Ajker Patrika

মাটি খুঁড়ে পাট জাগ শেষ নেই দুর্ভোগের

মহম্মদপুর (মাগুরা) প্রতিনিধি
আপডেট : ০৮ আগস্ট ২০২২, ১২: ৩৪
Thumbnail image

‘পানি নাই বলে শুকনা জায়গায় মাটি খুঁড়ে পাট জাগ দিচ্ছি। এই বছর বৃষ্টির কোনো দেহা পালাম না। কষ্ট করে লাগানো ফসল এভাবে নষ্ট হবে ভাবি নাই। এই পাট নিয়ে আমার ছাওয়াল (ছেলে) ও আমি অনেক কষ্ট করতেছি। হাটে বিক্রি করে সেই দাম উঠবে না।’

এভাবে আজকের পত্রিকাকে কষ্টের কথাগুলো বলছিলেন মাগুরার মহম্মদপুরের গোপালনগর গ্রামে কৃষক শাহজাহান মিয়া। শুধু শাহজাহান মিয়া নন, উপজেলার হাজারো কৃষক পাট জাগ দেওয়ার জন্য পর্যাপ্ত পানি পাচ্ছেন না। এ কারণে অনেকের পাট খেতেই নষ্ট হচ্ছে। কেউ কেউ পুকুর, খাল, ১০-১২ কিলোমিটার দূরে নিয়ে নদীতে জাগ দিয়েছেন পাট। অন্যদিকে বৃষ্টির অভাবে আমনের আবাদ করতে পারছেন না কৃষকেরা।

বৃহস্পতি ও শুক্রবার উপজেলার বিভিন্ন স্থান ঘুরে গোপালনগর এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, মেজর, শওকত ও শাহজাহান মিয়া নামের কয়েকজন চাষি জলাবদ্ধ পানির অভাবে শুকনো পুকুরের মাঝের অংশে গর্ত করে পাট জাগ দেওয়ার ব্যবস্থা করছেন। অনেকেই আবার পুকুরে শ্যালো মেশিনে পানি দিয়ে ভরে সেখানে পাট জাগ দিচ্ছেন।

এতে কৃষকদের অতিরিক্ত অর্থ খরচ করতে হচ্ছে। যাঁরা আর্থিকভাবে একটু সচ্ছল, তাঁরা অতিরিক্ত খরচ করে নছিমনে অথবা ট্রলিতে করে পাট ১০-১২ কিলোমিটার দূরে বিনোদপুরের নবগঙ্গা নদী অথবা রাজাপুরের রাজপাট খালে পানি থাকায় সেখানে পাট জাগ দেওয়া শুরু করেছেন।

জানা গেছে, চলতি মৌসুমে উপজেলায় ১২ হাজার ৮০০ হেক্টর জমিতে পাটের চাষ করা হয়েছে। খরাসহিষ্ণু রবি-১ জাতের পাটের চাষ বেশি করা হয়েছে। কৃষক আবুল বাশার বলেন, ‘অতিরিক্ত পাট জাগ দেওয়ায় নবগঙ্গার পানি এতটাই বিষাক্ত হয়ে গেছে যে, পাট জাগ দিতে গিয়ে তাঁর শরীরে ঘা শুরু হয়ে গেছে। এ কারণে দুই সপ্তাহ ধরে পানিতে নামতে পারছেন না তিনি।’

কৃষক গোবিন্দ পাল জানান, ‘রোদে পুড়ে লালচে হয়ে মরে যাচ্ছে পাটগাছ। জমি থেকে পাট কাটতে গত বছরের তুলনায় এবার দ্বিগুণ টাকা গুনতে হচ্ছে। সব মিলিয়ে পাট নিয়ে দুর্ভোগের শেষ নেই তাঁদের। দুই বিঘা জমির পাট মাটি খুঁড়ে জাগ দিচ্ছেন বলে জানিয়েছেন তাঁরা।’

আওনাড়া গ্রামের ধানচাষি আকরাম, আবির হোসেন, ধলা মিয়া, মোদাচ্ছের হোসেন বলেন, ‘আমি দুই বিঘা জমির পাট কেটে ফেলেছি আমন ধান লাগাব বলে। বীজতলা প্রস্তুত থাকলেও বৃষ্টির অভাবে জমি চাষ করতে পারছি না। দু-এক দিন দেখার পরে সেচের ব্যবস্থা করে ধান লাগাব। কিন্তু এত খরচ করে আবাদ করা পাট কী করব তা নিয়ে চিন্তায় পড়েছি।’

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আব্দুস সোবহান বলেন, দাম ভালো হওয়ায় এবার উপজেলায় পাটের চাষ লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়েছে। অতিরিক্ত খরার কারণে রোগে আক্রান্ত হয়ে পাটগাছ শুকিয়ে যাচ্ছে। সেচসুবিধা অব্যাহত রাখতে গভীর নলকূপগুলো চালু করার পরামর্শ দিচ্ছেন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত