগগিরই উদ্বোধন হতে যাচ্ছে। দেশের রিজার্ভও এখন ৪১ বিলিয়ন ডলারের ওপরে রয়েছে। উচ্চমূল্যে বেশ কিছু পণ্য আমদানি করতে হয়।
এ কারণে রিজার্ভে কিছু চাপ পড়লেও বাংলাদেশের রেমিট্যান্সপ্রবাহ এখনো স্বাভাবিক গতিতে চলছে। আমাদের রপ্তানি ব্যয় আমদানির চেয়ে কিছুটা কমে গেছে। কিন্তু এর জন্য দুশ্চিন্তা করার পরিস্থিতি তৈরি হয়নি। গত দুটি জাতীয় সংসদ নির্বাচনের স্বচ্ছতা নিয়ে প্রশ্ন থাকলেও বাংলাদেশে পরিবারতন্ত্র ও কর্তৃত্ববাদী শাসন জেঁকে বসেছে, তেমন অভিযোগ সরকারবিরোধী মহল ছাড়া প্রবল নয়। কোভিড-উত্তর পরিস্থিতি কোনো দেশেই স্বাভাবিক নয়। তারপরও বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের গতি আন্তর্জাতিক বিভিন্ন সংস্থার জরিপে দক্ষিণ এশিয়ায় সবচেয়ে ভালো এবং অন্যান্য দেশের মধ্যেও বেশ সন্তোষজনক বলে অভিহিত করা হয়েছে। সরকারের উচিত হবে সব ধরনের অপচয়, দুর্নীতি এবং দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি কমিয়ে আনা, দেশকে বর্তমান বিশ্ব পরিস্থিতির কোনো প্রতিদ্বন্দ্বিতায় যুক্ত না হয়ে দেশের শান্তি ও শৃঙ্খলা বজায় রাখা এবং জনগণের দুর্ভোগ বাড়তে না দেওয়া।

গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।
২০ দিন আগে
‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর...
১২ জুন ২০২৫
ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।
১৯ মে ২০২৫
আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
০৮ মে ২০২৫বাসস, ঢাকা

গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।
আজ সোমবার বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের ট্রাইব্যুনাল-১-এ মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা (আইও) মো. আলমগীরের জেরা শুরু করেন রাষ্ট্র নিযুক্ত আইনজীবী আমীর হোসেন। আইনজীবী আমীর হোসেন পলাতক আসামি শেখ হাসিনা ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের পক্ষে শুনানি করছেন। এর আগে গত মঙ্গলবার তদন্তকারী কর্মকর্তা মো. আলমগীরের সাক্ষ্য গ্রহণ সম্পন্ন হয়।
এই মামলার শুনানিতে এর আগে গণ-অভ্যুত্থানের অন্যতম প্রতীক শহীদ আবু সাঈদের বাবাসহ স্বজনহারা পরিবারের একাধিক সদস্য সাক্ষ্য দিয়েছেন। এ ছাড়া মামলার গুরুত্বপূর্ণ ‘স্টার উইটনেস’ হিসেবে সাক্ষ্য দেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক এবং জুলাই আন্দোলনের অন্যতম নেতৃত্বদানকারী নাহিদ ইসলাম এবং দৈনিক আমার দেশ পত্রিকার সম্পাদক ড. মাহমুদুর রহমান।
গত বছরের জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার আন্দোলন দমনে আওয়ামী লীগ সরকার, তাদের দলীয় ক্যাডার ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর একটি অংশ গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটিত করে বলে অভিযোগ ওঠে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে শেখ হাসিনা, তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল এবং তৎকালীন আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের বিরুদ্ধে গত ১০ জুলাই অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দেন ট্রাইব্যুনাল-১।
পরবর্তীকালে, এই মামলার অন্যতম আসামি সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন দোষ স্বীকার করে ঘটনার সত্যতা উদ্ঘাটনে রাজসাক্ষী (অ্যাপ্রোভার) হওয়ার জন্য ট্রাইব্যুনালে আবেদন করেন। ট্রাইব্যুনাল তাঁর আবেদন মঞ্জুর করলে তিনি রাজসাক্ষী হিসেবে এই মামলায় সাক্ষ্য দেন।
মামলার প্রসিকিউশন পক্ষে শুনানি করছেন চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম, প্রসিকিউটর মিজানুল ইসলাম এবং গাজী এসএইচ তামিম। শুনানিতে তাঁদের সঙ্গে অপর প্রসিকিউটররাও উপস্থিত ছিলেন।
অন্যদিকে, এই মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে রাজসাক্ষী হওয়া সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের পক্ষে আছেন আইনজীবী যায়েদ বিন আমজাদ।
মানবতাবিরোধী অপরাধের এই মামলা ছাড়াও ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে আরও দুটি মামলা বিচারাধীন। এর মধ্যে একটি মামলায় আওয়ামী লীগের সাড়ে ১৫ বছরের শাসনামলে সংঘটিত গুম-খুনের ঘটনায় তাঁকে আসামি করা হয়েছে। অন্য মামলাটি হলো রাজধানীর মতিঝিলের শাপলা চত্বরে হেফাজতে ইসলামের সমাবেশে হত্যাকাণ্ড নিয়ে। এই তিনটি মামলার বিচারকাজই বর্তমানে দুটি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে চলমান।

গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।
আজ সোমবার বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের ট্রাইব্যুনাল-১-এ মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা (আইও) মো. আলমগীরের জেরা শুরু করেন রাষ্ট্র নিযুক্ত আইনজীবী আমীর হোসেন। আইনজীবী আমীর হোসেন পলাতক আসামি শেখ হাসিনা ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের পক্ষে শুনানি করছেন। এর আগে গত মঙ্গলবার তদন্তকারী কর্মকর্তা মো. আলমগীরের সাক্ষ্য গ্রহণ সম্পন্ন হয়।
এই মামলার শুনানিতে এর আগে গণ-অভ্যুত্থানের অন্যতম প্রতীক শহীদ আবু সাঈদের বাবাসহ স্বজনহারা পরিবারের একাধিক সদস্য সাক্ষ্য দিয়েছেন। এ ছাড়া মামলার গুরুত্বপূর্ণ ‘স্টার উইটনেস’ হিসেবে সাক্ষ্য দেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক এবং জুলাই আন্দোলনের অন্যতম নেতৃত্বদানকারী নাহিদ ইসলাম এবং দৈনিক আমার দেশ পত্রিকার সম্পাদক ড. মাহমুদুর রহমান।
গত বছরের জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার আন্দোলন দমনে আওয়ামী লীগ সরকার, তাদের দলীয় ক্যাডার ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর একটি অংশ গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটিত করে বলে অভিযোগ ওঠে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে শেখ হাসিনা, তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল এবং তৎকালীন আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের বিরুদ্ধে গত ১০ জুলাই অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দেন ট্রাইব্যুনাল-১।
পরবর্তীকালে, এই মামলার অন্যতম আসামি সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন দোষ স্বীকার করে ঘটনার সত্যতা উদ্ঘাটনে রাজসাক্ষী (অ্যাপ্রোভার) হওয়ার জন্য ট্রাইব্যুনালে আবেদন করেন। ট্রাইব্যুনাল তাঁর আবেদন মঞ্জুর করলে তিনি রাজসাক্ষী হিসেবে এই মামলায় সাক্ষ্য দেন।
মামলার প্রসিকিউশন পক্ষে শুনানি করছেন চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম, প্রসিকিউটর মিজানুল ইসলাম এবং গাজী এসএইচ তামিম। শুনানিতে তাঁদের সঙ্গে অপর প্রসিকিউটররাও উপস্থিত ছিলেন।
অন্যদিকে, এই মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে রাজসাক্ষী হওয়া সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের পক্ষে আছেন আইনজীবী যায়েদ বিন আমজাদ।
মানবতাবিরোধী অপরাধের এই মামলা ছাড়াও ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে আরও দুটি মামলা বিচারাধীন। এর মধ্যে একটি মামলায় আওয়ামী লীগের সাড়ে ১৫ বছরের শাসনামলে সংঘটিত গুম-খুনের ঘটনায় তাঁকে আসামি করা হয়েছে। অন্য মামলাটি হলো রাজধানীর মতিঝিলের শাপলা চত্বরে হেফাজতে ইসলামের সমাবেশে হত্যাকাণ্ড নিয়ে। এই তিনটি মামলার বিচারকাজই বর্তমানে দুটি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে চলমান।

ইতিহাসে কখনো কোনো ঘটনার হুবহু পুনরাবৃত্তি হয় না, এক দেশের ভালোমন্দের সঙ্গে অন্য দেশের ভালোমন্দের তুলনা করা যায় না। প্রতিটি রাষ্ট্রের নিজস্ব সবলতা ও দুর্বলতা নিজ দেশের রাজনৈতিক ও সরকারের নীতিকৌশলের ওপর নির্ভর করে অনেকটাই।
১৩ মে ২০২২
‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর...
১২ জুন ২০২৫
ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।
১৯ মে ২০২৫
আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
০৮ মে ২০২৫
‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর সঙ্গে।
মাছের সুষ্ঠু প্রজনন, উৎপাদন, মৎস্যসম্পদ সংরক্ষণ ও টেকসই মৎস্য আহরণের জন্য সমুদ্রে সব ধরনের মাছ শিকার ৫৮ দিনের নিষেধাজ্ঞা গতকাল বুধবার দিবাগত মধ্যরাতে শেষ হয়েছে। তাই গতকাল দিনভর ছিল উপকূলের জেলেপল্লিগুলোতে ব্যস্ততা। অনেকে দেখে নিচ্ছিলেন ট্রলার ঠিকঠাক আছে কি না, কেউ জালের ছেঁড়া অংশ সেলাই করছিলেন, কেউ আবার প্রয়োজনীয় খাদ্যসামগ্রীসহ অন্য সরঞ্জাম গুছিয়ে নিচ্ছিলেন।
বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র এবং ফকিরহাট উপ-মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের ঘাটে গতকাল শত শত ট্রলার নোঙর করে রাখা ছিল। জেলেদের উপস্থিতিতে ঘাট এলাকা সরগরম হয়ে ওঠে। ফকিরহাটের মুদি-মনিহারি দোকানগুলোতে জেলেরা কেনাকাটা করতে ভিড় জমান। ফকিরহাট এলাকার বিসমিল্লাহ ট্রলারের মাঝি রহিম মিয়া বলেন, ‘সাগরে মাছ শিকারে যেতে সকল প্রস্তুতি নিয়েছি। নিষেধাজ্ঞার সময় শেষ হওয়ামাত্রই সাগরে নামব।’
জেলে নুরসাইদ ও ফোরকান মিয়া বলেন, ‘নিষেধাজ্ঞার সময় পরিবার-পরিজন নিয়ে বেশ কষ্টে কেটেছে। ওই সময়ে বেশ টাকা ঋণ করেছি। এখন সাগরে যাব। দেখি আল্লাহ ঋণ পরিশোধ করতে দেন কি না।’
নোয়াখালীর হাতিয়ার সূর্যমুখী, বাংলাবাজার, কাজিরবাজার, পাইতান মার্কেট চেয়ারম্যান ঘাটসহ বেশ কয়েকটি ঘাটে গতকাল জেলেদের ব্যস্ত সময় পার করতে দেখা গেছে। অনেকে নৌকায় জাল তুলছিলেন, আবার অনেকে জ্বালানি তেল মজুতসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্রী ট্রলারে নিয়ে যান। সূর্যমুখী ঘাটের এমভি মায়ের দোয়া ট্রলারের মাঝি জাফর উল্যা বলেন, ‘সাগরে ৮-১০ দিন থাকার প্রস্তুতি নিচ্ছি। সন্ধ্যায় সাগরের উদ্দেশে রওনা দেব।’
সূর্যমুখী ঘাট জেলে সমিতির সভাপতি জবিয়ল হক বলেন, ‘সাগরে নামতে প্রস্তুত নোয়াখালীর হাতিয়ার ২০টি ঘাটের লক্ষাধিক জেলে। এসব ঘাটে প্রায় ১০ হাজার ছোট-বড় ফিশিং ট্রলার রয়েছে। প্রতি ট্রলারে ১০ জন হলেও লক্ষাধিক জেলে এই মাছ ধরার সঙ্গে জড়িত। তাঁদের সবাই গত ৫৮ দিন তীরে বেকার ছিলেন।’
পিরোজপুরের ইন্দুরকানি উপজেলার পাড়েরহাট মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের পার্শ্ববর্তী এলাকার জেলেরা গতকাল দিনভর সাগরে যাওয়ার প্রস্তুতি নেন। এ ছাড়া মঠবাড়িয়া উপজেলার সাপলেজা, খেতাচিড়া, বড়মাছুয়া, ছোটমাছুয়া, ভান্ডারিয়া উপজেলার চরখালী, হেতালিয়া, কাউখালী উপজেলার সোনাকুর এলাকার জেলেরা, সদর উপজেলা এবং নেছারাবাদ উপজেলার বিভিন্ন এলাকার জেলেরা প্রস্তুতি শেষে গত রাতে বঙ্গোপসাগরে রওনা হন।
কয়েক দিন ধরে কক্সবাজার উপকূলের জেলেপল্লিগুলোতে নৌকা, জাল মেরামতসহ বিভিন্ন প্রস্তুতি সেরেছেন জেলেরা। গতকাল মেরিন ড্রাইভের টেকনাফের খুরেরমুখ, সাবরাং ও বাহারছড়া এলাকায় দেখা গেছে, সড়কে দাঁড় করিয়ে রাখা সারি সারি ট্রলারে জাল ও রসদ তোলেন জেলেরা।
একটি ট্রলারের মাঝি আবু তাহের জানান, এবার ভারতের সঙ্গে মিল রেখে নিষেধাজ্ঞা দেওয়ায় কেউ সাগরে মাছ শিকারে নামেনি। এতে উপকূলের কাছাকাছি সাগরে জাল ফেললেই ইলিশসহ অন্য মাছ পাওয়া যাবে বলে আশাবাদী তিনি।
কক্সবাজার শহরের ফিশারি ঘাটের মৎস্য ব্যবসায়ী সমিতির পরিচালক জুলফিকার আলী জানান, কক্সবাজার উপকূলে ছোট-বড় ৭ হাজারের মতো যান্ত্রিক ট্রলার রয়েছে। এসব ট্রলারে প্রায় এক লাখ জেলে ও শ্রমিক নিয়োজিত রয়েছেন। অধিকাংশ ট্রলার নিষেধাজ্ঞা ওঠার সঙ্গে সঙ্গে সাগরে রওনা হবে।
[প্রতিবেদন তৈরিতে তথ্য দিয়ে সহায়তা করেছেন বরগুনা ও আমতলী, পিরোজপুর, কক্সবাজার এবং হাতিয়া প্রতিনিধি]

‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর সঙ্গে।
মাছের সুষ্ঠু প্রজনন, উৎপাদন, মৎস্যসম্পদ সংরক্ষণ ও টেকসই মৎস্য আহরণের জন্য সমুদ্রে সব ধরনের মাছ শিকার ৫৮ দিনের নিষেধাজ্ঞা গতকাল বুধবার দিবাগত মধ্যরাতে শেষ হয়েছে। তাই গতকাল দিনভর ছিল উপকূলের জেলেপল্লিগুলোতে ব্যস্ততা। অনেকে দেখে নিচ্ছিলেন ট্রলার ঠিকঠাক আছে কি না, কেউ জালের ছেঁড়া অংশ সেলাই করছিলেন, কেউ আবার প্রয়োজনীয় খাদ্যসামগ্রীসহ অন্য সরঞ্জাম গুছিয়ে নিচ্ছিলেন।
বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র এবং ফকিরহাট উপ-মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের ঘাটে গতকাল শত শত ট্রলার নোঙর করে রাখা ছিল। জেলেদের উপস্থিতিতে ঘাট এলাকা সরগরম হয়ে ওঠে। ফকিরহাটের মুদি-মনিহারি দোকানগুলোতে জেলেরা কেনাকাটা করতে ভিড় জমান। ফকিরহাট এলাকার বিসমিল্লাহ ট্রলারের মাঝি রহিম মিয়া বলেন, ‘সাগরে মাছ শিকারে যেতে সকল প্রস্তুতি নিয়েছি। নিষেধাজ্ঞার সময় শেষ হওয়ামাত্রই সাগরে নামব।’
জেলে নুরসাইদ ও ফোরকান মিয়া বলেন, ‘নিষেধাজ্ঞার সময় পরিবার-পরিজন নিয়ে বেশ কষ্টে কেটেছে। ওই সময়ে বেশ টাকা ঋণ করেছি। এখন সাগরে যাব। দেখি আল্লাহ ঋণ পরিশোধ করতে দেন কি না।’
নোয়াখালীর হাতিয়ার সূর্যমুখী, বাংলাবাজার, কাজিরবাজার, পাইতান মার্কেট চেয়ারম্যান ঘাটসহ বেশ কয়েকটি ঘাটে গতকাল জেলেদের ব্যস্ত সময় পার করতে দেখা গেছে। অনেকে নৌকায় জাল তুলছিলেন, আবার অনেকে জ্বালানি তেল মজুতসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্রী ট্রলারে নিয়ে যান। সূর্যমুখী ঘাটের এমভি মায়ের দোয়া ট্রলারের মাঝি জাফর উল্যা বলেন, ‘সাগরে ৮-১০ দিন থাকার প্রস্তুতি নিচ্ছি। সন্ধ্যায় সাগরের উদ্দেশে রওনা দেব।’
সূর্যমুখী ঘাট জেলে সমিতির সভাপতি জবিয়ল হক বলেন, ‘সাগরে নামতে প্রস্তুত নোয়াখালীর হাতিয়ার ২০টি ঘাটের লক্ষাধিক জেলে। এসব ঘাটে প্রায় ১০ হাজার ছোট-বড় ফিশিং ট্রলার রয়েছে। প্রতি ট্রলারে ১০ জন হলেও লক্ষাধিক জেলে এই মাছ ধরার সঙ্গে জড়িত। তাঁদের সবাই গত ৫৮ দিন তীরে বেকার ছিলেন।’
পিরোজপুরের ইন্দুরকানি উপজেলার পাড়েরহাট মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের পার্শ্ববর্তী এলাকার জেলেরা গতকাল দিনভর সাগরে যাওয়ার প্রস্তুতি নেন। এ ছাড়া মঠবাড়িয়া উপজেলার সাপলেজা, খেতাচিড়া, বড়মাছুয়া, ছোটমাছুয়া, ভান্ডারিয়া উপজেলার চরখালী, হেতালিয়া, কাউখালী উপজেলার সোনাকুর এলাকার জেলেরা, সদর উপজেলা এবং নেছারাবাদ উপজেলার বিভিন্ন এলাকার জেলেরা প্রস্তুতি শেষে গত রাতে বঙ্গোপসাগরে রওনা হন।
কয়েক দিন ধরে কক্সবাজার উপকূলের জেলেপল্লিগুলোতে নৌকা, জাল মেরামতসহ বিভিন্ন প্রস্তুতি সেরেছেন জেলেরা। গতকাল মেরিন ড্রাইভের টেকনাফের খুরেরমুখ, সাবরাং ও বাহারছড়া এলাকায় দেখা গেছে, সড়কে দাঁড় করিয়ে রাখা সারি সারি ট্রলারে জাল ও রসদ তোলেন জেলেরা।
একটি ট্রলারের মাঝি আবু তাহের জানান, এবার ভারতের সঙ্গে মিল রেখে নিষেধাজ্ঞা দেওয়ায় কেউ সাগরে মাছ শিকারে নামেনি। এতে উপকূলের কাছাকাছি সাগরে জাল ফেললেই ইলিশসহ অন্য মাছ পাওয়া যাবে বলে আশাবাদী তিনি।
কক্সবাজার শহরের ফিশারি ঘাটের মৎস্য ব্যবসায়ী সমিতির পরিচালক জুলফিকার আলী জানান, কক্সবাজার উপকূলে ছোট-বড় ৭ হাজারের মতো যান্ত্রিক ট্রলার রয়েছে। এসব ট্রলারে প্রায় এক লাখ জেলে ও শ্রমিক নিয়োজিত রয়েছেন। অধিকাংশ ট্রলার নিষেধাজ্ঞা ওঠার সঙ্গে সঙ্গে সাগরে রওনা হবে।
[প্রতিবেদন তৈরিতে তথ্য দিয়ে সহায়তা করেছেন বরগুনা ও আমতলী, পিরোজপুর, কক্সবাজার এবং হাতিয়া প্রতিনিধি]

ইতিহাসে কখনো কোনো ঘটনার হুবহু পুনরাবৃত্তি হয় না, এক দেশের ভালোমন্দের সঙ্গে অন্য দেশের ভালোমন্দের তুলনা করা যায় না। প্রতিটি রাষ্ট্রের নিজস্ব সবলতা ও দুর্বলতা নিজ দেশের রাজনৈতিক ও সরকারের নীতিকৌশলের ওপর নির্ভর করে অনেকটাই।
১৩ মে ২০২২
গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।
২০ দিন আগে
ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।
১৯ মে ২০২৫
আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
০৮ মে ২০২৫নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা

ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।
ভারতের নিষেধাজ্ঞার এক দিন পরই গত রোববার লালমনিরহাটের বুড়িমারী ও যশোরের বেনাপোল স্থলবন্দরসহ বিভিন্ন বন্দরে পণ্যের ট্রাক আটকে দেয় ভারত। সংশ্লিষ্টদের সূত্রে জানা যায়, রোববার ভারতের আমদানি বিধিনিষেধের কারণে বুড়িমারী সীমান্তে প্রাণের ১৭ ট্রাক খাদ্যপণ্য আটকে যায়। এ ছাড়া বেনাপোলে ৩৬টি পোশাক বোঝাই ট্রাকসহ অন্যান্য পণ্যের শতাধিক ট্রাক ঢুকতে পারেনি।
গতকাল সোমবার পর্যন্ত বুড়িমারী থেকে প্রাণের পণ্যবোঝাই ট্রাকগুলোর অর্ধেকের বেশি ফেরত নিয়ে আসে প্রতিষ্ঠানটি। এ ছাড়া বেনাপোলে পোর্টের ভেতরে ২৪টি ট্রাক ছাড়া বাকিগুলো ফেরত চলে যায়।
বেনাপোল বন্দর সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট স্টাফ অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মো. সাজেদুর রহমান গতকাল সোমবার আজকের পত্রিকাকে বলেন, গতকাল পোর্টের ভেতর ও বাইরে শতাধিক ট্রাক দাঁড়িয়ে ছিল। আজ পোর্টের ভেতরের ২৪টি ছাড়া বাকিগুলো ফেরত নিয়ে গেছেন মালিকেরা। এখন পর্যন্ত মনে হচ্ছে, পোর্টের ভেতরের ট্রাকগুলোও ফেরত নিতে হবে।
জানতে চাইলে প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের পরিচালক (বিপণন) কামরুজ্জামান কামাল আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমাদের হাতে ৬ মিলিয়ন ডলারের ক্রয় আদেশ রয়েছে। তার মধ্য থেকে রোববার বুড়িমারী দিয়ে ১৭ ট্রাকবোঝাই পণ্য পাঠিয়েছিলাম। কিন্তু সেগুলো ঢুকতে পারেনি। ট্রাকগুলো ফেরত আনা হচ্ছে। নতুন করে কাগজপত্র তৈরি করে অন্য পথ দিয়ে পণ্য পাঠাতে হবে।’
বেনাপোল স্থলবন্দর সূত্রে জানা যায়, ওই ২৪টি ট্রাক পোর্টের ভেতরে থাকায় এখনো তারা ভারতে প্রবেশের অপেক্ষায় রয়েছে। তাদের আশা, যেহেতু নিষেধাজ্ঞার আগে এই পণ্যগুলোর এলসি করা হয়েছিল, তাই এগুলো প্রবেশে অনুমতি পাবে। তবে এটি নির্ভর করবে বাংলাদেশ সরকারের আলোচনার ওপর।
এমন পরিস্থিতিতে সরকারের সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় রয়েছেন ব্যবসায়ীরা। ইতিমধ্যে অনেক রপ্তানিকারক রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) সঙ্গে আলোচনা করে সরকারের সহযোগিতা চেয়েছে।
স্থলবন্দরের মাধ্যমে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জসমূহ এবং আশু করণীয় নির্ধারণে বাণিজ্যসচিবের সভাপতিত্বে আজ মঙ্গলবার আন্তমন্ত্রণালয়ের সভা ডেকেছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, স্থলবন্দরের মাধ্যমে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জসমূহ এবং আশু করণীয় নির্ধারণে বাণিজ্যসচিবের সভাপতিত্বে বিকেল ৪টায় আন্তমন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে এই সভা অনুষ্ঠিত হবে।
সভায় নৌপরিবহন ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশন, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড, বাংলাদেশ স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষ, রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো, জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের প্রতিনিধিদের উপস্থিত থাকতে বলা হয়েছে। এ ছাড়া ব্যবসায়ী প্রতিনিধি হিসেবে এফবিসিসিআই, বিজিএমইএ, ভারত-বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির প্রতিনিধিদের উপস্থিতির জন্য আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে।
ভারতের শিল্প ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয় গত শনিবার হঠাৎ এক বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে স্থলবন্দর দিয়ে বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক আমদানি নিষিদ্ধ করে। শুধু ভারতের নবসেবা ও কলকাতা সমুদ্রবন্দর ব্যবহার করে দেশটির আমদানিকারকেরা বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক আমদানি করতে পারবেন বলে ওই বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়। এ ছাড়া বাংলাদেশ থেকে ভারতের আসাম, মেঘালয়, ত্রিপুরা ও মিজোরাম, পশ্চিমবঙ্গের চ্যাংড়াবান্দা ও ফুলবাড়ী শুল্ক স্টেশন দিয়ে ফল, ফলের স্বাদযুক্ত পানীয়, কোমল পানীয়, প্রক্রিয়াজাত খাদ্য, প্লাস্টিক পণ্য, সুতা, সুতার উপজাত, আসবাব রপ্তানিও নিষিদ্ধ করা হয় ওই বিজ্ঞপ্তিতে।
আমদানি ও রপ্তানিসংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা জানান, দেশের ২৪টি বন্দরের মধ্যে ১৬টি বন্দর দিয়ে ভারতের সঙ্গে আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য হয়ে থাকে। তবে যোগাযোগব্যবস্থা সহজ হওয়ায় বেনাপোল ও ভারতের পেট্রাপোল বন্দর দিয়ে সবচেয়ে বেশি আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য হয়। এর পরিমাণ ৮০ শতাংশ। বেনাপোল বন্দর দিয়ে প্রতিদিন ভারতে ২৫০ থেকে ৩০০ ট্রাকে বিভিন্ন ধরনের পণ্য রপ্তানি হয়। এর মধ্যে শতাধিক ট্রাক পণ্য থাকে তৈরি পোশাক।
এর আগে গত ৮ এপ্রিল বাংলাদেশের জন্য ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা বাতিল করে ভারত। ফলে ভারতের বিমানবন্দর ব্যবহার করে তৃতীয় কোনো দেশে তৈরি পোশাক রপ্তানি করতে পারছে না বাংলাদেশ। অন্যদিকে প্রায় এক মাস আগে ভারত থেকে বেনাপোল, ভোমরা, সোনামসজিদ, বাংলাবান্ধা, বুড়িমারী স্থলবন্দর দিয়ে সুতা আমদানির সুযোগ বন্ধ করে দেয় বাংলাদেশের জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)।
সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) বিশেষ ফেলো মোস্তাফিজুর রহমানের মতে, এই পাল্টাপাল্টি পদক্ষেপে তুলনামূলকভাবে বেশি নেতিবাচক প্রভাব পড়বে বাংলাদেশের ওপর। তাই ভারতের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য ঘাটতি কমানোর চেষ্টা অব্যাহত রাখাই সরকারের উচিত বলে মনে করছেন তিনি।
মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, আলোচনার মাধ্যমে বাংলাদেশ এবং ভারতের বিরোধপূর্ণ বিষয়সমূহ মিটিয়ে ফেলতে হবে এবং দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য সম্পর্কের ক্ষেত্রে ভারসাম্য প্রতিষ্ঠা করতে হবে। এটাই হবে উভয় দেশের জন্য কল্যাণকর।

ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।
ভারতের নিষেধাজ্ঞার এক দিন পরই গত রোববার লালমনিরহাটের বুড়িমারী ও যশোরের বেনাপোল স্থলবন্দরসহ বিভিন্ন বন্দরে পণ্যের ট্রাক আটকে দেয় ভারত। সংশ্লিষ্টদের সূত্রে জানা যায়, রোববার ভারতের আমদানি বিধিনিষেধের কারণে বুড়িমারী সীমান্তে প্রাণের ১৭ ট্রাক খাদ্যপণ্য আটকে যায়। এ ছাড়া বেনাপোলে ৩৬টি পোশাক বোঝাই ট্রাকসহ অন্যান্য পণ্যের শতাধিক ট্রাক ঢুকতে পারেনি।
গতকাল সোমবার পর্যন্ত বুড়িমারী থেকে প্রাণের পণ্যবোঝাই ট্রাকগুলোর অর্ধেকের বেশি ফেরত নিয়ে আসে প্রতিষ্ঠানটি। এ ছাড়া বেনাপোলে পোর্টের ভেতরে ২৪টি ট্রাক ছাড়া বাকিগুলো ফেরত চলে যায়।
বেনাপোল বন্দর সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট স্টাফ অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মো. সাজেদুর রহমান গতকাল সোমবার আজকের পত্রিকাকে বলেন, গতকাল পোর্টের ভেতর ও বাইরে শতাধিক ট্রাক দাঁড়িয়ে ছিল। আজ পোর্টের ভেতরের ২৪টি ছাড়া বাকিগুলো ফেরত নিয়ে গেছেন মালিকেরা। এখন পর্যন্ত মনে হচ্ছে, পোর্টের ভেতরের ট্রাকগুলোও ফেরত নিতে হবে।
জানতে চাইলে প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের পরিচালক (বিপণন) কামরুজ্জামান কামাল আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমাদের হাতে ৬ মিলিয়ন ডলারের ক্রয় আদেশ রয়েছে। তার মধ্য থেকে রোববার বুড়িমারী দিয়ে ১৭ ট্রাকবোঝাই পণ্য পাঠিয়েছিলাম। কিন্তু সেগুলো ঢুকতে পারেনি। ট্রাকগুলো ফেরত আনা হচ্ছে। নতুন করে কাগজপত্র তৈরি করে অন্য পথ দিয়ে পণ্য পাঠাতে হবে।’
বেনাপোল স্থলবন্দর সূত্রে জানা যায়, ওই ২৪টি ট্রাক পোর্টের ভেতরে থাকায় এখনো তারা ভারতে প্রবেশের অপেক্ষায় রয়েছে। তাদের আশা, যেহেতু নিষেধাজ্ঞার আগে এই পণ্যগুলোর এলসি করা হয়েছিল, তাই এগুলো প্রবেশে অনুমতি পাবে। তবে এটি নির্ভর করবে বাংলাদেশ সরকারের আলোচনার ওপর।
এমন পরিস্থিতিতে সরকারের সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় রয়েছেন ব্যবসায়ীরা। ইতিমধ্যে অনেক রপ্তানিকারক রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) সঙ্গে আলোচনা করে সরকারের সহযোগিতা চেয়েছে।
স্থলবন্দরের মাধ্যমে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জসমূহ এবং আশু করণীয় নির্ধারণে বাণিজ্যসচিবের সভাপতিত্বে আজ মঙ্গলবার আন্তমন্ত্রণালয়ের সভা ডেকেছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, স্থলবন্দরের মাধ্যমে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জসমূহ এবং আশু করণীয় নির্ধারণে বাণিজ্যসচিবের সভাপতিত্বে বিকেল ৪টায় আন্তমন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে এই সভা অনুষ্ঠিত হবে।
সভায় নৌপরিবহন ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশন, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড, বাংলাদেশ স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষ, রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো, জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের প্রতিনিধিদের উপস্থিত থাকতে বলা হয়েছে। এ ছাড়া ব্যবসায়ী প্রতিনিধি হিসেবে এফবিসিসিআই, বিজিএমইএ, ভারত-বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির প্রতিনিধিদের উপস্থিতির জন্য আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে।
ভারতের শিল্প ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয় গত শনিবার হঠাৎ এক বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে স্থলবন্দর দিয়ে বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক আমদানি নিষিদ্ধ করে। শুধু ভারতের নবসেবা ও কলকাতা সমুদ্রবন্দর ব্যবহার করে দেশটির আমদানিকারকেরা বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক আমদানি করতে পারবেন বলে ওই বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়। এ ছাড়া বাংলাদেশ থেকে ভারতের আসাম, মেঘালয়, ত্রিপুরা ও মিজোরাম, পশ্চিমবঙ্গের চ্যাংড়াবান্দা ও ফুলবাড়ী শুল্ক স্টেশন দিয়ে ফল, ফলের স্বাদযুক্ত পানীয়, কোমল পানীয়, প্রক্রিয়াজাত খাদ্য, প্লাস্টিক পণ্য, সুতা, সুতার উপজাত, আসবাব রপ্তানিও নিষিদ্ধ করা হয় ওই বিজ্ঞপ্তিতে।
আমদানি ও রপ্তানিসংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা জানান, দেশের ২৪টি বন্দরের মধ্যে ১৬টি বন্দর দিয়ে ভারতের সঙ্গে আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য হয়ে থাকে। তবে যোগাযোগব্যবস্থা সহজ হওয়ায় বেনাপোল ও ভারতের পেট্রাপোল বন্দর দিয়ে সবচেয়ে বেশি আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য হয়। এর পরিমাণ ৮০ শতাংশ। বেনাপোল বন্দর দিয়ে প্রতিদিন ভারতে ২৫০ থেকে ৩০০ ট্রাকে বিভিন্ন ধরনের পণ্য রপ্তানি হয়। এর মধ্যে শতাধিক ট্রাক পণ্য থাকে তৈরি পোশাক।
এর আগে গত ৮ এপ্রিল বাংলাদেশের জন্য ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা বাতিল করে ভারত। ফলে ভারতের বিমানবন্দর ব্যবহার করে তৃতীয় কোনো দেশে তৈরি পোশাক রপ্তানি করতে পারছে না বাংলাদেশ। অন্যদিকে প্রায় এক মাস আগে ভারত থেকে বেনাপোল, ভোমরা, সোনামসজিদ, বাংলাবান্ধা, বুড়িমারী স্থলবন্দর দিয়ে সুতা আমদানির সুযোগ বন্ধ করে দেয় বাংলাদেশের জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)।
সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) বিশেষ ফেলো মোস্তাফিজুর রহমানের মতে, এই পাল্টাপাল্টি পদক্ষেপে তুলনামূলকভাবে বেশি নেতিবাচক প্রভাব পড়বে বাংলাদেশের ওপর। তাই ভারতের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য ঘাটতি কমানোর চেষ্টা অব্যাহত রাখাই সরকারের উচিত বলে মনে করছেন তিনি।
মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, আলোচনার মাধ্যমে বাংলাদেশ এবং ভারতের বিরোধপূর্ণ বিষয়সমূহ মিটিয়ে ফেলতে হবে এবং দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য সম্পর্কের ক্ষেত্রে ভারসাম্য প্রতিষ্ঠা করতে হবে। এটাই হবে উভয় দেশের জন্য কল্যাণকর।

ইতিহাসে কখনো কোনো ঘটনার হুবহু পুনরাবৃত্তি হয় না, এক দেশের ভালোমন্দের সঙ্গে অন্য দেশের ভালোমন্দের তুলনা করা যায় না। প্রতিটি রাষ্ট্রের নিজস্ব সবলতা ও দুর্বলতা নিজ দেশের রাজনৈতিক ও সরকারের নীতিকৌশলের ওপর নির্ভর করে অনেকটাই।
১৩ মে ২০২২
গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।
২০ দিন আগে
‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর...
১২ জুন ২০২৫
আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
০৮ মে ২০২৫
আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
১৮৯৮ সালে ভারতের উত্তর প্রদেশের একটি ধূলিধূসর টিলা খুঁড়ে পাওয়া মূল্যবান এই রত্নগুলো এক শতাব্দীর বেশি সময় ধরে একটি বেসরকারি ব্রিটিশ সংগ্রহাগারে প্রায় দৃষ্টিচক্ষুর আড়ালে ছিল। এখন যেহেতু রত্নগুলোর হাতবদলের সময় এসেছে, তাই নতুন সংগ্রাহকেরা আগ্রহ নিয়ে এগুলো সংগ্রহের জন্য অপেক্ষা করছেন। কিন্তু এখানে একটা অস্বস্তিও তৈরি হয়েছে।
গৌতম বুদ্ধের জন্মস্থান লুম্বিনীর কাছাকাছি, বর্তমানে ভারতের উত্তর প্রদেশে একটি ইটের ঘরের ভেতর থেকে প্রায় ১ হাজার ৮০০টি মুক্তা, রুবি, টোপাজ, নীলা ও নকশা করা সোনার পাত সংগ্রহ করা হয়েছিল। তবে এই রত্নগুলোর সঙ্গে সঙ্গে একটি খোদাই করা পাত্রে হাড়ের টুকরাও পাওয়া যায়, যেগুলোকে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষ বলে শনাক্ত করা হয়। এই আবিষ্কার তখন প্রত্নতত্ত্বের জগতে ব্যাপক আলোড়ন তোলে।
সাদাবি’স এশিয়ার চেয়ারম্যান নিকোলাস চাউ মনে করেন, স্মরণকালের বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর মাঝে এই রত্নসম্ভার অন্যতম। তবে এগুলো নিলামে তোলার কারণে একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন তৈরি হয়েছে। আর তা হচ্ছে—ভারতের ইতিহাসের সঙ্গে গভীরভাবে জড়িয়ে থাকা এবং বৌদ্ধদের কাছে পবিত্র এই সম্পদ বিক্রি করা কি নৈতিকভাবে গ্রহণযোগ্য?
১৮৯৮ সালে ব্রিটিশ এস্টেট ম্যানেজার উইলিয়াম ক্ল্যাক্সটন পেপ্পে লুম্বিনির ঠিক দক্ষিণে পিপ্রাওয়ায় অবস্থিত একটি ঢিবি খনন করেন। সেখান থেকেই প্রায় ২ হাজার বছর আগের ওই নির্দশনগুলো খুঁজে পাওয়া যায়।
ইতিহাসবিদদের মতে, প্রাপ্ত রত্নসম্ভার ও দেহাবশেষ, যা তখনো পর্যন্ত অক্ষত ছিল, সেগুলো গৌতম বুদ্ধের শাক্য বংশের এবং বিশ্বব্যাপী বৌদ্ধদের ঐতিহ্য। হাড়ের নিদর্শনগুলো থাইল্যান্ড, শ্রীলঙ্কা ও মিয়ানমারের মতো দেশগুলোতে বিতরণ করা হয়েছে। এসব দেশে এখনো সেগুলোর পূজা করা হয়।

আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
১৮৯৮ সালে ভারতের উত্তর প্রদেশের একটি ধূলিধূসর টিলা খুঁড়ে পাওয়া মূল্যবান এই রত্নগুলো এক শতাব্দীর বেশি সময় ধরে একটি বেসরকারি ব্রিটিশ সংগ্রহাগারে প্রায় দৃষ্টিচক্ষুর আড়ালে ছিল। এখন যেহেতু রত্নগুলোর হাতবদলের সময় এসেছে, তাই নতুন সংগ্রাহকেরা আগ্রহ নিয়ে এগুলো সংগ্রহের জন্য অপেক্ষা করছেন। কিন্তু এখানে একটা অস্বস্তিও তৈরি হয়েছে।
গৌতম বুদ্ধের জন্মস্থান লুম্বিনীর কাছাকাছি, বর্তমানে ভারতের উত্তর প্রদেশে একটি ইটের ঘরের ভেতর থেকে প্রায় ১ হাজার ৮০০টি মুক্তা, রুবি, টোপাজ, নীলা ও নকশা করা সোনার পাত সংগ্রহ করা হয়েছিল। তবে এই রত্নগুলোর সঙ্গে সঙ্গে একটি খোদাই করা পাত্রে হাড়ের টুকরাও পাওয়া যায়, যেগুলোকে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষ বলে শনাক্ত করা হয়। এই আবিষ্কার তখন প্রত্নতত্ত্বের জগতে ব্যাপক আলোড়ন তোলে।
সাদাবি’স এশিয়ার চেয়ারম্যান নিকোলাস চাউ মনে করেন, স্মরণকালের বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর মাঝে এই রত্নসম্ভার অন্যতম। তবে এগুলো নিলামে তোলার কারণে একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন তৈরি হয়েছে। আর তা হচ্ছে—ভারতের ইতিহাসের সঙ্গে গভীরভাবে জড়িয়ে থাকা এবং বৌদ্ধদের কাছে পবিত্র এই সম্পদ বিক্রি করা কি নৈতিকভাবে গ্রহণযোগ্য?
১৮৯৮ সালে ব্রিটিশ এস্টেট ম্যানেজার উইলিয়াম ক্ল্যাক্সটন পেপ্পে লুম্বিনির ঠিক দক্ষিণে পিপ্রাওয়ায় অবস্থিত একটি ঢিবি খনন করেন। সেখান থেকেই প্রায় ২ হাজার বছর আগের ওই নির্দশনগুলো খুঁজে পাওয়া যায়।
ইতিহাসবিদদের মতে, প্রাপ্ত রত্নসম্ভার ও দেহাবশেষ, যা তখনো পর্যন্ত অক্ষত ছিল, সেগুলো গৌতম বুদ্ধের শাক্য বংশের এবং বিশ্বব্যাপী বৌদ্ধদের ঐতিহ্য। হাড়ের নিদর্শনগুলো থাইল্যান্ড, শ্রীলঙ্কা ও মিয়ানমারের মতো দেশগুলোতে বিতরণ করা হয়েছে। এসব দেশে এখনো সেগুলোর পূজা করা হয়।

ইতিহাসে কখনো কোনো ঘটনার হুবহু পুনরাবৃত্তি হয় না, এক দেশের ভালোমন্দের সঙ্গে অন্য দেশের ভালোমন্দের তুলনা করা যায় না। প্রতিটি রাষ্ট্রের নিজস্ব সবলতা ও দুর্বলতা নিজ দেশের রাজনৈতিক ও সরকারের নীতিকৌশলের ওপর নির্ভর করে অনেকটাই।
১৩ মে ২০২২
গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।
২০ দিন আগে
‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর...
১২ জুন ২০২৫
ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।
১৯ মে ২০২৫