Ajker Patrika

কিশোরগঞ্জে নীরবে প্রাণ কাড়ছে যক্ষ্মা

সাজন আহম্মেদ পাপন, কিশোরগঞ্জ 
Thumbnail image

‘যার হয় যক্ষ্মা, তার নাই রক্ষা’—একসময় এ প্রবাদকে মনেপ্রাণে বিশ্বাস করতেন সারা দেশের মতো কিশোরগঞ্জের মানুষও। কিন্তু চিকিৎসাব্যবস্থার উন্নতির ফলে সে ধারণা পাল্টে গেছে। তবু এই যক্ষ্মা নীরবে ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে কিশোরগঞ্জে। জেলা স্বাস্থ্য বিভাগের পরিসংখ্যান অন্তত তা-ই বলছে। গত তিন বছরে জেলাটিতে যক্ষ্মা নীরবে প্রাণ কেড়ে নিয়েছে ৪৩৭ জনের। এ ছাড়া আক্রান্ত হয়েছেন ১৬ হাজার ৯০৯ জন।

সিভিল সার্জন কার্যালয় সূত্র জানা গেছে, জেলায় ২০২১ সালে ৬৮ হাজার ৭১৮ জন কফ পরীক্ষা করেন। তাঁদের মধ্যে ৫ হাজার ৩৩৪ জনের যক্ষ্মা শনাক্ত হয়। ওই বছর মারা যান ১৫১ জন রোগী। ২০২২ সালে ৮৪ হাজার ৭৮৪ জন কফ পরীক্ষা করলে ৬ হাজার ১০৫ জনের যক্ষ্মা শনাক্ত হয়। আর মারা যান ১৭৩ জন। চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ৭৩ হাজার ১৯৭ জন কফ পরীক্ষা করেন। তাঁদের মধ্যে ৫ হাজার ৪৭০ জনের এ রোগ শনাক্ত হয় এবং মারা যান ১১৩ জন।

জানা গেছে, শনাক্তের বাইরে থাকা যক্ষ্মা রোগীরা কিংবা যাঁরা চিকিৎসা পুরোপুরি শেষ করেন না, তাঁদের কারণে নতুন করে এ রোগ ছড়াচ্ছে। এতে স্থানীয় বাসিন্দাদের মধ্যে আতঙ্কও বাড়ছে। কিশোরগঞ্জের আটটি উপজেলায় আধুনিক জিন এক্সপার্ট মেশিন রয়েছে; যা দিয়ে বিনা মূল্যে যক্ষ্মা পরীক্ষা করানো সম্ভব।

সূত্র জানায়, যক্ষ্মা রোগীদের জন্য পাঁচ বছর আগেও ওষুধ মজুত থাকত, এখন নেই। জাতীয়ভাবে ওষুধের সরবরাহ কম থাকায় এমনটি হচ্ছে। তবে এক উপজেলার সঙ্গে অন্য উপজেলার ওষুধের সমন্বয় করে রোগীদের চাহিদা পূরণ করা হয়।

চিকিৎসকেরা বলছেন, যক্ষ্মা নিয়ন্ত্রণে সাফল্য আছে। তবে যক্ষ্মা এখনো জনস্বাস্থ্যের সমস্যা। একজন থেকে কমপক্ষে ১০ জনের মধ্যে এ রোগ ছড়াতে পারে। তাই একনাগাড়ে দুই সপ্তাহ কাশি থাকলে দ্রুত যক্ষ্মা পরীক্ষা করা উচিত। অতিরিক্ত ধূমপান, মদপান, বদ্ধ ঘরে থাকলে যক্ষ্মা হওয়ার আশঙ্কা বেশি থাকে। যক্ষ্মা প্রধানত ফুসফুসকে প্রভাবিত করে, এটি কিডনি, মেরুদণ্ড এবং মস্তিষ্ককেও প্রভাবিত করতে পারে। যক্ষ্মায় আক্রান্ত ও মৃত্যুহার কমাতে সময়মতো রোগ শনাক্তের বিকল্প নেই। তাই পরিবারের একজনের যক্ষ্মা হলে সবার কফ পরীক্ষা করা জরুরি।

টিবি বিশেষজ্ঞেরা বলেন, যক্ষ্মা একটি বায়ুবাহিত রোগ। মানুষের হাঁচি-কাশির মাধ্যমে এ রোগ ছড়ায়। যক্ষ্মা দুই রকম। ফুসফুসের যক্ষ্মা এবং ফুসফুসবহির্ভূত যক্ষ্মা। যক্ষ্মা রোগের প্রাথমিক লক্ষণ কাশি ও জ্বর। ক্ষুধামান্দ্য দেখা দেওয়ায় খাওয়ার রুচি থাকে না। শরীরের যেকোনো স্থানে যক্ষ্মা রোগ হতে পারে। তবে শতকরা ৮০ থেকে ৮৫ ভাগ যক্ষ্মা রোগ ছড়ায় ফুসফুসে। নিয়মিত ওষুধ সেবন ও চিকিৎসকের পরামর্শে এ রোগ ভালো হয়। তিন সপ্তাহ বা তার বেশি সময় কাশি থাকলে পরীক্ষার জন্য স্বাস্থ্যকেন্দ্রে যাওয়া জরুরি।

কিশোরগঞ্জ বক্ষব্যাধি ক্লিনিকের সাবেক কনসালট্যান্ট নিয়ামুল হক বলেন, যক্ষ্মা আক্রান্ত ব্যক্তির হাঁচি-কাশির মাধ্যমে এ রোগ ছড়ায়। জীবাণু তো খালি চোখে দেখা যায় না। আক্রান্ত ব্যক্তিদের কাছ থেকে দূরে থাকতে হবে।

সচেতন নাগরিক কমিটির (সনাক) সভাপতি ম ম জুয়েল বলেন, সরকারের স্বাস্থ্য বিভাগের বিভিন্ন উদ্যোগে এখন যক্ষ্মা রোগের ভয়াবহতা নেই। তবে চিকিৎসাসেবা ও সচেতনতামূলক উদ্যোগে ভাটা পড়লে যক্ষ্মা আবারও ভয়ানক রূপে দেখা দিতে পারে।

কিশোরগঞ্জের সিভিল সার্জন সাইফুল ইসলাম বলেন, সমন্বিত উদ্যোগের মাধ্যমে যক্ষ্মা নিয়ন্ত্রণ কার্যক্রম ভালোভাবেই পরিচালিত হচ্ছে। যক্ষ্মা পরীক্ষার জন্য উন্নত প্রযুক্তির মেশিন ব্যবহার করে রোগ নির্ণয় করা হচ্ছে। বিনা মূল্যে চিকিৎসা ও ওষুধ সরবরাহ করা হচ্ছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত