Ajker Patrika

কুমিরের খামারে লাভের স্বপ্ন

ইলিয়াস আহমেদ, ময়মনসিংহ
কুমিরের খামারে লাভের স্বপ্ন

ময়মনসিংহের ভালুকার কুমিরের খামার নানা সংকট কাটিয়ে এবার লাভের স্বপ্ন দেখছে। খামারকে ঘিরে তৈরি করা হচ্ছে পর্যটনের সুবিধা। আগামী মাসেই এখানে পর্যটন চালুর পরিকল্পনা মালিকদের। যা হবে খামারের আয়ের আরেকটি খাত।  খামারটির অন্যতম মালিক দেশের আর্থিক খাত থেকে কয়েক হাজার কোটি টাকা আত্মসাৎ করা প্রশান্ত কুমার হালদার বা পি কে হালদার।

বিভাগীয় বন কর্মকর্তারাও বলছেন, দেশে কুমির চাষের বিপুল সম্ভাবনা রয়েছে। সরকার কুমিরচাষিদের নানাভাবে উৎসাহিত করছে। জানা গেছে, ২০০৪ সালে ময়মনসিংহের ভালুকায় ১৫ একর জায়গার ওপর গড়ে তোলা হয় দেশের প্রথম বাণিজ্যিক কুমিরের খামার ‘রেপটাইলস ফার্ম’। খামারের স্বপ্নদ্রষ্টা ছিলেন মুশতাক আহমেদ। আর ৩৬ শতাংশ মালিকানা নিয়ে সঙ্গে ছিলেন মেজবাহুল হক।

২০১২ সালে মেজবাহুল হক খামারের শেয়ার ছেড়ে দিলে মালিকানায় চলে আসেন প্রশান্ত কুমার হালদার ওরফে পি কে হালদার। এরপর থেকেই খামার দেখিয়ে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান থেকে বিপুল পরিমাণ ঋণ বের করে নেন পিকে হালদার। ২০২০ সালে সরকার পি কে হালদার ইস্যুতে সব ব্যাংক অ্যাকাউন্ট জব্দ করলে হুমকিতে পড়ে কুমিরের পরিচর্যা। ২০২১ সালের ডিসেম্বরে আদালত খামারটি পরিচালনার জন্য পরিচালনা পর্ষদ গঠনের নির্দেশ দেন। চলতি বছরের মার্চে কুমির খামার পরিচালনায় পরিচালকের দায়িত্ব পান ড. নাঈম আহম্মেদ, ব্যবস্থাপনা পরিচালকের দায়িত্ব পান অস্ট্রেলিয়া প্রবাসী কুমির বিশেষজ্ঞ এনাম হক।

এ ছাড়া পরিচালক পদে দায়িত্বরতরা হলেন রেজাউল সিকদার, ড. মো. রফিকুল আলম, ফখরুদ্দিন আহম্মেদ এবং শেখ মো. আব্দুর রশিদ। ভালুকা রেপটাইলস ফার্ম লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এনাম হক বলেন, ‘আমি নিজে একজন কুমির বিশেষজ্ঞ। কুমিরের চামড়া প্রসেসিংয়ের পাশাপাশি বিক্রিও করে থাকি অস্ট্রেলিয়ায়। আগামী দুই বছর যদি সরকারের একটু সহযোগিতা পাই তা হলে পেছন ফিরে তাকাতে হবে না। কারণ কুমিরের এমন কোনো অঙ্গপ্রত্যঙ্গ নেই যে বিক্রি হয় না।’

তিনি আরও বলেন, ‘পৃথিবীতে এমন কোনো কুমিরের খামার নেই, যেখানে কেউ এককভাবে কুমির চাষ করে লাভবান হয়। আমি বিশ্বের অনেক দেশ ঘুরেছি, দেখেছি কুমির চাষকে ঘিরে তাদের পর্যটন-বাণিজ্য অনেক। ফার্মের সঙ্গে পর্যটন থাকবে, এটিই স্বাভাবিক; কিন্তু একমাত্র ব্যতিক্রম হচ্ছে ভালুকা।

 আমরা যেহেতু সরকারের কালো তালিকাভুক্ত কোম্পানি, সে জন্য আমরা সরকারের কোনো সহযোগিতা পাচ্ছি না। তাই আমাদের টার্গেট হলো ট্যুরিজম চালু করা। আমরা আমাদের আয় দিয়ে ফার্মটি চালাতে চাই। আগামী অক্টোবর মাস থেকে চালু করা হবে ট্যুরিজম।’

রেপটাইলস ফার্ম লিমিটেডের ব্যবস্থাপক ডা. আবু সাইম মোহাম্মদ আরিফ বলেন, ‘২০০৪ সালের ২২ ডিসেম্বর মালয়েশিয়া থেকে ১৫টি পুরুষ কুমিরসহ ৭৫টি কুমির আনা হয়। যার জন্য তাদের ব্যয় হয় প্রায় সোয়া কোটি টাকা। খামারে বর্তমানে ছোট-বড় মিলিয়ে দুই হাজার কুমির রয়েছে।’

বিশ্ববাজারে কুমিরের চামড়া, মাংস, হাড়, দাঁত চড়া দামে বিক্রি হয়। ফ্রান্স, জার্মানি, ইতালি, চীন, জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া, স্পেনসহ বিভিন্ন দেশে এগুলোর ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। তিনি আরও বলেন, ‘এ বছর খামারে উৎপাদিত কুমিরের ডিম থেকে প্রায় ২০০ মতো বাচ্চা পাওয়া গেছে। এতদিন নিজেরাও বেতন-ভাতা নিয়ে দুশ্চিন্তায় ছিলাম। নতুন পরিচালনা পর্ষদ আসার পর ২৮ জন কর্মকর্তা-কর্মচারীর সংকট কেটে গেছে।’

বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের মাৎস্য বিজ্ঞান অনুষদের অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ মাহফুজুল হক বলেন, ‘বিদেশে বাংলাদেশের রপ্তানি পণ্য হাতেগোনা কয়েকটি। এর মধ্যে কুমিরের চামড়া রয়েছে। চামড়ার পাশাপাশি কুমিরের মাংস এবং দাঁত রপ্তানিতে সরকার সহযোগিতা করলে দেশে উদ্যোক্তা বাড়বে।

এ ছাড়াও কুমির চাষে নীতিমালা শিথিল করার পাশাপাশি সরকার ঋণসুবিধা বৃদ্ধি করলে আয়ের একটি অন্যতম উৎস হবে। তিনি আরও বলেন, এ ব্যবসায় উদ্যোক্তাকে ধৈর্যের পরীক্ষা দিতে হয়। কেউ আজ ব্যবসা শুরু করে কাল লাভ খুঁজবে তা হবে না। তবে দীর্ঘ মেয়াদি এ ব্যবসায় লোকসানের পরিমাণ কম।’

বিভাগীয় বন কর্মকর্তা এ কে এম রুহুল আমিন বলেন, ‘দেশে কুমির চাষের বিপুল সম্ভাবনা রয়েছে। সরকার কুমিরচাষিদের নানাভাবে উৎসাহিত করছে। কেউ শর্ত মেনে আবেদন করলে পর্যালোচনা করে অনুমোদন দেওয়া হবে।

অন্য ব্যবসার তুলনায় কুমির চাষের ভিন্নতা রয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, এতে পুঁজি বেশি লাগলেও দীর্ঘ মেয়াদে এ ব্যবসায় ক্ষতির সম্ভাবনা খুবই কম।’ আন্তর্জাতিক বাজারে চামড়ার 
কদর থাকায় প্রতিবছরই বন বিভাগের অনুমতি নিয়ে খামারিরা চামড়া রপ্তানি করছেন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত